শীতকালে চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ানোর পর সেই চিরুনি ছোট ছোট কাগজের টুকরোর কাছে আনা হলে কাগজের টুকরোগুলো লাফিয়ে চিরুনির দিকে ছুটে আসে। আবার ঝড়ের সময় বজ্রপাতের আলোর ঝলকানির সাথে দিগ্বিদিক প্রকম্পিত করে প্রচণ্ড শব্দে বজ্রপাত হয়। দুটো বিষয়ের জন্য দায়ী স্থির বিদ্যুৎ। আমাদের চারপাশের সবকিছুই আসলে অণু-পরমাণু দিয়ে তৈরি। পরমাণুর কেন্দ্রে থাকে নিউক্লিয়াস এবং সেটিকে ঘিরে বাইরে ইলেকট্রন ঘুরছে। ইলেকট্রনের ঋণাত্মক চার্জ এবং নিউক্লিয়াসের চার্জ ধনাত্মক। কোনো প্রক্রিয়ার যদি পরমাণুর এক বা একাধিক ইলেকট্রনকে আসা করে ফেলা হয় তাহলে স্থির বিদ্যুতের জন্ম হয়। এই অধ্যায়ে আমরা এই স্থির বিদ্যুতের বিভিন্ন প্রক্রিয়া আলোচনা করব। দুটো চার্জকে পাশাপাশি রাখা হলে তারা কী বলে নিজেদের আকর্ষণ করে সেটিও আমরা এই অধ্যায়ে জেনে নেব।
শীতকালে শুকনো চুল চিরুনি দিয়ে আঁচড়িয়ে তোমাদের প্রায় সবাই নিশ্চয়ই কখনো না কখনো ছোট ছোট কাগজের টুকরাকে সেই চিরুনি দিয়ে আকর্ষণ করেছ। শীতপ্রধান দেশে শীতকালে বাতাস খুব শুকনো থাকে, তখন ছোট শিশু যখন কার্পেটে হামাগুড়ি দেয় তখন তাদের চুল খাড়া হয়ে যায়, দেখে মনে হয় একটি চুল বুঝি অন্য চুলকে ঠেলে খাড়া করিয়ে দিয়েছে। তোমরা সবাই নিশ্চয়ই ঝড়ের রাতে আকাশ চিড়ে বিদ্যুতের ঝলককে নিচে নেমে আসতে দেখেছ।
কাগজের আকর্ষণ, চুলের বিকর্ষণ কিংবা বজ্রপাত— এই তিনটি ব্যাপারের মূলেই কিন্তু একই বিষয় কাজ করেছে, সেটি হচ্ছে চার্জ বা আধান। চার্জ বা আধান কী, কেন সেটা কখনো আকর্ষণ করে, কখনো বিকর্ষণ করে আবার কখনো বিদ্যুৎ ঝলক তৈরি করে বোঝার জন্য আমাদের একেবারে গোড়ায় যেতে হবে, অণু-পরমাণু কেমন করে তৈরি হয় সেটা জানতে হবে।
আমরা সবাই জানি সবকিছু অণু-পরমাণু দিয়ে তৈরি। পৃথিবীতে 118টি পরমাণু আছে, এর মাঝে মাত্ৰ ৪3টি টেকসই, মাত্র এই কয়টি পরমাণু দিয়ে লক্ষ লক্ষ ভিন্ন অণু তৈরি হয়েছে। একটা অক্সিজেন পরমাণুর সাথে দুটো হাইড্রোজেন পরমাণু দিয়ে পানি, একটা সোডিয়াম পরমাণুর সাথে একটা ক্লোরিন পরমাণু দিয়ে লবণ, একটা কার্বন পরমাণুর সাথে চারটা হাইড্রোজেন পরমাণু দিয়ে রান্না করার গ্যাস ইত্যাদি ইত্যাদি। (অবাক হবার কিছু নেই বাংলায় মাত্র পঞ্চাশটা বর্ণ, সেই বর্ণমালা, দিয়ে হাজার হাজার শব্দ তৈরি হয়েছে।)
পরমাণু হচ্ছে সবকিছুর বিল্ডিং ব্লক (Building Block)। এই পরমাণুর কেন্দ্রে থাকে ছোট একটা নিউক্লিয়াস, তাকে ঘিরে ঘুরতে থাকে ইলেকট্রন। নিউক্লিয়াস তৈরি হয় প্রোটন আর নিউট্রন দিয়ে। এর ভেতরে প্রোটনের চার্জ হচ্ছে ধনাত্মক বা পজিটিভ (নিউট্রনের কোনো চার্জ নেই) আর ইলেকট্রনের চার্জ ঋণাত্মক বা নেগেটিভ। প্রোটন আর ইলেকট্রনের চার্জ সমান কিন্তু বিপরীত অর্থাৎ তার মান ( coulomb) কিন্তু একটা পজিটিভ অন্যটা নেগেটিভ। একটা পরমাণুর নিউক্লিয়াসে যে কয়টা প্রোটন থাকে তার বাইরে ঠিক সেই কয়টা ইলেকট্রন ঘুরতে থাকে তাই পরমাণুর সম্মিলিত চার্জ শূন্য, অর্থাৎ পরমাণু হচ্ছে বিদ্যুৎ নিরপেক্ষ বা নিস্তড়িৎ বা নিউট্রাল। সবচেয়ে সহজ পরমাণু হচ্ছে হাইড্রোজেন, তার নিউক্লিয়াসটা হচ্ছে শুধু একটা প্রোটন, তাকে ঘিরে ঘুরছে একটা ইলেকট্রন। এরপরের পরমাণু হচ্ছে হিলিয়াম, নিউক্লিয়াসে দুটো প্রোটন (এবং চার্জবিহীন দুটো নিউট্রন) আর বাইরে দুটো ইলেকট্রন। এভাবে আস্তে আস্তে আরো বড় বড় পরমাণু তৈরি হয়েছে। হাইড্রোজেনকে যদি বাদ দিই তাহলে বলা যায় নিউক্লিয়াসে যতগুলো প্রোটন থাকে কমপক্ষে ততগুলো এবং সাধারণত আরো বেশি নিউট্রন থাকে।
নিউক্লিয়াসের বাইরে ইলেকট্রনগুলো সব একই কক্ষপথে থাকে না| ভেতরের কক্ষপথের ইলেকট্রনগুলো অনেক শক্তভাবে আটকে থাকে, তবে কিছু কিছু পরমাণুর বেলায় বাইরের কক্ষপথের ইলেকট্রনগুলোকে একটু চেষ্টা করলে আলাদা করা যায়। ইলেকট্রন আলাদা করার একটা উপায় হচ্ছে ঘর্ষণ।
