উপনিষদের বিষয়বস্তু কী?
দ্বিতীয় অধ্যায় ধর্মগ্রন্থ
যে-গ্রন্থে ধর্ম ও কল্যাণময় জীবনের কথা বলা হয়েছে তাকে ধর্মগ্রন্থ বলে। বেদ, উপনিষদ, রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ, শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা, শ্রীশ্রীচণ্ডী প্রভৃতি আমাদের উল্লেখযোগ্য ধর্মগ্রন্থ। বেদ আমাদের আদি ও প্রধান ধর্মগ্রন্থ। বেন চিরন্তন ও শাশ্বত। 'বেদ' মানে জ্ঞান। প্রাচীন ঋষিদের ধ্যানে পাওয়া পবিত্র জ্ঞান। এ জ্ঞান হচ্ছে জগৎ-জীবন ও তার উৎস পরমপুরুষ, ব্রহ্ম বা ঈশ্বর সম্পর্কে জ্ঞান। বেদকে কেন্দ্র করে রচিত ধর্মভিত্তিক বিশাল সাহিত্যকে বলা হয় বৈদিক সাহিত্য। আর মহাভারতের অংশবিশেষ শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা সংক্ষেপে গীতা হিসেবে পৃথক গ্রন্থের মর্যাদা পেয়েছে। গীতায় কর্মকে "যজ্ঞ" বলা হয়েছে। এখানে রয়েছে কর্ম, জ্ঞান ও ভভিন্ন অপূর্ব সমন্বয় এবং বাস্তব জীবনে চলার প্রয়োজনীয় নৈতিক শিক্ষা ও উপদেশ।
উপনিষদ্
রামায়ণ
এ অধ্যায়ে বৈদিক সাহিত্যের সংক্ষিপ্ত পরিচয়, চতুর্বেদের বিষয়বস্তু ও ধর্মাচরণে তার প্রভাব এবং শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় বর্ণিত চতুবর্ণ, কর্তব্যপালন, সাম্য, চরিত্র গঠনে মানবিক গুণাবলি এবং ভক্তি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে।
এ অধ্যায়শেষে আমরা-
• বৈদিক সাহিত্যের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিতে পারব
• চতুর্বেদের বিষয়বস্তু বর্ণনা করতে ও ধর্মাচরণে তার প্রভাব বিশ্লেষণ করতে পারব • শ্ৰীমদভগবদ্গীতা অনুসারে চতুর্বর্ণ, কর্তব্যপালন, সাম্য, চরিত্র গঠনে মানবিক গুণাবলি ও ভক্তির
ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারব
• জীবন ও ধর্মাচরণে বেদ ও শ্রীমদভগবদগীতার শিক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারব
হিন্দুধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা
বেলের দুটি অংশ মন্ত্র ও ব্রাহ্মণ। যেনের যে অংশে যন্ত্রের ব্যাখ্যা এবং বিভিন্ন ফলে তাদের - প্রয়োগ বা ব্যবহারের কথা আলোচনা করা হয়েছে তাকে 'ব্রাহ্মণ' বলা হয়। ব্রাহ্মণগুলো পদ্যে রচিত। ব্রাহ্মণের বিষয়বস্তুর মধ্যে রয়েছে যিনি অর্থাৎ বিশেষ বিশেষ কর্ম অনুষ্ঠানের নির্দেশ, বেদমন্ত্রের অর্থ প্রসঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা, বিরোধী মতের সমালোচনা প্রভৃতি।
ার ও উপনিय ব্রাহ্মণে ব্রণ বেসের কর্মকাণ্ড আর আরও উপনিষ জ্ঞানকাণ্ড আলোচনা করা হয়েছে। যা অরণ্যে রচিত তাকে আরণ্যক বলে। আরণ্যকের বিষয় ধর্মদর্শন। কার উদ্দেশে ইত্যাদি আধ্যাত্বিক বিষয় এতে আলোচিত হয়েছে। গভীর জ্ঞানকে অরণ্য বা গভীর বনের সাথে তুলনা করা হয়েছে। অর্থাৎ গভীর আধ্যাত্মিক জ্ঞানের বিষন্ন যাতে বর্ণনা করা হয়েছে তা-ই আরণ্যক। ঐতরের আরণ্যক, বৃহদারণ্যক প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য
আরণ্যকে যে অধ্যাত্মবিদ্যার সূচনা, উপনিষদে তা বিস্তার ও গভীরতা লাভ করেছে। উপ-নি-সদ +
