SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

Academy

বিশ্বের অনেক দেশের প্রধান খাদ্যশস্য কি? 

Created: 8 months ago | Updated: 8 months ago

পঞ্চম অধ্যায়

কৃষিজ উৎপাদন

এ অধ্যায়ে ফসল উৎপাদনের মধ্যে গম চাষ, মাশরুম চাষ পদ্ধতি এবং কৃষিজাত দ্রব্য সংগ্রহ ও বাছাই সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। মাছ চাষের মধ্যে মিশ্র মাছ চাষ পদ্ধতি (রুই, কাতলা, মৃগেল), চিংড়ি চাষ পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে। গৃহপালিত পশুর মধ্যে গরু পালন পদ্ধতি ও রোগ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়েছে।

চিত্র প

এ অধ্যার পাঠ শেষে আর

• শস্য চাষ পদ্ধতি ব্যাখ্যা করতে পারব

• মাশরুম চাষের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করতে পারব।

• মিশ্র মাছ চাষ পদ্ধতি ব্যাখ্যা করতে পারব।

• চিংড়ি চাষ পদ্ধতি বর্ণনা করতে পারব।

• গৃহপালিত পশুপালন পদ্ধতি বর্ণনা করতে পারব

• কৃষিজাত দ্রব্য সংগ্রহ ও বাছাইকরণ কাজ বর্ণনা করতে পারব।

• গৃহপালিত পশুর রোগ প্রতিরোধের উপায় ও রোগ ব্যবস্থাপনা বিশ্লেষণ করতে পারব

কৃষিজ উৎপাদন

পাঠ ১ : গম চাষ পদ্ধতি

দানা ফসল শর্করার প্রধান উৎস। এ কারণে পৃথিবীর সকল দেশে খাদ্যশস্য হিসেবে দানা ফসল চাষ করা হয়। বিশ্বের অনেক দেশে গম প্রধান খাদ্যশস্য। বাংলাদেশে ধানের পরে খাদ্যশস্য হিসেবে গমের অবস্থান দ্বিতীয় । বর্তমানে দেশের প্রায় সব জেলাতেই গমের চাষ করা হয়। তবে দিনাজপুর, রংপুর, ঠাকুরগাঁও, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, জামালপুর, যশোর ও কুষ্টিয়া জেলায় বেশি চাষ হয় বাংলাদেশে গমের অনেক উচ্চফলনশীল অনুমোদিত জাত রয়েছে। তন্মধ্যে কাঞ্চন, আকবর, অগ্রাণী, প্রতিভা, সৌরভ, গৌরব, শতাব্দী, প্রদীপ, বিজয় ইত্যাদি জাত জনপ্রিয়

বপন সময় : গম শীতকালীন ফসল। বাংলাদেশে শীতকাল স্বল্পস্থায়ী। এ কারণে গমের ভালো ফলন পেতে হলে সঠিক সময়ে গম বীজ বপন করা উচিত। আমাদের দেশে নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত গম বপনের উপযুক্ত সময়। উঁচু ও মাঝারি দোঁআশ মাটিতে পম ভালো জন্মে। তবে লোনা মাটিতে গমের ফলন কম হয়। যেসব এলাকায় ধান কাটতে ও জমি তৈরি করতে দেরি হয় সেসব এলাকায় কাঞ্চন, আকবর, প্রতিভা, গৌরব চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায় ।

বীজের হার : বীজ গজানোর হার শতকরা ৮৫ ভাগের বেশি হলে ভালো। এক হেক্টর জমিতে ১২০ কেজি গম বীজ বপন করতে হয়। বপনের আগে বীজ শোধন করে নিলে বীজবাহিত অনেক রোগ প্রতিরোধ করা যায়। প্রতি কেজি বীজ ৩ গ্রাম প্রভেক্স ২০০-এর সাথে ভালো করে মিশিয়ে বীজ শোধন করা যায় ।

বপন পদ্ধতি : জমিতে জো (যে অবস্থায় জমিতে কাঙ্খিত পানি উপস্থিত থাকে, তাকে জো বলে।) এলে ৩-৪টি চাষ ও মই দিয়ে জমি ভালোভাবে তৈরি করতে হবে। জমিতে পর্যাপ্ত রস না থাকলে সেচ দেওয়ার পর জো এলে চাষ দিতে হবে। সারিতে বা ছিটিয়ে গম বীজ বপন করা যায়। ছিটিয়ে বপন করলে শেষ চাষের সময় সার ও বীজ ছিটিয়ে মই দিয়ে বীজ ঢেকে দিতে হয়। সারিতে বপনের ক্ষেত্রে জমি তৈরির পর ছোট হাত লাগুল দিয়ে ২০ সে.মি. দূরে দূরে সরু নালা তৈরি করতে হয়। ৪-৫ সে.মি. গভীর নালায় বীজ বপন করে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হয়। বপনের ১৫ দিন পর পর্যন্ত পাখি তাড়ানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

