Academy

মেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম দেখা যায়-

Created: 2 years ago | Updated: 2 years ago

কোষ হচ্ছে জীবদেহের একক। যেটি অন্য কোনো সঞ্জীৰ মাধ্যমের সাহায্য ছাড়াই নিজের প্রতিরূপ তৈরি করতে পারে। কোষকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়, এক ধরনের কোষে কোনো সুগঠিত নিউক্লিয়াস থাকে না, অন্য ভাগে সুগঠিত নিউক্লিয়াস (চিত্র ১১.০১) থাকে, এই কোষের নিউক্লিয়াসের ভেতর জীবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় অনেক উপাদান থাকে, যার একটি হচ্ছে ক্রোমোজম। প্রতিটি প্রকৃত কোষবিশিষ্ট জীবের নিউক্লিয়াসের নিউক্লিওপ্লাজমে অনেক ক্রোমাটিন ফাইবার বা তন্তু থাকে। কোষের স্বাভাবিক অবস্থার এগুলো নিউক্লিয়াসের ভিতরে বিশৃংখল অবস্থায় থাকে। কোষ বিভাজনের সময় পানি বিয়োজনের ফলে এগুলো স্পন্ট আকার ধারণ করে এবং আকারে এগুলো সুতার মতো হয়। এগুলোকে ক্রোমোজোম (চিত্র ১১.02) বলে। কোষ বিভাজনের সময় প্রোফেজ ও মেটাফেজ দশায় ক্রোমোজোমগুলো স্পষ্ট হয়। প্রতিটি প্রজাতির কোষে ক্রোমোজোমের সংখ্যা সবসময় নির্দিষ্ট। অর্থাৎ একটি প্রজাতির প্রাণী অথবা উদ্ভিদ কোষে যদি ১২টি ক্রোমোজোম থাকে, তাহলে সেই প্রজাতির সকল সদস্যের কোষে সবসময় ক্রোমোজোমের সংখ্যা ১২ থাকবে।
 

১১.১.১ ক্রোমোজোমের আকৃতি
ক্রোমোজোমের আকার সাধারণত লম্বা। প্রতিটি ক্রোমোজোমের দেহ দুই গুচ্ছ সুতার মতো অংশ নিয়ে গঠিত (চিত্র ১১.০৩)। প্রতিগুচ্ছ সুতার মতো অংশকে ক্রোমোনেমা (বহুবচনে ক্রোমোনেমাটা) বলে। কোষ বিভাজনের সময় প্রতিটি ক্রোমোজোম সমান দুভাগে ভাগ হয়ে যায়। এদের প্রতিটিকে ক্রোমাটিড বলে। প্রতিটি ক্রোমাটিড একটি ক্রোমোনেমা নিয়ে গঠিত।বর্তমানে কোষতত্ত্ববিদরা বলেন ক্রোমাটিড ও ক্রোমোনেমা ক্রোমোজোমের একই অংশের দুটি নাম। মাইটোসিস কোষ বিভাজনের মেটাফেজ দশায় প্রত্যেকটি ক্রোমোজোমে যে ধাত্র গোলাকৃতি ও সংকুচিত স্থান দেখা যায়, তার নাম সেন্ট্রোমিয়ার। অনেকে আবার একে কাইনেটোকোরও বলে। ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ারের উভয় পার্শ্বের অংশকে বাহু বলা হয়। পূর্বে ধারণা করা হতো ক্রোমোজোম একটা মাতৃকা বা ধাত্র দ্বারা আবৃত। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে এটি কিছু প্রোটিন ও অজৈব পদার্থের সমাবেশ, যা ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ ছাড়া দেখা যায় না।
চিত্র ১১.০২: ক্রোমোজোম

ক্রোমোজোমের প্রকারভেদ
উচ্চ শ্রেণির প্রাণী বা উদ্ভিদের কোষের ক্রোমোজোমের মধ্যে প্রকারভেদ দেখা যায়। এদের দেহকোষে যতগুলো ক্রোমোজোম থাকে, তাদের মধ্যে এক জোড়া ক্রোমোজোম অন্যান্য ক্রোমোজোম থেকে ভিন্নধর্মী। এই ভিন্নধর্মী ক্রোমোজোমকে সেক্স ক্রোমোজোম বলা হয়। বাকি ক্রোমোজোমগুলোকে অটোজোম (Autosorne) বলা হয়। সেক্স ক্রোমোজোমগুলোকে সাধারণত X ও Y নামে নামকরণ করা হয়ে থাকে। তোমরা এর মাঝে আগের অধ্যারে দেখে এসেছ যে মানুষের প্রতিটি দেহকোষে ২৩ জোড়া ক্রোমোজোম আছে এর মাঝে ২২ জোড়া অটোজোম এবং এক জোড়া সেক্স ক্রোমোজোম।
 

