এ অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা :
আমরা এখন নিজেদের সভ্য ও আধুনিক মানুষ হিসেবে দাবি করি । কিন্তু এ অবস্থানে আসতে পারি দিতে হয়েছে দীর্ঘ পথ । মানুষের মেধা ও শ্রমের যুগপৎ সম্মিলনে আমরা আজকের এ অবস্থানে পৌঁছাতে পেরেছি । সভ্যতার অগ্রযাত্রায় মানবজাতির মেধা ও কায়িকশ্রম উভয়ের ভূমিকাই গুরুত্বপূর্ণ । এসো তার কিছুটা আমরা জেনে নিই ।
প্রাচীনকালে ভারতীয় উপমহাদেশের অংশ ছিল আমাদের আজকের এই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। এই উপমহাদেশের ইতিহাস অনেক প্রাচীন । অনুমান করা হয় আজ থেকে প্রায় সত্তর হাজার বছর আগে এ অঞ্চলে মানুষ বসতি স্থাপন করেছিল । তারা পাহাড়ের গুহায় বসবাস করত । প্রাচীনকাল থেকেই আমাদের ভূমি খুব উর্বর। বনে-জঙ্গলে জন্মাত নানা ফলের গাছ। সে সময়ে মানুষ ফলমূল সংগ্রহ করে তাদের ক্ষুধা নিবারণ করত । তারা কিন্তু সব ফল খেত না। তারা শিখেছিল কোন ফল খাওয়া যায় আর কোন ফল খাওয়া যায় না । তখন বসতি স্থাপন করা সহজ কোনো ব্যাপার ছিল না । বসতি স্থাপনের জন্য তাদের গুহা খুঁজে বের করতে হতো । কখনো কখনো তারা উঁচু ঢালে গুহা খনন করত । যথাযথভাবে গুহা খনন করা না হলে মাটি ধসে ক্ষতি, এমনকি মারা যাওয়ার আশঙ্কাও ছিল ।
তাই গুহা খনন করাটা ছিল একটা বিশেষ দক্ষতা। কায়িকশ্রম ও মেধাশ্রমের যৌথ প্রয়োগে প্রাচীন মানুষ এ দক্ষতা অর্জন করেছিল । এছাড়া সে যুগের মানুষকে পানির কথাও ভাবতে হতো। পানি ছাড়া জীবন চলে না । তাই প্রাচীন সভ্যতা সাধারণত নদীর ধারে গড়ে উঠেছিল। এছাড়া নদীর দু'পাশের জমি বেশ উর্বর হওয়ায় সেখানে ফলের গাছ সহজে জন্মাত । এ ধরনের জায়গায় বসতি স্থাপন ছিল সুবিধাজনক। বসতি স্থাপনের জন্য এমন জায়গা তাদের নির্বাচন করতে হতো যা প্রাকৃতিক বিপদমুক্ত । আশেপাশে শিকার করার মতো প্রাণী ও ফলমূল ইত্যাদি সহজে পাওয়ার সুবিধা থাকার পাশাপাশি থাকতে হবে পানি। বুদ্ধি খাটিয়ে মানুষ এসব বুঝতে পেরেছিল । তাই বলা যায় বসতি স্থাপনের জন্য জায়গা নির্বাচন করা মেধাশ্রমের উদাহরণ । আবার জায়গা নির্বাচনের পর সেখানে বসতবাড়ি গড়ে তুলতে মানুষকে অনেক কায়িকশ্রম করতে হতো ।
উপরের চিত্রে একজন মানুষ তার থাকার জায়গা তথা বাসস্থানের কথা চিন্তা করছে; চিন্তা করছে সে অনুযায়ী বাড়ি বানানোর । এর পাশাপাশি চিন্তা করছে বাড়িটি বানাতে কী কী উপাদান লাগবে। তারপর সে চিন্তা করে বের করবে এসব উপাদান কোথায় পাবে, কীভাবে সংগ্রহ করবে। এ সকল ভাবনা-চিন্তার কাজই হলো মেধাশ্রম । আবার বাড়ি বানানোর উপাদানগুলো সংগ্রহ করতে এবং বাড়ি বানাতে তাকে কায়িকশ্রম করতে হবে। এ থেকে আমরা বুঝতে পারি, এখন নয় বরং সেই প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের দৈনন্দিন জীবনে কায়িকশ্রম ও মেধাশ্রম উভয়ই ছিল ।
নিচের চিত্রটি লক্ষ করো : এখানে কোথায় মেধাশ্রম ও কোথায় কায়িকশ্রম চিহ্নিত করো ।
আড়াই হাজার বছরেরও প্রাচীন আমাদের সভ্যতা ও সংস্কৃতি । রাজধানী ঢাকার অনতিদূর নরসিংদীর উয়ারী-বটেশ্বরে মিলেছে এমন সব নিদর্শন, যার ভিত্তিতে লিখতে হচ্ছে বাংলাদেশের নতুন ইতিহাস । প্রাগৈতিহাসিক যুগে মানুষ পাহাড়ের গুহা ও গাছের কোটরে বাস করত । মানুষের প্রথম স্থায়ী বসতি গড়ে উঠেছিল ইউফ্রেটিস ও টাইগ্রিস নদীর তীরে। আর ভারতের মেহেরগড়ে মিলেছে উপমহাদেশের সর্বপ্রথম কৃষিনির্ভর স্থায়ী বসতির নিদর্শন । উয়ারী-বটেশ্বরে পাওয়া গেছে মাটিতে গর্ত করে বসবাসের উপযোগী ঘরের চিহ্ন ‘গর্ত-বসতি' । এখানকার দুর্গ-নগরের অভ্যন্তরে প্রায় খ্রিষ্টপূর্ব পাঁচ শতকের প্রাচীন একটি ঘরের ধসে পড়া মাটির দেয়ালের চিহ্ন পাওয়া গেছে। একমাত্র উয়ারী-বটেশ্বর ছাড়া বাংলাদেশে এ ধরনের মাটির প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন অন্য কোথাও পাওয়া যায়নি। শুধু গর্ত-বসতি নয়, উয়ারী-বটেশ্বরে মিলেছে এমন সব নিদর্শন, যা দিয়ে প্রমাণ করা সম্ভব হয়েছে আমাদের সভ্যতা আড়াই হাজার বছরের পুরোনো । উয়ারী-বটেশ্বরে আবিষ্কৃত উল্লেখযোগ্য নিদর্শনাদির মধ্যে রয়েছে: মূল্যবান পাথরের পুঁতি, মাটির পাত্র, বাটখারা, মুদ্রা, রাস্তা, ইটের পূর্ণ কাঠামো, গর্ত-নিবাস প্রভৃতি ।
১৯৩৩ সালের ডিসেম্বরে উয়ারী গ্রামে শ্রমিকেরা মাটি খননকালে একটি পাত্রে কয়েকটি মুদ্রা পান, যা ছিল বঙ্গ ভারতের প্রাচীনতম রৌপ্যমুদ্রা । এখানে আবিষ্কৃত হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন দুর্গ-নগর, বন্দর, রাস্তা, পার্শ্ব-রাস্তা, পোড়ামাটির ফলক, পাথর ও কাচের পুঁতি, মুদ্রাভান্ডারসহ উপমহাদেশের প্রাচীনতম ছাপাঙ্কিত রৌপ্যমুদ্রা ও আরো অনেক কিছু । নেদারল্যান্ডের ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার পর এখানকার দুর্গ-নগর বসতিকে খ্রিষ্টপূর্ব ৪৫০ অব্দের বলে নিশ্চিত করা হয়েছে ।
