চতুর্দশ অধ্যায়
স্বর্গ ও নরক
ঈশ্বরের কাছ থেকে আমরা এই পৃথিবীতে এসেছি। তাঁর কাছেই একদিন আমাদের ফিরে যেতে হবে। সেখানে যাওয়ার জন্য আমাদের সবাইকেই মৃত্যুবরণ করতে হবে। এরপর হবে শেষ বিচার। তখন ঈশ্বর সিদ্ধান্ত নেবেন আমাদের কোথায় পাঠাবেন। এই পৃথিবীতে আমাদের বর্তমান জীবনযাপনের ওপর নির্ভর করবে আমরা স্বর্গে যাব নাকি নরকে যাব। স্বর্গ ও নরক সম্বন্ধে আমরা ইতিমধ্যেই একটা ধারণা পেয়েছি। আমরা সকলেই স্বর্গে ঈশ্বরের সাথে চিরদিন সুখে বাস করতে চাই। তাই এখন আমাদের আরও ভালোরূপে জানা দরকার স্বর্গ কী এবং কীভাবে স্বর্গে যাওয়া যায়। আরও জানা দরকার মানুষ কেন নরকে যায় এবং কীভাবে নরকের পথ এড়িয়ে যীশুর পথে চলা যায় ৷
স্বৰ্গ কী
স্বর্গ হলো ঈশ্বরের আবাসস্থল। এটি সর্বোচ্চ সুখময় স্থান। স্বর্গে সাধুসাধ্বীগণ ও স্বর্গদূতবাহিনী, পবিত্র ও ধার্মিক বিশ্বাসীগণ সর্বদা ঈশ্বরকে ঘিরে থাকেন। সেখানে তাঁরা ঈশ্বরের আরাধনা করেন ও চিরকালীন সুখে বাস করেন। কিন্তু স্বর্গটি ঠিক কোন্ স্থানে তা আমরা কেউ বলতে পারি না। আমরা বলি ঈশ্বর যেখানে, সেখানেই স্বর্গ। তথাপি আমরা বিশ্বাস করি, স্বর্গ হলো আমাদের অনেক উপরে, নভোমণ্ডলের ঊর্ধ্বে। কারণ প্রভু যীশু পুনরুত্থান করার পর স্বর্গে আরোহণ করেছেন। একটা মেঘবাহন এসে তাঁকে বহন করে নিয়ে গেছে। তিনি উপরের দিকেই উঠে গিয়েছেন। এই পৃথিবীতে আমরা দৈহিক চোখ দিয়ে ঈশ্বরকে সরাসরি দেখতে পাই না। কিন্তু স্বর্গে আমরা ঈশ্বরকে নিজের চোখে সরাসরি দেখতে পাব। সেখানে আমরা ঈশ্বরের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারব। স্বর্গে আমরা তাঁর রাজত্ব ও গৌরবের অংশীদার হতে পারব। আর আশ্রয় নেব ঈশ্বরের কোলে ।
এ পৃথিবীতেও আমরা অনেক আনন্দ উপভোগ করে থাকি। আমরা ভালো ও মজার মজার খাবার খাই, ভালো পোশাক-পরিচ্ছদ পরি। অনেক আনন্দদায়ক খেলাধুলা করি,মন মাতানো গানবাজনা ও নৃত্য করি। কখনো আবার বনভোজন করি, মজার মজার গল্প পড়ি ও শুনি। টেলিভিশন ও সিনেমা হলে নানা ধরনের নাটক ও চলচ্চিত্র উপভোগ করি। বড়দিন,পাস্কা ও অন্যান্য পর্বে অনেক আনন্দ করি। কিন্তু স্বর্গসুখের তুলনায় এসব জাগতিক সুখ একেবারেই তুচ্ছ ও নগণ্য। স্বর্গে যাওয়ার অর্থ ঈশ্বরের কাছে যাওয়া, তাঁর সঙ্গে থাকা। ঈশ্বর আমাদের সবকিছুর দাতা, আমাদের পালনকর্তা ও রক্ষাকর্তা। তাঁর সাথে আমরা যখন এক হয়ে যেতে পারব, তখন আমাদের আর কোনো দুঃখ-কষ্টই থাকবে না। আমাদের আর কোনোদিন চোখের জল ফেলতে হবে না। স্বর্গে নেই কোনো রাগ, অহংকার, ঝগড়াঝাটি, মারামারি, হিংসাবিদ্বেষ। সেখানে আছে শুধু অনেক অনেক ভালোবাসা ও স্বর্গীয় সুখ। সেখানে আছে শুধু আনন্দ আর আনন্দ। স্বর্গই আমাদের আসল আবাসস্থল। স্বর্গে আমাদের মুক্তিদাতা প্রভু যীশু খ্রিষ্ট এবং পিতা ঈশ্বর থাকেন। সেখানে দূতবাহিনী, সাধুসাধ্বীগণ এবং মা মারীয়া আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন।
স্বর্গে যাওয়ার উপায়
