হ্যাচারির পানি ব্যবস্থাপনা

এসএসসি(ভোকেশনাল) - শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং-২ - দ্বিতীয় পত্র (দশম শ্রেণি) | | NCTB BOOK

বিশুদ্ধ ও জীবাণুমুক্ত পানি একটি গলদা চিংড়ি হ্যাচারির অন্যতম প্রধান উপাদান। তাই পানির গুণাগুণ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত কাজ গলদা চিংড়ি হ্যাচারির অন্যতম প্রধান কাজ হিসেবে স্বীকৃত। হ্যাচারিতে গলদা চিংড়ির পোনা উৎপাদনের কাজে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি বা ব্রাইন এবং স্বাদু পানি উভয়ের প্রয়োজন রয়েছে। অনেক সময়ে প্রকৃতি থেকে সংগৃহীত লবণাক্ত পানি বা ব্রাইন এবং স্বাদু পানির বেশকিছু গুণাগুণ গলদা চিংড়ির পোনা উৎপাদন কাজের অনুকূল থাকে না। তখন উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির মাধ্যমে উক্ত পানি উৎপাদন কাজের অনুকূল করে ব্যবহার করা হয়। এসব ব্যবস্থাপনা কাজকে সামগ্রিকভাবে পানি ব্যবস্থাপনা বলা হয়। গলদা চিংড়ি হ্যাচারিতে পানি ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন বিষয়গুলো নিম্নরূপ:

Content added By

ব্রাইন সংগ্রহ

সাধারণত ৮০ পিপিটি অপেক্ষা অধিক লবণাক্ততা সম্পন্ন সমুদ্রের পানিকে ব্রাইন বলা হয়। সাধারণত সমুদ্রের পানির লবণাক্ততা এ মাত্রা কম থাকে। তাই সাধারণত লবণ চাষের ক্ষেত্র থেকে ব্রাইন সংগ্রহ করা হয়। একটি লবণ ক্ষেত্রকে ৩টি ভাগে ভাগ করা যায়।

১. আধার (Reservoir)

২. ঘনীভবনকারক (Condensor)

৩. ফটিকীকারক (Crystalizer)

গলদা চিংড়ি হ্যাচারি পরিচালনার উদ্দেশ্যে ঘনীভবনকারক ক্ষেত্র থেকে ব্রাইন সংগ্রহ করা হয়। সমুদ্রের পানিকে ঘনীভূত করে লবণ উৎপন করা হয়ে থাকে। ঘনীভবনের সাথে সাথে সাগরের পানি থেকে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন অত্যাবশ্যকীয় ট্রেস লবণ, মাইনর লবণ এবং মেজর লবণের উপস্থিতির পরিমাণ কমতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত সাধারণ লবণ (NaCl) অবশিষ্ট থাকে। তাই এ পানি যত ঘনীভূত হতে থাকে, ততই এর মধ্য থেকে গুরুত্বপূর্ণ ট্রেস লবণের পরিমাণ কমতে থাকে। অথচ গলদা চিংড়ির জীবনচক্রের প্রাথমিক পর্যায়ে এসব ট্রেস লবণের গুরুত্ব রয়েছে। তাই গলদা চিংড়ি হ্যাচারি পরিচালনার কাজে ১০০-১২০ পিপিটি অপেক্ষা বেশি অপরিসীম লবণাক্ততা সম্পন্ন ব্রাইন ব্যবহার করা উচিত নয়।

ব্রাইনের প্রাপ্তিস্থান: চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলা এবং কক্সবাজার জেলার চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী উপজেলায় সমুদ্রের পানিকে ঘনীভূত করে লবণের চাষ করা হয়। তাই এসব উপজেলার মধ্যে যোগাযোগ সুবিধার উপরে নির্ভর করে চকরিয়া বা বাঁশখালী উপজেলার লবণক্ষেত্র থেকে ব্রাইন সংগ্রহ করা যায়। সম্প্রতি সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলাধীন মুন্সীগঞ্জ থেকেও ১০০ পিপিটি ব্রাইন সগ্রহ করা যায়। জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ব্রাইন সংগ্রহের জন্য উপযুক্ত সময়।

