সুষম ও যৌগিক ঘনবস্তু পরিমাপ

নবম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - গণিত - Mathematics - | NCTB BOOK
1

এই অভিজ্ঞতায় শিখতে পারবে-

  • বৃত্তচাপ ও বৃত্তকলা পরিমাপ
  • কোণকের ধারণা
  • কোণকের ভূমি, বক্রতলের ক্ষেত্রফল, আয়তন পরিমাপ
  • গোলকের ক্ষেত্রফল ও আয়তন পরিমাপ
  • প্রিজমের ধারণা, ক্ষেত্রফল ও আয়তন নির্ণয়
  • পিরামিডের ক্ষেত্রফল ও আয়তন পরিমাপ
  • সুষম ও যৌগিক ঘনবস্তু পরিমাপের সূত্রের ধারণা এবং সূত্র প্রতিপাদন

 

সুষম ও যৌগিক ঘনবস্তু পরিমাপ

পূর্বের শ্রেণিতে তোমরা দ্বিমাত্রিক ও ত্রিমাত্রিক বস্তুর ধারণা পেয়েছ। দ্বিমাত্রিক বস্তু দুইটি মাত্রায় অবস্থান করে, মাত্রা দুটি হলো দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ। একটি সমতলে ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, পঞ্চভুজ বা যে কোনো বহুভুজ আঁকলে তারা দ্বিমাত্রিক তলে অবস্থান করে। আমরা শুধু তাদের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ পরিমাপ করতে পারি। কিন্তু এই আকৃতিগুলোর সাথে আরেকটি মাত্রা 'উচ্চতা' যুক্ত হলে ত্রিমাত্রিক বস্তু গঠিত হয়। যেমন-

 

বৃত্তচাপ ও বৃত্তকলার পরিমাপ (Measurement of Arc and Sector)

তোমরা পূর্বের শ্রেণিগুলোতে বৃত্ত সংক্রান্ত বিস্তারিত জেনেছ। আবার, কাগজ কেটে বৃত্ত তৈরি করাও শিখেছ। বৃত্তের পরিধি ও বৃত্তের ক্ষেত্রফল পরিমাপের পদ্ধতি শিখেছ। চলো বৃত্ত সম্পর্কে আরেকটু জেনে নিই।

বৃত্তচাপের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করলে কেন্দ্রে উৎপন্ন কোণের পরিমাপ বৃদ্ধি পায়, আর দৈর্ঘ্য কমালে কোণের পরিমাপও কমে যায়। এই হ্রাস-বৃদ্ধির অনুপাত সমান। সুতরাং, বৃত্তচাপ ও কেন্দ্রে উৎপন্ন কোণ পরস্পর সমানুপাতী। অর্থাৎ,

বৃত্তকলা (Sector): বৃত্তের দুইটি ব্যাসার্ধ ও একটি চাপ দ্বারা গঠিত অঞ্চলকে বৃত্তকলা বলে। মনে করি, বৃত্তটির ব্যাসার্ধ একক এবং AOB বৃত্তকলাটি কেন্দ্রে θ° কোণ উৎপন্ন করেছে।

আবার, বৃত্তের কেন্দ্রে উৎপন্ন কোণের পরিমাপ 360°.

কোণক (Cone)

চল আজ আমরা বৃত্ত নিয়ে আরেকটি মজার কাজ করি।

একক কাজ

এবার বৃত্তকলার কেন্দ্রকে ঠিক রেখে নিচের চিত্রের ন্যায় গোলাকার করে মুড়িয়ে একটি ঝালমুড়ি খাওয়ার ঠোঙা বা চোঙাকৃতি বস্তু বানিয়ে ফেলো। বাহ! কি চমৎকার কৌশল অবলম্বন করে তুমি নিত্য ব্যবহার্য একটি জিনিস তৈরি করে ফেললে। এটি কোন ধরনের বস্তু তুমি কি বলতে পার? এটি একটি ত্রিমাত্রিক বস্তু। তার মানে একটি দ্বিমাত্রিক বৃত্তের কাগজ কেটে তুমি ত্রিমাত্রিক একটি বস্তু বানিয়ে ফেললে।

তুমি কি এই ত্রিমাত্রিক বস্তুটির নাম বলতে পার? দেখো তো এ ধরনের বস্তুর মতো আইসক্রিমের কথা তোমার মনে পড়ে কিনা। তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো এই আইসক্রিম খেয়ে থাকবে। তুমি কি বলতে পার ওই আইসক্রিমের নাম কি? তোমরা ওই আইসক্রিমকে কোণ আইসক্রিম বলে থাকো।

তুমি কাগজ কেটে যে ত্রিমাত্রিক বস্তুটি বানিয়েছো তার নাম কোণক।

কোণক (Cone): কোণক হলো একটি শীর্ষ থেকে বক্রাকার তল নিয়ে বৃত্তাকার ভূমির উপর গঠিত একটি ঘনবস্তু।

 

গাণিতিক সূত্র প্রতিপাদন

এতক্ষণ, সুতা বা স্কেল ব্যবহার করে পরিমাপগুলো হিসাব করলাম। কিন্তু সবসময় এত বেশি সময় নিয়ে এসব পরিমাপ করা যায় না। আবার, এভাবে পরিমাপ করলে হিসাব নিখুঁতও হয় না। নিখুঁতভাবে পরিমাপের জন্য গাণিতিক সূত্র প্রয়োজন। চলো আমরা এসব হিসাবের জন্য গাণিতিক সূত্র তৈরি করার চেষ্টা করি।

