ষষ্ঠ শ্রেণি (মাধ্যমিক) - খ্রিস্ট্রধর্ম শিক্ষা - অঞ্জলি ৩ | NCTB BOOK

মানুষদের তুচ্ছ করতো, তাদের তারা অধার্মিক মনে করতো। বিশেষ করে শমরীয় জাতির লোকদের তারা তুচ্ছ বা ঘৃনা করতো। যিহুদীরা তাদের সঙ্গে ওঠা-বসা, খাওয়া-দাওয়া, চলা-ফেরা করত না; এমনকি তারা শমরীয়দের বাসভূমি দিয়ে চলাচল পর্যন্ত করতো না। কিন্তু যীশু ছিলেন এসবের উপরে। বাইবেলে যোহন লিখিত সুসমাচার ৪ অধ্যায় থেকে আমরা জানতে পারি যে, যীশু একবার সেই অঞ্চলে গেলেন। এমন কি তিনি সেখানে গিয়ে একজন শমরীয় নারীর কাছে পিপাসা মিটানোর জন্য জল চাইলেন। সমাজের ধর্মীয় ও সামাজিক সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে যীশু সেদিন পিপাসা মেটানোর জন্য জল চাইতে দ্বিধা করেননি।

সুসমাচার লুক ১০ অধ্যায়ে দেখতে পাই সামাজিক বা ধর্মীয় যে কোন বাধার ঊর্ধ্বে উঠে মানুষ অন্য মানুষের প্রতি প্রেম বা সহমর্মিতা প্রকাশ করতে পারে। এটা অন্য মানুষের প্রতি প্রেম বা সহমর্মিতা প্রকাশের একটি চমৎকার উপমা (প্রতিবেশী বিষয়ক সেশনগুলোতেও এই গল্পটি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে)। দৃষ্টান্তটি সংক্ষেপে এরূপ যেরূশালেম থেকে যিরীহো শহরে যাবার সময়ে একজন যিহুদীকে একদল দস্যু অনেক প্রহার করে আধমরা অবস্থায় পথের পাশে ফেলে চলে যায়। পরে ঐপথ দিয়ে একজন যাজক এবং তারপরে একজন লেবীয় (যাজকীয় কাজে সাহায্যকারী লোক) নিজ নিজ কাজে চলে গেল। তারা কেউই সেই বিপদগ্রস্থ লোকটির সাহায্যে এগিয়ে আসে নি। পরে ঐ পথ দিয়ে একজন শমরীয় ব্যক্তি (যে ছিলো অয়িহদী ও যিহুদীদের দৃষ্টিতে বিধর্মী) যাচ্ছিলেন। তিনি পথের পাশে পড়ে থাকা ঐ মৃতপ্রায় ব্যক্তিকে দেখে তাকে সমস্ত প্রকারের সাহায্য করলেন, তার চিকিৎসার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে তার পক্ষে যা যা করা সম্ভব তা করলেন। তিনি তাকে একটা পান্থশালায় নিয়ে গেলেন এবং সেখানে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিলেন। শুধু তাই নয়, তার চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার বহনের প্রতিশ্রুতি দিলেন।

ঈশ্বরের আজ্ঞার মধ্যে সবচেয়ে মহৎ আজ্ঞা কী? [ এমন এক প্রশ্নের উত্তরে যীশু বলেছেন, “সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে দরকারি আদেশ হলো, 'তোমরা প্রত্যেকে তোমাদের সমস্ত অন্তর, সমস্ত প্রাণ এ সমস্ত মন দিয়ে তোমাদের প্রভু ঈশ্বরকে ভালবাসবে।' তার পরের দরকারি আদেশটা প্রথমটারই মতো: 'তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মতো ভালবাসবে। খ্রীষ্টধর্মের সমস্ত শিক্ষা এই দুইটি আদেশের উপরেই নির্ভর করে আছে।” (মথি ২২:৩৭-৪০, মার্ক ১২:২৯-৩১, লুক ১০:২৭)। সাধু লুকের সুসমাচারে যীশুর বলা গল্পটিতে সেই শমরীয় ব্যক্তিই হয়েছিলেন আহত লোকটির কাছে প্রকৃত প্রতিবেশী।

খ্রীষ্ট ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের চেয়ে মানুষের জীবনকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন ধর্ম মানুষের জন্য, মানুষ ধর্মের জন্য নয়। যীশু খ্রীষ্ট আমাদের শিক্ষা নেন যেন জাতি, গোত্র, ধর্ম, সম্পদ, সামাজিক পদমর্যাদা, ইত্যাদির কথা বিবেচনা না করে সকল মানুষকে সম্মান করি, সকলের মধ্যেই যে ঈশ্বরপ্রদত্ত অনেক গুণ আছে বা থাকতে পারে সে কথা যেন মনে রাখি। প্রত্যেকের ন্যায্য ও মানবীয় অধিকারকে সম্মান করা আমাদের এক পবিত্র দায়িত্ব। শত রকমের বৈচিত্রের মাঝে ঐক্য ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের কোন বিকল্প আজ পৃথিবীতে নেই।

পবিত্র বাইবেল এ যীশু খ্রীষ্টের অনেকগুলি উপাধির মধ্যে একটি হল “শান্তিরাজ”। মানুষে মানুষে শান্তি ও প্রেম ছিলো তাঁর জীবনের বড় এক লক্ষ্য। প্রেরিত পৌলের এ কথাগুলো আমাদের এ বিষয়ে অনুপ্রাণিত করতে পারে: “শেষে বলি, ভাইয়েরা, যা সত্যি, যা উপযুক্ত, যা সৎ, যা খাঁটি, যা সুন্দর, যা সম্মান পাবার যোগ্য, মোট

কথা যা ভাল এবং প্রশংসার যোগ্য, সেই দিকে তোমরা মন দাও। তোমরা আমার কাছে যা শিখেছ ও ভাল বলে গ্রহণ করেছ এবং আমার মধ্যে যা দেখেছ ও আমার মুখে যা শুনেছ, তা-ই নিয়ে নিজেদের ব্যস্ত রাখ। ভাতে শান্তিদাতা ঈশ্বর তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে থাকবেন।" (ফিলিপীয় ৪:৮-৯)। তাই আমরা খ্রীষ্টের প্রদর্শিত পথে চলে একটা সুন্দর ও শান্তির সমাজ তৈরীর কাজে অবদান রাখবো।

অন্যান্য ধর্মেও এই সহাবস্থানের কথা বারবার বলা হয়েছে। তোমার শিক্ষক এবং বন্ধুদের সাথে কথা বলে তুমি আরও অনেক কিছু জানতে পারবে।

 

প্রধান প্রধান ধর্মীয় উৎসব

শিক্ষক তোমাকে খ্রীষ্টধর্মের প্রধান উৎসব কী তা জিজ্ঞেস করতে পারেন। আরও জিজ্ঞেস করতে পারেন অন্য ধর্মের প্রধান প্রধান কোনো উৎসবের নাম তুমি জানো কি-না। তুমি যদি কখনও তোমার অন্য ধর্মের বন্ধুদের সাথে তাদের ধর্মীয় উৎসবগুলো পালন করে থাকো তবে তোমার শিক্ষককে জানাতে পারো। তোমার শিক্ষক নিচের তালিকাটি দেখাবেন যেখানে ইসলাম ধর্ম, হিন্দুধর্ম এবং বৌদ্ধধর্মের প্রধান উৎসবগুলো কী কী তা লেখা আছে।

 

Content added || updated By