উয়ারী গ্রামে ৬০০ মিটার দীর্ঘ বাহুবিশিষ্ট বর্গাকৃতি দুর্গ-প্রাচীর ও পরিখা রয়েছে । ৫.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট আরেকটি বহির্দেশীয় দুর্গ-প্রাচীর ও পরিখা আড়িয়াল খাঁ নদের প্রান্তসীমা পর্যন্ত বিস্তৃত । এটিকে স্থানীয় লোকজন অসম রাজার গড় বলে থাকেন । এরূপ দুটো প্রতিরক্ষা প্রাচীর গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক বা প্রশাসনিক কেন্দ্রের নির্দেশক, যা প্রাচীন নগরায়ণেরও অন্যতম শর্ত । উয়ারী গ্রামে আবিষ্কৃত হয়েছে ১৬০ মিটার দীর্ঘ, ৬ মিটার প্রশস্ত একটি প্রাচীন পাকা রাস্তা, যা নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে ইটের টুকরা, চুন, উত্তর ভারতীয় কৃষ্ণমসৃণ মৃৎপাত্রের টুকরা, তার সঙ্গে রয়েছে মাটির লৌহযুক্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র টুকরা । এত দীর্ঘ ও চওড়া রাস্তা এর আগে পুরো গাঙ্গেয় উপত্যকায় দ্বিতীয় নগরায়ণ সভ্যতার কোথাও আবিষ্কৃত হয়নি । গাঙ্গেয় উপত্যকায় দ্বিতীয় নগরায়ণ বলতে সিন্ধু সভ্যতার পরের নগরায়ণের সময়কে বোঝায় । এই রাস্তাটি শুধু বাংলাদেশে নয়, সিন্ধু সভ্যতার পর ভারতবর্ষের পুরোনো রাস্তার একটি ।
পুরাতন ব্রহ্মপুত্র ও আড়িয়াল খাঁ নদের মিলনস্থলের কাছে কয়রা নামের একটি নদীখাদ রয়েছে, যার দক্ষিণ তীরে গৈরিক মাটির উঁচু ভূখণ্ডে উয়ারী-বটেশ্বরের অবস্থান । টলেমির বিবরণ থেকে অনুমান করা যায়, আদি যুগে উয়ারী-বটেশ্বর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও রোমান সাম্রাজ্যের মালামাল সংগ্রহ ও বিতরণের সওদাগরি আড়ত হিসেবে কাজ করত । ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে স্থানটি আদিকাল পর্বের বহির্বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে অনুমিত হয় ।
দলগত কাজ উয়ারী-বটেশ্বর অঞ্চল সম্পর্কিত আলোচিত অংশ হতে মেধাশ্রম ও কায়িকশ্রমের উদাহরণগুলো চিহ্নিত করো । |
আধুনিক সভ্যতায় আগুন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সভ্যতার শুরুতেই মানুষ আবিষ্কার করেছিল আগুন। বলা হয়ে থাকে যে কয়েকটি আবিষ্কার মানুষকে সভ্য মানুষ হিসেবে পরিচিত করেছে তার মধ্যে আগুন অন্যতম। মানব সভ্যতার শুরুর দিকে যখন মানুষ গুহায় কিংবা গাছের ডালে বাস করত তখন আগুন ছিল তাদের কাছে খুব ভয়ের বিষয়বস্তু। তারা আগুনকে ভাবত দেবতার রোষের বহিঃপ্রকাশ। তাই বনে আগুন লাগলে তারা দেবতাকে খুশি করার জন্য নানাকিছু করত। এভাবে শত শত বছর চলে যাওয়ার পর তারা আবিষ্কার করেছে প্রকৃতিতে কীভাবে আগুন সৃষ্টি হয়। কীভাবে শুকনো ডালে ডালে ঘষা লেগে সৃষ্টি হওয়া স্ফুলিঙ্গ তৈরি করে বিশাল আগুন। আবার পাথরে পাথরে ঘষা লেগে কীভাবে আগুন সৃষ্টি হয় সেটাও মানুষ আবিষ্কার করেছিল। কিন্তু শুধু আগুন সৃষ্টি করলেই তো হবে না, আগুনের উপর নিয়ন্ত্রণও থাকতে হবে। আগুনের ব্যবহার আয়ত্ত করতে, আগুনকে নিজের প্রয়োজনে কাজে লাগাতে মানুষের অনেক বছর সময় লেগেছে।
প্রাকৃতিক ঘটনা দেখে শেখা, আগুন ধরানোর কৌশল আয়ত্ত করা ইত্যাদি মেধাশ্রম ও কায়িকশ্রমের সমন্বিত উদাহরণ। আগুনের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে আগুনকে নিজের কাজে লাগানোর দক্ষতা মানুষ অর্জন করেছে মেধাশ্রম ও কায়িকশ্রম একসাথে প্রয়োগ ও অনুশীলনের মাধ্যমে ।
আচ্ছা, ভেবে দেখ তো, আগুন ধরাতে না হয় মানুষ শিখল, কিন্তু আগুনকে নিজের কাজে কীভাবে লাগানো যায়, কোন কোন কাজে লাগানো যায় তা মানুষ শিখল কীভাবে ?
কোনো একদিন হয়তো কিছু ক্ষুধার্ত মানুষ খাবারের খোঁজ করে বেড়াচ্ছিল। খুঁজতে খুঁজতে হয়তো দাবানলের আগুনে পুড়ে যাওয়া কোনো প্রাণীর মাংস তারা খেয়ে বেশ মজা পেয়েছিল। সবাই দেখল যে কাঁচা মাংসের চেয়ে পোড়া মাংসের স্বাদ ভালো। তখন তারা মাংস আগুনে পুড়িয়ে খেতে শুরু করে। এভাবে প্রচলন হয় রান্নার। অর্থাৎ মানুষ আগুনের ব্যবহার শিখেছিল প্রাকৃতিক ঘটনা দেখে। আমরা এখনও প্রাকৃতিক ঘটনা দেখে অনেক কিছু শিখি । আগের দিনে তো দিয়াশলাই ছিল না, ছিল না গ্যাস লাইটারও। মানুষকে পাথর ঘষে ঘষে আগুন জ্বালাতে হতো। এভাবে আগুন জ্বালানো ছিল খুবই কষ্টসাধ্য। তাই বেশিরভাগ মানবগোষ্ঠী সবসময় আগুন জ্বালিয়ে রাখত। কীভাবে দীর্ঘ সময় আগুন জ্বালিয়ে রাখা যাবে তা মানুষ শিখেছিল মেধাশ্রমের মাধ্যমে। মেধাশ্রম মানুষকে শিখিয়েছিল তার জীবনের প্রয়োজন মেটানোর উপযোগী বস্তু ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে। প্রাচীন মানুষের কোনো আনুষ্ঠানিক বিদ্যালয় ছিল না, প্রকৃতির কোলে বসে প্রকৃতি থেকে তারা শিখত। প্রকৃতির নানা ঘটনা দেখে তারা সেটা নিয়ে ভাবত, চিন্তা করত ও মাথা খাটাত। এভাবে মাথা খাটানো মেধাশ্রমের উদাহরণ। অর্থাৎ মেধাশ্রমের মাধ্যমে তারা অনেক কিছু শিখত। যেমন- প্রাচীন মানুষরা খেয়াল করেছিল বাতাস না থাকলে আগুন জ্বলে না। আবার বেশি বাতাসে আগুন নিভে যায়। কাজেই আগুন জ্বালানোর জন্য বাতাস নিয়ন্ত্রণ করাটা জরুরি। আবার ভেজা কোনো কিছুতে আগুন লাগে না। সেটাও মানুষ শিখেছে মেধাশ্রমের মাধ্যমে।