একক কাজ

প্রত্যেকেই কাগজ কেটে আবার একটি করে বৃত্ত তৈরি করো। মনেকরো, তোমার বৃত্তের ব্যাসার্ধ / একক। তাহলে, এই বৃত্তের পরিধি 2π/ একক এবং ক্ষেত্রফল π/2 বর্গ একক। এখন, এই বৃত্তক্ষেত্রকে সমান চারভাগে ভাগ করো। অতঃপর একটি অংশকে কেটে নিচে রাখো।

কোণকের ভূমির ক্ষেত্রফল

 

কোণকের বক্রতলের ক্ষেত্রফল (Curved surface area of cone)

এখন চলো আমরা কোণকের বক্রতলের ক্ষেত্রফল বের করি। তোমার অঙ্কিত বৃত্তের ব্যাসার্ধ একক। তাহলে, এই বৃত্তের পরিধি 2π2 একক।

আবার বড়ো বৃত্তের ব্যাসার্ধ /= কোণকের হেলানো উচ্চতা /.

 

কোণকের উচ্চতা

একক কাজ

পাশের ত্রিভুজটি বিশ্লেষণ করে নিচের ছকটির ২নং সারি পূরণ করো।

 

কোণকের সমগ্রতলের ক্ষেত্রফল (Surface area of cone)

কোণকের সমগ্রতলের ক্ষেত্রফল বলতে কোণকের ভূমির ক্ষেত্রফল ও কোণকের বক্রতলের ক্ষেত্রফলের সমষ্টিকে বোঝায়। সুতরাং,

কোণকের সমগ্রতলের ক্ষেত্রফল = কোণকের ভূমির ক্ষেত্রফল + কোণকের বক্রতলের ক্ষেত্রফল

সমস্যা ১: তোমাদের একজন বন্ধুর জন্মদিনে তুমি কাগজ দিয়ে তৈরি কোণকাকৃতির একটি টুপি উপহার দিতে চাও যার উচ্চতা 35 সেমি। তোমার বন্ধুর মাথার পরিধি সুতা দিয়ে পরিমাপ করে তুমি 48 সেমি পেলে। টুপিটি তৈরি করতে তোমার কতটুকু কাগজ লাগবে?

সমস্যা ২: তোমার স্কুলের কয়েকজন বন্ধু একত্রে একটি বিজ্ঞানমেলায় অংশগ্রহণ করেছ। তোমাদের সমস্ত জিনিসপত্র রাখার জন্য তোমরা সেখানে মাঝখানে খুঁটি দিয়ে কোণক আকৃতির একটি তাবু বানাতে চাও যার উচ্চতা 5 মিটার। এই তাবু দ্বারা 150 বর্গমিটার ভূমি ঘিরতে চাইলে তাবুর জন্য কী পরিমাণ কাপড় লাগবে? প্রতি বর্গমিটার কাপড়ের দাম 160 টাকা হলে মোট কত খরচ হবে?

 

কোণকের আয়তন (Volume of cone)

তোমরা ইতোমধ্যে কাগজ কেটে কোণক তৈরি করা শিখেছ এবং পূর্বের শ্রেণিগুলোতে সিলিন্ডার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছ। চলো হাতে-কলমে আরও কিছু কাজ করি।

দলগত কাজ

শক্ত কাগজ বা কার্ডবোর্ড ব্যবহার করে অথবা খুব সহজে বাঁকানো যায় এমন প্লাস্টিক বোর্ড দ্বারা একটি সিলিন্ডার ও একটি কোণক এমনভাবে তৈরি করো যাতে উভয়ের ভূমি ও উভয়ের উচ্চতা সমান বা একই হয়।

সিলিন্ডারের নিচের ভূমি বা তলা কার্ডবোর্ড দ্বারা বন্ধ করে দাও এবং উপরের ভূমি-তল বা ঢাকনা খালি রাখো যাতে সিলিন্ডারের মাঝে কোনো কিছু রাখা যায়।

আবার, কোণকের ভূমিও খালি রাখো যাতে কোণকের মধ্যে কোনো কিছু রাখা যায়।

তোমার নির্মিত কোণক ও সিলিন্ডার সঠিকভাবে নির্মিত হয়েছে কিনা তা বোঝার জন্য শেষের চিত্রের মতো কোণকটিকে সিলিন্ডারের মধ্যে বসাও। কোণক ও সিলিন্ডার উভয়ের ভূমির ব্যাসার্ধ ও উচ্চতা সমান বা একই হয়েছে কিনা তা যাচাই করো। নির্মাণে ত্রুটি থাকলে সংশোধন করো। তাহলে তোমাদের কোণক ও সিলিন্ডার তৈরি হয়ে গেল।

আমাদের অপেক্ষার পালা শেষ। এখন চলো আমরা মজার মূল পর্বে যাই।

প্রথমে কোণকটি ঝালমুড়ি খাওয়া বা আইসক্রিম খাওয়ার মতো করে ধরো। তারপর কোণকটি কিছু চাউল বা ময়দা অথবা এমন অন্য কোনো উপাদান দ্বারা এমনভাবে পরিপূর্ণ করো যাতে কোণকের ভূমিতল উপাদান দ্বারা একটি সমতল হয়। তারপর ওই কোণকের উপাদানগুলো খালি সিলিন্ডারের মধ্যে ঢেলে দাও। দেখবে তাতে সিলিন্ডারের কিছু অংশ পূর্ণ হয়ে গেছে।

একইভাবে দ্বিতীয়বার খালি কোণকটি একই উপাদান দ্বারা পরিপূর্ণ করে ওই সিলিন্ডারের মধ্যে ঢেলে দাও। দেখবে সিলিন্ডারের বেশিরভাগ পূর্ণ হয়ে গেছে।

