On This Page

সাওম

পঞ্চম শ্রেণি (প্রাথমিক) - ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা - ইবাদত | NCTB BOOK

সাওম আরবি শব্দ। এর অর্থ বিরত থাকা, আত্মসংযম। একে বহুবচনে সিয়াম বলে। সাওমকে ফারসি ভাষায় রোযা বলা হয় ৷

আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সুবহে সাদিক থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ইত্যাদি থেকে বিরত থাকাকে সাওম বলে।

গুরুত্ব ও তাৎপর্য

ইসলামের প্রধান পাঁচটি রুকনের মধ্যে সাওম একটি। মৌলিক ইবাদতগুলোর মধ্যে ইমান ও সালাতের পরেই সাওমের স্থান। সাওম ধনী-দরিদ্র সকল মুসলমানের ওপর ফরজ ইবাদত। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- 'হে ইমানদারগণ! তোমাদের ওপর সিয়াম ফরজ করা হলো।' (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৩)। 

যেহেতু সাধ্যকে ফরজ করা হয়েছে, সুতরাং যে তা অস্বীকার করবে, সে কাফির হয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি বিনা ওজরে পালন করবে না সে গুনাহগার হবে ।

সাওম শুধু আমাদের জন্যই ফরজ নয়, আমাদের পূর্ববর্তী উম্মতদের ওপরও ফরজ ছিল। সাওম পালনের মূল উদ্দেশ্য হলো তাকওয়া অর্জন করা। তাকওয়া মানে আল্লাহকে ভয় করা, সব রকম পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা, সংযম অবলম্বন করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।' (সূরা বাকারা, আয়াত : ১৮৩) 

সাওমের মাধ্যমে তাকওয়া শুধু অর্জনই হয় না, এতে তাকওয়ার অনুশীলন ও প্রশিক্ষণ হয়ে থাকে। পাপাচার ও লোভ-লালসা থেকে বিরত থাকা সহজ কাজ নয়। এ জন্য দীর্ঘমেয়াদি বাস্তব প্রশিক্ষণ ও অনুশীলন প্রয়োজন। আর এই বাস্তব প্রশিক্ষণ ও অনুশীলন হয় দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার মাধ্যমে ।

এটি আত্মসংযম ও আত্মশুদ্ধির উৎকৃষ্ট উপায়। সাওম পালনকালে মুমিন ব্যক্তি কু-প্রবৃত্তি, কামনা-বাসনা ও লোভ-লালসা থেকে নিজেকে বিরত রাখে। সিয়াম পালনকারীর সামনে যত লোভনীয় খাবার আসুক, যতই ক্ষুধা-তৃষ্ণা লাগুক সূর্যাস্ত না হওয়া পর্যন্ত সে কিছুই খায় না। যেখানে দেখার মতো কেউ নেই সেখানেও এক বিন্দু পানি পান করে না ।

 

সাওম হলো আত্মরক্ষা ও আত্মশুদ্ধির ঢাল

সাওম পালনের সময় মিথ্যা, প্রতারণা, হিংসা-বিদ্বেষ, পরনিন্দা, পরচর্চা, ধূমপান ইত্যাদি ত্যাগ করতে হয়। সুতরাং এসব পাপকর্ম ও বদভ্যাস ত্যাগ করা সহজ হয়। এ জন্য সাওমকে আত্মরক্ষার ঢাল বলা হয়েছে। রাসুল (স) বলেছেন,

সাওম পালন উন্নত চরিত্র ও আদর্শ সমাজ গঠনে সহায়ক এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাওম পালনের সময় লোভ-লালসা, পাপাচার, মিথ্যাচার, ঝগড়া-বিবাদ, ত্যাগ করতে হয়। অশ্লীল কথা ও খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে হয়। এতে ব্যক্তি চরিত্র যেমন উন্নত হয়, তেমনি সুন্দর সমাজ গঠনেও সহায়ক হয় ।

সাওম পালনের মাধ্যমে মানুষ পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে ওঠে। পানাহার ত্যাগের মাধ্যমে ধনীরা দরিদ্রের অনাহারে-অর্ধাহারে জীবনযাপনের কষ্ট প্রত্যক্ষভাবে এবং বাস্তবে বুঝতে পারে। ক্ষুধার কী জ্বালা, তা তারা অনুভব করতে পারে। তাই তারা দরিদ্রের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে ওঠে। তাদের সাহায্য-সহযোগিতা ও দান-খয়রাত করে। রাসুল (স) রমযানকে ‘সহানুভূতির মাস' বলে আখ্যায়িত করেছেন।

সাওম পালনে অনেক ধৈর্যের প্রয়োজন হয়। তাই এ মাসকে ধৈর্যের মাস বলা হয়েছে। আর এই ধৈর্যের পুরস্কার হিসেবে হাদিস শরিফে জান্নাত দানের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

সাওমের মাসকে ফজিলতের দিক দিয়ে তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রথম অংশ রহমতের, দ্বিতীয় অংশ মাগফিরাতের এবং তৃতীয় অংশ নাজাতের। নাজাত মানে জাহান্নামের শাস্তি থেকে মুক্তি।

সাওম একমাত্র আল্লাহরই জন্য নিবেদিত। তাই এর পুরস্কার স্বয়ং আল্লাহ দেবেন। আল্লাহ্ বলেন, 'সাওম কেবল আমারই জন্য, আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব।' (বুখারি ও মুসলিম)

শুধু সাওম পালনেই ফজিলত নয়; সাওমের সম্মান করলে, সাওম পালনকারীর সম্মান ও সেবা করলেও অনেক সওয়াব পাওয়া যায়। কোনো সাওম পালনকারীকে ইফতার করালে তার সাওমের সমান সওয়াব পাওয়া যাবে। এতে সাওম পালনকারীর সওয়াবে কোনো ঘাটতি হবে না।

সাপ্তম পালনকারীর জন্য দুইটি খুশির ক্ষণ, একটি তার ইফতারের সময় এবং আর একটি আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের সময়। সাওম পালনকারী আল্লাহ তায়ালার কাছে উচ্চতর ব্যক্তিত্বের মর্যাদা লাভ করবে। সুতরাং সাওমের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফজিলত অপরিসীম।

সাওমের নিয়ত

রমযানের শেষ রাতে সেহরি খাওয়ার পর এই বলে সাওমের নিয়ত করতে হয়- 'হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল রমযান মাসের ফরজ সাওম রাখার নিয়ত করলাম। তুমি দয়া করে আমার সাওম কবুল করো।'

ইফতারের সময় বলতে হয় : 

বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা লাকা সমূহ ওয়া আলা রিজকিকা আফতারতু।

অর্থ : 'হে আল্লাহ! তোমারই জন্য সাওম রেখেছি এবং তোমার দেওয়া রিজিক দ্বারা ইফতার করছি।”

 

তারাবির সালাত

রমযানে এশার সালাত আদারের পর তারাবির সালাত আদায় করতে হয়। তারাবির সালাত বিশ রাকআত। এ সালাত আদায় করা সুন্নত। রাসূল (স) বলেছেন, 'যে ব্যক্তি রমযান মাসে তারাবির সালাত আদায় করে, তার অতীতের গুনাহ মাফ হয়ে যায়।'

আমরা যথাযথভাবে রমযানের সাওম পালন করব। নিয়মিত তারাবি আদায় করব।

সাওম ভঙ্গ হয়, নষ্ট হয় এমন কোনো কাজ করব না। মিথ্যা কথা বলব না। পরনিন্দা ও পাপাচারে লিপ্ত হব না ।

Content added By

আরও দেখুন...

Promotion

Promotion