বিশ্ব = উপনিষস।
উপনিষদ্
এখানে 'উপ' অর্থ সমীপে বা নিকটে, 'নি' অর্থ নিশ্চয়, 'সদ' ধাতুর অর্থ অবস্থান। অর্থাৎ নিকটে বসে নিশ্চয়ের সঙ্গে যে জ্ঞান অর্জন করা হয় তাকে উপনিষদ বলে। কিন্তু এ কথা উপনিষে বিষয়বস্তু স্পষ্ট হয় না। জীবের মুলীভূত সত্তা হচ্ছে তার আত্মা। এই আত্মা পরমাত্মা বা ব্রহ্মেরই অংশ। সুতরাং জী ব্রহ্ম ছাড়া আর কিছুই নয়। এই ব্রহ্ম নিরাকার। আত্মারূপে জীবের মধ্যে তাঁর অবস্থান। তিনিই সবকিছুর মূলে। এই ব্রহ্মজ্ঞান উপনিষদের বিষয়বস্তু
হিন্দুধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা
পাঠ ২ : চতুর্বেদের বিষয়বস্তু
বেদ ঈশ্বরের বাণী । ঋষি মনু বলেছেন – 'বেদঃ অখিলধর্মমূলম্' অর্থাৎ বেদ হচ্ছে সকল ধর্মের - মূল। এখানে সত্য ও জ্ঞানের নানা বিষয়ের বর্ণনা রয়েছে। এ সত্য বা জ্ঞান অন্তদৃষ্টি দিয়ে উপলব্ধি করতে হয়। বেদে বিভিন্নভাবে ঈশ্বর ও দেবতাদের স্তুতি বা প্রশংসা করা হয়েছে। ঈশ্বরের বিভিন্ন শক্তিকে দেবতা বলে। অগ্নি, বায়ু, ঊষা, রাত্রি প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির মধ্যে ঈশ্বরের অসীম ক্ষমতা উপলব্ধি করে বৈদিক ঋষিগণ তাঁদের প্রশংসা করেছেন। তাঁদের স্তুতি ও বন্দনা ঋষিদের কণ্ঠে। কবিতার আকারে বাণীরূপ পেয়েছে। গভীর ধ্যানে এই বাণী বা কবিতা ঋষিগণ ঈশ্বরের কাছ থেকে পেয়েছেন। তাই ঋষিরা বলেছেন, তাঁরা বেদ দর্শন করেছেন। এজন্য বেদকে বলা হয় অপৌরুষেয়। অর্থাৎ বেদ কোনো পুরুষ বা ব্যক্তির দ্বারা সৃষ্ট নয়, তা ধ্যানে দৃষ্ট।
বেদের সঙ্গে দেবতাদের প্রসঙ্গ যুক্ত। বেদের বিষয়কে বলা হয় দেবতা। বিভিন্ন স্তব-স্তুতির মাধ্যমে ঋষিগণ দেবতাদের মাহাত্ম্য তুলে ধরেছেন। বৈদিক যুগে উপাসনার পদ্ধতি ছিল যজ্ঞ বা হোমভিত্তিক তখনও মূর্তি বা বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করে উপাসনা করা প্রচলিত হয়নি। ঋষিগণ দেবতাদের শক্তি স্মরণ করে মন্ত্রের মাধ্যমে উপাসনা করতেন এবং অগ্নি প্রজ্জ্বলন করে দেবতাকে আহ্বান করতেন।
ঋষিগণ বৈদিক দেবতাদের তিনটি শ্রেণিতে বিন্যস্ত করেছেন, যথা- ১. স্বর্গের দেবতা, ২.
অন্তরিক্ষলোকের দেবতা এবং ৩. পৃথিবী বা মর্তলোকের দেবতা।
বৈদিক দেবতা
স্বর্গের দেবতা
অন্তরিক্ষলোকের
মর্তলোকের
দেবতা
দেখতা
স্বর্গের দেবতা: স্বর্গের দেবতাদের ক্ষমতাই শুধু বোঝা যায়। এ শ্রেণির দেবতারা মর্তে বা পৃথিবীতে আসেন না। তাঁরা অনেক দূরে অবস্থান করেন। এমন দেবতারা হলেন বিষ্ণু, সূর্য, বরুণ প্রমুখ। অন্তরিক্ষলোকের দেবতা: অন্তরিক্ষলোকের দেবতাগণ স্বর্গ ও মর্তলোকের মাঝখানে অবস্থান করেন। তাঁরা মর্তে আসেন, কিন্তু থাকেন না। এরূপ দেবতারা হলেন ইন্দ্র, বায়ু, রুদ্র প্রমুখ। মর্তলোকের দেবতাঃ মর্তের দেবতাদের দেখা যায়। তাঁরা পৃথিবীতে অবস্থানও করেন। এমন দেবতা হলেন অগ্নি, অপূ, সোম প্রমুখ। অগ্নির মাধ্যমে অন্য দেবতাদের মর্তে আহ্বান করে আনা হয় আগুন জ্বালিয়ে বেদের শ্লোক উচ্চারণ করে দেবতাকে আহ্বান জানানো এবং প্রার্থনা করাকে বলা হয় যজ্ঞ। যজ্ঞের সময় উচ্চারিত বেদের এই শ্লোককে বলা হয় মন্ত্র। এছাড়া রয়েছে গান।
