হযরত সুলায়মান (আ) ছিলেন হযরত দাউদ (আ)-এর পুত্র। তিনি নবি ও বাদশাহ ছিলেন। প্যালেস্টাইনে তাঁর রাজত্ব ছিল। ইসরাইলি বাদশাহগণের মধ্যে ক্ষমতায় ও শান শওকতে তিনিই ছিলেন শ্রেষ্ঠ।
তিনি জিন-পরী, পশু-পাখি, গাছপালার ভাষা বুঝতে পারতেন। আল্লাহর আদেশে এসব তাঁর অধীনে ছিল। এমনকি বাতাসও তাঁর অধীনে ছিল। আর আল্লাহর হুকুমে এসব কিছুই তাঁর নির্দেশ মেনে চলত। আল্লাহর রহমতে যাকে যা নির্দেশ দিতেন সে তা পালন করত। এত বড় বাদশাহ হওয়া সত্ত্বেও তাঁর মধ্যে কোনো অহংকার ছিল না।
তিনি আল্লাহর ইবাদত করতেন। তিনি অনেক ক্ষমতা ও শান-শওকতের মধ্যে থেকে ও আল্লাহকে ভুলে যাননি। তিনি বলতেন: “আল্লাহ এক। তাঁর কোন শরিক নেই। তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর। কারো ওপর অন্যায়-অত্যাচার করো না। আল্লাহর শাস্তির ভয় করো।” তিনি সুশাসক ও সুবিচারক ছিলেন।
একটি ঘটনা
একদা দুইজন স্ত্রীলোকের প্রত্যেকেই একটি শিশুকে তার নিজের বলে দাবি করেন। তারা দুইজনে ঝগড়া করতে করতে মীমাংসা করার জন্য হযরত দাউদ (আ)-এর দরবারে উপস্থিত হন। হযরত দাউদ (আ) তাদের দুইজনের বক্তব্য শুনলেন। অতঃপর স্বীয় পুত্র হযরত সুলায়মান (আ) কে এর সুবিচার করে দিতে বললেন। হযরত সুলায়মান (আ) সব কথা শুনে বললেন যে, দুইজনই যখন শিশুটিকে তার নিজের বলে দাবি করছে, তখন এই শিশুটিকে দুখণ্ড করে উভয়ের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া উচিৎ। অতঃপর তিনি শিশুটিকে মাটিতে শুইয়ে দুখণ্ড করার জন্য তলোয়ারটি উঁচু করলেন। এমন সময় একজন মহিলা চিৎকার দিয়ে বললেন, “আমি শিশুটির মা নই। ঐ মহিলাটি শিশুর মা। আপনি তাকেই শিশুটি দিয়ে দিন। দয়া করে শিশুটিকে কাটবেন না।” তখন সুলায়মান (আ) বিচারের রায়ে বললেন: যে মহিলাটি আমাকে হত্যা করতে বাধা দিয়েছেন, তিনিই সত্যিকারের মা। সন্তানের জীবন রক্ষার জন্য তিনি মিথ্যা কথা বলেছেন। তিনি শিশুটিকে তার আসল মাকে দিয়ে দিলেন। আর নকল মাকে শাস্তি দেওয়া হলো। এটি সুবিচারের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
হযরত সুলায়মান (আ) আল্লাহর হুকুমে বৃদ্ধ বয়সে বায়তুল মুকাদ্দাস নির্মাণ করেন। তিনি লাঠিতে ভর করে বায়তুল মুকাদ্দাস নির্মাণ কাজ তদারকি করেন। এ অবস্থায় তাঁর ইন্তিকাল হয়। বায়তুল মুকাদ্দাসের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত তাঁর মৃতদেহটি জীবিত অবস্থায় যেভাবে ছিল সেভাবেই থাকে। নির্মাণ কাজ শেষ হলে তাঁর হাতের লাঠিটা ভেঙে যায়। আর তিনি মাটিতে পড়ে যান। তখন সকলে অবাক হয়। এভাবে আল্লাহর হুকুমে তিনি ইন্তিকাল করেন। আমরা আল্লাহর ইবাদত করব। ন্যায়পরায়ণ ও সৎ হব। আমরা অহংকারী হব না ।
পরিকল্পিত কাজ : শিক্ষার্থীরা হযরত সুলায়মান (আ)-এর সুবিচারের কাহিনীটি খাতায় লিখবে।
আরও দেখুন...