তরঙ্গ সঞ্চালনের জন্যে মাধ্যমের প্রয়োজন হয়। দৃশ্যমান তরঙ্গসমূহ যেমন পানি তরঙ্গ, টানা তারে সৃষ্ট তরঙ্গ মাধ্যম ছাড়া সঞ্চালিত হতে পারে না। এমনকি শব্দ তরঙ্গও মাধ্যম ছাড়া চলতে পারে না। সূর্য থেকে যে আলো আমাদের পৃথিবীতে আসে তাকে কোটি কোটি কিলোমিটার মহাশূন্যের মধ্য দিয়ে আসতে হয়, সেখানে তাহলে আলো কীভাবে চলে? বিজ্ঞানীরা সেখানে একটি মাধ্যমের কল্পনা করেন যার নাম দেওয়া হয় ইথার। ইথার হলো এমন একটা মাধ্যম যা মুক্তস্থানে তাড়িতচৌম্বকীয় তরঙ্গের সঞ্চালনের জন্যে প্রয়োজনীয় বলে বিজ্ঞানীরা মনে করতেন। চিরায়ত পদার্থবিজ্ঞান যুগের পদার্থবিদদের পক্ষে এটা বিশ্বাস করা কঠিন ছিল যে, মাধ্যম ব্যতীত তরঙ্গ সঞ্চালিত হতে পারে। তাড়িতচৌম্বকীয় তরঙ্গ সঞ্চালনের কোনো মাধ্যম নেই বলে পদার্থবিদগণ ইথারের অস্তিত্ব স্বীকার করে নেন এবং অনুমান করেন যে, ইথারকে সাধারণভাবে আবিষ্কার করা যায় না।
একটি একরঙা আলোক উৎস S থেকে আগত আলোক রশ্মি একটি অর্ধস্বচ্ছ কাচপাত P এর উপর আপতিত হয়। কাচপাত P আপতিত রশ্মির সাথে 45° কোণে রাখা হয়। আপতিত রশ্মি কাচপাত P দ্বারা দুভাগে বিভক্ত হয় (চিত্র ৮.২)।
প্রতিফলিত অংশ আপতিত রশ্মির সমকোণে চলে B অবস্থানে রাখা M1 সমতল দর্পণে লম্বভাবে আপতিত হয় এবং প্রতিফলনের পর P পাতে ফিরে আসে এবং P পাতে প্রতিসরণের পর টেলিস্কোপ T-তে প্রবেশ করে। সঞ্চালিত অংশ আপতিত রশ্মির আদি দিক বরাবর চলে A অবস্থানে রাখা M2 দর্পণে লম্বভাবে আপতিত হয়ে প্রতিফলিত হয় এবং P পাতে ফিরে আসে । P পাতের নিচের পৃষ্ঠ থেকে প্রতিফলিত হয়ে টেলিস্কোপ T-তে প্রবেশ করে। প্রতিফলিত রশ্মি দুটির ব্যতিচারের দরুন ব্যতিচার ঝালর সৃষ্টি হয় যা T টেলিস্কোপের সাহায্যে দেখা যায়। যে রশ্মিটি ওপরের দিকের M2 দর্পণে প্রতিফলিত হয় সেটি P পাতের পুরুত্বকে তিনবার অতিক্রম করে আর যে রশ্মিটি M2 দর্পণে প্রতিফলিত হয় সেটি P পাতকে একবার অতিক্রম করে। P পাত থেকে দর্পণ M1 ও M2 এর কার্যকর দূরত্ব একই রাখার জন্য সমতা বিধানকারী পাত P1 ব্যবহার করা হয়।
সমগ্র যান্ত্রিক ব্যবস্থাটিকে পারদের ওপর ভাসমান রাখা হয়। একটি বাহুকে (PA) সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর ঘূর্ণনের দিকবর্তী রাখা হয় এবং অন্য বাহুটিকে (PB) এই গতির দিকের সাথে সমকোণে রাখা হয়। রশ্মি দুটির গতিপথ এবং তাদের প্রতিফলক পৃষ্ঠ M1 ও M2 এর অবস্থান ভাঙ্গ ভাঙ্গা রেখা দিয়ে দেখানো হলো।
ধরা যাক, স্থির ইথারের সাপেক্ষে PA বরাবর যন্ত্রটি তথা পৃথিবীর বেগ v। PA বরাবর ভ্রমণরত আলোক রশ্মির আপেক্ষিক বেগ (c - v) এবং প্রতিফলিত রশ্মির আপেক্ষিক বেগ (c + v)।
ধরা যাক, PA = PB = d
আলোকরশ্মির P থেকে A-তে পৌঁছাতে প্রয়োজনীয় সময় =
আলোক রশ্মির A থেকে P-তে পৌঁছতে প্রয়োজনীয় সময় =
