সিস্টেম ইউনিটের অভ্যন্তরীণ হার্ডওয়্যারের মৌলিক কার্যাবলি

এইচএসসি (বিএমটি) ভোকেশনাল - কম্পিউটার অফিস অ্যাপ্লিকেশন-১ - | NCTB BOOK

একটি কম্পিউটার সিস্টেম ইউনিটের অভ্যন্তরীণ হার্ডওয়্যারগুলোর মৌলিক কার্যাবলি নিম্নে আলোচনা করা হলো-

সিস্টেম ইউনিট তৈরির জন্য যে অংশগুলো বিশেষ প্রয়োজন সেগুলো হচ্ছে Mother Board, Processor, RAM, Hard Disk, Floppy Disk Drive, Graphics Card ও Casing । এছাড়া এক্সটারনাল কিছু ডিভাইস ব্যবহার করা হয়, যেমন Multimedia এর জন্য Sound Card, CD / DVD ROM, অন্য ড্রাইভের মধ্যে CD Writer, DVD Writer, Combo Drive, USB Flash Drive, Memory Card ইত্যাদি। অন্য কার্ডের মধ্যে LAN Card, TV Card, Capture Card, Jack Card, USB Card ও Modem । নিচে এদের বর্ণনা দেওয়া হলো-

মাদারবোর্ড (Motherboard)

মাদারবোর্ড হচ্ছে একটি কম্পিউটারের মূল অংশ, যা সিস্টেম ইউনিটের অভ্যন্তরে সংযুক্ত থাকে। সাধারণত কম্পিউটারের সমস্ত যন্ত্রাংশের সংযোগ বোর্ডকে বলা হয় মাদারবোর্ড। এটি সিস্টেমবোর্ড বা মেইনবোর্ড হিসেবেও পরিচিত। কম্পিউটারের ব্রেইন হিসেবে পরিচিত প্রসেসর মাদারবোর্ডের মধ্যেই থাকে। মাদারবোর্ডের মধ্যে কম্পিউটারের বিভিন্ন ডিভাইস যেমন— কী- বোর্ড, মাউস, মনিটর, প্রিন্টার, হার্ডডিস্ক ড্রাইভ, ফ্লপি ডিস্ক ড্রাইভ, পেনড্রাইভ ইত্যাদি পোর্টের মাধ্যমে লাগানোর ব্যবস্থা থাকে। কম্পিউটারে যেকোনো যন্ত্রাংশ স্থাপন করা হোক না কেন প্রতিটি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মাদারবোর্ডের সাথে সংযোজিত অবস্থায় থাকে। তাই মাদারবোর্ডকে বলা হয় কম্পিউটারের কেন্দ্রীয় সার্কিট বোর্ড।

চিত্র: মাদারবোর্ড

সিপিইউ বা মাইক্রোপ্রসেসর বা প্রসেসর (CPU or Microprocessor or Processor)

কম্পিউটারের কার্যক্রমকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করার জন্য যে ডিভাইসটি সর্বাধিক ভূমিকা পালন করে, তাকে মাইক্রোপ্রসেসর বা প্রসেসর হিসেবে অভিহিত করা হয়। মাইক্রোপ্রসেসর বা প্রসেসরকে কম্পিউটারের মস্তিষ্ক বলে। কেননা, এটির মাধ্যমে কম্পিউটার সমস্ত তথ্য প্রক্রিয়াকরণ করে থাকে। মাইক্রোপ্রসেসর হলো সিলিকনের তৈরি এক ধরনের VLSI (Very Large Scale Integration) চিপ। একটি একক VLSI সিলিকন চিপের মধ্যে এক মিলিয়নেরও অধিক ডায়োড, ট্রানজিস্টর, রেজিস্টার, ক্যাপাসিটর একীভূত থাকে। মাইক্রোপ্রসেসর মাইক্রোকম্পিউটারের কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ অংশ হিসেবে কাজ করে।

চিত্র প্রসেসর

র‍্যাম (RAM)

RAM এর পূর্ণরূপ হলো— Random Access Memory। কম্পিউটারে তথ্য প্রক্রিয়াকরণের সময় অস্থায়ীভাবে তথ্য সংরক্ষণের জন্য র‍্যাম ব্যবহৃত হয়। এটি উদ্বায়ী অর্থাৎ বিদ্যুৎ প্রবাহ চলে গেলে র‍্যামে সংরক্ষিত তথ্য সম্পূর্ণভাবে মুছে যায়।

হার্ডডিস্ক (Hard Disk )

