ছক ১.১: হিন্দুধর্ম সম্পর্কিত তথ্য
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
প্রতিটি ধর্মের কিছু মৌলিক বিশ্বাস আছে। এসব বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে ধর্মটি পরিচালিত হয়। ধর্মাবলম্বীরা সেই বিশ্বাসের আলোকে নিজ জীবনের গতিপথ ঠিক করে নেন। হিন্দুধর্মও এর ব্যতিক্রম নয়। সুমহান এই প্রাচীন ধর্মটি হাজার হাজার বছর ধরে মুনি-ঋষিদের সাধনা ও উপলব্ধির ফসল। এখানে যেমন ভিন্ন ভিন্ন পথ ও চিন্তা আছে, তেমনি কিছু কিছু বিষয়ে সবাই একমত হয়েছেন। হিন্দুধর্মের যেসব বিষয়ে সকলে সহমত, সেগুলোই হিন্দুধর্মের মৌলিক বিষয়। এ রকম কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যাক।
বেদের একটি অংশ উপনিষদ। এখানে ব্রহ্ম সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়া হয়েছে। 'ব্রহ্ম' শব্দের অর্থ যা অপেক্ষা বৃহৎ ও ব্যাপক আর কিছু হতে পারে না। তৈত্তিরীয় উপনিষদে উল্লেখ আছে ঋষি ভৃগু পিতা বরুণের কাছে প্রশ্ন করেছিলেন, ব্রহ্ম কী?
উত্তরে পিতা বলেছিলেন, এই ভূতসমূহ (পৃথিবী সৃষ্টির মৌলিক উপাদানকে ভূত বলা হয়) খাঁ থেকে সৃষ্টি হয়েছে, যাঁর দ্বারা টিকে আছে এবং বিনাশের পর যাঁতে লীন হয়ে যায়, তুমি তাঁকে বিশেষরূপে জানতে চাও, তিনিই ব্রহ্ম।
উপনিষদে ব্রহ্ম সম্পর্কে যেসব ধারণা পাওয়া যায়-
১. যিনি সকল জীব ও বস্তুতে ব্যাপ্ত হয়ে আছেন তিনিই ব্রহ্ম। ছান্দোগ্য উপনিষদে বলা হয়েছে 'সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম'। সর্বত্র বিরাজ করছেন ব্রহ্ম। তাঁর থেকে জগতের উৎপত্তি। তাঁতেই জগৎ মিলিয়ে যায়। তাঁতেই জীবিত থাকে।
২. ব্রহ্ম বিভিন্ন রূপে প্রকাশিত হলেও তিনি কিন্তু একই। অর্থাৎ বহুত্বের মধ্যে একত্ব। আগুন এক এক জায়গায় এক এক রূপ ধারণ করে। কিন্তু আগুন তো শেষমেশ আগুনই থেকে যায়।
৩. তিনি জগৎ সৃষ্টি করেছেন। আবার জগতের অভ্যন্তরে থেকেই জগৎকে নিয়ন্ত্রণ করছেন। মাকড়সা যেমন নিজের শরীর থেকেই জাল বোনে আবার সেই জালের মধ্যেই অবস্থান করে।
৪. ব্রহ্ম অমৃত স্বরূপ। তিনি এ পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন অমৃত আস্বাদনের জন্য। রসের আরেক রূপ অমৃত। শ্বেতাশ্বতর উপনিষদে মানুষকে অমৃতের পুত্র বলা হয়েছে। স্বামী বিবেকানন্দ ১৮৯৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে বিশ্ব ধর্মসম্মেলনে বলেছিলেন, 'অমৃতের পুত্র কী মধুর ও আশার নাম! হে ভ্রাতৃগণ, এই মধুর নামে আমি তোমাদের সম্বোধন করিতে চাই। তোমরা অমৃতের অধিকারী। হিন্দুগণ তোমাদিগকে পাপী বলিতে চান না। তোমরা ঈশ্বরের সন্তান, অমৃতের অধিকারী পবিত্র ও পূর্ণ। মর্ত্য- ভূমির দেবতা তোমরা! তোমরা পাপী? মানুষকে পাপী বলাই এক মহাপাপ। মানবের যথার্থ স্বরূপের উপর ইহা মিথ্যা কলঙ্কারোপ।'