আগেরমত তৃতীয়বার খালি কোণকটি একই উপাদান দ্বারা পরিপূর্ণ করে ওই সিলিন্ডারের মধ্যে ঢেলে দাও। কী দেখতে পাচ্ছ? সিলিন্ডারটি কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে।

কী মজা, তাই না? তিন কোণক উপাদান দ্বারা একটি সিলিন্ডার পূর্ণ হয়ে গেল।

উপরের পরীক্ষাটি তোমরা পানি বা অন্য কোনো তরল পদার্থ দ্বারাও করে দেখতে পার।

যেমন, সহজলভ্য পানি নিরোধক পলিথিন ব্যাগ কোণক এবং সিলিন্ডারের মধ্যে এমনভাবে প্রবেশ করাও যাতে কোণক বা সিলিন্ডারের মধ্যে পানি বা তরল পদার্থ ঢাললে বের হতে না পারে। তারপর পূর্বের ন্যায় পরপর তিন কোণক পানি বা যে কোনো তরল পদার্থ সিলিন্ডারের মধ্যে ঢালো দেখবে সিলিন্ডারটি ঠিক কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যাবে।

আবার তুমি উল্টাভাবেও যাচাই করে দেখতে পার, ওই একই উপাদানে পরিপূর্ণ একটি সিলিন্ডার দ্বারা এমন তিনটি কোণক পরিপূর্ণ করা যায়।

তাহলে, আমরা হাতে-কলমে পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণ করতে পারলাম যে, একই ভূমি ও উচ্চতাবিশিষ্ট একটি সিলিন্ডারের ধারণ ক্ষমতা তিনটি কোণকের ধারণ ক্ষমতার সমান।

সুতরাং, 3টি কোণকের আয়তন = 1টি সিলিন্ডারের আয়তন

আমরা পূর্বের শ্রেণিতে জেনেছি, সিলিন্ডারের ভূমির ব্যাসার্ধ। একক এবং উচ্চতা h একক হলে আয়তন = πr2h ঘন একক।

অতএব, 3টি কোণকের আয়তন = πr2h  ঘন একক

সমস্যা ৩: তোমার জন্মদিনে তোমার ছয়জন বন্ধুকে তুমি নিমন্ত্রণ করেছ যাদের সবাইকে গৃহে তৈরি একটি করে কোণক আইসক্রিম খাওয়াতে চাও। আইসক্রিমটির ভূমির ব্যাস 6 সেমি ও উচ্চতা 15 সেমি। বন্ধুদের সাথে তোমার মা এবং তুমিও একটি করে আইসক্রিম খেতে চাও। তোমার মা বুঝতে পারছেনা কতটুকু আইসক্রিম তৈরি করতে হবে? কী পরিমাণ আইসক্রিম তৈরি করতে হবে তুমি কি তোমার মাকে আগেই পরিমাপ করে দিতে পারবে?

 

গোলক (Sphere)

তোমরা আগের শ্রেণিতে বৃত্ত সম্পর্কে জেনেছ। আবার কাগজ কেটে বৃত্ত তৈরি করাও শিখেছ। তোমরা কি নিচের বস্তুগুলোর নাম বলতে পার? নিশ্চয় এগুলোর নাম বলতে পারবে। কারণ এসব বস্তুসমূহ আমরা দৈনন্দিন জীবনে প্রতিনিয়তই ব্যবহার করে থাকি। এগুলোর মধ্যে কোনোটা খেলার সামগ্রী, কোনোটা ফল, আবার কোনোটা সবজি জাতীয় ফল।

কয়েক ধরনের বলের নাম: টেনিস বল, ক্রিকেট বল, ফুটবল, বাস্কেটবল

গোলাকার আকৃতির কয়েকটি ফল: পেয়ারা, কমলা, আপেল, মালটা

গোলাকার আকৃতির সবজি জাতীয় ফল: মিষ্টি কুমড়া

গোলাকার আকৃতির খেলার সামগ্রী: গোলক

গোলাকার আকৃতির পড়া-লেখার সামগ্রী: ভূগোলক

এ ধরনের গোলাকার আকৃতির আরও কয়েকটি বস্তুর নাম নিচের তালিকায় লেখো।

তোমরা কি বলতে পার আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত গোলাকার আকৃতির এসব বস্তুসমূহ কোন ধরনের বস্তু। এগুলো সবই ত্রিমাত্রিক বস্তু। এগুলোকে আমরা গোলক বলতে পারি।

গোলক (Sphere): বৃত্তের ব্যাসকে স্থির রেখে বৃত্তটিকে ওই ব্যাসের চারদিকে ঘোরালে যে ঘনবস্তু উৎপন্ন হয় তাকে গোলক বলে। ত্রিমাত্রিক জ্যামিতিতে গোলক হলো সুষম মসৃণ গোলাকার ঘনবস্তু।

আমরা যখন গোলক জাতীয় কোনো ফল বা সবজি খাই তখন এগুলোর গায়ে কতটুকু ছাল বা খোসা আছে তা জানার প্রয়োজনবোধ করি না। কিন্তু যখন একটি ফুটবল তৈরি করতে যাই, তখন এর গায়ের চতুর্দিকে কতটুকু চামড়া বা এ জাতীয় উপাদান দরকার তা জানার প্রয়োজন বোধ করি। অতএব, চামড়া বা এ জাতীয় উপাদানের ক্ষেত্রফল জানা জরুরি হয়ে পড়ে। সুতরাং, আমাদের দৈনন্দিন জীবন-যাপন সুষ্ঠভাবে পরিচালনার জন্যই এধরনের ঘনবস্তুর পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল জানা অতীব জরুরি। চলো আমরা বাস্তব জীবনে ব্যবহৃত এ জাতীয় ঘনবস্তুর বা গোলকের পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল নির্ণয় করার কৌশল শিখে ফেলি।