ধর্ম গ্রন্থ
১৫
বেদের কোনো-কোনো শ্লোকে সুর আরোপ করে যজ্ঞের সময় পাওয়া হতো। এগুলোকে বলা হয়
সাম। সাম মানে পান। জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রের বিভিন্ন প্রকার কথাও বেদে উল্লেখ করা হয়েছে ।
দলীয় কাজ: স্বর্গ, মর্ত ও অন্তরিক্ষলোকের দেব-দেবীদের একটি তালিকা তৈরি কর
বেদ প্রথমে অবিভক্ত আকারেই ছিল। পরবর্তীকালে মহর্ষি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদকে বিভক্ত করেন এজন্য তাঁর এক নাম হয়েছে বেদব্যাস। তিনি বেদকে চারটি ভাগে ভাগ করেন। এগুলোকে বলা হয় সংহিতা। সংহিতা মানে সংগ্রহ বা সংকলন। সংহিতাগুলো হচ্ছে- ১. ঋগ্বেদ-সংহিতা, ২. যজুর্বেদ-সংহিতা, ৩. সামবেদ সংহিতা এবং ৪, অথর্ববেদ-সংহিতা। সংহিতাগুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচয় নিম্নে দেওয়া হলো:
ঋবেদ-সংহিতা ঋক্ শব্দের অর্থ স্তুতি। খগুলোকে মন্ত্রও বলা হয়। এই ঋক্ বা মন্ত্রগুলো হচ্ছে তিন বা চার পংক্তির ছোট ছোট কবিতা বা শ্লোক। এক সময়ে কবিতার মতো ঋগ্ বেদের এই মন্ত্রগুলো আবৃত্তি করা হতো। সমস্ত ঋগবেদে এ রকম ১০,৪৭২টি ঋক্ বা মন্ত্র রয়েছে। একই দেবতার উদ্দেশে রচিত মন্ত্রসমূহকে একত্রে বলা হয় সূক্ত, যেমন- ইন্দ্ৰসূক্ত।
সমস্ত ঋগবেদকে দশটি মণ্ডলে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রতিটি মণ্ডলে কয়েকটি সূক্ত এবং প্রতিটি সূক্তে কয়েকটি ঋক্ রয়েছে। ঋগবেদে মোট ১,০২৮টি সূক্ত রয়েছে। সূক্তগুলোতে দেবতাদের স্তুতি করা হয়েছে এবং তাঁদের কাছে সুখ ও শান্তির জন্য প্রার্থনা জানানো হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়। - ইন্দ্র হচ্ছেন বৃষ্টি ও শিশিরের দেবতা। ইন্দ্রের প্রশংসা করে একটি থাকে বলা হয়েছে:
ইন্দ্ৰং বয়ং মহাধন
ইন্দ্ৰমৰ্ত্তে হবামহে ।
যুজং বৃত্রেষু বঞ্জিণম্
(ঋগ্বেদ- ১ম মণ্ডল, ৭ম সূক্ত, ৫ম ঋক্
সরলার্থ: ইন্দ্র আমাদের সহায়। শত্রুদের কাছে বজ্রধারী। আমরা অনেক সম্পদের জন্য কিংবা অল্প সম্পদের জন্যও ইন্দ্রকে আহ্বান করি।
এই মন্ত্রের দেবতা ইন্দ্র। ইন্দ্রকে নিজেদের সহায় এবং শত্রুদের কাছে শাস্তিদানকারী বজ্ৰ নামক অস্ত্রধারী বলে স্তুতি করা হয়েছে এবং তাঁর কাছে ধনসম্পদ প্রার্থনা করা হয়েছে। এই ক্ মন্ত্রটির দ্রষ্টা হলেন ঋষি মধুচ্ছন্দা।
হিন্দুধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা
যজুর্বেদ-সংহিতা
'যজুঃ' মানে যজ্ঞের মন্ত্র। প্রাচীনকালের ঋষিরা বেদ থেকে মন্ত্র উচ্চারণ বা আবৃত্তি করে ধর্মানুষ্ঠান বা যাগযজ্ঞ করতেন। যজ্ঞ করার সময় উদ্দিষ্ট দেবতার জন্য সুনির্দিষ্ট মন্ত্র পাঠ করা হতো । এভাবে যজ্ঞে ব্যবহৃত মন্ত্রগুলো সংগ্রহ করে যে বেদে সংকলন করা হয়েছে তাকে যজুর্বেদ- সংহিতা বলা হয়। যজ্ঞানুষ্ঠানের নিয়ম-পদ্ধতি যজুর্বেদে সংকলিত হয়েছে। যজ্ঞকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বর্ষপঞ্জি বা ঋতু সম্পর্কিত ধারণা। বিভিন্নভাবে এবং বিভিন্ন সময়ব্যাপী যজ্ঞ করা হতো। কোনো যজ্ঞ ছিল দৈনন্দিন, কোনো যজ্ঞ ছিল সপ্তাহব্যাপী, কোনো যজ্ঞ ছিল পক্ষকালব্যাপী আবার কোনো যজ্ঞ বর্ষব্যাপী, এমনকি দ্বাদশবর্ষব্যাপীও অনুষ্ঠিত হতো। একেক প্রকার যজ্ঞের জন্য একেক প্রকার বেদী নির্মাণ করা হতো। এই নির্মাণ-কৌশল থেকেই জ্যামিতি বা ভূমি পরিমাপ বিদ্যার উদ্ভব ঘটেছে।
