SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

Academy

একজন আদর্শ মানুষ হতে তার মধ্যে কয়টি গুণ থাকা বাঞ্ছনীয়? 

Created: 7 months ago | Updated: 7 months ago

তৃতীয় অধ্যায় হিন্দুধর্মের স্বরূপ ও বিশ্বাস

সংস্কৃত গৃ-ধাতুর সঙ্গে মন প্রতার যোগে ধর্ম শব্দটি গঠিত হয়েছে। এর অর্থ যা ধারণশক্তি সম্পন্ন তা-ই ধর্ম। হিংসা না করা, চুরি না করা, সত্যনিষ্ঠ হওয়া, দেহ-মনে পবিত্র থাকা এবং সংযমী হওয়া এ পাঁচটি গুণ হিন্দুধর্মের সাধারণ লক্ষণ। আবার ধর্ম-অধর্ম নির্ণয়ে পবিত্র বেদ, স্মৃতিশাৱ, - সদ্ব্যক্তিদের আচার-আচরণ এবং বিবেকের নির্দেশ - এই চারটি হচ্ছে হিন্দুধর্মের বিশেষ লক্ষণ। বহু যুগের বহু সাধকের সাধনায় এ ধর্ম এমন বিকশিত হয়েছে। হিন্দুধর্ম বহুকালের প্রাচীন। চলার পথে মাঝে মাঝে নতুন ধর্মীয় চিন্তা এতে যুক্ত হয়েছে। এ ধর্মের বিধি-বিধান অনুশীলন করে জীবনকে সুন্দর ও শান্তিময় করা যায়

সমাজ-জীবনে কর্ম বা জীবিকা অনুসারে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র- এ চতুর্বর্ণের সৃষ্টি হয়েছে। এ বর্ণভেদ পেশাগত, জন্মগত নয়। মানুষের পূর্ণাঙ্গ জীবনকাল ধরা হয় শতবর্ষ। সমস্ত সময়টিকে চার ভাগে ভাগ করা হয় ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ্য, বানগ্রস্থ ও সন্ন্যাস। একত্রে এদের বলা হয় চতুরাশ্রম।

হিন্দুধর্মে যুগবিভাগ রয়েছে - সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি প্রতিটি যুগের জন্য নির্দিষ্ট ধর্মকর্মের কথা বলা হয়েছে, যেগুলোকে বলা হয় যুগধর্ম। পবিত্র দেহ-মন নিয়ে ধর্মচর্চা করতে হয়। এজন্য পূজা, উপবাস, প্রার্থনা, উপাসনা ইত্যাদি আচার-অনুষ্ঠানের অনুশীলন করতে হয়। হিন্দুধর্মে ব্রত পালনের ব্যবস্থা রয়েছে। তরুণ ব্রত পালন করে পাপমুক্ত হয়ে থাকেন। ঈশ্বরে বিশ্বাস, পূজা-পার্বণ ও ব্রতপালনের মধ্য দিয়ে ধর্মের সুফল পাওয়া যায়

আমরা এ অধ্যায়ের দুটি পরিচ্ছেদের প্রথম পরিচ্ছেদে হিন্দুধর্মের সাধারণ ও বিশেষ লক্ষণ এবং হিন্দুধর্মের ক্রমবিকাশ সম্পর্কে অবগত হব। আর দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে বর্ণ ও আশ্রমধর্মের ধারণা, বর্ণভেদ জন্মগত নয়, পেশাগত এ ধারণা, যুগধর্ম, ব্রতপালন, ব্রতপালনে করণীয়, শিবরাত্রির ব্রতকথা এবং ব্রতপালনের গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত হন।

কর্মা-৪, হিন্দুধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা- অষ্টম শ্রেণি

 

প্রথম পরিচ্ছেদ

হিন্দুধর্মের স্বরূপ

হিন্দু ধর্মশাস্ত্রে ধর্মের লক্ষণসমূহকে সাধারণ লক্ষণ ও বিশেষ লক্ষণ - এ দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে পাঠ ১ : সাধারণ লক্ষণ