এমনিতে পরমাণুগুলো চার্জ নিরপেক্ষ অর্থাৎ প্রত্যেক পরমাণুতে সমান সংখ্যক প্রোটন আর ইলেকট্রন। কিন্তু কোনো কারণে যদি বাইরের কক্ষপথের একটা ইলেকট্রন সরিয়ে নেওয়া হয় তাহলে ইলেকট্রনের তুলনায় প্রোটনের সংখ্যা বেড়ে যায় অর্থাৎ পরমাণুটা আর বিদ্যুৎ নিরপেক্ষ বা নিউট্রাল থাকে না, তার ভেতরে পজিটিভ চার্জের পরিমাণ বেড়ে যায়। একটা ইলেকট্রন সরিয়ে নিলে পরমাণুটিতে একটি পজিটিভ চার্জ হয়, দুটি সরিয়ে নিলে দুটি পজিটিভ চার্জ হয়। আমরা তখন বলি পরমাণুটি আয়নিত বা আহিত হয়েছে। একটা পরমাণু যে রকম পজিটিভভাবে আয়নিত হতে পারে ঠিক সে রকম নেগেটিভভাবেও আয়নিত হতে পারে অর্থাৎ যখন বিচ্ছিন্ন একটি বা দুটি ইলেকট্রন পরমাণুর সাথে যুক্ত হয়ে যায়, তখন পরমাণুর মোট চার্জ হয় নেগেটিভ।
পরমাণুগুলোর ইলেকট্রনগুলো তার কক্ষপথে ঘুরতে থাকে, এগুলো কীভাবে সাজানো হবে ভার সুনির্দিষ্ট নিয়ম আছে। তোমরা তোমাদের রসারন বইয়ে সেটি বিস্তৃতভাবে দেখেছ। এখন তার গভীরে আমরা যাব না। শুধু বলে রাখি কখনো কখনো শেষ কক্ষপথে একটি-দুটি ইলেকট্রন প্রায় মুক্ত অবস্থায় থাকে, এ রকম পদার্থে ইলেকট্রনগুলো খুব সহজে পুরো পদার্থের মাঝে ছোটাছুটি করতে পারে। এ রকম পদার্থকে আমরা বলি বিদ্যুৎ পরিবাহী। আবার কিছু কিছু পদার্থে ছোটাছুটি করার মতো ইলেকট্রন নেই, যে কয়টি আছে খুব শক্তভাবে আবদ্ধ সেগুলো হচ্ছে বিদ্যুৎ অপরিবাহী। ধাত পদার্থ যেমন সোনা, রুপা, তামা হচ্ছে বিদ্যুৎ সুপরিবাহী। কাঠ, প্লাস্টিক, কাচ, রাবার এসব হচ্ছে বিদ্যুৎ অপরিবাহী।
পরমাণুর গঠন সম্পর্কে এখন পর্যন্ত যা যা বলা হয়েছে আমরা যদি সেগুলো বুঝে থাকি তাহলে স্থির বিদ্যুতের পরের বিষয়গুলো মনে হবে খুবই সহজ।
এক টুকরো কাচকে যদি এক টুকরো সিল্ক দিয়ে ঘষা হয় তাহলে কাচ থেকে ইলেকট্রনগুলো সিল্কে আসতে শুরু করবে অর্থাৎ কাচটি হবে পজিটিভ বা ধনাত্মক চার্জযুক্ত আর আসক্তি তার থেকে বেশি। আবার যদি এক টুকরো প্লাস্টিককে ফ্লানেল (বা পশমি কাপড়) দিয়ে ঘষা হয় তাহলে ফ্লানেল থেকে ইলেকট্রন চলে আসবে প্লাস্টিকের টুকরোতে। তার কারণ ইলেকট্রনের জন্য প্লাস্টিকের আকর্ষণ ফ্লানেল থেকে বেশি।
এবারে আমরা একটা এক্সপেরিমেন্ট করতে পারি। ধরা যাক কাচ এবং সিল্ক ব্যবহার করে আমরা দুই টুকরো কাচকে পজিটিভ চার্জ দিয়ে আহিত করেছি। এখন একটাকে যদি সাবধানে একটা বিদ্যুৎ অপরিবাহী সিল্কের সুতো দিয়ে ঝুলিয়ে দিয়ে তার কাছে অন্যটা নিয়ে আসি তাহলে দেখবে ঝুলন্ত কাচের টুকরোটি বিকর্ষিত হয়ে সরে যাচ্ছে।
আমরা যদি একইভাবে দুই টুকরো প্লাস্টিককে নেগেটিভ চার্জ দিয়ে আহিত করে একটাকে সিল্কের সুতো দিয়ে বেঁধে ঝুলিয়ে দিই এবং অন্যটা তার কাছে নিয়ে আসি তাহলে আমরা একই ব্যাপার দেখব, একটা আরেকটাকে বিকর্ষণ করছে। এবারে যদি প্লাস্টিকের দণ্ডটা যখন ঝুলে আছে তখন তার কাছে পজিটিভ চার্জে আহিত কাচের দণ্ডটা নিয়ে আসি তখন দেখব একটা আরেকটাকে আকর্ষণ করছে।
আমরা যখন মহাকর্ষ বল পড়েছি তখন দেখেছি সেখানে শুধু এক রকম ভর, তাই মাত্র এক রকম বল সেটি হচ্ছে আকর্ষণ। এখন আমরা দেখছি এখানে দুই রকম চার্জ এবং বলটিও দুই রকম, কখনো সিল্কটি হবে নেগেটিভ চার্জযুক্ত। ব্যাপারটি ঘটে কারণ ইলেকট্রনের জন্য কাচের যত আসত্তি সিল্কের আকর্ষণ, কখনো বিকর্ষণ। এক্সপেরিমেন্টটা যদি ঠিকভাবে করে থাকি তাহলে দেখতে পাব একই ধরনের চার্জ একে অন্যকে বিকর্ষণ করে এবং ভিন্ন ভিন্ন চার্জ একে অন্যকে আকর্ষণ করে।
এই অধ্যায়ের শুরুতে বলা হয়েছে চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ানোর পর সেই চিরুনিটি যখন ছোট ছোট কাগজের কাছে আনা হয় তখন কাগজগুলো লাফিয়ে চিরুনির কাছে চলে আসে। বোঝা যায় চিরুনিটা কাগজের টুকরোগুলোকে আকর্ষণ করছে। আমরা এখন জানি চিরুনিটাতে নেগেটিভ চার্জ জমা হয়েছে এবং সে কারণেই চিরুনিটা কাগজের টুকরোগুলোকে আকর্ষণ করছে। কিন্তু এখানে একটা ছোট জটিলতা আছে। আমরা দেখেছি বিপরীত চার্জ আকর্ষণ করে, তাই কাগজগুলোকে আকর্ষণ করতে হলে সেগুলোকে অবশ্যই চিরুনির বিপরীত চার্জ হতে হবে কিছু আমরা জানি কাগজের টুকরোগুলোতে কোনো চার্জই নেই তাহলে চিরুনি কেন এগুলোকে আকর্ষণ করছে?
