Academy

তরণী সেনকে দেখে রামের বিস্মিত হওয়ার কারণ-

Created: 4 months ago | Updated: 4 months ago

অষ্টম অধ্যায়

ধর্মীয় উপাখ্যান ও নৈতিক শিক্ষা

পূর্বের অধ্যায়ে আমরা ধর্মগ্রন্থ থেকে কীভাবে নৈতিক শিক্ষা পাওয়া যায় সে সম্পর্কে জেনেছি। বর্তমান অধ্যায়ে 

ধর্মগ্রন্থে ধর্মীয় উপাখ্যান ও নৈতিক শিক্ষা সম্পর্কে জানব। ধর্মগ্রন্থে বিভিন্ন ধরনের আখ্যান- উপাখ্যান ধর্মতত্ত্বের নানা বিষয়ের দৃষ্টান্ত হিসেবে সন্নিবেশিত হয়েছে এবং উপাখ্যানগুলো নৈতিক শিক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে । সুতরাং আমরা ধর্মীয় উপাখ্যান পাঠ করব এবং নৈতিক শিক্ষা আর্জন করব। এ অধ্যায়ে ধর্মগ্রন্থে উপাখ্যান সন্নিবেশ করার গুরুত্ব, মানবতা ও সৎসাহস নামক দুইটি নৈতিক বিষয়ের ধারণা ব্যাখ্যা ও তার প্রতিফলনমূলক উপাখ্যান বর্ণনা করব ।

- অধ্যায় শেষে আমরা-

  • ধর্মগ্রন্থে উপাখ্যান সন্নিবেশ করার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে পারব
  • মানবতার ধারণাটির ধর্মীয় ব্যাখ্যা করতে পারব
  • মানবতার দৃষ্টান্তমূলক উপাখ্যান বর্ণনা করতে পারব 
  • বর্ণিত উপাখ্যানের শিক্ষা চিহ্নিত করতে পারব
  • সমাজ ও পারিবারিক জীবনে এ শিক্ষার গুরুত্ব বিশ্লেষণ করতে পারব •
  • নৈতিক সাহস ধারণার ধর্মীয় ব্যাখ্যা করতে পারব
  • সৎ সাহসের দৃষ্টান্তমূলক উপাখ্যান বর্ণনা করতে পাৱৰ
  • বর্ণিত উপাখ্যানের শিক্ষা ব্যাখ্যা করতে পারব।

পাঠ ১ : ধর্মগ্রন্থে উপাখ্যান সন্নিবেশ করার গুরুত্ব

অধিকাংশ মানুষ ধর্মকে ভালোবাসেন, শ্রদ্ধা করেন, সম্মান করেন এবং ধর্মের নিয়ম-কানুন, রীতি-নীতি, আচার-অনুষ্ঠান মেনে চলেন । আর এ ধর্মের বিধি-বিধান রয়েছে ধর্মগ্রন্থে। আমরা জানি, হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ বেদ, উপনিষদ, রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ, ভাগবত, গীতা, চণ্ডী ইত্যাদি। প্রতিটি ধর্মগ্রন্থে রয়েছে নানা উপাখ্যানের মাধ্যমে মানুষকে সৎপথে, ন্যায়ের পথে চলার উপদেশ। আর এ সকল উপদেশ মানুষকে সত্যিকারের মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে ভূমিকা রাখে। আমরা যেমন ধর্মকে শ্রদ্ধা করি, তেমনি ধর্মগ্রন্থকেও শ্রদ্ধা করি।

 

 

 

 

ধর্মগ্রন্থে সন্নিবেশিত আদেশ-নির্দেশ মেনে চলতে হয়। এতেই সমাজে হিংসা-দ্বেষ, হানাহানি ইত্যাদি তিরোহিত হয়ে শান্তির বাতাবরণ সৃষ্টি হতে পারে । মানুষ ধর্মগ্রন্থকে মান্য করে, শ্রদ্ধা করে, সম্মান দেয় এবং আগ্রহভরে ধর্মগ্রন্থ পাঠ করে বা শ্রবণ করে ধন্য হয়, সুতরাং মানব জীবনে নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টিতে এবং নৈতিক শিক্ষার ক্ষেত্রে ধর্মগ্রন্থের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । তাই মানবের কল্যাণে, সামাজিক শৃঙ্খলা বিধানে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধন দৃঢ় করতেই ধর্মগ্রন্থে সন্নিবেশ করা হয়েছে নানা উপাখ্যান । আমরা এসব ধর্মীয় উপাখ্যান পাঠ করে নিজেকে নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলব । আর আমরা সবাই যদি এ নৈতিক শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হই, তাহলে সমাজেও তার প্রভাব পড়বে ।