 

গোলকের পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল (Surface area of sphere)

দলগত কাজ

ধাপ ৩: যে কোনো একটি অর্ধগোলক নাও এবং কাটা দিক উপুড় করে বা নিচের দিকে করে এক টুকরো কাগজের ওপর রাখো; অতঃপর অর্ধগোলকের চারদিকে খাতার ওপর পেন্সিল বা কলম দ্বারা দাগ দাও এবং অর্ধগোলকটিকে কাগজের উপর থেকে তুলে নাও।

কী দেখতে পাচ্ছ? কাগজের উপর যে চিত্র অঙ্কিত হয়েছে তা কি তুমি চিনতে পার? বলো তো এটি কীসের চিত্র? হ্যাঁ, এটি একটি বৃত্ত।

ধাপ ৪: একটি কাঁচি দিয়ে বৃত্তটি যত্ন সহকারে কেটে নাও। তারপর বৃত্তটির ব্যাসার্ধ পরিমাপ করো। অতঃপর বৃত্তটির ক্ষেত্রফল পরিমাপ করে নিচের ছকটি পূরণ করো।

 

তুমি যে বৃত্তটি কেটে পেয়েছ, অন্য কাগজ ব্যবহার করে ওই একই পরিমাপের আরেকটি বৃত্ত কেটে নাও। তারপর বৃত্ত দুইটিকে সুবিধাজনকভাবে ছোটো ছোটো করে কেটে আঠা দিয়ে অর্ধগোলকের উপর লাগাও বা সেঁটে দাও। দেখতে পাবে, সম্পূর্ণ অর্ধগোলকটি বৃত্ত দুটির কাগজের টুকরা দ্বারা ঢেকে গেছে এবং কোনো কাগজের টুকরো অবশিষ্ট নেই। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, অর্ধগোলকটির উপরিতলের ক্ষেত্রফল ওই দুটি বৃত্তক্ষেত্রের ক্ষেত্রফলের সমষ্টির সমান। অতএব, পূর্ণ গোলকটির ক্ষেত্রফল এমন চারটি বৃত্তক্ষেত্রের ক্ষেত্রফলের সমষ্টির সমান।

উপরের ছক থেকে একটি বৃত্তের ক্ষেত্রফলের পরিমাপ দেখে এমন চারটি বৃত্তের ক্ষেত্রফলের সমষ্টি পরিমাপ করো; অতঃপর নিচের ছকটি পুরণ করো।

যাহোক হাতে-কলমে তুমি গোলকের পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল বের করতে পারলে।

চলো এখন গোলকের পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফলের গাণিতিক সূত্র নির্ণয় করার চেষ্টা করি।

মনে করো, তুমি যে বৃত্তটি কেটে নিয়েছিলে, সেই বৃত্তের ব্যাসার্ধ। একক। তাহলে বুঝতেই পারছো, গোলকের ব্যাসার্ধও। একক।

তোমরা পূর্বের শ্রেণিতে শিখেছ, যে বৃত্তের ব্যাসার্ধ। একক, তার ক্ষেত্রফল । বর্গ একক। তাহলে তোমার অঙ্কিত বৃত্তের ক্ষেত্রফলও πr2 বর্গ একক।

এখানে আমরা বলতে পারি,

অর্ধগোলকটির উপরিতলের ক্ষেত্রফল = দুইটি বৃত্তের ক্ষেত্রফলের যোগফল।

নিচের চিত্রের সাহায্যে দেখানো যায

সমস্যা ১: দিন-রাত্রি কীভাবে সংঘটিত হয় তা পরীক্ষা করার জন্য তুমি পাতলা প্লাস্টিক পেপার দিয়ে 16 সেমি ব্যাসের একটি ভূগোলক বানাতে চাও। প্রতি বর্গসেমি প্লাস্টিক পেপারের দাম পাঁচ টাকা হলে ভুগোলকটি বানাতে তোমার মোট কত টাকার প্লাস্টিক পেপার লাগবে?

সমস্যা ২: একটি নিরেট অর্ধগোলকের ব্যাস 10 সেমি। অর্ধগোলকটির বক্রতল বা উপরিতলের ক্ষেত্রফল, ও সমগ্রতলের ক্ষেত্রফল নির্ণয় করো। সমগ্র অর্ধগোলকটি রং করতে প্রতি বর্গ সেন্টিমিটারে 2 টাকা খরচ হলে মোট কত টাকার প্রয়োজন?

 

গোলকের আয়তন (Volume of sphere)

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা যখন পেয়ারা বা আপেল খাই, তখন এতটুকু সবাই বুঝি যে, ছোটো পেয়ারা বা আপেলে যতটুকু পরিমাণ খাদ্যবস্তু আছে; বড়ো পেয়ারা বা আপেলে তারচেয়ে বেশি পরিমাণ খাদ্যবস্তু আছে। কিন্তু যদি বলা হয় যে কোনো একটি পেয়ারা বা আপেলে ঠিক কতটুকু পরিমাণ খাদ্যবস্তু আছে, তখন কিন্তু আমরা সঠিক করে বলতে পারি না। সঠিকভাবে ওই পেয়ারা বা আপেলর খাদ্যবস্তু পরিমাণ জানার জন্য আয়তন নির্ণয় করার প্রয়োজন হয়।

মনে করো, তোমার বাড়িতে তুমি একটি গোলাকার অ্যাকুরিয়াম বানাতে চাও। তোমার অ্যাকুরিয়ামের দুই- তৃতীয়াংশ তুমি পানিপূর্ণ করতে চাও এবং এক-তৃতীয়াংশ বায়ুপূর্ণ করে রাখতে চাও। তাহলেও তোমার একুরিয়ামের আয়তন নির্ণয় করার প্রয়োজন হয়।