সংস্কৃত ধৃ-ধাতুর সঙ্গে মনু প্রত্যয়যোগে ধর্ম শব্দটি উৎপন্ন হয়েছে। ধৃ-ধাতুর অর্থ ধারণ করা । তাহলে ধর্ম শব্দটিতে বোঝাচ্ছে ধারণশক্তি। এ প্রসঙ্গে মহাভারতের শান্তিপর্বে বর্ণিত ধর্মের লক্ষণটি স্মরণ করা যায়:

ধারণাদ্ ধর্মম্ ইত্যাহুধর্মেণ বিধৃতাঃ প্রজাঃ যঃ স্যাদ ধারণসংযুক্তঃ স ধর্ম ইতি নিশ্চয়ঃ। ( ১০৬/১৪)

অর্থাৎ, ধারণ ক্রিয়া (ধৃ+মন্) থেকে ধর্ম শব্দের উৎপত্তি। ধর্ম সৃষ্টিকে বিশেষভাবে ধারণ করে আছে। সংক্ষেপে যা-কিছু ধারণশক্তি সম্পন্ন তা-ই ধর্ম। যেমন মানুষের ধর্ম হচ্ছে মনুষ্যত্ব। এই মনুষ্যত্বই মানুষকে অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা করে রেখেছে। এই মনুষ্যত্বের পরিচয় দিতে গিয়ে মনুসংহিতায় বলা হয়েছে:

অহিংসা সত্যমন্তেয়ং শৌচম্ ইন্দ্ৰিয়নিগ্রহঃ

এতং সামাসিকং ধর্মং চাতুর্বর্ণেহব্রবীানুঃ ॥ (১০/৬৩)

অর্থাৎ, হিংসা না-করা, সত্যবাদী হওয়া, চুরি না করা, পবিত্র থাকা এবং সংযমী হওয়া - এই পাঁচটিকে চতুর্বর্ণের জন্য মনুষ্যত্ব বা ধর্মের সাধারণ লক্ষণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ গুণগুলো অর্জন করে একজন মানুষ মনুষ্যত্বের অধিকারী হতে পারে। যদি দেখা যায় একজন মানুষ অন্যকে হিংসা করেন না, জীবনে সত্যকে ধরে রেখেছেন, অপরের সম্পদ চুরি করেন না, পোশাক-পরিচ্ছদ ও চিন্তা-ভাবনায় পরিশুদ্ধ এবং জীবন ধারণের প্রতিটি ক্ষেত্রে সংযমী, তাহলে ঐ ব্যক্তিকে আমরা মনুষ্যত্বের অধিকারী বলব। আর এরূপ ব্যক্তিই হবেন হিন্দুধর্মের দৃষ্টিকোণ থেকে আদর্শ মানুষ। তাই এগুলোকে হিন্দুধর্মের সাধারণ লক্ষণ বলা হয়েছে। ধর্ম ধার্মিককে রক্ষা করে। ধর্ম নষ্ট হলে মানুষ আর মানুষ থাকে না।

একক কাজ ধর্মের সাধারণ লক্ষণ তোমার বাস্তব জীবনে কীভাবে প্রয়োগ করবে তা লেখ।

নতুন শব্দ: সংযমী, স্মরণ, মনুষ্যত্ব ।

fe a fe

পাঠ ২ বিশেষ লক্ষণ

ধর্মের সাধারণ লক্ষণ বর্ণনার পর ধর্মের বিশেষ লক্ষণসমূহ বলা হয়েছে। এ সম্পর্কে মনুসংহিতায় বলা

বেলঃ স্মৃতিঃ সদাচারঃ এভাচতুর্বিধং প্রাঃ সাক্ষাৎ ধর্মস্য লক্ষণম্ ॥ (২/১২)

অর্থাৎ, বেদ, স্মৃতিশান, সদাচার ও বিবেকের বাণী - এই চারটি ধর্মের বিশেষ লক্ষণ। এই চারটিকে অনুসরণ করে কোনটা ধর্ম, কোনটা অধর্ম তা নির্ণয় করা যায়।

যে

সনাতন ধর্মের ভিত্তিমূলে রয়েছে বেদ। বেদ আদি ধর্মগ্রহ। 'বেদ' শব্দের অর্থ জ্ঞান। বেদের ঋষিপণ ধ্যানস্থ হয়ে ঈশ্বরের বাণী লাভ করেছেন। সে-ৰাণীসমূহ কালক্রমে লিপিবদ্ধ হয়ে বেদ নামে পরিচিত হয়েছে। আমরা জানি বেদ চারটি ঋবেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ, অথর্ববেদ কোনটা ধৰ্ম, কোনটা অধর্ম এর মীমাংসার জন্য বেদের মতকেই গ্রহণ করা হয়।