১১.১.২ ক্রোমোজোমের রাসায়নিক গঠন
ক্রোমোজোমের রাসায়নিক গঠনে দেখা যায় এর মধ্যে রয়েছে নিউক্লিক এসিড, প্রোটিন এবং অন্যান্য উপাদান ।

নিউক্লিক এসিড: নিউক্লিক এসিড দুই ধরনের হয়, (ক) ডিএনএ বা ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক এসিড (DNA) এবং (খ) আরএনএ বা রাইবোনিউক্লিক এসিড (RNA)।


ডিএনএ (DNA)
ডিএনএ-এর পূর্ণ নাম ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক এসিড। ডিএনএ সকল জীবের আদি বস্তু এবং জীবকোষের নিউক্লিয়াসের সকল ক্রোমোজোমে এর অবস্থান রয়েছে। এ তথ্যটি উদঘাটিত হওয়ার পর বিজ্ঞানীরা ডিএনএর পাঠনিক উপাদান জানার কাজে সচেষ্ট হলেন। ১৯৫৩ সালে জেমস ওয়াটসন ও ফ্রানসিস ক্লিক ডিএনএ অণুর পঠন বের করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই যুগান্তকারী পেয়েছিলেন। তারা দেখিয়েছিলেন যে ডিএনএ অণু আসলে দুটি সুতার মতো লম্বা নিউক্লিওটাইডের (চিত্র ১১.০৪) শেকল বা পলিনিউক্লিওটাইড। প্রতিটি নিউক্লিওটাইডে রয়েছে একটি করে পাঁচ কার্বনের রাইজোম শর্করা। একটি ফসফেট এবং নাইট্রোজেন ক্ষারক। ডিএনএ অণুর আকৃতি প্যাঁচানো সিঁড়ির মতো (চিত্র ১১.০৫)। প্যাঁচানো সিঁড়ির দুপার্শ্বের মূল কাঠামো গঠিত হয় নিউক্লিওটাইডের পাঁচ কার্বন যুক্ত শর্করা এবং ফসফেট দিয়ে। শর্করা ফসফেটের কাঠামোটি বাইরের কাঠামো। ভেতরে নিউক্লিওটাইডগুলো যুক্ত থাকে নাইট্রোজেনের ক্ষারক দিয়ে। চার  ধরনের নাইট্রোজেন ক্ষারকের মধ্যে দুটি করে ক্ষার জোড় বেঁধে তৈরি করে সিঁড়ির ধাপগুলো। ডিএনএ অণুর চার ধরনের ক্ষারক হচ্ছে এডিনিন (A), গুয়ানিন (G), সাইটোসিন (C) ও থাইমিন (T)-এর মাঝে এডিনিন সবসময় থাইমিনের সাথে (A-T) এবং সাইটোসিন সবসময় গুয়ানিনের সাথে (C-G) জোড়া বাঁধে। ডিএনএ প্যাঁচানো সিঁড়ির মতো কাঠামোকে ডাবল হেলিক্স বলা হয়ে থাকে।
 

আরএনএ (RNA)
আরএনএ হলো রাইবোনিউক্লিক এসিড (চিত্র ১১.০৬)। DNA-এর মতো দুটি শেকলের বদলে এটি একটিমাত্র পলিনিউক্লিওটাইড শেকলে ভাঁজ হয়ে থাকে। আরএনএ পাঁচ কার্বন যুক্ত রাইবোজ শর্করা ও ফসফেট নির্মিত একটি মাত্র পার্শ্ব কাঠামো দ্বারা গঠিত, যার ডিএনএর মতোই চার ধরনের নাইট্রোজেন ক্ষারক রয়েছে । শুধু পার্থক্য হচ্ছে ডিএনএতে থাইমিন আছে, কিন্তু আরএনএ-তে থাইমিনের পরিবর্তে থাকে ইউরাসিল (U)। জীবকোষে আরএনএ তিন রকমের। সেগুলো হচ্ছে: (ক) বার্তা বাহক আরএনএ (Messenger RNA বা mRNA), (খ) রাইবোজোমাল আরএনএ (Ribosomal RNA বা rRNA) এবং (গ) ট্রান্সফার আরএনএ (Transfer RNA বা t RNA)।


