রোগ সম্পর্কে সতর্কতা
আমাদের চারপাশে নানা ধরনের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীবাণু ঘুরে বেড়ায়, যা খালি চোখে দেখা যায় না। এর মধ্যে
কতকগুলো জীবাণু ক্ষতিকর । এই ক্ষতিকর জীবাণু খাদ্য, শ্বাস গ্রহণ, চামড়া ইত্যাদির মাধ্যমে আমাদের
শরীরে প্রবেশ করে এবং রোগ সৃষ্টি করে। তবে জীবাণু শরীরে প্রবেশ করলেই আমরা সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ি
না। কারণ জীবাণুকে প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের শরীরে নানারকম প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা আছে । এই
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা যদি শক্তিশালী না হয় তবে জীবাণু জয়ী হয়, আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি। আমরা জ্বর,
সর্দি-কাশি, ডায়রিয়া ইত্যাদি নানা রোগে আক্রান্ত হই। তাই বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে সতর্কতা এবং
সংক্রমণমুক্তকরণ টিকা ও ইনজেকশন সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান থাকা প্রয়োজন ।
সঠিক যত্নের অভাবে অতি শৈশবে শিশুরা নানা সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হতে পারে। যে সকল কারণে শিশুরা
সহজেই সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয় সেগুলো হচ্ছে-
জন্মের সময় ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় কম।
নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে জন্ম গ্রহণ।
শিশু মাতৃগর্ভে থাকার সময় মায়ের অসুস্থতা বা পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবারের অভাব।
জন্মের পরই শিশুকে মায়ের দুধ না খাওয়ানো। মায়ের প্রথম দুধকে শালদুধ বলে। এই দুধে
কলোস্ট্রাম নামক পদার্থ থাকে যা শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করে।
জন্মের ছয় মাস পর থেকে মায়ের দুধের পাশাপাশি বাড়তি খাবার বা পরিপুরক খাবার না দেওয়া।
সময়মতো রোগ প্রতিরোধক টিকা বা ইনজেকশন না দেওয়া।
উপর্যুক্ত কারণে শিশুরা শারীরিকভাবে দুর্বল থাকে, ফলে সহজেই রোগাক্রান্ত হয়। শিশুরা যে সকল সংক্রামক
রোগে আক্রান্ত হয় সেগুলো আলোচনা করা হলো-
জ্বার: জ্বার সম্পর্কে সকলেরই নিশ্চয়ই ধারণা আছে। আমাদের দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা হচ্ছে ৯৮.৪°
ফারেনহাইট। তবে ছোট শিশুদের দেহের তাপমাত্রা থাকে ৯৯° ফারেনহাইট। তাপমাত্রা যদি এর চেয়ে বৃদ্ধি
পায় তবেই জ্বর বলে ধরা হয়। জ্বর নানা কারণে হতে পারে। যেমন- ইনফেকশন, অ্যালার্জি ইত্যাদি ।
অল্প জ্বর হলে যা করণীয়:
-
পাতলা সুতির জামা পরিধান করা।
.