বেদ

স্মৃতিশাস্ত্র

বেদের পরে সবরকম কর্তব্যকর্মের উপদেশ দিয়ে রচিত হয় স্মৃতিশাস্ত্র। স্মৃতিগারগুলো রচিত হয়েছে বেদের মতামত ঠিক রেখে। স্মৃতিশাস্ত্রের নিরম-নির্দেশ মেনে চললে ধর্মাধর্ম নির্ণয় করা সহজ হয়।

সদাচার

সৎ+আচার = সদাচার সৎ ব্যক্তিদের আচার-আচরণে ধর্মের প্রকাশ ঘটে। বেদ ও স্মৃতিশাস্ত্রের মাধ্যমে যদি ধর্ম ও অধর্ম নির্ণয় করা সম্ভব না হয়, সে ক্ষেত্রে সমালে মহাপুরুষদের আচার-আচরণ ও উপদেশ-নির্দেশ অনুসরণ করাই ধর্ম

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ হিন্দুধর্মের বিশ্বাস

পাঠ ১ : বর্ণভেদ

আমরা হিন্দুধর্মের সাধারণ ও বিশেষ লক্ষণ এবং ক্রমবিকাশ সম্পর্কে জেনেছি। এখন হিন্দুধর্মে বর্ণপ্রথা সম্পর্কে অবগত হব।

হিন্দুধর্মের মূল ধর্মগ্রন্থ বেদ। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র এই চার বর্ণের কথা বেদ থেকেই জানা যায়। সমাজে সকল মানুষের জ্ঞান, বুদ্ধি ও কর্মদক্ষতা সমান নয়। কর্মের যোগ্যতা অনুসারে প্রাচীনকাল থেকেই এ-ধর্মে বর্ণবিভাগ রয়েছে। সমাজে যাঁরা জ্ঞান-বুদ্ধিতে উন্নত তাঁরা ব্রাহ্মণ নামে পরিচিত হন। তাঁরা জ্ঞান অর্জন, জ্ঞান বিতরণ এবং ধর্মকর্মে নিযুক্ত থাকতেন। আবার রাজকার্যে কুশলী, দেশরক্ষার কাজে দক্ষ – এই শ্রেণির লোকদের বলা হয় ক্ষত্রিয়। ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা এবং শস্যাদি উৎপাদন কর্মে উৎসাহী ব্যক্তিরা হলেন বৈশ্য। আর শ্রমজীবী ব্যক্তিদের শূদ্র শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বর্ণভেদ পেশাগত, জন্মগত নয়

বৈদিক যুগে বর্ণপ্রথা ছিল কর্ম বা পেশাগত। ঋগবেদের একটি মন্ত্রে একজন ঋষি বলছেন, 'আমি বেদমন্ত্রদ্রষ্টা ঋষি। আমার কন্যা যব ভেজে ছাতু বানিয়ে বিক্রি করে। আর আমার ছেলে চিকিৎসক। এ থেকে বোঝা যায়, তখন বর্ণভেদ জন্মগত বা বংশানুক্রমিক ছিল না। তাছাড়া ক্ষত্রিয় রাজা বিশ্বামিত্র তপস্যার বলে ব্রাহ্মণত্ব অর্জন করেছিলেন। বৈশ্য থেকে ব্রাহ্মণ হওয়ারও দৃষ্টান্ত ধর্মগ্রন্থে রয়েছে। শ্রীমদ্‌ভগবদ্‌গীতায়ও ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, গুণ ও কর্মের ভিত্তিতে তিনি চার বর্ণের সৃষ্টি করেছেন (গীতা- ৪/১৩)। কিন্তু কালক্রমে এই বর্ণপ্রথা জন্মগত হয়ে দাঁড়ায়। তাই ব্রাহ্মণের সন্তান হয় ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়ের সন্তান হয় ক্ষত্রিয়, বৈশ্যের সন্তান হয় বৈশ্য এবং শূদ্রের সন্তান হয় শূদ্র। এজন্য একই পরিবারের চার সন্তান চার রকম গুণ নিয়ে জন্মগ্রহণ করলেও জন্মগত কারণে চারজনকেই একই কর্ম করতে হয়। এর ফলে তারা কোনো কর্মেই দক্ষতা অর্জন করতে পারে না। তাই আধুনিক কালে হিন্দুধর্মের বিজ্ঞ ব্যক্তিগণ বলেছেন এই বর্ণবিন্যাস হবে পূর্বের ন্যায় কর্মের ভিত্তিতে, অর্থাৎ বর্ণভেদ পেশাগত, জন্মগত নয় । বংশানুক্রমিক বর্ণভেদ প্রথা হিন্দুধর্মাবলম্বীদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনের প্রতিকূল। তাই সমাজের পরিবর্তনশীলতায় এ প্রথার অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। অনেক ক্ষেত্রেই সমাজের সচেতন পরিবারগুলো এ প্রথার গোঁড়ামির প্রতিকূলে অবস্থান নিয়ে পারিবারিক কাজ সম্পাদন করছে। পেশাগত বর্ণভেদের মূল লক্ষ্য ছিল পেশার উৎকর্ষ সাধন ও নৈতিক গুণাবলির বিকাশের মাধ্যমে সামাজিক মঙ্গল সাধন করা। বংশানুক্রমিক বর্ণভেদ সমাজের সচেতন মানুষের নিকট কুসংস্কার ব্যতীত অন্য কিছু নয়। তাই এ দৃষ্টিভঙ্গির আরও পরিবর্তন বাঞ্ছনীয়

