SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or
Log in with Google Account

Academy

তীর্থ দর্শনে- 

i. মন পবিত্র হয় 

ii. দুঃখ দূর হয় 

iii. শান্তি নির্বাসিত হয়

নিচের কোনটি সঠিক?

Created: 6 months ago | Updated: 6 months ago

তৃতীয় অধ্যায় 

ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান

আমাদের জীবনকে সুন্দর ও কল্যাণময় করার জন্য যে সমস্ত আচার-আচরণ চর্চিত হয় তা-ই ধর্মাচার । এগুলো লোকাচারও বটে। এসকল আচরণে মাঙ্গলিক কর্মের নির্দেশ আছে । অপরদিকে ধর্মশাস্ত্রে পূজা এবং অবশ্য কর্তব্য বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নির্দেশ দেওয়া আছে। এগুলো ধর্মানুষ্ঠান। ধর্মাচার ও ধর্মানুষ্ঠান মূলত একই সূত্রে গাঁথা। ধর্মাচার ব্যতীত ধর্মানুষ্ঠান হয় না আবার ধর্মানুষ্ঠান করতে হলে ধর্মাচার অবশ্য কর্তব্য। সংক্রান্তি উৎসব, গৃহপ্রবেশ, জামাইষষ্ঠী, রাখীবন্ধন, ভাইফোঁটা, দীপাবলি, হাতেখড়ি, নবান্ন প্রভৃতি ধর্মাচারগুলোর পাশাপাশি দোলযাত্রা, রথযাত্রা, নামযজ্ঞ প্রভৃতি ধর্মানুষ্ঠানগুলোও আমাদের সংস্কৃতি ।

এ অধ্যায় শেষে আমরা-

• ধর্মানুষ্ঠান ও ধর্মাচারের ধারণা দুইটি ব্যাখ্যা করতে পারব

• ধর্মানুষ্ঠান, ধর্মাচার ও পূজা আচারের মধ্যকার সম্পর্ক ব্যাখ্যা করতে পারব

• প্রধান প্রধান ধর্মাচারগুলো ব্যাখ্যা করতে পারব

• সামাজিক ও পারিবারিক জীবনে ধর্মাচারের গুরুত্ব বিশ্লেষণ করতে পারব

• ধর্মানুষ্ঠান হিসেবে দোলযাত্রা, রথযাত্রা ও নামযজ্ঞের বর্ণনা এবং এর প্রভাব বিশ্লেষণ করতে পারব

• আর্থ-সামাজিক, পারিবারিক ও ধর্মীয় জীবনে ধর্মাচারের প্রভাব বিশ্লেষণ করতে পারব

• তীর্থ দর্শনের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে পারব

• পণাতীর্থের পরিচয় ও গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে পারব ।

 

 

 

 

 

 

পাঠ ১ : ধর্মাচার ও ধর্মানুষ্ঠান

হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা সারা বছর নানা উৎসব-অনুষ্ঠান করে থাকে। কথায় বলে, বার মাসে তের পার্বণ । এর মধ্যে কিছু আছে ধর্মানুষ্ঠান। আর কিছু আছে লোকাচার। মূলত জীবনটাকে কল্যাণময়, সুখময় ও আনন্দময় করে রাখার চেষ্টা থাকে সতত। যে-সকল আচার-আচরণ আমাদের জীবনকে সুন্দর ও মঙ্গলময় করে গড়ে তোলে, তা ধর্মাচার নামে স্বীকৃত । এগুলোকে লোকাচারও বলে । তবে এর মধ্যে থাকে মাঙ্গলিক কর্মের নির্দেশ। আবার ধর্মশাস্ত্রে পূজাসহ নানা অনুষ্ঠানের নির্দেশ আছে। এগুলো ধর্মানুষ্ঠান। ধর্মাচার ও ধর্মানুষ্ঠানের সম্পর্ক খুবই নিবিড়। ধর্মাচার করতে গেলে ধর্মানুষ্ঠানের প্রয়োজন হয়, আবার ধর্মানুষ্ঠানে ধর্মাচার করতে হবে। সংক্রান্তি, বর্ষবরণ, দোলযাত্রা, রথযাত্রা উৎসবসহ এখানে কয়েকটি ধর্মাচার ও ধর্মানুষ্ঠানের বর্ণনা দেওয়া হলো।