স্বাদুপানি সংগ্রহ: গলদা চিংড়ি হ্যাচারি পরিচালনার জন্য ভূগর্ভস্থ পানি উপযুক্ত। কিন্তু মাঝে মাঝে ভূগর্ভস্থ পানির খরতা এবং বিভিন্ন প্রকার ধাতব যৌগের উপস্থিতি ব্যবস্থাপনাযোগ্য পর্যায়ে থাকে না। তখন এ পানি পরিত্যাগ করে ভূপৃষ্ঠের পানিকে উপযুক্ত পদ্ধতিতে শোধন করে হ্যাচারি পরিচালনার কাজে ব্যবহার করা যায়।

ব্রাইন ও স্বাদু পানির গুণাগুণ:

গলদা চিংড়ি হ্যাচারি পরিচালনার উপযোগী ব্রাইন ও স্বাদু পানির কিছু গুরুত্বপূর্ন গুণাগুণ নিচে উল্লেখ করা হলো:

ক্রম গুণাগুণের বিবরণসমুদ্রের পানি/ব্রাইনস্বাদু পানি
০১লবণাক্ততা২৮-৩২% (সমুদ্রের পানি)০.০৫% 
০২তাপমাত্রা২৮-৩২° সেন্টিগ্রেড২৮-৩১° ° সেন্টিগ্রেড
০৩দ্রবীভূত অক্সিজেন>৪ পিপিএম>৪ পিপিএম
০৪পিএইচ৭.৫-৮.২৭.৫-৮.২ 
০৫খরতা (হার্ডনেস)১০০-২০০ পিপিএম৮০-১০০ পিপিএম
০৬অ্যালকালিনিটি১০০-২০০ পিপিএম১৫-১৪০ পিপিএম
০৭লৌহ<০.১ পিপিএম<০.১ পিপিএম
০৮অআয়নিত এ্যামোনিয়া <০.১ পিপিএম<০.১ পিপিএম
০৯নাইট্রেট-নাইট্রোজেন<০.২ পিপিএম<০.২ পিপিএম
১০নাইট্রাইট-নাইট্রোজেন<০.২ পিপিএম<০.২ পিপিএম
১১ক্লোরিন০ ০ 
১২হাইড্রোজেন সালফাইড<০.০০৩ পিপিএম<০.২ পিপিএম
 ভারী ধাতু<০.০০১ পিপিএম<০.১ পিপিএম
Content added By

মিশ্রিত বা অর্ধলবণাক্ত পানি প্রস্তুতকরণ

গলদা চিংড়ি হ্যাচারিতে ব্রাইনের সাথে পরিমাণমত স্বাদুপানি মিশ্রিত করে লার্ভা প্রতিপালন, আর্টিসিয়া হ্যাচিং এবং রুড প্রতিপালনের উপযোগী নির্ধারিত লবণাক্ততা সম্পন্ন পানি প্রস্তুত করা হয়। এ কাজে নিম্নলিখিত সূত্র ব্যবহার করা যেতে পারে।

ব্রাইনের পরিমাণ = মিশ্রিত পানির প্রত্যাশিত লবণাক্ততা × প্রয়োজনীয় মিশ্রিত পানির পরিমাণ = ব্রাইনে লবণাক্ততা।

উদাহরণ: ১
১০০ পিপিটি লবণাক্ততা সম্পন্ন ব্রাইন থেকে ৬ পিপিটি লবণাক্ততা সম্পন্ন ১০ টন পানির প্রস্তুত করার জন্য ব্রাইন প্রয়োজন= ৬ পিপিটি × ১০ টন = ১০০ পিপিটি=০.৬ টন