প্রোটিন
ক্রোমোজোমে দুই ধরনের প্রোটিন থাকে। সেগুলো হচ্ছে-হিস্টোন ও নন-হিস্টোন প্রোটিন। ওপরের বর্ণিত রাসায়নিক পদার্থগুলো ছাড়া ক্রোমোজোমে লিপিড, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম আनন ও অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ অল্প পরিমাণে পাওয়া যায়।
 

১১.১.৩ জিন
অষ্টম শ্রেণিতে দ্বিতীয় অধ্যায় এ আমরা বংশগতি বলতে কী বুঝায় সেটা জেনেছি। বংশগতিতে ক্রোমোজোমের কী ভূমিকা আমরা সেটাও জেনে এসেছি। মেন্ডেল বংশগতির ধারক এবং বংশপত বৈশিষ্ট্যের নির্ধারকের একককে ফ্যাক্টর নামে আখ্যায়িত করেছিলেন এবং বলেছিলেন ফ্যাক্টরগুলোর মাধ্যমে পিতামাতার বৈশিষ্ট্যগুলো বংশপরম্পরায় সন্তানদের মাঝে বাহিত হয়। বর্তমানে বংশগতি বিদ্যার অগ্রগতির ফলে বংশগতির কৌশল সম্বন্ধে আরও অনেক জ্ঞান অর্জিত হয়েছে। মটরশুঁটি ছাড়াও অন্যান্য জীবের বংশানুগতির পদ্ধতি নিয়ে এর পর ব্যাপক গবেষণা শুরু হয়। বেটসন ১৯০৮ সালে মেন্ডেলের ফ্যাক্টরের নামের পরিবর্তে জিনেটিক শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। ১৯০৯ সালে জোহানসেন বংশপরম্পরায় কোনো বৈশিষ্ট্যের নির্ধারক একককে আরো সংক্ষেপে জিন নামকরণ করেন। ক্রোমোজোমের ভেতর ডিএনএ র যে দীর্ঘ “শেকল” রয়েছে, তার একটি অংশে বংশগতির কোনো একটি একক লিপিবদ্ধ থাকে সেটিকে বলা হয় জিন। ক্রোমোজোমের গায়েই সন্নিবেশিত থাকে অসংখ্য জিন বা বংশগতির একক। জীবজন্তুর বৈচিত্র্যের নিয়ন্ত্রক হচ্ছে জিন। এককোষী ব্যাকটেরিয়া, আমাশয় রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু অ্যামিবা থেকে শুরু করে বিশাল আকৃতির বটবৃক্ষ, বিশাল আকৃতির হাতি, তিমি ইত্যাদি বুদ্ধিমান জীব মানুষ পর্যন্ত সবারই আকৃতি প্রকৃতি নির্ধারিত হয় তার জিনের সংকেত দ্বারা।

বংশবৃদ্ধির প্রয়োজনে প্রতিটা জীব তার অনুরূপ জীবের জন্ম দেয়। এসবই জিনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এভেরি, ম্যাকলিওড এবং ম্যাককারটি (১৯৪৪) মানুষের নিউমোনিয়া রোগ সৃষ্টিকারী নিউমোকক্কাস ব্যাকটেরিয়ার রাসায়নিক গঠন যেমন- প্রোটিন, শর্করা, ফ্যাট এবং নিউক্লিক এসিডগুলো পৃথক করেছিলেন। প্রত্যেকটি উপাদান নিয়ে পৃথকভাবে পরীক্ষার মাধ্যমে তাঁরা নিশ্চিত হলেন যে শুধু ডিএনএ বংশগত বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণের সাথে সম্পর্কিত। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ডিএনএ কীভাবে বংশগত বৈশিষ্ট্যগুলোকে পরবর্তী বংশে সঞ্চালিত করে? ছবিতে একটি ডিএনএ কীভাবে দুটি ডিএনএতে বিভাজিত হয় দেখানো হয়েছে। প্রথমে ডিএনএ শেকল লম্বালম্বিভাবে স্ববিভাজনের (Self duplication) দ্বারা ভাগ হয়ে পরিপূরক দুটি পার্শ্ব কাঠামো গঠিত হয়। তখন কোষের মাঝে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা A, T, C এবং G ক্ষারকগুলো ডিএনএ র উন্মুক্ত A, T, C এবং G সাথে যুক্ত হয়। সব সময়ই A-এর সাথে T এবং C-এর সঙ্গে G যুক্ত হয় বলে একটি ডিএনএ অণু ভেঙে তৈরি হয় দুটি নতুন অণু। নতুনভাবে সৃষ্ট প্রতিটা অণুতে থাকে একটা পুরাতন ও একটা নতুন ডিএনএ পার্শ্ব কাঠামো, যার ফলে প্রতিটি নতুন ডিএনএ অণু হয় মূলটির হুবহু অণুলিপি। এভাবে ডিএনএ অণুতে রক্ষিত জীবের বংশগত বৈশিষ্ট্যের সাংকেতিক নীলনকশা পরিবর্তন ছাড়াই সংরক্ষিত হয় এবং পরবর্তী প্রজন্মে সঞ্চারিত হয়।