ধর্মানুষ্ঠান, ধর্মাচার ও পূজা-আচারের সম্পর্ক

জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যে-সমস্ত মাঙ্গলিক আচার-অনুষ্ঠান ধর্মনীতির সাথে সম্পর্কিত সেগুলোই ধর্মাচার । অপরদিকে ঈশ্বর, দেব-দেবীর স্তব-স্তুতি, প্রশংসা করে যে-সকল ধর্মানুষ্ঠান করা হয় তা-ই ধর্মানুষ্ঠান। ধর্মানুষ্ঠান, ধর্মাচার ও পূজা-পার্বণ পরস্পর সম্পর্কিত । ধর্মাচার ধর্মীয় বিধি-বিধান দ্বারা অনুমোদিত। আবার ধর্মানুষ্ঠানে ধর্মাচার পালন করা হয় । পূজা এক প্রকার ধর্মানুষ্ঠান । কিন্তু পূজার সঙ্গে মিশে আছে নানারকম ধর্মাচার । ধর্মানুষ্ঠান করতে হলে নির্দিষ্ট কিছু ধর্মীয় আচারও পালন করতে হয় ।

পাঠ ২ও ৩ : কতিপয় ধর্মাচার

সংক্রান্তি

বাংলা মাসের শেষ দিনকে বলা হয় সংক্রান্তি। এ দিনে ঋতুভেদে ভিন্ন ভিন্ন মাসের সংক্রান্তি অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন উৎসব করা হয়। তবে বাঙালি সমাজে পৌষ সংক্রান্তি ও চৈত্র সংক্রান্তির উৎসবই উল্লেখযোগ্য। সংক্রান্তি শব্দটি কোথাও কোথাও 'সাকরাইন' নামে পরিচিত। তবে পৌষপার্বণ বা পৌষ সংক্রান্তিকে মকর সংক্রান্তিও বলা হয় । হিন্দুরা এই দিনে পিতৃপুরুষের উদ্দেশে তর্পণ করে থাকে ।

চৈত্র সংক্রান্তির প্রধান উৎসব শিব পূজা। এর অপর নাম নীল পূজা । শিবের পূজা করা হয়। অনেক স্থানে একে বুড়োশিবও বলে । শিব পূজার একটি অঙ্গ চড়ক পূজা । শাস্ত্র ও লোকাচার অনুসারে স্নান, দান, ব্রত, উপবাস, প্রভৃতি মঙ্গলজনক উৎসব করা হয় ।

গৃহপ্রবেশ

নবনির্মিত গৃহে প্রথম প্রবেশ করার সময় মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান করা হয়। সেখানে নারায়ণ দেবতার পাশাপাশি বাস্তু বা ভূমিদেবতা এবং গৃহপতির অভীষ্ট দেবতা বা ঠাকুরের পূজা করা হয় ।

জামাইষষ্ঠী

জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে জামাইষষ্ঠী অনুষ্ঠিত হয়। খুবই আনন্দময় অনুষ্ঠান এটি। এদিন জামাইকে শ্বশুরবাড়িতে নিমন্ত্রণ করা হয়। খাওয়া-দাওয়ার বিশেষ

 

 

 

আয়োজন করা হয় । জামাইকে নতুন কাপড়-জামা দেওয়া হয়। জামাইও শাশুড়িসহ অন্যান্য আত্মীয়কে সাধ্যমতো নতুন কাপড় প্রদান করে । এদিন ষষ্ঠীপূজাও অনুষ্ঠিত হয়। সন্তান কামনায় ও সন্তানের মঙ্গল প্রার্থনা করে ষষ্ঠীদেবীর পূজা হয় ।