অতএব স্বাদু পানি প্রয়োজন ১০ টন ০.৬ টন = ৯.৪ টন।

উদাহরণ: ২
১০০ পিপিটি লবণাক্ততা সম্পন্ন ব্রাইন থেকে ১২ পিপিটি লবণাক্ততা সম্পন্ন ১০ টন পানি প্রস্তুত করার জন্য ব্রাইন প্রয়োজন= ১২ পিপিটি × ১০ = ১০০ পিপিটি= ১.২ টন। 

অতএব স্বাদু পানি প্রয়োজন = ১০ টন- ১.২ টন= ৮.৮ টন।

Content added By

মিশ্রিত পানি শোধন

মিশ্রিত পানি থেকে লৌহ দুর করার পাশাপাশি পানিকে জীবাণুমুক্ত করার উদ্দেশ্যে এর সাথে ১৫ পিপিএম মাত্রায় ব্লিচিং পাউডার (৬০-৬৫% সক্রিয় ক্লোরিন উপাদান) প্রয়োগ করতে হবে। ব্লিচিং পাউডারে ক্লোরিনের উপস্থিতির কারণে জীবাণু প্রতিরোধে এর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। আবার ব্লিচিং পাউডার একটি শক্তিশালী অক্সিডাইজিং এজেন্ট (Oxidizing agent) হওয়ায় পানি থেকে লৌহ মুক্তকরণে এর ব্যাপক কার্যকারিতা রয়েছে। ভূ-গর্ভস্থ পানিতে ১৫ পিপিএম মাত্রায় ব্লিচিং পাউডার প্রয়োগ করে উত্তমরূপে বায়ুসঞ্চালন (strong aceration) করা হলে ব্লিচিং পাউডারের হাইপাক্লোরাইডের সাথে পানিতে থাকা লৌহের বিক্রিয়ায় FeCl2 এর ঘন লাল তলানি সৃষ্টি হয়। পরে বায়ু সঞ্চালন বন্ধ করা হলে এ তলানী ধীরে ধীরে তলায় জমা হয় এবং পানি সম্পূর্ণরূপে লৌহমুক্ত হয়ে পড়ে। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে ৩-৫ দিন সময়ের প্রয়োজন হয়। এরূপ পদ্ধতিতে লৌহমুক্ত কারার পরে উৎপাদন কাজে ব্যবহারের পূর্বে পানিতে ক্লোরিনের অনুপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। তাছাড়া এরূপ পদ্ধতিতে লৌহমুক্ত করার পরে পানি উৎপাদন ট্যাংকে সঞ্চালনের পূর্বে অধঃক্ষিপ্ত লাল বর্ণের তলানি যেন কোনোভাবেই ঢুকতে না পারে তা নিশ্চত করা জন্য ট্যাংকে পানির প্রবেশমুখে পলিপ্রোপাইলিনের ব্যাগ-ফিল্টার ব্যবহার করা যেতে পারে।

ক্লোরিনের সংস্পর্শে যেমন বিভিন্ন রোগজীবাণুর মৃত্যু ঘটে, তেমনি পানিতে ক্লোরিনের উপস্থিতির কারণে চিংড়ির ডিম, লার্ভা বা পিএল এমনকি ডিমওয়ালা চিংড়িরও মৃত্যু হতে পারে, ডিমওয়ালা চিংড়ির প্রজনন ক্ষমতা কমে যেতে পারে অথবা হ্যাচিং-এর হার কমে যেতে পারে। তাছাড়া অবশিষ্টাংশের উপস্থিতির কারণে গলদা চিংড়ির লার্ভা বা পিএল বিকলাঙ্গ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই ক্লোরিন মিশ্রিত পানি ব্যবহারের পূর্বে উত্তমরূপে ক্লোরিনযুক্ত করে নেয়া প্রয়োজন। উৎপাদন কাজে ব্যবহারের পূর্বে পানিতে ক্লোরিনের উপস্থিতির মাত্রা পর্যবেক্ষণ করে এর অনুপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে পানিকে ক্লোরিনযুক্ত করা যায়।