৫. ব্রহ্ম রস আস্বাদন করে আনন্দ পান। ব্রহ্মের এ আনন্দ থেকে পঞ্চভূত অর্থাৎ মাটি, জল, আগুন, বাতাস, আকাশ সৃষ্টি হয়েছে। 'ওঁ' শব্দকে ব্রহ্মের প্রতীক বলা হয়।
ব্রহ্মকে বলা হয় ত্রিগুণাতীত। অর্থাৎ তাঁর মধ্যে স্বত্ত্ব (ইতিবাচক), রজঃ (কর্মোদ্যম) এবং তমঃ (নেতিবাচক) এই তিনটি গুণের কোনোটিরই প্রকাশ নেই। তাঁকে কোনো উপাধিতে ভূষিত করা যায় না। এই ব্রহ্মকে 'নিরুপাধিক' ব্রহ্ম বলা হয়। এই রূপে তিনি এক ও অদ্বিতীয়, নিরাকার পরমব্রহ্ম; তিনি অন্তহীন এবং ব্রহ্মান্ডজুড়ে বিরাজমান।
আবার ব্রহ্মের আরও একটি রূপ আছে তার নাম হলো 'সোপাধিক' ব্রহ্ম। এই রূপে তিনি উপাধিযুক্ত। অর্থাৎ তাঁকে বিভিন্ন উপাধিতে ভূষিত করা হয়। যেমন ব্রহ্ম যখন জীবের সকল কাজ পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করেন তখন তাঁকে ঈশ্বর বলা হয়। এখানে 'ঈশ্বর' হলো তাঁর উপাধি। ঈশ্বরকে আমরা ভগবানও বলি। 'ভগ' শব্দের অর্থ- ঐশ্বর্য, বীর্য, যশ, শ্রী, জ্ঞান ও বৈরাগ্য। এই ছয়টি গুণ আছে বলে ঈশ্বরকে ভগবান বলা হয়।
ছক ১.১: ব্রহ্মের ধারণা
| ব্রহ্ম | বাক্য |
১. |
|
|
২. |
|
|
৩. |
|
|
সবাই ছবি দুটো মনোযোগ দিয়ে দেখি। ছবিতে কী বোঝানো হচ্ছে, প্রত্যেকে নিজের মতন করে বলি।
কঠোপনিষদে বলা হয়েছে, রথকে চালানোর জন্য যেমন রথী থাকে, তেমনি মানুষের দেহকে পরিচালনার জন্য যে সত্তা আছে তাই আত্মা। এই আত্মা দুভাবে প্রকাশিত হয়। জীবাত্মা ও পরমাত্মা। ব্রহ্ম হচ্ছেন পরমাত্মা। সেই আত্মারই একটি অংশ আমরা ধারণ করে আছি জীবাত্মা রূপে।
সূর্য যদি পরমাত্মা হয়, আমরা যেন তার এক একটি আলোককণা। পরমাত্মা থেকে যেমন জীবাঝার সৃষ্টি হয়, তেমনি এটি পরমাত্মায় মিলিয়েও যায়। এর ধ্বংস বা বিনাশ নেই। গীতায় আত্মার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, শস্ত্র (এক ধরনের অস্ত্র) একে ছিন্ন করতে পারে না। আগুন একে দগ্ধ করতে পারে না। জলও আর্দ্র করতে পারে না। বায়ু পারে না শুষ্ক করতে।
এই আত্মা এক দেহ থেকে আরেক দেহে স্থানান্তরিত হয়। গীতায় এ সম্পর্কে হয়েছে
বাসাংসি জীর্ণানি যথা বিহায়
নবানি গৃহাতি নরোহপরাণি।
তথা শরীরাণি বিহায় জীর্ণা-
ন্যন্যানি সংযাতি নবানি দেহী। ২/২২
অর্থাৎ, মানুষ যেমন জীর্ণ বস্ত্র পরিত্যাগ করে নতুন বস্ত্র পরিধান করে, আত্মাও তেমনি জীর্ণ দেহ ত্যাগ করে নতুন দেহ ধারণ করে।