একক কাজ : ধর্মগ্রন্থে কী থাকে? ধর্মগ্রন্থ পাঠ করলে বা শ্রবণ করলে কী হয়? এ বিষয়ে পোস্টার তৈরি

কর ।

পাঠ ২ : মানবতার ধারণা

মনু+ষ্ণ = মানব অর্থাৎ মানুষ । মানুষের সহজাত কিছু প্রবৃত্তি নিয়ে মানুষ জন্মগ্রহণ করে । যেমন- ক্ষুধা, তৃষ্ণা, ক্রোধ, ভয়, হিংসা-দ্বেষ, লোভ-লালসা, ইত্যাদি । এই প্রবৃত্তিগুলো থাকলে তাকে মানুষ বলে চিহ্নিত করা যায় না । কারণ পশু-পাখি, জীব-জন্তু, এমনকি ইতর প্রাণীর মধ্যেও এ প্রবৃত্তিগুলো বিদ্যমান । সুতরাং মানুষকে তখনই প্রকৃত মানুষরূপে চিহ্নিত করা যাবে যখন কোনো একটি বিশেষ গুণের দ্বারা তাকে অন্যান্য জীব-জন্তু থেকে আলাদা করা যাবে । কী সেই গুণ? এক কথায় বলা যায়, এ গুণটির নাম মানবতা । মানবতার জন্যই মানুষকে অন্যান্য জীব থেকে শ্রেষ্ঠ বলা হয়। যার মানবতা নেই তাকে মানুষ বলা যায় না । পাঠের প্রথমে যে সহজাত প্রবৃত্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা পশুর মধ্যেও আছে; তাই এগুলোকে পাশবিক আচরণও বলা যেতে পারে । সুতরাং শুধু পাশবিক আচরণ দিয়ে মানুষ হওয়া যায় না। মানুষ হওয়ার জন্য প্রয়োজন মানবিক গুণাবলি । যার মধ্যে এই মানবিক গুণ রয়েছে তাকেই প্রকৃত মানব বলে আখ্যায়িত করা যায় ।

একক কাজ : (ক) মানুষ ধর্মকে কেন শ্রদ্ধা বা সম্মান করে? (খ) কয়েকটি ধর্মগ্রন্থের নাম লেখ।

মানবতা একটি বিশেষ নৈতিক গুণ । মানবতা ধর্মেরও অঙ্গ । আমরা জানি, সহিষ্ণুতা, ক্ষমা, দয়া, চুরি না করা, শুচিতা, ইন্দ্রিয় সংযম, শুদ্ধবুদ্ধি, জ্ঞান, সত্য ও অক্রোধ (রাগ না করা) এ দশটি যার মধ্যে আছে তাকে আমরা প্রকৃত মানুষ বলে আখ্যায়িত করতে পারি । কারণ মানবতার গঠন ও বিকাশে এ গুণগুলো অপরিহার্য । মানুষ সমাজবদ্ধ জীব, সমাজে বাস করে এবং অপরের দুঃখে তার প্রাণ কেঁদে ওঠে । মানুষের প্রতি মানুষের এই যে ভালোবাসা বা মমত্ববোধ, এরই নাম মানবতা । জীবসেবাও মানবতার অঙ্গ ।

মানুষের প্রতি মানুষের রয়েছে দরদ, রয়েছে সংবেদনশীলতা। যুগে যুগে মানুষ সত্যের সাধনায় জীবন উৎসর্গ করেছে । মানুষের মঙ্গলের জন্য দুঃখ বরণ করেছে । সেবায়, ত্যাগে, কর্মে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে ধন্য হয়েছে। মানুষের কল্যাণ কামনায় নিজের মেধা, শ্রম কাজে লাগিয়ে নিজেকে সার্থক করেছে, করেছে মহান । মহত্ত্বের উৎস হলো মানবতা বা মানবপ্রেম । মানবপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে অসংখ্য মহৎপ্রাণ ব্যক্তি নিজের

 

 

 