বায়ু সঞ্চালনের সাহায্যে ক্লোরিন মুক্তকরণ: ব্লিচিং পাউডার/ক্লোরিন মিশ্রিত পানিতে উচ্চগতিতে বায়ু সঞ্চালন করা হলে প্রাথমিকভাবে পানিতে ক্লোরিনের বিষক্রিয়া দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে বাতাসের অক্সিজেনের সাথে ক্লোরিনের বিক্রিয়ায় পানি ধীরে ধীরে ক্লোরিনযুক্ত হতে থাকে এবং ১-৩ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে ক্লোরিনমুক্ত হয়ে পড়ে।

সূর্যালোকের সাহায্যে ক্লোরিনমুক্তকরণ: প্রখর সূর্যালোকে ক্লোরিনযুক্ত পানির ক্লোরিনের বিষক্রিয়া বৃদ্ধি পেয়ে রোগজীবাণু দ্রুত ধ্বংস হয়। পরবর্তীতে সূর্যালোকের উপস্থিতিতে ক্লোরিন মুক্তকরণের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। সূর্যালোকের উপস্থিতি অপেক্ষা অনুপস্থিতিতে পানি ক্লোরিনমুক্ত হতে অধিক সময়ের প্রয়োজন হয়।

উভয় পদ্ধতির সমন্বয়ের মাধ্যমে ক্লোরিন মুক্তকরণ: ক্লোরিনযুক্ত পানিকে প্রখর সূর্যালোকের নিচে রেখে উত্তমরূপে বায়ু সঞ্চালন করা হলে ক্লোরিনমুক্ত হওয়ার কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। প্রকৃতপক্ষে হ্যাচারিতে এভাবেই ক্লোরিনযুক্ত পানিকে ক্লোরিনযুক্ত করা হয়ে থাকে।

সোডিয়াম থায়োসালফেট ব্যবহারে ক্লোরিন মুক্তকরণ: ক্লোরিনযুক্ত পানিতে সুর্যালাকের উপস্থিতিতে বায়ুসঞ্চালন করে সেখানে উপস্থিত প্রতি ১ পিপিএম ক্লোরিনের জন্য ১ পিপিএম মাত্রায় সোডিয়াম বায়োসালফেট প্রয়োগ করা হলে পানি দ্রুত ক্লোরিনমুক্ত হয়। সোডিয়াম থায়োসালফেট ব্যবহারের ২/৩ ঘন্টার মধ্যেই উক্ত পানিকে উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা যায়। তবে লার্ভা বা পিএল-এর উপরে অতিরিক্ত সোডিয়াম থায়োসালফেটের কিছু ক্ষতিকর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া রয়েছে। তাই সোডিয়াম থায়োসালফেট ব্যবহার কম করাই উত্তম।

Content added By

বালির ফিল্টারের (slow sand filter) সাহায্যে পানিশোধন

বালির ফিল্টার গলদা চিংড়ি হ্যাচারির জন্য অত্যাবশ্যক একটি অংশ। শুধু বালির ফিল্টারের সাহায্যে একটি বাণিজ্যিক চিংড়ি হ্যাচারি পরিচালনা করা সম্ভব। বালির ফিল্টারে ভাইরাস ও কয়েক প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া ছাড়া অন্যান্য সকল প্রকার রোগজীবাণু, প্রোটোজোয়া, অদ্রবণীয় ভারী বা হালকা জৈব ও অজৈব কণা, ফাইটোপ্লাংকটন, জুপ্লাংকটন, সামুদ্রিক প্রাণি বা উদ্ভিদ, এদের ডিম, লার্ভা বা অন্য যে কোনো পর্যায়, বালিকণা, কর্দমরেণু ইত্যাদি আটকে যায়। বালির ফিল্টার স্থাপনের জন্য ১.৫ মিটার উচ্চতার ট্যাংক উপযোগী।