মৃত্যুর পর আবার জন্ম নেয়াকে জন্মান্তর বলা হয়। হিন্দুরা বিশ্বাস করে, মৃত্যুর পর গতজন্মের কর্ম অনুসারে - একজন মানুষ নতুন জন্মলাভ করে অথবা মোক্ষলাভ করে।
জন্ম-মৃত্যুর এই চক্রকে ভবচক্র বলা হয়।
মানুষ জন্মলাভ করে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পৃথিবীতে জীবন কাটায়, তারপর মৃত্যুবরণ করে। মৃত্যুর পরে মানুষ মোক্ষলাভ করে অথবা আবার জন্ম নেয়। হিন্দুধর্মে বিশ্বাস করা হয়, জন্ম-মৃত্যুর ভবচক্র থেকে মুক্তি পাওয়া মানুষের প্রধান লক্ষ্য। এই মুক্তিকে বলা হয় মোক্ষ বা নির্বাণ বা অমৃতলাভ। মুক্তিলাভ করলে জীবাত্মা পরমাত্মায় মিশে যায়; দুঃখ জরা গ্লানি আর মানুষকে স্পর্শ করতে পারে না।
মোক্ষলাভ হলে মানুষ কামনা-বাসনা থেকে মুক্তি পায়, নিজের সমস্ত কাজ এবং কাজের ফলাফল ঈশ্বরের প্রতি সমর্পণ করে। পাত্রের জলের যেমন আলাদা অবস্থান থাকে কিন্তু পাত্রকে ভেঙে দিলে সে বৃহৎ জলের সঙ্গে মিশে যায়। তেমনি জীবাত্মাও মোক্ষলাভ করে পরমাত্মায় লীন হয়ে যায়।
কিন্তু মুক্তি লাভের উপায় কী? শ্বেতাশ্বতর উপনিষদে (৩৮) বলা হয়েছে, হে বিশ্বাসী নরনারী ও দিব্যধামবাসী! তোমরা শোনো, আমি অন্ধকারের ওপারে অবস্থিত সেই জ্যোতির্ময় পুরাণ পুরুষকে জেনেছি এবং জেনে মৃত্যুঞ্জয়ী হয়েছি। ইহা ব্যতীত অমৃত লাভের অন্য কোনো উপায় নেই।
জ্যোতির্ময় পুরাণ পুরুষ হচ্ছেন ব্রহ্ম। অর্থাৎ ব্রহ্মকে না জানা পর্যন্ত মুক্তির উপায় নেই।
ব্রহ্মজ্ঞান লাভের উপায় হলো সাধনা। হিন্দুধর্মে সাধনার তিনটি পথের কথা বলা হয়েছে।
বৈরাগ্য সাধনা: কোনোকিছুর প্রতি আসক্ত না হয়ে কেবল ঈশ্বরের সন্তুষ্টির জন্য কাজ করা। যিনি বৈরাগ্য সাধনা করেন তিনি বিশ্বাস করেন, ঈশ্বর আমার সব দায়িত্ব নিয়েছেন, আমার আর ঈশ্বরের সত্তার মাঝে কোনো পার্থক্য নেই।
যোগাভ্যাস: যোগের অভ্যাস হচ্ছে যোগাভ্যাস। যোগ শব্দের অর্থ যুক্ত হওয়া। এখানে যোগাভ্যাস অর্থ পরমেশ্বরের সঙ্গে যুক্ত হওয়া, তাঁর সান্নিধ্যলাভ। যোগের অর্থ পরমেশ্বরের তাঁর সান্নিধ্যলাভ। যোগাভ্যাস করার জন্য কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়- সংযম, নিয়ম, বিভিন্ন আসন, শ্বাসচর্চা, ইন্দ্রিয় নিয়ন্ত্রণ, সুনির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলা ইত্যাদি।
ভক্তি: পরমেশ্বরের প্রতি ভালোবাসাকে ধর্মশাস্ত্রে বলা হয়েছে ভক্তি। আত্মীয়-পরিজনের প্রতি ভালোবাসার ঊর্ধ্বে ভগবানের প্রতি এই ভালোবাসা। ভক্ত এখানে ঈশ্বরকে খুব কাছের এবং আপন বলে ভাবেন। ভাবতে ভাবতে তিনি সবকিছুতে ঈশ্বরের অস্তিত্ব দেখতে পান। নানারকম পূজা-পার্বণ, ধ্যান, মন্ত্র ইত্যাদির সমন্বয়ে এই সাধনপথ তৈরি হয়েছে।
