যত দিন যাচ্ছে মানুষ তত বেশি ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। ইন্টারনেটে শারীরিক উপস্থিতির প্রয়োজন হয় না। এমনকি মোবাইল ফোনে যেমন কন্ঠস্বর শুনে পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়, সেভাবে নিশ্চিত হওয়ার সুযোগও নেই। তবে ইন্টারনেট বা অনলাইনে বেশিরভাগ ব্যবহারকারী তার একটি স্বতন্ত্র সা তুলে ধরেন। এটি সামাজিক যোগাযোগ সাইট, ব্লগ কিংবা ওয়েবসাইটে ব্যক্তিকে প্রকাশ করে। এটিকে তার অনলাইন পরিচয় বলা যেতে পারে। অনেক ব্যক্তি অনলাইনে নিজের প্রকৃত নাম ব্যবহার করলেও অনেকেই আবার ছদ্মনাম পরিচয়ও ব্যবহার করে থাকেন। অনেকে আবার প্রকৃত বা ছয় কোনো পরিচয় প্রকাশ করে না।
যদি কোনো ব্যক্তির অনলাইন পরিচিতি থেকে তাকে বাস্তব জীবনে চেনা যায়, তবে সেটি হর বিশ্বাস জ্ঞাপক আর যদি কারো অনলাইন পরিচয় থেকে প্রকৃত ব্যক্তিকে শনাক্ত করা না যায়, তবে তার পরিচিতিকে সন্দেহভাজন হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
একজন ব্যক্তির অনলাইন পরিচিতি নিম্নোক্ত পরিচয় স্ক্রাপকের যেকোনো একটি বা তাদের সমন্বিত হতে পারে :
(ক) ই-মেইল ঠিকানা
(খ) সামাজিক যোগাযোগের সাইটে তার প্রোফাইলের নাম।
যেভাবে এই পরিচয় প্রকাশ পাক না কেন, একজন ব্যবহারকারীকে তার পরিচয় সংরক্ষণের জন্য সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হয়। ইন্টারনেটে নিজের পরিচিতি সংরক্ষণ করার জন্য যে সকল মাধ্যমের কথা উল্লিখিত হয়েছে সেগুলোর ব্যবহারের সময় তাই সচেষ্ট থাকতে হয়। ই-মেইল কিংবা ফেসবুকে নিজের একাউন্ট যেন অন্যে ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য সতর্ক থাকা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে প্রত্যেক সাইটে ঢোকার ক্ষেত্রে যে পাসওয়াডটি ব্যবহার করা হয়, সেটির গোপনীয়তা রক্ষা করাও জরুরি। পাসওয়ার্ডের গোপনীয়তা রক্ষা করার জন্য কয়েকটি টিপস বা কৌশল এখানে লেখা হলো-
(১) সংক্ষিপ্ত পাসওয়ার্ডের পরিবর্তে দীর্ঘ পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা। প্রয়োজনে এমনকি কোনো প্রিয় ৰাজ্যও ব্যবহার করা যেতে পারে।
(২) বিভিন্ন ধরনের বর্ণ ব্যবহার করা অর্থাৎ কেবল ছোট হাতের অক্ষর ব্যবহার না করে বড় হাতের এবং ছোট হাতের বর্ণ ব্যবহার করা।
(৩) শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা অর্থাৎ শব্দ, বাক্য, সংখ্যা এবং প্রতীক সমন্বয়ে পাসওয়ার্ড তৈরি করা। যেমন Z26a1Sallal@gmail.com ।
(৪) বেশির ভাগ অনলাইন সাইটে পাসওয়ার্ডের শক্তিমত্তা বাচাইরের সুযোগ থাকে। নিয়মিত সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে পাসওয়ার্ডের শক্তিমত্তা যাচাই করা এবং শক্তিমত্তা কম হলে তা ৰাড়িয়ে নেওয়া ।
(৫) অনেকেই সাইবার ক্যাফে, ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্র ইত্যাদিতে অনলাইন ব্যবহার করে থাকেন, এরূপ ব্যবহারের ক্ষেত্রে আসন ত্যাগের পূর্বে সংশ্লিষ্ট সাইট থেকে লগ আউট করা।
(৬) অনেকেই পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করেন। যেমন lastpass, keepass ইত্যাদি এগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে।
(৭) নিয়মিত পাসওয়ার্ড পরিবর্তনের অভ্যাস গড়ে তোলা।
কম্পিউটার হ্যাকিং
হ্যাকিং বলতে বোঝানো হয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বা ব্যবহারকারীর বিনা অনুমতিতে ভাৱ কম্পিউটার সিস্টেম বা নেটওয়ার্কে প্রবেশ করা। যারা এই কাজ করে থাকে তাদেরকে বলা হয় কম্পিউটার হ্যাকার বা হ্যাকার। নানাবিধ কারণে একজন হ্যাকার অন্যের কম্পিউটার সিস্টেম নেটওয়ার্ক বা ওয়েবসাইটে অনুপ্রবেশ করতে পারে। এর মধ্যে অসৎ উদ্দেশ্য, অর্থ উপার্জন, হ্যাকিং এর মাধ্যমে কখনও কখনও প্রতিবাদ কিংবা চ্যালেঞ্জ করা, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতিগ্রস্থ করা, হেয়-প্রতিপন্ন করা, নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকে। তবে অনেক কম্পিউটার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ হ্যাকারদের ক্র্যাকার হিসাবে চিহ্নিত করতে পছন্দ করেন। তবে বিশ্বব্যাপী কম্পিউটার সিস্টেম নেটওয়ার্ক বা ওয়েবসাইটে বিনা অনুমতিতে অনুপ্রবেশকারীকে সাধারণভাবে হ্যাকারই বলা হয়ে থাকে।
হ্যাকার সম্প্রদায় নিজেদেরকে নানান দলে ভাগ করে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে হোয়াইট হ্যাট হ্যাকার, ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার, গ্রে হ্যাট হ্যাকার ইত্যাদি। হোয়াইট হ্যাট হ্যাকাররা কোনো সিস্টেমের উন্নতির জন্য সেটির নিরাপত্তা ছিদ্রসমূহ খুঁজে বের করে। এদেরকে এথিক্যাল হ্যাকারও (Ethical Hacker) বলা হয়। অন্যদিকে ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকারগণ অসৎ উদ্দেশ্যে অনুপ্রবেশ করে থাকে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হ্যাকিংকে অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হয়। বাংলাদেশে এটি অপরাধ। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬ (সংশোধিত ২০০৯) অনুসারে হ্যাকিংয়ের জন্য ৩ থেকে ৭ বছর কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।
দলগত কাজ : ম্যালওয়্যার, ভাইরাস ও হ্যাকিংয়ের মধ্যে পার্থক্য দলে আলোচনা করে বর্ণনা কর।
নতুন শিখলাম : হ্যাকিং, হ্যাকার।
আরও দেখুন...