লেনদেনের প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্য

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - হিসাববিজ্ঞান - লেনদেন | NCTB BOOK
28k
Summary

প্রত্যেকটি লেনদেন একটি ঘটনা হলেও, সব ঘটনা লেনদেন নয়। লেনদেনের কিছু প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো:

  • অর্থের অঙ্কে পরিমাপযোগ্য: লেনদেনকে অবশ্যই অর্থ দ্বারা পরিমাপযোগ্য হতে হবে।
  • অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন: যদি কোনো ঘটনা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটায়, তা লেনদেন।
  • দ্বৈত সত্তা: প্রত্যেক লেনদেনে দুটি পক্ষ থাকতে হবে।
  • স্বয়ংসম্পূর্ণ ও স্বতন্ত্র: প্রতিটি লেনদেন স্বতন্ত্র এবং আলাদা।
  • দৃশ্যমানতা: লেনদেন দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান উভয় হতে পারে।
  • ঐতিহাসিক ঘটনা: পূর্বে ঘটে যাওয়া আর্থিক ঘটনাগুলি ঐতিহাসিক ঘটনা বা লেনদেন।
  • হিসাব সমীকরণে প্রভাব বিস্তার: লেনদেন হিসাব সমীকরণের বিভিন্ন উপাদানে পরিবর্তন ঘটায়।

আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি, প্রত্যেকটি লেনদেনই ঘটনা কিন্তু প্রত্যেকটি ঘটনা লেনদেন নয়। লেনদেনের ধারণাটিকে বিশ্লেষণ করলে নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো লক্ষ্য করা যায়।

ক) অর্থের অঙ্কে পরিমাপযোগ্য :
লেনদেনের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো ঘটনাকে অবশ্যই অর্থের অঙ্কে পরিমাপযোগ্য হতে হবে নতুবা উক্ত ঘটনাকে লেনদেন বলা যাবে না। যেমন : ব্যবসায়ের ম্যানেজারের মৃত্যু একটি ক্ষতি, যা অর্থ দ্বারা পরিমাপযোগ্য নয়, তাই এটি কোনো লেনদেন নয়। কিন্তু আগুনে পণ্য পুড়ে যাওয়ায় ২০,০০০ টাকা ক্ষতি হলো- এটি একটি লেনদেন।
খ) আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন :
কোনো ঘটনা দ্বারা যদি কোনো প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন সাধিত হয়, তবে সেটিই লেনদেন হবে। যেমন : নগদ ৫,০০০ টাকা দিয়ে অফিসের জন্য আসবাবপত্র ক্রয় করা হলো। এখানে প্রতিষ্ঠানের আসবাবপত্র বৃদ্ধির পাশাপাশি নগদ ৫,০০০ টাকা হ্রাস পেয়েছে। সুতরাং এই ঘটনা দিয়ে যেহেতু প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন এসেছে, সেহেতু এটি লেনদেন। আবার যদি ৫,০০০ টাকার আসবাবপত্র ক্রয়ের ফরমায়েশ (Order) দেওয়া হয়, তবে এটি কোনো লেনদেন হবে না, কারণ এই ঘটনা দিয়ে আর্থিক অবস্থার এখনও কোনো পরিবর্তন হয়নি।
গ) দ্বৈত সত্তা :
প্রতিটি লেনদেনেই দুটি পক্ষ থাকতে হবে। অর্থাৎ একপক্ষ সুবিধা গ্রহণ করবে এবং অন্য পক্ষ সুবিধা প্রদান করবে। যেমন- কর্মচারীদের বেতন দেওয়া হলো ৫,০০০ টাকা। এখানে একটি পক্ষ বেতন খরচ হিসাব এবং অপর পক্ষ নগদান হিসাব।
ঘ) স্বয়ংসম্পূর্ণ ও স্বতন্ত্র :
লেনদেনের আরেকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো প্রতিটি লেনদেন স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্থাৎ একটি আরেকটি হতে সম্পূর্ণ আলাদা। যেমন – ১০,০০০ টাকায় পণ্য বিক্রয় করে ০৭ দিন পর টাকা পাওয়া গেল। এখানে ধারে বিক্রয় একটি লেনদেন এবং ০৭ দিন পরে টাকা প্রাপ্তি আরেকটি লেনদেন।
ঙ) দৃশ্যমানতা
লেনদেন দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান উভয়ই হতে পারে। যেমন: আসবাবপত্র ক্রয় ১০,০০০ টাকা । এটা একটি দৃশ্যমান লেনদেন। আবার আসবাবপত্রের অবচয় ১,০০০ টাকা একটি অদৃশ্যমান লেনদেন।
চ) ঐতিহাসিক ঘটনা :
যে সকল আর্থিক ঘটনা পূর্বে ঘটে গেছে, সেগুলোকে ঐতিহাসিক ঘটনা বলা হয়। ঐতিহাসিক ঘটনাকে লেনদেন বলা হয়। আবার ভবিষ্যতে ঘটতে পারে এমন ঘটনা ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন সাধন করলে অবশ্যই তা লেনদেন বলে গণ্য হবে। যেমন – অনাদায়ী পাওনা সঞ্চিতি, বাট্টা সঞ্চিতি ইত্যাদি।

ছ) হিসাব সমীকরণে প্রভাব বিস্তার :
প্রতিটি লেনদেনই হিসাব সমীকরণকে প্রভাবিত করে। লেনদেনের ফলে হিসাব সমীকরণের বিভিন্ন উপাদানে পরিবর্তন সাধিত হয়। “সম্পদ=দায়+মালিকানা স্বত্ব”—এটি হলো হিসাব সমীকরণ। সুতরাং কোনো ঘটনা লেনদেন কি না তা হিসাব সমীকরণের পরিবর্তনের মাধ্যমে যাচাই করা যায় ৷

Content added By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...