আমরা প্রত্যেকে পুনর্জন্ম অথবা মোক্ষলাভের পক্ষে 'পুনর্জন্ম কিংবা মোক্ষলাভ' ছকে নিজের মতামত লিখি।
ছক ১.৩: হিন্দুধর্ম তথ্য
| পুনর্জন্ম | মোক্ষলাভ |
তুমি কোনটি চাও? (টিক দাও) |
|
|
কেন চাও তা দুটি যুক্তি দিয়ে বোঝাও। |
|
ঈশ্বর তাঁর মহামায়া শক্তিকে অবলম্বন করে সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয়ের জন্য তিনটি রূপ ধারণ করেন- ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব। বিষ্ণু ঈশ্বরের জগৎ-পালক রূপ। জগৎ রক্ষায় বিষ্ণু বিভিন্ন সময়ে মানুষের রূপ ধরে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হন। গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, পৃথিবীতে যখনই ধর্মের অধঃপতন এবং অধর্মের অভ্যুত্থান হয়, তখন আমি দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের জন্য যুগে যুগে অবতীর্ণ হই। ঈশ্বর যখন ধর্ম রক্ষার জন্য দেহধারণ করে পৃথিবীতে আসেন তখন তাঁকে অবতার বলা হয়। 'অবতার' শব্দের অর্থ যিনি নিজের অবস্থান থেকে অবতরণ করেন।
ঈশ্বর নিরাকার। তিনি এক এবং অভিন্ন। বিভিন্ন দেবদেবী ও অবতার নিরাকার ঈশ্বরের বিভিন্ন শক্তির প্রকাশ।
পুরাণে বিষ্ণুর দশ অবতারের কথা বলা হয়েছে। সংক্ষেপে একে দশাবতার বলা হয়।
|
হিন্দুধর্মের প্রধান লক্ষ্য মুক্তি বা মোক্ষলাভ হলেও বাস্তবজীবনের প্রয়োজনকে কখনো অস্বীকার করা হয়নি। বাস্তবজীবনের আরো তিন লক্ষ্য আছে- ধর্ম (ন্যায়পরায়ণতা), অর্থ (ধন-সম্পদ) এবং কাম/ কামনা। এভাবে ধর্ম, আর্থ, কাম ও মোক্ষ এ চারটিকে একসঙ্গে চতুর্বর্গ বলা হয়।
চতুর্বর্গের সঙ্গে সংগতি রেখে জীবনকেও চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ভাগগুলো হলো- ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ্য. বানপ্রস্থ ও সন্ন্যাস। একে সংক্ষেপে চতুরাশ্রম বলা হয়।
ব্রহ্মচর্য: শৈশবে বেদ-বিদ্যা লাভ ও শাস্ত্রের জ্ঞান অর্জনের জন্য গুরুগৃহে যেতে হবে। সেখানে আবাসিক ছাত্র হিসেবে অবস্থান করে, গুরুর ও গুরুমাতার সেবা করে শিক্ষার্থীরা জ্ঞান লাভ করবে। পঁচিশ বছর বয়স পর্যন্ত তারা সেখানে অবস্থান করবে।
গার্হস্থ্য: ব্রহ্মচর্য আশ্রম শেষে বাড়ি ফিরে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে। তারপর শুরু হবে গার্হস্থ্য জীবন। পিতা- মাতার সেবা, পরিবারের প্রতিপালন, আত্মীয়-স্বজন ও অতিথি সেবা, পুত্র-কন্যার শিক্ষাদানের ব্যবস্থা, পূজা- অর্চনা ইত্যাদি করতে হবে।
