স্বাস্থ্য অধিকার চর্চায় সচেতন হই সহজে স্বাস্থ্যসেবা পাই
বন্ধুরা কীভাবে আমরা আমাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারি এবং বিভিন্ন ধরনের রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্ত থেকে সুন্দর জীবন যাপন করতে পারি তা শিখেছি। তারপরেও আমরা জীবনের বিভিন্ন সময়ে অসুস্থ হয়ে যাই এবং স্বাস্থ্যসেবা নিতে চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যসেবা কর্মীর শরণাপন্ন হই। স্বাস্থ্যসেবার বিভিন্ন পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের এবারের শিখন অভিজ্ঞতা এবং এর বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে আমরা হয়ে উঠব খুদে সমাজ সেবা কর্মী। আমরা শুরুতেই স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে গিয়ে আমাদের নিজেদের, পরিবারের অথবা প্রতিবেশীদের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, সেগুলোর তথ্য সংগ্রহ করে উপস্থাপন করব। এখানে আমরা সহপাঠীদের সঙ্গে কীভাবে স্বাস্থ্যসেবা নিতে গিয়ে কারা কেমন সুবিধা পেয়েছে ও অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছে, সুবিধা ও অসুবিধার ধরন, মিল ও অমিল সবার তথ্য থেকে তা বিশ্লেষণ করব, সেটি নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ পাব। এরপর সকলে মিলে তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবায় সেবা গ্রহণকারী ও প্রদানকারীর অধিকার বিষয়ে ধারণা লাভ করব। একটি পর্যায়ে আমরা স্বাস্থ্যসেবার বর্তমান পরিস্থিতি ও সকল অধিকার সবাইকে জানানোর জন্য একটি সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করব। পরবর্তী সময়ে অধিকার রক্ষা ও দায়িত্ব পালনে একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেব। আর এভাবেই আমরা খুদে সমাজ সেবা কর্মী হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করব। চলো তাহলে শুরু করি।
প্রথমেই আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে স্বাস্থ্যসেবা পেতে নিজেদের অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা করেছি। এরপর নিজেদের পরিবারের বা অন্যান্য বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তি, বিভিন্ন লিঙ্গ ও যৌন বৈচিত্র্যের মানুষ, প্রতিবন্ধিতাসম্পন্ন ব্যক্তিরা সেবা গ্রহণ করতে সাধারণত কী ধরনের অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন সে সম্পর্কে বিভিন্ন জনের অভিজ্ঞতা থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছি। সেবা প্রদান করতে সংশ্লিষ্ট পেশাজীবী ও কর্তৃপক্ষ কী ধরনের ইতিবাচক ও নেতিবাচক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন, সে তথ্যও সংগ্রহ করেছি। এরপর সবাই নিজেদের সংগৃহীত তথ্য নিয়ে আলোচনা করে এসব ক্ষেত্রে কী হওয়া উচিত বলে মনে করি, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনাও উপস্থাপন করেছি।
শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণকারী ও প্রদানকারী সাধারণত যে ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন-
| সেবা গ্রহণকারী | সেবা প্রদানকারী |
শারীরিক স্বাস্থ্যসেবা
| ||
মানসিক স্বাস্থ্যসেবা
|
