উপযোগ, চাহিদা, যোগান ও ভারসাম্য

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - অর্থনীতি - NCTB BOOK

এ অধ্যায়ে ধনতান্ত্রিক বা বাজারব্যবস্থার অধীনে উপযোগ, ভোগ, মোট উপযোগ ও প্রান্তিক উপযোগ, ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উপযোগ বিধি, চাহিদা, যোগান, বাজার চাহিদা, বাজার যোগান রেখা ও ভারসাম্য দাম নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে ।

এই অধ্যায় পাঠশেষে আমরা-
উপযোগের ধারণা বর্ণনা করতে পারব
উপযোগ, ভোগ ও ভোক্তার মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করতে পারব
মোট উপযোগ যে প্রান্তিক উপযোগের সমষ্টি তা প্রমাণ করতে পারব
ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উপযোগ বিধি চিত্র সহকারে ব্যাখ্যা করতে পারব
দাম ও চাহিদার পরিমাণের সম্পর্ক ব্যাখ্যা করতে পারব
দাম ও যোগানের পরিমাণের সম্পর্ক ব্যাখ্যা করতে পারব
ভারসাম্য দাম ও পরিমাণ নির্ণয় করতে পারব ।

দাম ও যোগানের সম্পর্ক
দাম ও চাহিদার সম্পর্ক
দাম ও উপযোগের সম্পর্ক
দাম কোনটিই না

উপযোগ, ভোগ ও ভোক্তা (Utility, Consumption and Consumer )

উপযোগ : ব্যক্তির বেঁচে থাকার জন্য অনেক দ্রব্য-সামগ্রীর প্রয়োজন হয় । খাবার সামগ্রী, পরিধানের সামগ্রীসহ অনেক কিছুরই প্রয়োজন হয় । এগুলো না থাকলে আমরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারি না। যেমন-খাদ্য, বস্ত্র, বইপত্র, ডাক্তারের সেবা প্রভৃতি দ্রব্য ও সেবা ব্যক্তি মানুষের অভাব মেটায়। অতএব,অর্থনীতিতে উপযোগ বলতে কোনো দ্রব্যের বা সেবার দ্বারা ব্যক্তির অভাব পূরণের ক্ষমতাকে বোঝানো হয়। উপযোগ একটি ব্যক্তিগত মানসিক ধারণা ।


ভোগ : প্রতিদিন আমরা ভাত, মাছ, কলম, ঘড়ি, জামা-কাপড় ব্যবহার করি বা এগুলো আমরা ভোগ করি । এখানে ভোগ বলতে কিন্তু এগুলো নিঃশেষ করাকে বোঝায় না। কেননা আমরা কোনো জিনিস ধ্বংস বা নিঃশেষ করতে পারি না। আমরা শুধু দ্রব্যগুলো ব্যবহারের দ্বারা এর উপযোগ গ্রহণ করতে পারি । খেয়াল রাখতে হবে, অভাব মোচন ছাড়া অন্য কোনোভাবে দ্রব্যের উপযোগ ধ্বংস করা হলে তাকে ভোগ বলা হবে না। যেমন: আগুনে আমার কাপড় পুড়ে ছাই হয়ে গেল। অতএব, অর্থনীতিতে মানুষের অভাব পূরণের জন্য কোনো দ্রব্যের উপযোগ নিঃশেষ করাকে ভোগ বলা হয় ।


ভোক্তা : যে ব্যক্তি ভোগ করে তাকে আমরা ভোক্তা বলি। বাজার অর্থনীতিতে কোনো অবাধ সহজলভ্য দ্রব্য ছাড়া অন্য সব দ্রব্য ভোগ করার জন্য যে ব্যক্তি অর্থ ব্যয় করতে প্রস্তুত থাকে, তাকে ভোক্তা বলা হয় ।

মোট উপযোগ ও প্রান্তিক উপযোগ (Total Utility and Marginal Utility)