চিত্র 11.04:চার্জ বিহীন বস্তুর কাছে চারজসহ বস্তু আনা হলে বিপরীত চার্জ আবেশিত হয়
ব্যাপারটা ঘটে বৈদ্যুতিক আবেশ নামের একটা প্রক্রিয়ার জন্য। কাচ কিংবা প্লাস্টিকে চার্জ জমা করে সেটাকে যদি চার্জহীন কোনো কিছুর কাছে আনা হয় তাহলে সেই চার্জহীন বস্তুটার মাঝে এক ধরনের চার্জ জন্ম নেয়। বিষয়টা বোঝানোর জন্য 10.01 চিত্রটিতে একটা ধাতৰ গোলক দেখানো হয়েছে, এটাকে রাখা হয়েছে বিদ্যুৎ অপরিবাহী স্ট্যান্ডের ওপর। এখন একটা কাচকে সিল্ক দিয়ে খুব ভালো করে ঘষে তার মাঝে চার্জ জমা করে নিয়ে সেটা ধাতব গোলকের কাছে নিয়ে এলে ধাতব গোলকের নেগেটিভ চার্জগুলো আকর্ষিত হয়ে কাছে চলে আসবে এবং গোলকের পেছন দিকে পজিটিভ চার্জগুলো সরে যাবে। এখন কাচ দণ্ড পজিটিভ চার্জযুক্ত, কাচ দন্ডের কাছাকাছি গোলকের অংশটুকু নেগেটিভ চার্জযুক্ত কাজেই এরা পরস্পরকে আকর্ষণ করবে।এবারে আমরা চিরুনি দিয়ে কাগজের টুকরোকে আকর্ষণ করার ব্যাপারটা বুঝতে পারব। যখন কাগজের টুকরোর কাছাকছি নেগেটিভ চার্জযুক্ত চিরুনিটা আনা হয় তখন কাগজের টুকরোর যে অংশ কাছাকাছি সেখানে পজিটিভ চার্জ আবেশিত হয় আর সাথে সাথে যে অংশ দূরে সেখানে নেগেটিভ চার্জ জমা হয়। কাগজের টুকরোর পজিটিভ চার্জের অংশটুকু চিরুনির আকর্ষণ অনুভব করে আর কাগজের টুকরোর নেগেটিভ অংশটুকু চিরুনির বিকর্ষণ অনুভব করে। কিন্তু যেহেতু পজিটিভ চার্জের অংশটুকু চিরুনির কাছে তাই আকর্ষণটুকু বিকর্ষণ থেকে বেশি, সেজন্য কাগজের টুকরো আকর্ষিত হয়ে লাফিয়ে চিরুনির কাছে চলে আসে |
এরপর আরো একটা ব্যাপার ঘটে, তোমরা হয়তো নিজেরাই সেটা লক্ষ করেছ। কাগজের যে টুকরোগুলো লাফিয়ে চিরুনির পায়ে লেগে যায় সেগুলো আবার প্রায় সাথে সাথেই চিরুনি থেকে ছিটকে নিচে চলে আসে। (চিত্র10.05)
এর কারণটাও নিশ্চয়ই তোমরা বুঝতে পারছ, কাগজের টুকরোটা যদি আকর্ষিত হয়ে চিরুনির গায়ে লেগে যায় তাহলে সেটার আর আবেশিত থাকতে হয় না। চিরুনির নেগেটিভ চার্জ দিরে এটা নিজেই নেগেটিভ চার্জে ভরে যায়। তখন সেগুলো চিরুনি থেকে বিকর্ষিত হরে ছিটকে নিচে নেমে আসে। যারা বিশ্বাস করো না তারা বিষয়টা একবার পরীক্ষা করে দেখতে পারো।বাতাসে জলীয় বাষ্প থাকলে জমা হওয়া চার্জ মুত হারিয়ে যায়। তাই স্থির বিদ্যুতের এই এক্সপেরিমেন্টগুলো শীতকালে অনেক বেশি ভালো কাজ করে।
এই অধ্যায়ের শুরুতে আমরা তিনটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কথা বলেছিলাম। এতক্ষণে সেগুলো কেন ঘটেছে তোমরা নিশ্চয়ই সেটা বুঝে গেছ। চিরুনির বিষয়টা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ছোট শিশুর হামাগুড়ি দেওয়ার বিষয়টাও বোঝা কঠিন নয়। কার্পেটে ঘবে ঘষে যাবার জন্য তার শরীরে চার্জ জমা হয়, সারা শরীরের সাথে সাথে চুলেও সেই চার্জ ছড়িয়ে পড়ে। সব চুলে একই চার্জ। আমরা জানি এক ধরনের চার্জ বিকর্ষণ করে তাই একটা চুল অন্য চুলকে বিকর্ষণ করে খাড়া হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। এখন আমরা বজ্রপাতের বিষয়টাও ব্যাখ্যা করতে পারব। মেঘের সাথে মেঘের ঘর্ষণে সেখানে চার্জ আলাদা হয়ে যায়। আকাশের মেঘে যখন বিপুল পরিমাণ চার্জ জমা হয় তখন সেটা নিচে বিপরীত চার্জের আবেশ তৈরি করে এবং মাঝে মাঝে সেটা এত বেশি হয় যে বাতাস ভেদ করে সেটা মেঘের সাথে যুক্ত হরে যায়, যেটাকে আমরা বজ্রপাত বলি।(চিত্র10.07)
ইলেকট্রোস্কোপ স্থির বিদ্যুৎ পরীক্ষার জন্য খুব চমৎকার একটা যন্ত্র। যন্ত্রটা খুবই সহজ, এখানে চার্জের অস্তিত্ব বোঝার জন্য রয়েছে খুবই হালকা সোনা, অ্যালুমিনিয়াম বা অন্য কোনো ধাতুর দুটি পাত। এই পাত দুটো একটা সুপরিবাহী দণ্ড দিয়ে একটা ধাতব চাকতির সাথে লাগানো থাকে, পুরোটা একটা অপরিবাহী ছিপি দিয়ে কাচের বোতলের ভেতর রাখা হয়, যেন বাইরে থেকে দেখা যায় কিন্তু বাতাস বা অন্য কিছু যেন পাতলা ধাতব পাত দুটোকে নাড়াচাড়া করতে না পারে।
চার্জ আহিতকরণ
একটা কাচের টুকরোকে সিল্ক দিয়ে ঘষা হলে কাচ দণ্ডটাতে পজিটিভ চার্জ জমা হবে। এখন কাচ দণ্ড যদি ইলেকট্রোস্কোপের ধাতব চাকতিতে ছোঁয়ানো যায় তাহলে সাথে সাথে খানিকটা চার্জ চাকতিতে চলে যাবে। চাকতি যেহেতু ধাতব দণ্ড আর সোনার পাতের সাথে লাগানো আছে, তাই চাটুকু সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়বে। সোনার পাতে যখন একই পজিটিভ চার্জ এসে হাজির হবে আর তখন দেখা যাবে পাত দুটো বিকর্ষণ করে তাদের মাঝে একটা ফাঁক তৈরি হয়েছে।
ঠিক একইভাবে একটা চিরুনিকে যদি ফ্লানেল দিয়ে ঘষা হয় তাহলে চিরুনিটাতে নেগেটিভ চার্জ জমা হবে, এখন সেটা যদি চাকতিতে স্পর্শ করা হয় তাহলে নেগেটিভ চার্জ সোনার পাত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়বে এবং দুটো পাত একটা আরেকটাকে বিকর্ষণ করে ফাঁক হয়ে যাবে।