রাখীবন্ধন

‘রাখী' কথাটি রক্ষা শব্দ থেকে উৎপন্ন । হিন্দু ধর্মাচারের মধ্যে রাখীবন্ধন অন্যতম । এদিন বোনেরা তাদের ভাইদের হাতে রাখী নামে একটি পবিত্র সুতো বেঁধে দেয়। ভাই-বোনের মধ্যকার আজীবন ভালোবাসার প্রতীক বহন করে এই রাখীবন্ধন। নিজের ভাই ছাড়াও আত্মীয় ও অনাত্মীয় ভাইদের হাতেও রাখী পরানো হয় এবং এতে ভাই-বোনের মধ্যে মধুর সম্পর্ক স্থাপিত হয়। শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে এ পর্বটি পালন করা হয় বিধায় এ দিনটি রাখী পূর্ণিমা নামেও পরিচিত ।

ভ্রাতৃদ্বিতীয়া

কার্তিক মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে এ উৎসব পালন করা হয় । এ দিনটি বড়ই পবিত্র । পুরাণে উল্লেখ আছে- কার্তিকে শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে যমুনাদেবী তাঁর ভাই যমের মঙ্গল কামনায় পূজা করেন । তাঁরই পুণ্যপ্রভাবে যমদেব অমরত্ব লাভ করেন। এ কল্যাব্রত স্মরণে রেখে বর্তমান কালের বোনেরাও এ দিনটি পালন করে আসছে।

ভাইকে যাতে কোনো বিপদ-আপদ স্পর্শ করতে না পারে সেজন্য বোনদের সতত কামনা! এদিন উপবাস থেকে ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দেওয়া হয়। বাঁ হাতের কড়ে অথবা অনামিকা আঙুল দিয়ে চন্দনের (ঘি, কাজল বা দধিও হতে পারে) ফোঁটা দিয়ে ভাইয়ের দীর্ঘায়ু কামনা করে বলা হয়-

“ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা । '

এজন্য এ অনুষ্ঠানের এক নাম ‘ভাইফোঁটা' । ভাইকে ফল, মিষ্টি, পায়েস, লুচি প্রভৃতি উপাদেয় খাদ্য পরিবেশন করা হয় । শুধু পারিবারিক গভীর মধ্যেই নয়, এ উৎসবের মধ্য দিয়ে জাতিধর্ম নির্বিশেষে সকলের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত করে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা সম্ভব ।

 

 

বর্ষবরণ

বাংলা সনের প্রথম দিন নতুন বছরকে বরণ করার মাধ্যমে এ উৎসব পালন করা হয়। এটি ধর্মীয় অনুভূতির পাশাপাশি পেয়েছে সার্বজনীনতা। বর্ষবরণ উৎসব আজ বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার এক মহা উৎসব। এ দিন বিভিন্ন পূজা, মিষ্টি খাওয়া, ভাব বিনিময় ও হালখাতাসহ নানা প্রকার অনুষ্ঠান করা হয় ।

বর্ষবরণ ও চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষে পাহাড়ি অঞ্চলের বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব বৈসাবি' পালন করে ।

দীপাবলি

শ্যামা বা কালীপূজার দিন রাত্রে অনুষ্ঠিত হয় দীপাবলি' উৎসব। প্রদীপ জ্বালিয়ে অন্ধকার দূর করা হয়। সচেতনতার আলো জ্বালিয়ে মনের অজ্ঞানতার মোহান্ধকার দূর করার প্রতীক হিসেবে এই দীপাবলি উৎসব। সকল কুসংস্কার প্রদীপের আগুনে পুড়িয়ে জ্ঞানের আলোকে সারা বিশ্ব আলোকিত হোক - এ ব্রত নিয়েই দীপাবলি উৎসব পালন করা হয়। এটি দেওয়ালি, দীপান্বিতা, দীপালিকা, সুখরাত্রি, সুখসুপ্তিকা প্রভৃতি নামেও পরিচিত।