এটি একটি স্থায়ী স্টোরেজ ডিভাইস। এই ডিভাইসে সকল ধরনের ইনফরমেশন বা তথ্য সংক্ষরণ করে রাখা হয়। এর মূল উপাদান হচ্ছে উভয় পাশে চৌম্বক পদার্থের পাতলা আবরণসহ অ্যালুমিনিয়ামের পাত থাকে। স্থায়ী তথ্য বা ফাইল সংরক্ষণের জন্য হার্ডডিস্ক ব্যবহৃত হয়। সাধারণত কম্পিউটারের সকল তথ্য হার্ডডিস্কে সংরক্ষিত থাকে।

চিত্র: হার্ডডিস্ক

সিডি রম (CD ROM): 

CD ROM এর পূর্ণরূপ হচ্ছে Compact Disk Read Only Memory। সিডি রম একটি অপটিক্যাল মাধ্যম। সিডিরমে ডেটা সংরক্ষণের জন্য লেজার রশ্মি নিক্ষেপণের মাধ্যমে অতি ক্ষুদ্র গর্ত সৃষ্টি করা হয় যা পিটস ( Pits) নামে পরিচিত। একটি সিডি রমের ৭০০ মেগাবাইট পর্যন্ত ডেটা ধারণ ক্ষমতা আছে। অডিও/ভিডিও চালানোর জন্য CD ROM ব্যবহৃত হয়।

সিডি রাইটার (CD Writer) : 

CD ROM দিয়ে সিডি (CD) চালানো যাবে কিন্তু সিডি (CD) তে কিছু কপি করা যাবে না এজন্য CD Writer ব্যবহার করা হয়।

ডিভিডি রম (DVD ROM): 

ডিভিডি চালানোর জন্য DVD ROM ড্রাইভ ব্যবহৃত হয়। এটি দিয়ে CD ও চালানো যায়।

ডিভিডি রাইটার (DVD Writer): 

এটি CD রাইটারের মতো তবে এটি দিয়ে CD ও DVD দুইটিই Write করা যায়। এটি (অভ্যন্তরীণ) Internal ও (বহিঃস্থ) External হতে পারে ।

কম্পো ড্রাইভ (Combo Drive ) : 

Combo Drive এটি দিয়ে CD S DVD দুইটিই চালানো যায় তবে শুধুমাত্র CD রাইট (Write) করা যায়।

ক্যাসিং (Casing) : 

এটি একটি বড় বাক্স। যার ভিতরে সমস্ত ডিভাইস গুলি থাকে। এটিকে কখনও কখনও ভুলবশত সিপিইউও বলা হয়।

চিত্র: ক্যাসিং

পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট (Power Supply Unit)

সাধারণত কেসিংয়ের সাথে পাওয়ার সাপ্লাই ইনস্টল করা থাকে। যদি ইনস্টল করা না থাকে তাহলে পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিটকে কেসিংয়ের যথাস্থানে স্থাপন করে স্ক্রু-গুলি সংযুক্ত করতে হবে।

চিত্র: পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট

পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট এমন একটি ডিভাইস যা কম্পিউটারের বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সহায়তা করে। কম্পিউটারের সাথে সংশ্লিষ্ট কম্পোনেটগুলো যথাযথভাবে কাজ করছে কি না তা নিশ্চিত করার জন্য সরবরাহ করা ভোল্টেজকে নিয়ন্ত্রণ করে। এটি কম্পিউটারের জন্য প্রয়োজনীয় ২৩০ ভোল্ট বিদ্যুৎ সাপ্লাইকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ডিসি (DC) ভোল্টেজে রূপান্তরিত করে।

সাউন্ডকার্ড (Sound Card): 

কম্পিউটারে অডিও মিউজিক শোনার জন্য সাউন্ড কার্ড ব্যবহার করা হয়। এটি মাদারবোর্ডে বিল্ট-ইন কার্ড থাকতে পারে। এছাড়া স্লটে আলাদাভাবে সাউন্ড কার্ড বসানো যায়। সাউন্ড কার্ডের সাথে আলাদা জয়স্টিক (Joystick) বা Game Port থাকতে পারে।

চিত্র: সাউন্ডকার্ড

সাউন্ড কার্ড একটি আউটপুট ডিভাইস। কেননা, একটি সাউন্ড কার্ড কম্পিউটার প্রসেসর থেকে বাইনারি ডেটা ইনপুট নেয় এবং শব্দ উৎপন্ন করে।

গ্রাফিক্স কার্ড (Graphics Card)

