আধুনিক সমাজব্যবস্থায় হিসাব লিপিবদ্ধকরণের ক্ষেত্রে লেনদেন শব্দটির অর্থ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবসায় জগতে বিভিন্ন ঘটনার উদ্ভব হয়। কিন্তু সমস্ত ঘটনাকে হিসাবের বহিতে লিপিবদ্ধ করা হয় না। অর্থের অঙ্কে পরিমাপযোগ্য ঘটনা, যা ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন করে, সেই সমস্ত ঘটনাকেই লেনদেন হিসেবে হিসাবের বহিতে লিপিবদ্ধ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, সীমান্ত ট্রেডার্স ৫,০০০ টাকা দিয়ে অফিসের জন্য একটি আলমারি ক্রয় করলেন, আবার দোকান থেকে ফেরার পথে দুর্ঘটনায় আহত হলেন, উল্লেখিত দুটি ক্ষেত্রেই ঘটনার জন্ম হলো । কিন্তু প্রথমটি যেহেতু অর্থের দ্বারা পরিমাপযোগ্য এবং ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন করেছে, সেজন্য প্রথম ঘটনাটি লেনদেন, দ্বিতীয় ঘটনায় যেহেতু আর্থিক সংশ্লিষ্টতা নেই এবং ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি, সেহেতু দ্বিতীয় ঘটনাটি ব্যবসায়ের লেনদেন হিসেবে লিপিবদ্ধ হবে না।
লেনদেন শব্দটির আভিধানিক অর্থ হলো গ্রহণ ও প্রদান অর্থাৎ দেওয়া ও নেওয়া ।
লেনদেন দুই ধরনের। যথা: (১) বাহ্যিক লেনদেন ও (২) অভ্যন্তরীণ লেনদেন
বাহ্যিক লেনদেনে কোন অর্থনৈতিক ঘটনা দুটি পক্ষকে বা দুটি প্রতিষ্ঠানকে প্রভাবিত করে। উদাহরণস্বরূপ কোনো সরবরাহকারীর কাছ থেকে বাবুল স্টোরস্ কর্তৃক পণ্যদ্রব্য ক্রয় অথবা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বাড়িওয়ালাকে মাসিক ভাড়া প্রদান । পক্ষান্তরে অভ্যন্তরীণ লেনদেন ব্যবসায়ের শুধু অভ্যন্তরীণ আর্থিক অবস্থাকে প্রভাবিত করে । উদাহরণস্বরূপ মেশিনারি ব্যবহারের ফলে উদ্ভূত অবচয় বা মূল্যহ্রাস ।
নগদ টাকার আদান-প্রদান বা বাকিতে ক্রয়-বিক্রয় ছাড়াও সেবা আদান-প্রদানের মাধ্যমে লেনদেনের উদ্ভব হতে পারে। যেমন মিসেস মাহ্বাকে কাজের বিনিময়ে ২,০০০ টাকা বেতন দেওয়া হলো অথবা ঘর ভাড়া বাবদ ৩,০০০ টাকা পাওয়া গেল, এটাও লেনদেন। আবার অদৃশ্যভাবে কোনো আর্থিক ঘটনা ঘটে থাকলে তা-ও লেনদেন হতে পারে। যেমন : দীর্ঘদিন সম্পদ ব্যবহারের ফলে যে মূল্য হ্রাস হয়, এর মাধ্যমেও লেনদেনের সৃষ্টি হয় ।
অর্থের আদান-প্রদান বা অর্থের মাপকাঠিতে পরিমাপযোগ্য কোনো ঘটনা (Event) বা সেবা (service) আদান- প্রদানের মাধ্যমে কোনো প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটলে ঐ সমস্ত ঘটনা বা আদান-প্রদানকে লেনদেন বলা হয়। বস্তুত দ্রব্যসামগ্রী ও সেবাকর্মের বিনিময়ের ফলে কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটলে লেনদেনের সৃষ্টি হয় ।
Read more