হাঁসের বিভিন্ন খাদ্য উপকরণ

এসএসসি(ভোকেশনাল) - পোল্ট্রি রিয়ারিং অ্যান্ড ফার্মিং-২ - প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি) | NCTB BOOK

২.৪ হাঁসের বিভিন্ন খাদ্য উপকরণ

হাঁস মুক্ত পদ্ধতিতে হাওড়-বাওড়, নদীনালা, খালবিল থেকে বিভিন্ন রকম উপকরণ খাদ্য হিসেবে খেয়ে থাকে । আবদ্ধ ও অর্ধ-আবদ্ধ অবস্থায় হাঁসকে বিভিন্ন খাদ্য উপকরণের মাধ্যমে সুষম খাদ্য বা রেশন তৈরি করে খেতে দিতে হয়।

মুক্ত অবস্থায় যে সমস্ত খাদ্য উপকরণ প্রকৃতি থেকে পেয়ে থাকে সেগুলো হলো- ছোট শামুক, ঝিনুক, ছোট মাছ, আগাছা, ক্ষুদিপানা, বর্ষার শুরুতে বৃষ্টি শুরু হলে গর্ত থেকে বের হয়ে আসা ছোট ছোট কাঁকড়া, ধান কাটার মৌসুম শেষে ঝরে পড়া ধান ইত্যাদি।

যখন হাঁসগুলোকে সুষম খাদ্য তৈরি করে খাদ্য বা রেশন সরবরাহ করতে হয়, তখন যে সমস্ত খাদ্য উপকরণ ব্যবহার করা হয় সেগুলো নিম্নরূপ :

  • গম গুড়া 
  • ভুট্টা গুড়া 
  • চালের কুঁড়া
  • সয়াবিন মিল বা সয়াবিন বীজ সিদ্ধ 
  • তিলের খৈল বা বাদাম খৈল
  • শুটকি মাছের গুঁড়া বা ঝিনুক বা শামুকের ভেতরের মাংস 
  • ঝিনুক চূর্ণ 
  • লবণ

এছাড়া প্রোটিনের উৎস হিসেবে প্রোটিন কনসেনট্রেট এবং ভিটামিন মিনারেলের উৎস হিসেবে ভিটামিন মিনারেল প্রিমিক্স বাজারে পাওয়া যায় যা ক্রয় করে সুষম রেশনে ব্যবহার করা যায় ।

খাদ্য উপাদান প্রাপ্তির উৎসসমূহ

চাল : চাল এবং চালের উপজাত দ্রব্যাদি হাঁসের জন্য সহজপাচ্য ও সহজলভ্য শর্করা জাতীয় খাবার। খুদ বা ভাঙা চালের মূল্য তুলনামুলকভাবে কম। তাই বাচ্চা হাঁস ও ডিমপাড়া হাঁসের জন্য খুদ ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয় । খুদের মধ্যে আমিষ এবং ভিটামিন বি-২ থাকে। খুদে গড়ে ১০-১২% আমিষ, ১৩% চর্বি এবং ১১-১২% আঁশ থাকে ৷

ভুট্টাঃ ভুট্টা সুস্বাদু ও সহজপাচ্য হওয়ার হাঁস বেশ পছন্দ করে। হাঁসের খাদ্য হিসেবে ভুট্টা খুবই জনপ্রিয়। হলুদ হুটার মধ্যে ভিটামিন-এ এর পরিমাণ অধিক থাকে। ভুট্টা ছোট ছোট করে ভেঙে বা গুঁড়ো করেও হাঁসের খাবার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

গম : গমকে অনেকে হাঁসের আদর্শ খাদ্য বলে মনে করেন। গম সুস্বাদু এবং সহজপাচ্য। তদুপরি অন্যান্য দানাদার খাদ্যের তুলনায় আমিষের পরিমাণ অধিক। গমে সন্তোষজনক পরিমাণ ভিটামিন বি কমপ্লেক্স থাকে। গম ভাঙা ও গমের ভূসি হাঁস-মুরগির খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। 

যৰ : অন্যান্য দানা শস্যের সাথে মিশিয়ে ফাকে হাঁসের খাদ্য হিসেবে দেয়া যায়। যবে আঁশের পরিমা অধিক। অতিরিক্ত যব খাওয়ালে হাঁসের চর্বির পরিমাণ বেড়ে যায়।

জোয়ার: জোয়ারে ভুট্টার তুলনার আমিষের পরিমাণ অধিক। জোরারের খোসা শক্ত বলে একে ভেঙ্গে ঋড়ো করে দেয়া প্রয়োজন। একক ভাবে ব্যবহার না করে অন্যান্য খাদ্যের সাথে মিশিয়ে সরবরাহ করা উত্তম।