জীবনের সর্বস্ব অন্যের জন্য উৎসর্গ করে গেছেন। কেবল অর্থ দিয়ে নয়, নিজের জীবন দিয়েও অনেক মহানুভব ব্যক্তি চরম ত্যাগের পরিচয় দিয়েছেন। জীবে দয়াই মানব জাতির কল্যাণকর পথ। নিরন্নকে অন্ন, বস্ত্রহীনে বস্ত্র, তৃষ্ণার্তকে জল, দৃষ্টিহীনে দৃষ্টি, বিদ্যাহীনে বিদ্যা, ধর্মহীনে ধর্মজ্ঞান, বিপন্নকে আশ্রয়, ভয়ার্তকে অভয়, রুগ্নকে ঔষধ, গৃহহীনে গৃহ, শোকার্তকে সান্ত্বনা দান করা মানবতারই আরেক নাম । আমরা আমাদেরীরীওনাখ্যামানান্তক্ষণ। ক্ষর্জন করব । আমরা প্রকৃত মানুষ হব ।

দলীয় কাজ : মানবিক ও পাশবিক আচরণ বা গুণের তুলনা করে ছক তৈরি কর ।

পাঠ ৩ : রক্তিবর্মার মানবতা

অনেক অনেক দিন আগের কথা । রক্তিবর্মা নামে এক প্রজাবৎসল, কৃষ্ণভক্ত রাজা ছিলেন। তার রাজ্যের প্রজাগণ সুখে শান্তিতে বসবাস করতেন। তিনি শুধু রাজা ছিলেন না। ছিলেন রাজার রাজা, মহারাজা, সম্রাট। সম্রাট হয়েও রক্তিবর্মা পার্থিব বিষয়ের প্রতি আসক্ত নন। শ্রীকৃষ্ণের চরণকেই তিনি একমাত্র সম্পদ বলে জ্ঞান করেন। শ্রীকৃষ্ণে সবকিছু সমর্পণ করে তিনি একবার অযাচক বৃত্তি গ্রহণ করেন । অযাচক বৃত্তি হলো, কারও কাছে কিছু চাওয়া যাবে না, লোকে ইচ্ছে করে বা দয়া করে যা দেবে, তাই দিয়েই দিন যাপন করতে হবে । অযাচক বৃত্তি গ্রহণ করার পর একে একে আটচল্লিশ দিন কেটে গেছে। এই আটচল্লিশ দিনে কেউ তাঁকে কিছুই দেয়নি। তিনিও খেতে চাননি, কেউ ইচ্ছা করে কিছু দেয়নি । ঊনপঞ্চাশতম দিবসে এক ভক্ত তাঁকে একটি থালায় করে কিছু খাবার দিয়ে গেলেন । এবার তাঁর উপবাস ভঙ্গ হবে। হঠাৎ তাঁর সামনে একজন ভিক্ষুক উপস্থিত; সাথে একটি কুকুর। উভয়ের শরীর খুবই কাহিল। দেখেই বোঝা যাচ্ছে, কতদিন কিছুই খায়নি। ভিক্ষুক কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, 'কদিন ধরে কিছুই খেতে পাইনি, দয়া করে আমাকে কিছু খেতে দিন। আমার সাথে আমার কুকুরটিও না খেয়ে আছে।' “ক্ষুধার্ত” লোকটির করুণ অবস্থা দেখে রাজা রক্তিবর্মার চোখে জল এল। কুকুরটি ক্ষুধায় ধুঁকছে। রাজা কিছুক্ষণ পূর্বে খাবার ভিক্ষা পেয়েছেন, তার সবটাই ভিক্ষুক ও তার কুকুরটিকে দিয়ে দিলেন ।

‘পেট ভরল না”, ভিক্ষুক জানাল । রাজা রস্তিবর্মা হাতজোড় করে বললেন, “আর তো কিছুই নেই, ভাই । এরই নাম মানবতাবোধ। নিজে আটচল্লিশ দিন অনাহারে থেকে প্রাণ ওষ্ঠাগত; তবু অপরের দুঃখে নিজের ভিক্ষালব্ধ খাবার

 

 

 

 

 

 

ক্ষুধার্ত ব্যক্তিকে দিয়ে নিজে কষ্ট সহ্য করা, এটা যে কত বড় মানবতা, তা যে কেউ অনুধাবন করতে পারেন । উপাখ্যানের শিক্ষা : মানবতাই ধর্ম । মানবতা গুণের দ্বারা মানুষের মহত্ত্ব প্রকাশ পায়, অন্যেরও উপকার