স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া একটি মানবাধিকার। সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থান, লিঙ্গ ও যৌন বৈচিত্র্য ভেদে যেকোনো মানুষের মর্যাদার সঙ্গে তার প্রয়োজন অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। শিশু ও বয়স্ক, প্রতিবন্ধিতা এবং অন্যান্য বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য কিছু কিছু বিশেষ অধিকার রয়েছে। আবার এই স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের কাজে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী ও অন্যদেরও কিছু অধিকার রয়েছে। কখনো কি আমরা এ বিষয়গুলো লক্ষ করেছি? হ্যাঁ, ঠিকই, যখন আমাদের পরিবারের কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ে কিংবা আমরা নিজেরাও যখন স্বাস্থ্যসেবা নিতে চিকিৎসাকেন্দ্রে এবং স্বাস্থ্যকর্মীর কাছে যাই, তখন আমরা এ বিষয়গুলোর মুখোমুখি হই। দৈনন্দিন জীবনে স্বাস্থ্যসেবা নিতে গিয়ে আমরা সাধারণত যেসব অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হই, সেখান থেকে আমরা চিন্তা করতে পারি, এসব অধিকার কীভাবে রক্ষা করা হচ্ছে কিংবা লঙ্ঘিত হচ্ছে, একই সঙ্গে এই অধিকারগুলো রক্ষায় কার কী ভূমিকা রয়েছে বা থাকা দরকার, সেসবও আমরা আলোচনা করব।
দলগত কাজের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণকারী ও প্রদানের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের অধিকার বিষয়ে জেনেছি। শিশু ও বয়স্ক, প্রতিবন্ধী এবং অন্যান্য বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তি, লিঙ্গ ও যৌন বৈচিত্র্যের মানুষদের জন্য বিশেষ কী ধরনের অধিকার রয়েছে, তা-ও জেনেছি। এবার প্রতিটি দলের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে এই তথ্যগুলো অন্যদেরকে জানানোর পালা। তবে তার আগে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে যে তথ্যগুলো জানাতে চাই তা গুছিয়ে নিই।
স্বাস্থ্য অধিকার নিয়ে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণকারী ও প্রদানকারীদের সঙ্গে কথা বললাম। অন্যান্য সূত্র থেকেও স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণকারী ও প্রদানকারীদের অধিকার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করলাম। আমরা কি সবগুলো বিষয় সম্পর্কে আগে থেকেই জানতাম? এমন অনেকেই জানেন না। আর না জানার কারণে অনেকেই যেমন আমরা নিজেদের স্বাস্থ্য অধিকার ভোগ করতে পারি না। আবার মনের অজান্তেই এমন অনেক আচরণ করি যাতে অন্যের স্বাস্থ্য অধিকার লঙ্ঘিত হয়। তাহলে এমন পরিস্থিতিতে কী করতে চাই আমরা? আমরা যখন সেবা গ্রহণকারী ও প্রদানকারীদের কাছ থেকে তাদের অভিজ্ঞতা শুনেছি তখন সবার কাছ থেকে অসুবিধার কথাগুলো শুনেছি। এই অসুবিধাগুলো দূর করতে স্বাস্থ্য অধিকার সম্পর্কে সবার সচেতনতা কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আর এই সচেতনতা তৈরি করতে ভূমিকা রাখতে পারি আমরা। কী করে করব তাহলে? তার জন্য আরেকটু অপেক্ষা। আগে নিজেদের মধ্যে সচেতনতার কাজটি করি। সবাইকে জানানোর জন্য দলগতভাবে একটি প্রেস নোট তৈরি করব; কিন্তু তার আগে অপর পৃষ্ঠার ছকে স্বাস্থ্য অধিকার সম্পর্কে আমাদের প্রাপ্ত তথ্যগুলোকে তুলে ধরব।
এবারে সংবাদ সম্মেলনের জন্য একটি নোট তৈরি করব। এরপর শিক্ষকের পরামর্শ ও সহায়তায় একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করব।
সংবাদ সম্মেলনের জন্য প্রথমে দলগতভাবে একটি নোট তৈরি করলাম এবং শিক্ষককে জমা দিলাম। এরপর আমরা সংবাদ সম্মেলন সম্পন্ন করলাম।
আমরা নিজেরা বা আমাদের পরিবার কিংবা পরিচিতজনদের কখনো স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণকারীর ভূমিকায় পাই, কখনোবা স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর ভূমিকায় দেখতে পেয়ে থাকি। আর তাই স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ ও প্রদানের ক্ষেত্রে আমাদের সবারই সচেতন ভূমিকা থাকা জরুরি। এক্ষেত্রে আমরা কীভাবে আমাদের ভূমিকা নির্ণয় করব?
