তোমরা জান, কোনো একটি পদার্থ এসিড, ক্ষার না নিরপেক্ষ তা নির্দেশক ব্যবহার করে জানা যায়। কিন্তু তাতে কী পরিমাণ এসিড বা ক্ষার আছে, সেটি কীভাবে বুঝা যাবে? সেটি বুঝা যায় pH এর মান পরিমাপ করে। তাহলে এবার আমরা এই pH দিয়ে কী বোঝায় তা জেনে নিই।
নিরপেক্ষ জলীয় প্রবণ বা বিশুদ্ধ পানি যেখানে কোনো এসিড বা ক্ষার থাকে না, তার pH হয় ৭। আর যদি এতে এসিড যোগ করা হয় তাহলে pH এর মান কমে যায়। যত বেশি এসিড যোগ করা যায়, pH এর মান ততই কমে যায়। পক্ষান্তরে যদি বিশুদ্ধ পানি বা নিরপেক্ষ জলীয় দ্রবণে ক্ষার যোগ করা হয়, তাহলে এর pH বাড়তে থাকে। যত বেশি ক্ষার যোগ করা হয়, pH এর মান ততই বাড়তে থাকে ।
চিত্র ৭.০৯: ইউনিভার্সাল নির্দেশক কালার চার্ট
সুতরাং বলা যায়:
কোনো দ্রবণের pH- ৭ হলে তা নিরপেক্ষ জলীয় দ্রবণ বা বিশুদ্ধ পানি হবে।কোনো দ্রবণের pH - ৭ হলে (৭ থেকে কম হলে) তা অগ্নীর বা এসিডীয় প্রবণ হবে। কোনো দ্রবণের pH > ৭ হলে (৭ থেকে বেশি হলে) তা ক্ষারীয় প্রবণ হবে। pH এর মান ৭ থেকে যত বেশি কম হবে, এসিডটি তত শক্তিশালী, আবার pH এর মান ৭ থেকে যত বেশি হবে, ক্ষারকত্বও তত বেশি শক্তিশালী হবে।থেকে শুরু করে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অনেক ব্যবহার্য দ্রব্যসামগ্রী কৃষিকাজের ক্ষেত্রে এমনকি রাসায়নিক শিল্পে pH এর মান জানা এবং নিয়ন্ত্রণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তোমরা কি জান আমাদের ধমনির রক্তের pH কত? আমাদের ধমনির রক্তের pH হলো প্রায় ৭.৪। অর্থাৎ এটি সামান্য ক্ষারধর্মী। এর সামান্য হেরফের হলে (±০.৪) মারাত্মক বিপর্যয়, এমনকি মৃত্যুর কারণও হতে পারে। আবার আমাদের জিহ্বার লালার pH-এর মান ৬.৬-এর কাছাকাছি থাকলে তখন তা সবচেয়ে বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখে। আমাদের পাকস্থলীতে খাদ্য হজম করার জন্য দরকারি pH এর মান হলো ২। এটি যথেষ্ট শক্তিশালী এসিডের পরিমাণ, তবে অবাক হওয়ার কিছু নেই কারণ খাবার হজম করার জন্য আমাদের পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক এসিডের মতো শক্তিশালী এসিড থাকে। এই মান ০.৫-এর মতো হেরফের হলেই তা বদহজম সৃষ্টি করে। আমাদের প্রস্রাবের pH-এর মান ৭-এর কম থাকা স্বাভাবিক ।
মাটির pH সাধারণত ৪ থেকে ৮-এর ভেতর থাকে। অর্থাৎ এটি এসিডিক থেকে শুরু করে ক্ষারীয় হতে পারে। মাটির pH-এর মান ৩-এর কম অর্থাৎ বেশি অম্লীয় (Acidic) হলে মাটির অনেক দরকারি উপাদান যেমন: ক্যালসিয়াম (Ca), ম্যাগনেসিয়াম (Mg) মাটি থেকে চলে যায়। তার ফলে মাটির উর্বরতা কমে যায়। এসিডিক মাটির জন্য ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম যুক্ত সার ব্যবহার করে pH এর মান নিয়ন্ত্রণ করা হয়। অন্যদিকে মাটির খুব ক্ষারীয় হলে অর্থাৎ pH-এর মান ৯.৫-এর বেশি হলেও মাটির উর্বরতা নষ্ট হয়। এক্ষেত্রে Al- (অ্যালুমিনিয়াম আয়ন) সহজেই মাটি থেকে গাছের মূলে চলে যায় এবং এতে গাছের মারাত্মক ক্ষতি হয়। ক্ষারীয় মাটির জন্য নাইট্রেট ও ফসফেট-জাতীয় সার ব্যবহার করে pH-এর মান নিয়ন্ত্রণ করা হয়। অতিরিক্ত এসিড বা ক্ষার অর্থাৎ pH খুব কমে গেলে বা বেড়ে গেলে মাটিতে থাকা উপকারী অনেক অণুজীব মারা যায়, ফলে গাছপালার স্বাভাবিক জৈবিক কার্যকলাপ ব্যাহত হয়।
বাজারে মুখ ধোয়ার জন্য যেসব প্রসাধন সামগ্রী পাওয়া যায়, তাতে লেখা থাকে pH এর মান ৫.৫, এর কারণ কী? এর কারণ আমাদের ত্বক সাধারণত এসিডিক হয় এবং এর pH ৪-৬ এর মধ্যে থাকে। তবে নবজন্ম নেওয়া শিশুদের ত্বকের pH-এর মান ৭ এর কাছাকাছি থাকে। তাই বড়দের জন্য যেসব প্রসাধনী ব্যবহৃত হয়, তা শিশুদের জন্য প্রযোজ্য নয়। এতে শিশুদের ত্বকের ক্ষতি হতে পারে।
বিভিন্ন শিল্প রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় pH নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নানা রকম ঔষধ, কলমের কালি, বেকারিতে, লজেন্স জাতীয় মিষ্টি খাদ্যদ্রব্য, চামড়া প্রস্তুতি ইত্যাদি অনেক ক্ষেত্রে pH এর মান নিয়ন্ত্রণ খুব গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া আলোকচিত্র-সংক্রান্ত রাসায়নিক বিক্রিয়ায়, রং তৈরি ও ব্যবহারে, ধাতব পদার্থের ইলেকট্রোপ্লেটিং এরকম হাজারো ক্ষেত্রে pH এর মান নিয়ন্ত্রণ করে কাজ করা হয়।
কোন মানের pH দ্রবণে কোন বর্ণ ধারণ করবে, তা বোঝার জন্য একটি চার্ট রয়েছে (চিত্র ৭.০৯)। একে ইউনিভার্সাল নির্দেশক কালার চার্ট বলে। কোনো দ্রবণে কয়েক ফোঁটা ইউনিভার্সাল নির্দেশক যোগ করলে দ্রবণ যে বর্ণ ধারণ করে, সেই বর্ণ ইউনিভার্সাল নির্দেশক কালার চার্টের বর্ণের সাথে মিলিয়ে দ্রবণের pH পরিমাপ করা হয়।
Read more