গ্রাফিক্স কার্ড সাধারণত গ্রাফিক্স অ্যাডাপ্টর, গ্রাফিক্স কন্ট্রোলার, গ্রাফিক্স এক্সেলেটর (Graphics Accelerator) বা গ্রাফিক্স কার্ড নামেও পরিচিত। গ্রাফিক্স কার্ড হলো কম্পিউটিং ডিভাইসের মধ্যে থাকা এমন একটি ডিসপ্লে অ্যাডাপ্টর যা ছবির মধ্যে স্বচ্ছতা, সঠিক রঙ ও সামগ্রিক গ্রাফিক্যাল তথ্য প্রদর্শন করতে সক্ষম। গ্রাফিক্স কার্ড ছাড়া কম্পিউটারের মনিটরে কোনো কিছু প্রদর্শন করবে না। এটি এমন একটি ডিভাইস, যা কম্পিউটার ও মনিটরের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে। VGA, DVI বা HDMI পোর্ট থেকে ক্যাবলের মাধ্যমে মনিটরে সংযোগ দেয়া যায়। গ্রাফিক্স কার্ড কম্পিউটারের ডেটাকে গ্রাফিক ডেটায় রূপান্তর করে। তারপর, মনিটরকে নির্দেশ করে কি ধরনের ছবি বা ভিডিও দেখাবে। গ্রাফিক্স কার্ড ইমেজ প্রসেসিং, থ্রিডি ইমেজ রেন্ডারিং এবং ভিডিও গেমের মতো কাজে স্বচ্ছ বা ঝকঝকে ছবি প্রদান করতে সক্ষম।

মডেম : ইন্টারনেট সংযোগের জন্য মডেম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ডিভাইস। এটিও অভ্যন্তরীণ (Internal) ও বহিঃস্ত (External) উভয়ই হতে পারে।

ল্যান কার্ড (LAN Card) : 

স্কুল, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় অল্প পরিসরের অফিস-আদালতে একাধিক কম্পিউটারের মধ্যে আন্তঃযোগস্থাপন করে যে নেটওয়ার্ক তৈরি হয় সেটিই LAN (Local Area Network)। LAN কানেকশনের জন্য যে ডিভাইস ব্যবহৃত হয় সেটিকেই বলে ল্যান কার্ড (LAN Card)। নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে অবশ্যই LAN কার্ডের প্রয়োজন হবে। বর্তমানে প্রায় সব কম্পিউটার বা ল্যাপটপের মাদারবোর্ডের সঙ্গে ল্যান কার্ড সংযুক্ত অবস্থায় থাকে।

টিভি কার্ড (TV Card):

 কম্পিউটারের মনিটরের মাধ্যমে টেলিভিশন দেখা যায়। এর জন্য যে ডিভাইসটি ব্যবহৃত হয় তাকে টিভি কার্ড বলে। এটিও অভ্যন্তরীণ ও বহিঃস্ত উভয়ই ধরনের হতে পারে।

চিত্র : টিভি কার্ড

ক্যাপচার কার্ড (Capture Card): 

সাধারণত VHS (Video Home System), S-VHS (Super Video Home System) TV (Television) ও ভিডিও ক্যাসেট থেকে কম্পিউটারে ভিডিও কে ডিজিটাইজ করে নেওয়ার জন্য একটি কার্ড ব্যবহৃত হয়। এটিকে বলে ক্যাপচার কার্ড। এতে IEEE নামে একটি আলাদা পোর্ট (Port) থাকে।

জ্যাক কার্ড (Jack Card): 

ইন্টারনেটের মাধ্যমে সারা বিশ্বে ফোন করার জন্য Net 2 Phone টাইপের অনেক সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়। আর এর জন্য একটি ডিভাইস ব্যবহৃত হয় যার নাম জ্যাক কার্ড।

ইউএসবি কার্ড (USB Card): 

বর্তমানে USB (Universal serial bus) পোর্টেই বেশি ব্যবহৃত হয়। মাদারবোর্ডের সাথে সাধারণত ২টি বা ৪টি USB পোর্ট থাকে। এই পোর্ট বাড়ানোর দরকার হতে পারে এজন্য এক ধরনের কার্ড ব্যবহৃত হয়। এটিকে ইউএসবি কার্ড বলে। ইউএসবি পোর্টের মাধ্যমে পেনড্রাইভ, মাউস, কীবোর্ড, প্রিন্টার, স্ক্যানার অপটিক্যাল ড্রাইভ সংযোগ দেওয়ার জন্য ইউএসবি কার্ড ব্যবহৃত হয়।

চিত্র : ইউএসবি কার্ড
Content added || updated By
Promotion