বর্তমান বিশ্বে একটি প্রতিকারহীন রোগের নাম এইডস, যার অনিবার্য পরিণতি আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু। বাংলাদেশেও এই রোগের কিছু প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে এবং এইচআইভি আক্রান্তদের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। যেহেতু এইচআইভি-এর কোনো প্রতিষেধক বা প্রতিরোধক টিকা আবিষ্কৃত হয়নি, তাই এর সংক্রমণ প্রতিরোধই এটাকে নিয়ন্ত্রণের একমাত্র উপায়। কাজেই এর প্রতিরোধের ব্যবস্থার উপরই বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলাদেশ সরকার এইডস প্রতিরোধকল্পে ১৯৮৫ সালে জাতীয় এইডস কমিটি গঠন করে। ১৯৮৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আর্থিক সহায়তায় স্বল্পমেয়াদী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। তবে গত শতাব্দীর নব্বই দশক থেকে বাংলাদেশ সরকার এইডস নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন কর্মসূচি ও পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে এসব কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এইচআইভি এবং এইডস আক্রান্তদের সহায়তা দানের জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালগুলোতে এইচআইভি সংক্রমিত রোগীদের রক্ত পরীক্ষা, পরামর্শদান এবং কিছুটা চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে আশার আলো সোসাইটি, জাগরণী মেডিকেল ক্লিনিক, মুক্ত আকাশ বাংলাদেশ, হাসাব (HSAB HIV/AIDS AND STD ALLIANCE IN BANGLADESH), ক্যাপ (CAAP-CONFIDENTIAL APPROACH TO AIDS PREVENTION) প্রভৃতি এইচআইভি এবং এইডস আক্রান্তদের সেবাদানসহ এ বিষয়ে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। সেবাদানমূলক কার্যক্রমের মধ্যে (১) কাউন্সেলিং বা পরামর্শদান এবং (২) পুনর্বাসন উল্লেখযোগ্য।
কাউন্সেলিং বা পরামর্শদান : এইচআইভি এবং এইডস-এর কোনো প্রতিষেধক টিকা বা ঔষধ এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। তবে মানসিক সমর্থন ও শক্তি, সঠিক চিকিৎসা ও সেবাযত্ন পেলে এইচআইভি এবং এইডস আক্রান্ত ব্যক্তি দীর্ঘদিন সুস্থ ও সবল থাকতে পারে। তাই তাদেরকে পরামর্শদান বা কাউন্সেলিং অত্যন্ত প্রয়োজন। প্রথমে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে বেসরকারি সেবাদান প্রতিষ্ঠানসমূহ এইডস আক্রান্তদের বাড়ির আশেপাশে সুবিধাজনক স্থানে উঠান বৈঠক করে থাকেন। এইচআইভি ও এইডস কী, এর বিস্তার, আক্রান্তদের সাথে ব্যবহার ও সহমর্মিতা ইত্যাদি বিষয়ে অভিজ্ঞ ডাক্তার ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে মুক্ত আলোচনার ব্যবস্থা করে। বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অভিজ্ঞ পরামর্শক নিয়ে এইডস আক্রান্তদের বাড়িতে গিয়ে নিয়মিত পরিদর্শন কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে। তাদেরকে বিভিন্ন সেবাদানসহ চিকিৎসা সুবিধাও দিয়ে থাকে।
রোগ উপশমের পরামর্শ দেওয়ার কৌশল : কোনো ব্যক্তির রক্তে এইচআইভি আছে কিনা তা রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায়। রক্ত পরীক্ষার আগে ও পরে পরামর্শ বা কাউন্সেলিং করা হয়। এই কাউন্সেলিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোনো ব্যক্তি এইচআইভি পজিটিভ হলে সে মারাত্মকভাবে ঘাবড়ে যায়। কারণ এইডস একটি মরণব্যাধি এবং এর তেমন কোনো চিকিৎসা নেই। তবে সেবাযত্ন, উপযুক্ত খাদ্য, সহমর্মিতা ও সাহস পেলে এইডস আক্রান্তরাও দীর্ঘজীবন লাভ করতে পারে। পরামর্শ দেওয়ার ক্ষেত্রে নিচে বর্ণিত বিষয়গুলো অনুসরণ করা যেতে পারে-
১। রক্ত পরীক্ষার পর পরামর্শ : কোনো ব্যক্তির রক্ত পরীক্ষায় এইচআইভি ভাইরাস ধরা পড়লে সে ব্যক্তি প্রথমেই মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। তাই রক্ত পরীক্ষার পর পরামর্শ বা কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে তাকে স্বাভাবিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুমের দিকে লক্ষ রাখতে হবে। নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করে তার মনোবল অটুট রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
২। অন্যান্য রোগ থেকে সতর্ক থাকা : কোনো ব্যক্তির রক্ত এইচআইভি পজিটিভ হলে ধীরে ধীরে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে বিভিন্ন সুযোগ-সন্ধানী রোগ যেমন- ডায়রিয়া, যক্ষ্মা, মুখে ঘা, নানা প্রকার চর্মরোগ, নিউমোনিয়া, প্রচণ্ড জ্বর ইত্যাদি আক্রমণ করে। তখন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ মতো ঔষধ খেতে ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে হবে।
৩। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করা : এইডস থেকে সেরে উঠার যদিও কোনো চিকিৎসা এখনও বের হয়নি। তবে এন্টিরেট্রোভাইরাল জাতীয় ঔষধের মাধ্যমে অনেকটা সুস্থ থাকা যায়, জীবন দীর্ঘায়িত করা যায়।
পুনর্বাসন : অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এইডস আক্রান্তদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন
কারিগরি প্রশিক্ষণ দেয়। তাছাড়া তাদের পুনর্বাসনের জন্য বিশেষ ক্ষেত্রে আর্থিক অনুদান দিতে পারে।
কাজ-১ : একটি বেসরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা হিসেবে এইচআইভি ও এইডস আক্রান্ত ব্যক্তিকে কীভাবে পরামর্শ দেবে ধারাবাহিকভাবে লেখ।
|