চার্জের প্রকৃতি বের করা
কোনো একটা বস্তুতে যদি চার্জ জমা হয় তাহলে সেটা কি পজিটিভ নাকি নেগেটিভ চার্জ সেটা ইলেকট্রোস্কোপ দিয়ে বের করা যায় । প্রথমে ইলেকট্রোস্কোপের চাকতিতে পরিচিত কোনো চার্জ
দিতে হবে। ধরা যাক কাচকে সিল্ক দিয়ে ঘষে পজিটিভ চার্জ তৈরি করে আমরা সেটাকে চাকতিতে স্পর্শ করলে যদি সোনার পাত দুটির ফাঁক কমে যায় তাহলে বুঝতে হবে এর মাঝে নেগেটিভ চার্জ। যদি ফাঁকটি আরো বেড়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে চার্জটি নিশ্চয়ই পজিটিভ।
চার্জের আবেশ
কোনো একটা বস্তুতে চার্জ আছে কি না সেটা চাকতিকে স্পর্শ না করেই বোঝা সম্ভব। ধরা যাক পজিটিভ চার্জ আছে এ রকম একটা দণ্ডকে চাকতির কাছে আনা হয়েছে, তাহলে চাকতির মাঝে নেগেটিভ চার্জের আবেশ হবে। এই নেগেটিভ চার্জের আবেশ তৈরি করার জন্য ইলেকট্রোস্কোপের অন্যান্য অংশ থেকে নেগেটিভ চার্জকে চাকতির মাঝে চলে আসতে হবে, সে কারণে সোনার পাত দুটিতেও পজিটিভ চার্জ তৈরি হবে। সেই পজিটিভ চার্জ সোনার পাত দুটোর মাঝে একটা ফাঁক তৈরি করবে।
যদি পজিটিভ চার্জ দেওয়া কোনো কিছু না এনে নেগেটিভ চার্জ দেওয়া কিছু আনি তাহলেও আমরা দেখব সোনার পাত দুটো ফাঁক হয়ে যাচ্ছে, তবে এবারে সেটি হবে সেখানে নেগেটিভ চার্জ জমা হওয়ার কারণে।
আমরা একটু আগেই দেখেছি বিপরীত চার্জ একে অন্যকে আকর্ষণ করে কিন্তু এক ধরনের চার্জ একে অন্যকে বিকর্ষণ করে। তবে আমরা এখনো জানি না ঠিক কতখানি আকর্ষণ কিংবা বিকর্ষণ করে, সেটা বুঝতে হলে আমাদের কুলম্বের সূত্রটি একটুখানি দেখতে হবে। বিজ্ঞানী কুলম্ব দুটি চার্জের মাঝে কতখানি কন কাজ করে সেটা বের করেছিলেন। এ রকম একটা বদের সুত্র আমরা এর মাঝে একটা দেখে ফেলেছি সেটা হচ্ছে নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ বলের সূত্র। সেটি ছিল এ রকম:
মজার ব্যাপার হচ্ছে, স্তর আর কে চার্জ আর দিয়ে পরিবর্তন করে দিলেই আমরা কুলম্বের সূত্র পেয়ে যাব। মাধ্যাকর্ষণ বলের জন্য ধ্রুবটি ছিল G, এবারে ধ্রুবটির জন্য আমরা K ব্যবহার করব এইটুকুই পার্থক্য। অর্থাৎ যদি আর দুটি চার্জ দূরত্বে থাকে তাহলে তাদের ভেতরে বল F এর পরিমাণ:
এখানে আর দুটি চার্জের একক হচ্ছে কুলম্ব C এবং r বা দূরত্বের একক হচ্ছে m, কাজেই k এর একক আমরা বলতে পারি যেন F এর একক হয় N তাহলে কাজেই
কুলম্ব হচ্ছে চার্জের একক, আমরা পরের অধ্যায়েই দেখব চার্জের প্রবাহ হচ্ছে বৈদ্যুতিক প্রবাহ বা কারেন্ট এবং কারেন্টের একক হচ্ছে অ্যাম্পিয়ার। এক সেকেন্ডব্যাপী এক অ্যাম্পিয়ার কারেন্ট প্রবাহ করা হলে যে পরিমাণ চার্জ প্রবাহিত হয় সেটা হচ্ছে এক কুলম্ব (C)। তবে কুলম্ব বোঝার সবচেয়ে খাঁটি পদ্ধতি হচ্ছে ইলেকট্রন বা প্রোটনের চার্জের পরিমাণটি বোঝা। তার পরিমাণ
ইলেকট্রনের চার্জ: C
প্রোটনের চার্জ:C
তোমরা দেখতেই পাচ্ছ এবংদুটিই যদি পজিটিভ বা নেগেটিভ হয় তাহলে F এর মান হবে পজিটিভ এবং তখন একটি অন্যটিকে বিকর্ষণ করে। যদি একটা পজিটিভ আর অন্যটি নেগেটিভ হয় তাহলে F এর মান হবে নেগেটিভ, যার অর্থ বলের দিক পরিবর্তন হলো অর্থাৎ চার্জ দুটি একটা আরেকটিকে আকর্ষণ করবে। আমরা আগেই সেটা দেখেছিলাম, সূত্র থেকেও সেটা আসছে।
দুটি চার্জের ভেতরকার বল আমরা কুলম্বের সূত্র দিয়ে বের করতে পারি। তোমাদের নিশ্চয়ই মনে আছে মাধ্যাকর্ষণ বলের জন্য প্রত্যেকবারই আলাদা করে মহাকর্ষ বল থেকে শুরু না করে আমরা মাধ্যাকর্ষণজনিত ত্বরণ বের করে নিয়েছিলাম। সেটার সঙ্গে ভর গুণ দিলেই বল বের হয়ে যেত।
তড়িৎ বলের বেলাতেও আমরা সেটা করতে পারি, আমরা তড়িৎ ক্ষেত্র বলে একটা নতুন রাশি সংজ্ঞায়িত করতে পারি, তার সাথে চার্জ q গুণ করলেই আমরা সেই চার্জের ওপর আরোপিত বল F পেয়ে যাব। অর্থাৎ যেকোনো চার্জ q তার চারপাশে একটা তড়িৎ ক্ষেত্র তৈরি করে, সেই তড়িৎ ক্ষেত্র E হচ্ছে
এই তড়িৎ ক্ষেত্রে যদি কোনো চার্জ আনা হয় তাহলে চার্জটি F বল অনুভব করবে, আর F বলের পরিমাণ হবে :
বল F যেহেতু ভেক্টর, q যেহেতু স্কেলার তাই E হচ্ছে ভেক্টর এবং তার একক হচ্ছে N/C তোমরা দেখবে তড়িৎ ক্ষেত্র দিয়ে ব্যাখ্যা করা হলে পুরো বিষয়টি বিশ্লেষণ করা অনেক সহজ হয়।
তড়িৎ ক্ষেত্র দেখা যায় না কিন্তু কাউকে বোঝানোর জন্য অনেক সময় তড়িৎ বলরেখা নামে পুরোপুরি কাল্পনিক এক ধরনের রেখা এঁকে দেখানো হয় (মাইকেল ফ্যারাডে প্রথম সেটা করেছিলেন।) আমাদের পরিচিত জগৎ ত্রিমাত্রিক কাজেই বলরেখাগুলো চারদিকেই ছড়িয়ে পড়বে।
বলরেখা আঁকার সময় কিছু নিয়ম মেনে চলা হয়। যেমন:
(a) পজিটিভ চার্জের বেলায় বলরেখা পজিটিভ চার্জ থেকে বের হবে নেগেটিভ চার্জের বেলায় বলরেখা নেগেটিভ চার্জে এসে কেন্দ্রীভূত হবে। একটা নির্দিষ্ট বিন্দুতে বলরেখার দিক হচ্ছে তড়িৎ ক্ষেত্রের দিক ।
(b) চার্জের পরিমাণ যত বেশি হবে বলরেখার সংখ্যা তত বেশি হবে।
(c) বলরেখাগুলো যত কাছাকাছি থাকবে তড়িৎ ক্ষেত্র তত বেশি হবে ।
(d) একটি চার্জের বলরেখা কখনো অন্য চার্জের বলরেখার ওপর দিয়ে যাবে না ।
চিত্র 10.12:(a) বিপরীত এবং (b)সমচার্জের জন্য তৈরি বলরেখা
10.12 a চিত্রটিতে দুটো বিপরীত চার্জের জন্য বলরেখা দেখানো হয়েছে এবং তোমরা দেখতে পাচ্ছ এক চার্জের বলরেখা অন্য চার্জে গিয়ে সমাপ্ত হয়েছে। যেখানে তড়িৎ ক্ষেত্র বেশি সেখানে বলরেখার সংখ্যাও বেশি। শুধু তাই নয় চিত্রটি দেখলে দুটো চার্জ একটা আরেকটাকে টানছে এ রকম একটা অনুভুতি হয়! 10.02 b চিত্রটিতে দুটোই পজিটিভ চার্জ দেখানো হয়েছে এবং চিত্রটি দেখেই দুটো চার্জ একটি আরেকটিকে ঠেলে দিচ্ছে এ রকম অনুভূতি হচ্ছে। শুধু তাই নয় দুটো চার্জের মাঝামাঝি অংশে একটি চার্জের তড়িৎ ক্ষেত্র অন্য চার্জের তড়িৎ ক্ষেত্রকে কাটাকাটি করে ফেলে ফলে সেখানে বলরেখা কম এবং এর মাঝখানে একটি বিন্দু রয়েছে যেখানে তড়িৎ ক্ষেত্রের মান শূন্য। যদি দুটোই নেগেটিভ চার্জ হতো তাহলে শুধু বলরেখার দিক পরিবর্তন হতো, তাছাড়া অন্য সবকিছু আগের মতোই হতো।
তোমাদের নিশ্চয়ই মনে আছে দুটি পাত্রে যদি পানি থাকে এবং একটি নল দিয়ে যদি পানির পাত্র দুটোকে জুড়ে দেওয়া যায় তাহলে যে পাত্রে পানির পৃষ্ঠতল উঁচুতে থাকবে সেখান থেকে অন্য পাত্রে পানি চলে আসবে। কোন পাত্র থেকে কোন পাত্রে পানি আসবে সেটা পানির পরিমাণের ওপর নির্ভর করে না, সেটা নির্ভর করে পানির পৃষ্ঠতলের উচ্চতার উপরে।
ঠিক সে রকমভাবে আমরা দেখেছিলাম ভিন্ন তাপমাত্রায় দুটো পদার্থকে যদি একটার সাথে আরেকটাকে স্পর্শ করানো যায় তাহলে তাপ কোন পদার্থ থেকে কোথায় যাবে সেটা সেই পদার্থের তাপের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে না, সেটা নির্ভর করে তাপমাত্রার ওপর। তাপমাত্রা যার বেশি সেখান থেকে তাপ প্রবাহিত হয় তাপমাত্রা যার কম সেখানে। তাপমাত্রা বেশি হলেও অনেক কম তাপ রয়েছে সেরকম বস্তু থেকেও অনেক বেশি তাপ যেখানে আছে সেখানে প্রবাহিত হতে পারে।
আমরা স্থির বিদ্যুৎ আলোচনা করার সময় বেশ কয়েকবার বলেছি কোনো একটা বস্তুতে চার্জ জমা করে সেটা যদি অন্য কোনো বস্তুতে স্পর্শ করা হয় তাহলে সেখানে চার্জ প্রবাহিত হয়। এখানেও কি পানির পরিমাণ আর পৃষ্ঠদেশের উচ্চতা কিংবা তাপ এবং তাপমাত্রার মতো চার্জ এবং চার্জ মাত্রা বলে কিছু আছে? যেটা ঠিক করবে চার্জ কোন বস্তু থেকে কোন কস্তুতে যাবে? সেটি আসলেই আছে এবং সেটাকে বলা হয় পটেনশিয়াল বা বিভব। যদি দুটো বস্তুর ভেতরে ভিন্ন ভিন্ন চার্জ থাকে এবং দুটোকে স্পর্শ করানো হয় তাহলে যে বস্তুটিতে পটেনশিয়াল বেশি সেখান থেকে কম পটেনশিয়ালে চার্জ প্রবাহিত হবে।
একটা ধাতব গোলকের ব্যাসার্ধ যদি হয় এবং তার ওপর যদি Q চার্জ দেওয়া হয় তাহলে তার পটেনশিয়াল হবে V
এখানে C হচ্ছে গোলকের ধারকত্ব বা Capacitance. গোলাকার ধাতব গোলকের জন্য C এর মান
যেখানে
কাজেই যদি এবংব্যাসার্ধের দুটো ধাত গোলক থাকে এবং দুটো গোলকেই সমান পরিমাণ চার্জ Q দেওয়া হয় তাহলে যে গোলকের ব্যাসার্ধ কম হবে সেখানে পটেনশিয়াল বা বিভব বেশি হবে। যদি একটি তার দিরে দুটো গোলককে জুড়ে দেওয়া হয় তাহলে ছোট গোলক থেকে বড় গোলকে চার্জ যেতে থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত না দুটো গোলকের পটেনশিয়াল সমান হয়।
পটেনশিয়ালের এককটি সম্পর্কে আমরা সবাই পরিচিত, এটা হচ্ছে ভোল্ট। এবারে আমরা জানার চেষ্টা করি পটেনশিয়াল বলতে আমরা আসলে কী বোঝাই।
আমরা বিভব বা পটেনশিয়ালকে পানির পৃষ্ঠের উচ্চতা কিংবা তাপমাত্রার সাথে তুলনা করেছি, চার্জের প্রবাহ কোন দিকে হবে সেটা বোঝার জন্য এই তুলনাটি ঠিক আছে কিন্তু আমরা যদি আক্ষরিকভাবে সেটা বিশ্বাস করে নিই তাহলে কিন্তু হবে না, তার কারণ পটেনশিয়াল বা বিভব কিন্তু আরো অনেক পুরুত্বপূর্ণ একটা রাশি।
যেমন ধরা যাক যদি কোনো একটা ধাতব গোলকে পজিটিভ Q চার্জ দেওয়া হয়েছে তাহলে তার পৃষ্ঠদেশের বিভব বা পটেনশিয়াল হচ্ছে
পৃষ্ঠদেশের বাইরে তার পটেনশিয়াল কত? এটি কিন্তু মোটেও শূন্য নয়। গোলকের চারপাশে কোথায় কত বিভব সেটাও বের করা সম্ভব।
তোমরা জানো একটা গোলকে চার্জ থাকার কারণে তার চারপাশে ইলেকট্রিক ফিল্ড E আছে, কাজেই সেখানে যদি একটা চার্জ q আনা হয় সেই চার্জটি একটা বল F অনুভব করবে যেখানে
