বৈদ্যুতিক বর্তনীতে যে কোনো ত্রুটির কারণে পূর্ব নির্ধারিত পরিমানের চেয়ে বেশি কারেন্ট প্রবাহিত হলে বর্তনীর তারের নরম ইনসুলেশন এবং যন্ত্রপাতি গরম হয়ে ক্ষতি হতে পারে, এমনকি অকেজো বা পুড়ে যেতে পারে। তাই বর্তনীর তার যন্ত্রপাতি এবং ব্যবহারকারীকে অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনা হতে রক্ষা করার জন্য বর্তনীতে ফিউজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ফিউজ এক প্রকার বৈদ্যুতিক প্রটেকটিভ ডিভাইস যাহা নরম ধাতুর তার দিয়ে গঠিত। যার ভিতর দিয়ে নির্দিষ্ট উচ্চতম পরিমাণের চেয়ে বেশি কারেন্ট প্রবাহিত হলে তাপে নিজে পুড়ে গিয়ে বর্তনীকে সাপ্লাই থেকে বিচ্ছিন্ন করে; ফলে বর্তনী ও বর্তনীতে সংযুক্ত বিভিন্ন সরঞ্জাম নষ্ট হবার হাত থেকে রক্ষা পায়। এটি সার্কিটে লোডের সাথে সিরিজে সংযুক্ত থাকে। ফিউজ তার হিসেবে সাধারণত সীসা ও টিন এর মিশ্রণ বা রূপা ব্যবহার করা হয়। ফিউজের প্রধান অংশ তিনটি। যথা-
১। ফিউজ তার;
২। ফিউজ তারের বাহক;
৩। ফিউজ বেস বা তলদেশ ।
ফিউজ হিসেবে ব্যবহৃত মূল উপাদানকে ফিউজ তার বলে। ফিউজ তার পরিবাহী পদার্থের এবং এটি সংকর ধাতুর তৈরি। রূপার তৈরি ফিউজ সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় এবং ভালো। বাজারে বিভিন্ন মানের প্রয়োজনীয় ফিউজ পাওয়া যায়।
যে কোনো বৈদ্যুতিক বর্তনীতে শর্ট সার্কিট, আর্থ ফন্ট লিকেজ বা ওভারলোডের কারণে পূর্ব নির্ধারিত পরিমানের চেয়ে অতিরিক্ত কারেন্ট প্রবাহিত হয়। ফলে বর্তনীর তারের নরম ইনসুলেশন এবং যন্ত্রপাতি গরম হয়ে ক্ষতি হতে পারে, এমনকি অকেজো বা পুড়ে যেতে পারে। তাই বর্তনীর তার যন্ত্রপাতি এবং ব্যবহারকারীকে অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনা হতে রক্ষা করার জন্য বর্তনীতে ফিউজ ব্যবহারের প্রয়োজন। বৈদ্যুতিক সার্কিটের সাথে সংযুক্ত লোডগুলোকে অতিরিক্ত কারেন্ট জনিত কিংবা ওভার লোড জনিত কারণে পুড়ে যাওয়ার হাত হতে রক্ষা করা এবং বিপদমুক্তভাবে মেরামত কাজ করতে ফিউজ এর প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অপরিসীম। এছাড়া প্রয়োজনবোধে বর্তনীকে সাপ্লাই লাইন থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য ফিউজ ব্যবহার করা হয়।