মোট উপযোগ
বাজারে গিয়ে তুমি খাওয়ার জন্য একাধিক আম কিনতে চাও । একটি নির্দিষ্ট সময়ে ১ম আমটি কিনতে তুমি যে টাকা ব্যয় কর ২য়, ৩য় বা ৪র্থ বার আম ক্রয় করতে তা কর না । কারণ ১ম আমটি ভোগ করার পর তোমার আম খাওয়ার অভাব অনেকটা পূরণ হয়ে যায়। ২য় বার আমের প্রতি তোমার আকাঙ্ক্ষা বা আগ্রহ কমে যায় । ৩য়, ৪র্থ আমের ক্ষেত্রে আগ্রহ আরও কমবে। এমন হতে পারে যে, তুমি আর আম কিনবে না । কারণ আম খাওয়ার প্রতি সে সময়ে তোমার আর কোনো আগ্রহ থাকে না বা তোমার কাছে অতিরিক্ত আমের উপযোগ শূন্য । আম ক্রয় করতে তোমাকে টাকা ব্যয় করতে হয় । ধরি, ১ম আমটি তুমি কিনলে ৫ টাকায়, ২য় আমটি কিনতে তুমি ৪ টাকা দিতে রাজি থাকো, ৩য় আমের জন্য ৩ টাকা দিতে চাও এবং ৪র্থ আমের জন্য ২ টাকা । এভাবে (৫ + 4 + 3 + 2) 1 = ১৪ টাকা দিয়ে তুমি ৪টি আম কিনলে । টাকাকে উপযোগের মাপকাঠি ধরলে এখানে ৪টি আমের মোট উপযোগ ১৪ । অতএব, কোনো নির্দিষ্ট সময়ে একটি দ্রব্যের বিভিন্ন একক থেকে প্রাপ্ত তৃপ্তির সমষ্টিকে মোট উপযোগ বলে । যেহেতু অতিরিক্ত আম থেকে ক্রমান্বয়ে কম তৃপ্তি পাওয়া যায়, সেহেতু ভোগের পরিমাণ বাড়ার সাথে সাথে মোট উপযোগ ক্রমহ্রাসমান হারে বাড়ে ।

প্রান্তিক উপযোগ
মনে কর তুমি ৩টি আম কিনেছ । এখন তুমি আবার আরেকটি আম কিনলে । এই অতিরিক্ত ৪র্থ আমটি হলো প্রান্তিক আম । এই প্রান্তিক আম থেকে তুমি যে তৃপ্তি বা উপযোগ পেলে, তাই প্রান্তিক উপযোগ । এই আম কিনতে তুমি ২ টাকা ব্যয় করলে এখানে প্রান্তিক উপযোগ হবে ২ টাকার সমান । অর্থাৎ অতিরিক্ত এক একক দ্রব্য বা সেবা ভোগ করে যে অতিরিক্ত উপযোগ বা তৃপ্তি পাওয়া যায়,তাকে প্রান্তিক উপযোগ বলে ।

 

উপরের সূচিতে দেখা যায়, ১ম আমের দাম যখন ৫ টাকা প্রান্তিক উপযোগ তখন ৫ টাকা । ২য় আম কেনায় ১ম ও ২য় আমের ব্যয় ৯ টাকা। দুটি আম থেকে প্রাপ্ত মোট উপযোগ ৯ টাকা। ২য় আম থেকে প্রাপ্ত প্রান্তিক উপযোগ ৪ টাকা । এভাবে ৪টি আম থেকে প্রাপ্ত উপযোগ ১৪ । ৪র্থ আমের প্রান্তিক উপযোগ ২ । এভাবে আমের বিভিন্ন একক থেকে প্রান্তিক উপযোগ যথাক্রমে ৫, ৪, ৩, ২, ১, ০ ও ১ টাকা । ৬ষ্ঠ আমটির তোমার কাছে কোনো উপযোগ না থাকায় তুমি তা কিনবে না । আর ৭ম আমটি কিনলে তোমার মোট উপযোগ তখন কমে যাবে, যেহেতু ৭ম আমের প্রান্তিক উপযোগ ঋণাত্মক ।