আবার একটি ফুটবলের মধ্যে কতটুকু ফাঁকা বা শূন্যস্থান রাখতে হবে তা জানার জন্যও ফুটবলের আয়তন জানার প্রয়োজন হয়।

প্রাত্যহিক জীবনের যে কয়েকটি সমস্যার কথা উপরে আলোচনা করা হলো সেগুলো সবই গোলক জাতীয় বস্তু এবং গোলকের আয়তন বিষয়ক সমস্যা। তাহলে আমাদের গোলকের আয়তন কীভাবে নির্ণয় করতে হয় তা জানা দরকার। চলো আমরা গোলকের আয়তন নির্ণয় করার কৌশল শিখি।

দলগত কাজ

তোমাদের নিজ উদ্যোগে প্রত্যেকটি দলে একটি করে প্লাস্টিকের খেলনা বল সংগ্রহ করো। বলটি এমন হবে যাতে তার মধ্যে পানি প্রবেশ করানো বা বের করা যায়। তারপর বলটির ব্যাসার্ধ পরিমাপ করে তোমাদের খাতায় লিখে রাখো। তোমরা তো ইতোমধ্যে কোণক তৈরি করা শিখেছ। তুমি এমনভাবে একটি কোণক তৈরি করো যাতে কোণকের ভূমির ব্যাসার্ধ ওই বলের ব্যাসার্ধের সমান হয়। তাছাড়া আরও খেয়াল রাখতে হবে, কোণকের উচ্চতা যেন বলের ব্যাসের সমান হয়। কোণকটিকে সহজলভ্য পলিথিন বা অন্য কোনো উপাদান দ্বারা পানি নিরোধক করো যাতে এর মধ্যে পানি ঢালা যায়।

নির্মাণে ত্রুটি থাকলে সংশোধন করো। তাহলে তোমাদের কোণক ও বল প্রস্তুত হয়ে গেল।

আমাদের অপেক্ষার পালা শেষ। এখন চলো আমরা মজার মূল পর্বে যাই।

প্রথমে কোণকটিতে পানি ভরা যায় এমন করে ধরো। তারপর কোণকটি পানিপূর্ণ করে ফাঁকাবলের মধ্যে ঢেলে দাও। বলটি স্বচ্ছ থাকলে দেখতে পারবে বলের মোটামুটি অর্ধাংশ পূর্ণ হয়ে গেছে।

একইভাবে দ্বিতীয়বার খালি কোণকটি পানিপূর্ণ করে ওই বলের মধ্যে ঢেলে দাও।

কী লক্ষ করছো? বলটি কানায় কানায় পানিপূর্ণ হয়ে গেছে।

কি মজা, তাই না? দুই কোণক পানি দ্বারা একটি বল পূর্ণ হয়ে গেল।

আবার তুমি উল্টাভাবেও যাচাই করে দেখতে পার; পানিপূর্ণ একটি বলের পানি দ্বারা এমন দুইটি কোণক পরিপূর্ণ করা যায় এবং বলের মধ্যে আর কোনো পানি অবশিষ্ট থাকে না।

তাহলে, আমরা হাতে-কলমে পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণ করতে পারলাম যে, কোণকের ভূমির ব্যাসার্ধ ও গোলকের ব্যাসার্ধ সমান হলে এবং কোণকের উচ্চতা গোলকের ব্যাসের সমান হলে একটি গোলকের ধারণ ক্ষমতা দুইটি কোণকের ধারণ ক্ষমতার সমান।

সুতরাং, 1 টি গোলকের আয়তন = 2টি কোণকের আয়তন

সমস্যা ৩: একটি ফাঁপা লোহার গোলকের বাইরের ব্যাসার্ধ ৪ সেমি এবং লোহার বেধ ও সেমি। গোলকটির ফাঁপা অংশের আয়তন কত? তাছাড়া ওই গোলকে ব্যবহৃত লোহা দিয়ে একটি নিরেট গোলক তৈরি করলে এবং নিরেট গোলকটি রং করতে প্রতি বর্গ সেন্টিমিটারে 1.75 টাকা খরচ হলে, মোট কত টাকা লাগবে?

সমস্যা ৪: 5 সেমি, 7 সেমি ও 11 সেমি ব্যাসার্ধবিশিষ্ট তিনটি নিরেট প্লাস্টিকের বল গলিয়ে আরেকটি নতুন নিরেট বল তৈরি করা হলো। নতুন বলের পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল নির্ণয় করো।

 

প্রিজম (Prism)

আমরা দৈনন্দিন জীবনে কত কিছুই ব্যবহার করি। নিচের বস্তুগুলোও তার ব্যতিক্রম নয়। এখানে কয়েকটি বসার টুল, টেবিল ইত্যাদি দেখা যাচ্ছে। আবার শেষের বস্তুটিও টুল হিসাবে অনেকে ব্যবহার করেন। আবার শহরের লোকেরা সৌখিনভাবে ঘরের মধ্যে মাছ পালনের জন্যও শেষের বস্তুটি ব্যবহার করেন, যার নাম অ্যাকুরিয়াম। তো যাই হোক, এদের সবগুলোই একেকটি ঘনবস্তু। এ ধরনের আরও কত কিছুই তো আমরা প্রতিদিন ব্যবহার করে থাকি।