ফিউজ খুব সাধারণ ধরনের রক্ষণ যন্ত্র যা, সার্কিটে যুক্ত অবস্থায় অতিরিক্ত কারেন্ট প্রবাহের হাত থেকে রক্ষা করে। এর গঠন, কাজের ধরন অনুসারে বিভিন্ন রকমের ফিউজ হয়। গঠন অনুযায়ী ফিউজ তিন ধরনের।
১. রি-ওয়্যারয়েবল ফিউজ ।
২. কার্টিজ ফিউজ বা স্ক্রু-প্লাগ ফিউজ ।
৩. এইচআরসি (High Rupturing Cartridge) ফিউজ ।
• ভোল্টেজ অনুসারে ফিউজ দুই ধরনের ।
(ক) লো ভোল্টেজ ফিউজ
(খ) হাই ভোল্টেজ ফিউজ ।
লো ভোল্টেজ ফিউজগুলোর মধ্যে রি-ওয়্যারয়েবল ফিউজ আর হাই ভোল্টেজ ফিউজগুলোর মধ্যে লিকুইড ফিউজ, মেটাল ক্লোড ফিউজ, এইচআরসি ফিউজ, কার্ট্রিজ ফিউজ ইত্যাদি। এ ছাড়া ফিউজকে আরও কতকগুলো ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-
১। প্লাগ ফিউজ
২। টাইম ডিলে ফিউজ
৩। কার্বন টেট্রা ক্লোরাইড ফিউজ
৪ । ওপেন ফিউজ
৫। বাই- মেটাল ফিউজ ইত্যাদি।
রি- ওয়্যারেবল ফিউজ এর গঠন : যে ফিউজ এর ফিউজ তার পুড়ে ফিরে গলে যাওয়ার সহজে পরিবর্তন করা বা বদলানো বার তাকে রিওয়্যাররেবল ফিউজ বলে।
ফিউজ এ ব্যবহারিত অংশগুলো নিম্নরূপ :
(ক) ফিউজ সফেট বা বেস
(খ) ফিউজ ওয়্যার হোল্ডার বা ব্রিজ
(গ) স্প্রিংযুক্ত সংযোগকারী টার্মিনাল এবং টার্নিমাল স্ক্রু
(গ) ফিউজ তার লাগা কন্ট্যাক্ট টার্মিনাল স্ক্রুসহ কন্টাক্ট টার্মিনাল
(ঙ) ফিউজ তার।
এটি মূলত একটি চীনামাটির অধর, যা ফিউজ সকেট বা ফিটজ বেস নামে পরিচিত। এটি চিত্র ৩.৫ তে দেখানো হয়েছে। ফিউজ সকেটে স্প্রিযুক্ত সংযোগকারী দুইটি টার্মিনাল এবং দুইটি টার্মিনাল থাকে, যার সাহায্যে বৈদ্যুতিক বর্তনীকে বিদ্যুৎ সরবরাহ পাইলের সাথে সংযোগ করা হয়। রিচাররেবল ফিউজের তার পুড়ে যাওয়ার সময় যে অগ্নিস্ফুলিন দেখা দেয় এর প্রতিক্রিয়া হতে রক্ষার জন্যে যেসের তলদেশে এসকেস্টাস এর প্যাড ব্যবহার করা হয়।
ব্রিক ফিউজ ব্রিজ সাধারণত চীনামাটির তৈরি হয়। একে ফিউজ ওয়্যার হোল্ডারও বলা হয়। ফিউজ ব্রিজ বা ফিউজ ওয়্যার হোল্ডারে দুইটি কন্ট্যাক্ট থাকে, যা ফিউজ সকেটে নির্দিষ্ট বাজে বসানো যায়। ফিউজ তার ফিউজ ব্রিজ এ দুই কন্ট্যাক্ট টার্মিনালে ড্র এর সাহায্যে সংযুক্ত থাকে যা চিত্রে দেখানো হয়েছে।