ঋগ্বেদ ও সামবেদ পদ্যে রচিত। কিন্তু যজুর্বেদে গদ্য ও পদ্য উভয় রীতিই ব্যবহার করা হয়েছে। যজুর্বেদ দুটি প্রধান শাখায় বিভক্ত, যথা- ১. কৃষ্ণযজুর্বেদ ও ২. শুক্লযজুর্বেদ। কৃষ্ণযজুর্বেদের অপর নাম তৈত্তিরীয়-সংহিতা। শুক্লযজুর্বেদের অপর নাম বাজসনেয়ী-সংহিতা। কৃষ্ণযজুর্বেদে ৭টি কাণ্ড ও ২১৮৪টি মন্ত্র রয়েছে। আর শুক্লযজুর্বেদে রয়েছে ৪০টি অধ্যায় এবং ১৯১৫টি মন্ত্র সামবেদ-সংহিতা
'সাম' শব্দের অর্থ গান। যজ্ঞ করার সময় কোনো-কোনো ঋক্ বা মন্ত্র সুর করে গাওয়া হতো। এরূপ মন্ত্রগুলোকে বলা হয় সাম। যে-বেদে এই সাম মন্ত্রসমূহ সংকলিত হয়েছে তাকে বলা হয় সামবেদ সংহিতা। সামবেদ থেকে প্রাচীনকালের সংগীত সম্পর্কে জ্ঞানলাভ হয়। আমরা যে সুর করে গান গাই, তার অন্যতম আদি উৎস এই সামবেদ। ষড়জ, ঋষভ প্রভৃতি স্বরের (সরগম) উৎসও সামবেদ। প্রধানত ঋগ্বেদের মন্ত্রগুলোকেই সুর দিয়ে গানের আকারে রূপদান করা হয়েছে। সামবেদ-সংহিতার মন্ত্রসংখ্যা ১৮১০টি। এগুলোর মধ্যে ৭৫টি ছাড়া বাকিগুলো ঋগ্বেদ থেকে গ্রহণ করা হয়েছে।
অথর্ববেদ-সংহিতা
বেদের চতুর্থ ভাগ হচ্ছে অথর্ববেদ অথর্ববেদ-সংহিতা আধ্যাত্মিক ও জাগতিক নানা প্রকার জ্ঞানের সংগ্রহ । অথর্ববেদের প্রাচীন নাম অথর্বাঙ্গিরস। অথর্ব বলতে ভেষজ বিদ্যা, শাস্তি, পুষ্টি প্রভৃতি মঙ্গলক্রিয়া বোঝায়। আঙ্গিরস বলতে শত্রুবধ এবং বশীভূত করার উপায়, আচার-অনুষ্ঠান ইত্যাদি বোঝায় । প্রাচীনকালের চিকিৎসা পদ্ধতির আদি পরিচায়ক হিসেবে অথর্ববেদ বিখ্যাত। অথর্ববেদে নানা প্রকার ব্যাধির প্রতিকারের উপায়স্বরূপ নানা প্রকার বৃক্ষ, লতা, গুল্ম প্রভৃতি সম্পর্কে বিস্তৃতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। আয়ুর্বেদ নামে পরিচিত চিকিৎসাশাস্ত্রের আদি উৎস এই অথর্ববেদ । এছাড়া এই বেদে অস্থিবিদ্যা ও শল্যবিদ্যারও (সার্জারি) উল্লেখ আছে।
ধর্মাত্
অথর্ববেদ-সংহিতা কুড়িটি কাণ্ড, ৭৩১টি সূক্ত এবং প্রায় ৬০০০ মন্ত্র নিয়ে রচিত। অথর্ববেদ গদ্য
ও পদ্য উভয় রীতিতে রচিত। তবে পদাই বেশি। ছয় ভাগের এক ভাগমাত্র গদ্যে রচিত। একক কাজ: ছকে প্রদত্ত প্রত্যেক প্রকার বেদের দুটি করে আলোচ্য বিষয়
যজুর্বেদ সামবেদ
অথর্ববেদ
লেখ।
নতুন শব্দ: অন্তর্দৃষ্টি, অন্তরিক্ষলোক, দৃষ্ট, সূক্ত, শল্য, অথর্বাঙ্গিরস, ষড়জ, ঋষভ পাঠ ৩ ধর্মাচরণে চতুর্বেদের প্রভাব