অনেক অনেক আগে মানুষ একা একা বসবাস করত। একসময় তারা বুঝতে পারল একা একা বাস করা খুব কঠিন। সব কাজ নিজেকেই করতে হয়। এছাড়া বন্যপ্রাণীর আক্রমণের ভয় তো আছেই । তাই তারা আস্তে আস্তে দলবদ্ধ হয়ে বসবাস শুরু করল । ভবঘুরে মানুষ হলো সমাজবদ্ধ, সামাজিক জীব । সমাজে বসবাসের প্রয়োজনে মানুষকে অনেক কিছু করতে হতো । অনেক ভারি দ্রব্য এক স্থান হতে অন্য স্থানে নিয়ে যেতে হতো । যেমন- বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, উপাসনালয় ইত্যাদি তৈরির জন্য বড় বড় পাথর খণ্ড । বলতে পার এসব পাথর মানুষ কীভাবে বহন করত? প্রথম প্রথম এসব বড় পাথর খণ্ড ও অন্যান্য জিনিস মানুষ নিজেদের কাঁধে মাথায়ও বহন করত । কিন্তু এতে অনেক শারীরিক সমস্যা হতো । তখন তারা ভারি বস্তুগুলো গাছের গুঁড়ির উপর দিয়ে গড়িয়ে নেওয়ার কৌশল বের করল ।
এভাবে অনেক দিন চলল । বড় বড় ইমারত, পিরামিড ইত্যাদি তৈরির জন্য বিশাল বিশাল পাথর তারা এভাবে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যেত। কিন্তু এতে অনেক সময় লাগত । অনেক গাছ কাটতে হতো । তাই তারা গাছের গুঁড়ির আকৃতির কোনো কিছু বানানোর চেষ্টা করল
এভাবে মানুষ আজ থেকে প্রায় ৫৬০০ বছর পূর্বে ঢাকা আবিষ্কার করেছিল। সাথে সাথে তারা চাকা ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের যানবাহনও তৈরি করেছিল । প্রাচীনকালে তো আজকের মতো আধুনিক যানবাহন ছিল না, তখনকার প্রচলিত বাহন ছিল রথ । মানুষের এই চাকা আবিষ্কার এবং তা নিজের কাজে লাগানো কঠোর মেধাশ্রমের এক জ্বলন্ত উদাহরণ ।
কালক্রমে অনেক উন্নত ধরনের ঢাকা আবিষ্কৃত হয়েছে, যা আমরা নিচের ছবিতে দেখতে পাচ্ছি।
দলগত কাজ উপরের এই ছবিতে আমরা দেখতে পাচ্ছি তা মা সমাজে ঢাকার ধারণা পরিবর্তিত হয়েছে । তোমরা কি বলতে পারো এই পুরো প্রক্রিয়ায় কোথায় কোথায় মেধাশ্রম আর কোথায় কোথায় কামি बबজछ হয়েছে१ |
মানুষ যখন বুঝল যে ভারি বোঝা বয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছে, সে আবিষ্কার করল নতুন কিছু যা তার সমস্যা দূর করবে। যে প্রক্রিয়ার মানুষ এটা করল তা আসলে মেধাশ্রম। সাথে অবশ্য কারিকামও আছে । ঢাকা আবিষ্কার করার জন্য আবিষ্কারকদের নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়েছে।
হবে নাকি আবিষ্কারক। কেউ বড় হয়ে হতে চায় ডাক্তার, কেউবা শিক্ষক, কেউবা ইঞ্জিনিয়ার। তুমি কী হতে চাও? ভেবে দেখো দেখি- একজন আবিষ্কারক হলে কেমন হয়!
দলগত কাজঃ আমরা জানি ঢাকা গোল । কখনো কি এমন ঢাকা দেখেছ যা চারকোণা? আচ্ছা, ঢাকা কেন চারকোণা হয় না। চারকোণা হলে কী হতো- তা তোমার পাশের বন্ধুর সাথে আলোচনা করে লিখে ফেল। |
আমরা সাধারণত একটি পাত্রে খাবার নিয়ে সেখান থেকে হাত দিয়ে বা চামচ দিয়ে খাই। কখনো কী ভেবে দেখেছ আমরা যেসব পাত্রে খাবার খাই, সেগুলোর আকার কী রকম, রংই বা কী রকম? এসব পাত্ৰ বিভিন্ন আকারের ও রংয়ের হয়ে থাকে এবং বিভিন্ন ধরনের উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়। সেই প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ পাত্র তৈরি এবং বিভিন্ন কাজে এর ব্যবহার করে আসছে । শুরুতে মানুষ কাদামাটি দিয়ে শুধু হাতের সাহায্যে বিভিন্ন আকারের পাত্র তৈরি করত, সেগুলোতে কোনো নকশা থাকত না। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে মানুষ তার মেধাশ্রম ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে এবং এর ফলে আমরা বর্তমানে যেসব পাত্র দেখি সেগুলো তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। যেমন— 'কুমোরের চাকা' আবিষ্কার মানুষের মেধাশ্রমের ফসল । এছাড়া গ্লেজিং ও নকশা করার মাধ্যমে পাত্রের নান্দনিকতা বৃদ্ধি পেয়েছে । যারা মাটি দিয়ে বিভিন্ন জিনিসপত্র হাঁড়ি তৈরি করে তারা আমাদের সমাজে কুমোর নামে পরিচিত । তোমরা কি বলতে পারো, মাটি ছাড়া আর কী কী উপাদান দিয়ে পাত্র তৈরি করা হয়? মাটি ছাড়াও পোর্সেলিন (চিনা মাটি), কাচ, পিতল, প্লাস্টিক ইত্যাদি দিয়ে পাত্র তৈরি
করা হয় ৷
কিন্তু নিচের ছবিতে যেসব প্রাচীন পাত্রের ছবি দেওয়া হয়েছে সেগুলো কী কী দিয়ে তৈরি হত এবং কী কাজে লাগত তা কি তোমরা বলতে পারবে?