বালির ফিল্টারে প্রধান পরিস্রাবক মাধ্যম হিসেবে চিকন বালি (১০-১৫ মাইক্রন) ও কাঠকয়লা এবং পানি সঞ্চয়ের মাধ্যম হিসেবে মোটা দানার বালি বা সিলেট স্যান্ড ও নুড়ি পাথর ব্যবহার করা যায়। একই ট্যাংকে একটির পরে একটি মাধ্যমের স্তর সাজিয়ে এ ধরনের ফিল্টার গঠন করা যেতে পারে। আবার বৃহদায়তনের হ্যাচারিতে একসাথে প্রচুর পরিশ্রুত পানি সরবরাহের উদ্দেশ্যে সারিবদ্ধ কয়েকটি ট্যাংক ব্যবহার করে বিভিন্ন মাধ্যম পর্যায়ক্রমে সাজানো যেতে পারে। পরিস্রাবক মাধ্যমের স্তর যত বেশি হয়, পানির পরিস্রাবণও তত ভালো হয়। যেভাবেই সাজানো হাকে না কেন, পর পর সাজানো পরিস্রাবক মাধ্যমের মধ্য দিয়ে অত্যন্ত ধীর গতিতে (শুধু মাধ্যাকর্ষণ শক্তির সাহায্যে) পানির প্রবাহ সৃষ্টি করে পরিস্রাবণ করাই হলো এর মূল কর্মপদ্ধতি। এ ফিল্টারে পানি পরিস্রাবণের গতি আরও ধীরে এবং পরিশ্রুত পানির মান অধিকতর নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে পরিস্রাবক মাধ্যম সমূহকে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বিপরীত দিক থেকে সাজিয়ে ব্যাক-ওয়াশের সাহায্যে পানি প্রবাহিত করা যেতে পারে। পরিশ্রুত পানির চাহিদার উপরে নির্ভর করে বালির ফিল্টারের আকার ছোট বা বড় করা যায়। আবার একটি মাত্র ফিল্টারের পরিবর্তে একাধিক ফিল্টার নির্মাণ করে পর্যায়ক্রমে একটির পরে একটি ব্যবহার করা যায়।

নলকূপ থেকে সংগৃহীত ভূগর্ভস্থ পানি পরিস্রাবণের জন্য বালির ফিল্টার ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। স্বাদু পানির উৎস হিসেবে ভূপৃষ্ঠের পানি (নদী, খাল, বিল, পুকুর ইত্যাদি) ব্যবহার করা হলে তা অবশ্যই বালির ফিল্টারের সাহায্যে পরিস্রাবণ করে ব্যবহার করতে হবে।

চিত্র-২-২: বাণির ফিল্টার এর ডায়াগ্রাম

Content added || updated By

ট্রাইটন হাইরেট প্রেসার স্যান্ড ফিল্টার (triton hi-rate pressure sand filter:

এটি একটি বালির ফিস্টার। বর্তুলাকার এফআরপি চ্যাংকের অভ্যন্তরে রক্ষিত বালির মধ্য দিয়ে মানানসই শক্তির পাম্পের সাহায্যে পানি যুক্ত গতিতে প্রবাহিত করে ফিল্টার করা হয়। ২০-৫০ মাইক্রন আকৃতির বালি এ ফিল্টারের একমাত্র পরিধানক মাধ্যম। আকার এবং শক্তির তারতম্যের উপরে নির্ভর করে এ ধরনের ফিস্টারের সাহায্যে প্রতি মিনিটে ২৫০-৫০০ মিটার পর্যন্ত পানি ফিল্টার করা সম্ভব। কিছুটা বড় আকৃতির অদ্রবনীয় পার্টিক্যাল, কিছু কিছু প্রোটোজোয়া, সামুদ্রিক প্লাংকটন, সামুদ্রিক প্রাণির ডিম, লার্ভা, পোনা ইত্যাদি এ ফিল্টারে আটকা পড়ে। কিন্তু ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, অধিকাংশ প্রোটোজোয়া, কিছু কিছু সামুদ্রিক প্লাংকটন এ ফিল্টারে আটকায় না। প্রকৃতপক্ষে এসব ফিল্টার সুইমিং পুলের পানি পরিষ্কার রাখার কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। চিংড়ি হ্যাচারিকে আগে এ ধরনের ফিস্টারের ব্যবহার প্রচলিত থাকলেও বর্তমানে এ প্রবণতা অনেকটা কমে এসেছে । 

