আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করেছেন মানুষ, জীবভূ, পশুপাখি, কীটপতঙ্গ। তিনি সৃষ্টি করেছেন চাঁদ-সুরুজ, গ্রহ-তারা, নদীনালা, পাহাড়-পর্বত, গাছপালা এবং আরো অনেক কিছু। আল্লাহর এই সব সৃষ্টির মধ্যে মানুষ সবার সেরা। আর তিনি এই সবকিছু সৃষ্টি করেছেন মানুষের উপকারের জন্য। তাই মানুষ আল্লাহর সকল সৃষ্টির প্রতি দয়া দেখাবে। সহানুভূতি প্রদর্শন করবে। এরই নাম সৃষ্টির সেবা।
যারা আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি দয়া দেখায় এবং সৃষ্টির সেবা করে আল্লাহ তাদের প্রতি খুশি হন। তাদের ভালোবাসেন। তাদের ওপর রহমত বর্ষণ করেন।
আখলাক বা চরিত্র ও নৈতিক মূল্যবোধ
মহানবি (স) বলেছেন:
অর্থ: “পৃথিবীতে যা কিছু আছে তাদের প্রতি দয়া দেখাও। আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।”
আল্লাহর ইবাদতের পর আমাদের প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে মানুষের সেবা করা। আল্লাহর সকল সৃষ্টির সেবা করা। আমরা একে অপরের প্রতি দয়া দেখাব। সহানুভূতিশীল হব। যদি আমরা কারো প্রতি দয়া না দেখাই তাহলে আল্লাহ আমাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হবেন। আমাদের ওপর দয়া করবেন না। মহানবি (স) বলেছেন:
অর্থ: যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া দেখায় না, আল্লাহ তার প্রতি দয়া দেখান না ।
আমরা মানুষের সেবা করব। অসুস্থ ব্যক্তির সেবাযত্ন করব। ক্ষুধার্তকে খাদ্য দেব। বস্ত্রহীনকে বস্ত্র দান করব। নিরাশ্রয়কে আশ্রয় দেব। দরিদ্র ও ভিক্ষুককে সাহায্য করব। বেকার লোকদের কাজের ব্যবস্থা করে দেব। বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশী বিপদে পড়লে সাহায্য-সহযোগিতা করব। মহানবি (স) বলেছেন, 'তোমরা ক্ষুধার্তকে খাদ্য দাও, অসুস্থ ব্যক্তির সেবা কর এবং বন্দিকে মুক্তি দাও।'
শুধু মানুষ নয়, সকল জীবজন্তু, পশুপাখি, কীটপতঙ্গ, গাছপালাসহ আল্লাহর সকল সৃষ্টির সেবা করব। গরু-ছাগল, কুকুর-বিড়াল ইত্যাদি কোনো প্রাণীকে কষ্ট দেব না। প্রহার করব না। এদের যত্ন করব। কোনো জীবজন্তু বিপদে পড়লে তাকে উদ্ধার করব। তাকে বাঁচাব। আর এ সবই নৈতিক মূল্যবোধের অন্তর্ভুক্ত।
হাদিস শরিফে উল্লেখ আছে, “একদা এক মহিলা পথের পাশে দেখতে পান যে, একটি কুকুর পিপাসায় খুবই কাতর। আর্তনাদ করছে। এখনই মারা যাবে এমন অবস্থা। মহিলার দয়া হলো। তিনি কাছেই একটি ৰূপ দেখতে পেলেন এবং কূপ থেকে পানি আনলেন। কুকুরের মুখের সামনে পানি ধরলেন। পানি পান করে কুকুরটি আরাম পেল। সে প্রাণে বেঁচে গেল।
মহিলা আল্লাহর সৃষ্ট জীবের প্রতি দয়া দেখালেন। কুকুরটিকে সেবা করলেন। এ জন্য আল্লাহ ঐ মহিলার প্রতি খুশি হলেন। তার জীবনের সব পাপ ক্ষমা করে দিলেন।”
ফুয়াদ পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। একদিন সে ভুলে যাওয়ার পথে একটি পর পাড়ি দেখল। গাড়িতে মালামাল বোঝাই খুব বেশি। এদিকে গাড়ির চাকা খাদে পড়ে গেছে। গরু খাদ থেকে গাড়িটি টেনে তুলতে পারছে না। গরুর খুব কষ্ট হচ্ছে। গরুর কষ্ট দেখে ফুয়াদের খুব কষ্ট হলো। তার দয়া হলো। সে গাড়ির গাড়োয়ানকে সাহায্য করল। গাড়িটি ঠেলে খাদ থেকে রাস্তার ওপরে উঠিয়ে দিল।
অতপর সে গাড়োয়ানকে বলল, চাচাজান, গরু-মহিষ তাদের কষ্টের কথা কাউকে বলতে পারে না। বেশি বোঝা চাপালে এদের খুব কষ্ট হয়। আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন। গুনাহ হয়। গাড়োয়ান ফুয়াদের ব্যবহারে খুব খুশি হলো। সে ফুয়াদের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করল।
আমাদের মহানবি (স) সৃষ্টির সেবার মূর্ত প্রতীক ছিলেন। তিনি বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে মানুষের সুখ-দুঃখের খোঁজখবর নিতেন। পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময় মসজিদে সকলের খোঁজখবর নিতেন। তিনি শুধু মানব জাতির কল্যাণকামী ছিলেন না বরং আল্লাহর সকল সৃষ্টির প্রতি সদয় ছিলেন। তিনি সারা জীবন সৃষ্টির সেবা করে গেছেন। এ জন্য আল্লাহ রব্বুল আলামীন তাঁকে 'রাহমাতুল্লিল আলামীন' বা 'সমগ্র বিশ্বের রহমত স্বরূপ' উপাধিতে ভূষিত করেছেন।
পরিকল্পিত কাজ : কী কী উপায়ে সৃষ্টির সেবা করা যায় তার একটি তালিকা শিক্ষার্থীরা খাতায় সুন্দর করে লিখবে।
আরও দেখুন...