কার্যপ্রণালি: ফিউজ ওয়্যার হোন্ডারে বা ফিউলের ব্রিজে দুইটি কন্ট্যান্ট থাকে, যা ফিউজ সার্কিটে নির্দিষ্ট থাকে। ফিউজ তার ফিউজ ব্রিজের দুই কন্ট্যাক্ট টার্মিনাল ফ্লু-এর সাহায্যে সংযুক্ত থাকে, যা ফিউজ বেসের দুইটি কন্ট্যাক্ট সংযোগ করে দেয়। যদি ফিউজ তার গলে যায়, তবে মেইন সুইচ বা সার্কিট ব্রেকার বন্ধ করে, ফিউজের ফ্রিজ খুলে নির্দিষ্ট রেটিং এর নতুন ফিউজ তার লাগাতে হয়।
এ ধরনের ফিউজের সাথে সভা এবং বার বার ফিউজ তার পাল্টিরে ব্যবহার করা যায়। তাই বাড়ির ওয়্যারিং এর ক্ষেত্রে এ ধরনের ফিউজ প্রায়ই ব্যবহার করা হয়।
কার্টিজ ফিউজ বা ফু প্লাগ ফিউজ এ ফিউজ দেখতে বন্দুকের টোটা বা কার্টিজের মত, তাই একে কার্টিজ ফিউল বলে। কার্টিজ একটা চীনামাটি বা গ্লাসের তৈরি নল, যার উভয়দিকে ধাতুর টুপি দিয়ে বন্ধ থাকে। নলের ভিতরে দুই ধাতব টুপির মাঝে ফিউজ তার আটকানো থাকে। ফিউজ পুড়ে যে গ্যাস তৈরি হয়, তা আটকানোর জন্য সিলিকা দিয়ে নল ভর্তি থাকে। ২, ৪, ৬, ১০, ১৫, ২০, ২৫, ৩৫ অ্যাম্পিয়ারের কার্টিজ ফিউজ সচরাচর ব্যবহৃত হয়। ফিউজ পুড়ে গেলে কাঁচের নদের মধ্যে ধোঁয়ার দাগ দেখা যায়। চিত্র ৩.৭ তে দেখানো হয়েছে। ফিউজের বিভিন্ন অংশ হলো-
১। ফিউজ ক্যাপ বা ফিউজ কার্টিজ হোল্ডার,
২। ফিউজ কার্টিজ,
৩। ফিটিং স্ক্রু বা কন্ট্যাক্ট ফু
৪। প্রেটেকটিভ প্লাস্টিক বা সিরামিক রিং,
৫। ফিউজ বেস বা ফিউজ সকেট।
কার্যপ্রণালি: কাট্রিজ ফিউজের জন্য ফিউজ কার্টিজ ২, ৪, ৬, ১০, ১৬, ২০, ২৫, ৩০, ৫০, ৬৩ অ্যাম্পিয়ার কারেন্ট মানের পাওয়া যায়। উচ্চ মানের ফিউজ কার্টিজ যেন নিম্ন মানের কন্ট্যাক্ট তে লাগানো না যায়, সে জন্য ফিউজ ফার্টিজের কুট কন্ট্যাক্টগুলো বিভিন্ন ব্যাসের হরে থাকে। কম কারেন্টের জন্য ফুট কন্ট্যাক্ট ছোট ব্যাসের হয়। যেহেতু ভিন্ন ভিন্ন মানের কার্টিজের এবং ফিটিং এর মান সমান না হলে একে অপরের সাথে ব্যবহার করা যাবে না। যেমন-২৫ অ্যাম্পিয়ার মানের ফিটিং মুতে ৩৫ অ্যাম্পিয়ার ফিউজ কার্টিজ ব্যবহার করা যাবে।
উপরোক্ত ফিউজ কার্টিজের ভিতরের একটা নকশা দেখানো হয়েছে। এতে নিচের এবং উপরের কন্ট্যানীসহ সিরামিকের মূল অংশটা দেখানো হয়েছে। কন্ট্যাক্ট দুইটি বালি ভর্তি একটি বলের মধ্যে একটি ফিউজ তারের সাহায্যে সংযোগ করা হয়েছে। প্রত্যেক কার্টিজে একটি নির্দেশক থাকে, যা ফিউজ তার পুড়ে গেলে কার্টিজ হতে নিক্ষিপ্ত হয় এবং পুড়ে যাওয়া ফিউজ বোঝা যায় ।
১। উপরের কন্ট্যাক্ট,
২। নির্দেশক,
৩। ফিউজ তার,
৪। বালির গুড়া,
৫। সিরামিকের মূল অংশ ও