বেদ হিন্দুদের আদি এবং মূল ধর্মগ্রন্থ। সেদিক থেকে বৈদিক সাহিত্যের গুরুত্বও অসীম। এছাড়া প্রাচীনকালে ভারতবর্ষের সমাজ ও ইতিহাসের পরিচয় পেতে হলেও বৈদিক সাহিত্যের ওপর নির্ভর করতে হয়। সাহিত্য হিসেবেও বৈদিক সাহিত্য গুরুত্বপূর্ণ। ঋগবেদে দেবতাদের প্রশংসা করা হয়েছে। যজুর্বেদে যজ্ঞের বিষয়বস্তু বর্ণনা করা হয়েছে। এছাড়া বেদ সমাজকে সুন্দরভাবে গড়ে ভুলতে সহায়তা করে । বেদ পাঠ করলে স্রষ্টা, বিশ্বপ্রকৃতি ও জীবন সম্পর্কে জ্ঞানলাভ হয় প্রত্যেকটি বেদের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। ঋগ্বেদ-সংহিতা পাঠ করলে আমরা বিভিন্ন বৈদিক দেব-দেবী সম্পর্কে জানতে পারি । অগ্নি, ইন্দ্র, ঊষা, রাত্রি, বায়ু প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির মাধ্যমে ঈশ্বরের অসীম ক্ষমতা উপলব্ধি করা যায়। তাঁদের কর্মচাঞ্চল্যকে আদর্শ করে জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়।
যজুর্বেদ যজ্ঞের মন্ত্রের সংগ্রহ। এ থেকে জানতে পারি সেকালে উপাসনা পদ্ধতি কেমন ছিল। যজুর্বেদ অনুসরণে বিভিন্ন সময়ে যজ্ঞানুষ্ঠানের মাধ্যমে বর্ষপঞ্জি বা ঋতু সম্পর্কে ধারণা জন্মে বিভিন্নভাবে এবং বিভিন্ন সময়ব্যাপী যজ্ঞানুষ্ঠান করা হতো। যজ্ঞের বেদী নির্মাণের কৌশল থেকেই জ্যামিতি বা ভূমি পরিমাপ বিদ্যার উদ্ভব ঘটেছে।
সামবেদ থেকে সেকালের গান ও রীতি সম্পর্কে জানতে পারি। জগতের প্রাচীন গানের অন্যতম উৎস সামবেদ । সামবেদ আমাদের মননশীলতাকে বাড়িয়ে দেয়। ফলে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারেনা।
অথর্ববেদ-সংহিতায় ইন্দ্রজাল, ব্যাধি নিরাময়, অনাবৃষ্টি রোধ, ভেষজবিদ্যা, শান্তি ও নানাবিধ শুভকর্ম সংক্রান্ত মন্ত্রাদি ও নির্দেশনা রয়েছে। জীবনকে সুন্দর ও সুস্থ রাখার উপায় হিসেবে ভেষজবিদ্যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যা-ই ভেষজ তা-ই অমৃত। আর যা অমৃত তা-ই ব্রহ্ম। এই অথর্ববেদ হচ্ছে আয়ুর্বেদ বা চিকিৎসা বিজ্ঞানের মূল। এখানে নানা প্রকার রোগ-ব্যাধি এবং সেগুলোর প্রতিকারের উপায়স্বরূপ নানা প্রকার লতা, গুল্ম ও বৃক্ষাদির বর্ণনা করা হয়েছে
ফর্মা-৩, হিন্দুধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা- অষ্টম শ্রেণি
১৮
হিন্দুধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা
সুতরাং সমগ্র বেদপাঠে পরমাত্মা, বৈদিক দেব-দেবী, যজ্ঞ, সঙ্গীত, চিকিৎসাসহ নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করে জীবনকে সুন্দর, সুস্থ ও পরিপাটি করে ভোলা যায়। আর এজন্যই এ-গ্রন্থ আমাদের প্রত্যেকের পাঠ করা অবশ্যকর্তব্য।
একক কাজ বেদের শিক্ষা তুমি কীভাবে জীবনাচরণে প্রয়োগ করবে তা ব্যাখ্যা কর।
নতুন শব্দ: কর্মচাঞ্চল্য, বর্ষপঞ্জি, স্বরূপ, ভস্ম।
পাঠ ৪ : শ্ৰীমদভগবদ্গীতার বিষয়বস্তু মহাভারতের ভীষ্মপর্বের অন্তর্গত ২৫ থেকে ৪২ এই আঠারটি অধ্যায় একরে শ্রীগীতা, সংক্ষেপে গীতা নামে পরিচিত। এখানে সর্বমোট সাতশত শ্লোক আছে। এজন্য এর এক নাম সপ্তশতী। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে যেসব উপদেশ দিয়েছিলেন তারই নাম শ্রীমদভগবদগীতা। ধৃতরাষ্ট্র ও পঙ্গু দুই ভাই। পাণ্ডু ছোট। কুরুবংশের নাম অনুসারে ধৃতরাষ্ট্রের সন্তানদের বলা হয় কৌরব। কিন্তু একই বংশের হয়েও পাণ্ডুর নাম অনুসারে তাঁর সন্তানদের বলা হয় পাণ্ডব। রাজ্য নিয়ে এই কুরু-পাণ্ডবের মধ্যে যুদ্ধ বেঁধে যায় । এ-যুদ্ধে স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ তৃতীয় পাণ্ডব অর্জুনের রথের সারথি হয়েছিলেন। রথ যখন দুপক্ষের সৈন্যদের মাঝখানে রাধা হলো, তখন অর্জুন স্বপক্ষে এবং বিপক্ষে নিকট আত্মীয়-
