শ্রন্থেয় রতনশ্রী ভিক্ষু উপসম্পদা লাভের পর ভিক্ষু-ভিক্ষুণীদের আচরণ সম্পর্কিত একটি গ্রন্থ পাঠ করেন। যেখানে ভিক্ষুদের বিনয়ের জটিল এবং দুর্বোধ্য বিষয়সমূহ গদ্যে ও পদ্যে এবং সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ঐ গ্রন্থটিকে বিনয়পিটকের সারবস্তু বলা হয়ে থাকে।
উক্ত গ্রন্থটিকে বিনয়ের সারবস্তু বলার কারণ-
তৃতীয় অধ্যায় ত্রিপিটক
‘ত্রিপিটক’ বৌদ্ধদের পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ। বুদ্ধের ধর্ম-দর্শনই ত্রিপিটকের মূলভিত্তি। ত্রিপিটক পালি ভাষায় রচিত। ধর্মীয় গ্রন্থ হলেও প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশের ধর্ম-দর্শন, সমাজ-সংস্কৃতি, শিল্প-সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, ভূগোল, পুরাতত্ত্ব প্রভৃতি সম্পর্কে ত্রিপিটকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায় । এজন্য ত্রিপিটককে ভারতীয় উপমহাদেশের ঐতিহাসিক তথ্যভাণ্ডার হিসেবেও অভিহিত করা হয়। ত্রিপিটকের বিষয়বস্তু ধর্মীয় জ্ঞানকে যেমন সমৃদ্ধ করে, তেমনি মানুষের নৈতিক ও মানবিক গুণাবলিকে বিকশিত করে। এ-অধ্যায়ে আমরা পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ ত্রিপিটক সম্পর্কে অধ্যয়ন করব।
এ অধ্যায় শেষে আমরা-
পাঠ : ১
ত্রিপিটকের পটভূমি
বুদ্ধ লিখিত আকারে কোনো ধর্মোপদেশ দান করেননি। তিনি বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন উপলক্ষে যেসব ধর্মোপদেশ দান করতেন তা শিষ্যরা কণ্ঠস্থ করে ধারণ করে রাখতেন এবং প্রচার করতেন। বুদ্ধের শিষ্যরা ছিলেন শ্রুতিধর। তাঁরা বুদ্ধবাণী সহজে স্মৃতিতে ধারণ করে রাখতে পারতেন। বুদ্ধশিষ্যরা একেক জন একেক রকম গুণসম্পন্ন ছিলেন। কেউ ছিলেন বিনয়ে পারদর্শী, কেউ সূত্রে, কেউ বুদ্ধের ধর্মবাণী ব্যাখ্যায়, কেউ দর্শনে, কেউ ধর্ম দেশনায়। এ-কারণে বুদ্ধশিষ্যগণ বিভিন্ন উপাধিতে ভূষিত হতেন। যেমন : বিনয়ধর, সূত্রধর, অভিধর্মধর, ধর্মকথিক, অগ্রশ্রাবক, মহাশ্রাবক ইত্যাদি। ভিক্ষু উপালি ছিলেন বিনয়ধর। তিনি বুদ্ধভাষিত বিনয় ধারণ, পালন ও ব্যাখ্যায় পারদর্শী ছিলেন। তদ্রূপ আনন্দ ছিলেন সূত্রধর। তিনি বুদ্ধভাষিত সূত্রসমূহ ধারণ করে রাখতেন। এজন্য তাঁকে ‘ধর্মভাণ্ডারিক' বলা হতো। বুদ্ধের ধর্ম-দর্শন ব্যাখ্যায় মহাকচ্চায়ন, সারিপুত্র, মহাকোট্ঠিত থের ছিলেন অগ্রগণ্য। এরূপ বুদ্ধের অসংখ্য শিষ্য ছিলেন। শ্রুতিধর এসব শিষ্য বুদ্ধের ধর্মবাণী ধারণ, পালন এবং প্রচারে খুবই যত্নশীল ছিলেন। তখন কেউ এই অমূল্যবাণী লিখে রাখার কথা ভাবেননি।
বুদ্ধশিষ্যগণ সবসময় এক স্থানে থাকতেন না। তাঁরা বিভিন্ন স্থানে গিয়ে বুদ্ধবাণী প্রচার করতেন। বুদ্ধের জীবিতকালে সঙ্ঘে যে-কোনো সমস্যা সৃষ্টি হলে তা বুদ্ধ সমাধান করতেন। কখনো বুদ্ধের নেতৃস্থানীয় শিষ্যগণ তাঁর অনুমতিসাপেক্ষে সমাধান করতেন। ফলে বুদ্ধের জীবিতকালে বড় ধরনের কোনো সমস্যা সৃষ্টি হয়নি। কিন্তু কতিপয় দুর্বিনীত ভিক্ষু বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণে পুলকিত বোধ করেন। কারণ, তাঁদের আর বুদ্ধের বিনয়-বিধান মেনে চলতে হবে না। বুদ্ধ মহাপরিনির্বাণ লাভ করলে বুদ্ধশিষ্যগণ কান্না করতে থাকেন। তখন বুদ্ধের শেষ শিষ্য সুভদ্র ভিক্ষুদেরশোক করতে নিষেধ করেন এবং বলেন, মহাশ্রমণের মৃত্যুতে
আমরা উপদ্রব হতে মুক্ত হয়েছি এবং এখন থেকে আমাদের যা ইচ্ছা তা করতে পারব। বুদ্ধশিষ্যগণ সুভদ্রের উক্তি এবং দুর্বিনীত শিষ্যদের মনোভাব বুঝে বুদ্ধবাণীর পরিহানির আশঙ্কায় শঙ্কিত হয়ে ওঠেন। তাঁরা আশঙ্কা করলেন, বুদ্ধবাণী অসংকলিত অবস্থায় থাকলে যে-কোনো সময় বিকৃত হতে পারে। অতঃপর, বুদ্ধশিষ্যগণ মহাকশ্যপ স্থবিরের নেতৃত্বে প্রথম সঙ্গীতি আয়োজন করে বুদ্ধবাণী সংকলিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণের তিন মাস পর রাজা অজাতশত্রুর পৃষ্ঠপোষকতায় রাজগৃহের সপ্তপর্ণী গুহায় এ সঙ্গীতি অনুষ্ঠিত হয়। সঙ্গীতিতে পাঁচশত অর্হৎ ভিক্ষু উপস্থিত ছিলেন। সঙ্গীতিতে বুদ্ধের অন্যতম শিষ্য উপালি ও আনন্দ যথাক্রমে ধর্ম-বিনয় আবৃত্তি করেন। উপস্থিত ভিক্ষুসঙ্ঘ তাঁদের আবৃত্তিকৃত ধর্ম-বিনয় বুদ্ধবাণী হিসেবে অনুমোদন করেন। এ সঙ্গীতি সাত মাসব্যাপী স্থায়ী হয়েছিল। এভাবে ভিক্ষুসঙ্ঘের ঐকান্তিক চেষ্টার ফলে প্রথম সঙ্গীতিতে বুদ্ধবাণী ধর্ম ও বিনয় হিসেবে দুভাগ করে সংকলন করা হয় ।
প্রথম সঙ্গীতিতে সংকলিত ধর্ম-বিনয় বুদ্ধশিষ্যগণ কণ্ঠস্থ করে সংরক্ষণ ও প্রচার করতেন। কিন্তু বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণের একশত বছর পরে বজ্জিপুত্রীয় ভিক্ষুগণ বিনয় বহির্ভূত দশটি বিধিবিধান চালু করলে সঙ্ঘে বিভাজন সৃষ্টি হয় এবং বুদ্ধবাণী নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। তখন এ বিতর্ক নিরসনের জন্য দ্বিতীয় সঙ্গীতির আয়োজন করা হয়। বৈশালীর বালুকারামে যশ স্থবিরের নেতৃত্বে এবং রাজা কালাশোকের পৃষ্ঠপোষকতায় দ্বিতীয় সঙ্গীতি অনুষ্ঠিত হয়। এই সঙ্গীতি আটমাস স্থায়ী হয়েছিল। এতে সাত শত অহৎ ভিক্ষু অংশ গ্রহণ করেন ।