বানপ্রস্থ: পঁচিশ বছর গার্হস্থ্য জীবন পালনের পর তৃতীয় আশ্রমের শুরু হয়। বানপ্রস্থ আশ্রমের মূল মন্ত্র হলো 'ভোগবর্জিত ত্যাগ'। চিত্তের পরিশুদ্ধির জন্য তীর্থ ও মন্দির পরিদর্শনের মধ্যে দিয়ে এ আশ্রমের সূচনা। সাধনা ও কৃচ্ছু সাধনের জন্য বনে যাত্রা করা কর্তব্য।
সন্ন্যাস: মোক্ষলাভের চূড়ান্ত পর্যায়ে যাওয়ার জন্য সন্ন্যাসজীবনে প্রবেশ করতে হবে। শাস্ত্রানুসারে পঁচিশ বছর বানপ্রস্থ শেষে সন্যাস গ্রহণ করতে হবে। ধ্যান ও প্রাণায়ামের মাধ্যমে আত্মজ্ঞানের অনুশীলন করতে হবে।
কলিযুগে মানুষের আয়ুষ্কাল কম হওয়ায় চতুরাশ্রমের প্রচলন তেমনভাবে নেই।
ছক ১.৫: পুরোনো দিনের কথা
নিয়ম/ প্রথার শিরোনাম | যেভাবে পালন করতেন |
|
|
|
|
|
|
|
|
তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ আমাদের ধর্মে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক নিয়ম ও প্রথার পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের ধর্মের সবচেয়ে সুন্দর দিক এই গতিশীলতা। যুগের সঙ্গে ধর্মের রীতি-নীতি পরিবর্তনের কথা ধর্মেই বলা হয়েছে।
হিন্দুধর্মের গ্রন্থগুলো দুটো ভাগে ভাগ করা হয়। শ্রুতি ও স্মৃতি। শ্রুতি অংশে আছে বেদ। এখানে আত্মার প্রকৃতি, ঈশ্বরের সঙ্গে আত্মার সম্পর্ক, সৃষ্টিতত্ত্ব ইত্যাদি বিষয় রয়েছে। এসব ধারণা চিরন্তনী। পরিবর্তনের সুযোগ নেই।
স্মৃতি অংশে রয়েছে বিভিন্ন স্মৃতিশাস্ত্র, যেমন- পুরাণ। এতে জীবন চলার পথে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা, নিয়ম ও রীতি-নীতি রয়েছে। কিন্তু এক যুগের নিয়ম-কানুন আরেক যুগের নিয়ম-কানুন থেকে ভিন্ন। যুগের সঙ্গে সঙ্গে প্রথা ও নিয়মের পরিবর্তনকে যুগধর্ম বলা হয়।
শাস্ত্রে কোন যুগে কেমন ধর্ম হবে তাও বলা হয়েছে। হিন্দুশাস্ত্রে সৃষ্টির শুরু থেকে আজ পর্যন্ত সময়কালকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সত্যযুগ, ত্রেতাযুগ, দ্বাপরযুগ ও কলিযুগ। সত্যযুগে সবাই সত্য কথা বলত। সৎ পথে চলত। কিন্তু ত্রেতাযুগে তা এক চতুর্থাংশ কমে আসে। পরের দুই যুগেও সমান পরিমাণে কমে আসে। এখন - কলিযুগ চলছে। অর্থাৎ চতুর্থ যুগ। এই যুগের পর সত্য ফুরিয়ে যাবে। আবার নতুন করে সত্যযুগের শুরু হবে। এভাবে যুগচক্র চলবে।
মনুসংহিতায় এক এক যুগে এক একটি কর্মকে শ্রেষ্ঠ ধর্ম বলা হয়েছে-
তপঃ পরং কৃতযুগে ত্রেতায়াং জ্ঞানমুচ্যতে।
দ্বাপরে যজ্ঞমেবাহুর্দানমেকং কলৌ যুগে।।
(মনুসংহিতা, ১।৮৬)
সরলার্থ: সত্যযুগে তপস্যাই মানুষের শ্রেষ্ঠ ধর্ম, ত্রেতাযুগে জ্ঞানই শ্রেষ্ঠ, দ্বাপর যুগে যজ্ঞ এবং কলিতে একমাত্র দানই শ্রেষ্ঠ ধর্ম।
ছক ১.৬: 'জীবনদর্শন' ছক
|
আরও দেখুন...