Content updated By

ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উপযোগ বিধি (Law of Diminishing Marginal Utility)

উপরের উদাহরণ থেকে দেখা যাচ্ছে, তুমি বারবার একই আম খেলে আমের প্রতি তোমার আগ্রহ কমতে থাকে এবং উপযোগও কমে । উপযোগ কমে বলেই তুমি অতিরিক্ত একক আমের জন্য কম দাম দিতে চাও । ৩০নং পৃষ্ঠার সূচিতে দেখা যায়, ৬ষ্ঠ আমের জন্য প্রান্তিক উপযোগ শূন্য (Zero) এবং ৭ম আমের প্রান্তিক উপযোগ ঋণাত্মক (Negative)। অর্থাৎ একই জিনিস বারবার ভোগ করলে অতিরিক্ত এককের উপযোগ ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে । সুতরাং ভোক্তা কোনো একটি দ্রব্য যত বেশি ভোগ করে, তার কাছে ঐ দ্রব্যের প্রান্তিক উপযোগ তত কমে যেতে থাকে । ভোগের মোট পরিমাণ বৃদ্ধির ফলে প্রান্তিক উপযোগ কমে যাওয়ার এ প্রবণতাকে ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উপযোগ বিধি বলে ।
ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উপযোগ বিধিটি কিছু শর্ত মেনে চলে । তা হলো ক) ভোক্তা হবে স্বাভাবিক বিচারবুদ্ধি সম্পন্ন; খ) ভোক্তা চাইলে দ্রব্যের উপযোগ অর্থ দিয়ে পরিমাপ করতে পারে; গ) দ্রব্যের দাম প্রান্তিক উপযোগের সমান হবে; ঘ) দ্রব্যটি ভোগ করার সময় ভোক্তার আয়, রুচি এবং পছন্দের পরিবর্তন হবে না । ঙ) নির্দিষ্ট সময় বিবেচ্য।


রেখাচিত্রের সাহায্যে ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উপযোগ বিধিটির ব্যাখ্যা ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উপযোগ বিধিটি রেখাচিত্রের সাহায্যে দেখানো যায়। নিচের চিত্রে ভূমি অক্ষে বা OX অক্ষে আমের পরিমাপ এবং লম্ব অক্ষে বা OY অক্ষে প্রান্তিক উপযোগ ও দাম দেখানো হয়েছে।



চিত্রে তুমি ১ম আম থেকে aai পরিমাণ উপযোগ তথা প্রান্তিক উপযোগ লাভ কর এবং ১ম আমের জন্য ৫ টাকা দাম দাও । ভোগ বাড়ার সাথে সাথে ২য়, ৩য়, ৪র্থ এবং ৫ম আম থেকে তুমি যথাক্রমে bb, cc 1, dd₁ এবং ee 1 পরিমাণ প্রান্তিক উপযোগ লাভ কর । অর্থাৎ ভোগ বাড়ার সাথে সাথে তুমি ২য় আমের জন্য ৪ টাকা, ৩য় আমের জন্য ৩ টাকা, ৪র্থ আমের জন্য ২ টাকা, ৫ম আমের জন্য ১ টাকা দিতে রাজি থাকো । ৬ষ্ঠ আমের প্রান্তিক উপযোগ শূন্য এবং ৭ম আমের প্রান্তিক উপযোগ ঋণাত্মক অর্থাৎ -১.০০ টাকা । ভূমি অক্ষ রেখার f বিন্দু শূন্য প্রান্তিক উপযোগ নির্দেশ করে । ৭ম আমের প্রান্তিক উপযোগ ঋণাত্মক (-১ টাকা) বিধায় g8, তা নির্দেশ করে । এখানে ee,