দ্বিতীয় সঙ্গীতিতে উপস্থিত ভিক্ষুগণ বজ্জিপুত্রীয় ভিক্ষুদের প্রবর্তিত বিধিবিধান বিচার-বিশ্লেষণ করে বিনয় বর্হিভূত হিসেবে রায় প্রদান করেন এবং প্রথম সঙ্গীতিতে সংগৃহীত ধর্ম ও বিনয় পুনরায় আবৃত্তিপূর্বক প্রকৃত বুদ্ধবাণী হিসেবে অনুমোদন করেন। ভিক্ষুগণ তা কণ্ঠস্থ করে সংরক্ষণ ও প্রচার করতে থাকেন। কিন্তু সম্রাট অশোকের সময় বৌদ্ধধর্ম রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করলে এবং বৌদ্ধ ভিক্ষুদের লাভ-সৎকার বেড়ে গেলে অন্যান্য ধর্মের তীর্থিকগণ ভিক্ষুর বেশ ধারণ করে সঙ্ঘে প্রবেশ করতে থাকেন। তাঁরা ধর্মকে অধর্ম এবং অধর্মকে ধর্ম বলে প্রচার করতে থাকেন। ফলে সঙ্ঘে অরাজকতা সৃষ্টি হয় এবং প্রকৃত বুদ্ধবাণী নিয়ে সন্দেহ দেখা দেয়। এ সমস্যা নিরসনের জন্য তৃতীয় সঙ্গীতি আয়োজনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। অতঃপর সম্রাট অশোকের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং মোগ্গলিপুত্র তিষ্য থেরর সভাপতিত্বে পাটলীপুত্রের অশোকা রাম বিহারে তৃতীয় সঙ্গীতি অনুষ্ঠিত হয়। এই সঙ্গীতি নয় মাস স্থায়ী হয় এবং এতে এক হাজার অর্থৎ ভিক্ষু অংশগ্রহণ করেন । প্রথম ও দ্বিতীয় সঙ্গীতির অনুকরণে এ-সঙ্গীতিতে বুদ্ধবাণী পুনর্বার আবৃত্তিপূর্বক সংকলন করা হয়। এ-সঙ্গীতিতে বুদ্ধের দার্শনিক বাণীসমূহ অভিধর্ম নাম দিয়ে পৃথকভাবে সংকলন করা হয়। বৌদ্ধরা বিশ্বাস করেন যে, ধর্মের মধ্যে অভিধর্ম অন্তর্ভুক্ত ছিল। তাই প্রথম ও দ্বিতীয় সঙ্গীতিতে বুদ্ধবাণী কেবল ধর্ম-বিনয় নামে বিভক্ত ছিল। তৃতীয় সঙ্গীতিতে বুদ্ধবাণী তিন ভাগে বিভক্ত করে সূত্র, বিনয় এবং অভিধর্ম হিসেবে বিন্যস্ত করে সংকলন করা হয়, যা ত্রিপিটক নামে পরিচিতি লাভ করে।
তৃতীয় সঙ্গীতির পর সম্রাট অশোকের পৃষ্ঠপোষকতায় বুদ্ধবাণী ভারতের বাইরে প্রচার লাভ করে। সম্রাট অশোকপুত্র মহিন্দ্র স্থবির কতিপয় সঙ্গীসহ ত্রিপিটক কণ্ঠস্থ করে সিংহলে নিয়ে যান। সেখানে তা মুখেমুখে প্রচার করা হতো। যুদ্ধবিগ্রহ, দুর্ভিক্ষ এবং নানা কারণে সিংহলে বুদ্ধশাসন পরিহানির আশঙ্কা দেখা দেয়। বুদ্ধবাণী
বিকৃত ও বিলুপ্ত হওয়া থেকে রক্ষা করার জন্য লিখিতরূপ প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। অতঃপর, খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতকে সিংহলের রাজা বট্রগামিনীর পৃষ্ঠপোষকতায় তালপত্রে বা ভূর্জপত্রে ত্রিপিটক লিখে রাখা হয় এবং এভাবে বুদ্ধবাণীর স্থায়ী রূপ দান করা হয়। কালক্রমে আরও স্থায়িত্বদানের জন্য ত্রিপিটক তালপত্র থেকে পাথরে খোদাই করে, কাগজে লিখে এবং টেপরেকর্ডারে ধারণ করে সংরক্ষণ করা হয়। গ্রন্থরূপ প্রদানের ক্ষেত্রে লন্ডনের পালি টেকস্ট সোসাইটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ ছাড়াও থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা এবং মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সংগঠন বুদ্ধবাণী পুস্তক আকারে প্রকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এভাবে বুদ্ধবাণী নানা চড়াই-উতরাই পার হয়ে ত্রিপিটকের রূপ পরিগ্রহ করে ।
অনুশীলনমূলক কাজ বুদ্ধবাণী প্রথম কেন এবং কোথায় সংকলন করা হয়েছিল? কখন বুদ্ধবাণী ত্রিপিটক আকারে সংকলিত হয়েছিল? বুদ্ধবাণী কোথায় এবং কখন লিখিতরূপ পরিগ্রহ করেছিল? |
পাঠ : ২
ত্রিপিটক পরিচিতি
মহামতি বুদ্ধের মুখনিঃসৃত অমূল্য বাণীর সংকলন হলো 'ত্রিপিটক'। ত্রিপিটক শব্দটি ‘ত্রি' এবং ‘পিটক' শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। ‘ত্রি' শব্দের অর্থ ‘তিন’ আর ‘পিটক' শব্দের অর্থ হলো আধার, পেটিকা, ঝুড়ি ইত্যাদি ৷ বুদ্ধবাণী ধরণ ও প্রকৃতি অনুসারে তিনটি ধারায় বিভক্ত করে তিনটি পেটিকা বা আধারে সংরক্ষণ করা হয় বলে তা ত্রিপিটক নামে অভিহিত। তিনটি পিটক হলো : ১ সূত্র পিটক ২ বিনয় পিটক এবং ৩ অভিধর্ম পিটক । বুদ্ধের ধর্মবাণী সূত্র আকারে গ্রথিত ভাগকে সুত্ত বা সূত্রপিটক বলে। সূত্রপিটক পাঁচটি প্রধান ভাগে বিভক্ত। যথা : দীর্ঘ নিকায়, মজ্জিম নিকায়, সংযুক্ত নিকায়, অঙ্গুত্তর নিকায় এবং খুদ্দক নিকায়। নিকায় শব্দের অর্থ দল, ভাগ, সম্প্রদায় ইত্যাদি। বুদ্ধভাষিত দীর্ঘ সূত্রগুলো দীর্ঘ নিকায়ে বা ভাগে সংকলিত করা হয়। তাই এটি দীর্ঘ নিকায় নামে অভিহিত। মধ্যম আকৃতির সূত্রসমূহ যে-নিকায় বা ভাগে সংকলিত করা হয়েছে তা মজ্জিম নিকায় নামে পরিচিত। পূর্ববর্তী দুটি নিকায়ের তুলনায় ক্ষুদ্র এবং বিভিন্ন আঙ্গিকের বিষয়বস্তু সংযুক্ত সূত্রসমূহ যে নিকায়ে সংকলিত করা হয়েছে তা সংযুক্ত নিকায় নামে কথিত। সংখ্যার ক্রমবৃদ্ধির ধারায় বিধৃত সূত্রসমূহ যে-নিকায়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তা অঙ্গুত্তর নিকায় নামে খ্যাত । এ-নিকায়ে বিষয়বস্তুসমূহ এক নিপাত, দুই নিপাত, তিন নিপাত এরূপ সংখ্যার ক্রমবৃদ্ধির ধারায় বিন্যস্ত করে সংকলিত করা হয়। ‘খুদ্দক’ শব্দের অর্থ ক্ষুদ্র বা ছোট। বুদ্ধভাষিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সূত্রসমূহ যে-নিকায়ে সংকলিত তা খুদ্দক নিকায় নামে পরিচিত। খুদ্দক নিকায়ে ষোলটি গ্রন্থ আছে। যথা : খুদ্দক পাঠ, ধম্মপদ, উদান, ইতিবুত্তক, সুত্তনিপাত, বিমানবখ্, পেতবন্ধু, থের-গাথা, থেরী-গাথা, জাতক, মহানিদ্দেস, চূল্লনিদ্দেস, পটিসম্ভিদামগ্গ, অপদান, বুদ্ধবংস এবং চরিয়া পিটক ।
‘বিনয়' শব্দের অর্থ হলো নিয়ম, নীতি, শৃঙ্খলা বা বিধিবিধান। বুদ্ধ-নির্দেশিত বিধিবিধান যে-পিটকে সংকলিত আছে তা বিনয় পিটক নামে অভিহিত। ভিক্ষুসঙ্ঘ সুশৃঙ্খল, ন্যায়-নিষ্ঠা, পারস্পরিক সৌহার্দ্য এবং সুষ্ঠুভাবে