যেহেতু গোলকে চার্জ Q পজিটিভ এবং গোলকের বাইরে রাখা q চার্জটাও পজিটিভ কাজেই সেটা বিকর্ষণ অনুভব করবে এবং আমরা যদি q চার্জটাকে ছেড়ে দিই তাহলে সেই বলের জন্য তার ত্বরণ হবে, গতি বাড়বে ইত্যাদি ইত্যাদি। আবার q চার্জটাকে যদি আমরা গোলকের কাছে আনার চেষ্টা করি (কল্পনা করে নাও ধাতব গোলকটা শক্ত করে কোথাও লাগানো q চার্জ সেটাকে ঠেলে সরাতে পারবে না) তাহলে বলের বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে, কাজেই যতই আমরা গোলকের কাছে আনব ততই তার ভেতরে স্থিতি শক্তি হতে থাকবে।
বিভব হচ্ছে একক চার্জকে (অর্থাৎ q এর মান 1) কোনো একটা জায়গায় হাজির করতে (ধরে নাও শুরু করা হচ্ছে অনেক দূর থেকে যেখানে ইলেকট্রিক ফিল্ড খুব কম, কাজেই বল বলতে গেলে নেই) যেটুকু কাজ করতে হয় তার পরিমাণ। আশপাশে যদি কোনো চার্জ না থাকে, তাহলে কোনো ইলেকট্রিক ফিল্ডও থাকবে না, চার্জটা কোনো বলও অনুভব করবে না তাই একক চার্জটাকে আনতে কোনো কাজও করতে হবে না, তাই আমরা বলব কোনো বিভব নেই।
কিন্তু যদি চার্জ থাকে তাহলে একক চার্জটাকে আনতে কাজ করতে হবে এবং ঠিক যেটুকু কাজ করতে হয়েছে তার পরিমাণটা হচ্ছে বিভব। অর্থাৎ q চার্জকে আনতে যদি W কাজ হয় তাহলে বিভব V হচ্ছে
গোলকের চার্জটা যদি নেগেটিভ হয় তাহলে উল্টো ব্যাপার ঘটবে, চার্জটাকে ছেড়ে দিলে সেটা গোলকের চার্জের আকর্ষণে তার দিকে ছুটে যেতে চাইবে। তাই অনেক দূর থেকে এই চার্জটাকে যদি কোনো রকম ত্বরণ তৈরি না করে কোনো বাড়তি গতিশক্তি না দিয়ে ধীরে ধীরে আনতে যাই তাহলেআমরা যেদিকে বল দিচ্ছি তার বিপরীত দিকে চার্জটা যাচ্ছে কাজেই আমাদের দেওয়া বল নেগেটিভ কাজ করছে অর্থাৎ আমরা এই চার্জের খানিকটা শক্তি সরিয়ে নিচ্ছি।
তবে এবারেও বিভব হচ্ছে
শুধু মনে রাখতে হবে W বা কাজ যেহেতু নেগেটিভ ভাই V এর মান নেগেটিভ।
আমরা এতক্ষণ পর্যন্ত যা যা শিখেছি সেগুলো একবার ঝালাই করে নিই:
চার্জ থাকলেই তার আশপাশে যেমন ইলেকট্রিক ফিল্ড থাকে ঠিক সে রকম পটেনশিয়ালও থাকে। সত্যি কথা বলতে কি আমরা যদি পটেনশিয়ালটা কেমনভাবে আছে সেটা জানি তাহলে ইলেকট্রিক ফিল্ডটা বের করে ফেলতে পারব। কেমন করে কোথাও পটেনশিয়াল বের করতে হয়, কেমন করে সেখান থেকে ইলেকট্রিক ফিড বা তড়িৎ ক্ষেত্র বের করতে হয় সেগুলো তোমরা উঁচু ক্লাসে পেলে জানতে পারবে। তবে সাধারণভাবে একটা বিষয় জেনে রাখতে পারো পটেনশিয়ালের পরিবর্তন যত বেশি হয় ইলেকট্রিক ফিল্ডও তত বেশি হয়।
তোমরা সবাই ইলেকট্রিক লাইনের গায়ে নানা রকম সতর্কবাণী দেখেছ, যেমন, “বিপজ্জনক দশ হাজার ভোল্ট।” তোমরা সবাই জানো ইলেকট্রিক শক বলে একটা বিষয় আছে, এটি খুব বিপজ্জনক। অসতর্ক মানুষ ইলেকট্রিক শক খেয়ে মারা গেছে সে রকম উদাহরণও আছে। তোমরা যদি বিভব বিষয়টা বুঝে থাক তাহলে নিশ্চয়ই এখন অনুমান করতে পারছ আসলে কী ঘটে। কোথাও যদি বিভব বা পটেনশিয়াল বেশি থাকে এবং তুমি যদি সেটা স্পর্শ করো, তোমার শরীরের পটেনশিয়াল যেহেতু কম সেজন্য বেশি বিভবের জায়গা থেকে চার্জ তোমার শরীরে চলে আসবে। চার্জের সেই প্রবাহ কতটুকু তার ওপর নির্ভর করে তোমার ভেতরে অনেক কিছু হতে পারে।
তুমি যেটা স্পর্শ করছ তার পটেনশিয়াল পজিটিভ বা নেগেটিভ দুটোই হতে পারে। এক জায়গায় তোমার শরীর থেকে চার্জ (ইলেকট্রন) যাবে অন্য ক্ষেত্রে তোমার শরীরে চার্জ আসবে, দুটোই বিদ্যুৎ প্রবাহ—শুধু দিকটা ভিন্ন ।
তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ চার্জ প্রবাহিত হয় বিভব পার্থক্যের জন্য, বিভবের মানের জন্য নয়। সে কারণে একটা কাক যখন হাইভোল্টেজ ইলেকট্রিক তারের ওপর বসে সে ইলেকট্রিক শক খায় না, কারণ তারের বিভব এবং তার নিজের বিভব সমান, কোনো পার্থক্য নেই। শুধু তাই নয়, দশ হাজার কিংবা বিশ হাজার ভোল্টের প্রচণ্ড উচ্চ ভোল্টেজে কর্মীরা হেলিকপ্টার দিয়ে খালি হাতে কাজ করে। তারা কোনো ইলেকট্রিক শক খায় না। কারণ শূন্যে থাকার কারণে তারা যখন হাইভোল্টেজ তার স্পর্শ করে তাদের শরীরের ভোল্টেজ তারের সমান হয়ে যায়। কোনো পার্থক্য নেই, তাই কোনো চার্জ প্রবাহিত হয় না। তারা ইলেকট্রিক শক খায় না। তার মানে হচ্ছে ভোল্টেজের পার্থক্যটা গুরুত্বপূর্ণ, ভোল্টেজের মান নয়—এটা সবার জানা দরকার।
তারপরও যখন ভোল্টেজের মান মাপতে হয় তখন তার জন্য একটা নির্দিষ্ট ভোল্টেজ থাকলে ভালো। তাপমাত্রার বেলায় একটা পরম শূন্য তাপমাত্রা ছিল, অনেকটা সে রকম। আমাদের জীবনে আমরা পৃথিবীকে শূন্য বিভব ধরে নিই। পৃথিবীটা এত বিশাল যে এর মাঝে খানিকটা চার্জ দিলেও সেটা গ্রহণ করতে পারে তার জন্য তার বিভব বেড়ে যায় না, আবার খানিকটা চার্জ নিয়ে গেলেও তার বিভব কমে যায় না। তাই সেটাকে শূন্য বিভব ধরে সবকিছু তার সাপেক্ষে মাপা হয়। তোমরা নিশ্চয়ই লক্ষ করে থাকবে ভারী বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি সব সময় খুব ভালো করে ভূমির সাথে লাগানো (Earthing) হয়। যার অর্থ কোনো দুর্ঘটনায় হঠাৎ করে কোনো কারণে যদি প্রচুর চার্জ চলে আসে তাহলে সেটা যেন দ্রুত এবং নিরাপদে পৃথিবীর মাটিতে চলে যেতে পারে, যারা আশপাশে আছে তাদের যেন কোনো ক্ষতি না হয়।