৬। নিচের কন্ট্যাক্ট।
এ ধরনের ফিউজ কম কারেন্ট নেয় এমন একটি ইলেকট্রিকাল এবং ইলেকট্রনিক সরঞ্জামে ব্যবহার করা হয়। এটি কাঁচের তৈরি, যার দুইপ্রান্ত দুইটি কন্ট্যাক্ট এর মাধ্যমে ফিউজ ওয়্যার সংযুক্ত থাকে। এইচ. আর. সি. ফিউজ এটা উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ফিউজ। অতিরিক্ত লোডের বর্তনীকে রক্ষা করার জন্য এ ধরনের ফিউজ ব্যবহার করা হয়। শর্ট সার্কিট অবস্থায় এটা পাশের ঘ্যাপাতির কোন ক্ষতি সাধন না করে অতি সহজেই বর্তনীকে বিপদ যুক্ত করতে পারে।
গঠন: এ ফিউজের গঠন অনেকটা কার্টিজ ফিউজের ন্যায়। ফিউজের কার্টিজ নলটি উচ্চ মানের সিরামিক অথবা কাঁচের তৈরি । ফিউজ তার খাঁটি রূপার তৈরি। নলটির দুই প্রাপ্ত পিতল বা ভাষার টুপি উভয় কন্ট্যাক্ট টার্মিনালের সাথে আটকানো থাকে।
কার্টিজ ফিউজের অংশগুলো হলো- ১। হাতল ২। ফিউজ কার্টিজ ৩। ফিউজ সকেট ৪। চিনামাটির নল ৫। কন্ট্যাক্ট প্রাপ্ত ৬। ফিউজ তার ইত্যাদি।
কার্যপ্রণালি: সিরামিক বা কাঁচের নদের মধ্যে ফিউজ তারের চতুর্দিকে কোয়ার্টজ পাউডার দিয়ে ভর্তি থাকে। ফিউজ তার গলার সময় ফিউজের কন্ডাক্টর ভিতরে যে বৈদ্যুতিক আর্ক উৎপন্ন হয়, তা এই পাউডার শোষণ করে। ফিউজ তার গলার সময় এক প্রকার গ্যাস উৎপন্ন হয়, তা কোয়ার্টজ পাউডারের সঙ্গে একত্র হয়ে ফিউজের ভিতরে যথেষ্ট চাপ এবং তড়িৎ প্রবাহের পথে খুব উচ্চরোধ সৃষ্টি করে। ফলে আর্ক দ্রুত নির্বাপিত হয়। বিভিন্ন ধরনের ফিউজ বাজারে পাওয়া যায়। প্রত্যেক ফিউজের গায়ে বা কন্ট্যাক্ট টার্মিনালে তারের কারেন্ট বহন ক্ষমতা ও ভোল্টেজ যেত লেখা থাকে।
বৈদ্যুতিক সার্কিটে শর্ট সার্কিট বা অন্য কোন কারণে খুব বেশি কারেন্ট প্রবাহিত হলে লাইনের তার ও যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ ধরনের নিরাপত্তার জন্য সার্কিটে সহজলভ্য রক্ষণ যন্ত্র হিসেবে ফিউজ ব্যবহার করা হয়। ফিউজ সর্বদা ফেজ তারে লাগাতে হয়। এটি নিউট্রাল তারে লাগালে ফিউজ পুড়ে যাওয়ার পরও সুইচ এবং লোড পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকবে যা রক্ষণাবেক্ষণ কাজে ব্যাঘাত ঘটবে এবং বৈদ্যুতিক শক পাবে। আর ফিউজ পুড়ে যাওয়া অবস্থায় লোড চলবে না এবং সুইচ অন করে কেহ যদি মনে করে বিদ্যুৎ সরবরাহ নেই মনে করে কাজ করতে যায় তাহলে বৈদ্যুতিক শক পাবে। লোড ও সার্কিটের নিরাপত্তার জন্য এবং নিরাপদভাবে রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য ফিউজ শুধুমাত্র ফেজ তারেই লাগানো হয়।