হয় । আমরা মানবতা গুণ অর্জন করব । তাহলে নিজের পুণ্য হবে এবং অপরেরও কল্যাণ হবে । একক কাজ : উপাখ্যানটি পড়ে তোমরা কী শিক্ষা পেলে? এ সম্পর্কে খাতায় লেখ ।

পাঠ ৪ ও ৫ : সৎসাহসের ধারণা

‘সাহস’ কথাটির অর্থ ভয়শূন্যতা বা নির্ভীকতা। ‘সৎ' শব্দের অর্থ সত্য ও ন্যায়ের পথে চলা । সুতরাং সৎসাহস কথাটির সামগ্রিক অর্থ হলো সত্য ও ন্যায়ের জন্য ভয় না পেয়ে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো অথবা সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় নিজেকে উৎসর্গ করার নামই সৎসাহস। অন্য কথায় নিজের জীবনের ঝুঁকি আছে জেনেও দেশের মঙ্গলের জন্য বা অন্যের মঙ্গলের জন্য যে ব্যক্তি নিজের শক্তিদ্বারা যথাসাধ্য চেষ্টা করে বা সাহস প্রদর্শন করে, তাকেই বলে 'সৎ সাহস' । যখন কেউ দুর্বলের উপর অত্যাচার করে, তখন সৎসাহস নিয়ে দুর্বলের পক্ষে দাঁড়ানো উচিত । দুর্বলকে বা অত্যাচারিত ব্যক্তিকে অত্যাচারীর কবল থেকে রক্ষা করা এবং অত্যাচারীকে প্রতিহত করার জন্য সৎসাহসের প্রয়োজন হয় । যারা ভীরু-কাপুরুষ তারা কখনো কোনো কল্যাণকর বা মঙ্গলজনক কাজ করতে পারে না । সমাজ, দেশ ও জাতি এদের দ্বারা উপকৃত হয় না । এরা সমাজের জঞ্জাল স্বরূপ। আর সৎসাহসী ব্যক্তি সমাজ, দেশ ও জাতির অহঙ্কার। তাঁরা সমাজের, দেশের বা জাতির যে কোনো বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়তে দ্বিধা করেন না। সৎসাহস মানুষের একটি বিশেষ নৈতিকগুণ। সৎসাহস ধর্মেরও অঙ্গ ।

ধর্ম রক্ষার জন্য যুদ্ধ করা বীরের ধর্ম । তাই যুদ্ধক্ষেত্রে সৎসাহস দেখানো বীরের কর্তব্য। রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ প্রভৃতি ধর্মগ্রন্থে অনেক বীরের কাহিনি আছে যাঁরা তাদের সৎসাহসের জন্য বিখ্যাত হয়েছেন ।

একক কাজ : সৎসাহস সম্পর্কে তিনটি বাক্য লেখ ।

সৎসাহসী বালক তরণীসেন

ত্রেতা যুগের কথা । অযোধ্যার রাজা দশরথ । তাঁর তিন রানি- কৌশল্যা, কৈকেয়ী ও সুমিত্রা। কৌশল্যার পুত্র রাম সকলের বড় । কৈকেয়ীর পুত্র ভরত। সুমিত্রার দুই পুত্র লক্ষ্মণ ও শত্রুঘ্ন । পুত্রদের মধ্যে রাম সকলের বড় । কৈকেয়ীর চক্রান্তে রাম পিতৃসত্য পালন করতে চৌদ্দ বৎসরের জন্য বনে গমন করেন । তাঁর সাথে বনে যান স্ত্রী সীতা ও ভাই লক্ষ্মণ ।

বনবাসকালে রাক্ষস রাজা রাবণ সীতাকে একা পেয়ে হরণ করে লঙ্কায় এনে অশোক বনে বন্দি করে রাখেন । রাম সীতাকে উদ্ধার করতে সাগরে সেতু বন্ধন করে বানর বাহিনী নিয়ে সাগর পাড়ি দিয়ে লঙ্কা আক্রমণ করেন । রাবনের ভাই বিভীষণ রাবণকে অনুরোধ করেন রামের সাথে যুদ্ধ না করে সীতাকে ফিরিয়ে দিয়ে তাঁর সঙ্গে সন্ধি করার জন্য । কিন্তু দুষ্টমতি লঙ্কাপতি বিভীষণের কথায় কান না দিয়ে তাকে অপমান

 

 

 

 