তোমার কি এ ধরনের আরও কিছু জিনিস বা ঘনবস্তুর নাম লিখে একটি তালিকা তৈরি করতে পারবে? তবে উপরের বস্তুগুলোর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো প্রত্যকটি বস্তুর উপরের তল ও নিচের তল পরস্পর সমান। গণিতের ভাষায় এটিকে সর্বসম বলা হয়। তাছাড়া উপরের তল ও নিচের তল দুইটি পরস্পর সমান্তরালও বটে। আর পার্শ্বতলগুলো আয়তক্ষেত্র বা সামান্তরিক। এগুলোকে আমরা প্রিজম বলে থাকি।

প্রিজম (Prism): যে ঘনবস্তুর দুই প্রান্ত পরস্পর সর্বসম ও সমান্তরাল বহুভুজ এবং পার্শ্বতলগুলো সামান্তরিক তাই প্রিজম। প্রিজমের দুই প্রান্তে অবস্থিত পরস্পর বিপরীত, সর্বসম ও সমান্তরাল তল দুইটিকে প্রিজমের ভূমি বলে। আর ভূমি ছাড়া অন্যান্য তলগুলোকে প্রিজমের পার্শ্বতল বলে অভিহিত করা হয়। প্রিজমের পার্শ্বতলগুলো আয়তাকার হলে ওই প্রিজমকে খাড়া প্রিজম বা সমপ্রিজম বলে। অন্যদিকে প্রিজমের পার্শ্বতলগুলো আয়তাকার না হয়ে অন্য আকৃতির হলে ওই প্রিজমকে তির্যক প্রিজম বা হেলানো প্রিজম বলে।

প্রিজমের ভূমি-তলের আকৃতি অনুসারে প্রিজমের নামকরণ করা হয়ে থাকে। যেমন কোনো প্রিজমের ভূমি ত্রিভুজাকৃতির হলে তাকে বলা হয় ত্রিভুজাকার প্রিজম। তেমনিভাবে কোনো প্রিজমের ভূমি চতুর্ভুজাকৃতির হলে তাকে বলা হয় চতুর্ভুজাকার প্রিজম, কোনো প্রিজমের ভূমি পঞ্চভুজাকৃতির হলে তাকে বলা হয় পঞ্চভুজাকার প্রিজম, ইত্যাদি।

তোমরা কি বলতে পারবে উপরের বস্তুগুলো কোন ধরনের প্রিজম? উপরের চিত্রগুলো দেখে কোন বস্তুটি ভূমি- তল অনুসারে কোন ধরনের প্রিজম তা বুঝে নিচের তালিকাটি পূর্ণ করো।

প্রিজমের ভূমি যে আকৃতির বহুভুজই হোক না কেন, ওই বহুভুজের বাহুগুলোর দৈর্ঘ্য পরস্পর সমান হলে তাকে সুষম প্রিজম বলে। অর্থাৎ, প্রিজমের ভূমি সমবাহুবিশিষ্ট বহুভুজ বা সুষম বহুভুজ হলে তাকে সুষম প্রিজম বলে। আর প্রিজমের ভূমি সুষম বহুভুজ না হলে তাকে বিষম প্রিজম বলে। সুষম প্রিজমের আরেকটি নাম হলো নিয়মিত প্রিজম (regular prism)। অর্থাৎ, সুষম প্রিজম, নিয়মিত প্রিজম বলে সমধিক পরিচিত। আর বিষম প্রিজম, অনিয়মিত প্রিজম (irregular prism) বলে পরিচিত।

প্রিজমের ভূমিতলদ্বয়ের মধ্যবর্তী দুরত্বকে প্রিজমের উচ্চতা বলে ধরা হয়।

তাহলে প্রিজমের বৈশিষ্ট্যগুলো বিশ্লেষণ করলে লক্ষ করা যায় যে, আয়তাকার ঘনবস্তু ও ঘনক প্রত্যেকেই একেকটি প্রিজম। তোমরা কি এখন বলতে পারবে আয়তাকার ঘনবস্তু ও ঘনক কোন ধরনের প্রিজম। প্রিজম সম্পর্কে তোমার ধারণাগুলো একত্রিত করে প্রযোজ্যক্ষেত্রে খালি ঘরে চিহ্ন দিয়ে ছকটি পূরণ করো।

 

প্রিজমের পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল (Surface area of prism)

আমরা এখন প্রিজমের পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল বের করার চেষ্টা করব। প্রিজমের মোট দুইটি ভূমি ও কতকগুলো পার্শ্বতল রয়েছে। এই ভূমি ও পাশ্বতলগুলোর ক্ষেত্রফলই প্রিজমের সমগ্রতলের ক্ষেত্রফল।

এবার, আমরা পঞ্চভুজাকার প্রিজমের ক্ষেত্রফল বের করার সূত্র তৈরি করি। এই পঞ্চভুজাকার প্রিজমের দুইটি সর্বসম ভূমি ও পাঁচটি পার্শ্বতল রয়েছে। এক্ষেত্রেও, পার্শ্বতলগুলোর সবকয়টি একেকটি আয়তক্ষেত্র।

সুষম বহুভুজের ক্ষেত্রফল (Area of regular polygon)

আমরা পূর্বের শ্রেণিগুলোতে ত্রিভুজ ও চতুর্ভুজের ক্ষেত্রফল নির্ণয় করা শিখেছি। কিন্তু পঞ্চভুজ, ষড়ভুজ, সপ্তভুজ, অষ্টভুজ বা এর চেয়ে বেশি কোনো বহুভুজের ক্ষেত্রফল নির্ণয় করা তো জানতে হবে। চলো আমরা যে কোনো সুষম বহুভুজের ক্ষেত্রফল নির্ণয় করা শিখি।