সমাজে অনেক পেশাজীবী আছেন যারা বিভিন্ন ধরনের বাসনপত্র তৈরি করেন । তাদের কেউ তৈরি করেন তামা ও পিতলের, আবার কেউ তৈরি করেন টিন বা অ্যালুমিনিয়মের বাসন-কোসন । ঢাকার অদূরে নবাবপুর এলাকায় বাসন-কোসন তৈরির অনেক ছোট ছোট কারখানা আছে। আমাদের সমাজের অনেকেই বংশ পরম্পরায় শত শত বছর ধরে এ কাজ করে আসছে । এছাড়া বর্তমানে কারখানায় প্লাস্টিক, মেলামাইন, চিনামাটি, কাচ, স্টেইনলেস স্টিল ইত্যাদি দিয়ে বাসন-কোসন তৈরি হয় । অনেকেই সেখানে কাজ করেন । এসব কাজ করা সম্মানের । কারণ যারা সেখানে কাজ করেন তাদের নিষ্ঠা ও শ্রমের ফলেই আমরা এত আরাম-আয়েশ করে সুন্দর পাত্রে খেতে পারি । অনেকেই আছেন যারা বাসনপত্র কেনাবেচা করেন । এছাড়াও আমাদের সমাজে কামার, কাঠমিস্ত্রি, গার্মেন্টস শ্রমিক, বিভিন্ন যানবাহনের চালক, তাঁতী ইত্যাদি বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ আছেন যারা তাদের কায়িকশ্রম ও মেধাম্রমের মাধ্যমে আমাদের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে । আমরা এ ধরনের সকল পেশাজীবী মানুষের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করব ।
একক কাজ তোমার পরিচিত এমন একজন মানুষ সম্পর্কে একটি অনুচ্ছেদ লেখ যিনি দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি বা বিক্রয় করেন । লেখার আগে তোমরা তার সাথে কথা বলে তিনি কীভাবে কাজ করেন; কাজ করতে গিয়ে তিনি কীভাবে কায়িক শ্রম ও মেধাশ্রমের সমন্বয় ঘটান জেনে লেখ । |
মানুষ যে শুধু আজকেই চিন্তা করছে, তা কিছু নয়। সেই আদিকাল থেকেই চিন্তা করে আসছে মানুষ। প্রতিনিয়ত ভাবছে, কী করে জীবনটাকে আরো উন্নত করা যায়, করা যায় আরো আরামদায়ক ও ঝুঁকিহীন। আর এভাবে ভাবতে ভাবতে মানুষ আবিষ্কার করেছে নানা কিছু। এক দেশের মানুষ বা আবিষ্কার করল, আরেক দেশের মানুষ বা বহুকাল পরের মানুষ তা কীভাবে জানবে। এ নিয়ে প্রাচীনকালে খুবই সমস্যা হতো। কোনো কিছু ফাউকে জানাতে গেলে নিলে গিয়ে, না হর দূত পাঠিয়ে জানাতে হতো। যা ছিল অনেক সমস্যার। এছাড়াও মনে ফক্স একটি কুলের মানুষ কিছু আবির করুন বা কোনো ক বসান। এ ব কীভাবে বানাতে হয় পত্রের যুগের মানুষের তা জানার কোम উপর লि না। ই বি হলো न य सी मনুষ লিখতে শিখল। লিখন গতি ঠিক কবে কীভাবে শুরু করা হরেছিল সে বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায় না। তবে এখন পর্যন্ত সার্বিকৃষ্ণ সর্বপ্রাচীন লেখার প্রচলন ছিল ফিনিশ অক্ষির মধ্যে।
শুরুর দিকে লেখা ছিল ছবিভিত্তিক। বাস্তব জীবনের ঘটনা, গাছ-মাছ-নদী-পাহাড়-মানুষ ইত্যাদির ছবি এঁকে মানুষ তার মনের ভাষা বোঝাত । এসব ছবি একের পর এক সাজিয়ে দিয়ে হয়ে যেত একেকটি বাক্য । তবে এভাবে লেখা খুবই কষ্টসাধ্য এবং সময়সাপেক্ষ ছিল। কাজেই ধীরে ধীরে মানুষ আরো সরল চিহ্নসমূহ ব্যবহার করতে লাগল।
লিপি বা লিখন পদ্ধতির উদ্ভব নিয়ে মজার মজার সব উপকথা বা রূপকথা আছে। চীনের উপকথা অনুযায়ী সাং চিয়েন নামের এক ড্রাগনমুখো লোক প্রাচীনকালে চিনা অক্ষরগুলো তৈরি করেছিলেন।
মিসরের উপকথা অনুযায়ী পাখির মতো মাথা এবং মানুষের মতো দেহবিশিষ্ট দেবতা পথ মিসরীয় লিপি সৃষ্টি করেছিলেন।
উপমহাদেশের উপকথা অনুযায়ী দেবতা ব্রহ্মা ভারতবর্ষের প্রাচীন লিপি আবিষ্কার করেছিলেন। তাই তার নাম অনুসারে ঐ লিপির নামকরণ করা হয় ব্রাহ্মীলিপি । আমাদের বাংলালিপি কিন্তু এই ব্রাহ্মীলিপি থেকেই এসেছে।
লিখন পদ্ধতির আবিষ্কার মানব সভ্যতার জন্য অনেক বড় আবিষ্কার। এ আবিষ্কার একদিকে যেমন মানুষের কঠিন মেধাশ্রমের ফল, তেমনি এর ফলে মানুষের অন্যান্য মেধাশ্রম সৃষ্ট বিজ্ঞানের আবিষ্কার, প্রাচীন জীবনযাপনের কথা, সভ্যতার কথা, ইতিহাস, বিভিন্ন দেশ ও জাতির কথা, প্রাকৃতিক সম্পদের কথা সংরক্ষণ করা গেছে।
প্রাচীনকালে সবাই লিখতে পারত না। যারা লিখতে পারত তাদেরকে বলা হতো 'লিপিকর' । এখনো আমাদের দেশে অনেক লিপিকর আছেন যারা বিভিন্ন দলিলাদি লেখেন ।
নিচে অনেক পেশার চিত্র দেওয়া হয়েছে । চিত্রের পাশে বক্সে লেখা কোনটা মেধাশ্রম আর কোনটা কায়িকশ্রম? কেন তুমি ঐ কাজকে কায়িকশ্রম বা মেধাশ্রম বলছ ?
একটি উদাহরণ হিসেবে করে দেওয়া হয়েছে-
মেধা, কায়িকশ্রম ও আত্মঅনুসন্ধান
সেই প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ ভাবছে আহা এমন কিছু যদি বানানো যেত যা আমাদের কথা শুনত, বিপজ্জনক কাজগুলো যদি করে পিত! এমন অনেক কাজ আছে যা আমাদের পক্ষে করা কঠিন বা অসম্ভব। এ রকম কাজ করে দেওয়ার জন্যই মানুষ রোবট আবিষ্কার করেছে। আচ্ছা, তোমরা তো জানো রোবট কী- তাই না? রোবট হলো 'মানব'। কলকবজা নিয়ে তৈরি বা নিজে থেকে কোনো কাজ করতে পারে না।
এসব চিত্র দেখে তোমার কী মনে হচ্ছে রোবট তৈরি করা সহজ নয়। কিন্তু আমরা যদি চাই তাহলে অবশ্যই আমরা রোবট বানাতে পারব। সেজন্য আমাদের অনেক লেখাপড়া করতে হবে এবং যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।
আচ্ছা তোমরা কি জানো, কখন কীভাবে রোবটের ধারণা এসেছে? রোবট নিয়ে প্রথম ভাবনা চিন্তা করেছিলেন, মহাপণ্ডিত এরিস্টটল। ৩২০ খ্রিষ্টপূর্বে তিনিই প্রথম এ ধারণার কথা মানুষকে শোনান। তখনকার দিনে সমাজে 'দাসপ্রথা ছিল। অনেককেই দাস-দাসী হিসেবে মনিবের সেবা করতে হতো, করতে হতো নানা কাজ । তাদের খুব কষ্ট করতে হতো। তা দেখে এরিস্টটলের মনে খুব দুঃখ হলো । তিনি ভাবলেন, আহা এমন বস্ত্ৰ যদি বানাতে পারতাম যাকে আদেশ দিলেই তা ঠিক ঠিক কাজ করে ফেলতে পারবে।