Content updated By

আমরা দৈনন্দিন জীবনে অনেক কিছু পেতে চাই । গাড়ি, সুন্দর বাড়ি, উন্নত খাবার ইত্যাদি । আমাদের সব আকাঙ্ক্ষা কিন্তু চাহিদা নয় । অর্থনীতিতে চাহিদা হতে হলে তিনটি শর্ত পূরণ করতে হয় । যেমন- ১. কোনো দ্রব্য পাওয়ার ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষা, ২. ক্রয়ের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সামর্থ্য, এবং ৩. অর্থ ব্যয় করে দ্রব্যটি ক্রয়ের ইচ্ছা। সুতরাং ক্রেতার একটি পণ্য নির্দিষ্ট সময়ে কেনার আকাঙ্ক্ষা, সামর্থ্য এবং নির্দিষ্ট মূল্যে দ্রব্যটি ক্রয় করার ইচ্ছা থাকলে তাকে অর্থনীতিতে চাহিদা (Demand) বলে ।


চাহিদা বিধি


তোমার মা তোমার বাবাকে বাজার থেকে ইলিশ মাছ আনতে বললেন । বাজার থেকে এসে তোমার বাবা বিরক্তির সাথে বললেন, ইলিশ মাছের দাম বেশি তাই কেনা সম্ভব নয়। অর্থাৎ দাম বেড়ে যাওয়ায় তোমার বাবার কাছে ইলিশ মাছের চাহিদা নেই বা কমে গেছে । আবার একদিন তোমার বাবা হঠাৎ দুটি ইলিশ মাছ নিয়ে বাড়ি এলেন এবং হাসিমুখে বললেন আজকে ইলিশ মাছের দাম কম, তাই দুটি মাছ নিয়ে এলাম ৷ অর্থাৎ চাহিদার সাথে দামের একটি ঘনিষ্ঠ বিপরীত সম্পর্ক রয়েছে ।
অতএব চাহিদা বিধি বা সূত্র বলতে আমরা বুঝি “অন্যান্য অবস্থা অপরিবর্তিত থেকে কোনো নির্দিষ্ট সময়ে পণ্যের দাম কমলে তার চাহিদার পরিমাণ বাড়ে এবং দাম বাড়লে চাহিদার পরিমাণ কমে।” [দাম (1) - চাহিদা (↓) আবার দাম (↓)-চাহিদা (1)]। দামের সাথে চাহিদার এরূপ বিপরীত সম্পর্ককে চাহিদা বিধি বলে । অন্যান্য অবস্থা অপরিবর্তিত বলতে এখানে বোঝানো হচ্ছে, ক্রেতার রুচি, অভ্যাস ও পছন্দের কোনো পরিবর্তন হবে না এবং ক্রেতার আয় ও বিকল্প দ্রব্যের দাম অপরিবর্তিত থাকবে ইত্যাদি ।

চাহিদা সূচি থেকে চাহিদা রেখা অঙ্কন
চাহিদা বিধিতে আমরা দেখেছি দামের সাথে চাহিদার বিপরীত সম্পর্ক বিদ্যমান । অর্থাৎ দ্রব্যের দাম বাড়লে চাহিদার পরিমাণ কমে, আবার দ্রব্যের দাম কমলে চাহিদার পরিমাণ বাড়ে। এ ধারণাটি যখন সূচির মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়, তখন তাকে চাহিদা সূচি বলে । অতএব, বলা যায় একটি নির্দিষ্ট সময়ে বিভিন্ন দামে কোনো দ্রব্যের যে বিভিন্ন পরিমাণ চাহিদা হয়,তা যে তালিকার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়,তাকে চাহিদা সূচি বা চাহিদা তালিকা বলে ।



চাহিদার পরিমাণ (একক)সূচিতে দেখা যায়, কোনো দ্রব্যের প্রতি এককের দাম ৮ টাকা হলে একজন ভোক্তা ৪ একক দ্রব্য ক্রয় করে । দাম কমে ৬ টাকা, ৪ টাকা ও ২ টাকা হলে চাহিদা বেড়ে যথাক্রমে ৮ একক, ১২ একক ও ১৬ একক হয় । এভাবে চাহিদা সূচির মাধ্যমে দাম ও চাহিদার মধ্যে বিপরীত সম্পর্ক দেখানো হয়েছে ।
উপরের এ চাহিদা সূচি থেকে আমরা চাহিদা রেখা অঙ্কন করতে পারি ।