সমস্যা ১: একটি ত্রিভুজাকৃতি প্রিজমের ভূমির বাহু তিনটির দৈর্ঘ্য যথাক্রমে 7 সেমি, ৪ সেমি ও 10 সেমি এবং উচ্চতা 17 সেমি। প্রিজমটির সমগ্রতলের ক্ষেত্রফল নির্ণয় করো।

সমস্যা ২: একটি সুষম পঞ্চভুজাকৃতি প্রিজম সদৃশ স্তম্ভের ভূমির প্রত্যেক বাহুর দৈর্ঘ্য 3.5 মি. এবং স্তম্ভটির উচ্চতা 12 মি.। স্তম্ভটির পার্শ্বতলগুলোর ক্ষেত্রফল ও সমগ্রতলের ক্ষেত্রফল নির্ণয় করো।

 

প্রিজমের আয়তন (Volume of prism)

ঘনবস্তুর আয়তন দারুণ একটি মজার ব্যাপার। বিভিন্ন প্রকার ঘনবস্তু বিশ্লেষণ করলে লক্ষ করা যায় যে, যেসব ঘনবস্তুর আকৃতি আগা-গোড়া সমান পরিধিবিশিষ্ট অর্থাৎ, একদিকে সরু এবং একদিকে মোটা এমন নয়; সেসব ঘনবস্তুর ভূমির ক্ষেত্রফলকে উচ্চতা দ্বারা গুণ করলে আয়তন পাওয়া যায়। যেমন-আয়তাকার ঘনবস্তু, ঘনক, সিলিন্ডার ইত্যাদি। প্রিজমও এমন একটি ঘনবস্তু যার আগা-গোড়া সমান পরিধিবিশিষ্ট। তাই প্রিজমেরও ভূমির ক্ষেত্রফলকে এর উচ্চতা দ্বারা গুণ করলে আয়তন পাওয়া যায়।

সমস্যা ৩: একটি ত্রিভুজাকার প্রিজমের ভূমির বাহু তিনটির দৈর্ঘ্য 5 সেমি, 12 সেমি ও 13 সেমি এবং উচ্চতা 41 সেমি। প্রিজমটির সমগ্রতলের ক্ষেত্রফল ও আয়তন নির্ণয় করো।

সমস্যা ৪: একটি সুষম চতুর্ভুজাকার প্রিজম সদৃশ খুঁটির ভূমির প্রত্যেক বাহুর দৈর্ঘ্য 12 সেমি. এবং খুঁটিটির উচ্চতা 17 মি.। খুঁটিটির সমগ্রতলের ক্ষেত্রফল ও আয়তন নির্ণয় করো।

সমস্যা ৫: চিত্রে একটি অনিয়মিত খাড়া চতুর্ভুজাকার প্রিজম সদৃশ ঘনবস্তুর ধারগুলোর দৈর্ঘ্য মিটার এককে দেওয়া আছে। ঘনবস্তুটির সমগ্রতলের ক্ষেত্রফল ও আয়তন নির্ণয় করো।

সমস্যা ৬: পাশের নিয়মিত সমপ্রিজম আকৃতির অ্যাকুরিয়ামের ভূমির প্রত্যেক বাহুর দৈর্ঘ্য যথাক্রমে 15 সেমি. এবং উচ্চতা 18 সেমি.। এ্যাকুরিয়ামটির বাইরে রং করতে প্রতি বর্গ সেন্টিমিটারে 20 টাকা খরচ হলে মোট কত টাকা দরকার হবে? আবার অ্যাকুরিয়ামটি রঙিন পানি দ্বারা পূর্ণ করতে প্রতি ঘন সেন্টিমিটারে 15 টাকা খরচ হলে মোট কত টাকার প্রয়োজন হবে?

 

 

 

পিরামিড (Pyramid)

প্রাচীন মিশরীয় পিরামিডের কথা কে না জানে। আমরা সবাই শুনেছি। আমরা ব্যক্তিগত ও সমাজ জীবনে প্রতিদিন কত কিছুই ব্যবহার করি। নিচের চিত্রে নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যবহার্য কয়েকটি বস্তু দেখানো হয়েছে। তোমরা কি বলতে পার এগুলো কোন কোন কাজে ব্যবহৃত হয়। প্রথম চিত্রে এক টুকরো তরমুজ। তরমুজ খাওয়ার আগে আমরা সাধারণত এভাবে কেটে নিয়ে খাই। দ্বিতীয় চিত্রে একটি তাবু দেখা যাচ্ছে। সাধারণত অস্থায়ী কোনো জায়গায় গিয়ে সাময়িকভাবে অবস্থানের জন্য বাঁশ, কাঠ, মোটা কাপড় ইত্যাদি দ্বারা এক ধরনের ঘর তৈরি সেখানে অবস্থান করা হয়।

তৃতীয় চিত্রটিতে যা দেখা যাচ্ছে, তা সতর্কতা বোঝাতে ব্যবহার করা হয়। যেমন, কোনো জায়গা ভেজা ও পিচ্ছিল থাকার কারণে সাবধানতা অবলম্বন করতে বলা হয়। আর চতুর্থ চিত্রটিতে সড়ক পথের নির্দিষ্ট জায়গাটি ব্যবহার করতে নিষেধ অর্থে ব্যবহার করা হয়। সে যাই হোক এদের সবগুলোই একেকটি ঘনবস্তু। এ ধরনের আরও কত কিছুই তো আমরা দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করে থাকি।