দলগত কাজঃ তোমার চারপাশের কোন কাজ সবচেয়ে কষ্টের? একটু ভেবে দেখ, তারপর ঐ কাজ করতে পারবে 'এমন একটা রোবটের কল্পিত ছবি আঁক এবং তার একটা নাম লাও । |
এরিস্টটলের পর বহুদিন রোবট নিয়ে তেমন কোনো কাজ হয়নি। আসলে তখনকার দিনে তো এমন উন্নত প্রযুক্তি ছিল না। ভাই মানুষ রোবট বানাতে পারেনি। এরিস্টটলের এই ভাবনার বহুদিন পরে রোবট বানানোর চেষ্টা করেছিলেন আরেকজন প্রতিভাধর মানুষ যার নাম লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি। লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি একজন অসাধারণ মেধাশ্রমিক। আধুনিক বিজ্ঞানের অসংখ্য আবিষ্কারের পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি। তার অনেক পরিকল্পনার মতো রোবট বানানোর পরিকল্পনাও তখন প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে বাস্তবায়ন করা যায়নি।
এরপর ১৭০০-১৯০০ সালের মধ্যে মানুষ অনেক ছোটখাটো রোবট বানানোর চেষ্টা করেছে। অনেকে বেশ সফল হয়েছিলেন। এ সকল মানুষের মধ্যে অন্যতম ছিলেন জ্যাক দ্য ডকেনসন। তিনি একটা রোবট হাঁস বানিয়েছিলেন যেটা গলা বাড়াতে পারত, পাখা নাড়াতে পারত।
১৯৯৩ সালে হেনরি ফোর্ড তার গাড়ি তৈরির কারখানায় সর্বপ্রথম কোনো স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রকে কাছে লাগিয়েছিলেন। স্বয়ংক্রির যন্ত্রকে রোবট বলা শুরু হলো ১৯২০ সালের দিকে। রোবট শব্দটির প্রচলন করেন নাট্যকার ক্যারেল কাপেক। সেই শুরু । তৈরি হলো একের পর এক রোবট। কোনো রোবট করে খনির কাজ, কোনোটি করে ঘর পরিষ্কার, কোনো কোনো রোবট কাজ করে কারখানার। আবার কোনো রোবটকে পাঠানো হয় মহাশূন্যে। আজকাল এমন অনেক রোবট তৈরি হচ্ছে যারা মানুষের মতো কথা বলতে পারে, নাচতে পারে এমনকি এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখতে পারে।
রোবট বানানো মেধাশ্রমের উদাহরণ । রোবট বানাতে হলে অনেক কিছু পড়তে হয়, জানতে হয়, অনেক কৌশল শিখতে হয় । সাথে প্ররোজন বুদ্ধি, নিত্যনতুন চিন্তা করার ক্ষমতা, মাথা খাটানো এবং প্রয়োজনীয় উপকরণ। ভেবে দেখ দেখি, কেমন হবে যদি বন্ধুরা মিলে একটা রোবট বানিয়ে ফেলা যায়।
মহাশূন্যের হাতছানি কখনো ফিরিয়ে দিতে পারেনি মানুষ। রহস্যে ঘেরা অজানা এই মহাশূন্য নিয়ে মানুষের আগ্রহের কমতি নেই। তাই শিল্পীর ছবি থেকে শুরু করে পর-কবিতা সব জায়গায় আছে মহাশূন্যের কথা । তোমাদের মনে আছে তো, ছবি আঁকা, গল্প বা কবিতা লেখা কিসের উদাহরণ? মেধাশ্রম । কল্পনা করাও এক ধরনের মেধাশ্রম। অনেক লেখকই আছেন যারা কল্পকাহিনী লেখেন। এসব কাহিনীতে আবার বিজ্ঞানের নানা বিষয় নিয়েও লেখা হয় । তাই এসব কাহিনীকে বলে করাবিজ্ঞান বা সায়েন্স ফিকশন । বান্না কল্পবিজ্ঞান লেখেন তাদের বলা হয় কল্পবিজ্ঞান লেখক। তোমাদের মধ্যেও হয়তো অনেকে বড় হয়ে কল্পবিজ্ঞান লেখক হবে ।
যারা কল্পনার নয়, সত্যি সত্যি মহাকাশে যান তাদের বলা হয় নভোচারী বা অ্যাস্ট্রোনট ।
নভোচারী হতে গেলে অনেক লেখাপড়া করতে হয়। সাথে সাথে বিভিন্ন কারিগরি কলাকৌশল জানতে হয়। শারীরিকভাবেও সুস্থ হতে হয়। অনেক দিন ধরে ট্রেনিং নিয়ে, অনেকগুলো পরীক্ষা দিয়ে সন্তোষজনক ফল করলে তবেই যাওয়া যায় মহাকাশে ।
সোহাগ ও সোনিয়া ভাইবোন। তারা বড় করে নভোচারী হতে চার। তাই ওরা এখন থেকেই সুম খাবার পাওয়া ব্যায়ামের মাধ্যমে সুস্থ সবল থাকা এবং পড়াশোনা ইত্যাদির প্রতি খুব মনোযোগী।
নভোচারী ছাড়াও আমরা হতে পারি রকেট ইঞ্জিনিয়ার, মহাকাশ বিজ্ঞানীসহ আরো অনেক কিছু । এমনকি পৃথিবী ছাড়া অন্য গ্রহে মানুষ বসতি স্থাপন করতে চাইলে তাদের বাড়ি-ঘরের ডিজাইনার হতে পারি আমরা । এমনকি ভিনগ্রহের প্রাণীদের (এলিয়েন) জন্য পোশাকের ডিজাইনও করতে পারি আমরা। বেশ মজার ব্যাপার না? আচ্ছা তোমরা জানো তো মহাকাশে মানুষের অভিযান শুরু হয়েছিল কীভাবে?
মানুষের মহাকাশে উড়ার স্বপ্ন বহুদিনের। ১৯১২ সালে ব্রিটেন বেলুন ফ্লাইট চালু করেছিল। যদিও ব্রিটেনের সে চেষ্টা ব্যর্থ হয় । মহাশূন্যে পাঠানো প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ হলো স্পুটনিক-১, যা ১৯৫৭ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন মহাকাশে পাঠায়। আচ্ছা 'কৃত্রিম উপগ্রহ' সম্পর্কে তোমরা কী জানো? পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে এমন বস্তুকে পৃথিবীর উপগ্রহ বলা হয়। যেমন চাঁদ আমাদের পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে তাই চাঁদ আমাদের উপগ্রহ। চাঁদ তো আর মানুষ বানায়নি, তাই চাঁদকে বলা হয় প্রাকৃতিক উপগ্রহ। আর মানুষের তৈরি যেসব বস্তু পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে সেগুলোকে বলে কৃত্রিম উপগ্রহ। তুমি চাইলে বড় হয়ে এসব কৃত্রিম উপগ্রহ বানাতে পারো । তবে সেজন্য তোমাকে এ বিষয়ে লেখাপড়া করতে হবে । কৃত্রিম উপগ্রহ খুবই প্রয়োজনীয় । এই যে আমরা টেলিভিশন দেখি, আবহাওয়ার খবর পাই, ইন্টারনেট ব্যবহার করি-এর অনেক কিছুই সম্ভব হয়েছে কৃত্রিম উপগ্রহের কারণে। ভূমি বড় হয়ে টেলিভিশন বা অন্য যোগাযোগ মাধ্যমের সম্প্রচার বিশেষজ্ঞও হতে পারো। আজকালকার দিনে এ সকল পেশার অনেক চাহিদা।
একক কাজঃ মনে করো, কোনো মহাকাশ অভিযানে গিয়ে তোমার যদি হঠাৎ কোনো ভিনগ্রহবাসীর সাথে দেখা হয়ে যায় তবে তাকে কী কী প্রশ্ন করবে তার একটা তালিকা তৈরি করো। তার পেশা কী সেকথা জেনে নিতে ভুলে যেওনা কিন্তু |
