শাফাআত শব্দের অর্থ সুপারিশ করা, অনুরোধ করা ইত্যাদি। ইসলামি পরিভাষায় কল্যাণ ও ক্ষমার জন্য আল্লাহ তায়ালার নিকট নবি-রাসুলগণের সুপারিশ করাকে শাফাআত বলে। কিয়ামতের দিন শাফাআত সাধারণত দুটি কারণে করা হবে।
যথা-
ক. পাপীদের ক্ষমা ও পাপ মার্জনার জন্য।
খ. পুণ্যবানদের মর্যাদা বৃদ্ধি ও কল্যাণ লাভের জন্য।
তাৎপর্য
কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা মানুষের সব কাজকর্মের হিসাব নেবেন। তারপর আমল অনুযায়ী প্রত্যেকের জন্য জান্নাত বা জাহান্নাম নির্ধারণ করবেন। এ সময় পুণ্যবানগণ জান্নাত লাভ ও পাপীরা জাহান্নাম ভোগ করবে। নবি-রাসুল ও পুণ্যবান বান্দাগণ এ সময় আল্লাহর দরবারে শাফাআত করবেন। ফলে অনেক পাপীকে মাফ করা হবে। এরপর তাদেরকে জাহান্নাম থেকে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে।
আবার অনেক পুণ্যবানের জন্যও এদিন শাফাআত করা হবে । ফলে তাঁদের মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে।
শাফাআত সাধারণত দুই প্রকার । যথা-
ক. শাফাআতে কুবরা
খ. শাফাআতে সুগরা
শাফাআতে কুবরা
কিয়ামতের দিন সকল মানুষকে এক বিশাল ময়দানে সমবেত করা হবে। সেদিন সূর্য খুব নিকটবর্তী হবে। মানুষ অসহনীয় দুঃখ-কষ্টে নিপতিত থাকবে। এ সময় তারা হযরত আদম (আ.), হযরত নূহ (আ.), হযরত ইবরাহিম (আ.), হযরত মুসা (আ.) ও হযরত ঈসা (আ.)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে হিসাব- নিকাশ শুরু করার জন্য আল্লাহর নিকট শাফাআত করতে অনুরোধ করবে। তাঁরা সকলেই অপারগতা প্রকাশ করবেন । এ সময় সকল মানুষ মহানবি (স.)-এর নিকট উপস্থিত হবে। তখন মহানবি (স.) আল্লাহ তায়ালার নিকট সুপারিশ করবেন । অতঃপর আল্লাহ তায়ালা হিসাব-নিকাশ শুরু করবেন। এ শাফাআতকে বলা হয় শাফাআতে কুবরা। একে শাফাআতে উযমাও (সর্বশ্রেষ্ঠ শাফাআত) বলা হয়। এরূপ শাফাআতের অধিকার একমাত্র মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর থাকবে । এ ছাড়া নবি করিম (স.) জান্নাতিগণকে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালার নিকট সুপারিশ করবেন । এর পরই কেবল জান্নাতিগণ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।
শাফাআতে সুগরা
কিয়ামতের দিন পাপীদের ক্ষমা ও পুণ্যবানদের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য শাফাআত করা হবে । এটাই হলো শাফাআতে সুগরা। নবি-রাসুল, ফেরেশতা, শহিদ, আলিম, হাফিজ এ শাফাআতের সুযোগ পাবেন। আল কুরআন ও সিয়াম (রোযা) কিয়ামতের দিন শাফাআত করবে বলেও হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে ।
নিম্নোক্ত বিষয়ে শাফাআতে সুগরা করা হবে।
১.যেসব মুমিন পাপের কারণে জাহান্নামের উপযুক্ত হবে তাদের মাফ করে জান্নাতে দেয়ার জন্য শাফাআত।
২. যেসব মুমিন পাপের কারণে জাহান্নামে প্রবেশ করবে তাদের জাহান্নামের শাস্তি থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য শাফাআত ।
৩. জান্নাতিগণের মর্যাদা বৃদ্ধি করার জন্য শাফাআত ।
আমরা শাফাআতে বিশ্বাস স্থাপন করব। আল্লাহকে ভালোবাসব, রাসুলুল্লাহ (স.)-এর আদর্শ অনুযায়ী চলব। ফলে পরকালে প্রিয়নবি (স.)-এর শাফায়াত লাভ করে জান্নাতে যাব।
কিয়ামতের দিন নবি-রাসুল ও নেক বান্দাগণ আল্লাহর নিকট সুপারিশ করবেন । আল্লাহ তায়ালা এসব শাফাআত কবুল করবেন এবং বহু মানুষকে জান্নাত দান করবেন। তবে শাফাআতের সবচেয়ে বেশি ক্ষমতা থাকবে আমাদের প্রিয়নবি (স.)-এর অধিকারে । তিনি নিজেই বলেছেন-
অর্থ : “আমাকে শাফাআত (করার অধিকার) দেওয়া হয়েছে ।” (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)
অন্য একটি হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- পৃথিবীতে কত ইট ও পাথর আছে, আমি তার চেয়েও বেশি লোকের জন্য কিয়ামতের দিন শাফাআত করব । (মুসনাদ আহমদ)
শাফাআত একটি বিরাট নিয়ামত । মহানবি (স.)-এর শাফাআত ব্যতীত কিয়ামতের দিন সফলতা, কল্যাণ ও জান্নাত লাভ করা সম্ভব হবে না। সুতরাং আমরা প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর শাফাআতে বিশ্বাস করব। তাঁকে ভালোবাসব ও পূর্ণরূপে অনুসরণ করব। তাহলে আমরা তাঁর শাফাআত লাভে সক্ষম হব।
কাজ : শ্রেণির সব শিক্ষার্থী দুই দলে ভাগ হবে। এবার একদল শাফাআতের পরিচয় ও তাৎপর্য বলবে এবং অন্যদল প্রকারভেদ বর্ণনা করবে। |
আরও দেখুন...