তবে উপরের বস্তুগুলোর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো প্রত্যকটি বস্তুর ভূমি-তল একটি ত্রিভুজাকার, চতুর্ভুজাকার বা অন্য যে কোনো বহুভুজাকার। আর পার্শ্বতলগুলোর প্রত্যেকটি ত্রিভুজাকৃতির। তাছাড়া, এই ত্রিভুজাকৃতির পার্শ্বতলগুলো একটি শীর্ষবিন্দুতে মিলিত হয়। এ ধরনের ঘনবস্তুর নাম কি তোমরা বলতে পারবে? এ ধরনের ঘনবস্তুর নাম পিরামিড (Pyramid)।

তোমার কি এ ধরনের আরও কিছু জিনিস বা ঘনবস্তুর নাম লিখে একটি তালিকা তৈরি করতে পারবে? তোমার ধারণাগুলোকে একত্রিত করে উপরের ছবিগুলোর অনুরূপ আরও কয়েকটি বস্তুর নাম লিখে একটি তালিকা তৈরি করো।

পিরামিড (Pyramid): বহুভুজাকৃতি ভূমির উপর অবস্থিত যে ঘনবস্তুর পার্শ্বতলগুলো ত্রিভুজাকৃতির এবং পার্শ্বতলগুলো একটি শীর্ষবিন্দুতে মিলিত হয়, তাকে পিরামিড বলে। তবে পিরামিডের ভূমি যে কোনো আকৃতির বহুভুজ এবং পার্শ্বতলগুলো যে কোনো আকৃতির ত্রিভুজ হতে পারে।

একটি পিরামিডের শীর্ষ থেকে ভূমির উপর লম্ব আঁকলে লম্বটির পাদবিন্দু যদি ভূমির অন্তকেন্দ্র না হয় তবে তাকে হেলানো পিরামিড (oblique pyramid) বলে।

পিরামিডের হেলানো উচ্চতা (Lateral height of pyramid): পিরামিডের শীর্ষ থেকে ত্রিভুজের ভূমির উপর অঙ্কিত লম্বের দৈর্ঘ্যকে পিরামিডের হেলানো উচ্চতা বলে।

পিরামিডের ধার (Edge of pyramid): পিরামিডের শীর্ষবিন্দু ও ভূমির যে কোনো কৌণিক বিন্দুর সংযোজক রেখাংশ পিরামিডের এক একটি ধার। তাছাড়া ভূমির বাহুগুলো পিরামিডের ধার।

যে কোনো পিরামিডের ভূমির বাহুর সংখ্যা ও পার্শ্বতলের সংখ্যা সমান। কিন্তু ধারের সংখ্যা এর ভূমি-বহুভুজের বাহুর সংখ্যা বা পার্শ্বতলের সংখ্যার দ্বিগুণ।

তাহলে পিরামিড বিশ্লেষণ করলে একটি পিরামিডের যেসব উপাদান পাওয়া যায় তা হলো :

  • একটি শীর্ষবিন্দু
  • একটি বহুভুজাকার ভূমি
  • কমপক্ষে তিনটি বা তার অধিক ত্রিভুজাকার পার্শ্বতল

 

পিরামিডের ক্ষেত্রফল (Area of pyramid)

আমরা এখন পিরামিডের ক্ষেত্রফল বের করার চেষ্টা করব। পিরামিডের ভূমি ও পার্শ্বতলগুলোর ক্ষেত্রফলই পিরামিডের সমগ্রতলের ক্ষেত্রফল।

 

ভূমির ক্ষেত্রফল (Area of base)

পার্শ্বতলের ক্ষেত্রফল (Lateral surface area)

পিরামিডের পার্শ্বতলগুলো ত্রিভুজাকার। মনে করি, চতুর্ভুজাকার এই পিরামিডের ভূমির বাহুগুলোর দৈর্ঘ্য যথাক্রমে a, b, c, d একক এবং হেলানো উচ্চতা ১ একক। খেয়াল রাখতে হবে, প্রত্যেকটি ত্রিভুজের উচ্চতাই হেলানো উচ্চতা।

সমস্যা ১: একটি ত্রিভুজাকৃতি পিরামিডের ভূমির বাহু তিনটির দৈর্ঘ্য ও সেমি, 4 সেমি ও 5 সেমি এবং উচ্চতা 13 সেমি। পিরামিডটির সমগ্রতলের ক্ষেত্রফল নির্ণয় করো।

সমস্যা ২: একটি সুষম ষড়ভুজাকৃতি পিরামিড সদৃশ মিনারের ভূমির প্রত্যেক বাহুর দৈর্ঘ্য যথাক্রমে 4.8 মি. এবং মিনারটির উচ্চতা 15 মি.। মিনারটির পার্শ্বতলগুলোর ক্ষেত্রফল ও সমগ্রতলের ক্ষেত্রফল নির্ণয় করো।

 

পিরামিডের আয়তন (Volume of pyramid)

পিরামিডের ভূমির ক্ষেত্রফলকে উচ্চতা দ্বারা গুণ করে প্রাপ্ত ফলাফলকে 3 দ্বারা ভাগ করলে আয়তন পাওয়া যায়।

সমস্যা ৩: একটি ত্রিভুজাকার পিরামিড সদৃশ স্থাপনার ভূমির বাহু তিনটির দৈর্ঘ্য 28 সেমি, 45 সেমি ও 53 সেমি এবং উচ্চতা 62 সেমি। স্থাপনাটির সমগ্রতলের ক্ষেত্রফল ও আয়তন নির্ণয় করো।

সমস্যা ৪: একটি সুষম অষ্টভুজাকার পিরামিড আকৃতির স্তম্ভের ভূমির প্রত্যেক বাহুর দৈর্ঘ্য 23 সেমি. এবং স্তম্ভটির উচ্চতা 3.7 মি.। স্তম্ভটির সমগ্রতলের ক্ষেত্রফল ও আয়তন নির্ণয় করো।

 

Content added || updated By
Promotion