সমতলে বস্তুকণার গতি (Motion of particles in a plane)

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - উচ্চতর গণিত - উচ্চতর গণিত – ২য় পত্র | | NCTB BOOK

সমতলে বস্তুকণার গতি (Motion of Particles in a Plane) হল সেই গতি যেখানে বস্তুকণা কোনো এক সমতলে, অর্থাৎ দুইটি মাত্রার মধ্যে চলাচল করে। এই গতি সাধারণত দুটি উপাদানে বিভক্ত: গতি এবং ত্বরণ। বস্তুকণার গতি ভেক্টর আকারে বর্ণনা করা হয় এবং এর মধ্যে স্থানাঙ্ক, গতির তীব্রতা (ম্যাগনিচিউড), এবং দিক (ডিরেকশন) অন্তর্ভুক্ত থাকে।

গতি এবং ত্বরণ:
বস্তুকণার গতির পরিমাণ এবং দিক পরিবর্তনকে ত্বরণ বলা হয়। যদি বস্তুকণার গতি বৃত্তাকার পথে হয়, তবে এর মধ্যে আক্ষরিক ত্বরণ থাকবে, যা প্রতি মুহূর্তে তার গতির দিক পরিবর্তন ঘটায়। ত্বরণটি দুটি উপাদানে বিভক্ত করা যায়: একে বলা হয় ত্বরণের রেখাবৃত্তীয় (Tangential) এবং আনুভূমিক (Radial) উপাদান।

বৃত্তাকার গতি:
যখন বস্তুকণা বৃত্তের পথের উপর চলাচল করে, তখন তার গতির দিক সবসময় পরিবর্তন হয়, কিন্তু গতি অপরিবর্তিত থাকে (যদি তার ত্বরণ শূন্য হয়)। বৃত্তাকার গতি বিশ্লেষণে, কেন্দ্রের দিকে গতি পরিবর্তন হতে থাকে, এবং এই পরিবর্তনকে "কেন্দ্রবিচ্যুতি ত্বরণ" বলা হয়।

গতি সমীকরণ:
বস্তুকণার গতির জন্য সমীকরণগুলি নির্ধারণ করে তার গতির তীব্রতা ও দিক, ত্বরণ, শক্তি এবং অন্যান্য মৌলিক ধারণা। এই সমীকরণের মাধ্যমে বিভিন্ন গতি সমস্যা সমাধান করা হয়।

সংক্ষেপে, সমতলে বস্তুকণার গতি বিভিন্ন ভেক্টর গুণাবলীর সমন্বয়ে কাজ করে, এবং এর বিশ্লেষণ বস্তুকণার গতি, ত্বরণ, কাজ এবং শক্তির সম্পর্ক বুঝতে সাহায্য করে।

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

নিচের উদ্দীপকের আলোকে পরবর্তী প্রশ্নের উত্তর দাও:

এক ব্যাক্তি তার 120 মিটার সামনে একটি বাসকে স্থিরাবস্থা থেকে সমত্বরণে ছাড়তে দেখে সমবেগে দৌড়াতে লাগল। লোকটি এক মিনিটে বাসটিকে কোন রকম ধরল।

80 মিটার/মিনিট
90 মিটার/মিনিট
100 মিটার/মিনিট
240 মিটার/মিনিট
নিচের উদ্দীপকের আলোকে পরবর্তী প্রশ্নের উত্তর দাও:

6ms-1 বেগে একটি জাহাজ পূর্বদিকে এবং 9ms-1 বেগে অপর একটি জাহাজ দক্ষিণ পশ্চিমে চলছে। ২য় জাহাজের সাপেক্ষে ১ম জাহাজের আপেক্ষিক বেগ v এবং উত্তর দিকের সাথে v এর অন্তগর্ত কোণ ৪।

নিজের উদ্দীপকের আলোকে পরবর্তী প্রশ্নের উত্তর দাও:

একটি বোমারু ভূমি হতে 490 m উচ্চতায় ভূমির সমান্তরালে 120m/s বেগে একটি বোমা ফেলে দিল। ভূপৃষ্ঠের উপর A একটি বিন্দু।

সমতলে বস্তুকণার গতি সম্পর্কে ধারণা

সমতলে বস্তুকণার গতি (Motion of Particles in a Plane) বিশ্লেষণে প্রধানত দুটি দিক দেখা হয়—বস্তুকণার গতির তীব্রতা (Magnitude) এবং দিক (Direction)। এটি দুইটি মাত্রার মধ্যে ঘটে, যেখানে বস্তুকণা কোন একটি নির্দিষ্ট পয়েন্টের চারপাশে চলাচল করে, এবং তার অবস্থান সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়। এই ধরনের গতি সাধারণত আমরা গাণিতিকভাবে ভেক্টর হিসেবে বিশ্লেষণ করি, যেখানে ভেক্টর গতি এবং ত্বরণ মূল উপাদান হিসেবে থাকে।

গতি ও ত্বরণের উপাদান:

  • গতি: গতি হলো বস্তুকণার অবস্থান পরিবর্তন করার হার। এটি একটি ভেক্টর পরিমাণ, অর্থাৎ এর একটি দিক এবং মাপ থাকে।
  • ত্বরণ: ত্বরণ হল গতির পরিবর্তন। যদি বস্তুকণার গতি পরিবর্তিত হয়, তার তীব্রতা বা দিক বদলাতে থাকে, তাহলে সেটি ত্বরণ সৃষ্টি করে। ত্বরণও একটি ভেক্টর পরিমাণ এবং এর একটি দিক থাকে।