আলো বাতাসপূর্ণ ঘরে থাকা।
মাথা ধুয়ে শরীর ভিজা কাপড় দিয়ে মুছে ফেলা।
স্যালাইন, ফলের রস, শরবত, সুপ, পাতলা দুধ ইত্যাদি তরল খাবার বেশি করে খাওয়া।
চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চলা।
উচ্চ জ্বর হলে করণীয় - ১-৫ বছরের শিশুর মধ্যে উচ্চ জ্বরের প্রবণতা দেখা যায়। এতে দেহের তাপমাত্রা
১০৫° ফা. পর্যন্ত হতে পারে, যা শিশুর মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর।
উচ্চ জ্বরে শিশুর যে লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে সেগুলো হচ্ছে-
• খিঁচুনি, চেহারায় অস্বাভাবিকতা
• শ্বাসক্রিয়া ও নাড়ির গতি বৃদ্ধি
• অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
• ঘনঘন বমি ও পাতলা মলত্যাগ।
এই ক্ষেত্রে যা করতে হবে -
জ্বর না কমা পর্যন্ত মাথায় পানি ঢালতে হবে।
এবং ঠাণ্ডা পানি দিয়ে সমস্ত শরীর বারবার
ভালো করে মুছে দিতে হবে। দেহের
তাপমাত্রা কমে আসলে শুকনা কাপড় দিয়ে
শরীর মুছে জামা পরাতে হবে।
-জ্বর যদি ১০৪° ফা. ১০৫° ফা. হয় তবে জামা খুলে গোসল করাতে হবে। এতে তাপমাত্রা ২/৩
ডিগ্রি কমে আসবে।
-ঘরে মুক্ত আলো বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে, শিশুকে হাল্কা সুতির জামা পরাতে হবে।
-দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
জ্বরে খাদ্য ব্যবস্থা -
-জ্বর হলে বিপাক ক্রিয়া বৃদ্ধি পায়, কোষকলা ক্ষয় হয়। ফলে দেহের প্রোটিন ও অন্যান্য খাদ্য
উপাদানের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। তাই মাছ, ছোট মুরগি, দুধ-রুটি, পাতলা করে দুধ-সুজি, সুপ, নরম
ভাত, পাতলা ডাল, নরম খিচুড়ি ইত্যাদি সহজ পাচ্য খাবার দিতে হবে।
-জ্বরে ঘামের সাথে শরীর থেকে প্রচুর পানি, সোডিয়াম ও পটাশিয়াম লবণ বের হয়ে যায় এবং রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তাই ফলের রস, সবজির সুপ, শরবত, ডাবের পানি, স্যালাইন ও
অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে ।
ডায়রিয়া প্রধানত পানিবাহিত রোগ। ডায়রিয়া হলে খাদ্যদ্রব্য বেশিক্ষণ অস্ত্রে না থাকায় এগুলোর পরিপাক
ও বিশোষণ সম্পূর্ণ হয় না ফলে খাদ্য উপাদানগুলো দ্রুত পায়খানার সাথে বের হয়ে যায়। প্রচুর অশোষিত
পানি বের হয়ে যাওয়ার ফলে মল তরল হয়।
এর ফলে শিশুর মধ্যে যে লক্ষণগুলো দেখা যায় -
ঘনঘন পাতলা মলত্যাগ হয়
বমি বমি ভাব বা বমি হয়
মাথার তালুর মধ্যভাগ দেবে যায়
চোখ কোটরাগত হয়
• শিশুর মেজাজ খিটখিটে হয়
• জিভ ও ঠোঁট শুকিয়ে যায়
• শিশুর ওজন হ্রাস পায়
অবস্থা বেশি খারাপ হলে শিশু অচেতন হয়ে পড়ে।
করণীয়• ডায়রিয়া হওয়ার সাথে সাথে শিশুকে খাবার স্যালাইন দিতে হবে। এতে মারাত্মক পানিশূন্যতা
থেকে শিশু রক্ষা পাবে। যতবার মলত্যাগ করবে ততবার খাবার স্যালাইন শিশুকে বেশি
পরিমাণে দিতে হবে।
• স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি শিশুকে মায়ের দুধ দিতে হবে।
• তরল খাবার, যেমন - ফলের রস, রাইস স্যালাইন, লেবুর শরবত ইত্যাদি দেয়া যেতে পারে।