মোস্তাফিজুর রহমান একটি ব্যাংকে বেশ বড় পদে চাকরি করেন। তিনি ছোটবেলা থেকেই ব্যাংকে চাকরি করার স্বপ্ন দেখতেন। কারণ তার কাছে 'ব্যাংকার পেশাটাই ছিল সব পেশা থেকে ভালো । তাই ব্যাংকার হওয়ার জন্য তিনি খুব মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করতেন । লেখাপড়া শেষে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি চাকরি পান। কর্মনিষ্ঠা ও সততার জন্য আজ তিনি একজন সফল ব্যাংকার । তার আত্মমর্যাদাবোধ খুবই প্রখর । আত্মমর্যাদাবান মানুষেরা খুব সৎ হন। তিনি ব্যাংকে চাকরি পেয়েছেন লেখাপড়া করে, নিয়োগ পরীক্ষায় ভালো ফল করে। অনেকে অনৈতিক উপায়ে চাকরি পায়। তিনি অনৈতিক কিছু সমর্থন করেন না। তিনি সবরকম অন্যায় করা থেকে বিরত থাকেন । তিনি বিশ্বাস করেন, সম্মান একবার হারিয়ে গেলে আর ফিরে আসে না । তিনি তার পরিবারের সদস্যদের সম্মান করেন, ভালোবাসেন। তিনি তার প্রতিবেশীদের শ্রদ্ধা করেন এবং তাদের কোনোরকম অসুবিধা হবে এমন কাজ তিনি করেন না । তিনি বলেন, যারা ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত থাকে, যারা অন্যের ক্ষতি করে, রাস্তাঘাটে মেয়েদের প্রতি বাজে মন্তব্য করে তাদের আত্মমর্যাদাবোধ কম । তাঁর মতে যারা বন্ধু, পাড়া- প্রতিবেশীদের সম্মান করে না, চাকরি পাওয়ার বা দেওয়ার জন্য অনৈতিক কাজ করে তারা সবাই আত্মমর্যাদাহীন। কোনো আত্মমর্যাদাবান মানুষ এ সকল কাজ করতে পারে না । আমরা যদি আত্মমর্যাদাবান হতে চাই তাহলে আমরা-
পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করব না, বন্ধুর খাতা দেখে লিখব না। চাকরি পাওয়ার বা দেওয়ার জন্য অনৈতিক কিছু করব না। নিজের যোগ্যতাতেই আমরা কাজ পাব । নিজের কাজে কখনো ফাঁকি দেব না । যারা অফিসে কাজে ফাঁকি দেয় তাদের আমরা ঘৃণা করব ।
অনেকে মিথ্যা কথা বলেন, রাস্তায় বা মার্কেটে গিয়ে বলেন 'আমি অফিসে...' আমরা এমন করব না । যাদের আত্মমর্যাদা আছে, তারা সবসময় সত্য কথা বলে । অনেকেই আছে যারা অন্যের সম্পদ নষ্ট করে। দেশের সম্পদের ক্ষতি করে। প্রতিবাদের নামে রাস্তাঘাটে গাড়ি ভাঙচুর করে। যারা এমনটি করে তাদের আত্মমর্যাদাবোধ নেই। আমরা তাদের মতো হব না ।
যারা কাজে ফাঁকি দেয় তারা আত্মমর্যাদাবান না । যারা আত্মমর্যাদাবান তারা কখনো কাজে ফাঁকি দেন না। আমরা কখনো আমাদের কাজে ফাঁকি দেব না ।
একজন আত্মমর্যাদাবান মানুষ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্মান করে। সকল জাতি-ধর্মের মানুষকে ভালোবাসে, শ্রদ্ধা করে । আমরাও সবাইকে সম্মান করব, শ্রদ্ধা করব ।
একজন আত্মমর্যাদাবান শিক্ষার্থী নিয়মিত স্কুলে যায়; লেখাপড়া করে। পাঠসমূহ যথাযথভাবে আত্মস্থ করে আত্মবিশ্বাসের সাথে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। যেকোনো পরিস্থিতিতে সততার সাথে তার কার্যক্রম সম্পন্ন করে । তার চর্চিত-আত্মসচেতনতাই তাকে একদিন আত্মমর্যাদাবান মানুষে পরিণত করে ।
একজন আত্মমর্যাদাবান শিক্ষক সর্বদা সময়মত শ্রেণিতে আসেন। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় যত্নবান থাকেন । নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করেন। পরীক্ষায় সকল শিক্ষার্থীকে সঠিক মূল্যায়ন করেন। অনগ্রসর শিক্ষার্থীকে অতিরিক্ত পরিচর্যার মাধ্যমে তার ঘাটতি পূরণ করেন ।
একক কাজ
কর্মক্ষেত্রে:
|
আমরা আত্মমর্যাদার বিষয়ে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে পড়েছি। আমাদের জীবনে আত্মমর্যাদার স্বরূপ কেমন হওয়া উচিত তা আমরা শিখেছি। শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে একজন আত্মমর্যাদাবান মানুষ কী করে আর কী করে না সেটাও আমরা জেনেছি। আমরা আমাদের জীবনে নিশ্চিতভাবেই আত্মমর্যাদাবান হওয়ার চেষ্টা করব। এসো আজ আমরা যাচাই করে দেখি আমরা কতটা আত্মমর্যাদাবান। এজন্য আমরা নিচের বাক্যগুলো বা নির্দেশনাগুলো পড়ব এবং তারপর সেটা কি সবসময় করি নাকি প্রায়ই করি ইত্যাদি ধরন অনুযায়ী নির্দেশনার নিচের ঘরে প্রাপ্ত নম্বরগুলো লিখব। কেমন করে লিখতে হবে তা নিচে দেখ
এবার চলো শুরু করি—
এবার আমরা প্রতিটি নির্দেশনার জন্য বিভিন্ন ঘরে বসানো সংখ্যাগুলো যোগ করি । যোগফল কত হলো তা দেখে নিচের মন্তব্যগুলো পড়ি-
৫০-৪১ : খুব ভালো। তুমি একজন আত্মমর্যাদাবান মানুষ। তুমি সবসময় আত্মমর্যাদাবান হয়ে থাকার চেষ্টা
করবে। অন্যরাও যাতে আত্মমর্যাদাবান হয় সেজন্য চেষ্টা করবে।
৪০-৩১ : তুমি অনেকটাই আত্মমর্যাদাবান। সচেতন হলে তুমি আরো আত্মমর্যাদাবান হতে পারবে। সেজন্য তোমার শিক্ষকের পরামর্শ নেওয়া উচিত ।
৩০-২১ : তোমার মধ্যে আত্মমর্যাদাবান হওয়ার সকল উপাদান আছে। তাই তোমাকে আত্মমর্যাদাবান হওয়ার জন্য চেষ্টা করতে হবে। শিক্ষকের পরামর্শ ও বন্ধুদের সাহায্য নিয়ে তুমি যা যা শিখেছ এবং আত্মমর্যাদাবান মানুষেরা যা যা করে তার চর্চা করে যাও।
২০ ও এর নিচে : তোমাকে একজন আত্মমর্যাদাবান মানুষ হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। তুমি যদি আত্মমর্যাদাবান হও তবে সবাই তোমাকে শ্রদ্ধা করবে, আদর করবে। তাই তোমার উচিত আত্মমর্যাদাবান মানুষেরা যা করে তা সবসময় করার চেষ্টা করা ।
আত্মবিশ্বাসী হলে সফলতা আসবে- সবাই এমনটিই বলে থাকেন। শিক্ষায় আত্মবিশ্বাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। দুটো বিষয়ের মধ্যেই রয়েছে গভীর অন্তর্নিহিত সম্পর্ক। পরিপূর্ণ শিক্ষিত মানুষ যেমন আত্মবিশ্বাসী হয়ে গড়ে উঠে, তেমনি একজন আত্মবিশ্বাসী মানুষও শিক্ষার বহুমাত্রিক উন্নয়ন ও বিকাশের বিষয়টিকে যথাযথ ধারণ ও কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনকে অর্জন করতে পারে। শিক্ষাক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাসী হলে কী কী বৈশিষ্ট্য শিক্ষার্থীর মধ্যে থাকবে এস তা আমরা জানার চেষ্টা করি।