স্বর্গে যাওয়ার অর্থ হলো ঈশ্বরের সাথে মিলিত হওয়া। তাঁর সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য এই পৃথিবীতে আমাদের
ভালো ও পবিত্র জীবন যাপন করতে হবে। ভালো ভালো কাজ করতে হবে। পবিত্র জীবন যাপন করার জন্য আমাদের সামনে ঈশ্বর তাঁর বাণী রেখেছেন। তাঁর আজ্ঞাগুলো আমরা যদি সঠিকভাবে পালন করি, তাঁর প্রিয় পুত্রের দেখানো পথে চলি, তবে আমরা পবিত্র জীবন যাপন করতে পারি। ঈশ্বরের পুত্র যীশু খ্রিষ্টই আমাদের পথ, সত্য ও জীবন। তিনি আমাদের সামনে অষ্টকল্যাণবাণী রেখেছেন। স্বর্গের দরজা ভালোবাসা ও ক্ষমার আদর্শ দেখিয়েছেন। তিনি নানাবিধ শিক্ষার মাধ্যমে আমাদের পরস্পরের সেবা করতে বলেছেন। ক্ষুধার্তকে আহার দান, তৃষ্ণার্তকে পানীয় দান, বস্ত্রহীনকে বস্ত্র দান, অসুস্থকে সেবা, বন্দীকে দেখতে যাওয়া ইত্যাদি উপায়ে আমরা ভালো ভালো কাজ করতে পারি। এগুলো হলো ঈশ্বর ও মানুষের প্রতি আমাদের ভালোবাসার প্রকাশ। প্রভু যীশু এ পৃথিবীতে এসে একটি মণ্ডলী স্থাপন করে গেছেন। তিনি তাঁর আত্মার মাধ্যমে এই মণ্ডলীতে উপস্থিত রয়েছেন। মণ্ডলীর পরিচালকদের তিনি ক্ষমতা দিয়েছেন তাঁর ভক্ত মানুষদের পরিচালনার জন্য। কাজেই মণ্ডলীর পরিচালনা মেনে, সাক্রামেন্তগুলো সঠিকভাবে গ্রহণ করে আমরা পবিত্রতার সাধনা করতে পারি মণ্ডলীর পরিচালনায় আমাদের প্রথমে ভালো মানুষ হতে হবে। এরপর আমাদের ভালো খ্রিষ্টান হতে হবে। আমরা ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করে চলতে থাকব ।
নরক ও নরকে যাওয়ার কারণ নরক হলো অভিশপ্তদের বাসস্থান। যারা মানুষকে ভালোবাসা ও সেবার মধ্য দিয়ে যীশুর প্রতি ভালোবাসা ও সেবা প্রকাশ করে নি তারা নরকে যাবে। যীশু বলেছেন, নরক হলো এমন একটি স্থান যেখানে সর্বদা আগুন জ্বলছে। তাঁর কথানুসারে সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে নরকে নিক্ষিপ্ত হওয়ার চাইতে বরং কোনো কোনো অঙ্গ হারানোই ভালো । মারাত্মক পাপের অবস্থায় যারা মারা যায়, তারা মৃত্যুর পরপরই নরকে যায়। সেখানে তারা নরকের শাস্তি অর্থাৎ এমন আগুনে পুড়তে থাকে যে আগুন কখনো নিভে না। ঈশ্বর ও মানুষের কাছ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখাই নরকে বাস করা। কোনো কোনো মানুষ আছে যারা স্বেচ্ছায় অর্থাৎ জেনেশুনে ভালোবাসার পথ ত্যাগ করে ও ঘৃণার পথ বেছে নেয়। তারা সকলের কাছ থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে রাখে। মৃত্যু পর্যন্ত তারা সেই ভাবেই চলে। এই মানুষেরা মারাত্মক পাপের মধ্যে জীবন যাপন করে। তারাই নরকে যায়। ঈশ্বর কাউকে নরকে যাওয়ার জন্য আগেই ঠিক করে রাখেন না । জীবনের চরম লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য স্বাধীনতার সদ্ব্যবহার করতে হয় ও সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হয়। যারা তা করে না তারাই নরকে যায়।
যীশুর দেখানো পথে চলা