গোল আলু: বাজারে আলুর যখন দাম কম থাকে তখন গমের বদলে আলু হাঁসের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এতে শর্করার পরিমান প্রায় ২০%। আলু সিদ্ধ করে দানাদার খাদ্যের সাথে অল্প পরিমাণে দেয়া যায় ।

শাকসবজি : বেগুন, মিষ্টি আলু, লাউ, কুমড়া এবং অন্যান্য সবজির খোসা ও অন্যান্য পরিত্যক্ত অংশ সেদ্ধ করে হাসকে খেতে দেয়া । এসব খাদ্য ভিটামিন সমৃদ্ধ। বাঁধাকপি, ফুলকপি, গাজর, বীট, পালং শাক, পুঁইশাক, নটেশাক, মূলা প্রকৃতির পাতা কুঁচি কুচি করে কেটেও হাঁসকে খেতে দেয়া যায়। এসব খা ক্যারোটিন ও ভিটামিন সমৃদ্ধ ।

চালের মিহি কুঁড়া : চালের কুঁড়া মানের একটি উফুট খাবার। এতে চালের গুঁড়া থাকার ফলে শর্করার পরিমাণ অধিক। কুঁড়া সহজপাচ্য। কুঁড়া খাওনোর আগে দেখে নিতে হবে তা ভেজা বা ছত্রাক আক্রান্ত কি না।

গমের ভূষি : গমের দানার মোটা অংশই ব্যবহৃত হয় ভূমি হিসেবে। গমের ভূষির মধ্যে পড়ে ১৬% আমিষ থাকে। গম ও ভূট্টার তুলনায় রে তুমি আমি মানের। একে নিয়াসিন ও স্থায়ামিনের পরিমাণ অধিক। ভিমপাড়া হাঁসের ক্ষেত্রে ১৫% গণের ছবি খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

ফিস মিল বা শুটকি মাছের গুঁড়া : মাছ এবং তার বর্জ্য পদার্থকে শুকিয়ে চূর্ণ করে অথবা অন্য কোনো উপায়ে প্রক্রিয়াজাত করে প্রাপ্ত দ্রব্যই ফিস মিল। এতে আমিষের পরিমাণ ৪৫-৫৫%। হাঁসের জন্য ফিস মিল একটি আদর্শ খাদ্য। বাচ্চা হাঁসে মাছের আঁশটে গন্ধ দূর করার জন্য অল্প পরিমাণে ফিস মিল ব্যবহার করতে হবে।

মিট মিল : মিট মিল হল শুকানো চূর্ণীকৃত মাংস বা মাংসের অংশ। এতে আমিষের পরিমাণ ৫০-৫৫%। মিট মিলে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস বিদ্যমান। এছাড়া বিভিন্ন প্রকার ভিটামিনও থাকে।

কেঁচো মিল : কেঁচো থেকে তৈরি খাদ্যকেই বলা হয় কেঁচো মিল। ফিস মিল, মিট মিল, বোন মিল প্রভৃতির বিকল্প হিসেবে কেঁচো মিল ব্যবহার করা যায়। এতে অশোধিত আমিষের পরিমাণ ৫৯.৪৭% ।

হাড়ের গুঁড়া ও মাংসের অবশিষ্টাংশ : খুর, শিং ও হাড় ব্যতিত প্রাণীর দেহের মাংসের অবশিষ্টাংশ শুকিয়ে ও গুঁড়ো করে এ খাদ্য পাওয়া যায়। এতে আমিষের পরিমাণ ৫৫%, খনিজ পদার্থের পরিমাণ ৪%। হাড়ের গুঁড়া ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস সমৃদ্ধ। উত্তমরূপে পরিশোধন করার পর এগুলো হাঁসের খাদ্যের সাথে মেশানো হয়।

রক্তের গুঁড়া বা ব্লাড মিল : কসাইখানা থেকে পশুর রক্ত সংগ্রহ করে তা শুকিয়ে চূর্ণ করা হয়। তবে এদেশে পর্যাপ্ত পশু রক্ত পাওয়া যায় না। এর মধ্যে আমিষের পরিমাণ প্রায় ৭৫-৮০%। এতে সামান্য পরিমাণে খনিজ পদার্থও থাকে। বাচ্চা হাঁসের খাদ্যে ব্লাড মিল দেয়া অনুচিত।