কোনো পদার্থে তাপ দেওয়া হলে তার তাপমাত্রা কত বাড়বে সেটা সেই পদার্থের তাপ ধারণ ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে। তাপ ধারণ ক্ষমতা বেশি হলে অনেক তাপ দেওয়া হলেও তাপমাত্রা অল্প একটু বাড়ে, কম হলে অল্প তাপ দেওয়া হলেই অনেকখানি তাপমাত্রা বেড়ে যায়। ঠিক সে রকম কোনো পদার্থে চার্জ দেওয়া হলে তার বিভব কতটুকু বাড়বে সেটা তার ধারকত্বের ওপর নির্ভর করে। কোনো বস্তুর ধারকত্ব বেশি হলে অনেক চার্জ দেওয়া হলেও তার বিভব বাড়বে অল্প একটু, আবার ধারকত্ব কম হলে অল্প চার্জ দিলেই বিভব অনেক বেড়ে যায়। আমরা আগেই বলেছি, কোনো কিছুর ধারকত্ব C হলে সেখানে যদি Q চার্জ দেওয়া হয় তাহলে বিভব হবে
আমরা ইতিমধ্যে দেখেছি । ব্যাসার্ধের ধাতব গোলকের জন্য C হচ্ছে
তবে সবচেয়ে পরিচিত সহজ এবং কার্যকর ধারক তৈরি করা হয় দুটো ধাতব পাত পাশাপাশি রেখে। ধাতব পাতের একটিতে যদি পজিটিভ, অন্যটিতে নেগেটিভ চার্জ রাখা হয় তাহলে দুটি পাতের মাঝখানে ইলেকট্রিক ফিল্ড তৈরি হয় এবং সেই ইলেকট্রিক ফিল্ডে শক্তি সঞ্চিত থাকে। একটা ক্যাপাসিটরের ধারকত্ব যদি C এবং ভোল্টেজ v হয় তাহলে তার ভেতরে যে শক্তি (Energy) জমা থাকে সেটি হচ্ছে
শক্তি
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে, কলকারখানা, ল্যাবরেটরি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল সব জায়গায় বিদ্যুৎ ব্যবহার করি, তবে প্রায় সব জায়গাতেই সেটা হয় চলবিদ্যুৎ (পরের অধ্যায়ে আমরা সেটা দেখব) তবে বিশেষ বিশেষ জায়গাতে এখনো স্থির বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়:
আমরা সবাই কখনো না কখনো কাগজের কোনো লেখার কপি তৈরি করার জন্য ফটোকপি মেশিন ব্যবহার করেছি। এখানে কাগজের লেখার ওপর আলো ফেলে তার একটি প্রতিচ্ছবি একটি বিশেষ ধরনের রোলারে ফেলা হয় এবং সেই রোলারে কাগজের লেখাটির মতো করে স্থির চার্জ তৈরি করা হয়। তারপর এই রোলারটিকে পাউডারের মতো সূক্ষ্ম কালির সংস্পর্শে আনা হলে যেখানে যেখানে চার্জ জমা হয়েছে সেখানে কালো কালি লেগে যায়। তারপর নতুন একটা সাদা কাগজের ওপর ছাপ দিয়ে এই কালিটি বসিয়ে দেওয়া হয়। কালিটি যেন লেপ্টে না যায় সেজন্য তাপ দিয়ে কালিটিকে আরো ভালো করে কাগজে যুক্ত করে প্রক্রিয়াটি শেষ করা হয়।
অত্যন্ত উচ্চ বিভব দিয়ে নানা ধরনের কাজ করা হয়। ভ্যান ডি গ্রাফ মেশিনে সেটি করা সম্ভব হয় স্থির বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। একটি ঘুরন্ত বিদ্যুৎ অপরিবাহী বেন্টে স্থির বিদ্যুৎ স্প্রে করা হয়, বেল্টটি ঘুরিয়ে একটি ধাতব গোলকের ভেতর নেওয়া হয়। বেল্টের ওপর থেকে একটা স্পর্শক এই চার্জটা গ্রহণ করে ধাতব সব সময়ই বেশি থেকে কম বিভবে প্রবাহিত হয়। ভ্যান ডি গ্রাফ জেনারেটরে এটি সব সময় ঘটে থাকে, কারণ ধাতব গোলকের ভেতরে সব সময়ই গোলকের সমান বিভব থাকে। বেল্টের উপরের বাড়তি চার্জটুকুর জন্য যে বাড়তি ভোল্টেজ তৈরি হয় সেটি ভাই সব সময়ই গোলকের ভোল্টেজ থেকে বেশি। সে কারণে গোলকের ভেতরে চার্জ থাকলেই সেটা গোলকপৃষ্ঠে চলে যায়। এভাবে বিশাল পরিমাণ চার্জ জমা করিয়ে অনেক উচ্চ পটেনশিয়াল তৈরি করা সম্ভব।
পেট্রল বা অন্য জ্বালানির ট্রাক যখন তাদের জ্বালানি সরবরাহ করে তখন তাদের খুব সতর্ক থাকতে হয় যেন হঠাৎ করে কোনো বিদ্যুৎ স্ফুলিঙ্গ তৈরি হয়ে বড় কোনো বিস্ফোরণের জন্ম না দেয়। জ্বালানি ট্রাকের চাকার সাথে রাস্তার ঘর্ষণে স্থির বিদ্যুৎ তৈরি হলে এটা ঘটতে পারে, সেজন্য এই ধরনের ট্রাকের পেছনে ট্যাংক থেকে একটা শেকল ঝুলিয়ে দেওয়া হয়, সেটা রাস্তার সাথে ঘষা খেতে থাকে যেন কোনো স্থির বিদ্যুৎ তৈরি হলে সেটা যেন সাথে সাথে মাটিতে চলে যেতে পারে।
শীতপ্রধান দেশে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ খুব কম থাকে এবং সেখানে স্থির বিদ্যুতের প্রভাব অনেক বেশি। ইলেকট্রনিকসের কাজ করার সময় নানা ধরনের আইসি ব্যবহার করতে হয়। কিছু কিছু আইসি (Integrated Circuit) তাদের পিনে অল্প ভোল্টেজের তারতম্যের কারণেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কাজেই ইলেকট্রনিকসের কাজ করার সময় শুধু হাত দিয়ে স্পর্শ করার কারণেই একটি মূল্যবান আইসি কিংবা সার্কিট বোর্ড নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এরকম পরিস্থিতিতে কাজ করার জন্য পুরো টেবিলে উপরের অংশ বিদ্যুৎ পরিবাহী পদার্থ দিয়ে তৈরি ভূমির সাথে সংযুক্ত করে দেওয়া হয়। একই সাথে যে কাজ করে তার হাতেও বিদ্যুৎ পরিবাহী স্ট্র্যাপ দিয়ে ভূমির সাথে সংযুক্ত রাখা হয় ।