অতএব তোমরা বুঝতে পারছ বংশগত ধারা পরিবহনে ক্রোমোজোম, ডিএনএ কিংবা আরএনএ র গুরুত্ব অপরিসীম। ক্রোমোজোমের প্রধান উপাদান হচ্ছে ডিএনএ। ডিএনএ র অংশ বিশেষ জীবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের প্রকৃত ধারক, যাকে জিন বলা হয়। আরএনএ জীবের বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করতে ডিএনএ-কে সাহায্য করে। ক্রোমোজোম ডিএনএ এবং আরএনকে ধারণ করে বাহক হিসাবে। ক্রোমোজোম ডিএনএ, আরএনএ-কে সরাসরি বহন করে পিতা-মাতা থেকে তাদের পরবর্তী বংশধরের মাঝে নিয়ে যায়। কোষ বিভাজনের মায়োসিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বংশগতির এ ধারা অব্যাহত থাকে। এ কারণে ক্রোমোজোমকে বংশগতির ভৌত ভিত্তি বলে আখ্যায়িত করা হয়।


ডিএনএ টেস্ট
যখন কোনো সন্তানের পিতৃত্ব বা মাতৃত্ব নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয় অথবা কেউ যদি কোনো সন্তানকে তার সন্তান হিসেবে দাবি করে, তখন ডিএনএ টেস্ট দ্বারা এ ধরনের বিবাদ নিষ্পত্তি করা যায়। ডিএনএ টেস্ট করার সময় পিতা, মাতা ও সন্তানের শরীর থেকে কোনো ধরনের জীবকোষ (রক্ত, লালা ইত্যাদি) সংগ্রহ করা হয়। সেখান থেকে নানা ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়ার দ্বারা পিতা, মাতা ও সন্তানের ডিএনএ র একটি চিত্র (প্রোফাইল) প্রস্তুত করা হয়। এরপর সন্তানের ডিএনএ র চিত্রের সাথে পিতামাতার ডিএনএ চিত্র মিলানো হয় এবং যদি প্রত্যেকের সাথে প্রায় ৫০% মিল পাওয়া যায়, তাহলে সে সেই সন্তানের জৈব পিতামাতা (Biological Parents) অর্থাৎ প্রকৃত পিতামাতা হিসাবে গণ্য করা হয় ।
 