যে সমস্ত কারণে ফিউজ পুড়ে যায় সেগুলো হলো-
১। শর্ট সার্কিট জনিত কারণে অতিরিক্ত কারেন্ট প্রবাহ হলে।
২। অতিরিক্ত লোড সংযোগ করলে।
৩। সার্জ ভোল্টেজের কারণে অতিরিক্ত কারেন্ট প্রবাহ হলে।
৪। আর্থ ফল্ট বা আর্থ লিকেজের কারণে অতি কারেন্ট প্রবাহ হলে।
উল্লিখিত কারণে ফিউজের মধ্য দিয়ে অতিরিক্ত কারেন্ট প্রবাহে যে তাপ হয় তাতেই ফিউজ তার গলে যায় বা পুড়ে যায়।
ফিউজ তার হিসেবে নমনীয় নিম্ন গলনাঙ্কের সংকর ধাতুর তার ব্যবহার করা হয়। রূপার তৈরি ফিউজ তার উত্তম। টিন এবং সীসার (৬০% এবং ৪০%) মিশ্রণে ফিউজ তার তৈরি করা হয়। এ তার ফিউজ ব্রিজের কন্ট্যাক্ট টার্মিনালের স্ক্রু এর সাথে লাগানো থাকে। ফিউজ ব্রিজটি ফিউজ সকেটে স্থাপন করলে ফিউজ সকেটের টার্মিনাল দুইটি ব্রিজ টার্মিনাল ও ফিউজ তারের মাধ্যমে কন্ট্যাক্ট পায়। এ ভাবে ফিউজ সকেটের এক টার্মিনাল হতে অপর টার্মিনালের দিকে কারেন্ট প্রবাহিত হয়।
বৈদ্যুতিক সার্কিটে ফিউজ ব্যবহারের কারণ আমরা আগেই জেনেছি। আর এ ফিউজ বা ফিউজ তার যদি আমরা নিউট্রাল তারেও লাগাই তাহলেও সার্কিটে ফিউজ ব্যবহারের আসল উদ্দেশ্য নিশ্চিত হবে; কিন্তু যে সমস্যাগুলো দেখা দিবে সেগুলো নিম্নরূপ:
(ক) যদি ফিউজ নিউট্রালে থাকে তবে ফিউজ পুড়ে গেলেও লোড পর্যন্ত কারেন্ট থাকবে, যা সার্কিটের যে কোন ধরনের মেরামতে বিঘ্ন সৃষ্টি করবে।
(খ) ফিউজ তার পুড়ে গেলে কেহ যদি মনে করে সার্কিটে কারেন্ট নেই তাহলে সে বৈদ্যুতিক শক পাবে ।
(গ) ফিউজ খুলে সার্কিটের বাকি অংশ মেরামত নিরাপদ হবে না। এ সকল অসুবিধা দুর করতে ফিউজ লাইন বা ফেজ এ লাগানো হয়।
বিভিন্ন প্রকার ফিউজের ব্যবহার
নিচে বিভিন্ন ধরনের ফিউজের ব্যবহার উল্লেখ করা করা হলো।
১। বাসা-বাড়িতে বিভিন্ন সাব-সার্কিটে ফিউজ ব্যবহার করা হয়। ২। লেদ মেশিন, ড্রিল মেশিন ইত্যাদিতে ব্যবহৃত মোটরের জন্য একই রকম ফিউজ ব্যবহার করা হয়।
৩। ইলেকট্রনিক্স সরজ্ঞাম (রেডিও, টিভি, ইউপিএস) এ সহজে পরিবর্তন করা যায় এরূপ ফিউজ হিসেবে ব্লু-
ইন টাইপ ফিউজ ব্যবহার করা হয়।
৪। সার্কিটের নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণে ফিউজ ব্যবহৃত হয়।