পরিচালিত হওয়ার মানসে বুদ্ধ এসব বিনয় বা বিধিবিধান নির্দেশ করেছিলেন। বিনয় পিটক প্রধানত তিন ভাগে বিভক্ত। যথা : ১. সুত্তবিভঙ্গ ২. খন্ধক এবং ৩. পরিবার। সুত্তবিভঙ্গ আবার দুভাগে বিভক্ত : মহাবিভঙ্গ এবং খুদ্দক বিভঙ্গ । মহাবিভঙ্গে পারাজিকা এবং সংঘাদিসেসহ ভিক্ষুদের প্রতিপালনীয় বিধিবিধানসমূহ রয়েছে বলে এটি পারাজিকাকণ্ড বা ভিবিভঙ্গও বলা হয়। খুদ্দকবিভঙ্গে ভিক্ষুণীদের প্রতিপালনীয় বিধিবিধানসমূহ রয়েছে। এটিকে পাচিত্তিয়া বা ভিক্খণীবিভঙ্গও বলা হয়। সুত্তবিভঙ্গের দুটি গ্রন্থে বর্ণিত বিধি-বিধানসমূহকে একত্রে পাতিমোখ (পাতিমোক্ষ) বলা হয়। খন্ধক দুভাগে বিভক্ত। যথা : মহাব এবং চূল্লবগ্গ । মহাবগ্গ গ্রন্থে বুদ্ধের বুদ্ধত্বলাভ থেকে সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠাকাল পর্যন্ত বুদ্ধের জীবনকাহিনীর ধারাবাহিক ইতিহাস পাওয়া যায়। চুল্লবগ গ্রন্থে ভিক্ষুসঙ্ঘের বিভিন্ন নিয়মকানুনসহ বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণের পরে অনুষ্ঠিত প্রথম ও দ্বিতীয় সঙ্গীতির বর্ণনা পাওয়া যায় ।
বুদ্ধের দর্শনের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণই অভিধর্ম। বৌদ্ধ দর্শনই অভিধর্ম পিটকের মূল আলোচ্য বিষয়। অভিধর্ম পিটক সাত ভাগে বিভক্ত । যথা : ১ ধম্মসঙ্গণী ২ বিভঙ্গ ৩ ধাতুকথা ৪ পুগ্গল পঞ্ঞত্তি ৫ কথাবন্ধু ৬ যমক এবং ৭ পঠান।
নিম্নে ত্রিপিটকের বিভাজন ছকে প্রদর্শন করা হলো :
অনুশীলনমূলক কাজ সূত্রপিটক কয়ভাগে বিভক্ত? খুদ্দক নিকায়ের গ্রন্থগুলোর নাম লেখ । অভিধর্ম পিটকের গ্রন্থগুলোর নাম বল। সুত্তবিভঙ্গ কয়ভাগে বিভক্ত এবং কী কী? |
পাঠ : ৩
সূত্র পিটক
সূত্র পিটক পাঁচ ভাগে বিভক্ত। যথা : দীর্ঘ নিকায়, মজ্জিম নিকায়, সংযুক্ত নিকায়, অঙ্গুত্তর নিকায় এবং
খুদ্দক নিকায়। নিম্নে নিকায়সমূহের বর্ণনা দেওয়া হলো :
ক. দীর্ঘ নিকায় : দীঘ নিকায় সূত্র পিটকের প্রথম ভাগ। দীর্ঘ নিকায়ে সর্বমোট চৌত্রিশটি সূত্র আছে। সূত্রগুলো তিনটি বর্গে বিভক্ত। যথা : শীল স্কন্ধবর্গ, মহাবর্গ এবং পাটিকবর্গ। প্রথম বর্গে তেরোটি সূত্র আছে। সূত্রগুলো গদ্যে রচিত। দ্বিতীয় বর্গে দশটি সূত্র, তৃতীয় বর্গে এগারোটি সূত্র আছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্গের বহু সূত্র গদ্যে ও পদ্যে রচিত। দান, শীল, সমাধি, প্রজ্ঞা, ধ্যান, বিমোক্ষ, অনিত্য, দুঃখ, অনাত্ম, চিত্ত, চৈতসিক ও নির্বাণ ইত্যাদি দীঘ নিকায়ের প্রধান আলোচ্য বিষয়। কিন্তু প্রসঙ্গক্রমে এ নিকায়ে প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদশের ইতিহাস, দর্শন, রাজনীতি, অর্থনীতি, ভূগোল, সমাজ-সংস্কৃতি প্রভৃতি সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা পাওয়া যায়। বিশেষত বাষট্টি প্রকার ধর্মীয় ও দার্শনিক মতবাদ এবং জাতিভেদ প্রথা সম্পর্কে দীর্ঘ নিকায়ে যে-বর্ণনা পাওয়া যায় তা বুদ্ধের সমসাময়িককালের প্রাচীন ভারতের ধর্মীয় ও সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা প্রদান করে। এ-ছাড়া এ নিকায়ের মহাপরিনির্বাণ সূত্রে বুদ্ধের জীবন চরিত্রের চিত্তাকর্ষক বর্ণনা পাওয়া যায়। দীর্ঘ নিকায়ে ধর্ম-দর্শন অপেক্ষা নৈতিক ও মানবিক জীবন গঠনে অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
খ. মক্কিম নিকায় : এটি সূত্র পিটকের দ্বিতীয় ভাগ। মজ্জিম নিকায় পঞ্চ নিকায়ের মধ্যে সর্বোত্তম। যে-সূত্রগুলো মধ্যম আকৃতির সেগুলো মজ্ঝিম নিকায়ে স্থান পেয়েছে। এতে একশত বায়ান্নটি সূত্র আছে। সূত্রগুলো তিনটি বর্গে বিভক্ত । যথা : মূল পঞ্ঞাসক বর্গ, মঞ্জিম পঞ্ঞাসক বর্গ এবং সেল পঞ্ঞাসক বর্গ। প্রথম ও দ্বিতীয় বর্গে পঞ্চাশটি, তৃতীয় বর্গে বায়ান্নটি সূত্র আছে। এ নিকায়ের প্রধান আলোচ্য বিষয় হলো : চারি আর্যসত্য, আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ, প্রতীত্যসমুৎপাদ নীতি, পার্থিব ভোগসুখের অসারতা, পরমার্থ সত্য, নির্বাণ ইত্যাদি। এ-গ্রন্থে বুদ্ধের সমকালীন ছয়টি তীর্থিক সঙ্ঘের ধর্ম-দর্শন সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায় । তা ছাড়া ভিক্ষুদের জীবনযাত্রা, ভিক্ষুসঙ্ঘের সাথে গৃহী ও রাজন্যবর্গের সম্পর্ক, বুদ্ধকালীন ভারতের সামাজিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা ও ধর্মীয় অবস্থার বিবরণও পাওয়া যায়। দৈনন্দিন জীবনযাত্রার অপরিহার্য আচরণীয় বিষয়সমূহ এ-গ্রন্থে বিশেষভাবে প্রতিফলিত হয়েছে ও সরলভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তাই পাঁচটি নিকায়ের মধ্যে মজ্জিম নিকায়কে সর্বোত্তম বলে গণ্য করা হয়। বিখ্যাত আচার্য বুদ্ধঘোষ ত্রিপিটকের অন্তর্গত গ্রন্থসমূহের মধ্যে মক্কিম নিকায়কে সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
গ. সংযুক্ত নিকায় : সংযুক্ত নিকায়ে ছাপ্পান্নটি সংযুক্ত বা অধ্যায় আছে। এগুলো পাঁচটি বর্গে বিভক্ত। সগাথা বর্গে এগারোটি, নিদান বর্গে বারোটি, খন্ধ বর্গে তেরোটি, সলায়তন বর্গে দশটি এবং মহাবর্গে বারোটি অধ্যায় আছে ৷ পাঁচটি বর্গে মোট সূত্রসংখ্যা ২৮৮৯টি। সূত্রগুলো নৈতিক. মনস্তত্ত্ব, দর্শন প্রভৃতি বিষয় সম্পৰ্কীয় সূত্রের সমবায়ে রচিত। দীঘ ও মজ্জিম নিকায়ের তুলনায় সংযুক্ত নিকায়ের সূত্রগুলো ছোট হলেও গভীর তাৎপর্যপূর্ণ। বিষয়বস্তু তিনটি ধারায় বিভাজন করে উপস্থাপন করা হয়েছে : ১. ধর্ম-দর্শন ২. দেবতা মনুষ্য প্রভৃতি সম্পৰ্কীয় ঘটনা এবং ৩. ধর্মীয় ব্যক্তি। প্রথম বর্গে শীল, আচার-অনুষ্ঠান, আদর্শ জীবনযাপন ও চরিত্র গঠনের উপর প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য বর্গ ধর্ম, দর্শন ও বিবিধ আলোচনায় সমৃদ্ধ। এ-নিকায়ে কিছু ছোট ছোট কবিতা বা গাথা আছে যার সাহিত্যিক ও দার্শনিক মূল্য অপরিসীম । কথোপকথনের আকারে এসব কবিতা রচিত। এছাড়া কোশলরাজ প্রসেনজিত, মহাপ্রজাপতি গৌতমী, মারকে পরাভব, বুদ্ধ কর্তৃক ব্রাহ্মণদের উপদেশ, বুদ্ধ ও যক্ষের কথোপকথন, বুদ্ধের শরণ গ্রহণ করা, লাভ সৎকারের বিষয়, পঞ্চস্কন্ধ, তিন প্রকার বেদনা প্রভৃতি সম্পর্কে চমৎকার বর্ণনা পাওয়া যায়। বলা যায়, সংযুক্ত নিকায় আধ্যাত্মিক, নৈতিক ও দার্শনিক বিষয়ের বর্ণনায় খুবই সমৃদ্ধ।
