তোমরা কি জান আমরা বাসায় গ্যাসের চুলায় বা সিএনজি (CNG) পাম্প স্টেশন থেকে গাড়িতে যে গ্যাস নিই, তাতে আসলে কী গ্যাস থাকে? এতে থাকে প্রাকৃতিক গ্যাস, যা মূলত মিথেন (CH4) গ্যাস, তবে সামান্য পরিমাণে অন্যান্য পদার্থ যেমন: ইথেন, প্রোপেন এবং বিউটেনও থাকে। এছাড়া এতে অতি সামান্য পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন, হাইড্রোজেন সালফাইড, হাইড্রোজেন, আর্গন এবং হিলিয়াম থাকে।এখন প্রশ্ন হলো, কীভাবে প্রাকৃতিক গ্যাস তৈরি হয়? প্রাকৃতিক গ্যাস কীভাবে তৈরি হয় তা নিয়ে কিছুটা ভিন্ন মত আছে। সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মত অনুযায়ী, প্রাকৃতিক গ্যাস তৈরি হয় মৃত গাছপালা ও প্রাণীদেহ থেকে। লক্ষ লক্ষ বছর আগে মরে যাওয়া গাছপালা ও প্রাণীর পচা দেহাবশেষ কাদা ও পানির সাথে ভূগর্ভে জমা হয়। সময়ের সাথে সাথে এগুলো বিভিন্ন রকম শিলা স্তরে ঢাকা পড়ে। শিলা স্তরের চাপে পচা দেহাবশেষ ঘনীভূত হয় এবং প্রচণ্ড চাপে ও তাপে দেহাবশেষে বিদ্যমান জৈব পদার্থ প্রাকৃতিক গ্যাসে ও পেট্রোলিয়ামে পরিণত হয়। প্রকৃতিতে এভাবে উৎপন্ন গ্যাসের খনিকে আমরা গ্যাসকূপ বলি।
প্রাকৃতিক গ্যাস প্রক্রিয়াকরণ
প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রক্রিয়াকরণ একটি জটিল শিল্পপ্রক্রিয়া, যেটি কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয় (চিত্র ৮.০৩)। সাধারণত যেখানে গ্যাসকূপ পাওয়া যায়, সেখানেই এর প্রক্রিয়াকরণ করা হয়। প্রক্রিয়াকরণ অনেকাংশে নির্ভর করে গ্যাসের গঠন অর্থাৎ এতে বিদ্যমান অন্যান্য পদার্থের উপর। সাধারণত গ্যাসকূপে গ্যাস ও তেল একসাথে থাকে। তাই প্রথমেই ভেলকে গ্যাস থেকে আলাদা করা হয়। এরপর প্রাকৃতিক প্যাসে থাকা বেনজিন ও বিউটেন ঘনীভূত করে আলাদা করা হয়। প্রাকৃতিক গ্যাসে থাকা পানি দূর করার জন্য নিরুদকের মধ্য দিয়ে চালনা করা হয়। অতঃপর গ্যাসে থাকা দূষকগুলো (H2S, CO2) পৃথক করা হয়। এরপর প্রান্ত প্যাসের মিশ্রণ থেকে নাইট্রোজেন আলাদা করা হয়। এই অবস্থায় প্রাপ্ত প্রাকৃতিক প্যাস বিশুদ্ধ মিথেন গ্যাস, যেটি পাইপলাইনের মাধ্যমে সঞ্চালন করা হয়।
ব্যবহার
প্রাকৃতিক গ্যাস আমরা নানা কাজে ব্যবহার করি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ইউরিয়া সার উৎপাদন। শতকরা প্রায় ২১ ভাগ প্রাকৃতিক গ্যাস ইউরিয়া সারের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আমাদের দেশে বেশির ভাগ বিদ্যুৎও উপন্ন করা হয় প্রাকৃতিক গ্যাস দিয়ে। শতকরা প্রায় ৫১ ভাগ প্রাকৃতিক গ্যাসই বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। প্রায় শতকরা ২২ ভাগ প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহৃত হয় শিল্প-কারখানায়, ১১ ভাগ বাসা-বাড়িতে এবং ১১ ভাগ জ্বালানি হিসেবে। এছাড়া প্রায় শতকরা ১ ভাগ প্রাকৃতিক গ্যাস বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে জ্বালানির কাজে ব্যবহৃত হয়। বাকি শতকরা ৫ ভাগ অপচয় (System Loss) হয়। আমাদের দেশে ২০০৩ সাল থেকে যানবাহনে জ্বালানি হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করা শুরু হয়েছে।
সীমাবদ্ধতা ও সংরক্ষণ
তোমাদের কি মনে হয় আমাদের যে প্রাকৃতিক গ্যাস মজুত আছে তা অফুরন্ত? না, মোটেও তা নয় । মজুত প্রাকৃতিক গ্যাসের পরিমাণ নির্দিষ্ট এবং সীমিত। ক্রমাগত ব্যবহারের ফলে একসময় তা শেষ হয়ে যাবে। তাই এই মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারে আমাদের অত্যন্ত সচেতন হতে হবে, কোনোভাবেই এটিকে অপচয় করা যাবে না। অনেকে বাসায় বিনা প্রয়োজনে গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে রাখে এবং এতে অতি মূল্যবান এই সম্পদের অপচয় করে, যা কোনোমতেই সমীচীন নয়। এসব বিষয় নিয়ে সবাইকে যার যার নিজের বাসায় এবং এলাকার সবাইকে সচেতন করতে হবে।
Read more