ক্যাড প্রযুক্তি প্রয়োগের ফলে বর্তমানে ইঞ্জিনিয়ারিং ড্রয়িং এবং ডিজাইনের ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। ড্রয়িং এবং ডিজাইনের ক্ষেত্রে একদিকে যেমন সময়ের সাশ্রয় হয়েছে অন্যদিকে এসব ক্ষেত্রে নির্ভুল নির্ভরতা ও গ্রহনযোগ্যতা বেড়েছে। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ক্ষেত্রে ক্যাড সফটওয়্যারের পাশাপাশি আরও একটি সফটওয়্যার অত্যন্ত জনপ্রিয় তা হল ক্যাম সফটওয়্যার। ক্যাম(CAM)- কম্পিউটার এইডেড ম্যানুফ্যাকচারিং। ক্যাড/ক্যাম এর সংমিশ্রণ এই দুটিক্ষেত্রেই শক্তিশালী কম্পিউটারের প্রয়োজন। ক্যাড সফটওয়্যারটি ডিজাইনার এবং ড্রাফটসম্যানদের সহায়তা করে আর ক্যাম উৎপাদন প্রক্রিয়াজনিত ব্যয় হ্রাস করে।
ক্যাড সফটওয়্যার ব্যবহারের সুবিধা: নিচে ক্যাড সফটওয়্যার ব্যবহারের সুবিধা সমুহ সংক্ষেপে তুলে ধরা হল-
১। ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোডাকটিভিটির বৃদ্ধি ঘটায়
২। লীড সময় হ্রাস করে।
৩। ডিজাইনের নির্ভুলতা বৃদ্ধি করে।
৪। ডিজাইন অধিক স্ট্যান্ডার্ড হয়।
৫। পরিমাপে সঠিকতা বৃদ্ধি পায়।
৬। ডিজাইন ড্রাফটিং এবং ডকুমেনটশন পদ্ধতির প্রমিতকরণ।
এ ছাড়াও অটোক্যাড সফটওয়্যার ইনটেরিয়র ডিজাইনার, গ্রাফিক্স ডিজাইনার, প্রোসেস ড্রাফটার, সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা ব্যাপক ভাবে ব্যবহার করে থাকে। আবার ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে যারা কাজ করেন তাদের মধ্যে ও অনেকেই এই সফটওয়্যারের ব্যবহার করে থাকেন।
অটোক্যাড সফটওয়্যারটি ব্যবহারকারীর অত্যন্ত বন্ধুত্বসুলভ সফটওয়্যার এবং এটি সবার জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ C+ দিয়ে তৈরি। যার সহায়তায় ডিজাইনার ও ইঞ্জিনিয়াররা সহজেই দ্বি-মাত্রিক (2D) এবং ত্রি- মাত্রিক (3D) ডিজাইন তৈরি করতে পারে এবং যে কোনো যন্ত্রের স্থানান্তরযোগ্য পার্টস ডিজাইন করতে পারে। বর্তমানে স্থাপত্য প্রকৌশল শিল্প ও ইঞ্জিনিয়ারিং কাজ এর ক্ষেত্রে অটোক্যাড গুরুত্বপূর্ন স্থান করে নিয়েছে। যারা ইঞ্জিনিয়ারিং ক্যারিয়ার শুরু করছেন বা করবেন অথবা আগে থেকেই এই ক্ষেত্রে আছেন তাদের ইন্জিনিয়ার হিসেবে নিজস্ব কাজের ক্ষেত্রে অবস্থান দৃঢ় করার জন্য অটোক্যাড এর পরিপূর্ন ব্যবহার জানা অবশ্যই জরুরী।
অটোক্যাড ব্যবহারের সুবিধাসমূহ নিম্নে বিষদ ভাবে আলোচনা করা হল-
ডিজাইন করা
ইন্জিনিয়ারিং এর ক্ষেত্রে যে কোনো প্রকার ডিজাইন করা বা প্রটোটাইপিং একটি সময় সাপেক্ষ ও কঠিন বিষয়। অন্যদিকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ক্ষেত্রে বিভিন্ন পার্টসের সমন্বয়ে একটি যন্ত্র তৈরি করতে হয় সেজন্য কাগজে ডিজাইন অনেকটাই জটিল।
অটোক্যাডের সাহায্যে সহজেই ডিজাইনের জটিল বিষয়গুলো পরীক্ষা করে দেখা যায় 2D ও 3D ব্যবহার করে যার, ফলে সত্যিকারের স্থাপনা তৈরির আগেই এর পরিপূর্ন ডিজাইন তৈরি করে নেওয়া যায় এবং ডিজাইনের পরিমাপও ঠিক পাওয়া যায়। অটোক্যাড ব্যবহার করে সহজেই ডিজাইনের ভুল বের করা যায়।
অর্থের সাশ্রয়
ইন্জিনিয়ারিং কাজের ক্ষেত্রে ডিজাইন সহ বিভীন্ন প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, বাস্তবে অনেক ব্যয়বহুল সত্যিকারের স্থাপনা বা যন্ত্রপাতির ওপর পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়। যা অটোক্যাড ব্যবহার করে নিমিষেই সমাধান করা সম্ভব এর ফলে সহজেই একজন ডিজাইনার তার ডিজাইনের বিভিন্ন অংশ পরিবর্তন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পরেন। এতে যেমন তার ডিজাইনের নতুনত্ব আসে তেমনি অর্থেরও সাশ্রয় হয়।
সময়ের অপচয়
কম বাস্তবে সত্যিকার নমুনা বা প্রটোটাইপ তৈরি করতে অনেক সময়ের প্রয়োজন কিন্তু অটোক্যাড ব্যবহার করে অতি অল্প সময়েই যে কোনো কিছুরই নমুনা ডিজাইন তৈরি করে ফেলা যায় এবং ডিজাইনটির বিভিন্ন প্রয়োজনীয় দিক পরিবর্তন খুব সহজেই ও দ্রুততার সাথে করে ফেলা যায়। যা ডিজাইনারদের অনেক মূল্যবান সময় বাঁচাতে সাহায্য করে।
কমিউনিকেশন ও একত্রীকরণ
ডিজিটাল ফরম্যাট এ ডিজাইনকৃত মডেল সংরক্ষন করে একাধিক ইঞ্জিনিয়ার একটি ডিজাইন এর ওপর কাজ করে ডিজাইনটিকে পরিপূর্ন করতে পারে এবং অন্য যে কোনো ব্যক্তির কাছেও সহজেই তা পাঠাতে পারে। বিশ্বায়নের এই যুগে অটোক্যাড এর মাধ্যমে একজন ডিজাইনার সহজেই অন্য ডিজাইনারের সাথে তার ডিজাইনটির বিভিন্ন অংশ নিয়ে আলোচনা করতে পারে এবং বিভিন্ন ধারনার সমন্বয়ে একটি পরিপূর্ন ডিজাইন তৈরি করা অনেক সহজ হয়।
নিজেদের সুবিধার জন্যই ইঞ্জিনিয়ার ও ডিজাইনারদের অটোক্যাড শেখা উচিৎ। আমাদের দেশে কাজের পাশাপাশি অটোক্যাডের মাধ্যমে বহির্বিশ্বেও ইঞ্জিনিয়ার ও ডিজাইনারদের কাজের অনেক সুযোগ রয়েছে।
আরও দেখুন...