৫। সাবস্টেশনে এইচ আর সি ফিউজ ব্যবহৃত হয়।
৬। ফিউজের সাইজ অনুযায়ী ৫ অ্যাম্পিয়ার থেকে ১০ অ্যাম্পিয়ার রি-ওয়্যারয়েবল বা প্লাগ ফিউজ ব্যবহার করা হয়। অধিকাংশ যন্ত্রপাতিতে কাট্রিজ ফিউজ ব্যবহার করা হয়। যেখানে আগুন লাগার সম্ভবনা থাকে সেখানে এইচ আর সি ফিউজ ব্যবহার করা হয়। এ ফিউজ ব্যবহারে দুইটি অসুবিধা দেখা দেয়।
(ক) হাই ভোল্টেজে অধিক পাওয়ার সরবরাহে ফিউজ ব্যবহার করা যায় না এবং
(খ) ফিউজ পুড়ে গেলে পুনঃস্থাপন করে বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে হয়, যা সবাই নিরাপদ ভাবে করতে পারে না।
যে পরিমাণ কারেন্ট প্রবাহের ফলে ফিউজ ইলিমেন্ট পুড়ে যায় বা গলে যায়, তাকে উক্ত ফিউজ এর ফিউজিং কারেন্ট
বলে। কোন ফিউজ এর ফিউজিং কারেন্ট এবং রেটেড কারেন্ট এর অনুপাতকে উক্ত ফিউজ এর ফিউজিং ফ্যাক্টর বলে। যেমন কোন ফিউজ এর রেটেড কারেন্ট IR অ্যাম্পিয়ার এবং ফিউজিং কারেন্ট IF অ্যাম্পিয়ার হলে উক্ত ফিউজ ফিউজ এলিমেন্টের ফিউজিং কারেন্ট
এর ফিউজিং ফ্যাক্টর, FF = ফিউজ এলিমেন্টের ফিউজিং কারেন্ট/ফিউজ এলিমেন্টের রেটেড কারেন্ট = ।
ফিউজিং ফ্যাক্টর যেহেতু একই জাতীয় রাশির অনুপাত তাই এর কোন একক নেই। লাইটিং লোডের ক্ষেত্রে ফিউজিং কারেন্ট, লোড কারেন্টের ১.৫ গুণ। অর্থাৎ ফিউজিং ফ্যাক্টর ১.৫। অপরদিকে মোটরের ক্ষেত্রে ফিউজিং কারেন্ট, লোড কারেন্টের ২.৫ গুণ। অর্থাৎ এক্ষেত্রে ফিউজিং ফ্যাক্টর ২.৫। সাধারণত গ্রহণযোগ্য ফিউজিং ফ্যাক্টর নরমাল কারেন্টের দ্বিগুণ হিসেবে ধরা হয়। ফিউজিং ফ্যাক্টরের মান সর্বদা একের বেশি হয়। কারণ ফিউজিং কারেন্ট সর্বদা রেটেড কারেন্টের চেয়ে বেশি হয়।
ফিউজ তারের সাইজ ও কারেন্ট বহন ক্ষমতার সম্পর্ক ফিউজের সাইজ বলতে ফিউজ তারেরই সাইজ বোঝায়। ফিউজ তারের সাইজ ও কারেন্ট বহন ক্ষমতা লোড প্রবাহিত নরমাল কারেন্টের ২৫% বেশি হতে হবে।
ফিউজের রেটেড কারেন্ট ও ফিউজিং কারেন্ট নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর উপর নির্ভর করে।
(ক) ফিউজ তারের কার্যকরী অংশের দৈর্ঘ্য
(খ) ফিউজ তারের দুই প্রান্তে ব্যবহৃত টার্মিনালের সাইজ
(গ) ফিউজ তারের অবস্থা, কারণ রজ্জু আকৃতির ফিউজ সলিড এলিমেন্ট এর চেয়ে বেশি কারেন্ট
বহন করে।
(ঘ) ফিউজ তারের অবস্থান ও ব্যবহারিক ক্ষেত্র।
আরও দেখুন...