আলোক রশ্মির P থেকে A-তে যেয়ে পুনরায় P-তে ফিরে আসতে মোট সময়,
<math xmlns="http://www.w3.org/1998/Math/MathML"><mi>t</mi><mo>=</mo><mfrac><mi>d</mi><mrow><mi>c</mi><mo>−</mo><mi>v</mi></mrow></mfrac><mo>+</mo><mfrac><mi>d</mi><mrow><mi>c</mi><mo>+</mo><mi>v</mi></mrow></mfrac><mo>=</mo><mfrac><mrow><mn>2</mn><mi>c</mi><mi>d</mi></mrow><mrow><msup><mi>c</mi><mn>2</mn></msup><mo>−</mo><msup><mi>v</mi><mn>2</mn></msup></mrow></mfrac><mo>=</mo><mfrac><mrow><mn>2</mn><mi>d</mi></mrow><mrow><mi>c</mi><mo>(</mo><mn>1</mn><mo>−</mo><mfrac><mrow><msup><mi>v</mi><mn>2</mn></msup></mrow><mrow><msup><mi>c</mi><mn>2</mn></msup></mrow></mfrac><mo>)</mo></mrow></mfrac><mo>=</mo><mfrac><mrow><mn>2</mn><mi>d</mi></mrow><mi>c</mi></mfrac><mrow><mo>(</mo><mrow><mn>1</mn><mo>−</mo><mfrac><mrow><msup><mi>v</mi><mn>2</mn></msup></mrow><mrow><msup><mi>c</mi><mn>2</mn></msup></mrow></mfrac></mrow><mo>)</mo></mrow><mo>=</mo><mfrac><mrow><mn>2</mn><mi>d</mi></mrow><mi>c</mi></mfrac><mrow><mo>(</mo><mrow><mn>1</mn><mo>+</mo><mfrac><mrow><msup><mi>v</mi><mn>2</mn></msup></mrow><mrow><msup><mi>c</mi><mn>2</mn></msup></mrow></mfrac><mo>+</mo><mo>.</mo><mo>.</mo><mo>.</mo><mo>.</mo></mrow><mo>)</mo></mrow></math> … (8.1)
এখন P থেকে B-তে গমনকারী ঊর্ধ্বমুখী আলোক রশ্মিটি বিবেচনা করা যাক। পপৃথিবীর গতির জন্য এটি M1 দর্পণে আপতিত হবে B এর পরিবর্তে B' অবস্থানে। আলোক রশ্মির P থেকে যাত্রা শুরু করে M1 দর্পণে পৌঁছতে যদি t1 সময় লাগে তাহলে PB' = ct1 এবং BB' =vt1
এখন, P B'P' = PB' + B' P' = 2 P' B' যেহেতু PB' = B' P'
(PB')2 = PC2 + (CB)2 = (BB')2 + PB2
:- সম্পূর্ণ PB'P' পথ অতিক্রমের জন্য আলোকরশ্মির মোট প্রয়োজনীয় সময়
<math xmlns="http://www.w3.org/1998/Math/MathML"><mi>t</mi><mo>'</mo><mo>=</mo><mn>2</mn><msub><mi>t</mi><mn>1</mn></msub><mo>=</mo><mfrac><mrow><mn>2</mn><mi>d</mi></mrow><msqrt><mrow><msup><mi>c</mi><mn>2</mn></msup><mo>−</mo><msup><mi>v</mi><mn>2</mn></msup></mrow></msqrt></mfrac><mo>=</mo><mfrac><mrow><mn>2</mn><mi>d</mi></mrow><mrow><mi>c</mi><msqrt><mrow><mn>1</mn><mo>−</mo><mfrac><mrow><msup><mi>v</mi><mn>2</mn></msup></mrow><mrow><msup><mi>c</mi><mn>2</mn></msup></mrow></mfrac></mrow></msqrt></mrow></mfrac><mo>=</mo><mfrac><mrow><mn>2</mn><mi>d</mi></mrow><mi>c</mi></mfrac><mo>(</mo><mn>1</mn><mo>−</mo><mfrac><mrow><msup><mi>v</mi><mn>2</mn></msup></mrow><mrow><msup><mi>c</mi><mn>2</mn></msup></mrow></mfrac><msup><mo>)</mo><mrow><mo>−</mo><mn>1</mn><mo>/</mo><mn>2</mn></mrow></msup><mo>=</mo><mfrac><mrow><mn>2</mn><mi>d</mi></mrow><mi>c</mi></mfrac><mrow><mo>(</mo><mrow><mn>1</mn><mo>+</mo><mfrac><mrow><msup><mi>v</mi><mn>2</mn></msup></mrow><mrow><msup><mi>c</mi><mn>2</mn></msup></mrow></mfrac></mrow><mo>)</mo></mrow></math>
