একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ১ম পত্র | NCTB BOOK

বাংলাদেশ শিল্পে অনগ্রসর একটা দেশ। প্রাচীন কাল থেকেই কৃষি খাত এ দেশে মুখ্য হলেও বর্তমানে শিল্পোন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। জাতীয় সম্পদ ও গৃহীত বৈদেশিক ঋণের বড় পরিমাণ অর্থ শিল্পোন্নয়নের স্বার্থে ব্যবহৃত হয়েছে কিন্তু প্রত্যাশিত অগ্রগতি নানান কারণেই এখনও অর্জিত হয়নি। 

বাংলাদেশে শিল্পের সমস্যা (Problems of Industry in Bangladesh):

বাংলাদেশে শিল্পখাতে দূর্বলতার পিছনে বিভিন্ন কারণ বিদ্যমান। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো- 

১। সৎ ও যোগ্য উদ্যোক্তার অভাব: আমাদের দেশের সকল পর্যায়েই দক্ষ ও যোগ্য উদ্যোক্তা বা সংগঠকের অভাব লক্ষনীয়। অথচ উদ্যোক্তা হলো ব্যবসায়ের নেতা। যোগ্য উদ্যোক্তা শ্রেণী গড়ে না উঠার কারণে এ দেশের শিল্প ক্ষেত্রে যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও সে সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে
না । 

২। ব্যবস্থাপনার অদক্ষতাঃ শিল্প নিজে চলতে পারে না। ব্যবস্থাপনার উপর তাকে নির্ভর করতে হয় । শিল্প সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য এর ব্যবস্থাপকদের যেরূপ দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা থাকা প্রয়োজন আমাদের দেশে তার বড়ই অভাব পরিলক্ষিত হয় ।

৩। মূলধনের অভাব: শিল্প ছোট বড় যে ধরনেরই হোক না কেন তাতে যদি কাম্য পরিমাণের মূলধন সংস্থান করা না যায় তবে তা হতে কাঙ্খিত ফল লাভ করা যায় না ।

৪। সরকারি সুষ্ঠু নীতিমালার অভাবঃ শিল্পকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সরকারের যে সুষ্ঠু নীতি-পরিকল্পনা ও তদনুযায়ী উদ্যোগ এবং সহযোগিতা থাকা প্রয়োজন তারও মারাত্মক অভাব এ দেশে লক্ষণীয়।

৫। উন্নত প্রযুক্তি ও কারিগরি দক্ষতার অভাব: আমাদের দেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পুরাতন যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির ব্যবহার করে। ফলে বিদেশি প্রতিযোগীদের ন্যায় মানসম্মত পণ্য উৎপাদন তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। এ ছাড়া ব্যবসায় পরিচালনা ও উৎপাদনে যে ধরনের কলাকৌশল ও পদ্ধতি এখানে ব্যবহৃত হয় তাও উন্নত নয়। ফলে ব্যবসায় সংগঠনগুলোর দক্ষতার মান উন্নত হওয়ার সুযোগ কম ।

বাংলাদেশে শিল্পের সম্ভাবনা (Prospects of Industry in Bangladesh )

দেশের ক্রমবর্ধমান জনশক্তির কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা এবং দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে শিল্পায়নের কোনো বিকল্প নেই । প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যাপক ব্যবহার, অভ্যন্তরীণ বাজার, বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বৃদ্ধি, উন্নতমানের কয়লা খনির সন্ধান লাভ, রপ্তানিযোগ্য পণ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, বেসরকারি উদ্যোগ সম্প্রসারন, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বারোপ, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনের প্রয়াস, বিশ্বায়নের প্রভাব ইত্যাদি সবকিছুই এদেশে শিল্পখাতের অগ্রগতির ইঙ্গিত দেয় । দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে শিল্পখাতের উন্নয়নের আবশ্যকতা ও করণীয় সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সকল মহলের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও মনোভাব যত দ্রুত সৃষ্টি হয় ততই তা মঙ্গলজনক। সর্বোপরি দেশীয় উদ্যোগ ও বিনিয়োগ আকর্ষণের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন ও পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলে সকল বাধা-বিপত্তি দূর করে সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাবে।

বাংলাদেশে ব্যবসায়ের আওতা হিসেবে বাণিজ্যের সমস্যা (Problems of Commerce in Bangladesh)

বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাণিজ্যে বিভিন্ন সমস্যা বিদ্যমান। যে কারণে যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকার পরও এদেশে বাণিজ্যের কাঙ্ক্ষিত সম্প্রসারণ সম্ভব হচ্ছে না। নিম্নে এরুপ সমস্যাসমূহ উল্লেখ করা হলো—

ক. অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে সমস্যা: (Problems of home trade)

  • দক্ষ উদ্যোক্তা ও ব্যবস্থাপকের অভাব
  • মূলধনের সীমাবদ্ধতা
  • পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা
  • রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা
  • সরকারি বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতার অভাব
  • মধ্যস্থ ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য
  • পণ্য ও সেবার নিম্নমান

খ. বৈদেশিক বাণিজ্যে সমস্যা: (Problems of foreign trade )

  • রপ্তানিমুখী শিল্পের অভাব 
  • দক্ষ রপ্তানিকারকের অভাব
  • রপ্তানি পণ্যের সীমাবদ্ধতা বা পোশাক শিল্পের উপর অতিনির্ভরতা
  • রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণে উন্নত কৌশল ও প্রযুক্তি ব্যবহারের অভাব
  • দ্রুত শিপমেন্ট সমস্যা
  • আঞ্চলিক সহায়তার অভাব
  • রপ্তানি সম্প্রসারণে ব্যাকওয়ার্ড ও ফরোয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের অভাব

বাংলাদেশে বাণিজ্যের সম্ভাবনা (Prospects of commerce in Bangladesh): 

বাংলাদেশে বাণিজ্যোর সম্ভাবনা যথেষ্ট তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে ব্র্যান্ডের পণ্যের সম্প্রসারণ, খুচরা বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ, মোড়কীকরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন, প্ৰত্যক্ষ বাজারজাতকরণ ব্যবস্থা প্রসার ইত্যাদি পদক্ষেপ গ্রামীণ বাজার পর্যন্ত বিস্তৃত হচ্ছে বিধায় লেনদেন অনেক সহজ হয়েছে। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষের ভোগের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। মানুষের রুচি ও চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে নতুন ডিজাইন ও মানের পণ্য বাজারে আসছে। রাজধানি থেকে শুরু করে ছোট শহর পর্যন্ত বিপনি বিতান গড়ে উঠায় বাণিজ্যিক কর্মকান্ডের বিস্তৃতি ঘটছে। রপ্তানি বাণিজ্যে বিদ্যমান সমস্যা মাথায় রেখে আমদানিকারকদের মনে আস্থা সৃষ্টির উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। রপ্তানিমুখি প্রতিষ্ঠানগুলোর দক্ষতা বৃদ্ধি ও বিদেশি বাণিজ্যিক মিশনগুলোকে সক্রিয় করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরিন ও বৈদেশিক বাণিজ্য ভবিষ্যতে আরও সমৃদ্ধ হবে।

Content added By