সার প্রয়োগ পদ্ধতি : সেচসহ চাষের ক্ষেত্রে মোট ইউরিয়া সারের তিন ভাগের দুই ভাগ এবং সবটুকু টিএসপি, এমওপি ও জিপসাম সার শেষ চাষের সময় দিতে হবে। বাকি এক ভাগ ইউরিয়া সার প্রথম সেচের সময় উপরি প্রয়োগ করতে হবে। সেচ ছাড়া চাষের ক্ষেত্রে পুরো ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি এবং জিপসাম সার শেষ চাষের সময় জমিতে দিতে হবে।

স্বপ্ন ভাবে গমের আবা

দেশি লাঙল দিয়ে সুইটি চাষ দিয়ে গম বীজ বপন করা যায়। ধান কাটার পর জমিতে জো আসার সাথে সাথে চাষ করতে হবে। আবার জমিতে পর্যাপ্ত রস না থাকলে সেচ দেয়ার পর জো আসলে চাষ দিতে হবে । প্রথমে একটি চাষ ও মই দিতে হবে। দ্বিতীয় চাষ দেওয়ার পর সব সার ও বীজ ছিটিয়ে দিয়ে মই দিয়ে বীজ ঢেকে দিতে হবে। বপনের ১৭-২১ দিনের মধ্যে হালকাভাবে প্রথম সেচ দিতে হবে। প্রথম সেচের সময় ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। বপনের ২৫-৩০ দিনের মধ্যে আগাছা সমন করলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে ।

গম চাষে রোগ দমন

গম চাষে পোকা মাকড়ের আক্রমণ তেমন একটা হয় না। তবে ছত্রাকজনিত বেশ কিছু রোগ দেখা দিতে পারে। এছাড়া অনেক সময় ইঁদুরের উপদ্রব দেখা যায়। ছত্রাকজনিত রোগের মধ্যে ১) পাতার মরিচা রোগ, ২) পাতার দাগ রোগ, ৩) গোড়া পচা রোগ, ৪) আলগা স্কুল রোগ এবং ৫) হীজের কালো দাগ রোগ অন্যতম।

পাতার মরিচা রোগে প্রথমে পাতার উপর ছোট গোলাকার হলুদাভ দাগ পড়ে। শেষ পর্যায়ে এ রোগে মরিচার মতো বাদামি বা কালচে রফে পরিণত হয়। হাত দিয়ে আক্রান্ত পাতা ধরা দিলে লালচে মরিচার মতো গুড়া হাতে লাগে। এ রোগের লক্ষণ প্রথমে নিচের পাতার, পরে সব পাতায় ও কাজে দেখা যায়। পাতার দাগ রোগে প্রথমে নিচের পাতার ছোট ডিম্বাকার দাগ পড়ে। পরে দাগ আকারে বেড়ে পাতা ঝলসে যায়। এ রোগের জীবাণু বীজে বা ফসলের পরিত্যক্ত অংশে বেঁচে থাকে। গোড়া পচা রোগে মাটির সমতলে পাছের গোড়ায় হলদে দাগ দেখা যায়। পরে দাগ পড় বানামি বর্ণ ধারণ করে আক্রান্ত স্থানের চারপাশ ঘিরে ফেলে। একসময় গাছ শুকিয়ে মারা যায়।

চিনা পাতার মরিচা রোগ

48

কৃষিশিক্ষা

গমের শিষ বের হওয়ার সময় আলগা ঝুল রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। আক্রান্ত গমের শিষ প্রথম দিকে পাতলা পর্দা দিয়ে ঢাকা থাকে। পরে তা ফেটে যায় এবং দেখতে কালো বুলের মতো দেখায়। বীজের কালো দাগ রোগের ফলে পমের খোলার বিভিন্ন আকারের বাদামি অথবা কালো দাগ পড়ে। বীজের সূর্ণে নাগ পড়ে এবং আস্তে আস্তে দাগ পুরো বীজে ছড়িয়ে পড়ে।

চিত্র : আলগা স্কুল রোগ

গমের এসব ছত্রাকজনিত রোগ প্রতিরোধের জন্য সমন্বিত ব্যবস্থা নিতে হবে। রোগ প্রতিরোধী

জাতের গম যেমন- কাঞ্চন, আকবর, অদ্রাণী, প্রতিভা, সৌরভ, গৌরব চাষ করতে হবে। রোগযুক্ত

জমি থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। গম বীজ বপনের আগে শোধন করে নিতে হবে। সুষম হাৱে