একক কাজ: 'হিন্দুধর্মে বর্ণভেদ প্রথা ভ্রাতৃত্বের বন্ধনের প্রতিকূল এ সম্পর্কে পাঁচটি বাক্য লেখ।

নতুন শব্দ: বর্ণভেদ, কুশলী, ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র।

100

হিন্দুধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা

ঊনবিংশ শতকে হিন্দুধর্মের অনেক আচার-আচরণে সংস্কার সাধন করা হয়। মূর্তিপূজার পরিবর্তে আসে এক ব্রহ্মচিন্তা। স্থাপিত হয় ব্রাহ্মসমাজ। অপরদিকে মূর্তিপূজার মাধ্যমেও যে মানুষ ঈশ্বরলাভ করতে পারে, এ ধারণাটি শ্রীরামকৃষ্ণের সাধনায় সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। শ্রীরামকৃষ্ণ ও তাঁর শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দের প্রচেষ্টায় হিন্দুধর্মে পুরাতন ও নতুন চিন্তাধারার সমন্বয় ঘটে ।

সংক্ষেপে বলা যায়- হিন্দুধর্মের বিকাশ ঘটেছে বৈদিক যুগে যজ্ঞকর্মে, বেদান্তের ব্রহ্মসাধনায়, পৌরাণিক যুগে দেব-দেবীর উপাসনায়, দ্বাপর যুগে শ্রীকৃষ্ণের কর্মযোগে, মধ্যযুগে শ্রীচৈতন্যের ভক্তিভাবনায়, আর আধুনিক কালে শ্রীরামকৃষ্ণের সর্বধর্ম সমন্বয়ের মধ্য দিয়ে ঈশ্বর সর্বশক্তিমান । তাঁর ভাব অনন্ত। তাঁকে পাওয়ার পথও বিচিত্র। সাধনপথে যে-কোনো প্রচলিত

পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, মানবের কল্যাণের জন্যই ধর্ম এসেছে। ধর্মাচরণে মানব কল্যাণকে অবশ্যই প্রাধান্য দিতে হবে। মানুষের মধ্যেই ঈশ্বর রয়েছেন, তাই মানবসেবাই ঈশ্বরসেবা। এই ধর্মবোধে বিশ্বাসী হয়ে আমরা জীবনে সেবাধর্মের অনুশীলন করব এবং মানবতাবোধ জাগ্রত করতে যত্নবান হব।

দলীয় কাজ। ধর্মের বিশেষ লক্ষণসমূহ তোমাকে মানবতাবোধে কীভাবে উদ্বুদ্ধ করছে এ সম্পর্কে পাঁচটি বাক্য লেখ।

নতুন শব্দ: স্মৃতিশাস্ত্র, সদাচার, ব্রাহ্মসমাজ, বেদান্ত ।

Content added || updated By

Related Question

View More