চলো, বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করে আমাদের ভূমিকাগুলো বা করণীয়গুলো শনাক্ত করি এবং অপর পৃষ্ঠার 'স্বাস্থ্য অধিকার রক্ষায় আমাদের ভূমিকা' ছকে লিখি।
স্বাস্থ্য অধিকার রক্ষায় আমাদের ভূমিকা |
|
স্বাস্থ্যসেবা শুধু কি পেশাজীবী বা প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্ব? নিশ্চয়ই তা নয়। আমাদের প্রায় প্রত্যেকের পরিবারে, প্রতিবেশী বা আত্মীয়দের মধ্যে বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তি আছেন। তাঁদের প্রতি যত্নশীল মনোভাব ও আচরণ করে পরিবারে তাঁদের যত্ন ও স্বাস্থ্য অধিকার রক্ষায় আমরা ভূমিকা রাখতে পারি, তাই না? খুদে সমাজ সেবা কর্মী হিসেবে এ ধরনের ভূমিকা পালনে কী কী করতে চাই, নিচের ছকে লিখি।
পরিবারের অসুস্থ ও বয়স্ক ব্যক্তির পরিচর্যা ও স্বাস্থ্য অধিকার রক্ষায় আমার কাজ |
|
অভিজ্ঞতার শুরুতে আমরা বলেছিলাম, স্বাস্থ্য অধিকার নিয়ে আমরা যা শিখব, সমাজে সচেতনতা বাড়াতে সেসব তথ্য অন্যদেরকেও জানাব। সেভাবেই তো 'খুদে সমাজ সেবা কর্মী'র দায়িত্ব ভালোভাবে সম্পন্ন করতে পারব। তাহলে চলো দলগত আলোচনার মাধ্যমে আমরা সমাজের মানুষকে সচেতন করার জন্য নিজেদের পরিকল্পনা তৈরি করি। আলোচনার বিষয়গুলো হতে পারে কী করতে চাই, কোথায় অর্থাৎ কাদের সচেতন করতে চাই, কী কী পদক্ষেপ নেব এসব নিয়ে। এরপর নিজেদের সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে 'স্বাস্থ্য অধিকার সচেতনতায় আমাদের পরিকল্পনা' ছকটি পূরণ করি।
স্বাস্থ্য অধিকার সচেতনতায় আমাদের পরিকল্পনা
আমাদের পরিকল্পনা | পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আমার কাজ |
|
এই অভিজ্ঞতায় স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে খুদে সমাজসেবা কর্মী হয়ে ওঠার জন্য আমরা বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছি। স্বাস্থ্যসেবা- সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন করে নিজেদের ভূমিকা সম্পর্কে সচেতন হয়ে এবং অন্যদের সচেতন করার জন্য পরিকল্পনাও করেছি। এবার এই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করার পালা। তাহলেই আমরা খুদে সমাজসেবা কর্মী হয়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারব। আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজগুলো সারা বছর ধরে চর্চা করব ও অপর পৃষ্ঠার 'খুদে সমাজসেবা কর্মী হিসেবে আমার কাজ' ছকে লিখে রাখব। শিক্ষকের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় পরপর নিজে থেকে শিক্ষককে দেখিয়ে নেব।
খুদে সমাজসেবা কর্মী হিসেবে আমার কাজ
পরিকল্পনা অনুযায়ী কী কী কাজ করেছি? | কাজগুলো করতে কেমন লেগেছে এবং সুস্বাস্থ্যের চর্চায় তা কীভাবে সাহায্য করছে | কাজগুলো করতে কোনো সমস্যা হয়েছে কি? কীভাবে তা মোকাবিলা করেছি? | কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন আছে কি? থাকলে তা কী ধরনের? |
|
আমার অগ্রগতি, আমার অর্জন
নিচের ছকটি আমার অভিভাবক ও শিক্ষক পূরণ করবেন। আমি নিজেও পূরণ করব। এর মাধ্যমে আমি আমার অগ্রগতি সম্পর্কে জানব, কোথায় আরও ভালো করার সুযোগ আছে তা খুঁজে বের করব। দলগত কাজের অভিজ্ঞতা থেকে আমার অংশগ্রহণের বিষয়ে সহপাঠীদের মতামত জেনে নিয়ে আমি সংশ্লিষ্ট অংশে লিখে নেব। আমার অভিভাবক বইয়ে সম্পাদিত কাজ দেখে মন্তব্য লিখবেন। সমস্ত কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে শিক্ষক আমাকে স্বীকৃতি দেবেন। কী ভালো করেছি, কীভাবে আরও ভালো করতে পারি, সে উপায় জানাবেন।
মূল্যায়ন ছক ১: আমার অংশগ্রহণ ও পাঠ্যপুস্তকে করা কাজ
নিজের মন্তব্য | সহপাঠীর মন্তব্য | অভিভাবকের মন্তব্য | শিক্ষকের মন্তব্য | |
স্বতঃস্ফূর্ত উদ্যোগ গ্রহণশ্রদ্ধাশীল আচরণ
| ||||
শ্রদ্ধাশীল আচরণ
| ||||
সহযোগিতামূলক মনোভাব
| ||||
পাঠ্যপুস্তকে সম্পাদিত কাজের মান
|
মূল্যায়ন ছক ২: স্বাস্থ্য অধিকার রক্ষায় ও সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ
মন্তব্য | বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তির পরিচর্যায় নিজের সহমর্মী ও দায়িত্বশীল মনোভাব এবং ভূমিকা পালন | প্রেস ব্রিফিংয়ের জন্য সক্রিয় ভূমিকা পালন | সচেতনতা বাড়াতে প্রতিবেদন তৈরিতে দক্ষতা ও বিষয়বস্তুর সঠিক ধারণার প্রতিফলন |
নিজের
| |||
সহপাঠীর
| |||
অভিভাবকের
| |||
শিক্ষকের |
আরও দেখুন...