সার প্রয়োগ করতে হবে।

ইঁদুর গমের একটি প্রধান শত্রু। গমের শিষ আসার পর ইঁদুরের উপদ্রব শুরু হয়। গম পাকার সময় সবচেরে বেশি ক্ষতি করে। ইঁদুর দমনের রানা হাতে তৈরি বিষ টোপ বা বাজার থেকে কেনা বিষ টোপ ব্যবহার করা যায়। এসব বিষ টোপ সদ্য মাটি তোলা ইঁদুরের গর্তে বা চলাচলের রাস্তার পেতে রাখতে হয়। বিষ টোপ ছাড়া বাঁশ বা কাঠের তৈরি ফাঁদের সাহায্যেও ইঁদুর দমন করা যায়।

কাজ : শিক্ষার্থীরা দলে ভাগ হয়ে বিনা চাষে গমের আবাদ এবং স্বল্প চাষে গমের আবাদ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করে শ্রেণিতে উপস্থাপন করবে ।

নতুন লক্ষ : বিনা চাষে পদের আবাদ, স্বল্প চাষে গমের আবাদ, পাতার মরিচা রোগ, আলগা খুল

রোগ

পাঠ ৩ : মাশরুম চাষের প্রয়োজনীয়তা

আমরা জানি ছত্রাক ফসলের অনেক রোগের জন্য নারী । কিন্তু সব ছত্রাক রোগ সৃষ্টি করে না। অনেক ছত্রাক রয়েছে যারা আমাদের জন্য উপকারী। মাশরুম এমন এক ধরনের ছত্রাক যা সম্পূর্ণ খাওয়ার উপযোগী, পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও ঔষধি গুণ সম্পন্ন। আসলে মাশরুম এক ধরনের মৃতজীবী ছত্রাকের ফলন্ত অঙ্গ যা ভক্ষণযোগ্য ।

চিত্র: মাশকুম (ওয়েস্টার)

মাশরুম ও ব্যাঙের ছাতা এক জিনিস নয়। ব্যাঙের ছাতা প্রাকৃতিকভাবে যত্রতত্র গচ্ছিয়ে উঠা বিষাক্ত ছত্রাকের ফলন্ত অঙ্গ। আর মাশরুম টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে উৎপন্ন বীজ দ্বারা পরিচ্ছন্ন পরিবেশে চাষ করা সবজি।

কৃষিজ উৎপাদন

মাশরুম নিজে সুস্বাদু খাবার এবং অন্য খাবারের সাথে ব্যবহার করলে তার স্বাদও বাড়িয়ে দেয়। মাশরুমের স্বাদ মাংসের মতো। মাশরুম দিয়ে চায়নিজ ও পাঁচতারা হোটেলে নানা রকম মুখরোচক খাবার তৈরি করা হয়। তবে দেশীয় পদ্ধতিতে মাশরুম সবজি, ফ্রাই, স্যুপ, পোলাও, বিরিয়ানি, নুডুলস, চিংড়ি ও ছোট মাছের সাথে ব্যবহার করা যায়। মাশরুম ভাজা, শুকনা বা গুঁড়া হিসেবে খাওয়া যায়।

পুষ্টিমান বিচারে মাশরুম সবার সেরা ফসল। কারণ মাশরুমে অতি প্রয়োজনীয় খাদ্যোপাদান, যেমন— প্রোটিন, ভিটামিন ও খনিজপদার্থ অতি উচ্চ মাত্রায় আছে। প্রতি ১০০ গ্রাম শুকনা মাশরুমে ২৫-৩৫ গ্রাম আমিষ, ১০-১৫ গ্রাম সব ধরনের ভিটামিন ও খনিজপদার্থ, ৪০-৫০ গ্রাম শর্করা ও আঁশ এবং ৪-৬ গ্রাম চর্বি আছে। মাশরুমের আমিষ অত্যন্ত উন্নত মানের। এ আমিষে মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় ৯টি এমাইনো এসিডই আছে। এ আমিষ গ্রহণে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও মেদভুঁড়ি হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। কারণ আমিষের সাথে ক্ষতিকর চর্বি থাকে না। পক্ষান্তরে মাশরুমের চর্বি হাড় ও দাঁত তৈরিতে এবং ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়তা করে। মাশরুমের শর্করায় অনেক ধরনের রাসায়নিক উপাদান থাকে যা অনেক জটিল রোগ নিরাময়ে কাজ করে।

ভিটামিন ও মিনারেল দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে। আমাদের দেহের জন্য দৈনিক নির্দিষ্ট পরিমাণ ভিটামিন ও খনিজপদার্থের চাহিদা রয়েছে। আমরা প্রতিদিন মাশরুম খাওয়ার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজপদার্থের চাহিদা মেটাতে পারি। মাশরুমে থায়ামিন (বি ১), রিবোফ্লাবিন (বি ২), নায়াসিন ইত্যাদি ভিটামিন এবং ফসফরাস, লৌহ, ক্যালসিয়াম, কপার ইত্যাদি খনিজপদার্থ প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। পুষ্টিগুণের কারণে মাশরুম অনেক রোগের প্রতিরোধক ও নিরাময়কারী হিসেবে কাজ করে, যেমন- ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তশূন্যতা, আমাশয়, চুল পড়া, ক্যান্সার, টিউমার ইত্যাদি ।

