প্রচলিত বিদ্যুৎ উৎপাদন পদ্ধতিগুলোর মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হলো-তাপবিদ্যুৎ, পানিবিদ্যুৎ, ডিজেল ইঞ্জিন দ্বারা উৎপাদিত বিদ্যুৎ ইত্যাদি। সোলার প্যানেল সিস্টেমে উৎপাদিত বিদ্যুৎ এর যেসব সুবিধা পাওয়া যায় তাহলো:
১. সহজে স্থাপন, সম্প্রসারণ, এবং হস্তান্তর যোগ্য।
২. বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় খুব কম। তবে এখনো প্রতি একক ইউনিট বিদ্যুৎ গ্রাহকের কাছে পৌঁছাতে মূল্য (খরচ) প্রচলিত বিদ্যুৎ ব্যবস্থা থেকে অনেক বেশি। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য (খরচ) যথাক্রমে ৩২.০০ ও ৫.৭২ টাকা।
৩. চলতি খরচ বা পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ খুবই কম।
৪. নির্ভরশীলতা বেশি ও পরিচালনা সহজ।
৫. বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা নেই বলে ইহা অধিক নিরাপদ।
৬. শব্দহীন, গন্ধহীন এবং পরিবেশ দূষণ মুক্ত রাখে ।
৭. জ্বালানি খরচ নেই, সহজে নষ্ট হয় না এবং প্যানেল স্থাপন ব্যয় কম।
৮. কৃত্রিম উপগ্রহে সৌর শক্তি ব্যবহারের অনেক সুবিধা পাওয়া যায় ।
৯. লোডের নিকটে স্থাপন করা যায় বলে পরিবহন ব্যয় নেই বললেই চলে।
১০. বায়ুমণ্ডল স্বাভাবিক থাকলে এনার্জির উৎস চিরস্থায়ী।
সোলার এনার্জি ব্যবহারের অনেক সুবিধা থাকলেও বাস্তবে এ শক্তির রূপান্তর বা সঞ্চয় ব্যাপক ভাবে সম্ভব হচ্ছে না। এ শক্তির উৎপাদন ও ব্যবহারে কিছু অসুবিধা বিদ্যমান। প্রাথমিক খরচ খুব বেশি এবং আবহাওয়া জনিত কারণে এবং রাতে সূর্যের আলোর অনুপস্থিতে এনার্জি উৎপাদন সম্ভব হয় না। সরকার সৌর শক্তি ব্যবহারের উপর ব্যাপক গুরুত্ব দিচ্ছে এবং দিনদিন/ক্রমান্বয়ে এর ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে সরকার আধুনিক অবকাঠামো স্থাপনায় সৌর সিস্টেম স্থাপনে গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে সোলার বিদ্যুৎ খাতে উৎপাদনের পরিমাণ ১৭৪ মেগাওয়াট যা দেশের মোট উৎপাদনের মাত্র ১.১ শতাংশ। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সোলার বিদ্যুৎ খাত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতামত হচ্ছে ২০২৪-২৫ সালে ১০০০ মেগাওয়াট (এক গিগাওয়াট) উৎপন্ন ক্ষমতা সম্পন্ন সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প চালুর লক্ষ্যমাত্রায় কাজ করা উচিত। বর্তমানে ব্যবহৃত সোলার প্যানেলের দক্ষতা খুবই কম; মাত্র ২২-২৪%। বাজারে বেশি দক্ষতার সোলার সেল পাওয়া যাচ্ছে। ভবিষ্যতে উন্নত মানের বেশি দক্ষতার সোলার সেল সহজলভ্য হবে এবং এ পদ্ধতিতে এনার্জি উৎপাদনের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে।
একটি সৌর বিদ্যুৎ সিস্টেম স্থাপনের সময় নিম্নলিখিত বিষয় সমূহের উপর লক্ষ্য রাখতে হবে।
(ক) আলোর পর্যাপ্ততা :
দিনের অধিকাংশ সময় বা সারাদিন যে স্থানে সূর্যের আলো থাকে সে স্থানে প্যানেল স্থাপন করতে হবে। অর্থ্যাৎ যেখানে উন্মুক্তভাবে সূর্যের আলো পড়ে সেখানে প্যানেল স্থাপন করতে হয়।
(খ) ভূমির সাথে হেলানো ভাবে স্থাপন:
সৌর প্যানেলকে দক্ষিণ মূখী করে ভূমির সাথে ২৩° ডিগ্রী কোণে হেলানো ভাবে স্থাপন করতে হবে। উল্লেখ্য যে, এ কৌণিক পরিমাপ বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে (বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালীন সূর্যের আলো খাড়া ভাবে পড়ে এবং শীত কালে তীর্যক ভাবে পড়ে। ঋতু পরিবর্তনের সাথে প্যানেলকে বিভিন্ন কোণে স্থাপন করা কষ্টকর ও ঝামেলাপূর্ণ কাজ । এজন্য বিশেষজ্ঞগণ জানুযারি থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত কৌণিক বিশ্লেষণ করে একটি গড় কৌণিক অবস্থান নির্ধারণ করেছেন। এ অবস্থায় প্যানেল স্থাপন করলে গড়ে বেশি বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। এ কৌণিক পরিমাপ হচ্ছে ভূমির সাথে ২৩°।
(গ) প্যানেলের উপর ছারা এবং আলোর প্রতিবন্ধকতা:
কোন অবস্থাতেই যাতে প্যানেলের উপর ছায়া না পড়ে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। ছায়া পড়লে বা আলোর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে প্যানেল পূর্ণ দক্ষতার কাজ করতে পারে না। অর্থ্যাৎ প্যানেলের বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যায়।
(ঘ) প্যানেল ও ব্যাটারি দূরত্ব :
ব্যাটারি ও প্যানেলের মধ্যে দূরত্ব যথাসম্ভব কম রাখা উচিত। কোন অবস্থাতেই ৩০ ফুটের বেশী হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। ২০-২৫ ফুটের মধ্যে থাকাই ভালো। কারণ এই বিদ্যুৎ ঘর ক্ষমতা সম্পন্ন এবং বিদ্যুতের পরিমাণও খুব অল্প। তাই ব্যাটারি ও প্যানেলের দূরত্ব যত বেশী হবে পরিবাহী রেজিস্ট্যান্স ও ভোল্টেজ ড্রপ তত বেশি হবে । অর্থাৎ বিদ্যুতের অপচয় ঘটবে ফলে সিস্টেমের কর্ম সক্ষতা কমে যাবে ।