চিত্র-২.৩: ট্রাইটন হাইব্রেট প্রেসার ফিল্টার

Content added By

কার্টিজ ফিল্টার (cartridge filter)

হ্যাচারিতে সমুদ্রের পানির মান বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ধীর গতির বাণির ফিল্টার-এর পরে কার্টিজ ফিল্টার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এ ফিল্টারে এফআরণি নির্মিত বাকেটের অভ্যন্তরে ১০-১৫ মাইক্রন আকৃতির কার্টিজ সামগ্রীর সাহায্যে পানি ফিল্টার কোন আকৃতির কার্টিজ সামগ্রীর সাহায্যে পানি ফিল্টার করা হয়। এ ফিল্টারে পানির সর্বোচ্চ ক্লোরেট ৩,৫০০-৪,৫০০ লিটার/মিনিট। কার্টিজ ফিল্টার সাধারণত ওভারহেড ট্যাংকের সাথে ব্যবহার করা হয়। তবে ফ্লোরেট বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে কার্টিজ ফিল্টারের সাথে অনেক সময়ে মানানসই শক্তির পাম্প ব্যবহার করা হয়ে থাকে। 

চিত্র-২.৪: কার্টিজ ফিল্টার

Content added By

ব্যাগ ফিল্টার (bag filter)

পলিয়েস্টার বা অন্যান্য সিনথেটিক ফাইবারের তৈরি (৩০ সেমি৮৫ সেমি) ১-১০ মাইক্রনের ব্যাগ কিন্টার হ্যাচারিতে ব্যবহার করা হয়। সামুদ্রিক ফাইটোপ্লাংকটন বা মুল্লাংকটন, ক্ষুদ্র প্রাণি, ডিম ও লার্জ ভাসমান বালিকণা, কর্ণযন্ত্রে এবং অন্যান্য ভাসমান অদ্রবণীয় পদার্থ ফিল্টার ব্যালে আটকা পড়ে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষুদ্রাকৃতির প্লাংকটন, ক্ষুদ্রাতিক্ষুর বালিকণা, ব্যাকটেরিয়া ও প্রোটোজোয়া এ ব্যালে আটকা পড়ে না। ফিল্টার ব্যাপের ফ্লোরেট খুব কম। হঠাৎ করে পানি প্রবাহের গতি বেড়ে গেলে পিছন দিকের খোলা প্রান্ত দিয়ে ব্যালের ভিতরের পানি বেরিয়ে এসে সম্পূর্ণ পরিশ্রত পানির গুণাগুণ নষ্ট করে দেয়ার আশঙ্কা থাকে। বড় বা মাঝারি আকারের বাণিজ্যিক হ্যাচারিতে ব্যাপকভাবে পানি ফিল্টারের ক্ষেত্রে ফিল্টার ব্যাগ ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে সীমিত আঙ্গিকে আর্টনিয়া হ্যাচিং ট্যাংক, বহিরাঙ্গনে প্লাংকটনের চাষ, নার্সারি বা ভিরালা ট্যাংকে পরিশুদ্ধ পানি প্রবেশ ইত্যাদি কাজে কিপ্টার ব্যাগ ব্যবহার করা যেতে পারে।

চিত্র-২-৫: ব্যাগ ফিল্টার

Content added By
Promotion