একজন সুস্থ লোকের প্রতিদিন ২০০-২৫০ গ্রাম সবজি খাওয়া প্রয়োজন। আমরা প্রতিদিন গড়ে ৪০-৫০ গ্রাম (আলু ব্যতীত) সবজি খাই। যা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। ফলে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেলের অভাবে বিভিন্ন রোগে ভুগে থাকি। বাংলাদেশে দ্রুত চাষযোগ্য জমি কমে যাচ্ছে। অধিকাংশ জমি ধান চাষে ব্যবহৃত হয়। সবজি চাষের আওতায় জমির পরিমাণ বাড়ানো কঠিন । এমতাবস্থায় মাশরুম হতে পারে আদর্শ ফসল। মাশরুম এমন একটি ফসল যা চাষ করার জন্য কোনো উর্বর জমির প্রয়োজন নেই। ঘরের মধ্যে তাকের উপর রেখেও চাষ করা যায়

কৃষিজ উৎপাদন

মাশরুম নিজে সুস্বাদু খাবার এবং অন্য খাবারের সাথে ব্যবহার করলে তার স্বাদও বাড়িয়ে দেয়। মাশরুমের স্বাদ মাংসের মতো। মাশরুম দিয়ে চায়নিজ ও পাঁচতারা হোটেলে নানা রকম মুখরোচক খাবার তৈরি করা হয়। তবে দেশীয় পদ্ধতিতে মাশরুম সবজি, ফ্রাই, স্যুপ, পোলাও, বিরিয়ানি, নুডুলস, চিংড়ি ও ছোট মাছের সাথে ব্যবহার করা যায়। মাশরুম ভাজা, শুকনা বা গুঁড়া হিসেবে খাওয়া যায়।

পুষ্টিমান বিচারে মাশরুম সবার সেরা ফসল। কারণ মাশরুমে অতি প্রয়োজনীয় খাদ্যোপাদান, যেমন— প্রোটিন, ভিটামিন ও খনিজপদার্থ অতি উচ্চ মাত্রায় আছে। প্রতি ১০০ গ্রাম শুকনা মাশরুমে ২৫-৩৫ গ্রাম আমিষ, ১০-১৫ গ্রাম সব ধরনের ভিটামিন ও খনিজপদার্থ, ৪০-৫০ গ্রাম শর্করা ও আঁশ এবং ৪-৬ গ্রাম চর্বি আছে। মাশরুমের আমিষ অত্যন্ত উন্নত মানের। এ আমিষে মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় ৯টি এমাইনো এসিডই আছে। এ আমিষ গ্রহণে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও মেদভুঁড়ি হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। কারণ আমিষের সাথে ক্ষতিকর চর্বি থাকে না। পক্ষান্তরে মাশরুমের চর্বি হাড় ও দাঁত তৈরিতে এবং ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়তা করে। মাশরুমের শর্করায় অনেক ধরনের রাসায়নিক উপাদান থাকে যা অনেক জটিল রোগ নিরাময়ে কাজ করে।

ভিটামিন ও মিনারেল দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে। আমাদের দেহের জন্য দৈনিক নির্দিষ্ট পরিমাণ ভিটামিন ও খনিজপদার্থের চাহিদা রয়েছে। আমরা প্রতিদিন মাশরুম খাওয়ার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজপদার্থের চাহিদা মেটাতে পারি। মাশরুমে থায়ামিন (বি ১), রিবোফ্লাবিন (বি ২), নায়াসিন ইত্যাদি ভিটামিন এবং ফসফরাস, লৌহ, ক্যালসিয়াম, কপার ইত্যাদি খনিজপদার্থ প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। পুষ্টিগুণের কারণে মাশরুম অনেক রোগের প্রতিরোধক ও নিরাময়কারী হিসেবে কাজ করে, যেমন- ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তশূন্যতা, আমাশয়, চুল পড়া, ক্যান্সার, টিউমার ইত্যাদি ।

একজন সুস্থ লোকের প্রতিদিন ২০০-২৫০ গ্রাম সবজি খাওয়া প্রয়োজন। আমরা প্রতিদিন গড়ে ৪০-৫০ গ্রাম (আলু ব্যতীত) সবজি খাই। যা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। ফলে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেলের অভাবে বিভিন্ন রোগে ভুগে থাকি। বাংলাদেশে দ্রুত চাষযোগ্য জমি কমে যাচ্ছে। অধিকাংশ জমি ধান চাষে ব্যবহৃত হয়। সবজি চাষের আওতায় জমির পরিমাণ বাড়ানো কঠিন । এমতাবস্থায় মাশরুম হতে পারে আদর্শ ফসল। মাশরুম এমন একটি ফসল যা চাষ করার জন্য কোনো উর্বর জমির প্রয়োজন নেই। ঘরের মধ্যে তাকের উপর রেখেও চাষ করা যায়