৩৩ নং পৃষ্ঠার রেখাচিত্রে ভূমি অক্ষে বা OX অক্ষে চাহিদার পরিমাণ ও লম্ব অক্ষে বা OY অক্ষে দ্রব্যের দাম দেখানো হয়েছে । দ্রব্যের দাম যখন ৮ টাকা তখন চাহিদার পরিমাণ ৪ একক। এখন OY অক্ষের ৮ সূচক এবং OX অক্ষের ৪ সূচক বিন্দু থেকে দুটি লম্ব অঙ্কন করলে তারা পরস্পর Q বিন্দুতে মিলিত হয়। এভাবে R, S ও T বিন্দুতে যথাক্রমে ৬ টাকায় ৮ একক, ৪ টাকায় ১২ একক এবং ২ টাকায় ১৬ একক দ্রব্যের পরিমাণ নির্দেশ করা হয়েছে । এবার Q, R, S ও T বিন্দুগুলোকে যোগ করলে আমরা DD রেখা পাব। এই DD রেখাই চাহিদা রেখা । DD চাহিদা রেখার বিন্দুগুলো দ্রব্যের বিভিন্ন দামে চাহিদার বিভিন্ন পরিমাণ নির্দেশ করছে ।
এভাবে আমরা চাহিদা বিধি অনুযায়ী চাহিদা সূচি থেকে চাহিদা রেখা অঙ্কন করতে পারি । উল্লেখ্য, আমরা এখানে স্বাভাবিক দ্রব্যের চাহিদা রেখা অঙ্কন করেছি ।

Content updated By

বাজার চাহিদা রেখা অঙ্কন

একজন ব্যক্তির চাহিদা সূচি থেকে ব্যক্তিগত চাহিদা রেখা অঙ্কন করা যায় । তেমনি বাজার চাহিদা রেখাও অঙ্কন করা সম্ভব । বাজারে নির্দিষ্ট দামে সব ভোক্তার ব্যক্তিগত বা ভিন্ন ভিন্ন পরিমাণ চাহিদার সমষ্টিকে বলা হয় বাজার চাহিদা । আমরা বোঝার সুবিধার্থে ধরে নেব একটি বাজারে ভোক্তার সংখ্যা হলো দুজন । নিচে দুজন ভোক্তার ব্যক্তিগত চাহিদা সূচি থেকে চাহিদা রেখার মাধ্যমে বাজার চাহিদা রেখা অঙ্কন করা হলো:



উপরের সূচিতে দ্রব্যের বিভিন্ন দামে ১ম ও ২য় ভোক্তার চাহিদা দেখানো হয়েছে। এ দুজন ভোক্তার ব্যক্তিগত চাহিদা সূচি থেকে কীভাবে বাজার চাহিদা সূচি তৈরি করা হয়েছে, তা দেখানো হলো ।
বাজারে কোনো দ্রব্য বিভিন্ন দামে বিভিন্ন ব্যক্তি যে পরিমাণ ক্রয় করতে ইচ্ছুক বা প্রস্তুত থাকে তার সমষ্টিকে যে চাহিদা রেখার সাহায্যে দেখানো হয়, তাকে বলা হয় বাজার চাহিদা রেখা ।
১ম ও ২য় ভোক্তার চাহিদা রেখা পাশাপাশি যোগ করে বাজার চাহিদা রেখা অঙ্কন করা যায় ।