শ্রীমদভগবদ্গীতা
স্বজনদের দেখে মুষড়ে পড়লেন। তিনি তাঁদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করলেন। তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে কর্ম, জ্ঞান, ভক্তি প্রভৃতি সম্পর্কে বিভিন্ন উপদেশ দেন। সেই উপদেশবাণীই শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় বর্ণিত হয়েছে। উপলক্ষ অর্জুন হলেও গীতায় ভগবান যে-উপদেশ দিয়েছেন, তা সকল কালের সকল মানুষের জন্য। গীতা সকল উপনিষদের সারবস্তু অবলম্বনে রচিত্র - জ্ঞান, কর্ম ও ভক্তিযোগের এক অপূর্ব সমন্বয়। কেবল ধর্মগ্রন্থ হিসেবেই নয়, দার্শনিক গ্রন্থ হিসেবেও গীতা পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ। গীতা হিন্দুদের একখানা নিত্যপাঠ্য গ্রন্থ।
গীতাপাঠের কতগুলো নিয়ম আছে। প্রথমে গুরুকে প্রণাম করতে হয়। তারপর ইষ্ট দেবতাকে প্রণাম করতে হয়। এরপর বিষ্ণু, সরস্বতী, ব্যাস, ব্রহ্মা ও শিবকে প্রণাম করতে হয়। অতঃপর করন্যাস ও অনন্যা করে গীতা পাঠ করতে হয়।
গীতার মাহাত্ম্য অশেষ । গীতাপাঠ শেষে যথাসম্ভব সেই মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে হয়। গীতার মাহাত্ম্য সম্পর্কে অন্যতম শ্রেষ্ঠ শ্লোক এখানে উদ্ধৃত করা হলো:
সর্বোপনিষদো গাবো দোগ্ধা গোপালনন্দনঃ ।
পার্থো বৎসঃ সুধীর্ভোক্তা দুগ্ধং গীতামৃতং মহৎ।
সরলার্থঃ সমস্ত উপনিষদ গাভীস্বরূপ, শ্রীকৃষ্ণ দোহনকর্তা, অর্জুন বৎসস্বরূপ এবং গীতামৃত
দুগ্ধস্বরূপ। সুধীজনেরা সেই অমৃত পান করেন ।
একক কাজ: শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার বিষয়বস্তু লেখ ।
নতুন শব্দ: কৌরব, পাণ্ডব ।
পাঠ ৫ : শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় চতুর্বর্ণ, কর্তব্যপালন, সাম্য ও ভক্তি
চতুর্বর্ণ
ভগবান মানুষকে সমানভাবে সৃষ্টি করেছেন। তারপরও তাঁর সৃষ্টিতে সমাজে চারটি বর্ণ রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে – ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র। ব্রহ্মজ্ঞানে জ্ঞানী ব্যক্তি হচ্ছেন ব্রাহ্মণ, যিনি সত্ত্বঃ গুণ দ্বারা প্রভাবিত। শাসক কিংবা যুদ্ধকারী সম্প্রদায়ভুক্ত ব্যক্তি হচ্ছেন ক্ষত্রিয়, যিনি রজঃ গুণ দ্বারা প্রভাবিত। ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ভুক্ত ব্যক্তি হচ্ছেন বৈশ্য, যিনি রজঃ ও তমঃ গুণ দ্বারা প্রভাবিত। শ্রমজীবী সম্প্রদায়ভুক্ত ব্যক্তি হচ্ছেন শূদ্র, যিনি তমঃ গুণ দ্বারা প্রভাবিত। এই যে বর্ণ বিভাজন, এটি কিন্তু জন্মভেদে নয়, কর্মভেদে। যে যে রকম কর্ম করে তার বর্ণটি সে অনুসারে হয়। এ প্রসঙ্গে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন – 'চাতুর্বর্ণ্যং ময়া সৃষ্টং গুণকর্মবিভাগশঃ – অর্থাৎ - প্রকৃতির গুণ ও কর্মের বিভাগ অনুসারে আমিই চারটি বর্ণ সৃষ্টি করেছি। ব্রাহ্মণের সন্তান হলেই যে একজন ব্রাহ্মণ হবে এমনটি নয়। সত্ত্বঃগুণ-প্রভাবিত কোনো শূদ্রের সন্তানও ব্রাহ্মণ হতে পারেন আবার কোনো ব্রাহ্মণের সন্তান তমঃ গুণে প্রভাবিত হলে সে শূদ্র বলে গণ্য হবে। সুতরাং বলা যায়, জাতি বা বর্ণভেদ বংশগত নয়, গুণ ও কর্মগত।