ঘ. অঙ্গুত্তর নিকায় : অঙ্গুত্তর নিকায়ে মোট ২৩০৮টি সূত্র রয়েছে। সূত্রগুলো গদ্যে ও পদ্যে রচিত এবং এগারোটি নিপাত বা অধ্যায়ে বিভক্ত। আলোচ্য বিষয়ের সংখ্যা অনুসারে নিপাতসমূহের নামকরণ করা হয়েছে। যেমন : এক নিপাতে একটি বিষয় আলোচিত হয়েছে। তদ্রূপ দুই নিপাতে দুইটি বিষয় আলোচিত হয়েছে। প্রত্যেকটি নিপাত আবার কতিপয় বর্গে বিভক্ত। ক্ষুদ্র ও বৃহৎ উভয় রকমের সূত্র রয়েছে। এ নিকায়ে বহুবিধ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সমাবেশ ঘটেছে। অন্যান্য নিকায়ের মতো অঙ্গুত্তর নিকায়ে শীল, সমাধি, প্রজ্ঞা, শ্রদ্ধা, বীর্য ও বিনয়-সম্পর্কিত বিষয়ের বর্ণনা রয়েছে। এ ছাড়াও এখানে চঞ্চল চিত্তকে সংযত করা, পাপ পরিত্যাগ, তিন প্রকার লোকের কথা, ইন্দ্রিয়দমন, মিতাহার, ও অপ্রমত্ততা— তিনটি বিষয়ের প্রতি সজাগ থাকা, দেবদত্তের পরিণাম, নারী-পুরষের চরিত্র, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক, বৌদ্ধ উপাসক-উপাসিকার দায়িত্ব-কর্তব্য ও আচার-আচরণ, উপোসথ এবং উপোসথের উপযোগিতা, সুখ- দুঃখ, শ্রোতাপত্তি মার্গ ও ফল, সকৃদাগামী মার্গ ও ফল, অনাগামী মার্গ ও ফল এবং অর্হত্ব মার্গ ও ফল ইত্যাদি বিষয়ে মূল্যবান বিবরণ এখানে পাওয়া যায় ।
অঙ্গুত্তর নিকায়ে প্রাচীন ভারতের দণ্ডবিধান পদ্ধতি, ভৌগোলিক, সামাজিক, ধর্মীয় অবস্থারও নিখুঁত বর্ণনা পাওয়া যায়। এ ছাড়া, সে-সময়কার রাজা-মহারাজা, ভিক্ষু-ভিক্ষুণী, উপাসক-উপাসিকা প্রভৃতি সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। তাই অঙ্গুত্তর নিকায়ের ঐতিহাসিক মূল্য অপরিসীম ।
ঙ. খুদ্দক নিকায় : খুদ্দক নিকায় সূত্র পিটকের সর্বশেষ ভাগ। এ-নিকায়ের বিষয়বস্তু ষোল ভাগে বিভক্ত করে উপস্থাপিত হয়েছে। অর্থাৎ খুদ্দক নিকায় ষোলটি গ্রন্থের সমন্বয়ে গঠিত। একেকটি গ্রন্থের বিষয়বস্তু একেক রকম। গ্রন্থসমূহের বিষয়বস্তুর মধ্যে কোনো ধারাবাহিকতা নেই । খুদ্দক নিকায়ে বৈচিত্র্যময় বিষয়ের সমাহার লক্ষ করা যায়। তাই খুদ্দক নিকায়কে প্রকীর্ণক সংগ্রহও বলা হয়। আকারে ছোট হলেও গ্রন্থগুলোর বিষয়বস্তুর গুরুত্ব অপরিসীম। নবদীক্ষিত ভিক্ষু-শ্রমণরা অন্যান্য গ্রন্থ শিক্ষা করার পূর্বে খুদ্দক নিকায়ের গ্রন্থগুলো শিক্ষা করেন। খুদ্দক নিকায়ের অন্তর্গত গ্রন্থগুলো হলো : ১. খুদ্দক পাঠ ২. ধম্মপদ ৩. উদান ৪. ইতিবুত্তক ৫. সুত্তনিপাত ৬. বিমান বন্ধু ৭. পেতবন্ধু ৮. থের গাথা ৯. থেরী গাথা ১০. জাতক ১১. মহানিদ্দেস ১২. চূল্লনিদ্দেস ১৩. পটিসম্ভিদামগ্গ ১৪. অপদান ১৫. বুদ্ধবংস এবং ১৬. চরিয়ানাপিটক ।
অনুশীলনীমূলক কাজ ত্রিপিটকের গ্রন্থগুলো ছকে প্রদর্শন কর অঙ্গুত্তর নিকায়ে বিষয়বস্তু কীভাবে বিন্যস্ত করা হয়েছে? খুদ্দক নিকায়ের অন্তর্গত গ্রন্থগুলোর তালিকা তৈরি কর |
পাঠ : ৪
বিনয় পিটক
বিনয়কে বুদ্ধশাসনের আয়ু বলা হয়। কারণ বিনয় ব্যতীত বুদ্ধশাসনের স্থিতি অকল্পনীয় । বিনয়ের স্থিতিতেই বুদ্ধশাসনের স্থিতি নির্ভরশীল । বলা হয়ে থাকে যে, সূত্র ও অভিধর্ম লুপ্ত হয়ে গেলেও যদি বিনয় পিটক পরম আদরে, গভীর শ্রদ্ধায় ও গৌরবের সাথে অনুশীলিত হয় তবে বুদ্ধের ধর্ম কখনো লুপ্ত হবে না । তাই বিনয়ের গুরুত্ব উপলব্ধি করে বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণের তিন মাস পরে অনুষ্ঠিত প্রথম সঙ্গীতিতে সর্বপ্রথম বিনয় সংগ্রহ করা হয়েছিল।
বিনয়ের অপর নাম ‘নিয়ম’, ‘নীতি' বা ‘শৃঙ্খলা' ইত্যাদি। বিনয়কে সহজ অর্থে ‘শীল’ বলা হয়। পৃথিবীর সবকিছুই নিয়ম ও শৃঙ্খলা দ্বারা পরিচালিত হয়। গ্রহ, তারা, নক্ষত্র সবই একটি নিয়মের মধ্য দিয়েই আবর্তিত। পৃথিবীর অপরূপ সৌন্দর্য, রংধনুর সমারোহ, সূর্যরশ্মি পর্যন্ত কার্যকারণ নিয়মে আবদ্ধ । আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে নিয়ম-শৃঙ্খলার উপযোগিতা সবচেয়ে বেশি। অসংযম, আলস্যপরায়ণ, প্রমোদপরায়ণ, অনৈতিকতা, অমিতব্যয়িতা, লোভ, দ্বেষ, মোহ, দুঃশীলতা সকল প্রকার উন্নতির পরিপন্থী। অপরদিকে নিয়ম, শৃঙ্খলা, সংযম, চরিত্রবল, শীল, সমাধি, উদ্যম, উৎসাহ, প্রচেষ্টা, নিয়মানুবর্তিতা, আত্মত্যাগ, শ্রদ্ধা, সন্তুষ্টি, প্রজ্ঞা, সৎকর্ম সকল প্রকার উন্নতির মূল চাবিকাঠি। বুদ্ধ ভিক্ষুসঙ্ঘের উন্নতির জন্যই বিনয়ের শিক্ষাপদসমূহ বিধিবদ্ধ করেছিলেন। বিনয়ের নিয়মগুলো দৈনন্দিন জীবনযাপন ও আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য অপরিহার্য। তাই বুদ্ধ বলেছেন :
সতব সোপি পবজ্জা সিক্খন্তো পিটকওযং
ওবাদং নানুবত্তন্তে নিরযং সো উপজ্জতি ।
অর্থাৎ “যদি কোনো ভিক্ষু শতবর্ষব্যাপী ত্রিপিটক অধ্যয়ন করেও সম্যকরূপে শীল পালন না করেন, তবে মৃত্যুর পর তাঁকে নরকে যেতে হয়।”
তিনি আরও বলেছেন :
তপাসাধিকং হোতি পত্তচীবরং ধারণং
পৰ্ব্বজ্জা সফলা তস্স যস সীল সুনিম্মলং ।
অর্থাৎ পাত্র চীবর ধারণ তারই শোভা পায়, যার শীল সুনির্মল। শীলবান ব্যক্তির জীবন সবচেয়ে বেশি সুখকর হয়।
উল্লিখিত গাথাগুলোর মর্মার্থ অনুধাবন করে জ্ঞানীমাত্রই বিনয়ে সুশিক্ষিত হওয়া এবং বিনয়ী আচরণ করা উচিত। বিনয় সকল প্রকার কুশল কর্মের ভিত্তিস্বরূপ। বিনয় ভিক্ষু-শ্রমণদের অবশ্য পালনীয় বিধিবিধান হলেও এতে উন্নত পারিবারিক জীবনযাপনের সুন্দর দিক নির্দেশনা রয়েছে। বিনয়ের অনুশীলনে নৈতিক ও মানবিক গুণাবলি জাগ্রত হয়। তাই বিনয়ের পঠনপাঠন একান্ত প্রয়োজন ।