আত্মবিশ্বাস মানে হলো নিজের প্রতি আস্থা। কাজেই একজন শিক্ষার্থীকে তার প্রতিটি কর্মকাণ্ডের মধ্যেই আস্থার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। যেমন: তোমাকে সঠিক সময়ে বিদ্যালয়ে তথা শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত হতে হবে শ্রেণিকক্ষের প্রতিটি কার্যক্রমে (শিখন শেখানো) তোমাকে আস্থা ও দৃঢ়তার সাথে অংশগ্রহণ করতে হবে; একক ও দলীয় কাজে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে হবে, পাঠ মূল্যায়নে পরিস্কার ও স্পষ্টভাবে উত্তর প্রদান করতে হবে, শ্রেণির শৃঙ্খলা বজায় রাখা, যে কোনো জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলায় শ্রেণি শিক্ষককে সহায়তায় অগ্রণী ও গাঠনিক ভূমিকা রাখতে হবে। এছাড়া বাড়ির কাজ সঠিকভাবে যথাসময়ে সম্পন্ন করা ও জমাদানসহ শিক্ষামূলক কার্যক্রমে আস্থার সাথে অংশগ্রহণ করতে হবে। তবেই তোমার মধ্যে আস্থা তথা আত্মবিশ্বাস জন্ম নেবে। একই সাথে শিক্ষার বহুমাত্রিক বিকাশও ত্বরান্বিত হবে। একজন আত্মবিশ্বাসী শিক্ষার্থী শুধু শিক্ষাক্ষেত্রেই নয়, জীবনব্যাপী এই আত্মবিশ্বাসের নিরন্তর চর্চার মাধ্যমে সফল ও নান্দনিক জীবনযাপনে সক্ষম হবে।
কর্মক্ষেত্রে মানুষের আত্মবিশ্বাসী হওয়া আরো বেশি প্রয়োজন। কাজের ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাসী না হলে সফল হওয়া অসম্ভব। কাজের মাধ্যমেই মানুষ পারে মানুষের মাঝে স্থান করে নিতে, পারে কালের গর্ভে বিলীন না হয়ে মহাকালের স্বর্ণপাতায় স্থান নিতে ৷
কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে বা কর্মজগতে আত্মবিশ্বাসী হওয়ার মানে কী? কীভাবে আমরা আমাদের কর্মক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাসী হতে পারি? যারা কর্মক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাসী তাদের বৈশিষ্ট্যগুলোই বা কী- এসব কিছুই আমরা জানার চেষ্টা করব।
“নিজের প্রতি আস্থা” । নিজের প্রতি আস্থাবান না হলে ভালো কিছু করা যায় না। নিজের প্রতি এই আস্থা অর্জিত হয় নিজের করা কাজ, দক্ষতা, ক্ষমতা, যোগ্যতার স্বীকৃতি পাওয়ার মাধ্যমে। মনে কর, স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তুমি ‘উপস্থিত বক্তৃতা'য় প্রথম হয়েছো। তাহলে নিজের প্রতি তোমার আস্থা জন্মাবে যে তুমি যেকোনো বিষয়ের উপর সবার সামনে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ কথা বলতে পারবে। কিংবা মনে কর, তোমার লেখা গল্প জাতীয় পর্যায়ে গল্প লেখা প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পেল। তখন তোমার নিজের উপর এই আস্থা তৈরি হবে যে তুমি গল্প লিখতে পারো ।
আত্মবিশ্বাসের দ্বিতীয় উপাদান হলো সাহস। অনেকেই অনেক কিছু পারে । অনেক কিছু জানে কিন্তু সাহসের অভাবে বলতে বা করতে পারে না। আমরা এমনই সাহসের প্রমাণ পাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কিশোর বয়সের একটি ঘটনা থেকে । তখন তিনি গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। এসময় গোপালগঞ্জ সফরে আসেন স্বনামধন্য নেতা ও তৎকালীন মন্ত্রী শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হক এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। তাঁরা মিশন স্কুল পরিদর্শনে গেলে তাঁদের পথ আগলিয়ে দাঁড়ান কিশোর মুজিব ও তাঁর সঙ্গীরা। প্রধানশিক্ষক ঘাবড়িয়ে যান এবং কিশোর মুজিবকে মন্ত্রীদের সামনে থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন কিন্তু তিনি সরলেন না।
বরং তিনি মন্ত্রীদের কাছে হোস্টেলের ভাষা ছাদ মেরামতের দাবী জানালেন। শেরেবাংলা তাৎক্ষণিকভাবে তাঁর ঐচ্ছিক তহবিল থেকে ছাদ মেরামতের জন্য অর্থ মঞ্জুর করলেন। এভাবে বঙ্গবন্ধু তাঁর সাহস ও আত্মবিশ্বাসের জোরেই হরে উঠেন এদেশের কোটি কোটি মানুষের মহান নেতা ও পদ প্রদশক।
আত্মবিশ্বাসের আরেকটি উপাদান হলো 'সচেতনতা। একজন আত্মবিশ্বাসী মানুষ সবসময় তার নিজের এবং পারিপার্শ্বিকতার প্রতি সচেতন । একজন আত্মবিশ্বাসী মানুষ সবসময় খেয়াল করেন তার চারপাশে কী হচ্ছে এবং তিনি কী করছেন। না জেনে, না বুঝে অন্ধবিশ্বাসী হওরা যায়, আত্মবিশ্বাসী হওয়া যায় না ।
আত্মবিশ্বাসী মানুষেরা সবসময় পরিকল্পনা করেই কাজে নামেন। তারা তাদের পরিকল্পনা ও কাজে দূরদর্শিতা এবং প্রজ্ঞার সমন্বয় ঘটান। ফলে তাদের সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যারা দূরদর্শী নয় তারা আত্মবিশ্বাসী হতে পারে না। দূরদর্শিতার সাথে পরিকল্পনা না করলে কাজ করার সময় নানা অমূলক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। একজন আত্মবিশ্বাসী মানুষ জানে কাজের প্রতি ভালোবাসা না থাকলে কোনো কাজ দীর্ঘদিন ধরে করা যায় না। তাই তারা এমন পেশা নির্বাচন করে না, যে পেশার প্রতি তাদের সত্যিকারের ভালোবাসা বা ভালোলাগা নেই। আমরা যদি আত্মবিশ্বাসী হতে চাই, বিশেষত কোনো কাজের ক্ষেত্রে, তবে আমাদের প্রথমেই অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে ভালো পরিকল্পনা করতে হবে। সাহসের সাথে পরিকল্পনা মাফিক এগিয়ে যেতে হবে। পর্যবেক্ষণ থেকে শুরু করে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন সকল ক্ষেত্রেই আমাদের নিজের প্রতি আস্থাশীল হতে হবে। তবেই আমরা সফল হতে পারব।