স্পষ্টত: t'<t। সুতরাং সময়ের পার্থক্য
<math xmlns="http://www.w3.org/1998/Math/MathML"><mo>△</mo><mi>t</mi><mo>=</mo><mi>t</mi><mo>−</mo><mi>t</mi><mo>'</mo><mo>=</mo><mfrac><mrow><mn>2</mn><mi>d</mi></mrow><mi>c</mi></mfrac><mo>(</mo><mn>1</mn><mo>+</mo><mfrac><mrow><msup><mi>v</mi><mn>2</mn></msup></mrow><mrow><msup><mi>c</mi><mn>2</mn></msup></mrow></mfrac><mo>)</mo><mo>−</mo><mfrac><mrow><mn>2</mn><mi>d</mi></mrow><mi>c</mi></mfrac><mo>(</mo><mn>1</mn><mo>+</mo><mfrac><mrow><msup><mi>v</mi><mn>2</mn></msup></mrow><mrow><msup><mi>c</mi><mn>2</mn></msup></mrow></mfrac><mo>)</mo><mo>=</mo><mfrac><mrow><mn>2</mn><mi>d</mi></mrow><mi>c</mi></mfrac><mo>×</mo><mfrac><mrow><msup><mi>v</mi><mn>2</mn></msup></mrow><mrow><mn>2</mn><msup><mi>c</mi><mn>2</mn></msup></mrow></mfrac><mo>=</mo><mfrac><mrow><mi>d</mi><msup><mi>v</mi><mn>2</mn></msup></mrow><mrow><msup><mi>c</mi><mn>3</mn></msup></mrow></mfrac></math>
সময়ে আলোকরশ্মি কর্তৃক অতিক্রান্ত দূরত্ব =
এটি হচ্ছে আপতিত রশ্মির দুটি অংশের মধ্যে পথ পার্থক্য।
এখন যন্ত্রটিকে 90° কোণে ঘুরিয়ে দিলে আপতিত আলোক রশ্মির দুটি অংশের মধ্যে পথ পার্থক্য পাওয়া যাবে । এই পথ পার্থক্যের কারণে টেলিস্কোপে ব্যতিচার ডোরার কিছু অপসরণ পরিলক্ষিত হওয়ার কথা। মাইকেলসন ও মোরলে এই অপসরণ আশা করেছিলেন 0.4 । তাঁরা ধারণা করেছিলেন যে, তাঁরা 0.01 পর্যন্ত অপসারণ পরিমাণে সক্ষম হবেন। কিন্তু পরীক্ষায় তাঁরা কোনো ডোরা অপসরণ মাপতে সক্ষম হননি অর্থাৎ ব্যতিচার ডোরার কোনো অপসারণ ঘটেনি ।
মাইকেলসন ও মোরলে ভূ-পৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থানে এবং বিভিন্ন ঋতুতে এই পরীক্ষার পুনরাবৃত্তি করেন কিন্তু প্রতি বারই তারা ডোরা অপসরণ পরিমাপে ব্যর্থ হন। অর্থাৎ পরীক্ষা থেকে কোনো পর্যবেক্ষণযোগ্য ডোরা অপসরণ পরিলক্ষিত হয়নি। সুতরাং সিদ্ধান্তে আসা যায়, আলোর পথের পরিবর্তন ঘটালেও আলোর দ্রুতি পরিবর্তিত হয়নি। এ থেকে এটিও প্রমাণিত হয় যে, আলোর দ্রুতি একটি সার্বজনীন ধ্রুবক।
উপরিউক্ত পরীক্ষা থেকে তাঁরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, এ মহাবিশ্বে ইথার নামক কল্পিত পদার্থের কোনো অস্তিত্ব নেই।
Read more