নিচের কোন পঙ্ক্তিটিতে বাবুরের মমতাপূর্ণ হৃদয়ের পরিচয় মেলে?

Created: 1 year ago | Updated: 1 year ago
Updated: 1 year ago

পানিপথে হত। দখল করিয়া দিল্লির শাহিগদি, 

          দেখিল বাবুর এ-জয় তাঁহার ফাঁকি, 

ভারত যাদের তাদেরি জিনিতে এখনো রয়েছে বাকি।

      গর্জিয়া উঠিল সংগ্রাম সিং, ‘জিনেছ মুসলমান,

          জয়ী বলিব না এ দেহে রহিতে প্রাণ ।

               লয়ে লুণ্ঠিত ধন

দেশে ফিরে যাও, নতুবা মুঘল, রাজপুতে দাও রণ।'

               খানুয়ার প্রান্তরে

সেই সিংহেরো পতন হইল বীর বাবুরের করে।

এ বিজয় তার স্বপ্ন-অতীত, যেন বা দৈব বলে

সারা উত্তর ভারত আসিল বিজয়ীর করতলে।

কবরে শায়িত কৃতঘ্ন দৌলত,          

          বাবুরের আর নাই কোনো প্রতিরোধ।

দস্যুর মতো তুষ্ট না হয়ে লুণ্ঠিত সম্পদে,

জাঁকিয়া বসেছে মুঘল সিংহ দিল্লির মসনদে। 

মাটির দখলই খাঁটি জয় নয় বুঝেছে বিজয়ী বীর,

বিজিতের হৃদি দখল করিবে এখন করেছে স্থির।

            প্রজারঞ্জনে বাবুর দিয়াছে মন,

হিন্দুর-হৃদি জিনিবার লাগি করিতেছে সুশাসন,

            ধরিয়া ছদ্মবেশ

ঘুরি পথে পথে খুঁজিয়ে প্রজার কোথায় দুঃখ ক্লেশ।

চিতোরের এক তরুণ যোদ্ধা রণবীর চৌহান

             করিতেছে আজি বাবুরের সন্ধান,

কুর্তার তলে কৃপাণ লুকায়ে ঘুরিছে সে পথে পথে

         দেখা যদি তার পায় আজি কোনো মতে

                    লইবে তাহার প্রাণ,

শোণিতে তাহার ক্ষালিত করিবে চিতোরের অপমান। 

                    দাঁড়ায়ে যুবক দিল্লির পথ-পাশে

লক্ষ করিছে জনতার মাঝে কেবা যায় কেবা আসে।

             হেন কালে এক মত্ত হস্তী ছুটিল পথের পরে

                   পথ ছাড়ি সবে পলাইয়া গেল ডরে। 

                         সকলেই গেল সরি

কেবল একটি শিশু রাজপথে রহিল ধুলায় পড়ি।

                       হাতির পায়ের চাপে

'গেল গেল' বলি হায় হায় করি পথিকেরা ভয়ে কাঁপে।

                      ‘কুড়াইয়া আন ওরে’ 

সকলেই বলে অথচ কেহ না আগায় সাহস করে। 

সহসা একটি বিদেশি পুরুষ ভিড় ঠেলে যায় ছুটে, 

‘কর কী কর কী” বলিয়া জনতা চিৎকার করি উঠে।

       করি-শুণ্ডের ঘর্ষণ দেহে সহি

পথের শিশুরে কুড়ায়ে বক্ষে বহি

       ফিরিয়া আসিল বীর।

চারি পাশে তার জমিল লোকের ভিড়।

বলিয়া উঠিল এক জন, 'আরে এ যে মেথরের ছেলে,

ইহার জন্য বে-আকুফ তুমি তাজা প্রাণ দিতে গেলে?

          খুদার দয়ায় পেয়েছ নিজের জান,

    ফেলে দিয়ে ওরে এখন করগে স্নান।'

    শিশুর জননী ছেলে ফিরে পেয়ে বুকে

            বক্ষে চাপিয়া চুমু দেয় তার মুখে।

বিদেশি পুরুষে রাজপুত বীর চিনিল নিকটে এসে,

এ যে বাদশাহ স্বয়ং বাবুর পর্যটকের বেশে।

          ভাবিতে লাগিল, 'হরিতে ইহারই প্রাণ

          পথে পথে আমি করিতেছি সন্ধান?

          বাবুরের পায়ে পড়ি সে তখন লুটে 

কহিল সঁপিয়া গুপ্ত কৃপাণ বাবুরের করপুটে,” 

‘জাঁহাপনা, এই ছুরিখানা দিয়ে আপনার প্রাণবধ 

করিতে আসিয়া একি দেখিলাম! ভারতের রাজপদ 

          সাজে আপনারে, অন্য কারেও নয়। 

বীরভোগ্যা এ বসুধা এ কথা সবাই কয়,

           ভারত-ভূমির যোগ্য পালক যেবা,

তাহারে ছাড়িয়া, এ ভূমি অন্য কাহারে করিবে সেবা?

            কেটেছে আমার প্রতিহিংসার অন্ধ মোহের ঘোর,

                              সঁপিনু জীবন, করুন এখন দণ্ডবিধান মোর।'
            রাজপথ হতে উঠায়ে যুবকটিরে

                                  কহিল বাবুর ধীরে,

‘বড়ই কঠিন জীবন দেওয়া যে জীবন নেওয়ার চেয়ে; 

জান না কি ভাই? ধন্য হলাম আজিকে তোমারে পেয়ে

                         আজি হতে মোর শরীর রক্ষী হও; 

প্রাণ-রক্ষকই হইলে আমার, প্রাণের ঘাতক নও।'

Content added || updated By
Promotion