একক কাজ একজন কর্মজীবী মানুষের সাক্ষাৎকার সাও। তার সাথে কথা বলে জানতে চেষ্টা করো তিনি যে সফল কাজ করেন সেসব কাজে আত্মবিশ্বাস তাকে কীভাবে সাহায্য করে। এই কর্মজীবী মানুষ হতে পারে তোমার বাবা-মা, পাড়া-প্রতিবেশী বা অন্য কেউ। |
দলগত কাজ আমরা উপরের শ্রেণি / ক্ষার্থীকে আম আসা। সে কথা বলে জানতে চেষ্টা করি তাদের সফলতার আত্মবিশ্বাস কীভাবে সাহায্য করেছে। এই সকল শিক্ষার্থীদের কেউ হতে পারে বিতর্কে, কেউ সংগীতে, কেউ আকার বা পড়ালেখার সফল। |
এসো আজ আমরা নিজেরা আমাদের আত্মবিশ্বাস যাচাই করি ।
নিচে দশটি নির্দেশনা দেওয়া আছে। আমরা নিচের নির্দেশনাগুলো পড়ব এবং তারপর সেটা কি সবসময় করি নাকি মাঝে মধ্যে করি, নাকি প্রায়ই করি ইত্যাদি ধরন অনুযায়ী নিচের ঘরে প্রাপ্ত নম্বর লিখব । আমরা সবাই সততার সাথে উত্তর দিব এবং খুব তাড়াতাড়ি দিব । বেশি দেরি করব না বা পাশের বন্ধুর উত্তর দেখে লিখব না । পূর্বের পাঠের নিয়মেই নম্বর দিব।
এসো শুরু করি-
এবার আমরা প্রতিটি নির্দেশনার কাজ অনুযায়ী বিভিন্ন ঘরে বসানো সংখ্যাগুলো যোগ করি । যোগফল কত হলো তা দেখে নিচের মন্তব্যগুলো পড়ি-
৫০-৪১: তুমি জানো তুমি কে এবং তুমি কী হতে চাও। তুমি অনেক আত্মবিশ্বাসী ।
৪০-৩১: তুমি যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী। তবে তুমি চাইলে আরো ভালো করতে পারো ।
৩০-২১: তোমার মধ্যে আত্মবিশ্বাসী হওয়ার উপাদান আছে । তোমার উচিত তোমার সাহসকে কাজে লাগানো । তোমার ভিতরে যে জড়তা তা তোমাকে কাটিয়ে উঠতে হবে । আর এ জন্য তোমাকে প্রথমেই তোমার দুর্বলতার বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
২০ ও এর নিচে : তোমাকে একজন আত্মবিশ্বাসী মানুষ হওয়ার চেষ্টা করতে হবে । আত্মবিশ্বাসী হতে হলে তোমাকে অন্যের উপর নয়, নিজের চিন্তা-ভাবনা বিচার-বুদ্ধির উপর আস্থাশীল হতে হবে । শিক্ষকের পরামর্শ ও বন্ধুদের সাহায্য নিয়ে তুমি আত্মবিশ্বাসী হওয়ার চর্চা করে যাও।
আমরা সবাই ভালোভাবে লেখাপড়া করে কর্মজীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে চাই । কেউ ভাবে বড় হয়ে সে শিক্ষক হবে, কেউ ভাবে সে নিজে একটা ব্যবসা শুরু করবে। তবে শিক্ষা জীবন ও কর্মজীবনে যেকোনো কাজে সফলতা অর্জনের জন্য সৃজনশীল হতে হবে। একজন সৃজনশীল মানুষ যেকোনো কাজে অনেক ভালো করতে পারে । যেমন— একজন সৃজনশীল শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার পাশাপাশি সকল সহ-শিক্ষাক্রমিক কার্যক্রমে তার সৃজনশীলতার বহিপ্রকাশ ঘটায়। সৃজনশীল মানুষরা কেমন, এসো তাদের বৈশিষ্ট্যগুলো জেনে নিই-
একক কাজ
শিক্ষা জীবনে আমি কীভাবে সৃজনশীল হব'। |
আমরা প্রায়ই সৃজনশীল মানুষের গল্প শুনি । আসলে কি আমাদের মধ্যে কেউ কেউ সৃজনশীল, নাকি সবাই? সত্য কথা হলো, আমরা সবাই সৃজনশীল; কেউ বেশি কেউ কম । যারা একটু কম সৃজনশীল তারা চাইলে আরো বেশি সৃজনশীল হয়ে উঠতে পারে ।
আমরা কতটা সৃজনশীল, চল একটু যাচাই করে দেখি । আমরা নিচের নির্দেশনাগুলো পড়ব এবং তারপর সেটা কি সবসময় করি, নাকি প্রায় করি, নাকি খুবই কম করি ইত্যাদি ধরন অনুযায়ী তা ঠিক করে প্রতি বাক্যের নিচের ঘরে প্রাপ্ত নম্বর লিখব । পূর্বের পাঠের মতোই নম্বর দিতে হবে ।
এসো তবে শুরু করি-
যাচাই তো শেষ হলো । এবার প্রতিটি অংশের নিচে যে নম্বর দিয়েছ সেগুলো যোগ করে দেখ । যোগফল কত হলো? তোমার যোগফল যত হয়েছে সে অনুযায়ী নিজের সম্পর্কে জেনে নাও-
৪১-৫০: তুমি যথেষ্ট সৃজনশীল মানুষ । তবে ভালোর কোনো শেষ নেই । তাই সবসময় চেষ্টা করে যাও আরো
সৃজনশীল হওয়ার ।
৪০-৩১: তুমি বেশ সৃজনশীল । তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তোমার আরও ভালো করার সুযোগ রয়েছে । তাই তোমার উচিত শিক্ষকের সাহায্য নিয়ে আরো ভালো করে চেষ্টা করা ।
৩০-২১: একজন সৃজনশীল মানুষের যেসব বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার সে বৈশিষ্ট্যগুলো তোমার মধ্যে আছে । তাই আরো বেশি সৃজনশীল হয়ে উঠতে চাইলে তোমাকে বিভিন্ন সৃজনশীল কাজ বেশি বেশি করে করতে হবে । তুমি তোমার শিক্ষকের সাহায্য নিয়ে আরো বেশি সৃজনশীল হয়ে উঠতে চেষ্টা করো ।
২০ ও এর কম: তোমার মধ্যে সৃজনশীলতা সুপ্ত বা লুকানো অবস্থায় আছে । তাই সৃজনশীল হয়ে উঠার জন্য তোমার শিক্ষক, বন্ধু, সহপাঠী এবং পরিবারের সাহায্য নেওয়া উচিত । তুমি তোমার চারপাশের প্রকৃতি নিয়ে বেশি বেশি ভাববে । আমাদের সমস্যাগুলো কী কী, কীভাবে এসব সমস্যার সমাধান করা যায় এসব উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করবে । নতুন কোনো কিছু দেখলে শেখার চেষ্টা করবে।
নিজ নিজ সৃজনশীলতার মাত্রা তোমরা সবাই যাচাই করে দেখেছ । তবে এটাই চূড়ান্ত যাচাই বা পরীক্ষা নয় । সত্যিকারের সৃজনশীল সেই, যে কাজের ক্ষেত্রে সৃজনশীলতা প্রকাশ করতে পারে ।
সাফি একটি কবিতা লিখে জাতীয় কবিতা লেখা প্রতিযোগিতায় জমা দিলে সে প্রথম হয় এবং পুরষ্কার পায়। কিন্তু প্রথমে সে অনীহা প্রকাশ করেছিল।
জয়নগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮ম ও ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় ৯ম শ্রেণির দল গঠিত হলেও ৮ম শ্রেণিতে দল গঠন করা যাচ্ছিল না । প্রথম দিকের রোল নম্বরধারীদের মধ্য থেকে দু'জন প্রতিযোগিতায় রাজি হলেও একজনের অভাব ছিল । শেষ রোল নম্বরধারী সাথী দাঁড়িয়ে বললো সে অংশগ্রহণ করতে চায় । শিক্ষক সাথীকে সুযোগ দিলেন । বিতর্ক প্রতিযোগিতা শেষে সাথী সেরা বক্তার পুরস্কার পেল ।