উপযোগ, চাহিদা, যোগান ও ভারসাম্য


উপরের রেখাচিত্রে বাজারের ১ম ও ২য় ভোক্তার ব্যক্তিগত চাহিদা রেখা হলো যথাক্রমে D, D, ও D2D2 । দ্রব্যের দাম যখন ৬ টাকা তখন ১ম ও ২য় ভোক্তার চাহিদার পরিমাণ যথাক্রমে ৫ কুইন্টাল ও ১০ কুইন্টাল এবং বাজার চাহিদা হবে (৫ কুইন্টাল + ১০ কুইন্টাল) বা ১৫ কুইন্টাল; যা বাজার চাহিদা রেখায় R বিন্দুতে দেখানো হয়েছে । দাম কমে ৪ টাকা ও ২ টাকা হওয়ায় ১ম ও ২য় ভোক্তার ব্যক্তিগত চাহিদা যথাক্রমে (১০ কুইন্টাল + ১৫ কুইন্টাল) বা ২৫ কুইন্টাল এবং (১৫ কুইন্টাল + ২০ কুইন্টাল) বা ৩৫ কুইন্টাল, যা বাজার চাহিদা রেখায় S ও T বিন্দু দ্বারা নির্দেশ করা হয়েছে । এবার আমরা R, S ও T বিন্দু যোগ করে DD চাহিদা রেখা অঙ্কন করি । এটি বাজার চাহিদা রেখা হিসেবে পরিচিত ।

Content updated By

বাজারে গেলে আমরা দেখবো বিক্রয়ের জন্য বিভিন্ন দ্রব্য নিয়ে বিক্রেতাগণ দোকান সাজিয়ে রেখেছেন । তবে আমরা এটাকেই যোগান বা সরবরাহ বলবো না। অর্থনীতিতে যোগান বলতে একজন বিক্রেতা কোনো একটি দ্রব্যের যে পরিমাণ একটি নির্দিষ্ট সময়ে এবং একটি নির্দিষ্ট দামে বিক্রয় করতে ইচ্ছুক থাকে তাকে যোগান বলে। উল্লেখ্য- একটি দ্রব্য, একটি নির্দিষ্ট সময় ও একটি নির্দিষ্ট দাম এখানে বিবেচ্য । অতএব, উৎপাদক বা বিক্রেতা বিভিন্ন দামে দ্রব্যের যে বিভিন্ন পরিমাণ বিক্রয় করতে ইচ্ছুক, তাকেই অর্থনীতিতে যোগান (Supply) বলে ।


যোগান বিধি


আমরা প্রতিনিয়ত বাজারে জিনিসপত্র ক্রয়-বিক্রয় করে থাকি । একজন বিক্রেতা কখন তার দ্রব্যটি বিক্রয় করতে আগ্রহী হবেন? অবশ্যই ঐ দ্রব্যের দাম যখন বাজারে সবচেয়ে বেশি,তখনই একজন বিক্রেতা তার পণ্য বিক্রয় করতে চাইবেন । ধরি, আলুর কেজি যখন ১৫ টাকা, তখন বিক্রেতা ২ কুইন্টাল আলু বিক্রয় করে । দাম বেড়ে ২০ টাকা কেজি হলে বিক্রেতা বেশি পরিমাণে আলু সরবরাহ করতে চায় । মনে করি, তখন সরবরাহ হবে ৩০ কুইন্টাল । অর্থাৎ দ্রব্যের দাম বৃদ্ধির সাথে সাথে দ্রব্যের যোগানের পরিমাণ বাড়ে এবং দাম কমার সাথে সাথে দ্রব্যের যোগানের পরিমাণ কমে যায় । অতএব দাম ও যোগানের সম্পর্ক সমমুখী ।

দাম যেদিকে পরিবর্তিত হয়, যোগানও সেদিকে পরিবর্তিত হয় । অর্থাৎ অন্যান্য অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলে (যেমন, উপকরণ দাম ও প্রযুক্তি স্থির, স্বাভাবিক সময় বিবেচিত), দাম বৃদ্ধি পেলে যোগানের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং দাম হ্রাস পেলে যোগানের পরিমাণ হ্রাস পায় । অর্থাৎ দামের সঙ্গে যোগানের এরূপ প্রত্যক্ষ সম্পর্ককে যোগান বিধি বলে ৷
যোগান সূচি থেকে যোগান রেখা অঙ্কন
দ্রব্যের দাম বাড়লে যোগানের পরিমাণ বাড়ে, দাম কমলে যোগানের পরিমাণ কমে । দাম পরিবর্তনের ফলে যোগানের এ সমমুখী পরিবর্তনকে যোগান সূচিতে দেখানো যায় ।
যোগান সূচির একদিকে দ্রব্যের দাম এবং অন্যদিকে দ্রব্যের যোগানের পরিমাণ দেখানো হলো ।