আকাশে মেঘ জমা হবার সময় জলীয় বাষ্প যখন উপরে উঠতে থাকে তখন সেই জলীয় বাষ্পের ঘর্ষণের কারণে কিছু ইলেকট্রন আলাদা হয়ে নিচের মেঘগুলোর মাঝে জমা হতে থাকে। তখন স্বাভাবিকভাবেই উপরের মেঘের মাঝে ইলেকট্রন কম পড়ে এবং সেখানে পজিটিভ চার্জ জমা হয়। মেঘের ভেতর যখন প্রচুর চার্জ জমা হয় তখন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার জন্য মেঘের ভেতরে বড় স্পার্ক হয়, যেটাকে আমরা বলি বিজলি চমকানো। মাঝে মাঝে আকাশের মেঘে এত বেশি চার্জ জমা হয় যে সেগুলো বাতাসকে আয়নিত করে আক্ষরিক অর্থে লক্ষ মাইল বেগে মাটিতে নেমে আসে এবং আমরা সেটাকে বলি বজ্রপাত। বজ্রপাতের সময় মেঘ থেকে বিশাল পরিমাণ চার্জ পৃথিবীতে নেমে আসে। বাতাসের ভেতর দিয়ে যাবার সময় সেটা বাতাসকে আয়নিত করে ফেলে, তখন সেখানে প্রচণ্ড তাপ আর আলো আর শব্দ তৈরি হয়ে এই বিশাল পরিমাণ চার্জ যেখানে হাজির হয় সেখানে ভয়ংকর ক্ষতি হতে পারে।
বজ্রপাতের সময় লক্ষ অ্যাম্পিয়ারের মতো বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতে পারে এবং এই বিদ্যুৎ প্রবাহের জন্য বাতাসের তাপমাত্রা 20 থেকে 30 হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উত্তপ্ত হয়ে যায়, যেটা সূর্য পৃষ্ঠের তাপমাত্রা থেকে বেশি।এই তাপমাত্রার কারণে আমরা নীলাভ সাদা আলোর একটা ঝলকানি দেখতে পাই। তাপমাত্রার কারণে আরো একটা ব্যাপার ঘটে, বাতাসটুকু উত্তপ্ত হয়ে ফুলে ফেঁপে উঠে বাইরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং পরের মুহূর্তে বাইরের বাতাস এসে সেই শূন্যস্থান পূরণ করে। পুরো বিষয়টি ঘটে শব্দের গতির চাইতে তাড়াতাড়ি এবং একটি গগনবিদারী শব্দ হয়। বাতাসের গতি শব্দের চাইতে দ্রুত হলে তাকে শকওয়েভ বলে এবং বজ্রপাতের শব্দ একধরনের শকওয়েভ। আলোর ঝলকানি এবং শব্দ একই সাথে তৈরি হলেও আমরা আলোটিকে প্রথম দেখি আলোর গতিবেগ এত বেশি যে সেটা প্রায় সাথে সাথে পৌঁছে যায়। শব্দের গতি 330 m/s এর মতো অর্থাৎ এক কিলোমিটার যেতে প্রায় 3s সময় নেয়। কাজেই আলোর কত সেকেন্ড পর শব্দটা শোনা গেছে সেখান থেকে আমরা বজ্রপাতটা কত দূরে হয়েছে সেটা অনুমান করতে পারি। আনুমানিকভাবে প্রতি তিন সেকেন্ডের জন্য এক কিলোমিটার।
বজ্রপাতের সময় যেহেতু আকাশের মেঘ থেকে বিদ্যুতের প্রবাহ নিচে নেমে আসে তাই এটা সাধারণত উঁচু জিনিসকে সহজে আঘাত করে। তাই বজ্রপাত থেকে রক্ষা করার জন্য উঁচু বিল্ডিংয়ের উপর ধাতব একাধিক সুচালো মুখযুক্ত শলাকা লাগানো হয়। সেটা মোটা বিদ্যুৎ সুপরিবাহী তার দিয়ে মাটির গভীরে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পেছনের বিজ্ঞানটুকু খুবই সহজ। আমরা আগেই দেখেছি চার্জযুক্ত কোনো কিছু চার্জহীন কোনো কিছুর কাছে আনলে সেখানে বিপরীত চার্জ আবেশিত হয়। তাই বজ্রপাত হবার উপক্রম হলে বজ্র শলাকাতে পজিটিভ চার্জ জমা হয় এবং সুচালো শলাকা থাকার কারণে সেখানে তীব্র ইলেকট্রিক ফিল্ড তৈরি করে। সেই ইলেকট্রিক ফিল্ডের কারণে আশপাশে থাকা বাতাস, জলীয় বাষ্প আয়নিত হয়ে যায় এবং আকাশের দিকে উঠে মেঘের নেগেটিভ চার্জকে চার্জহীন করে বজ্রপাতের আশঙ্কাকে কমিয়ে দেয়। অনেক উঁচু বিল্ডিংয়ে যখন বজ্র শলাকা রাখা হয় সেটি প্রায় সময়ই সত্যিকার বজ্রপাত গ্রহণ করে আর বিশাল পরিমাণ চার্জকে সেই দণ্ড নিরাপদে মাটির ভেতরে নিয়ে যায়। আকাশ থেকে নেমে আসা বিদ্যুৎ অনিয়ন্ত্রিতভাবে না গিয়ে এই মোটা তার দিয়ে মাটির গভীরে চলে যাবে।
সুচালো শলাকায় শুধু যে বজ্রপাত হয় তা নয়, এই সুচালো শলাকা দিয়ে বিপরীত চার্জ বের করে মেঘের মাঝে জমে থাকা চার্জকে নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারে। এই কারণে উঁচু বিল্ডিংগুলোতে বজ্রপাত নিরোধক শলাকা লাগানো হলে বজ্রপাতের আশঙ্কা অনেক কমে যায়।
গাড়ি, সাইকেল, স্টিলের আলমারি বা অন্যান্য ধাতব জিনিস রং করার জন্য আজকাল স্থির বৈদ্যুতিক রং স্প্রে ব্যবহার করা হয়। এই স্প্রেগুলোতে রঙের খুবই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা তৈরি করা হয় এবং স্প্রে থেকে বের হওয়ার সময় চার্জযুক্ত হওয়ার কারণে একটি কণা অন্যকে বিকর্ষণ করে ছড়িয়ে পড়ে এবং সে কারণে একটা বড় জায়গাকে খুবই মসৃণভাবে রং করা সম্ভব হয়।
আরও দেখুন...