বৃত্তাকার গতি:

যখন বস্তুকণা বৃত্তের পথে চলাচল করে, তখন তার গতি দিক প্রতি মুহূর্তে পরিবর্তিত হয়, যদিও তার তীব্রতা অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

  • এই ধরনের গতি বিশ্লেষণে, বস্তুকণার গতির কেন্দ্রবিচ্যুতি ত্বরণ (Centripetal Acceleration) এবং কেন্দ্রবাহিত শক্তি (Centripetal Force) গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
  • বৃত্তাকার গতির মধ্যে, বস্তুকণার গতি সমীকরণ অনুযায়ী, তার রেডিয়াল ত্বরণ এবং ট্যাঞ্জেনশিয়াল ত্বরণ থাকে। রেডিয়াল ত্বরণ বৃত্তের কেন্দ্রে মুখি হয়, এবং ট্যাঞ্জেনশিয়াল ত্বরণ বৃত্তের বাইরের দিকে থাকে।

গতি সমীকরণ:

বস্তুকণার গতির সমীকরণগুলি তার গতি, ত্বরণ, শক্তি, এবং বস্তুকণার অবস্থান সম্পর্কিত গণনা করতে সাহায্য করে। যেমন:

  • \( v = \frac{d}{t} \) (যেখানে, \( v \) গতি, \( d \) চলাচলকৃত দূরত্ব, \( t \) সময়)
  • ত্বরণের জন্য \( a = \frac{\Delta v}{t} \) (যেখানে, \( a \) ত্বরণ, \( \Delta v \) গতির পরিবর্তন)

উদাহরণ:

ধরা যাক, একটি বস্তুকণা বৃত্তাকার পথে চলতে থাকে। এই ক্ষেত্রে, কেন্দ্রবাহিত ত্বরণ বা centripetal acceleration এর পরিমাণ হবে:
\[
a_c = \frac{v^2}{r}
\]
এখানে \( v \) হলো বস্তুকণার গতি, এবং \( r \) হলো বৃত্তের ব্যাসার্ধ।


এই সমস্ত ধারণা সমতলে বস্তুকণার গতি বিশ্লেষণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। একটি বস্তুকণার গতি শুধুমাত্র তার গতির তীব্রতা ও দিকের উপর নির্ভর করে না, বরং তার ত্বরণ, শক্তি, এবং বাহ্যিক বলের সাথে সম্পর্কিতও থাকে।

বস্তুকণার গতির পরিমাণ

বস্তুকণার গতির পরিমাণ (Magnitude of the velocity of a particle) হলো বস্তুকণার গতির গাণিতিক পরিমাপ, যা তার গতির তীব্রতা বা গতি শক্তিকে নির্দেশ করে। এটি একটি ভেক্টর পরিমাণ, তবে তার দিক (direction) না দেখে শুধুমাত্র তীব্রতা (magnitude) ধরা হয়।

গতি ভেক্টরের তীব্রতা বা পরিমাণ হলো বস্তুকণার একক সময়ে চলে যাওয়া দৈর্ঘ্য, অর্থাৎ, বস্তুকণার দূরত্বের পরিবর্তন (displacement) কতো দ্রুত ঘটছে তা। এটি সাধারণত মিটার/সেকেন্ড (m/s) এককে পরিমাপ করা হয়।

গতি (Velocity) এবং গতি পরিমাণের সম্পর্ক:

বস্তুকণার গতি ভেক্টর পরিমাণ, যার একটি দিক (direction) এবং তীব্রতা (magnitude) থাকে। গতি পরিমাণের হিসাব করার জন্য, তার দিক বাদ দিয়ে শুধুমাত্র তীব্রতাকে বিবেচনা করা হয়।

গতি ভেক্টর:

গতি ভেক্টরের একটি সাধারিতরূপ হল:
\[
\vec{v} = \frac{d\vec{r}}{dt}
\]
এখানে:

  • \( \vec{v} \) হলো গতি ভেক্টর,
  • \( d\vec{r} \) হলো বস্তুকণার স্থান পরিবর্তন,
  • \( dt \) হলো সময় পরিবর্তন।

গতি পরিমাণ:

গতি ভেক্টরের পরিমাণ হল:
\[
|\vec{v}| = \frac{ds}{dt}
\]
এখানে:

  • \( ds \) হলো বস্তুকণার চলাচলকৃত ছোট দূরত্ব,
  • \( dt \) হলো সময়ের ছোট পরিবর্তন।

বৃত্তাকার গতি:

যদি বস্তুকণা বৃত্তাকার পথে চলাচল করে, তাহলে তার গতির পরিমাণে কোনো পরিবর্তন না হলেও, তার দিক প্রতি মুহূর্তে পরিবর্তিত হয়।

  • এই ক্ষেত্রে, গতি পরিমাণ অপরিবর্তিত থাকে, তবে বস্তুকণার গতির দিক পরিবর্তন হতে থাকে।

উদাহরণ:

ধরা যাক, একটি বস্তুকণা একটি সোজা পথে চলতে চলতে 10 সেকেন্ডে 100 মিটার চলে যায়। তখন তার গতি পরিমাণ হবে:
\[
|\vec{v}| = \frac{100 \text{ মিটার}}{10 \text{ সেকেন্ড}} = 10 \text{ m/s}
\]
এখানে, \( |\vec{v}| \) হলো গতি পরিমাণ, যা 10 মিটার/সেকেন্ড (m/s)।

উপসংহার:

বস্তুকণার গতির পরিমাণ তার চলাচলের গতির তীব্রতা বা গতি শক্তি নির্দেশ করে, যা গাণিতিকভাবে তার স্থান পরিবর্তনের হারের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়।

গতি এবং ত্বরণের উপাদান

গতি (Velocity) এবং ত্বরণ (Acceleration) এর উপাদান দুইটি মৌলিক পদার্থবিজ্ঞানের ধারণা, যা বস্তুকণার গতি এবং তার গতির পরিবর্তন বিশ্লেষণ করতে ব্যবহৃত হয়। এই দুইটি পরিমাণের উপাদানগুলি একে অপরের সাথে সম্পর্কিত এবং বস্তুকণার গতির সময়কালীন পরিবর্তন বুঝতে সাহায্য করে।

১. গতি (Velocity) এর উপাদান

গতি হল বস্তুকণার স্থানাঙ্কের পরিবর্তনের হার, এবং এটি একটি ভেক্টর পরিমাণ যার একটি দিক (direction) এবং তীব্রতা (magnitude) থাকে।

গতি ভেক্টরের উপাদানগুলি সাধারণত দুটি অংশে বিভক্ত করা হয়:

  • আনুভূমিক গতি উপাদান (Horizontal Component): এটি গতি ভেক্টরের সেই অংশ যা অনুভূমিক (x) দিকের সাথে সম্পর্কিত। যদি গতি ভেক্টর \( \vec{v} \) হয়, তবে আনুভূমিক উপাদান হবে:
    \[
    v_x = v \cos \theta
    \]
    যেখানে, \( \theta \) গতি ভেক্টরের এবং অনুভূমিক রেখার মধ্যে কোণ।
  • উল্লম্ব গতি উপাদান (Vertical Component): এটি গতি ভেক্টরের সেই অংশ যা উল্লম্ব (y) দিকের সাথে সম্পর্কিত। উল্লম্ব উপাদান হবে:
    \[
    v_y = v \sin \theta
    \]
    যেখানে, \( \theta \) গতি ভেক্টরের এবং উল্লম্ব রেখার মধ্যে কোণ।

২. ত্বরণ (Acceleration) এর উপাদান

ত্বরণ হল গতির পরিবর্তনের হার, অর্থাৎ গতি প্রতি একক সময়ের মধ্যে কিভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে। ত্বরণও একটি ভেক্টর পরিমাণ, যার একটি দিক এবং তীব্রতা থাকে।

ত্বরণের উপাদানগুলোও দুইটি ভাগে ভাগ করা যায়:

  • আনুভূমিক ত্বরণ উপাদান (Horizontal Component of Acceleration): এটি ত্বরণ ভেক্টরের সেই অংশ যা অনুভূমিক (x) দিকের সাথে সম্পর্কিত। এটি গণনা করা হয়:
    \[
    a_x = \frac{dv_x}{dt}
    \]
    যেখানে, \( a_x \) হলো আনুভূমিক ত্বরণ এবং \( dv_x \) হলো আনুভূমিক গতির পরিবর্তন।
  • উল্লম্ব ত্বরণ উপাদান (Vertical Component of Acceleration): এটি ত্বরণ ভেক্টরের সেই অংশ যা উল্লম্ব (y) দিকের সাথে সম্পর্কিত। এটি গণনা করা হয়:
    \[
    a_y = \frac{dv_y}{dt}
    \]
    যেখানে, \( a_y \) হলো উল্লম্ব ত্বরণ এবং \( dv_y \) হলো উল্লম্ব গতির পরিবর্তন।

গতি এবং ত্বরণের সম্পর্ক:

যেহেতু গতি এবং ত্বরণ দুটি ভেক্টর পরিমাণ, এগুলোর উপাদানগুলো সমন্বিতভাবে কাজ করে। উদাহরণস্বরূপ:

  • যদি একটি বস্তুকণা অনুভূমিক পথে সরতে থাকে এবং তাতে কোনো উল্লম্ব ত্বরণ না থাকে, তবে তার গতি শুধুমাত্র অনুভূমিক দিকের উপাদান দ্বারা নির্ধারিত হবে।
  • যদি গতি ভেক্টরের দুটো উপাদান (আনুভূমিক এবং উল্লম্ব) থাকে, তবে ত্বরণও উক্ত দুইটি দিকের উপাদান দ্বারা পরিবর্তিত হবে।

উদাহরণ:

ধরা যাক, একটি বস্তুকণা উল্লম্ব দিকে \( 5 , m/s^2 \) ত্বরণ সহ উপরের দিকে উঠছে, এবং অনুভূমিকভাবে তার গতি অপরিবর্তিত থাকছে। এখানে:

  • আনুভূমিক ত্বরণ \( a_x = 0 \),
  • উল্লম্ব ত্বরণ \( a_y = 5 , m/s^2 \),
    এবং
  • গতি ভেক্টরের উপাদানগুলির ভিত্তিতে, বস্তুকণার গতি এবং ত্বরণ নির্ধারণ করা যাবে।

