SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

এসএসসি(ভোকেশনাল) - শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং-১ - দ্বিতীয় পত্র (দশম শ্রেণি) | NCTB BOOK

মাছ বা চিংড়ি চাষের নার্সারি পুকুরে প্রায়শই চুন প্রয়োগ করা হয়। মাছ চাষে জলজ পরিবেশের মাটি ও পানির গুণাগুণ ঠিক রাখার জন্য চুন প্রয়োগ করা হয়। নার্সারি পুকুরে পরিমিত পরিমাণে চুন প্রয়োগের নানাবিধ উপকার রয়েছে। চুন প্রয়োগের উপকারিতা নিম্নে আলোচনা করা হলো-

১. চুন মাটি ও পানির অম্লীয় ভাব কমিয়ে ক্ষারত্ব ভাব বাড়িয়ে দেয়। মাটি ও পানির খরতা (কার্বনেট ও বাইকার্বনেট) বাড়িয়ে দেয়।

২. চিংড়ি চাষে পানির সঠিক পিএইচ মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।

৩. পানির ঘোলাত্ব কমিয়ে পানির স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনে।

৪. চিংড়ির দেহ পরিষ্কার রাখে ফলে রোগজীবাণু সহজে আক্রমণ করতে পারে না।

৫. মাটি ও পানিতে বসবাসকারী জীবাণু, ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ ও পরজীবিকে ধ্বংস করে।

৬. চুন সার হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং অন্যান্য সারের কার্যকারীতা বৃদ্ধি করে।

৭. চুন থেকে প্রাপ্ত ক্যালসিয়াম চিংড়ির খোলস তৈরির মাধ্যমে দৈহিক বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

৮. মাটি ও পানির দূষিত পদার্থ শোধন করে।

৯. প্রয়োগকৃত খাদ্যের অবশিষ্টাংশ পঁচতে সাহায্য করে।

১০. চুন অ্যামোনিয়া, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম ও পটাসিয়াম-এর বিষক্রিয়া দূর করে এবং পানিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

১১. পানির অতিরিক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড কে ব্যবহার করে চুন সালোকসংশ্লেষণের মাত্রা বাড়ায় ফলে পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।

১২. চুন প্রয়োগের মাধ্যমে পুকুরের মাটি থেকে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকারক মনি সমূহ সহজেই পানিতে মিশে উৎপাদনশীল করে।

১৩. ফুল প্রলেপের ফলে মাটির জৈব পদার্থসমূহ থেকে পানির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে।

১৪. চুন প্রয়োগের মাধ্যমে পানিতে রুময় শেওলার বৃদ্ধি রোধ করা যায়।

 ১৫. চুল কামার ফসফরাসকে মুক্ত করে প্লাংকটনের বৃষ্টিতে সহায়তা করুন। 

চিত্র-৩.৪ নার্সারি পুকুরে চুন প্রয়োগ।

চুনের প্রকারভেদ  

ৰাজারে প্রচলিত বিভিন্ন রকমের তুনের মধ্যে রয়েছে- পোড়া ফুল, পরে ফুল কপি, সাই ইত্যাদি। এছাড়া শামুক ও ঝিনুকের খোলস পুড়িয়েও চুন তৈরি করা যায়। কিন্তু এসকল পোৱা চুন ব্যবহার কলে নাগীরি পুকুরে কালি ফলাফল পাওয়া যায় না। সাধারণত বাজারে পাওয়া যায় এমন চুলগুলো হচ্ছে-

ক. পাথুরে চুন 

খ. পোড়া চুন 

গ. কলি চুন 

ঘ. ভলোবাইট 

ঙ. জিপসাম 

প্রয়োগ মাত্রা

পানি ও মাটির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য যেমন- মাটির ধরন (যেমন- বেলে দোআঁশ, এঁটেল), পানির পিএইচ, নতুন/পুরোনো পুকুর, চুনের প্রকারভেদ ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে নার্সারি পুকুরে চুন প্রয়োগের মাত্রা নির্ণয় করা হয়। পানির পিএইচ ৭.৫ এর নীচে নেমে গেলে কিংবা সকাল ও বিকালের পিএইচ এর মাত্রার পার্থক্য ০.৫ এর বেশি হলে অবশ্যই চুন প্রয়োগ করতে হবে। সাধারণত কাদামাটি, এঁটেল মাটি ও লাল মাটির ক্ষেত্রে একটু বেশি পরিমাণ চুন প্রয়োগ করা দরকার। আবার পুকুরে অনেক দিনের আবর্জনা, ময়লা ইত্যাদি বেশি থাকলে অধিক পরিমাণে চুন দরকার হয়। পোড়া চুন পাথুরে চুনের থেকে দ্বিগুণ কার্যকর। আবার কলিচুন থেকে পাথুরে চুন প্রায় দেড় গুণ কার্যকর। প্রতি শতাংশ পুকুরে সাধারণত এক কেজি হারে চুন প্রয়োগ করা হয়।

সারণি: মাটির পিএইচ-এর ওপর ভিত্তি করে চুনের প্রয়োগ মাত্রা

ব্যবহার পদ্ধতি

মাটির পিএইচ অনুযায়ী পরিমাণমত চুন মাটির চাড়ি বা ড্রামে কমপক্ষে ১২-২৪ ঘন্টা আগে গুলে নিতে হবে। সকালবেলা প্রয়োজনমত চুন নার্সারি পুকুরের পাড়সহ সমস্ত পুকুরে সমানভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে। চাষ দেয়ার ২-৩ দিন পর অথবা বিষ প্রয়োগের ৭-৮ দিন পর পুকুরে চুন প্রয়োগ করা উচিত।

সাবধানতা

  •  পুকুর শুকনো অবস্থায় চুন ব্যবহার করা নিরাপদ কারণ পোড়া চুন এবং কলিচুনে ক্ষারের পরিমাণ অত্যন্ত বেশি।
  • চুন প্রয়োগের সময় নাক ও মুখ গামছা দিয়ে ভালোভাবে বেধে নিতে হবে এবং বাতাসের অনুকূলে ছিটাতে হবে।
  • চুন ভেজানোর ফলে পানির তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যায় এজন্য প্লাস্টিকের বালতিতে চুন গুলানো যাবে না।
  •  চুন ভেজানোর পর ফুটতে থাকে তাই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
  •  চুন গুলানোর সময় শিশুদের নাগালের বাইরে রাখতে হবে। 
Content added By