কৃষিজ উৎপাদন

মাশরুমের বীজ বা স্পন তৈরি মাশরুমের বীজ ল্যাবরেটরিতে টিস্যু কালচারের মাধ্যমে উৎপাদন করা হয়। ভাষি পর্যায়ে মাশরুম চাষের জন্য প্যাকেটজাত বীজ কিনতে পাওয়া যায় যাকে বাণিজ্যিক স্পন বলে। আবার খড় নিয়ে চাষিরা নিজেরাও স্পন তৈরি করে নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে চাষিদেরকে বাজার থেকে মাদার স্পন সংগ্রহ করে স্পন তৈরি করে নিতে হয়।

চিত্র। বাণিজ্যিক স্পন

চাবার তৈরি মাশরুম চাষের ফরটিতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন প্রবেশের জন্য জানালা রাখতে হবে। ফরটিতে আবহা আলোর ব্যবস্থা রাখতে হবে। ঘরের তাপমাত্রা ২০-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। মাশরুম আর্দ্র অবস্থা পছন্দ করে। ঘরটিতে ৭০-৮০% আপেক্ষিক আর্দ্রতার ব্যবস্থা করতে হবে। মাশরুম চাষঘরে অসংখ্য অনুজীবের শ্বাস-প্রশ্বাসের ফলে প্রচুর কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন হয়। কার্বন ডাই অক্সাইড ভারী বলে নিচের দিকে জয়া হয়। এজন্য বেড়ার নিচে খোলা রাখতে হয়।

স্পন সহ চাষার তৈরির পর বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান থেকে পলি প্যাকেটে তৈরি স্পন সহ করতে হবে । ভালো স্পনের বৈশিষ্ট্য হলো প্যাকেটটি সুষমভাবে মাইসিলিয়াম দ্বারা পূর্ণ ও সাদা হবে। স্পন সংগ্রহের পর তাড়াতাড়ি প্যাকেট কাটার ব্যবস্থা করতে হবে। কাটতে দেরি হলে বস্তা থেকে প্যাকেট বের করে আলাদা আলাদা আরগায় ঘরের ঠাণ্ডা স্থানে রাখতে হবে।

প্যাকেট কর্তন । চাষঘরে বসানোর আগে স্পন প্যাকেট সঠিক নিয়মে কেটে চেঁছে পানিতে চুৰিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। স্পন প্যাকেটের কোনাযুক্ত দুই কাঁধ বরাবর প্রতি কাঁথে ৫ সেমি লম্বা এবং ১ ইঞ্চি ব্যাস করে কাটতে হবে। উত্তর পার্শ্বের এ কাটা জায়গার সাদা অংশ ব্লেড দিয়ে চেঁছে ফেলতে হবে। আবার প্যাকেটটি ৫-১৫ মিনিট পানিতে উপুড় করে চুবিয়ে নিতে হবে। ডুবানোর পর পানি ভালোভাবে ঝরিয়ে সরাসরি চাষঘরের মেঝেতে অথবা তাকে সারি করে সাজিয়ে চাষ করতে হবে।

পরিচর্যা চাষঘরের মেঝে বা তাকে দুই ইঞ্চি পর পর স্পন সাজাতে হবে। স্পন প্যাকেটের চারপাশের আর্দ্রতা ৭০-৮০% রাখার জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী গরমে ৪-৫ বার, শীতে বা বর্ষায় ২-৩ যার পানি স্প্রে করতে হবে। স্প্রেয়ারের নজল প্যাকেটের এক ফুট উপরে রেখে স্প্রে করতে হবে। আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য স্পন প্যাকেটের উপর কখনো খবরের কাগজ ভিজিয়ে, কখনো বস্তা ভিজিয়ে একটু উঁচু করে রাখতে হবে।

কৃষিশিক্ষা

অন্যান্য পরিচর্যা পরিচর্যা ঠিকমতো হলে ২-৩ দিনের মধ্যে মাশরুমের অঙ্কুর পিনের মতো বের হবে। প্রতি পার্শ্বে ৮-১২টি বড় অঙ্কুর রেখে ছোটগুলো কেটে ফেলতে হবে। ৫-৭ দিনের মধ্যে মাশরুম তোলার উপযোগী হবে। প্রথমবার মাশরুম তোলার পর একদিন বিশ্রাম অবস্থায় রাখতে হবে। পরের দিন আগের কাটা অংশে পুনরায় ব্লেড দিয়ে চেঁছে ফেলে পানি স্প্রে করতে হবে। একটি প্যাকেট থেকে ৮-১০ বার মাশরুম সংগ্রহ করা যায়। এতে একটি প্যাকেট থেকে ২০০-২৫০ গ্রাম মাশরুম পাওয়া যাবে।