১১.১.৪ মানুষের জেনেটিক বিশৃংখলা
চিকিৎসাবিজ্ঞানে মানুষের জেনেটিক বিশৃংখলার কারণে সৃষ্ট রোগগুলো একটি অনেক বড় উদ্বেগের বিষয়। এ রোগগুলো কীভাবে মাতাপিতা থেকে সন্তানদের মধ্যে সঞ্চালিত হয় এবং কী ধরনের জেনেটিক বিশৃংখলার কারণে রোগগুলো ঘটে— এগুলো বিজ্ঞানীরা বুঝতে শুরু করেছেন। নিম্নলিখিত কারণে এ রোগগুলো ঘটতে পারে-
১. পয়েন্ট মিউটেশন বা জিনের ভিতর পরিবর্তনের জন্য
২. ক্রোমোজোম সংখ্যার হ্রাস বা বৃদ্ধির জন্য
৩. ক্রোমোজোমের কোনো অংশের হ্রাস বা বৃদ্ধির জন্য
৪. মায়োসিস কোষ বিভাজনের সময় হোমোলোগাস (মা থেকে পাওয়া একটি এবং বাবার কাছ থেকে পাওয়া আরেকটি ক্রোমোজোমের জোড়া) ক্রোমোজোমের বিচ্ছিন্নকরণ (Non-disjuntion) না ঘটার জন্য। এই কারণগুলোর জন্য মানুষের যে বংশগত রোগগুলো সৃষ্টি হয় তার কয়েকটা নিচে উল্লেখ করা হলো:
১. সিকিল সেল (Sickle cell): মানুষের রক্ত কণিকার এ রোগটি হয় পয়েন্ট মিউটেশনের ফলে। স্বাভাবিক লোহিত রক্ত কণিকাগুলোর আকৃতি চ্যাপ্টা। কিন্তু সিকিল সেলের ক্ষেত্রে লোহিত কণিকাগুলোর আকৃতি কিছুটা কাস্তের মতো হয়। সিকিল সেলগুলো সূক্ষ্ম রক্তনালিগুলোতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে এবং শরীরের সেই স্থানগুলোতে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। এই রক্তকণিকাগুলো যত দ্রুত ভেঙে যায়, তত দ্রুত লোহিত রক্তকণিকা তৈরি হয় না বলে শরীরে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়।
২. হানটিংটনস রোগ (Huntington's Disease) : এ রোগটিও হয় পয়েন্ট মিউটেশনের কারণে। এই রোগে মস্তিষ্ক ঠিকমতো কাজ করে না। শরীরের পেশিগুলোর মধ্যে সমন্বয় করার ক্ষমতা লোপ পায় এবং পরবর্তীতে মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মৃত্যু ঘটে। এ রোগটির লক্ষণ আক্রান্ত ব্যক্তির বয়স চল্লিশ হওয়ার আগে প্রকাশ পায় না। মায়োসিস কোষ বিভাজনের সময় অ্যানাফেজ ধাপে হোমোলোগাস ক্রোমোজোমগুলোর যেকোনো একটি জোড়ায় ক্রোমোজোম দুটির একটি অপরটি থেকে পৃথক না হয়ে দুটিই যেকোনো মেরুতে চলে যায়। এ অবস্থাকে নন-ডিসজাংশন বলে। যেকোনো একটি বিশেষ ক্রোমোজোমের নন-ডিসজাংশন ঘটলে একসাথে বেশ কতগুলো লক্ষণ দেখা দেয়, তাকে সিনড্রোম বলে।
৩. ডাউন'স সিনড্রোম (Down's Syndrome) : মানুষের ২১তম ক্রোমোজোমের নন-ডিসজাংশনের ফলে এ রোগ হয়। সে কারণে ডাইন'স সিনড্রোমের মানুষে দুটির বদলে তিনটি ২১ নম্বর ক্রোমোজম থাকে। এদের চোখের পাতা ফুলা, নাক চ্যাপ্টা, জিহ্বা লম্বা এবং হাতগুলো তুলনামূলকভাবে ছোট হয়। এরা হাসিখুশি প্রকৃতির খর্বাকৃতির এবং এদের মানসিক পরিপক্বতা কম হয় ।
৪. ক্লিনিফেলটার'স সিনড্রোম (Klinefelter's Sysndrome) : এ রোগটি পুরুষ মানুষে সেক্স ক্রোমোজোমের ডিসজাংশনের কারণে সৃষ্টি হয়। ফলে পুরুষটির কোষে XY ক্রোমোজোম ছাড়াও অতিরিক্ত আর একটি X ক্রোমোজোম সংযুক্ত হয় এবং পুরুষটি হয় XXY ক্রোমোজোম বিশিষ্ট। ক্লিনিফেলটারস সিনড্রম বিশিষ্ট বালকদের মধ্যে একজন স্বাভাবিক পুরুষের যে বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যগুলো থাকা দরকার তা থাকে না। এদের কণ্ঠস্বর খুব কর্কশ হয় এবং স্তনগুলো আকারে বড় হয়। এদের বৃদ্ধি কম থাকে এবং এরা বন্ধ্যা হয়।