উপসংহার:

গতি এবং ত্বরণের উপাদানগুলি বস্তুকণার গতির বিশ্লেষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গতি ভেক্টরের উপাদানগুলো দিয়ে আমরা বস্তুকণার চলাচলের তীব্রতা ও দিক নির্ধারণ করতে পারি, এবং ত্বরণ ভেক্টরের উপাদানগুলো দিয়ে গতির পরিবর্তন ও তার প্রতি একক সময়ের মধ্যে কীভাবে পরিবর্তন হচ্ছে, তা জানতে পারি।

বৃত্তাকার গতি (Circular Motion)

বৃত্তাকার গতি (Circular Motion) হল এমন একটি গতি যেখানে বস্তুকণা একটি নির্দিষ্ট বৃত্তের পথে চলাচল করে। বৃত্তাকার গতি প্রধানত দুই ধরনের হতে পারে: স্থিতিস্থ গতি (Uniform Circular Motion) এবং **অস্থিতিস্থ গতি (Non-uniform Circular Motion)**।

১. স্থিতিস্থ বৃত্তাকার গতি (Uniform Circular Motion):

স্থিতিস্থ বৃত্তাকার গতি এমন একটি গতি যেখানে বস্তুকণার গতির তীব্রতা (magnitude) স্থির থাকে, কিন্তু দিক (direction) প্রতি মুহূর্তে পরিবর্তিত হয়। বস্তুকণার গতি ভেক্টরের পরিমাণ অপরিবর্তিত থাকে, তবে তার দিকের পরিবর্তন ঘটে, কারণ বৃত্তের পথে চলতে চলতে বস্তুকণার গতি ভেক্টরের দিক বদলায়।

গতি এবং ত্বরণের উপাদান:

  • গতি (Velocity): বৃত্তাকার গতি চলাকালীন, গতি ভেক্টরের তীব্রতা অপরিবর্তিত থাকে, তবে তার দিক পরিবর্তিত হয়।
  • ত্বরণ (Acceleration): বৃত্তাকার গতির মধ্যে, গতি ভেক্টরের দিকের পরিবর্তন ঘটতে থাকে, যদিও তীব্রতা অপরিবর্তিত থাকে। এই কারণে বস্তুকণার একটি কেন্দ্রবাহিত ত্বরণ (Centripetal Acceleration) থাকে, যা বৃত্তের কেন্দ্রে নির্দেশিত হয়।

কেন্দ্রবাহিত ত্বরণ:

বৃত্তের পথে চলমান বস্তুকণার ত্বরণ যেটি কেন্দ্রবাহিত ত্বরণ (Centripetal Acceleration) নামে পরিচিত, তা গতি ভেক্টরের দিক পরিবর্তনের জন্য দায়ী। এর পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়:
\[
a_c = \frac{v^2}{r}
\]
এখানে:

  • \( a_c \) হলো কেন্দ্রবাহিত ত্বরণ,
  • \( v \) হলো গতি ভেক্টরের তীব্রতা (যা স্থির থাকে),
  • \( r \) হলো বৃত্তের ব্যাসার্ধ।

কেন্দ্রবাহিত বল:

কেন্দ্রবাহিত ত্বরণ অর্জনের জন্য একটি বল প্রয়োজন, যাকে কেন্দ্রবাহিত বল (Centripetal Force) বলা হয়। কেন্দ্রবাহিত বলের পরিমাণও নির্ধারণ করা হয়:
\[
F_c = \frac{mv^2}{r}
\]
এখানে:

  • \( F_c \) হলো কেন্দ্রবাহিত বল,
  • \( m \) হলো বস্তুকণার ভর,
  • \( v \) হলো গতি ভেক্টরের তীব্রতা,
  • \( r \) হলো বৃত্তের ব্যাসার্ধ।

২. অস্থিতিস্থ বৃত্তাকার গতি (Non-uniform Circular Motion):

যখন বৃত্তাকার পথে চলমান বস্তুকণার গতি তীব্রতা (speed) পরিবর্তিত হয়, তখন এটি অস্থিতিস্থ বৃত্তাকার গতি বলা হয়। এই ক্ষেত্রে বস্তুকণার গতি ভেক্টরের দিক এবং তীব্রতা উভয়ই পরিবর্তিত হয়।

অস্থিতিস্থ বৃত্তাকার গতিতে, কেন্দ্রবাহিত ত্বরণ এবং একটি ট্যাঞ্জেনশিয়াল ত্বরণ (Tangential Acceleration) থাকে। ট্যাঞ্জেনশিয়াল ত্বরণটি গতি ভেক্টরের তীব্রতার পরিবর্তন ঘটায় এবং কেন্দ্রবাহিত ত্বরণটি বস্তুকণাকে বৃত্তের কেন্দ্রের দিকে টানে।

ট্যাঞ্জেনশিয়াল ত্বরণ:

ট্যাঞ্জেনশিয়াল ত্বরণের পরিমাণ গতি ভেক্টরের তীব্রতার পরিবর্তনের হার দ্বারা নির্ধারিত হয়:
\[
a_t = \frac{dv}{dt}
\]
এখানে:

  • \( a_t \) হলো ট্যাঞ্জেনশিয়াল ত্বরণ,
  • \( dv \) হলো গতির তীব্রতার পরিবর্তন,
  • \( dt \) হলো সময়ের পরিবর্তন।

৩. বৃত্তাকার গতির গাণিতিক সমীকরণ:

বৃত্তাকার গতি বিশ্লেষণ করার সময় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সমীকরণ ব্যবহৃত হয়:

  • বৃত্তের গতির তীব্রতার জন্য সমীকরণ:
    \[
    v = \frac{2 \pi r}{T}
    \]
    যেখানে \( T \) হলো সময়কাল (time period), অর্থাৎ একটি পূর্ণ বৃত্তের পথ পরিক্রমণের জন্য বস্তুকণার সময়।
  • কেন্দ্রবাহিত ত্বরণের জন্য সমীকরণ:
    \[
    a_c = \frac{v^2}{r}
    \]
    যেখানে \( v \) হলো গতি, এবং \( r \) হলো বৃত্তের ব্যাসার্ধ।

উদাহরণ:

ধরা যাক, একটি গাড়ি একটি বৃত্তাকার পথে \( 20 , m/s \) গতিতে চলতে চলতে একটি বৃত্তের ব্যাসার্ধ \( 50 , m \)। তার কেন্দ্রবাহিত ত্বরণের পরিমাণ হবে:
\[
a_c = \frac{(20)^2}{50} = \frac{400}{50} = 8 , m/s^2
\]

উপসংহার:

বৃত্তাকার গতি এমন একটি গতি যেখানে বস্তুকণা একটি নির্দিষ্ট বৃত্তের পথ অনুসরণ করে, এবং এই গতিতে বিশেষভাবে কেন্দ্রবাহিত ত্বরণ এবং বল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদি গতি স্থিতিস্থ থাকে, তবে তার তীব্রতা অপরিবর্তিত থাকে, কিন্তু দিক পরিবর্তিত হয়। অন্যদিকে, অস্থিতিস্থ বৃত্তাকার গতিতে, তীব্রতা ও দিক উভয়ই পরিবর্তিত হয়।

গতি সমীকরণ (Equations of Motion)

গতি সমীকরণ (Equations of Motion) হলো সেই গাণিতিক সম্পর্ক যা বস্তুকণার গতি এবং ত্বরণের পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত। এই সমীকরণগুলো বস্তুকণার অবস্থান, গতি এবং ত্বরণের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে। এগুলি সাধারণত সমতল গতির ক্ষেত্রে ব্যবহার হয় এবং নির্দিষ্ট শর্তে বস্তুকণার গতির বিশ্লেষণ করতে সহায়তা করে।

গতি সমীকরণ তিনটি মূল সমীকরণের মধ্যে ভাগ করা হয়:

১. প্রথম সমীকরণ (First Equation of Motion):

প্রথম সমীকরণটি গতি, ত্বরণ এবং সময়ের সম্পর্ক ব্যাখ্যা করে। এটি বলা হয়:
\[
v = u + at
\]
এখানে:

  • \( v \) হলো গতি (final velocity),
  • \( u \) হলো প্রাথমিক গতি (initial velocity),
  • \( a \) হলো ত্বরণ (acceleration),
  • \( t \) হলো সময় (time)।

এই সমীকরণটি গতি, ত্বরণ এবং সময়ের মধ্যে সরল সম্পর্ক তৈরি করে এবং যদি কোনও একটির মান জানা থাকে, তবে অন্যগুলো বের করা সম্ভব।

২. দ্বিতীয় সমীকরণ (Second Equation of Motion):

দ্বিতীয় সমীকরণটি গতি এবং অবস্থান (displacement) এর সম্পর্ক তৈরি করে:
\[
s = ut + \frac{1}{2}at^2
\]
এখানে:

  • \( s \) হলো স্থানাঙ্ক (displacement),
  • \( u \) হলো প্রাথমিক গতি,
  • \( a \) হলো ত্বরণ,
  • \( t \) হলো সময়।

এই সমীকরণটি গতি পরিবর্তনের জন্য অবস্থান নির্ধারণে ব্যবহৃত হয়, যখন কোনো বস্তুকণার প্রাথমিক গতি, ত্বরণ এবং সময় জানা থাকে।

৩. তৃতীয় সমীকরণ (Third Equation of Motion):

তৃতীয় সমীকরণটি গতি এবং স্থানাঙ্কের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি করে, তবে এটি সময়ের উপর নির্ভর করে না:
\[
v^2 = u^2 + 2as
\]
এখানে:

  • \( v \) হলো গতি (final velocity),
  • \( u \) হলো প্রাথমিক গতি (initial velocity),
  • \( a \) হলো ত্বরণ (acceleration),
  • \( s \) হলো স্থানাঙ্ক (displacement)।

এই সমীকরণটি ব্যবহার করা হয় যখন সময়ের মান জানানো না থাকে, কিন্তু প্রাথমিক এবং চূড়ান্ত গতি, ত্বরণ এবং স্থানাঙ্ক জানা থাকে।

গতি সমীকরণের ব্যবহার:

এই সমীকরণগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ যখন কোনও বস্তুকণার গতি, ত্বরণ, স্থানাঙ্ক বা সময় সম্পর্কে তথ্য জানতে হয়। বিশেষত:

  • প্রথম সমীকরণ থেকে বস্তুকণার চূড়ান্ত গতি (final velocity) বের করা যায় যদি প্রাথমিক গতি, ত্বরণ এবং সময় জানা থাকে।
  • দ্বিতীয় সমীকরণ বস্তুকণার স্থানাঙ্ক বা চলাচলের দৈর্ঘ্য বের করতে সাহায্য করে।
  • তৃতীয় সমীকরণ বস্তুকণার গতি ও স্থানাঙ্কের সম্পর্ক বুঝতে গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত যখন সময়ের তথ্য জানা না থাকে।

উদাহরণ:

ধরা যাক, একটি গাড়ি 5 \(m/s\) প্রাথমিক গতি নিয়ে, প্রতি সেকেন্ডে 2 \(m/s^2\) ত্বরণ সহ সরছে। আমরা যদি জানি যে গাড়িটি 10 সেকেন্ড চলেছে, তাহলে তার চূড়ান্ত গতি হবে:

প্রথম সমীকরণ ব্যবহার করে:
\[
v = u + at = 5 + (2 \times 10) = 5 + 20 = 25 , m/s
\]
তাহলে, গাড়ির চূড়ান্ত গতি হবে 25 \(m/s\)।


উপসংহার:
গতি সমীকরণগুলি বস্তুকণার গতি ও ত্বরণের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে এবং বস্তুকণার চলাচলের বিভিন্ন ধাপ বিশ্লেষণ করতে ব্যবহৃত হয়। এগুলোর মাধ্যমে চলাচলের ধরন সহজে নির্ধারণ করা সম্ভব।

শক্তি এবং কাজ

শক্তি (Energy) এবং কাজ (Work) হল পদার্থবিজ্ঞানের দুটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা যা বস্তুর গতি এবং অবস্থার পরিবর্তন বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। এই দুটি ধারণার মধ্যে এক ধরনের সম্পর্ক রয়েছে, এবং এগুলি বস্তুর শক্তির স্থানান্তর এবং তার গতির পরিবর্তন নির্ধারণ করে।

১. কাজ (Work)

কাজ হলো একটি শক্তি, যা যখন একটি বস্তুকে নির্দিষ্ট দিক এবং পরিমাণে সরাতে প্রয়োজন হয়, তখন সেই শক্তি কাজ বলে। কাজের জন্য একটি বল (Force) প্রয়োজন, যা বস্তুকে একটি নির্দিষ্ট পথ বরাবর সরাতে সাহায্য করে।

কাজের গাণিতিক সংজ্ঞা হল:
\[
W = F \cdot d \cdot \cos(\theta)
\]
এখানে:

  • \( W \) হলো কাজ (Work),
  • \( F \) হলো প্রয়োগকৃত বল (Force),
  • \( d \) হলো চলাচলের পথ (Displacement),
  • \( \theta \) হলো বলের এবং চলাচলের পথে কোণ।

এটি বোঝায় যে, কাজ কেবল তখনই সম্পন্ন হয় যখন বলের প্রভাব বস্তুর চলাচল করার সাথে সম্পর্কিত হয় এবং চলাচলের পথের উপর বলের একটি উপাদান কাজ করে।

কাজের একক:

কাজের একক হলো **জুল (Joule)**। এক জুল কাজ সমান হয় যখন এক নিউটন বল একটি বস্তুকে এক মিটার পথ ধরে সরায়।

২. শক্তি (Energy)

শক্তি হল একটি বস্তুর ক্ষমতা যা কাজ করার বা তার অবস্থান পরিবর্তন করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করতে পারে। শক্তি কোনও বস্তুর ক্ষমতা এবং তার অবস্থান পরিবর্তনের ক্ষমতা বোঝায়।

শক্তি দুটি প্রধান ধরনের হয়:

  • যান্ত্রিক শক্তি (Mechanical Energy): এটি দুইটি অংশে ভাগ করা হয়:
    • গতি শক্তি (Kinetic Energy): একটি বস্তুর গতি সম্পর্কিত শক্তি। এর পরিমাণ হয়:
      \[
      K.E. = \frac{1}{2}mv^2
      \]
      যেখানে, \( m \) হলো বস্তুর ভর এবং \( v \) হলো বস্তুর গতি।
    • স্থিতিস্থ শক্তি (Potential Energy): এটি একটি বস্তুর অবস্থান বা তার অবস্থানের পরিবর্তন সম্পর্কিত শক্তি। যেমন, কোনো বস্তু যদি এক উচ্চতায় থাকে, তাহলে তার সম্ভাব্য শক্তি থাকে। এর পরিমাণ হয়:
      \[
      P.E. = mgh
      \]
      যেখানে, \( m \) হলো বস্তুর ভর, \( g \) হলো পৃথিবীর গতি ত্বরণ (9.8 m/s²), এবং \( h \) হলো উচ্চতা।
  • অন্য ধরনের শক্তি: শক্তি আরও বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যেমন তাপ শক্তি, বৈদ্যুতিক শক্তি, রাসায়নিক শক্তি, ইত্যাদি।

শক্তির একক:

শক্তির এককও জুল (Joule), যা কাজের এককের সাথে সমান।

৩. শক্তি এবং কাজের সম্পর্ক

কাজ এবং শক্তির মধ্যে একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। কাজ করার মাধ্যমে শক্তি স্থানান্তরিত হয়। যখন কোনও বস্তুকে সরানো হয়, তখন তাকে শক্তি প্রয়োগ করা হয় এবং সেই শক্তি বস্তুর গতি বা অবস্থান পরিবর্তন ঘটায়। অর্থাৎ, কাজের মাধ্যমে শক্তি স্থানান্তরিত হয় এবং শক্তি দিয়ে কাজ করা সম্ভব হয়।

উদাহরণস্বরূপ:

  • যদি আপনি একটি বস্তুকে একটি উচ্চতায় তুলে নেন, তাহলে আপনি বস্তুর সম্ভাব্য শক্তি বৃদ্ধি করবেন। আপনি যে কাজটি করেছেন, তা সেই শক্তি স্থানান্তরের কাজ।
  • যদি একটি গাড়ি চলতে থাকে, তাহলে তার গতির শক্তি (কাইনেটিক এনার্জি) তার গতির কারণে কাজ করতে সক্ষম হয়।

৪. শক্তি সংরক্ষণ আইনি (Law of Conservation of Energy)

শক্তি সংরক্ষণ আইনি অনুযায়ী, শক্তি কখনই নষ্ট হয় না, তবে একটি রূপ থেকে অন্য রূপে রূপান্তরিত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ:

  • যদি একটি বস্তুর গতির শক্তি (কাইনেটিক এনার্জি) কোনও বাধা বা প্রতিরোধক শক্তির কারণে হারিয়ে যায়, তবে তা গরম শক্তি (থার্মাল এনার্জি) বা অন্য কোনো শক্তিতে রূপান্তরিত হয়, কিন্তু মোট শক্তি সব সময় সংরক্ষিত থাকে।

উদাহরণ:

ধরা যাক, একটি বস্তুকে ১০০ জুল কাজ করে উঁচুতে তোলা হয়েছে। তখন তার স্থিতিস্থ শক্তি (Potential Energy) হবে:
\[
P.E. = mgh
\]
এবং ঐ কাজের মাধ্যমে স্থানান্তরিত শক্তির পরিমাণ হবে ১০০ জুল, যেটি এখন বস্তুর স্থিতিস্থ শক্তি হিসেবে থাকবে।


উপসংহার:
শক্তি এবং কাজ দুটি একে অপরের সাথে সম্পর্কিত, এবং শক্তি স্থানান্তর এবং পরিবর্তন ঘটানোর মাধ্যমে কাজ সম্পন্ন হয়। শক্তির বিভিন্ন রূপ, যেমন কাইনেটিক এবং পটেনশিয়াল শক্তি, বস্তুর গতি ও অবস্থান পরিবর্তন সম্পর্কিত এবং এটি কাজের মাধ্যমে কার্যকরী হয়ে ওঠে।

গতি সম্পর্কিত বিশেষ সমস্যা

গতি সম্পর্কিত বিশেষ সমস্যা (Special Problems in Motion) সাধারণত বিভিন্ন ধরণের গতির বিশ্লেষণ, যেমন সমতল গতি, বৃত্তাকার গতি, বা যে কোনও বাস্তব জীবনের পরিস্থিতি যেখানে গতি ও ত্বরণ সম্পর্কিত প্রশ্ন ওঠে, তা নিয়ে আলোচনা করা হয়। এই ধরনের সমস্যাগুলি সাধারণত গতি সমীকরণ, কাজ ও শক্তি, এবং অন্যান্য মৌলিক পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র ব্যবহার করে সমাধান করা হয়।

এখানে কিছু গতি সম্পর্কিত বিশেষ সমস্যা আলোচনা করা হলো:

১. একটি বস্তুর উল্লম্ব নিক্ষেপ (Vertical Projection)

ধরা যাক, একটি বস্তুকে একটি নির্দিষ্ট গতিতে উল্লম্বভাবে উপরে নিক্ষেপ করা হচ্ছে। এতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান থাকে:

  • প্রাথমিক গতি (Initial velocity): যে গতিতে বস্তুকণা উপরে উঠতে শুরু করে।
  • অবস্থান এবং সময়ের পরিবর্তন: বস্তুকণার উচ্চতা এবং সময়ের সাথে তার গতির পরিবর্তন।

সমস্যা:
ধরা যাক, একটি বস্তুকে ২০ মিটার/সেকেন্ড গতিতে উপরে নিক্ষেপ করা হলো। প্রাথমিক গতি \( u = 20 , m/s \) এবং ত্বরণ \( g = 9.8 , m/s^2 \)। বস্তুকণার সর্বোচ্চ উচ্চতা কত হবে?

সমাধান:
এটি একটি উল্লম্ব নিক্ষেপ সমস্যা যেখানে গতি সমীকরণের দ্বিতীয়টি ব্যবহার করা যেতে পারে:
\[
v^2 = u^2 - 2gh
\]
এখানে:

  • \( v \) হলো সর্বোচ্চ উচ্চতায় গতি, যা হবে ০ (কারণ বস্তুর গতি শূন্য হবে সর্বোচ্চ উচ্চতায়),
  • \( u \) হলো প্রাথমিক গতি,
  • \( g \) হলো মাধ্যাকর্ষণ ত্বরণ,
  • \( h \) হলো সর্বোচ্চ উচ্চতা।

তাহলে:
\[
0 = 20^2 - 2 \times 9.8 \times h
\]
\[
h = \frac{400}{2 \times 9.8} = 20.41 , m
\]
তাহলে, বস্তুকণার সর্বোচ্চ উচ্চতা হবে 20.41 মিটার


২. বৃত্তাকার গতি (Circular Motion)

ধরা যাক, একটি বস্তুকণা বৃত্তাকার পথে চলাচল করছে এবং তার গতি অপরিবর্তিত (স্থিতিস্থ গতি)। বৃত্তের ব্যাসার্ধ \( r = 5 , m \) এবং গতি \( v = 10 , m/s \) হলে, বস্তুকণার কেন্দ্রবাহিত ত্বরণ কী হবে?