বিনয় পিটক প্রধানত তিনভাগে বিভক্ত। যথা :
ক. সুত্ত বিভঙ্গ : এটি ভিবিভঙ্গ এবং ভিক্খণী বিভঙ্গ নামে দু'ভাগে বিভক্ত ।
খ. খন্ধক : এটি মহাবগ এবং চূল্লবগ্গ নামে দুভাগে বিভক্ত এবং
গ. পরিবার বা পরিবার পাঠ
ক. সুত্ত বিভঙ্গ
বিনয় পিটকের প্রথম গ্রন্থ হলো সুত্ত বিভঙ্গ । সুত্ত শব্দের অর্থ হলো সূত্র, আর 'বিভঙ্গ' শব্দের অর্থ ভেঙে ফেলা অর্থাৎ ভেঙে বা সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মভাবে ভাবার্থ ব্যাখ্যা করা। অতএব ‘সুত্ত বিভঙ্গ' শব্দের অর্থ হলো ‘সূত্র ব্যাখ্যা’ অর্থাৎ বিনয়ের নিয়ম-নীতি বা মূল শিক্ষাপদের বিস্তৃত ব্যাখ্যা। পাতিমোখে ২২৭টি শীলের বিস্তৃত ব্যাখ্যা সুত্ত বিভঙ্গে পাওয়া যায়। এ নিয়মগুলো কোথায় কীভাবে বুদ্ধ কর্তৃক প্রজ্ঞাপ্ত হয়েছিল? শীল ভঙ্গকারী কে? শীল কর্তৃক বিশুদ্ধি সম্পর্কীয় অপরাধসমূহ কীভাবে নির্ধারণ করতে হয়? কী প্রকারে শাস্তি প্রদান করলে আপত্তিপ্রাপ্ত ভিক্ষু শীলবিপত্তি হতে নিষ্কৃতিলাভ করতে পারে? এসব বিষয়ের সূক্ষ্ম বিশ্লেষণই সুত্ত বিভঙ্গের মূল উপজীব্য বিষয়। সুত্ত বিভঙ্গের নীতিসমূহের গুরুত্ব অনুসারে আটভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। যথা : পারাজিকা. সংঘাদিসেস, অনিয়ত, নিসগ্গীয়া, পাচিত্তিয়া, পটিদেসনিয়া, সেখিয়া এবং অধিকরণ সমর্থ
এই নীতিগুলো ভিক্খু বিভঙ্গ এবং ভিক্খুণী বিভঙ্গ -এ দুটি গ্রন্থে সংকলিত। কোন্ নীতি লঙ্ঘনে কী অপরাধ এবং কী তার প্রতিকার তার ব্যাখ্যা গ্রন্থদ্বয়ে পাওয়া যায়। তাই সুত্ত বিভঙ্গকে আইন বা নীতিশাস্ত্র হিসেবেও গণ্য করা হয়।
১. ভিক্ষু বিভঙ্গ : বিনয় পিটকের প্রথম গ্রন্থ। এ-গ্রন্থে ভিক্ষুদের বিনয়সম্পর্কিত নিয়মগুলো লিপিবদ্ধ আছে। বুদ্ধ কোথায়, কীভাবে, কাকে উদ্দেশ করে এসব নিয়ম-নীতি নির্দেশ করেন, শীল ভঙ্গকারীর দোষ এবং তা থেকে পরিত্রাণের উপায় বর্ণিত আছে। ভিক্ষুদের প্রতিপালনীয় নিয়মগুলো এ-গ্রন্থে আটভাগে ভাগ করে বর্ণনা করে হয়েছে। যথা : পারাজিকা, সংঘাদিসেস, অনিয়ত, নিসন্ধীয়া, পাচিত্তিয়া, পটিদেসনিয়া সেখিয়া এবং অধিকরণ সমর্থ। এতে সর্বমোট ২২৭টি শীলের ব্যাখ্যা আছে ।
২. ভিক্ষুণী বিভঙ্গ : ভিক্ষুণীদের প্রতিপালনীয় নিয়মগুলো এ-গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে। ভিক্ষু বিভঙ্গের পরিপূরক হিসেবে এটি রচনা করা হয়। এ-গ্রন্থে ভিক্ষুণীদের প্রতিপালনীয় নিয়মগুলো আট ভাগে বিভক্ত করে বর্ণিত হয়েছে। যথা : পারাজিকা. সংঘাদিসেস, অনিয়ত, নিসন্ধীয়া, পাচিত্তিয়া, পটিদেসনিয়া সেখিয়া এবং অধিকরণ সমর্থ। ভিক্ষুণীদের শীলের সংখ্যা ৩১১। উল্লেখ থাকে যে, ভিক্ষুদের চেয়ে ভিক্ষুণীদের শীলের সংখ্যা ৮৪টি বেশি। সুত্ত বিভঙ্গের অন্তর্গত ভিক্খ বিভঙ্গ ও ভিক্খুণী বিভঙ্গ গ্রন্থদ্বয় পারাজিকা ও পাচিত্তিয়া নামেও পরিচিত।
খ. খন্ধক
বিনয় পিটকের দ্বিতীয় ভাগের নাম খন্ধক। এতে গৌতম বুদ্ধের সম্বোধিলাভের পরের ঘটনাগুলো বর্ণিত আছে। খন্ধকের বিশেষত্ব হচ্ছে যে এতে বিনয়ের বিধিবিধানসমূহকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রাচীন ভারতের ধর্ম, সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি, ভূগোল, ভ্রমণ, নির্মাণ ও উন্নয়ন এরূপ বহু ঐতিহাসিক তত্ত্ব ও তথ্যে খন্ধক সমৃদ্ধ। খন্ধক মহাবগ এবং চূল্লবগ এ-দুভাগে বিভক্ত
১. মহাবগু
মহাবগ্গ গ্রন্থটি দশটি অধ্যায় বা স্কন্ধে বিভক্ত। যথা : ১. মহাখন্ধ স্কন্ধ ২. উপোসথ স্কন্ধ ৩. বৈসুপনায়িক স্কন্ধ ৪. প্রবারণা স্কন্ধ ৫. চর্ম স্কন্ধ ৬. ভৈষজ স্কন্ধ ৭. কঠিন স্কন্ধ ৮. চীবর স্কন্ধ ৯. চম্পেয় স্কন্ধ এবং ১০. কৌশাম্বিক স্কন্ধ । প্রত্যেকটি অধ্যায়ের আকার বৃহৎ বলেই গ্রন্থটি মহাব নামে অভিহিত। এ-গ্রন্থে গৌতম বুদ্ধের সম্বোধিলাভের পরের ঘটনাগুলো বর্ণিত আছে। বিশেষত বুদ্ধত্বলাভ হতে সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত বুদ্ধের জীবনের নানা কাহিনী মহাবগে আলোচিত হয়েছে। বুদ্ধের ধারাবাহিক জীবনী রচনার জন্য গ্রন্থটির মূল্য অপরিসীম। বুদ্ধত্বলাভের পর থেকে শুরু করে সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠাকাল পর্যন্ত বুদ্ধ যেসব বিনয়বিধান চালু করেছিলেন তার ধারাবাহিক ইতিহাস এ গ্রন্থে পাওয়া যায়। গ্রন্থটিতে বুদ্ধের সমসাময়িক কালের অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার বিবরণ রয়েছে। বুদ্ধের ধর্মপ্রচারের ইতিহাস, বৌদ্ধসঙ্ঘের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ, ধর্মচক্র প্রবর্তন, পঞ্চবর্গীয় শিষ্যের দীক্ষা, বুদ্ধের সাথে সাক্ষাতের জন্য ধনাঢ্য যশের পরিভ্রমণ, রাজা বিম্বিসারের সাথে বুদ্ধের সাক্ষাৎসহ গুরুত্বপূর্ণ বহু ঐতিহাসিক তথ্যে গ্রন্থটি ভরপুর। এ ছাড়াও শিক্ষাদান পদ্ধতি, গুরু-শিষ্যের সম্পর্ক, আদর্শ জীবনগঠনের সঠিক দিক নির্দেশনাও রয়েছে ।
২. চূল্লবগে
চূল্লবগে বারোটি অধ্যায় বা স্কন্ধ আছে। যথা : ১. কর্ম স্কন্ধ ২. পারিবাসিক স্কন্ধ ৩. সমুচ্চয় স্কন্ধ ৪ শমথ স্কন্ধ ৫. ক্ষুদ্রবস্তু স্কন্ধ ৬. শয়ন আসন স্কন্ধ ৭. সংঘভেদক স্কন্ধ ৮. ব্রত স্কন্ধ ৯. প্রাতিমোক্ষ স্কন্ধ ১০. ভিক্ষুণী স্কন্ধ ১১. পঞ্চশতিকা স্কন্ধ এবং ১২. সপ্তশতিকা স্কন্ধ। ‘চুল্ল' শব্দের অর্থ হচ্ছে ক্ষুদ্র। নামকরণ হতে সহজেই বোঝা যায় গ্রন্থের স্কন্ধগুলো ক্ষুদ্র। অধ্যায় বা স্কন্ধগুলোর আয়তন মহাবগের তুলনায় ক্ষুদ্র বলে গ্রন্থটিকে চূল্লবগ নামে অভিহিত করা হয়েছে।
