শ্রম অর্থ মেহনত, পরিশ্রম, চেষ্টা, খাটুনি। আমরা সবাই শ্রম দিই। চেষ্টা করি, কেউ চাকরিতে শ্রম দিই, কেউ ব্যবসা-বাণিজ্যে শ্রম দিই। কেউ চাষাবাদে শ্রম দিই। কেউ লেখাপড়ায় শ্রম দিই। কেউ খেলাধুলায় শ্রম দিই। চেষ্টা ও শ্রম সাফল্যের চাবিকাঠি। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
অর্থ : মানুষ যা চেষ্টা করে তাই পায় ।
একটি ঘটনা
ফুয়াদ পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। সে রোজ সকালে ঘুম থেকে ওঠে। মেসওয়াক করে। হাতমুখ ধুয়ে ওযু করে। ফজরের সালাত আদায় করে। কুরআন মজিদ তিলাওয়াত করে। অতঃপর তার আম্মুর কাছে পড়তে বসে। সে প্রতিদিনের পড়া তৈরি করে নিয়ে স্কুলে যায়। শিক্ষক ক্লাসে পড়ার মধ্য থেকে তাকে কোনো প্রশ্ন করলে সে দাঁড়িয়ে উত্তর দেয়। শিক্ষক তার ওপর খুব খুশি হন। শিক্ষক ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে বলেন, তোমরা পড়াশোনায় শ্রম ও মনোযোগ দিলে সবাই পড়া শিখতে পারবে। প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে। চেষ্টা ও পরিশ্রমই শেখার ও জানার চাবিকাঠি।
আমরা অনেক সময় কাজ করতে গিয়ে লজ্জাবোধ করি। মনে করি যে, কাজ করলে লোকে ঘৃণা করবে। চাকর বলবে। কিন্তু এ রকম মনে করা ঠিক নয়। কারণ আমরা সবাই শ্রম নিই। আমরা সকলে শ্রমিক। দেশের ছোট-বড় শিক্ষিত, অশিক্ষিত সবাই শ্রম দেন এবং বিনিময়ে অর্থ উপাজন করেন। তাই কোনো শ্রম বা শ্রমিককে ঘৃণা করতে নেই। প্রত্যেক শ্রমিককে তার শ্রমের মর্যাদা দিতে হবে। তাকে শ্রদ্ধা করতে হবে। তাকে স্নেহ ও আদর করতে হবে।
আমাদের মহানবি (স) সব সময় নিজের কাজ নিজে করতেন। তিনি কখনো কাজে অবহেলা করতেন না। কোনো কাজকে ঘৃণা করতেন না। কাজ ফেলে রাখতেন না। অপরের কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করতেন। তিনি ছেঁড়া জামা-কাপড় নিজেই সেলাই করতেন। ময়লা জামা-কাপড় ধুয়ে পরিষ্কার করতেন। ঘর ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করতেন। পানাহারের প্লেট-গ্লাস নিজেই ধুতেন। বাসায় মেহমান আসলে তাকে যত্ন করতেন। তিনি পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মতো নিজ হাতে সব কাজ করতেন। আনন্দ পেতেন। মহানবি (স) গৃহকর্মীদের সম্পর্কে বলেছেন, ‘যারা কাজ করে, তারা তোমাদের ভাই। নিজে যা খাবে, তাদের তা খাওয়াবে। নিজে যা পরিধান করবে, তাদেরও তা পরতে দেবে। কাজকর্মে তাদের সাহায্য করবে। তাদের বেশি কষ্ট দেবে না। তাদের মর্যাদা করবে। তাদের শ্রমের মর্যাদা দেবে।’
আমাদের অনেকের বাসায় গরিব অসহায় লোকজন ও মহিলারা নানা রকম কাজকর্ম করে থাকে। ছোট ছোট বিভিন্ন বয়সের গরিব ছেলেমেয়েরা কাজকর্ম করে। আমরা তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করব। কাজের লোকজন বয়সে বড় হলে তাদের সালাম দেব। সম্মান করব। মর্যাদা দেব। আর বয়সে ছোট হলে তাদের আদর করব। যত্ন নেব। নিজেরা যা খাব, তাদেরও তাই খেতে দেব। তাদের কাজে সাহায্য করব। তাদের কোনো কষ্ট দেব না। তাদের দুঃখ দেব না। তারা আমাদের মতো মানুষ। তারা আমাদের ভাইবোন। আমাদের যেমন মানমর্যাদা আছে, তাদেরও তেমনি মানমর্যাদা আছে। আমরা তাদের সম্মান করব। তাদের কাজের ও শ্রমের মর্যাদা দেব। আর এই শ্রমের মর্যাদা দেওয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব ।
পৃথিবীতে কোনো কাজই তুচ্ছ নয়। কোনো কর্মী ও শ্রমিক নগণ্য নয়। প্রত্যেক কৰ্মী ও শ্রমিকের হাতই উত্তম হাত। শ্রমের উপার্জনই উত্তম উপার্জন। শ্রমিকের কাজ শেষ হলে তার পারিশ্রমিক সাথে সাথেই দিয়ে দেওয়া উচিত। তাহলে শ্রমের ন্যায্য মর্যাদা দেওয়া হবে। এটাই ইসলামের শিক্ষা। এটাই নৈতিক মূল্যবোধ।
মহানবি (স) বলেছেন, 'শ্রমিকের ঘাম শুকানোর পূর্বেই তার পারিশ্রমিক দিয়ে দাও।'
পরিকল্পিত কাজ : আমরা নিজেদের কাজ নিজেরা করলে আমাদের মর্যাদা বাড়বে, না কমবে? শিক্ষার্থীরা এ প্রশ্নের উত্তরটি খাতায় সুন্দর করে লিখবে।
Read more