মাশরুম সংগ্রহ ও সংরক্ষণ : মাশরুম যথেষ্ট বড় হয়েছে কিন্তু শিরাগুলো ঢিলা হয়নি- এমন অবস্থায় হাত দিয়ে আলতো করে টেনে তুলতে হবে। পরে গোড়া কেটে বাছাই করে পলি ব্যাগে ভরে মুখ বন্ধ করে বাজারজাত করতে হবে। এগুলো ঠাণ্ডা জায়গায় ২-৩ দিন রেখে খাওয়া যায়। ফ্রিজে রাখলে ৭-৮ দিন ভালো থাকে।

কাজ : শিক্ষার্থীরা দলে ভাগ হয়ে ওয়েস্টার মাশরুম চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করবে এবং শ্রেণিতে উপস্থাপন করবে।

নতুন শব্দ : মৃতজীবী ছত্রাক, ফলন্ত অঙ্গ, চাষঘর, স্পন ।

পাঠ ৫ : উদ্যান ফসল সংগ্রহ ও বাছাই

ফল, শাক-সবজি ও ফুল দ্রুত পচনশীল। এসব পণ্য দেশীয় প্রচলিত পদ্ধতিতে সংগ্রহ, বাছাই ও বাজারজাত করায় ক্ষেত্র বিশেষে শতকরা ৫০ ভাগ পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যায়। আর্থিক ও পুষ্টির বিবেচনায় এ ক্ষতি অপরিসীম । কিন্তু তোলা থেকে শুরু করে বাজারজাত করা পর্যন্ত একটু সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে পণ্যের বাহ্যিক তরতাজা চেহারা, নিজ নিজ স্বাদ, গন্ধ, রং ও গুণগতমান পুরোপুরি বজায় থাকে। ফলে পণ্য নষ্ট কম হয় এবং ভালো বাজারমূল্য পাওয়া যায়

বিভিন্ন উদ্যান ফসলের ফল, পাতা, কুঁড়ি, অঙ্কুর, মূল, কাণ্ড, কলি ও ফুল ইত্যাদি অংশ আমরা ব্যবহারের জন্য সংগ্রহ করি। ফসল সংগ্রহের জন্য আমাদের বাণিজ্যিক পরিপতাকে বিবেচনা করতে হয় বাণিজ্যিক পরিপক্বতা বলতে ফসলের ব্যবহার্য অংশের এমন অবস্থানে বোঝায় যখন মানুষ তা খাওয়ার জন্য ব্যবহার করতে পারে। যেমন- শসা, লাউ, কুমড়া, বেগুন, শীম, বরবটি, ঢেড়শ, পাতাজাতীয় সবজি ইত্যাদি আমরা বাড়ন্ত অবস্থার বিভিন্ন পর্যায়ে সংগ্রহ ও বাজারজাত করি ফলকে আবার দুইভাগে ভাগ করা যায়। এক ধরনের ফল গাছ থেকে তোলার পর ফলের মধ্যে শর্করা থেকে চিনিতে রূপান্তর বন্ধ হয়ে যায়। যেমন- জাম্বুরা, লেবু, আঙ্গুর, লিচু ইত্যাদি। এসব ফল পাকার পরই তোলা উচিত। আবার আম, কাঁঠাল, পেঁপে, কলা, বেল ইত্যাদি ফল গাছ থেকে তোলার পরও শর্করা থেকে চিনিতে রূপান্তর হতে থাকে, সুগন্ধ ছড়ায় ও রং ধারণ করে। এসব ফল পাকার আগে গাছ থেকে পাড়া হয়।

কৃষিজ উৎপাদন

ভালো বাজারমূল্য পাওয়ার জন্য উদ্যান ফসল যথাযথভাবে সংগ্রহ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, ইটিইি, বাছাই, প্যাকিং ও পরিবহন করা প্রয়োজন। সঠিকভাবে এ কাজ না করলে পণ্য থেকে বাষ্পীভবন, প্রস্বেদন ও শ্বসনের মাধ্যমে পানি বের হয়ে কুঁচকে যেতে পারে, তাপমাত্রা বাড়ার ফলে শ্বসন বেড়ে গিয়ে কোষ-কলা নষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং রোগ-জীবাণুর আক্রমণে পণ্য পচে যেতে পারে। এসব ক্ষতি

থেকে পণ্যকে রক্ষার জন্য আমাদের নিচের বিষয়গুলো অনুসরণ করতে হবে- ১. ফসল তোলার সময় ফসল তোলার জন্য আমাদের বাণিজ্যিক পরিপক্বতাকে বিবেচনা করে সঠিক সময়ে ফসল তুলতে হবে।