পোল্ট্রির শুকনা বিষ্টা : এতে অশোষিত আমিষ থাকার ফলে এটি চালের কুঁড়ার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। ডিমপাড়া হাঁসের ক্ষেত্রে রেশনে যথাক্রমে ৫-১০% হারে এটি ব্যবহার করা যায়।

সয়াবিন মিল : সয়াবিন ভালো করে সিদ্ধ করে শুকানোর পর গুড়ো করে বা তেল বের করে নেয়ার পর মিল হিসেবে মুরগিকে খাওয়ানো যায়। এতে প্রায় ৪৫% আমিব ব্যতীত সামান্য পরিমাণে চর্বি ও পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন থাকে।

তিলের খৈল : এতে আমিষের পরিমাণ ৪০-৪৫% ও ক্যালসিয়ামের পরিমাণ ২.৩%। তিলের খৈল হাঁসের অন্য একটি উৎকৃষ্ট খাদ্য। চীনা বাদামের খৈল ও তিলের খৈল অর্ধেক পরিমাণে মিশিয়ে হাঁসের খাদ্য তৈরি করা যায়।

সরিষার খৈল : সরিষা থেকে তেল নিষ্কাশনের পর যে অংশ পাওয়া যায় তাকে বলা হয় সরিষার খৈল। এতে ৩৭-৪০% আমিষ, ০.৬% ক্যালসিয়াম এবং ১.০% ফসফরাস থাকে। বিশেষ দ্বাদ ও সুগন্ধের কারণে হাঁস এ খৈল পছন্দ করে।

চীনা বাদামের খৈল : চীনা বাদামের খৈল সুস্বাদু। অন্যান্য খাদ্যের সাথে চীনা বাদামের খৈল মিশিয়ে সুষম খাদ্য তৈরি করা যায়। এতে আমিষ ৪৬.৫%, চর্বি বা স্নেহ পদার্থ ৪%, ক্যালসিয়াম ০.২৮% এবং ফসফরাস ১.২৮% থাকে।

নারিকেলের খৈল : এ খৈলে আমিষের পরিমাণ ২০-২৫%। তবে বেশি দিনের পুরাতন খৈল হাঁসের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ কিছুদিন রেখে দিলেই খৈলে ছত্রাক জন্মায় এবং খাবারের অযোগ্য হয়ে পড়ে।

শামুক ও ঝিনুক খোসা: শামুক ও ঝিনুকের খোসা গুঁড়ো করে অন্যান্য খাদ্যের সাথে মিশিয়ে খাওয়ানো হয়।। তবে এ খাদ্য সর্বোচ্চ ১-৩% হাঁসের খাদ্যের সাথে মেশানো উচিত। ঝিনুকের গুঁড়ায় ক্যালসিয়ামের পরিমাণ ৩৭-৩৮%।

চুনা পাথর : ক্যালসিয়ামের উৎকৃষ্ট উৎস হলো চুনা পাথর। হাঁসের খাদ্যে ২-৪% হারে ব্যবহার করা যায়। এতে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ ৩৮%। এটি হাঁসের হাড় গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বোন মিল : এটি একটি শুষ্ক খাদ্য। হাড়কে বায়ু চাপের উপস্থিতিতে বাষ্প ব্যবহার করে এটি তৈরি করা হয় । হাঁসের খাদ্যের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করা যায়।

সাধারণ খাদ্য লবণ : হাঁসের খাদ্যে অল্প পরিমাণে লবণ যোগ করা হলে হাঁসের দৈহিক বৃদ্ধি ও খাদ্য ব্যবহারের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। এটি সোডিয়াম ও ক্লোরাইডের প্রধান উৎস। তবে হাঁসের খাদ্যে অধিক মাত্রায় লবণ যোগ করা ঠিক নয়। খাবারের সাথে ০.৫% মাত্রায় লবণ যোগ করতে হয়। লবণ হাঁসের পানি গ্রহণের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাছাড়া লবণ হাঁসের খাদ্যকে সুস্বাদু করে ও হজমে সাহায্য করে।

 

অনুসন্ধানমূলক কাজ 

তোমার প্রতিষ্ঠানের কাছাকাছি যে কোন একটি হাঁসের খামার পরিদর্শন কর। খামারে ব্যবহৃত খাদ্য উপকরণগুলোর সাথে পরিচিত হও এবং সেগুলোতে কোন ধরনের পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায় তার তালিকা প্রস্তুত | করে মতামত দাও। (একটি খাদ্য উপকরণের নামসহ বিদ্যমান পুষ্টি উপাদানের নমুনা নিম্নে দেওয়া হলো)

 

 

 

Content added || updated By
Promotion