হাতেখড়ি

সরস্বতী পূজার দিন শিশুদের শিক্ষা-জীবনে প্রবেশের এক উল্লেখযোগ্য অ

ধ্যায় 'হাতেখড়ি' অনুষ্ঠান । পুরোহিত কিংবা পছন্দনীয় গুরুজনের কাছে কলাপাতায় খাগ দিয়ে লিখে অথবা পাথরে খড়িমাটি দিয়ে লিখে শিশুরা লেখাপড়ার জগতে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রবেশ করে ।

নবান্ন

নবান্ন আবহমান বাংলার একটি ঐতিহ্যবাহী অসাম্প্রদায়িক সর্বজনীন উৎসব । নবান্ন = নব + অন্ন; নবান্ন শব্দের অর্থ নতুন ভাত । বার মাসে তের পার্বণের একটি পার্বণ । হেমন্তকালের অগ্রহায়ণ মাসে নতুন ধানের চাল দিয়ে তৈরি ভাত, নানা রকম পিঠা প্রভৃতি দিয়ে যে মাঙ্গলিক উৎসব করা হয় তার-ই নাম নবান্ন উৎসব। এটি ঋতুভিত্তিক অনুষ্ঠান। এদিন শস্যের অধিষ্ঠাত্রী দেবী শ্রীশ্রীলক্ষ্মীর পূজা দেওয়া হয় ।

একক কাজ : প্রত্যেকটি বিষয় সম্পর্কে দুইটি করে বাক্য লেখ

 

 

 

 

পাঠ ৪ : ধর্মানুষ্ঠান

দোলযাত্রা

ফাল্গুনী পূর্ণিমার (দোলপূর্ণিমা) দিন রাধা-কৃষ্ণকে দোলায় রেখে আবীর, কুঙ্কুমে রাঙিয়ে পূজা করা হয়। তাঁদের পূজা দিয়ে পরস্পর পরস্পরকে রং বা আবীর মাখিয়ে সকলে আনন্দ করে। এ পূজার আগের দিন অর্থাৎ ফাল্গুনী শুক্লা চতুর্দশীর দিন 'বুড়ির ঘর' বা 'মেড়া' পুড়িয়ে অমঙ্গলকে দূর করার বা ধ্বংস করার প্রতীকী অনুষ্ঠান করা হয়। অনেকস্থানে এসময় সমস্বরে বলা হয়- 'আজ আমাদের নেড়া পোড়া, কাল আমাদের দোল, পূর্ণিমাতে বলো সবাই, বলো হরিবোল ।’

এটি মূলত বৈষ্ণবীয় উৎসব। এই ফাল্গুনী পূর্ণিমা বা দোল পূর্ণিমার দিন বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণ আবীর নিয়ে রাধিকা ও অন্যান্য গোপীগণের সাথে রং খেলায় মেতেছিলেন । সে ঘটনা থেকেই এ দোল খেলার প্রবর্তন । একে বসন্ত-উৎসবও বলা যায়।

দোলপুর্ণিমার দিন দোলযাত্রা উপলক্ষে বিভিন্ন স্থানে গান, মেলা প্রভৃতির আয়োজন করা হয়। দোলযাত্রা উৎসবের দিন সকাল থেকেই শত্রু-মিত্র, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলে বিভিন্ন প্রকার রং নিয়ে খেলায় মত্ত হয়ে বিভেদ ভুলে যায় । সকলেই হয়ে যায় একাত্ম । এটাই দোলযাত্রার সার্বজনীনতা। বাংলার বাইরে এটি হোলি উৎসব নামে পরিচিত ।

