শিক্ষায় ইন্টারনেট

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি - আমার শিক্ষায় ইন্টারনেট | NCTB BOOK

আমরা ই-লার্নিংয়ের বিষয়টি পূর্বে আলোচনা করেছি। সেখানে জেনেছি রেডিও, টেলিভিশন, সিডিরম, ব্যক্তিগত নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেট-ইত্যাদি নানা রকম মাধ্যম ব্যবহার করে কীভাবে শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়। এ অধ্যায়ে আমরা আলাদাভাবে শিক্ষার ব্যাপারে ইন্টারনেটের ভূমিকা আলোচনা করব, যার অনেক কিছুই ইতোমধ্যে তোমাদের জানা হয়ে গেছে ।
তোমরা সবাই এখন ইন্টারনেট শব্দটির সাথে পরিচিত, অনেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করেছ। এ প্রযুক্তিটি সারা পৃথিবীতে খুব বড় একটি পরিবর্তন এনেছে। এ প্রযুক্তিটি ব্যবহার করার জন্যে আমাদের কিছু অবকাঠামো এবং আর্থিক সচ্ছলতা থাকতে হয়। ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হলে প্রথমে একটি কম্পিউটার কিংবা স্মার্ট ডিভাইস দরকার। ইদানীং মোবাইল টেলিফোন প্রযুক্তিতে অনেক উন্নতি হয়েছে এবং মানুষের ক্রয়সীমার ভেতরেই ‘স্মার্টফোন' বলে বিবেচিত টেলিফোন চলে এসেছে। স্মার্টফোনে ইন্টারনেট সুবিধা পাওয়া যায়। যেহেতু এগুলো টেলিফোন, তাই এর স্ক্রিন ছোট তাই শিক্ষার জন্যে এটি ব্যবহার করা একটু কঠিন। তবে আশার কথাহচ্ছে যে, ল্যাপটপ এবং স্মার্টফোনের মাঝামাঝি একটি সম্ভাবনা রয়েছে যেটি ট্যাবলেট নামে পরিচিত এবং সেটি শিক্ষার কাজে খুব সহজেই ব্যবহার করা যায় । সত্যি কথা বলতে কি অনেক কোম্পানি এই ট্যাবলেটকে মাথায় রেখে শিক্ষার কাজে ব্যবহার করা সম্ভব সেরকম অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করতে শুরু করেছে।              
ইন্টারনেট ব্যবহার করার উপযোগী কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট কিংবা স্মার্টফোন হাতে চলে এলেই আমরা কিন্তু ইন্টারনেট সুবিধা ভোগ করতে পারি না। প্রয়োজন হয় ইন্টারনেট সংযোগের। দেশের সব জায়গায় সমানভাবে ইন্টারনেট সংযোগ নেই, তাই সবাই সমানভাবে ইন্টারনেটে স্পিড পায় না এবং ইন্টারনেটের স্পিড কম হলে সেটি ব্যবহার করা অনেক সময়েই অর্থহীন হয়ে যায়। আবার ভালো স্পিডের ইন্টারনেট পেতে হলে যে পরিমাণ টাকা খরচ করতে হয় সেটি আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের সামর্থ্যের বাইরে। কাজেই শিক্ষায় ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হলে আমাদেরকে এই ইন্টারনেট সংযোগটি অনেক সাশ্রয়ী খরচে ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে তুলে দিতে হবে। সম্ভব হলে বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের ব্যবস্থা করতে হবে।

 যদি এই দেশের সকল ছাত্র-ছাত্রীর ল্যাপটপ কিংবা ট্যাবলেট ব্যবহারের সুযোগ থাকে এবং দ্রুত গতির বেশি ব্যান্ডউইডথের (Bandwidth) ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ থাকে তাহলেই কিন্তু পুরোটা শেষ হয়ে যাবে না। এরপরের প্রশ্ন ইন্টারনেটে আমাদের দেশের ছাত্র-ছাত্রীরা কী ব্যবহার করবে? তাদের উপযোগী Contents কী রয়েছে? সত্যি কথা বলতে কি বাংলা ভাষায় সেগুলো এখনো সেভাবে নেই। সেগুলো সরকারি উদ্যোগে কিংবা ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে গড়ে উঠতে শুরু করেছে। আমরা খুব দ্রুত সেগুলো ইন্টারনেটে পেতে শুরু করব বলে আশা করছি।

এ মুহূর্তে শিক্ষণীয় অনেক বিষয় ইন্টারনেটে পাওয়া যায়। কোনো ছাত্র বা ছাত্রী পড়ালেখা করতে করতে কোনো একটা বিষয় বুঝতে না পারলে সে যদি ইন্টারনেটে সেটি অনুসন্ধান করে- মোটামুটি নিশ্চিতভাবে বলা যায় সে তার উত্তরটি কোনো না কোনোভাবে পেয়ে যাবে। একজন ছাত্র বা ছাত্রী যদি কোনো নির্দিষ্ট বিষয় শিখতে চায় কিংবা জানতে চায় সে ইন্টারনেটে তা খুঁজে বের করে নিতে পারবে- এজন্যে বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনের পাশাপাশি অত্যন্ত দক্ষ সার্চ ইঞ্জিনও আমাদের দেশের তথ্যপ্রযুক্তিবিদগণ তৈরি করেছেন। তবে এ সার্চ ইঞ্জিনগুলো ব্যবহার করার জন্য ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা থাকা প্রয়োজন।

গণিতের অত্যন্ত চমৎকার কিছু সাইট রয়েছে যেখানে গণিতের যেকোনো প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া যায়। বিজ্ঞানের পরীক্ষা-নিরীক্ষা হাতে-কলমে দেখার জন্যেও সাইট রয়েছে। উৎসাহী মানুষেরা নানা বিষয়ে গ্রুপ তৈরি করে রেখেছেন, তাদের কাছে যেকোনো প্রশ্ন দেওয়া হলে তারা উত্তর দিতে পারেন। বাংলায় শিক্ষা দেয়ার জন্যেও ইন্টারনেটে অত্যন্ত চমৎকার কিছু সাইট রয়েছে।

ইন্টারনেটে শিক্ষার একটা বিশাল জগৎ বিভিন্ন দুর্যোগকালীন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে তা প্রমাণিত ভবিষ্যতে শিক্ষায় ইন্টারনেট ব্যবহারের ভূমিকা হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

 

 

 

Content added || updated By
Promotion