যে কোনো মানুষ মন পরিবর্তন করে ঈশ্বরের ক্ষমা গ্রহণ করলে স্বর্গে যেতে পারবে। যীশু বলেন, “সরু দরজা দিয়ে প্রবেশ কর, কেননা যা সর্বনাশের দিকে নিয়ে যায়, সেই দরজা চওড়া ও প্রশস্ত । কিন্তু যা জীবনের দিকে নিয়ে যায়, সেই দরজা সরু এবং সেই পথ সংকীর্ণ। অল্প মানুষেই সেই পথের সন্ধান পায়” (মথি ৭:১৩-১৪)।
আমাদের মণ্ডলীর শিক্ষা হলো এই যে, আমরা আমাদের মৃত্যুর দিন বা ক্ষণ জানি না। তাই আমাদের প্রভু যীশুর উপদেশ মেনে চলা দরকার। সবসময় সজাগ থাকতে হবে। যাতে যখন আমাদের এই পার্থিব জীবন শেষ হয়ে যাবে, তখন যেন আমরা স্বর্গীয় পিতার কোলে আশ্রয় পাওয়ার যোগ্য হতে পারি। আমরা যেন বাইবেলে উল্লিখিত সেই দুষ্ট ও অলস কর্মচারীর মতো নরকে নিক্ষিপ্ত না হই। কারণ নরকে গেলে সর্বদা আগুনে জ্বলতে হবে। সেখানে থেকে কান্নাকাটি করলেও ঈশ্বর রক্ষা করতে আসবেন না। বরং আমরা যেন নিজ নিজ গুণগুলো ব্যবহার করে ঈশ্বর ও মানুষের সেবা করি। তখন মনিব আমাদেরকে প্রশংসা করবেন ও স্বর্গে যাওয়ার অনুমতি দেবেন।
কী শিখলাম
স্বর্গ হলো ঈশ্বরের আবাসস্থল আর নরক হলো অভিশপ্তদের আবাসস্থল। যারা ঈশ্বর ও মানুষকে ভালোবাসে ও সেবা করে তারা স্বর্গে যাবে। যারা স্বেচ্ছায় ভালোবাসতে ও সেবা করতে অস্বীকার করে ও ঘৃণার মধ্যে বাস করে তারা নরকে যাবে। মারাত্মক পাপের মধ্যে থেকে যারা মৃত্যুবরণ করে তারা নরকে যায়। কিন্তু পাপ থেকে মন ফেরালে স্বর্গে যাওয়া যায়।
পরিকল্পিত কাজ
কী কী ভাবে জীবন যাপন করলে স্বর্গে যাওয়া যায় দলের সকলের সাথে মিলে তার
একটি তালিকা তৈরি কর।
অনুশীলনী
১। শূন্যস্থান পূরণ কর
(ক) আমরা সকলেই------------------ঈশ্বরের সাথে সুখে বাস করতে চাই।
(খ) স্বর্গ হলো ঈশ্বরে-----------------
(গ) আমরা বলি ঈশ্বর যেখানে, সেখানেই-----------------
(ঘ) প্ৰভু যীশু---------------------করার পর স্বর্গে আরোহণ করেছেন।
(ঙ) স্বর্গে যাওয়ার অর্থ হলো----------------------সাথে মিলিত হওয়া।
৩। সঠিক উত্তরটিতে টিক (√) চিহ্ন দাও
৩.১ স্বর্গ কেমন স্থান ?
(ক) সর্বোচ্চ সুখময়
(খ) সুখময়
(গ) দুঃখময়
(ঘ) সর্বোচ্চ দুঃখময়
৩.২ স্বর্গে আমরা কার সৌন্দর্য উপভোগ করব?
(ক) মানুষের
(খ) দিয়াবলের
(গ) ঈশ্বরের
(ঘ) স্বর্গ দূতদের
৩.৩ ঈশ্বর ও মানুষের কাছ থেকে বিছিন্ন করে রাখাই হলো-
(ক) নরক বাস
(খ) স্বর্গবাস
(গ) পৃথিবীর আনন্দ
(ঘ) স্বর্গের আনন্দ
৩.৪ মণ্ডলীর শিক্ষা হলো সব সময়-
(ক) ঘুমিয়ে থাকা (খ) সজাগ থাকা
(গ) উপদেশ না মানা (ঘ) মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া
৩.৫ স্বর্গ সুখের তুলনায় জাগতিক সুখ হলো—
(ক) ভালো ও আনন্দদায়ক
(খ) তুচ্ছ ও ঘৃণ্য
(গ) ভালো ও নগণ্য
(ঘ) তুচ্ছ ও নগণ্য
৪। সংক্ষেপে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও
(ক) যীশুর দেখানো পথ কোনটি?
(খ) পাপ থেকে মন ফেরালে কোথায় যাওয়া যায়?
(গ) আমাদের নিজেদের গুণ ব্যবহার করে আমরা কাদের সেবা করতে পারব?
৫। নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও
(ক) স্বর্গ কী ব্যাখ্যা কর।
(খ) নরকে যাওয়ার কারণ কী?
আরও দেখুন...