প্রথম থেকে দশম অধ্যায় পর্যন্ত বুদ্ধ জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে কী উদ্দেশ্যে কোন বিধিবিধান প্রবর্তন করেছিলেন তার বর্ণনা রয়েছে। একাদশ অধ্যায়ে প্রথম বৌদ্ধ সঙ্গীতির বিবরণ বর্ণনা করা হয়। দ্বাদশ অধ্যায়ে দ্বিতীয় সঙ্গীতির পূর্ণাঙ্গ বিবরণ পাওয়া যায়। নারী জাতির সঙ্ঘে প্রবেশ, মহাপ্রজাপতি গৌতমীসহ অন্যান্যদের দীক্ষাদান, ভিক্ষুণীদের নিয়ম-কানুন, বুদ্ধ কী কী শর্তে ভিক্ষুণী সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠায় সম্মতি জ্ঞাপন করেছিলেন প্রভৃতি সম্পকেও চূল্লবগে বর্ণনা পাওয়া যায়।
গ. পরিবার বা পরিবার পাঠ
বিনয় পিটকের এটি শেষ গ্রন্থ । ভিক্ষু ও ভিক্ষুণীদের আচরণ সম্পর্কিত বিষয়াবলি গ্রন্থটিতে বর্ণিত আছে। বিশেষত, বিনয়ের জটিল এবং দুর্বোধ্য বিষয়সমূহ প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে এ-গ্রন্থে সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। নতুন শিক্ষার্থী ভিক্ষুদের জন্য বিনয় শিক্ষার উপকরণ হিসেবে গ্রন্থটি অত্যন্ত মূল্যবান। ছোট-বড় সব মিলে এতে সর্বমোট একুশটি অধ্যায় আছে। এগুলো গদ্যে ও পদ্যে রচিত। প্রত্যেক অধ্যায়ই বিনয়-সম্পর্কিত শিক্ষাপদসমূহের ব্যাখ্যায় পরিপূর্ণ । তাই গ্রন্থটিকে বিনয় পিটকের সারবস্তু বলা হয় ।
অনুশীলনমূলক কাজ বিনয়কে কেন বুদ্ধশাসনের আয়ু বলা হয়? সুত্ত বিভঙ্গকে কেন আইন বা নীতিশাস্ত্র হিসেবেও গণ্য করা হয়? পরিবার গ্রন্থটিকে কেন বিনয় পিটকের সারমর্ম বলা হয়? |
পাঠ : ৫
অভিধর্ম পিটক
ত্রিপিটকের তৃতীয় বা শেষ ভাগ হলো অভিধর্ম পিটক। বৌদ্ধ ধর্ম-দর্শনের সমৃদ্ধ আলোচনায় গ্রন্থটি পূর্ণ। সূত্র পিটকে যেসব দার্শনিক ও নৈতিক বিষয়সমূহ অনুসরণ করার উপদেশ দিয়েছেন সেসব বিষয় অভিধর্ম পিটকে সূক্ষ্ম ও বিস্তৃতভাবে ব্যাখ্যা করে উপস্থাপন করা হয়েছে। গ্রন্থটির মূল আলোচ্য বিষয় বৌদ্ধদর্শন ও পরমার্থ সত্য । যথা : স্কন্ধ, আয়তন, ধাতু, চ্যুতি, প্রতিসন্ধি, বল, নির্বাণ ও প্রজ্ঞপ্তি ইত্যাদি । অভিধর্ম পিটকে বৌদ্ধ মননশীলতার চরম বিকাশ ঘটে। অভিধর্ম বিষয়ে প্রকৃষ্ট জ্ঞান ব্যতীত কেউ উত্তম ধর্ম দেশনা করতে পারে না। এতে কাল্পনিক কোনো বিষয়ের অবতারণা নেই। কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয়ের সাহায্যে মূল বক্তব্য বিশ্লেষণ করাই এর প্রধান বিশেষত্ব । বুদ্ধের মনস্ততাত্ত্বিক উপদেশ অভিধর্মের মূল বিষয়বস্তু। বিশেষত চিত্ত, চৈতসিক, রূপ এবং নির্বাণ প্রভৃতি সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মভাবে অভিধর্ম পিটকে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তাই অভিধর্মকে উচ্চতর ধর্মও বলা হয় ।
অভিধর্ম পিটক সাত ভাগে বিভক্ত। যথা : ১. ধম্মসঙ্গণি ২. বিভঙ্গ ৩. ধাতুকথা ৪. পুগ্গল পঞ্ঞত্তি ৫. কথাবন্ধু ৬. যমক এবং ৭. পঠান।
১. ধম্মসঙ্গণি : অভিধর্ম পিটকের প্রথম গ্রন্থ হলো ধম্মসঙ্গণি। ‘ধম্মসঙ্গণি’-এর অর্থ ধর্মের সংগণনা বা ধর্মের শ্রেণিবিভাগ অথবা ধর্মের ব্যাখ্যা। ধর্ম অর্থাৎ লৌকিক ও লোকোত্তর বিষয়সমূহ শ্রেণিবিভাগ করে ব্যাখ্যা করায় গ্রন্থটির এরূপ নামকরণ করা হয়। ধম্মসঙ্গণিকে অভিধর্ম পিটকের মূলস্তম্ভ বলা হয়। এতে অন্তর্জগৎ ও বহির্জগতের ছোট-বড় যাবতীয় ব্যাপারসমূহকে চিত্ত, চৈতসিক ও জড় পদার্থের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। নাম-রূপকে কার্যকারণনীতি অনুসারে কুশল-অকুশল এবং অব্যাকৃত ধর্ম হিসেবে
শ্রেনিবিন্যাস করে এ-গ্রন্থে আলোচনা করা হয়েছে। ধম্মসঙ্গণির আলোচ্য বিষয়সমূহকে চার ভাগে ভাগ করে বিশ্লেষণ করা যায়। এগুলো হলো যথাক্রমে-
ক. চিত্ত ও চৈতসিকের পরিচয়
খ. রূপ বা জড় পদার্থের পরিচয়
গ. পূর্বে উল্লিখিত বিষয়ের সারসংক্ষেপ বা নিখে প
ঘ. অঙ্গুদার বা অব্যাকৃত ধর্ম চিত্ত চৈতসিকে কামাবচার, রূপাবচর, অরূপাবচর এবং লোকোত্তর – এই চার প্রকার চিত্ত পঞ্চস্কন্ধ, জীবিতেন্দ্রিয় প্রভৃতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। রূপ পরিচয় বিভাগে কামলোক তথা নরক, মনুষ্য ও দেবলোক প্রভৃতি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। নিক্খপ শব্দের অর্থ হচ্ছে সারমর্ম বা সারসংগ্রহ। এ-বিভাগে চিত্ত ও চৈতসিক সম্পর্কে পূর্ববর্তী বিভাগে যেসব আলোচনা আছে তার সারমর্ম রয়েছে। অথুদার শব্দের অর্থ হলো বিশ্লেষণ। অর্থ উদ্ধার বা সত্য উদ্ঘাটনের জন্য বিশ্লেষণ হলো অদার। এ-বিভাগে কুশল-অকুশল বিষয়ের কারণ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া অব্যাকৃত বিষয় সম্পর্কেও বর্ণনা পাওয়া যায়।
২. বিভঙ্গ : অভিধর্ম পিটকের দ্বিতীয় গ্রন্থের নাম 'বিভঙ্গ'। বিভঙ্গ শব্দের অর্থ বিশদ ব্যাখ্যা। এতে ধর্মসঙ্গণি বিষয়সমূহের উচ্চতর বা বিশদ ব্যাখ্যা লক্ষ করা যায়। গ্রন্থটিতে আঠারোটি অধ্যায় রয়েছে। অধ্যায়গুলোতে পঞ্চস্কন্ধ, দ্বাদশ আয়তন, অষ্টাদশ ধাতু, চার আর্যসত্য, দ্বাবিংশতি ইন্দ্রিয়, প্রতীত্যসমুৎপাদ, চার স্মৃতি প্রস্থান, চার সম্যক প্রধান, চার ঋদ্ধিপাদ, সপ্তবোধ্যঙ্গ, আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ, ধ্যান, চার অপ্রমেয়, শিক্ষাপদ, চারি প্রতিসম্ভিদা, জ্ঞান-বিভঙ্গ, ক্ষুদ্রবস্তু বিভঙ্গ (চিত্তের অকুশল অবস্থার দীর্ঘ তালিকা) প্রভৃতি সম্পর্কে আলোচনা রয়েছে।