২. ফসল তোলার পদ্ধতি উদ্যান ফসল সাধারণত দুইভাবে তোলা হয়, যথা- ক) হাত দিয়ে এবং খ) যন্ত্রের সাহায্যে। ফসল সংগ্রহের সময় নিচের বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে-

• সাবধানে তুলতে হবে যেন গাছের বা তোলা ফসলের কোনোটার ক্ষতি না হয় ।

• তোলার সময় হাতের নখ, চুরি বা যন্ত্রের আঘাতে ফললের পারে ক্ষত সৃষ্টি করা, পাছ মোচড়ানো, মাটিতে ফেলে দেওয়া, পারে মাটি লাগানো, সূর্যের তাপ লাগানো ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে।।

৩. ফসল রাখার পাত্র ক্ষেত থেকে ফসল তুলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পারো রাখতে হবে। পাত্র এমন হতে হবে যেন পণ্যের কোনো ক্ষতি না হয়। আমরা ফসল রাখার জন্য পাটের বস্তা, প্লাস্টিকের ঝুড়ি, বাঁশ বা বেতের ঝুড়ি ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকি ।

৪. মাঠ থেকে পরিবহন মাঠ থেকে বাছাই করার স্থানে পণ্য নেওয়ার সময় সতর্ক থাকতে হবে। পণ্যভর্তি পাত্র আছড়ে ফেলা যাবে না। গাদাগাদি করে বোঝাই করা যাবে না। ধীরগতিতে গাড়ি চালাতে হবে যাতে ঝাঁকুনি কম লাগে ।

৫. তাপমাত্রা ক্ষেত থেকে তোলার পর পণাকে সূর্যের তাপ থেকে রক্ষা করতে হবে। ভাগে পণ্যের উত্তাপ বেড়ে যায়। ফলে গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়। পণ্য সকালে বা বিকালে তুলতে হবে। তোলার পর যত দ্রুত সম্ভব মাঠ থেকে সরিয়ে নিতে হবে ।

 

কৃষিশিক্ষা

৬. পণ্য বাছাই : পণ্য মাঠ থেকে আনার পর প্রথমে অপ্রয়োজনীয় বা অগ্রহণযোগ্য পণ্য বেছে আলাদা করতে হবে। পরে পণ্যের আকার আকৃতি অনুযায়ী কয়েকটা ভাগে ভাগ করতে হবে। অতঃপর বাজারজাত করার জন্য পণ্য প্যাকিং করতে হবে। আমরা বস্তা, পলিথিনের শিট, প্লাস্টিকের ঝুড়ি, বাঁশ বা বেতের ঝুড়ি অথবা কাগজের বা কাঠের বাক্সে প্যাকিং করে থাকি। প্যাক করা পণ্য গন্তব্যস্থানে পাঠানোর পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত অবশ্যই ঠাণ্ডা স্থানে রাখতে হবে

কাজ : শিক্ষার্থীরা দলে ভাগ হয়ে উদ্যান ফসল সংগ্রহ থেকে শুরু করে বাজারজাত করা পর্যন্ত কোন ধাপে কী করা হয় তা আলোচনা করে শ্রেণিতে উপস্থাপন করবে।

নতুন শব্দ : বাণিজ্যিক পরিপক্বতা, পণ্য বাছাই ।

পাঠ ৬ : মাঠ ফসল সংগ্রহ ও বাছাই

ষষ্ঠ শ্রেণিতে আমরা মাঠ ফসল সম্পর্কে জেনেছি। ফসল পাকার পর কাটা থেকে শুরু করে ভোক্তার কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত অনেক ধাপ পার হয়ে আসতে হয়। এসব ধাপে সঠিক পরিচর্যার অভাবে উৎপাদিত ফসলের মান খারাপ হয়ে যায় অথবা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে চাষিরা ন্যায্য মূল্য পায় না । ফসল কাটা থেকে বাজারজাত করা পর্যন্ত নিম্নলিখিত ধাপগুলোতে সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এ ক্ষতি সহজেই কমিয়ে আনা যায়-

১. সঠিক সময়ে ফসল কাটা : বীজ ভালোভাবে পাকার পরই ফসল সংগ্রহ করতে হবে অর্থাৎ ফসল পাকার পর কাটতে হবে। তবে ফসল কাটার সময় আবহাওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। কারণ ঝড়-বৃষ্টির সময় ফসল সংগ্রহ করা যায় না। আবার সংগ্রহ করলেও মাড়াই ঝাড়াই ও শুকানো যায় না। ফসল জমা করে রাখায় তাপ বেড়ে পচে যেতে পারে, গন্ধ হয়ে যেতে পারে। আবার ঝড়-বৃষ্টিতে ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকলে পুরোপুরি পাকার আগেই অনেক সময় সংগ্রহ করতে হয়।