রথযাত্রা

হিন্দুদের ধর্মানুষ্ঠানগুলোর মধ্যে রথযাত্রা অন্যতম পর্ব। এটি হিন্দুদের ধর্মীয় উৎসব হলেও বর্তমানে সর্বজনীন উৎসব হিসেবে রূপলাভ করেছে । আষাঢ় মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে রথযাত্রা শুরু হয়। এই রথযাত্রা শ্রীশ্রীজগন্নাথদেবের রথযাত্রা নামেই পরিচিত উড়িষ্যার পুরীতে জগন্নাথ দেবের মন্দির প্রতিষ্ঠিত ।

রথ হলো চাকাওয়ালা একটি যান। এখানে তিন জন দেবতা – জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা অধিষ্ঠিত থাকেন। ভক্তগণ এ তিন দেবতার যানটিকে একটি নির্দিষ্ট দেবালয় বা মন্দির থেকে রশি দিয়ে টেনে অন্য একটি নির্দিষ্ট মন্দির বা বারোয়ারি তলায় নিয়ে রেখে আসে। এরপর ঠিক নবম দিনে অর্থাৎ একাদশীর দিন সে স্থান থেকে টেনে পুনরায় পূর্বের নির্দিষ্ট মন্দিরে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় । এ পর্বটির নাম শ্রীশ্রীজগন্নাথদেবের পুনর্যাত্রা বা উল্টোরথ । এই রথযাত্রা উপলক্ষে নয় দিনব্যাপী

বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়। আমাদের দেশে প্রায় প্রতিটি অঞ্চলেই রথযাত্রা পালিত হয়। তবে ঢাকা জেলার ধামরাইয়ে অনুষ্ঠিত রথযাত্রা উৎসব বাংলাদেশে বিখ্যাত ।

 

 

 

 

রথযাত্রার তাৎপর্য :

রথের সময় ভগবানই ভক্তের কাছে নেমে আসেন । সবাই একত্রে রথের রশি ধরে। এখানে জাতি বর্ণের বিভেদ থাকে না। তাই রথযাত্রা দেয় সাম্যের শিক্ষা। রথের মেলা একদিকে উৎসব, অন্যদিকে এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে।

পাঠ : ৫ : ধর্মানুষ্ঠান ও পারিবারিক-সামাজিক জীবনে ধর্মানুষ্ঠান ও ধর্মাচারের গুরুত্ব

নামযজ্ঞ

নামযজ্ঞ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীরামচন্দ্রের পূজা করা হয়। বিভিন্ন সুরে, ছন্দে, তালে কৃষ্ণনাম এবং রামনাম কীর্তন করা হয় । এ অনুষ্ঠানটি স্থান, সময় এবং আয়োজনের পরিধিভেদে কয়েক প্রহরব্যাপী হয়ে থাকে। তিন ঘন্টায় এক প্রহর ধরা হয় । এ অনুষ্ঠান উপলক্ষে মন্দির বা নামযজ্ঞানুষ্ঠান স্থানটি পবিত্র রাখা হয় । ভক্তরা আসেন দূর-দূরান্ত থেকে। হিন্দুরা বিশ্বাস করে- শ্রীহরির নাম নিলে বা শুনলে পুণ্য লাভ হয়। দুঃখ-যন্ত্রণা থেকে পরিত্রাণ পায় । আর এ বিশ্বাস নিয়েই মানুষ বহুদূর থেকে নামযজ্ঞ অনুষ্ঠানে যোগ দেয়।

এই নামযজ্ঞের অনুষ্ঠান মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয় । ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সবাই একাত্ম হয়ে যায় । সামাজিক বন্ধন আরও সুদৃঢ় হয় ।

একক কাজ : তোমার এলাকায় অনুষ্ঠিত দোলযাত্রা অথবা রথযাত্রা অথবা নামযজ্ঞ ধর্মানুষ্ঠানের বর্ণনা দাও ।