করে লঙ্কা থেকে তাড়িয়ে দেন। বিভীষণ রামের আশ্রয়ে চলে আসেন এবং রামের পক্ষে রাবণের বিরুদ্ধে

যুদ্ধে যোগদান করেন ।

রাক্ষস বাহিনীর সাথে রাম-লক্ষ্মণের ভীষণ যুদ্ধ শুরু হলো। যুদ্ধে রাক্ষসবাহিনীর বড় বড় বীর যোদ্ধারা সব প্রাণ ত্যাগ করল । রাবণের একলক্ষ পুত্র ও সোয়া লক্ষ নাতি ছিল। সকলেই এ যুদ্ধে প্রাণ ত্যাগ করেছে । সোনার লঙ্কা পরিণত হয়েছে শ্মশানে । রাবণ বিমর্ষ হয়ে রাজসভায় বসে প্রমাদ গুনছেন। এখন কী করা যায়? যুদ্ধ পরিচালনা করার জন্য এমন কেউ নেই যে, যুদ্ধ করে লঙ্কাকে রক্ষা করে ।

বিভীষণ লঙ্কাপুরী ত্যাগ করলেও তার স্ত্রী সরমা ও পুত্র তরণীসেন লঙ্কা পুরীতেই অবস্থান করছিলেন। তরণীসেন তখন দ্বাদশ বর্ষীয় বালক । তরণীসেনের কাছে সংবাদ গেল যুদ্ধে রাক্ষসবাহিনীর পরাজয়ের কথা, লঙ্কার বীরদের আত্মত্যাগের কথা। সে তখন রাবণের দরবারে উপস্থিত হয়ে যুদ্ধযাত্রার অনুমতি প্রার্থনা করে । রাবণ বালক তরণীকে কোনোমতেই এ ভয়ঙ্কর যুদ্ধে যাওয়ার অনুমতি দিতে চাইলেন না। কিন্তু তরণীসেন রাবণকে রাজি করিয়ে যুদ্ধে যাত্রা করল ।

তরণী ছিল পিতা বিভীষণের মতই ধার্মিক। সে তার রথের চূড়া রামনাম খচিত পতাকায় শোভিত করল । নিজের সারা অঙ্গে রামনাম লিখে নামাবলি গায়ে দিয়ে রখে উঠে বসল। রথ ছুটে চলল যুদ্ধের ময়দানে । রাম তাকিয়ে দেখেন রামনাম খচিত ধ্বজাধারী রথের উপর দ্বাদশ বর্ষীয় বালক যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত । রাবণের এহেন বিবেচনা দেখে রাম বিস্মিত হলেন । তার গায়ে রাম নামের নামাবলি জড়ানো ।

তরণী যুদ্ধক্ষেত্রে এসে ধনুর্বাণ হাতে নিয়ে জয়রাম বলে ধ্বনি করে তীর নিক্ষেপ করতে শুরু করল । অনেক বানর সৈন্য হতাহত হলো। রাম বালক বিবেচনায় এবং তার মুখে রাম নামের ধ্বনি শ্রবণ করে তার প্রতি বাণ নিক্ষেপ না করে বিভীষণকে বললেন, 'ওহে মিত্র বিভীষণ! কে এই বালক? সর্বদা মুখে রাম নাম জপ করছে । আমি কি করে এর প্রতি বাণ নিক্ষেপ করি?' 

 

 

 

 

তখন বিভীষণ তরণীর আসল পরিচয় রামকে বললেন না। বিভীষণ বললেন, 'এ দুরন্ত রাক্ষস। হে প্রভু রাম, এ রাক্ষসের প্রতি তুমি বৈষ্ণব অস্ত্র নিক্ষেপ কর । তাহলেই এ রাক্ষসের মৃত্যু হবে ।'

রাম ধনুতে বৈষ্ণব অস্ত্র যোজনা করলেন । তরণীসেনকে লক্ষ্য করে বাণ নিক্ষেপ করলেন রামচন্দ্র । বাণ তরণীর বক্ষে বিদ্ধ হলো । তরণী ‘জয়রাম, জয়রাম' বলে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল । বিভীষণ তরণীর প্রাণহীন দেহ কোলে তুলে ‘হা পুত্র তরণীসেন', বলে কেঁদে উঠলেন । এতক্ষণে রাম বুঝতে পারলেন এ বীর বালক আর কেউ নয়, মিত্র বিভীষণের পুত্র তরণীসেন। রাম মিত্র বিভীষণকে ভর্ৎসনা করলেন । শেষে তরণীর মস্তকে হস্ত রেখে রাম তাকে আশীর্বাদ করলেন । তরণী রাক্ষস দেহ পরিত্যাগ করে দিব্যদেহ ধারণ করে বৈকুণ্ঠে চলে গেল।