ফসল কাটার ১৫-২০ দিন আগে পানি সেচ বন্ধ করে দিতে হবে। এতে ফসলের দৈহিক বৃদ্ধি কম হবে এবং পরিপক্বতা তরান্বিত হবে। ধান কাটার জন্য ফসল সোনালি বর্ণ ধারণ করলে অথবা ৮০% ধান পরিপক্ক হলে ফসল কাটা যাবে। ডাল ও তেল ফসলের ক্ষেত্রে গাছ মরে হলদেভাব হবে। দানা পুষ্ট হলে ফসল কাটা যাবে। তবে বেশি শুকিয়ে গেলে ফসল কাটা ও পরিবহনের সময় দানা ঝরে পড়বে। ধান, গম ফসল কাঁচি দিয়ে বা যন্ত্রের সাহায্যে কাটা যায়।

 

কৃষিজ উৎপাদন

৮১

২. মাকরণ কাটা ফসল ভালোভাবে শুকিয়ে নিলে দ্রুত মাড়াই করা যায়। মাড়াইয়ের সময় দानা নষ্ট হয় না। ধান-গম মাড়াই করার জন্য পা বা শক্তিচালিত মাড়াই যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। আবার অনেক সময় ড্রাম বা মাচার উপর হাত দিয়ে পিটিয়েও দানা আলাদা করা যায়। মাড়াইয়ের স্থানটি ভালোভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে নিতে হবে। ভাল ও তেল ফসল মাড়াই করার আগে খুব ভালো শুকিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। ফসলের পরিমাণ বেশি হলে গর্ দিয়ে ফসল মাড়াই করা হয়। অন্যথ লাঠি দিয়ে পিটিয়ে ফসল মাড়াই করা হয়।

৩. ঝাড়াই ফসল মাড়াই করার পর ফসলের পরিত্যক্ত অংশ দানা থেকে আলাদা করে প্রথমে হালকাভাবে রোদে শুকিয়ে নিতে হয়। অতঃপর কুলা, বাতাস বা শক্তিচালিত ফ্যানের সাহায্যে দানা ঝাড়াই করা হয়। ঝাড়াই করার ফলে দানা থেকে খড়কুটা, চিটা ও অন্যান্য আবর্জনা বাছাই হয়ে যায় ।

৪. কল কানো মাড়াই বাড়াই করার পর দানা ভালোভাবে শুকাতে হবে। দানা শুকানোর মাধ্যমে দানার মধ্যে আর্দ্রতাকে একটা নির্দিষ্ট পর্যায়ে আনতে হবে। দানাকে ২-৩টি রোদে এমনভাবে শুকাতে হবে যেন দাঁত নিয়ে চাপ দিলে 'কট' করে শব্দ হয়। এ অবস্থায় দানায় আর্দ্রতার মাত্রা ১০-১২% এ চলে আসে। এছাড়া আর্দ্রতা মাপার যন্ত্রের সাহায্যেও এ কাজটি করা যায়। গুদামজাত অবস্থায় দানায় আর্দ্রতার মাত্রা বেশি থাকলে বিভিন্ন রোগ ও পোকার আক্রমণে নষ্ট হয়ে যেতে পারে, পচে যেতে পারে বা মান খারাপ হয়ে যেতে পারে।

৫. পরিবহন ভফানোর পর নানা পরম অবস্থায় বস্তাবন্দি করা ঠিক না। একটু ঠাণ্ডা হওয়ার পর প্লাস্টিক বা চটের বস্তায় ভর্তি করে গুলাম বা গোলা ঘরে নিয়ে যেতে হয়। ছেঁড়া-ফাটা বস্তা পরিহার করতে হবে। ফসল বেশি হলে গাড়িতে পরিবহন করতে হয়। গাড়িতে উঠানো-নামানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন বস্তা ছিড়ে দানা নষ্ট না হয় ।

৬. ভদামজাতকরণ : যে ঘর বা কক্ষে সংগৃহীত ফসল রাখা হয় তাকে গুদাম ঘর বলে। গুদাম ঘরের মেঝের একটু উপরে বাঁশ বা কাঠের পাটাতন করে তার উপর ফসল রাখা হয়। আমাদের দেশে চট বা প্লাস্টিকের বস্তা, বাঁশের চাটাই দিয়ে তৈরি ডোল, মাটির মটকা, প্লাস্টিক বা টিনের ড্রামের ভিতর দানাশস্য সংরক্ষণ করা হয়। গুদাম ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এতে পোকা-মাকড় ও ইঁদুরের আক্রমণ কম হয় । নানা রাখার সময় ভাঁজে ভাঁজে শুকানো নিমপাতা দিলে পোকার আক্রমণ হয় না। গুদাম ঘর মাঝে মাঝে পরিদর্শন করতে হবে। দানার আর্দ্রতা পরীক্ষা করে প্রয়োজনে আবার রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।

চিত্র বস্তার সং

 

Content added || updated By

Related Question

View More