পারিবারিক-সামাজিক জীবনে ধর্মানুষ্ঠান ও ধর্মাচারের গুরুত্ব

ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ জীবনে ধর্মাচারের গুরুত্ব অপরিসীম । ধর্মাচার বা ধর্মনীতি মানুষকে ভদ্র, নম্র ও বিনয়ী করে তোলে । মানবিক মূল্যবোধের এ নীতি অনুসরণ করতে হলে ধর্মাচার অনুসরণ করতে হয় । আবার ধর্মানুষ্ঠান ছাড়া ধর্মাচার তেমন ফলপ্রসূ হয় না। ধর্মাচারের মাধ্যমে সমাজ ও পারিবারিক জীবনের বন্ধন আরও সুদৃঢ় হয় । সুতরাং বলা যায় আমাদের ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ জীবন সুন্দর-সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে হলে ধর্মানুষ্ঠান ও ধর্মাচারের নীতি অনুসরণ করা অবশ্য কর্তব্য ।

পাঠ ৬ : বাংলাদেশের তীর্থস্থান

বাংলাদেশে অনেক তীর্থস্থান রয়েছে। যেমন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, মহেশখালীর আদিনাথের মন্দির, গোপালগঞ্জের ওড়াকান্দি, নারায়ণগঞ্জের লাঙ্গলবন্দ, নোয়াখালীর রামঠাকুরের সমাধিস্থল, পাবনার হিমাইতপুর, সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুরের পণাতীর্থ, শ্রীহট্টের যুগলটিলা প্রভৃতি ।

 

 

 

 

তীর্থ দর্শনের গুরুত্ব

স্বয়ং ভগবান কিংবা তাঁর অবতারের আবির্ভাব স্থানকে পূণ্যস্থান বলা হয়। কোনো দেবালয়ের স্থানও পুন্যস্থান আর পুণ্যস্থানকে বলা হয় তীর্থস্থান। এগুলো ঐতিহাসিক স্থান বলেও আখ্যায়িত । তীর্থস্থান ভ্রমণ করা একটি পুণ্য কর্ম । ধর্মপালন করার মতো তীর্থদর্শন করাও একটি পবিত্র কর্তব্য। তীর্থদর্শনে মন পবিত্র হয়, অশান্ত মন শান্ত হয়। দুঃখ দূর হয়। পুণ্যলাভ হয় । পরকালে সদ্‌গতি হয়। এছাড়াও ঐতিহাসিক তীর্থস্থান ভ্রমণে জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি পায়। মনের প্রসারতা বাড়ে। সংকীর্ণতা দূর হয়। উদারতা বৃদ্ধি পায় । মনে আসে স্বস্তি । মহাপুরুষদের জীবনাচরণের নিদর্শন মনকে ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ করে।

পণাতীর্থ এবং পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে এর প্রভাব

সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর গ্রামে পণাতীর্থস্থানটি অবস্থিত । পণাতীর্থে মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যের পার্ষদ শ্রীমৎ অদ্বৈত প্রভুর জন্মস্থান। এটি লাউড় পাহাড়ে অবস্থিত। চৈত্রমাসে বারুণীস্নানে এখানে বহু মানুষের সমাবেশ হয়। সাধক পুরুষ অদ্বৈত প্রভুর মা লাভাদেবীর গঙ্গাস্নানের খুব ইচ্ছে হলো। কিন্তু শারীরিক অসামর্থ্যের কারণে তিনি গঙ্গাস্নানে যেতে পারেননি । অদ্বৈত প্রভু তাঁর মায়ের ইচ্ছে পূরণের জন্য যোগসাধনাবলে পৃথিবীর সমস্ত তীর্থের পুণ্যজল এক নদীর মধ্যে নিয়ে আসেন।

এই জলধারাটিই পুরনো রেণুকা নদী। বর্তমানে এটি যাদুকাটা নদী নামে প্রবাহিত । সুনামগঞ্জের তাহিরপুর থানার এই নদীর তীরে পণাতীর্থে প্রতি বছর বারুণী স্নানে বহু লোকের সমাগম হয় |

একক কাজ : পণাতীর্থের মতো তোমার দেখা কোনো তীর্থস্থান সম্পর্কে সংক্ষেপে উল্লেখ কর ।

অনুশীলনী

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন :

১। 'নবান্ন' উৎসবে কোন দেবীর পূজা করা হয় ? ক. সরস্বতী

খ. লক্ষ্মী

গ. দুর্গা

ঘ. মনসা

২। চৈত্রসংক্রান্তির প্রধান উৎসব কোনটি?

