সময় সম্প্রসারণ

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - পদার্থবিদ্যা - পদার্থবিজ্ঞান – ২য় পত্র | | NCTB BOOK

     কাল বা সময়ের পরিমাপ পর্যবেক্ষক ও যা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে তার আপেক্ষিক গতি দ্বারা প্রভাবিত হয়। গতিশীল ঘড়ি নিশ্চল ঘড়ির চেয়ে ধীরে চলে। অর্থাৎ যে ঘড়ি কোনো পর্যবেক্ষকের সাপেক্ষে গতিশীল সেই ঘড়িটি যদি গতিশীল না হয়ে নিশ্চল থাকত তাহলে যে সময় দিত তার চেয়ে গতিশীল অবস্থায় কম সময় দেবে।

     কোনো পর্যবেক্ষকের সাপেক্ষে গতিশীল অবস্থায় সংঘটিত দুটি ঘটনার মধ্যবর্তী কাল ব্যবধান ঐ পর্যবেক্ষকের সাপেক্ষে নিশ্চল অবস্থায় সংঘটিত ঐ একই ঘটনাদ্বয়ের মধ্যবর্তী কাল ব্যবধানের চেয়ে বেশি হয়, এই প্রভাবকে কাল দীর্ঘায়ন বলে।

     ধরা যাক, মহাশূন্যযানে অবস্থানকারী কোনো ব্যক্তি মহাশূন্যযানে ঘটা দুটি ঘটনার মধ্যবর্তী সময় বা কাল ব্যবধান to নির্ণয় করলেন t । ভূ-পৃষ্ঠ থেকে কোনো ব্যক্তি ঐ সময় ব্যবধান নির্ণয় করলেন। দেখা যাবে যে, সময় ব্যবধান t, সময় ব্যবধান to এর চেয়ে দীর্ঘতর। সময় ব্যবধান to কে (যা পর্যবেক্ষকের প্রসঙ্গ কাঠামোতে একই স্থানে ঘটা দুটি ঘটনার সময় ব্যবধান) ঘটনা দুটি ঘটার মধ্যবর্তী প্রকৃতকাল বা প্রকৃত সময় (Proper time) বলা হয়। যে ব্যক্তি ভূ-পৃষ্ঠ থেকে সময় পরিমাপ করছেন তার কাছে সময় ব্যবধানের শুরু ও শেষ দুটি পৃথক স্থানে ঘটছে ফলে সময় ব্যবধান প্রকৃত সময়ের চেয়ে দীর্ঘায়িত বলে দেখা দিচ্ছে। এই প্রভাবকে বলা হয় কাল দীর্ঘায়ন (time dilation ) ।

  সময় to ও t এর মধ্যে সম্পর্ক হলো

t =to1- v2/c2

   কোনো গতিশীল বস্তুর জন্য 1-v2/c2 রাশিটি সব সময় 1 এর চেয়ে ছোট, তাই t সবসময়ই to এর চেয়ে বড়। সমীকরণ (8.22) কালদীর্ঘায়ন প্রকাশকারী সমীকরণ। 

    সুতরাং ভূ-পৃষ্ঠে অবস্থানকারী কোনো পর্যবেক্ষক এটা দেখতে পাবেন যে চলন্ত মহাশূন্যযানে অবস্থিত কোনো ঘড়ি ভূ-পৃষ্ঠে অবস্থিত নিশ্চল ঘড়ির চেয়ে ধীর গতিতে চলবে। আপেক্ষিক গতি v এর মান যত বেশি হবে গতিশীল ঘড়ি তত ধীরে চলবে এবং কাল দীর্ঘায়ন তত বেশি হবে। to কে বলা হয় যথোপযুক্ত বা প্রকৃত সময় (proper time)।

   নিশ্চল কাঠামোতে অবস্থিত একটি ঘড়ি গতিশীল কাঠামোতে সংঘটিত ঘটনাগুলোর মধ্যবর্তী কাল ব্যবধান গতিশীল কাঠামোতে অবস্থিত ঘড়ির চেয়ে অধিক নির্ণয় করবে। অর্থাৎ গতিশীল কাঠামোতে সংঘটিত ঘটনাগুলোর বেলায় একটি নিশ্চল কাঠামোতে অবস্থিত ঘড়ি গতিশীল কাঠামোতে অবস্থিত ঘড়ির চেয়ে অধিক কাল ব্যবধান নির্ণয় করবে। একটি উদাহরণ বিবেচনা করা যাক। মনে করা যাক, গতিশীল কাঠামোতে একটি ঘটনা সংঘটিত হলো। গতিশীল কাঠামোর একজন পর্যবেক্ষক এর কাল ব্যবধান তথা ঘটনা সংঘটনের সময় হিসেব করলেন। স্থির কাঠামোতে অবস্থিত একজন পর্যবেক্ষক এই কাল ব্যবধান হিসেব করলেন to। ধরা যাক, কাঠামো দুটির আপেক্ষিক বেগ v = 0.98 c, যেখানে c আলোর বেগ ।

সুতরাং

t=to1-(0.98c)2c2=to1-0.9604

=to0.04=to0.2=to1/5=5to

     সুতরাং গতিশীল কাঠামোর ঘড়ি যে কাল ব্যবধান to পরিমাপ করে, নিশ্চল কাঠামোতে অবস্থিত ঘড়ি উক্ত কাল ব্যবধান পরিমাপ করে Sto, অর্থাৎ গতিশীল কাঠামোর একজন পর্যবেক্ষক ঐ কাঠামোতে কোনো কাজের জন্য যে সময় ব্যয় করেন, স্থির কাঠামোর কোনো পর্যবেক্ষকের কাছে মনে হবে ঐ পর্যবেক্ষক ঐ কাজের জন্য পাঁচগুণ বেশি সময় ব্যয় করেছেন। এটিই কাল দীর্ঘায়ন। সুতরাং গতিশীল কাঠামোর ঘড়ি যখন একটি 'টিক' দেয় নিশ্চল কাঠামোর ঘড়ি তখন পাঁচটি 'টিক' দেয়। এর অর্থ গতিশীল কাঠামোর ঘড়িতে এক সেকেন্ড অতিবাহিত হলে নিশ্চল কাঠামোর ঘড়িতে পাঁচ সেকেন্ড অতিবাহিত হবে। অর্থাৎ নিশ্চল কাঠামোর ঘড়িটি গতিশীল কাঠামোর ঘড়ি অপেক্ষা পাঁচগুণ দ্রুত চলে।

Content added || updated By
Promotion