কর্তব্যপালন
যা-কিছু করা হয় তা-ই কর্ম। আর যে-সকল কর্ম করা আবশ্যক তা-ই কর্তব্যকর্ম। আর কর্তব্যকর্ম নিষ্পন্ন করাই কর্তব্যপালন। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় কর্তব্যপালনকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। আর এ কর্তব্যপালন করতে হবে নিষ্কামভাবে অর্থাৎ কোনো প্রকার ফলের আশা না করে। এ প্রসঙ্গে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন:
কর্মে তব অধিকার কর্মফলে নয়,
ফল আশা ত্যাগ কর, কর্ম যেন রয়। (গীতা - 2 / 87 )
হিন্দুধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা
তাই শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছেন, 'কর্ম অর্থাৎ কর্তব্যপালনই ধর্ম। তুমি ক্ষত্রিয়, যুদ্ধের মাঠে যুদ্ধ করাই তোমার ধর্ম । আসক্তিহীনভাবে যুদ্ধ কর, তাহলে সুফল পাবে। তুমি যুদ্ধ না করলে তোমার ধর্ম নষ্ট হবে। কেননা স্ব-স্ব কর্ম সম্পাদন করাই ধৰ্ম । :
স্বধর্মমপি চাবেক্ষ্য ন বিকম্পিতুমইসি।
ধর্মাদ্ধি যুদ্ধাচ্ছেয়োনাৎ ক্ষত্রিয়স্য ন বিদ্যতে । (গীতা - ২/৩১ )
তোমার নিজের কুলগত ধর্মের দিক বিচার করলেও মৃত্যুভয়ে তোমার বিচলিত হওয়া উচিত নয় কারণ ধর্মযুদ্ধ অপেক্ষা ক্ষত্রিয়ের পক্ষে অধিক মঙ্গলজনক আর কিছুই নয় । সুতরাং আমাদের কাজগুলো সঠিকভাবে সম্পাদন করাই আমাদের প্রকৃত ধর্ম। যেমন- 'ছাত্রাণাম্ অধ্যয়নং তপঃ'- ছাত্রদের অধ্যয়ন করাই হচ্ছে তাদের তপস্যা বা কর্তব্য। সাম্য
সাম্য বা সমত্ব মানে সমান। সকলকে সমান দেখার নাম সাম্যচেতনা সকল জীবের মধ্যে ঈশ্বর সমানভাবে বিরাজমান। সুতরাং সকল জীবকে এই যে সমতার দৃষ্টিতে দেখা এবং সমতাপূর্ণ আচরণ করা এরই নাম সাম্যবোধ। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় বলা হয়েছে, সর্ববিষয়ে সকলের প্রতি যাঁর আচরণ সমতাপূর্ণ, তিনিই শ্রেষ্ঠ (৬/৯)। সমদর্শী সর্বভূতে আত্মাকে দেখেন এবং আত্মায় সর্বভূতকে দেখেন (৬/২৯)। এর অর্থ হলো, সমদর্শী সকল জীবকে নিজের মতো মনে করেন এবং নিজেকে সকলের সঙ্গে মিলিয়ে দেখেন। সুতরাং আমরাও সকলকে সমদৃষ্টিতে দেখব । শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা থেকে আমরা সাম্য সম্পর্কে এ-শিক্ষাই পাই ভক্তি
ভগবানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা বা ভালোবাসাকে ভক্তি বলা হয়। ভক্ত ভগবানের কাছে নিজেকে সমর্পণ করে তাঁর সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন করেন। তাই বলা হয় যে ভক্তি হচ্ছে ভক্ত ও ভগবানের - মধ্যকার মিলনসেতু। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় বলা হয়েছে ভক্ত কামনা-বাসনামুক্ত হবেন। তাঁর সমস্ত কর্মের ফল ঈশ্বরের উদ্দেশে নিবেদন করবেন। যিনি এভাবে ভগবানে আত্মনিবেদন করেন, তাঁর অন্তরে ভক্তি জন্মে এবং ভক্তিতেই মুক্তিলাভ হয়