সমস্যা:
বৃত্তাকার গতির কেন্দ্রবাহিত ত্বরণ (Centripetal acceleration) বের করতে হলে:
\[
a_c = \frac{v^2}{r}
\]
এখানে:

  • \( v = 10 , m/s \) (গতি),
  • \( r = 5 , m \) (ব্যাসার্ধ)।

তাহলে:
\[
a_c = \frac{(10)^2}{5} = 20 , m/s^2
\]
তাহলে, বস্তুকণার কেন্দ্রবাহিত ত্বরণ হবে **২০ \( m/s^2 \)**।


৩. দ্বিমাত্রিক গতি (Projectile Motion)

ধরা যাক, একটি বস্তুকে একটি কোণ \( \theta = 30^\circ \) এ একটি প্রাথমিক গতি \( u = 20 , m/s \) দিয়ে নিক্ষেপ করা হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, বস্তুকণার সর্বোচ্চ উচ্চতা এবং পৌঁছানোর সময় কত হবে?

সমস্যা:
এটি একটি দ্বিমাত্রিক গতি সমস্যা। এখানে গতি সমীকরণের উপাদান দুটি ভেক্টরে বিভক্ত করা হয়—একটি অনুভূমিক (horizontal) এবং একটি উল্লম্ব (vertical)।

সর্বোচ্চ উচ্চতা (Maximum Height):

উল্লম্ব দিকের জন্য গতি সমীকরণের দ্বিতীয়টি ব্যবহার করা যেতে পারে:
\[
h = \frac{u^2 \sin^2(\theta)}{2g}
\]
এখানে:

  • \( u = 20 , m/s \),
  • \( \theta = 30^\circ \),
  • \( g = 9.8 , m/s^2 \),
  • \( h \) হলো সর্বোচ্চ উচ্চতা।

তাহলে:
\[
h = \frac{(20)^2 \times \sin^2(30^\circ)}{2 \times 9.8} = \frac{400 \times \left( \frac{1}{2} \right)^2}{2 \times 9.8} = \frac{400 \times \frac{1}{4}}{19.6} = \frac{100}{19.6} = 5.10 , m
\]

পৌঁছানোর সময় (Time of Flight):

এটি উল্লম্ব গতির জন্য সমীকরণের প্রথমটি ব্যবহার করে বের করা যেতে পারে:
\[
t = \frac{2u \sin(\theta)}{g}
\]
এখানে:

  • \( u = 20 , m/s \),
  • \( \theta = 30^\circ \),
  • \( g = 9.8 , m/s^2 \),
  • \( t \) হলো পৌঁছানোর সময়।

তাহলে:
\[
t = \frac{2 \times 20 \times \sin(30^\circ)}{9.8} = \frac{2 \times 20 \times \frac{1}{2}}{9.8} = \frac{20}{9.8} = 2.04 , সেকেন্ড
\]


৪. অবসানরত গতির সমস্যা (Stopping Distance)

ধরা যাক, একটি গাড়ি \( v = 30 , m/s \) গতিতে চলছিল এবং এর ত্বরণ \( a = -2 , m/s^2 \) (অথবা, এটি ধীরে ধীরে থেমে যাচ্ছে)। গাড়িটি থামতে কত দূর যাবে?

সমস্যা:
এটি একটি থামানোর সমস্যা যেখানে ত্বরণ নেতিবাচক (negative) হতে হবে। এই সমস্যা সমাধানে আমরা তৃতীয় গতি সমীকরণ ব্যবহার করি:
\[
v^2 = u^2 + 2as
\]
এখানে:

  • \( v = 0 , m/s \) (গাড়িটি থামছে),
  • \( u = 30 , m/s \),
  • \( a = -2 , m/s^2 \),
  • \( s \) হলো থামার জন্য প্রয়োজনীয় স্থান।

তাহলে:
\[
0 = 30^2 + 2 \times (-2) \times s
\]
\[
900 = 4s
\]
\[
s = \frac{900}{4} = 225 , m
\]
তাহলে, গাড়িটি থামতে 225 মিটার যাবে।


উপসংহার:
গতি সম্পর্কিত বিশেষ সমস্যাগুলি বাস্তব জীবনের বিভিন্ন পরিস্থিতি এবং গতি সমীকরণের মাধ্যমে সমাধান করা যায়। এটি সাধারণত বস্তুকণার গতির তীব্রতা, ত্বরণ, অবস্থান, এবং সময়ের মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারণ করে এবং বিভিন্ন পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র ব্যবহারের মাধ্যমে সমস্যাগুলি সহজে সমাধান করা সম্ভব।

Promotion