• পাতলা মলত্যাগ বেশি হলে এবং শিশু মুখে স্যালাইন খেতে না পারলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে
যেতে হবে।
খাওয়ার স্যালাইন - ঘন ঘন পাতলা মলত্যাগের ফলে শরীর থেকে প্রচুর জলীয় অংশ বের হয়ে যায়। যার
সাথে পটাশিয়াম বাই কার্বনেট ও সোডিয়াম ক্লোরাইড এবং গ্লুকোজ নামক উপাদান বের হয়ে যায়। স্যালাইন
খাওয়ার ফলেই সে অভাব পূরণ হয়। স্যালাইনে যে সকল উপাদান থাকে সেগুলো হচ্ছে- সোডিয়াম ক্লোরাইড,
সোডিয়াম সাইট্রেট, পটাশিয়াম ক্লোরাইড, গ্লুকোজ, নিরাপদ পানি। ঘরে সহজেই খাবার স্যালাইন তৈরি করে
শিশুকে খাওয়ানো যেতে পারে। ঘরে স্যালাইন তৈরির পদ্ধতি-
উপকরণ
গুড় / চিনি
লবণ
পরিমাণ
এক মুঠ
তিন আঙুলের এক চিমটি
আধ লিটার
নিরাপদ ঠাণ্ডা পানি
একটি পাত্রে আধ লিটার নিরাপদ খাবার পানি, গুড়/চিনি ও লবণ নিয়ে একটি চামচ দিয়ে ভালোভাবে নেড়ে
স্যালাইন তৈরি করতে হবে। তৈরি স্যালাইন ১২ ঘন্টার মধ্যে খেয়ে ফেলতে হবে। ডায়রিয়ার রোগীকে
স্যালাইন খাওয়ানোর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে পানিস্বল্পতা বা ডিহাইড্রেশন রোধ করা।
স্যালাইন খাওয়ানোর নিয়ম -
মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করা যাবে না।
প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
যতবার পাতলা মলত্যাগ করবে ততবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে।
শিশু বমি করলেও একটু অপেক্ষা করে আবার খাওয়াতে হবে।
স্যালাইনের পাশাপাশি সুপ, ফলের রস, জাউভাত খাওয়ানো যেতে পারে।
পাতলা পায়খানা ও বমি বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত স্যালাইন চলবে।
প্রয়োজনে রাইস স্যালাইন খাওয়াতে হবে।
রোগ সম্পর্কে সতর্কতা
প্রতিরোধের উপায়y -
সবসময় ফুটানো নিরাপদ পানি বা টিউবওয়েলের পানি পান করতে হবে।
দুধ ভালোমতো ফুটিয়ে পান করতে হবে।
খাদ্যদ্রব্য ঢেকে রাখতে হবে, যাতে মাছি বা পোকা-মাকড় বসতে না পারে।
খাবার গরম করে খেতে হবে।
বাসি পঁচা খাবার বর্জন করতে হবে।
পরিষ্কার থালা-বাসন বিশুদ্ধ পানি দিয়ে ধুয়ে খাবার খেতে হবে।
মলমূত্র ত্যাগের পর হাত সাবান বা ছাই দিয়ে ধুতে হবে।
বাজার থেকে আনা ফলমূল ভালো করে নিরাপদ পানি দিয়ে ধুয়ে খেতে হবে।
সর্দি-কাশি - সর্দি ও কাশির সাথে সবাই কমবেশি পরিচিত। অ্যালার্জি কিংবা বিভিন্ন ইনফেকশনজনিত
কারণে সর্দি-কাশি হতে পারে। সাধারণত হঠাৎ করে ঠাণ্ডা লেগে সর্দি-কাশি হয় এবং সেই সাথে
অনেক সময় সামান্য জ্বরও থাকে। সাধারণত ঋতু পরিবর্তনের সময়, গ্রীষ্মকালে অধিক ঘাম ও ধুলা-বালি
থেকে এই রোগটি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
করণীয় -
রুমাল বা টিসু ব্যবহার করা।
গরম পানি ও লবণ দিয়ে গড়গড়া করা।
প্রচুর পানি বা পানি জাতীয় খাবার যেমন- স্যালাইন, ফলের রস খেতে হবে।
প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ইনফ্লুয়েঞ্জা - ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসজনিত, বায়ুবাহিত, সংক্রামক ব্যাধি। ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশ করার ১৮
থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রোগটি প্রকাশ পায়। শিশুদের ক্ষেত্রে ৫ থেকে ৭ দিন এবং বয়স্কদের ক্ষেত্রে ৩ থেকে
৫ দিন রোগটি স্থায়ী হয়। এই রোগে অধিক জ্বর, সেই সাথে সর্দি-কাশি, মাথাব্যথা, মাংসপেশিতে ব্যথা ও
গলাব্যথা থাকতে পারে। গ্রীষ্মকালে এই রোগটির প্রকোপ বেশি থাকে এবং যেখানে অনেক লোকের বাস
সেখানে রোগটি দ্রুত ছড়ায়।
করণীয় -
-হাঁচি-কাশির সময় রুমাল ব্যবহার করতে হবে এবং যেখানে-সেখানে কফ, থুতু ফেলা যাবে না।
-আক্রান্ত শিশুটিকে অন্যান্য শিশু থেকে পৃথক রাখতে হবে।
-তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে ভালো করে মাথা ধুয়ে শরীর মুছে ফেলতে হবে।
-তরল ও নরম খাবার খাওয়াতে হবে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।
-চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ খেতে হবে।
সর্দি-কাশি ও ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিরোধের উপায় -
• ঋতু পরিবর্তনের সময় উপযুক্ত পোশাক পরতে হবে। গ্রীষ্মের সময় অধিক ঘাম হলে জামা খুলে শরীর মুছে ফেলতে হবে।
নিরাপদ পানি বা শরবত পান করা। ব্যায়াম ও বিশ্রাম নেওয়া, সুষম খাদ্য গ্রহণ, রোগটি যখন সংক্রামক আকারে ছড়ায় তখন বিশেষ সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। যেমন- লোকজনের ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে। মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
কৃমি কৃমি মানুষের অস্ত্রে পরজীবি রূপে থাকে। আমাদের দেশের শিশুরাই এর দ্বারা বেশি আক্রান্ত হয়। কৃমি
শিশুর একটি মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা। শিশুরা তিন ধরণের কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হয়। যথা-
১. গোলকৃমি
২. সুতাকৃমি
এবং
৩. বক্রকৃমি
১। গোলকৃমি- এই কৃমি গোলাকার, আকারে বড়, দেখতে কেঁচোর মতো। তাই অনেকে কেঁচোকৃমিও বলে। কাঁচা শাকসবজি ও ফলের মাধ্যমে এ কৃমির ডিম মানুষের শরীরে প্রবেশ করে এবং পরে অস্ত্রের মধ্যে এ কৃমির উৎপত্তি হয় । আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে নিচের লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় -
শিশুর পেট বড় হয়ে ফুলে যায়। বমি বমি ভাব ও ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়, ওজন কমে যায় বদহজম ও দৈহিক দুর্বলতা দেখা দেয়। পেটে ব্যথা হয়, অপুষ্টি ও রক্তশূণ্যতা দেখা দেয় ।
২। সুতাকৃমি- এই কৃমি ছোট এবং সুতার মতো দেখায়। ত্রীকৃমি মলদ্বারে এসে ডিম পাড়ে। শিশুরা যখন মলদ্বার চুলকায় তখন নখের মধ্যে চলে আসে, পরে খাবার ও কাপড় চোপড়ের মাধ্যমে তা পরিবারের সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এর লক্ষণগুলো হচ্ছে- মলদ্বার খুব চুলকায় ও মলদ্বারে কৃমির ডিম দেখা যায়।
৩। বক্রকৃমি- যেসব শিশু খালিপায়ে মাটির পথ দিয়ে হেঁটে বেড়ায় তাদের মধ্যে এই কৃমি দেখা যায়। এই কৃমির ডিম চামড়ার মধ্য দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে এবং অস্ত্রে প্রবেশের ফলে বড় কৃমিতে পরিণত হয়। লক্ষণ হচ্ছে- রক্তসল্পতা দেখা দেয়, ফলে শিশুকে ফ্যাকাশে দেখায় ।