একক কাজ কর্ম, সাম্য ও ভক্তি সম্পর্কে শ্রীমদভগবদ্গীতার শিক্ষার প্রভাব সম্পর্কে লেখ ।
নতুন শব্দ: সত্ত্বঃ, রজঃ, তমঃ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র, আসক্তি, তপঃ, সাম্য, সমদর্শন।
পাঠ ৬ : জীবনাচরণ ও চরিত্র গঠনে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার শিক্ষা
গীতা আমাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার প্রেরণা দেয়। কারণ স্বয়ং ভগবানই যুগেযুগে দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন এবং ধর্ম রক্ষার জন্য পৃথিবীতে অবতাররূপে নেমে আসেন। তিনি বলেছেন: অভ্যুত্থানমধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম্ ॥ পরিত্রাণায় সাধুনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম্ ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে (গীতা ৪/ 7-8 )
যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত।
অর্থাৎ যখনই ধর্মের অধঃপতন হয় এবং অধর্মের অভ্যুত্থান ঘটে, তখনই সাধুদের পরিত্রাণ,
দুষ্টলোকদের বিনাশ এবং ধর্ম সংস্থাপন করার জন্য আমি এই পৃথিবীতে অবতীর্ণ হই । গীতায় বলা হয়েছে আত্মার ধ্বংস নেই: দেহের ধ্বংস হলে সে আবার নতুন দেহ ধারণ করে। - গীতার এই শিক্ষা আমাদের মৃত্যুকে ভয় না করে ভালো কাজে এগিয়ে যাওয়ার সাহস যোগায়। গীতায় আরো বলা হয়েছে- ১. শ্রদ্ধাবান ও সংযমী ব্যক্তিই জ্ঞানলাভে সমর্থ হন, ২. অনাসক্ত কর্মযোগী মোক্ষ লাভ করেন, ৩. জ্ঞানী ভক্তই ঈশ্বরকে হৃদয়ে অনুভব করেন এবং ৪. এই বিশাল বিশ্বে যা-কিছু আছে সবই ঈশ্বরের মধ্যে বিদ্যমান।
গীতার এই কথা থেকে আমরা শ্রদ্ধা ও সংযম সাধনার প্রতি মনোনিবেশ করতে পারি। জাগতিক বিষয়ের প্রতি নির্মোহ হওয়ার প্রেরণা পাই। ধর্ম অনুশীলনের কাজে প্রবৃত্ত হই, অর্থাৎ অর্থহীন গতানুগতিক পথ পরিহার করে ঐশ্বরিক তত্ত্বের মর্মার্থ বোঝার চেষ্টা করি। সবকিছু ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অন্তর্গত। সর্বপ্রকার ভেদবুদ্ধি দূর করে সকলকে ভালোবাসতে চেষ্টা করি। যে যে-ভাবে বা যে-পথে ঈশ্বরকে ডাকতে চায় ডাকতে পারে ঈশ্বর সে ভাবেই তার ডাকে সাড়া দেন এটাই হচ্ছে সর্বধর্ম-সমন্বয়ের মর্মবাণী
গীতায় জ্ঞানের কথা বলা হয়েছে। জ্ঞান, কর্ম ও ভক্তির সমন্বয় করা হয়েছে। জ্ঞানের আলোকে মনকে আলোকিত করতে হবে। তার জন্য কর্ম করতে হবে। এ কর্ম হবে নিষ্কাম। আর সমস্ত নিষ্কাম কর্মের ফল ভগবানে সমর্পণ করতে হবে। একেই বলে ভক্তি। এ-তিনের সমন্বয়ে জীবনপথে চলতে হবে। সুতরাং গীতায় বাস্তব জীবনে কীভাবে চলতে হবে সেই পথও দেখানো হয়েছে। সামগ্রিক বিচারে আমাদের জীবনাচরণে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার গুরুত্ব অপরিসীম
একক কাজ : শ্রীমদভগবদ্গীতার শিক্ষা সম্পর্কে পাঁচটি বাক্য লেখ।
নতুন শব্দ : অভ্যুত্থান, শ্রদ্ধাবান, সংযমী, অনাসক্ত, কর্মযোগী, মোক্ষ।