৩. ধাতুকথা : অভিধর্ম পিটকের তৃতীয় গ্রন্থ। ধাতুকথা শব্দের অর্থ ‘ধাতু’ সম্পর্কিত আলোচনা। চিত্ত ও চৈতসিকের আলোচনায় পূর্ণ গ্রন্থটি । এ-গ্রন্থের প্রধান আলোচ্য বিষয় হলো : পঞ্চস্কন্ধ (রূপ, বেদনা, সংজ্ঞা, সংস্কার ও বিজ্ঞান), দ্বাদশ আয়তন (চক্ষু, শ্রোত্র, ঘ্রাণ, জিহ্বা, কায়, রূপ, শব্দ, গন্ধ, রস, স্পর্শ, মন এবং ধর্ম), আঠারো প্রকার ধাতু (চক্ষু, শ্রোত্র, ঘ্রাণ, জিহ্বা, কায়, রূপ, শব্দ, গন্ধ, রস, স্পর্শ, চক্ষুবিজ্ঞান, শ্রোত্রবিজ্ঞান, ঘ্রাণবিজ্ঞান, জিহ্বাবিজ্ঞান, কায়বিজ্ঞান, মন, মনোবিজ্ঞান, ধর্ম), চার প্রকার ধ্যান (প্রথম ধ্যান, দ্বিতীয় ধ্যান, তৃতীয় ধ্যান এবং চতুর্থ ধ্যান), পঞ্চবল (শ্রদ্ধা, বীর্য, স্মৃতি, সমাধি এবং প্রজ্ঞা), অষ্টাঙ্গিক মার্গ (সম্যক দৃষ্টি, সম্যক সংকল্প, সম্যক বাক্য, সম্যক কর্ম, সম্যক জীবিকা, সম্যক প্রচেষ্টা, সম্যক স্মৃতি এবং সম্যক সমাধি) প্রভৃতি ।
৪. পুগ্গলপঞ্ঞত্তি : ‘পুগ্গল' শব্দের অর্থ পুরুষ, সত্ত্ব বা আত্মা। ‘পঞ্ঞত্তি' অর্থ প্রজ্ঞপ্তি, ধারণা, পরিচয় অথবা যথার্থ বলে নির্দেশ করা ইত্যাদি বোঝায়। সুতরাং ‘পুগ্গল পঞ্ঞত্তি' শব্দের অর্থ যে-পুস্তক পুগ্গল বা ব্যক্তিবিশেষের পরিচয় প্রদান করে। গ্রন্থটি দশটি অধ্যায়ে বিভক্ত। দশটি অধ্যায়ে বিভিন্ন প্রকার পুগল বা ব্যক্তির বর্ণনা আছে। পুগ্গল বা ব্যক্তিবিশেষের স্বরূপ ও বিকাশ দেখানোর জন্য পুগ্গলকে নানাভাবে বিভক্ত করা হয়েছে। যথা : সম্যক সম্বুদ্ধ, প্রত্যেক বুদ্ধ, আর্যপুগ্গল ও তাদের শ্রেণিবিন্যাস, স্রোতাপন্ন, সকৃদাগামি, অনাগামি, শৈক্ষ্য, অশৈক্ষ্য এবং পৃথকজন লোভচরিত, দ্বেষচরিত এবং মোহচরিত ইত্যাদি । গ্রন্থটিতে প্রথমে ছয়টি প্রজ্ঞপ্তি কী কী উল্লেখ করা হয়েছে। তারপর, একবিধ পুগ্গল, দ্বিবিধ পুগ্গল, ত্রিবিধ
পুগ্গল, চতুর্বিধ পুগ্গল, পঞ্চবিধ পুগ্গল, ষড়বিধ পুগ্গল, সপ্তবিধ পুগ্গল, অষ্টবিধ পুগ্গল, নববিধ পুগ্গল এবং দশবিধ পুগ্গল-এর ব্যাখ্যা রয়েছে। গ্রন্থটির ভাষাশৈলী ও বিষয়বস্তুর উপস্থাপনা অভিধর্ম পিটকের অন্যান্য গ্রন্থ থেকে ভিন্ন ।
৫. কথাবন্ধু : অভিধর্ম পিটকের মধ্যে অন্যতম মূল্যবান গ্রন্থ হলো 'কথাবন্ধু'। ত্রিপিটকের অন্তর্গত গ্রন্থগুলোর মধ্যে একমাত্র কথাবত্থু গ্রন্থের সংকলকের নাম পাওয়া যায়। সম্রাট অশোকের রাজত্বকালে তৃতীয় বৌদ্ধ মহাসঙ্গীতি অবসানে মোগ্গলিপুত্র তিষ্য স্থবির গ্রন্থটি রচনা করেন। গ্রন্থটিতে তেইশটি অধ্যায় আছে। গ্রন্থটির প্রত্যেক অধ্যায়ে আট থেকে বারোটি করে প্রশ্নোত্তর মালা রয়েছে। এই প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রাচীন ভারতের জীবনযাত্রা তথা সে-সময়ের মানুষের মন ও মননশীলতার পরিচয় পাওয়া যায়। মহামতি সম্রাট অশোকের সময় অনুষ্ঠিত তৃতীয় সঙ্গীতির সময় মোগ্গলিপুত্র তিষ্য স্থবির গ্রন্থটি সংকলন করেন। এটাকে বৌদ্ধধর্ম ও দর্শন-সম্পর্কিত তর্কশাস্ত্র বলা হয়। এ-গ্রন্থে বিভিন্ন জটিল দার্শনিক তত্ত্বের উত্তর-প্রত্যুত্তর রয়েছে। অভিধর্মের কঠিন এবং দুর্বোধ্য দার্শনিক বিষয়গুলোকে এ-গ্রন্থে যুক্তি তর্কে সহজভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে । গ্রন্থটিতে বুদ্ধবাণী উদ্ধৃতির মাধ্যমে অন্যান্য দার্শনিক তত্ত্ব খণ্ডন করা হয়েছে এবং বুদ্ধের ধর্ম-দর্শনের নির্যাস প্রতিফলিত হওয়ায় গ্রন্থটি ত্রিপিটকের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
৬. যমক বা যমক প্রকরণ : যুগল বা জোড়া বা যুগ্ম অর্থে ‘যমক' শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। ‘যমক' বলতে একই বিষয়ে দুটি প্রশ্নের অবতারণা করাকে বোঝায়। এই প্রশ্ন দুটিতে কারণ থেকে কারণ নির্ণয় করা বা কারণ থেকে কারণের সত্য উদ্ঘাটন করার চেষ্টা করা হয়েছে। গ্রন্থটি দশ অধ্যায়ে বিভক্ত। গ্রন্থটির মূল আলোচ্য বিষয় হলো : মূল-যমক, স্কন্ধ যমক, আয়তন যমক, ধাতু যমক, সত্য যমক, সংস্কার যমক, অনুশয় যমক, চিত্ত যমক, ধর্ম যমক, ইন্দ্রিয় যমক ইত্যাদি। মূল-যমকে কুশল এবং অকুশল ও তাদের মূল সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। স্কন্ধ-যমকে পঞ্চ স্কন্ধের বর্ণনা রয়েছে। ধাতু যমকে অষ্টাদশ প্রকার ধাতুর বিস্তৃত অর্থ বর্ণিত হয়েছে। সত্য যমকে চারি আর্যসত্যের বর্ণনা পাওয়া যায়। সংস্কার যমকে তিন প্রকার সংস্কারের আলোচনা দৃষ্ট হয় (কায় সংস্কার, বাক্য সংস্কার এবং মন সংস্কার)। অনুশয় যমকে বিবিধ প্রকার অনুশয়ের দার্শনিক বিচার (কাম, রাগ, সন্দেহ, মান, অবিদ্যা ইত্যাদি) পাওয়া যায়। চিত্ত যমকে চিত্ত ও চৈতসিক সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। ধর্ম যমকে কুশল এবং অকুশল ধর্মের তাৎপর্য বিস্তৃতভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ইন্দ্রিয় যমকে বাইশ প্রকার ইন্দ্রিয়ের পরিচয় প্রদান করা হয়েছে।
৭. পঠান : অভিধর্ম পিটকের শেষ গ্রন্থ। ‘পট্ঠান' শব্দের অর্থ হলো সম্বন্ধ, কারণ বা প্রধান কারণ, প্রকৃত কারণ, হেতু ইত্যাদি। গ্রন্থটিতে নাম-রূপের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রতীত্যসমুৎপাদ নীতিও আলোচনা করা হয়েছে। গ্রন্থটিতে চারটি বিভাগ রয়েছে। যথা : অনুলোম পঠান, পচ্চনীয় পঠান, অনুলোম পচ্চনীয় পঠান এবং পচনীয় অনুলোম পঠান। চার বিভাগকে আবার চব্বিশ প্রকার প্রত্যয়ের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে। ‘প্রত্যয়' শব্দের অর্থ হলো 'কারণ' ‘নিদান' ‘হেতু' ইত্যাদি। যার মাধ্যমে কোনো কার্য সংঘটিত হয় তা-ই প্রত্যয়। পঠান গ্রন্থে বর্ণিত চব্বিশ প্রকার প্রত্যয়সমূহ হলো : হেতু, আরম্মন, অধিপতি, অনন্তর, সমন্তর, সহজাত, অঞঞমহ, নিস্চয়, উপনিসয়, পুরেজাত, পচ্ছাজাত, আসেবন, কৰ্ম্ম, বিপাক, আহার, ইন্দ্রিয়, ধ্যান, মগ্গ, সম্পযুক্ত, বিপ্লযুক্ত, অখি, নথি, বিগত এবং অবিগত প্রত্যয়।
অনুশীলনীমূলক কাজ অভিধর্ম পিটকে কয়টি গ্রন্থ ও কী কী? ধম্মসঙ্গণির মূল অলোচ্য বিষয়সমূহ কী? কথাবন্ধু গ্রন্থটিকে কেন ত্রিপিটকের অন্তর্ভুক্ত করা হলো? |