প্রতিরোধের উপায়—
-যেখানে-সেখানে মল-মূত্র ত্যাগ না করা। পাকা টয়লেট ব্যবহার করতে হবে।
-খাবার খাওয়ার আগে ও মল-মূত্র ত্যাগের পর সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে।
-কাঁচা ফলমূল ধুয়ে খেতে হবে। ঠাণ্ডা ও বাসি খাবার পরিহার করতে হবে।
-হাতের নখ ছোট ও আঙুল পরিষ্কার রাখতে হবে।
জুতা বা স্যান্ডেল পায়ে দিয়ে চলাফেরা করতে হবে।
- চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরিবারের সবাইকে একসাথে কৃমিনাশক ঔষধ খেতে হবে।
হাম:হাম ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ। যে কোনো বয়সেই মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তবে
৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে এই রোগ বেশি দেখা যায়। ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশের ১৪ দিনের
মধ্যে হাম দেখা দেয়। এই রোগের লক্ষণগুলো হচ্ছে-
প্রথমে সর্দি হয়, নাক ও চোখ দিয়ে পানি পড়ে, মাথাব্যথা হয়, মুখমণ্ডল ফোলা মনে হয়।
১০৩° ফা.- ১০৪° ফা. পর্যন্ত জ্বর উঠে। ৩/৪ দিন পর ঘামাচির মতো দানা বা র্যাশ প্রথমে
কানের পেছনে দেখা যায়, পরে সারা শরীর ও মুখমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ে। গাঢ় গোলাপি ও লাল
রঙের র্যাশে সারা শরীর ফুলে যায়। র্যাশ বের হওয়ার ৫/৬ দিন পর র্যাশগুলোর রং হালকা হয়ে
যায়, জ্বর কমে আসে। ৯/১০ দিন পর দানা শুকিয়ে চামড়া উঠতে থাকে।
চোখে র্যাশ উঠলে চোখের পাতা ও মনি ফুলে যায়, চোখ লাল হয়ে যায়।
গলার ভিতরেও র্যাশ উঠে ফলে শিশুর খেতে খুবই কষ্ট হয় ও বমি হয়।
হাম সেরে যাওয়ার পর অনেক সময় নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, পুষ্টিহীনতা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।
করণীয়
হাম হওয়ার সাথে সাথে শিশুকে আলাদা ঘরে রাখতে হবে। শুশ্রূষাকারী ছাড়া কারও ঐ ঘরে
প্রবেশ করা উচিত নয়। শুষাকারী সুস্থ ব্যক্তিদের সাথে মেলামেশার আগে কাপড় বদলিয়ে
সাবান দিয়ে হাত-মুখ ভালো করে ধুয়ে নেবে। রোগীর ব্যবহৃত সব জিনিস আলাদা রাখতে হবে ।
চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। রোগ যাতে জটিল না হয় সেই দিকে লক্ষ রাখতে হবে।
তরল খাদ্য ঘন ঘন খেতে দিতে হবে।
পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।
প্রতিরোধের উপায় –
4502
যে বাড়িতে হাম দেখা দেবে সে বাড়িতে যাওয়া বন্ধ রাখতে হবে।
৯ মাস বয়সে শিশুকে হামের টিকা দিতে হবে ।
যক্ষ্মা – যক্ষ্মা এক প্রকার মারাত্মক সংক্রামক রোগ। মাইক্রো- ব্যাকটিরিয়াল টিউবারকুলোসিস নামক একপ্রকার
ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এই রোগ ছড়ায়। যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শ, আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি ও থুতু থেকে এ
রোগের জীবাণু ছড়ায় ও অন্যকে আক্রান্ত করে।
লক্ষন:
-প্রথমে অল্প অল্প জ্বর ও কাশি হয়।
-ক্ষুধা কমে যায়, শিশু ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ে..