উপাখ্যানের শিক্ষা

স্বাধীনতা রক্ষা করতে যার যতটুকু শক্তি আছে, তা প্রয়োগ করা বা কাজে লাগানোর সৎসাহস থাকা বাঞ্ছনীয়। আমরা তরণীসেনের মতো সৎসাহসী হব। দেশের জন্য জীবন বিসর্জন দিতে কখনো

পিছপা হব না ।

দলীয় কাজ : তরণীসেনের আদর্শ সম্পর্কে একটি পোস্টার তৈরি কর ।

নতুন শব্দ : অযাচক, দ্বাদশ বর্ষীয়, ধনুর্বাণ, বৈকুণ্ঠ, দিব্যদেহ

 

অনুশীলনী

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন :

১। রামায়ণে কোন যুগের কাহিনি বর্ণিত হয়েছে?

ক. সত্য

খ. দ্বাপর

গ. ত্রেতা

ঘ. কলি

২। তোমার পঠিত উপাখ্যানে তরণীসেনের চরিত্রে কোন গুণটি প্রকাশ পেয়েছে?

i. আত্মত্যাগ ii. দেশপ্রেম

iii. নির্বুদ্ধিতা

নিচের কোনটি সঠিক?

ক. i ও ii গ. i ও iii

খ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii

নিচের অনুচ্ছেদটি পড় এবং ৩ ও ৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও :

রামতনু টেলিভিশনের খবরে জানতে পারেন তাদের পার্শ্ববর্তী উপজেলা বন্যাকবলিত । প্রবল স্রোত ও দুর্যোগের কারণে উপদ্রুত এলাকার অধিবাসীদের উদ্ধার করা বা সাহায্য দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না

বিধায় তারা জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে । রামতনু তখনই একটি নৌকা নিয়ে তাদের উদ্ধার করতে যায় এবং সাধ্যমত উদ্ধারে ব্রতী হয় ।

৩। অনুচ্ছেদে রামতনুর বন্যাকবলিতদের উদ্ধার করার কাজটি হলো -

i. কর্তব্যনিষ্ঠা

ii. জীবসেবা

iii. সৎসাহস

নিচের কোনটি সঠিক?

ক. i

খ. iii

গ. i ও iii

ঘ. i, ii ও iii

৪ । কোন মূল্যবোধটি রামতনুকে বন্যার্তদের উদ্ধার করার কাজটি করতে উদ্বুদ্ধ করে?

ক. মানবতাবোধ

খ. দয়া

গ. সহিষ্ণুতা

ঘ. ক্ষমা

সৃজনশীল প্রশ্ন :

পৃথাদের আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো নয় । একদিন পৃথা মায়ের সাথে এক আত্মীয়ের বাড়ি যাবে বলে বের হয়ে পথের ধারে রিক্শার জন্য অপেক্ষা করছে । এমন সময় এক ভিক্ষুক এসে ভিক্ষা চাইল । পৃথার মা তাকে ভিক্ষা দিলেন । তা দেখে আরো কয়েকজন ভিক্ষুক এগিয়ে এল । সবাইকে ভিক্ষা দেওয়ার পর মা দেখলেন তাদের কাছে রিক্শা ভাড়ার আর কোনো টাকা নেই । তখন তারা পায়ে হেঁটেই আত্মীয়ের বাড়ি পৌঁছালেন। এতে একটু কষ্ট হলেও এবং সময় বেশি লাগলেও তাদের মন মানুষের জন্য কিছু করতে পারার আনন্দে ভরে গেল ।

ক. রাজা রন্তিবর্মা কোন্ দেবতার ভক্ত ছিলেন? খ. সকল জীবের মধ্যে মানুষ শ্রেষ্ঠ কেন বুঝিয়ে লেখ।

গ. রক্তিবর্মার আচরণের যে দিকটি পৃথার মায়ের আচরণে প্রতিফলিত হয়েছে তা ব্যাখ্যা কর। 

ঘ. পৃথা ও তার মায়ের অনুভূতি যেন রক্তিবর্মার অনুভূতিরই প্রতিফলন- বিশ্লেষণ কর।

Content added By

Related Question

View More

Promotion