পাঠ: ৬
ত্রিপিটক পাঠের প্রয়োজনীয়তা
বুদ্ধের ধর্ম-দর্শনই ত্রিপিটকের মূল উপজীব্য বিষয়। কিন্তু প্রসঙ্গক্রমে এ-গ্রন্থে বুদ্ধের সমকালীন সমাজ, সংস্কৃতি, ধর্ম-দর্শন, রাজনীতি, ভূগোল, অর্থনীতি প্রভৃতি সম্পর্কেও আলোচনা রয়েছে। তাই ভারতবর্ষের প্রাচীন ইতিহাস জানার জন্য ত্রিপিটকের গুরুত্ব অপরিসীম। ত্রিপিটকের প্রতিটি বাণী মানুষকে নৈতিক ও মানবিক গুণাবলি বিকাশে উদ্বুদ্ধ করে। অকুশল কর্ম হতে বিরত থাকতে উৎসাহিত করে। সকল প্রকার পাপ বর্জন করে ধর্মময় জীবনযাপনে প্রেরণা যোগায়। মানুষকে দুঃখহীন নৈর্বাণিক পথে পরিচালিত করে। ত্রিপিটক পাঠে কুশল-অকুশল কর্ম, চিত্তের প্রকৃত স্বরূপ, মানুষের বৈশিষ্ট্য, মনোজগতের নানা অবস্থা, দুঃখ, দুঃখের কারণ, দুঃখমুক্তির উপায়, অনিত্য, অনাত্মা, নির্বাণ, নির্বাণলাভের উপায়, জগতের প্রকৃত স্বরূপ, শীল, সমাধি, প্রজ্ঞা প্রভৃতি সম্পর্কে জানা যায়। তা ছাড়া বুদ্ধজীবনের বহু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ত্রিপিটকে বর্ণিত আছে। ত্রিপিটকের অমৃতবাণীসমূহ রাগ-দ্বেষ-মোহ বিদূরিত করে মানুষে মানুষে পারস্পরিক সুসম্পর্ক, সৌহার্দ্য ও ঐক্যসৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। ভারতবর্ষে জাতিভেদ ও বর্ণপ্রথার নামে যে- নিষ্ঠুরতা প্রচলিত ছিল তা দূরীভূত করতে বুদ্ধবাণী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। জাতিভেদ প্রথা ও বর্ণবৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে বুদ্ধ তাঁর ধর্ম প্রচার করেছিলেন। তাঁর প্রতিটি বাণী ছোট-বড় সকল প্রাণীকে রক্ষার প্রেরণা যোগায়। সেই আদর্শকে বিকশিত করার উদ্দেশ্যে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ভিক্ষু ও ভিক্ষুণী সঙ্ঘ। তাঁর প্রতিষ্ঠিত সঙ্ঘে জাতি, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সকলের প্রবেশাধিকার ছিল। এভাবে তিনি সমাজে এবং তাঁর অনুসারীদের মধ্যে সাম্যনীতির আদর্শ ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। বুদ্ধ-নির্দেশিত বিধি-বিধান অনুসরণে মানুষ বিনয়ী, শীলবান এবং চরিত্রবান হয়। ফলে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজজীবন সুখের হয়। অতএব, বলা যায়, ত্রিপিটক পাঠের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম ।
অনুশীলনী
শূন্যস্থান পূরণ কর
১. বুদ্ধ লিখিত আকার কোনো......... দান করেনি ।
২. সিংহলের রাজা বউগামিনীর পৃষ্ঠপোষকতার.......... ত্রিপিটক লিখে রাখা হত ।
৩. সূত্র পিটক......... প্রধান ভাগে বিভক্ত।
৪. খুদ্দক নিকায়.........সর্বশেষ ভাগ ।
৫. অভিধর্ম পিটকের মধ্যে অন্যতম প্রধান গ্রন্থ হলো........... |
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. ত্রিপিটক-এর শব্দগত অর্থ কী?
2. সুত্ত পিটকে কয়টি গ্রন্থ ও কী কী?
৩. বিনয় পিটকের শিক্ষা কী?
8. অভিধর্ম বলতে তুমি কী বোঝ? বল।
বর্ণনামূলক প্রশ্ন
১. ত্রিপিটক রচনার পটভূমি আলোচনা কর ।
২. সুত্ত পিটক সম্পর্কে একটি ধারণা প্রদান কর।
৩. বিনয় বলতে কী বোঝ? বিনয় পিটকে কয়টি গ্রন্থ? প্রত্যেকটির সংক্ষিপ্ত ধারণা দাও।
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন
অভিধম্ম পিটকের অন্যতম প্রধান গ্রন্থের নাম কী ?
ক. বিভঙ্গ
ধম্মসঙ্গনি
খ. ধাতুকথা
ঘ. কথাবন্ধু
২। ভিক্ষুদের বিনয়চর্চা ও অনুশীলনের মাধ্যমে হবে -
i. নীতিবোধ জাগ্রত
ii. সাধনালাভ
iii. উন্নত জীবনযাপন লাভ
নিচের কোনটি সঠিক ?
ক. i
খ. i ও iii
গ. ii ও iii
ঘ. i, ii ও iii
নিচের অনুচ্ছেদ পড়ে ৩ ও ৪ নং প্রশ্নের উত্তর দাও
শ্রদ্ধেয় বোধিমিত্র ভিক্ষু নতুন উপসম্পদা লাভের পর ভিক্ষু জীবনের নিয়ম, নীতি, শৃঙ্খলা জানার জন্য লাইব্রেরি থেকে একটি গ্রন্থ অধ্যয়ন করেন । গ্রন্থটিতে বিনয়ের জটিল ও দুর্বোধ্য বিষয়গুলো সহজ ও সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
৩। শ্রদ্ধেয় বোধিমিত্র ভিক্ষু বিনয়ের কোন গ্রন্থ অধ্যয়ন করেন ?
ক. সূত্তবিভঙ্গ
খ. খন্ধক
গ. মহাব
ঘ. পরিবার পাঠ
উক্ত গ্রন্থটিকে বিনয় পিটকের কী বলা হয় ?
ক. সারবস্তু
খ. সারসংগ্রহ
পরিশুদ্ধ জীবনবিধি
ঘ. অন্যতম গ্রন্থ
ক. চুল্লবর্গের অপর নাম কী ?
খ. ত্রিপিটক পাঠের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা কর।
১ম ছকের ইঙ্গিত দ্বারা কোন পিটক নির্দেশ করছে তা পাঠ্যবইয়ের আলোকে ব্যাখ্যা কর ।
ঘ. ২য় ছকের বর্ণিত পিটকটিতে ‘বৌদ্ধ দর্শন ও পরমার্থ সত্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে তুমি কি এ বক্তব্যের সাথে একমত ? যুক্তি প্রদর্শন কর ।
২। শ্রদ্ধেয় ভিক্ষুসঙ্ঘ, বিহার পরিচালনা কমিটি এবং উপাসক উপাসিকাদের সমন্বয়ে ধর্মাঙ্কুর বিহার সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়। বুদ্ধের নির্দেশিত আদেশ-উপদেশ অনুশীলনের মাধ্যমে সকলেই শীল পালনে সচেষ্ট থাকেন। বিশেষ তিথিতে উপাসক-উপাসিকারা উপোসথ শীল পালনকালে বিহারাধ্যক্ষ বুদ্ধের উদ্ধৃতাংশ স্মরণপূর্বক বলেন, “যদি কোনো ভিক্ষু শতবর্ষব্যাপী ত্রিপিটক অধ্যয়ন করেও যদি সম্যকরূপে শীল পালন না করেন, তবে মৃত্যুর পর তাঁকে নরকে যেতে হয়।”
ক. ত্রিপিটক কোন ভাষায় রচিত?
খ. ত্রিপিটকের পটভূমি সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর ।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত উক্তিটি ত্রিপিটকের কোন পিটকে নিহিত ? ব্যাখ্যা কর ।
ঘ. উক্ত পিটক ‘বুদ্ধশাসনের আয়ুস্বরূপ' ধর্মীয় দৃষ্টিতে মতামত দাও ।