ক. জামাইষষ্ঠী

খ. দোলযাত্রা

গ. দীপাবলি

ঘ. শিবপূজা

 

 

 

 

নবম শ্রেণির ছাত্র অয়ন পহেলা বৈশাখের সকালে পূজার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মাধ্যমে গ্রামের সকলের

সাথে আনন্দ উপভোগ করে । এ আনন্দ উৎসব তার কাছে ছিল মহামিলন মেলা ।

নিচের অনুচ্ছেদটি পড় এবং ৩ ও ৪ নং প্রশ্নের উত্তর দাও :

৩ । অয়ন গ্রামে কোন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে?

ক. সংক্রান্তি গ. বর্ষবরণ

খ. গৃহপ্রবেশ ঘ. নবান্ন

৪। সামাজিক ও পারিবারিক জীবনে উক্ত অনুষ্ঠানটি অয়নের জীবনে এক মহামিলন মেলা ।

কারণ এ অনুষ্ঠানটি— i. সর্বজনীন

ii. অসাম্প্রদায়িক চেতনার মিলন iii. ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা সম্পর্কিত

নিচের কোনটি সঠিক?

ক. i

খ. ii

গ. iii

ঘ. i, ii ও iii

সৃজনশীল প্রশ্ন :

১। প্রতি বছর কার্তিক মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে কনক উপবাস থেকে তার ভাই সৌবর্ণের কপালে ফোঁটা দিয়ে ভাইয়ের দীর্ঘায়ু কামনা করে । তার বিশ্বাস সৌবর্ণ সকল বিপদ-আপদ থেকে পরিত্রাণ পাবে ।

ক. বাংলা মাসের শেষ দিনকে কী বলা হয়?

খ. ধর্মাচার বলতে কী বোঝায়?

গ. কনক কীভাবে অনুচ্ছেদে বর্ণিত ধর্মাচারটি উদযাপন করছে, তোমার পঠিত বিষয়বস্তুর আলোকে

ব্যাখ্যা কর। 

ঘ. পারিবারিক ও ধর্মীয় জীবনে কনকের পালনকৃত ধর্মাচারটির প্রভাব বিশ্লেষণ কর । 

২। চৈত্র মাসে গোবিন্দ তার মা-বাবার সাথে লাঙ্গলবন্দ স্নানে গিয়েছিল । সেখানে গিয়ে সে তার মা-বাবার সাথে স্নান সম্পন্ন করে । স্নান শেষে হাজার মানুষের ভিড়ে লাঙ্গলবন্দ স্নান সম্পর্কে তার কৌতূহল

জাগে এবং সে লাঙ্গলবন্দ স্নানের উৎপত্তি, বিকাশ ও মহাপুরুষের অবদান সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে ।

ক. পুণ্যস্থান কী?

খ. ঐতিহাসিক ধর্মীয় স্থান ভ্রমণের গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর। গ. গোবিন্দের তীর্থ দর্শনের সাথে তোমার পাঠ্যপুস্তকের যে তীর্থস্থানের সাদৃশ্য রয়েছে তা ব্যাখ্যা কর।

ঘ. তীর্থ ভ্রমণে মানুষের জীবনে যে প্রভাব প্রতিফলিত হয় তা বিশ্লেষণ কর।

Content added By

Related Question

View More

Promotion

Promotion
Content for the offcanvas goes here. You can place just about any Bootstrap component or custom elements here.