যোগান সূচি

যোগান রেখা

প্রতি একক দ্রব্যের দাম (টাকা) যোগানের পরিমাণ (কুইন্টাল)
১০.০০ টাকা ১০ কুইন্টাল
২০.০০ টাকা ২০ কুইন্টাল
৩০.০০ টাকা ৩০ কুইন্টাল
৪০.০০ টাকা ৪০ কুইন্টাল



সূচিতে দেখা যায়, কোনো দ্রব্যের প্রতি কুইন্টালের দাম ১০ টাকা হলে তার যোগান হয় ১০ কুইন্টাল । দাম বেড়ে ২০ টাকা, ৩০ টাকা ও ৪০ টাকা হলে যোগানের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে ২০ কুইন্টাল, ৩০ কুইন্টাল ও ৪০ কুইন্টাল । এভাবে যোগান সূচিতে যোগান বিধি প্রতিফলিত হয় ।

যোগান রেখা

কোনো দ্রব্যের দাম বাড়লে যোগানের পরিমাণ বাড়ে, দাম কমলে যোগানের পরিমাণ কমে । দাম পরিবর্তনের ফলে যোগানের পরিমাণের এ সমমুখী পরিবর্তনকে যখন রেখাচিত্রের মাধ্যমে দেখানো হয়, তখন তাকে যোগান
রেখা বলে ।



 

Content updated By

বাজার যোগান রেখা অঙ্কন

একটি নির্দিষ্ট সময়ে একজন বিক্রেতা বিভিন্ন দামে একটি দ্রব্যের যে বিভিন্ন পরিমাণ দ্রব্যের যোগান দেন,তাকে ব্যক্তিগত যোগান বলে । অন্যদিকে কোনো নির্দিষ্ট সময়ে একটি দ্রব্যের বিভিন্ন দামে বাজারের সব বিক্রেতা যে পরিমাণ দ্রব্য যোগান দেন, তাকে বাজার যোগান বলে । সব বিক্রেতার ব্যক্তিগত যোগান সূচি যোগ করে বাজার যোগান সূচি তৈরি করা যায় । নিচে একটি সংক্ষিপ্ত ও সরলীকৃত বাজার যোগান সূচি দেখানো হলো-


বাজার যোগান সূচি

দ্রব্যের দাম (টাকা) | ১ম বিক্রেতার যোগান (Si) (কুইন্টাল) ২য় বিক্রেতার যোগান (S2) (কুইন্টাল) বাজার যোগান (S) S=S1+ S2 (কুইন্টাল)
১০.০০ টাকা ১০০ কুইন্টাল ৫০ কুইন্টাল ১৫০ কুইন্টাল (১০০+৫0)
১৫.০০ টাকা ১৫০ কুইন্টাল ৭৫ কুইন্টাল ১৫০ কুইন্টাল (১০০+৭৫)
২০.০০ টাকা ২০০ কুইন্টাল ১০০ কুইন্টাল ২০০কুইন্টাল (২০০+১০০)

 



উপরের সূচিতে ১ম ও ২য় বিক্রেতার দ্রব্যের যোগান দেখানো হয়েছে । এ দুজন বিক্রেতার যোগানকৃত দ্রব্য দিয়ে কীভাবে বাজারে যোগান রেখা অঙ্কন করা যায় তা নিচে দেখানো হলো-