ওজন কমে যায়।
-আক্রান্ত গ্রন্থি ফুলে যায়, ব্যথা হয়, ক্ষতে
সৃষ্টি হয়।
-ক্রমাগত এবং দীর্ঘদিন খুসখুসে কাশি, কফ
এবং কফের সাথে রক্ত বের হয় ।
-রাতে দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি, নাড়ির ক্রমাগত
দ্রুত স্পন্দন, দেহে ক্লান্তি ভাব আসে।
যক্ষ্মায় আক্রান্ত শিশু
করণীয় - রোগের লক্ষণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষা করে রোগ সম্পর্কে
নিশ্চিত হতে হবে এবং নিয়মিত ঔষধ খেতে হবে। রোগীকে পৃথক ঘরে পূর্ণ বিশ্রাম গ্রহণ করতে হবে, উপযুক্ত
পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে। আলো, বাতাসপূর্ণ ঘরে রোগীকে রাখতে হবে। যক্ষ্মা রোগীর
কফ, থুতু যেখানে-সেখানে না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে। যক্ষ্মা রোগীর ব্যবহার্য দ্রব্যাদি ও থালা-বাসন
আলাদা করে রাখতে হবে ও পরিষ্কার করতে হবে।
প্রতিরোধ - জন্মের পর এক ডোজ বিসিজি টিকা দিয়ে শিশুকে যক্ষ্মা রোগ থেকে রক্ষা করা যায়।
পোলিওমাইলাইটিস ১০ বছরের কম বয়সের শিশুরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। ভাইরাসটি শরীরে
প্রবেশের পর ৭ হতে ১০ দিন সময় লাগে রোগটি প্রকাশ পেতে।
-
লক্ষণগুলো হচ্ছে-
-১-৩ দিনের মধ্যে শিশুর সর্দি-কাশি, মাথাব্যথা, সামান্য জ্বর হয়।
-৩-৫ দিন পর মাথার যন্ত্রণা থেকে ঘাড় শক্ত হয়ে যায়,
হাত বা পা অবশ হয়ে যায়। শিশু দাঁড়াতে চায় না, দাঁড়
করাতে চাইলে কান্নাকাটি করে, আক্রান্ত অঙ্গ ক্রমশ
দুর্বল হতে থাকে এবং পরে স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে যেতে
পারে।
-শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণকারী মাংসপেশি এই ভাইরাস দ্বারা
আক্রান্ত হলে শিশুর মৃত্যুও হতে পারে।
করণীয় এই রোগটির লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
প্রতিরোধের উপায় চার ডোজ পোলিও টিকা খাওয়ালে শিশু পোলিও থেকে রক্ষা পায়।
মাম্পস মাম্পস ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ। এই রোগ সব বয়সের মানুষের হয়। তবে ৫ থেকে ১৫
বছর বয়সের শিশুদের মধ্যে এই রোগ বেশি হয়। বিশেষত শীতকালে এই রোগ বেশি হতে দেখা যায়। রোগটি
সংক্রমিত হওয়ার ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ পায় ।
লক্ষণ - রোগের শুরুতে জ্বর হয়, ঘারের পাশে কানের নিচে একপাশ বা উভয় পাশ ফুলে যায়, ব্যথা হয়, পরে
সে ব্যথা মুখে ছড়িয়ে পড়ে। মুখ খুলতে অসুবিধা হয়। শুক্রাশয়, অগ্ন্যাশয়, ডিম্বাশয়, হৃৎপিণ্ড, চোখ, কান
ইত্যাদি অঙ্গ আক্রান্ত হতে পারে ।
করণীয় - শিশুকে তরল খাবার যেমন- দুধ, ফলের রস, সুপ ইত্যাদি দিতে হবে। গরম পানি ও লবণ দিয়ে
গার্গল করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