৫. টার্নার'স সিনড্রোম (Turner's Syndrome) : এ রোগটি নারীদের সেক্স ক্রোমোজোমের নন- ডিসজাংশনের কারণে হয় এবং স্ত্রীলোকটি হয় XX -এর পরিবর্তে শুধু একটি X ক্রোমোজোম-বিশিষ্ট । এ ধরনের স্ত্রীলোক খর্বাকৃতি হয় এবং এদের ঘাড় প্রশস্ত হয়। পূর্ণবয়স্ক অবস্থায় এদের স্তন ও জনন অঙ্গের বিকাশ ঘটে না। যার কারণে এরা বন্ধ্যা হয়। পুরুষ মানুষের সেক্স ক্রোমোজোম (X এবং Y) ছাড়া মানুষের অন্য সবগুলো ক্রোমোজোম দুটি করে আছে (হোমোলোগাস), যার অর্থ প্রত্যেকটা জিনও দুটি করে আছে। কাজেই কোনো একটি ক্রোমোজোমের কোনো একটি জিনে সমস্যা থাকলে, অন্য ক্রোমোজোমের সেই জিনটি সাধারণত দায়িত্ব নেয় বলে সমস্যাটি প্রকাশ পায় না। সমস্যাটি যদি x ক্রোমোজোমের কোনো একটি জিনে ঘটে থাকে তাহলে নারীদের দ্বিতীয় X ক্রোমোজোমের জিনটি সেই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারে। কিন্তু পুরুষ মানুষের যেহেতু একটি মাত্র X ক্রোমোজম তাই সমস্যাটি x ক্রোমোজোমে হলে তার দ্বিতীয় কোনো পথ খোলা থাকে না। তাই X ক্রোমোজোম-সংক্রান্ত রোগগুলো পুরুষ মানুষের বেলায় অনেক বেশি হয়। একইভাবে বলা যায় Y ক্রোমোজোমের কোনো জিনে সমস্যা থাকলে সেটি শুধু পুরুষ মানুষের সমস্যা এবং দ্বিতীয় কোনো জিন না থাকায় সেটিও তারা কাটিয়ে উঠতে পারে না। প্রত্যেকটি জিনের দুটি করে কপি থাকে, তার মাঝে যেটি, তার বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে সেটিকে প্রকট (Dominant) জিন বলে। যেটি তার বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে না, সেটিকে প্রচ্ছন্ন (Recessive) জিন বলে। আবার যদি দুটি জিনই একই সাথে প্রচ্ছন্ন কিংবা একই সাথে প্রকট হয়, তখন তাকে হোমোজাইগাস বলে। যদি একটি প্রচ্ছন্ন অন্যটি প্রকট হয়, তখন তাকে হেটারোজাইগাস বলে। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টা সহজে বোঝা যাবে। x ক্রোমোজোমের জিন-সংক্রান্ত একটি রোগের নাম হেমোফিলিয়া এবং এটি প্রচ্ছন্ন জিন। কাজেই কন্যাসন্তানের বেলায় একটি x ক্রোমোজোমের হেমোফিলিয়া জিন থাকলেও অন্য x ক্রোমোজোমের সুস্থ জিনটি প্রকট হবে বলে হেমোফিলিয়া রোগটি প্রকাশিত হবে না। নিজের ভেতর রোগটি প্রকাশিত না হলেও এই কন্যা সন্তান রোগের বাহক হবে। কন্যাসন্তানের হেমোফিলিয়া রোগ হতে হলে তার দুটি এক্স ক্রোমোজোমেই হেমোফিলিয়ার জিন আসতে হবে। কিন্তু পুত্রসন্তানের বেলায় একটি হেমোফিলিয়ার জিন এলেই তার রোগটি প্রকাশিত হবে, কাজেই ছেলেদের বেলায় অনেক বেশি হেমোফিলিয়ার রোগ দেখা যায়।

 

Content added || updated By

Related Question

View More
VOTE STATISTICS
OPTION 1 : 0
OPTION 2 : 0
OPTION 3 : 0
OPTION 4 : 0
VOTE STATISTICS
OPTION 1 : 0
OPTION 2 : 0
OPTION 3 : 0
OPTION 4 : 0
VOTE STATISTICS
OPTION 1 : 0
OPTION 2 : 0
OPTION 3 : 0
OPTION 4 : 0
VOTE STATISTICS
OPTION 1 : 0
OPTION 2 : 0
OPTION 3 : 0
OPTION 4 : 0
VOTE STATISTICS
OPTION 1 : 0
OPTION 2 : 0
OPTION 3 : 0
OPTION 4 : 0

Promotion