উপরের রেখাচিত্রে ১ম ও ২য় বিক্রেতার ব্যক্তিগত যোগান রেখা হলো যথাক্রমে SS ও SS । দ্রব্যের দাম যখন ১০ টাকা, তখন ১ম ও ২য় বিক্রেতার সরবরাহের পরিমাণ যথাক্রমে ১০০ ও ৫০ কুইন্টাল এবং বাজার যোগান হবে (১০০+৫০) = ১৫০ কুইন্টাল; যা চিত্রে A বিন্দু দ্বারা দেখানো হয়েছে । দাম বেড়ে ১৫ টাকা হওয়ায় ১ম ও ২য় বিক্রেতার ব্যক্তিগত যোগানের পরিমাণ হবে যথাক্রমে ১৫০ ও ৭৫ কুইন্টাল এবং বাজার যোগান হবে (১৫০+৭৫) = ২২৫ কুইন্টাল ; যা বাজার যোগান রেখায় B বিন্দু দ্বারা দেখানো হয়েছে। দাম আরও বেড়ে ২০ টাকা হওয়ায় ১ম ও ২য় বিক্রেতার যোগানের পরিমাণ হবে যথাক্রমে ২০০ ও ১০০ কুইন্টাল। মোট যোগানের পরিমাণ হবে (২০০+১০০) = ৩০০ কুইন্টাল । যা বাজার যোগান রেখায় C বিন্দু দ্বারা দেখানো হয়েছে । এবার A, B এবং C বিন্দু যোগ করে আমরা SS রেখা অঙ্কন করি; যা বাজার যোগান রেখা হিসেবে পরিচিত ।

Content updated By

ভারসাম্য দাম নির্ধারণ

বাজারের একটি সাধারণ দৃশ্য হলো ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে দ্রব্যের দাম নিয়ে দর-কষাকষি করা । ক্রেতা চেষ্টা করে সর্বনিম্ন দামে দ্রব্যটি ক্রয় করতে । আবার, বিক্রেতা চেষ্টা করে সর্বোচ্চ দামে দ্রব্যটি বিক্রয় করতে। ক্রেতা-বিক্রেতার দর-কষাকষির ফলে এমন একটি দামে দ্রব্যটি ক্রয়-বিক্রয় হয়, যেখানে চাহিদা ও যোগান পরস্পর সমান । যে দামে দ্রব্যটির চাহিদা ও যোগান সমান হয়, তাকে ভারসাম্য দাম বলে । ভারসাম্য দামে যে পরিমাণ দ্রব্য কেনা-বেচা হয়, তাকে ভারসাম্য পরিমাণ বলে 



উপরের রেখাচিত্রে ভূমি অক্ষে চাহিদা ও যোগানের পরিমাণ এবং লম্ব অক্ষে দ্রব্যের দাম নির্দেশ করা হয়েছে। রেখাচিত্রে বাজার চাহিদা রেখা DD এবং বাজার যোগান রেখা SS অঙ্কন করা হয়েছে ।

ধরো, OA দামে চাহিদা ও যোগানের পরিমাণ যথাক্রমে OE ও OH । এ দামে চাহিদা অপেক্ষা যোগানের পরিমাণ বেশি । চাহিদা অপেক্ষা যোগান বেশি হলে দাম কমবে। ফলে দাম কমে OA থেকে OP-তে আসবে । যেখানে চাহিদা ও যোগান সমান হবে। আবার দাম যদি OC হয় তাহলে যোগানের পরিমাণ OE এবং চাহিদার পরিমাণ OH । অর্থাৎ এখানে যোগানের তুলনায় চাহিদার পরিমাণ বেশি ফলে দ্রব্যের দাম অবশ্যই বাড়বে এবং দাম OP-তে গিয়ে স্থির হবে । যেখানে চাহিদা ও যোগানের পরিমাণ পরস্পর সমান। এভাবে দেখা যায়, দাম যখন OP হয়, কেবল তখনই চাহিদা ও যোগানের মোট পরিমাণ সমান অর্থাৎ OM । অতএব OP দামে চাহিদা ও যোগান সমান থাকে এবং দাম বাড়া কিংবা কমার কোনো প্রবণতা থাকে না। কাজেই OP হলো ভারসাম্য দাম এবং OM হলো ভারসাম্য পরিমাণ । R বিন্দুতে DD এবং SS রেখাদ্বয় পরস্পরকে ছেদ করে । অতএব এই R ছেদ বিন্দুতে নির্দেশিত হলো ভারসাম্য দাম ও ভারসাম্য পরিমাণ ।

Content updated By
Promotion