রোগ প্রতিকারের চেয়ে রোগ প্রতিরোধই উত্তম। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাস্থ্যসেবায় সম্প্রসারিত
টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) একটি গুরুত্বপূর্ণ, উল্লেখযোগ্য ও সময় উপযোগী পদক্ষেপ। ইপিআই একটি
বিশ্বব্যাপী কর্মসূচি যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে সংক্রমণ রোগ থেকে শিশুদের অকাল মৃত্যু ও পঙ্গুত্ব রোধ করা। তাই
বিশ্বব্যাপী রোগ প্রতিরোধের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। এছাড়া রোগ হওয়ার আগে প্রতিরোধ করা অনেক
সহজ এবং কম ব্যয় সাপেক্ষ।
আমাদের দেশে টিকাদান কর্মসূচির উদ্দেশ্য হচ্ছে, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমানো। এক বছরের কম বয়সের
শিশুদের রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি এবং বেশির ভাগ রোগ এই বয়সেই হয়ে থাকে। তাই শিশুকে রোগ
প্রতিরোধক সব কয়টি টিকা নিয়মানুযায়ী যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দিতে হবে ।
ইপিআই কর্মসূচির মাধ্যমে টিকা দিয়ে যে রোগগুলো প্রতিরোধ করা যায় সেগুলো হচ্ছে-
বিসিজি টিকা যক্ষ্মা রোগে বিসিজি টিকা দেওয়া হয়। এই টিকা দেওয়ার ২ সপ্তাহ পর টিকার স্থান লাল হয়ে
-
ফুলে যায়। আরও ২/৩ সপ্তাহ পর শক্ত দানা, ক্ষত বা ঘা হতে পারে। ধীরে ধীরে এই ক্ষত বা ঘা শুকিয়ে
যায়, দাগ থাকে। জন্মের পরই এই টিকা দেওয়া হয়।
ওপিভি টিকা – ওপিভি (ওরাল পোলিও ভ্যাকসিন) টিকা পোলিও (পোলিও মাইলাইটিস) রোগ প্রতিরোধ করে।
জন্মের পর ৬ সপ্তাহের মধ্যে ১ম ডোজ, ২৮ দিন পর ২য় ডোজ, পরবর্তী ২৮ দিন পর ৩য় ডোজ এবং ৯ মাস
পূর্ণ হলে ৪র্থ ডোজ দিতে হয়।
পেন্টাভ্যালেন্ট ভ্যাকসিন – এই টিকা ৫টি রোগ যেমন- ডিপথেরিয়া, হুপিংকাশি, ধনুষ্টংকার, হেপাটাইটিস-বি
এবং হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা-বি প্রতিরোধ করে। জন্মের ৬ সপ্তাহ পর প্রথম ডোজ এবং ২য় ও ৩য় ডোজ
২৮ দিন অন্তর অন্তর দিতে হয়।
হামের টিকা – হামের টিকা শিশুকে হাম রোগ থেকে প্রতিরোধ করে। শিশুর বয়স ৯ মাস পূর্ণ হলে এই টিকা
দিতে হয়।
টিটি টিকা (টিটেনাস টক্সয়েড) টিটি টিকা ধনুষ্টংকার রোগ থেকে রক্ষা করে।
১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সের সকল মহিলাকে এবং যে সকল শিশুর ডিপিটি / পেন্টাভ্যালেন্ট টিকা দেওয়ার পর
খিঁচুনি হয়েছে তাদের এই টিকা দিতে হবে।
কাজ প্রতিরোধক টিকার নাম ও রোগের নাম চার্টে দেখাও।
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন
১. আমাদের দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা কত ?
ক. ৯৭° ফারেনহাইট
গ. ৯৯.৪° ফারেনহাইট
২. জলাতঙ্ক ও প্লেগ রোগ হয় কেন?
ক. কীটপতঙ্গের কামড়ে
গ. দূষিত পানির মাধ্যমে
খ. ১৮.৪° ফারেনহাইট
ঘ. ১০০° ফারেনহাইট
খ. জীবাণুযুক্ত খাদ্যদ্রব্য গ্রহণে
ঘ. জীবজন্তুর কামড়ে
রোগ সম্পর্কে সতর্কতা
নিচের অনুচ্ছেদটি পড় এবং ৩ ও ৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও
তমার গত রাত হতে ঘন ঘন পাতলা পায়খানা, বমি বমি ভাব হচ্ছে, চোখও প্রায় কোটরে ঢুকে গেছে।
বাড়িতে কোনো স্যালাইন প্যাকেট না থাকায় ওর মা তাৎক্ষণিকভাবে চিনির শরবত দেন। এতে অবস্থার
উন্নতি না হলে পাশের বাড়ির খালাম্মা এসে তমাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান।
৩. উদ্দীপকে উল্লিখিত কারণে তমার শরীরে ঘাটতি হয়—
ক. গ্লুকোজ, নিরাপদ পানি, সোডিয়াম ক্লোরাইড, সোডিয়াম সাইট্রেট, ক্লোরিন
খ. গ্লুকোজ, জলীয় অংশ, পটাশিয়াম বাই কার্বনেট, সোডিয়াম ক্লোরাইড
গ. সোডিয়াম সাইট্রেট, নিরাপদ পানি, গ্লুকোজ, ক্লোরিন ও জলীয়াংশ
ঘ. গ্লুকোজ, নিরাপদ পানি, সোডিয়াম ক্লোরাইড, সোডিয়াম সাইট্রেট ও পটাশিয়াম ক্লোরাইড
৪. পাশের বাড়ির খালাম্মা দ্রুত তমাকে হাসপাতালে না নিলে কী হতে পারত—
দেহে মারাত্মকভাবে পানির পরিমাণ বৃদ্ধি
II. জিভ ও ঠোঁট শুকিয়ে যাওয়া
iii. অচেতন হয়ে যাওয়া
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. ii
গ. ii ও iii
x. i, ii s iii
সৃজনশীল প্রশ্ন
১. কর্মজীবি আছিয়া সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কর্মস্থলে থাকে। তাঁর ৫ বছরের মেয়ে তুলি
শারীরিকভাবে দুর্বল থাকার কারণে সহজেই রোগাক্রান্ত হয়। ২-৩ দিন ধরে সে অল্প অল্প জ্বরে ভুগছে।
আজ কর্মস্থল থেকে ফিরে তুলির খিঁচুনি ও চেহারার অস্বাভাবিকতা দেখতে পায়। দেহের তাপমাত্রা ১০৪°
যা এ উঠলে প্রতিবেশী তাহমিনা তুলির শরীরের জামাকাপড় দ্রুত খুলে ফেলে এবং মাথায় ও গায়ে পানি
দিয়ে তার কমিয়ে আনে।
ক. মায়ের প্রথম দুধকে কী বলা হয়?
খ. আমাদের দেহ কতভাবে রোগ সংক্রামিত হয়?
গ. দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধির পূর্বে তুলিকে কী প্রক্রিয়ায় সুস্থ করা যেত- ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর তাহমিনার দ্রুত সিদ্ধান্তই তুলির হার কমাতে সহায়ক- মতামত দাও।
৫২
গার্হস্থ্য বিজ্ঞান
২. ফাইজা ৪ বছরের শিশু। গত ৩/৪ দিন ধরে তার বেশ জ্বর। সারা শরীর দানায় ভরে গেছে। ঠিকমতো
খেতেও পারছে না। ফাইজার বয়স যখন ৯ মাস পূর্ণ হয়েছিল তখন ওর মা শিশুকে প্রতিরোধক টিকা
দেন নি। চিকিৎসক ওর মাকে ঠাণ্ডা লাগাতে বারণ করেন। কারণ এতে নিউমোনিয়া হয়ে যেতে পারে।
মায়ের সতর্কতা ও সেবায় ফাইজা সহজেই সুস্থ হয়ে উঠে।
ক. শিশুরা কত ধরনের কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হয়?
খ. সর্দি-কাশি কখন বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে?
গ. ফাইজার যে রোগ হয়েছে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. মায়ের সতকর্তা ও শুশ্রূষা ফাইজাকে উদ্দীপকে উল্লিখিত জটিল রোগ থেকে সহজেই সুস্থ করে
ভোলে- বিশ্লেষণ কর।
আরও দেখুন...