একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ১ম পত্র | NCTB BOOK

প্রচলিত ব্যবসায় আমাদের শিক্ষা দেয় কীভাবে অধিক মুনাফা অর্জন করা যায়। অর্থাৎ প্রচলিত ব্যবসায় আমাদেরকে স্বার্থপর করে তোলে। অপরদিকে সামাজিক ব্যবসায় আমাদেরকে শিক্ষা দেয় কীভাবে ব্যবসায়ের মাধ্যমে স্বল্প মুনাফায় সমাজের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করা যায়। মুনাফা অর্জনের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য, ব্যবসায় সম্প্রসারণ এবং সামাজিক সমস্যা সমাধানে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রাখায় বর্তমান বিশ্বে সামাজিক ব্যবসায় ধারণাটি ব্যপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এ ধারনাটি প্রথমে উপস্থাপন ও উন্নয়ন করেন বাংলাদেশের নোবেল বিজয়ী ডঃ মোঃ ইউনুস। তিনি ২০০৮ সালে তার প্রকাশিত বই “Creating a world without poverty social business and the future of capitalism” সর্বপ্রথম এ ধারনাটি দেন। পরবর্তিতে ২০১০ সালে তার প্রকাশিত “Building Social Business: The new kind of Capitalism that serve humanity's most pressing needs” এ এই মডেলটির বিস্তারিত আলোচনা করেন।

চিত্র: সামাজিক ব্যবসায়

সামাজিক ব্যবসায় হচ্ছে একটি কারণ ধাবিত (Cause-driven) ব্যবসায়। সামাজিক ব্যবসায় বিনিয়োগকারী ধীরে ধীরে তার বিনিয়োগকৃত মূলধন তুলে নিতে পারে। কিন্তু এর বাইরে কোনো লভ্যাংশ সে ভোগ করতে পারে না। এ ব্যবসায়ের উদ্দেশ্য হচ্ছে ব্যবসায় পরিচালনার মাধ্যমে সমাজের এক বা একাধিক সামাজিক উদ্দেশ্য অর্জন করা; এখানে বিনিয়োগকারীর কোনো ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য থাকে না। এ ব্যবসায়ের মুনাফা ব্যবহার করা হয় সামাজিক ব্যবসায় সম্প্রসারণ বা পণ্য উন্নয়নে। এ কারণেই বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো মুনাফা উত্তোলন করে না ।

পণ্যের খরচ তুলে মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি এ ব্যবসায় এক বা একাধিক সামাজিক উদ্দেশ্য যেমন—গরীবদের স্বাস্থ্যসেবা, আবাসন ব্যবস্থা, আর্থিক সেবা প্রদান, অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের পুষ্টির ব্যবস্থা করা, নিরাপদ খাবার পানি সরবরাহ, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবস্থা ইত্যাদি অর্জন করতে সহায়তা করবে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস সামাজিক ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেছেন— ইত্যাদি।

  • সামাজিক উদ্দেশ্য থাকতে হবে। যেমন: স্বাস্থ্য, শিক্ষা, দরিদ্রতা, পরিবেশ, জলবায়ু ইত্যাদি।
  • লভ্যাংশ হিসেবে বিনিয়োগকারী কোনো মুনাফা গ্রহণ করতে পারবে না ।
  • একটি ব্যবসায়কে সামাজিক ব্যবসায় হিসেবে বিবেচনা করা যাবে যদি এটির মালিকানা দরিদ্র শ্রেণির জন্য হয় এবং এটি সমাজের কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য অর্জনে নিয়োজিত থাকে ।
     

সামাজিক ব্যবসায়ের প্রকারভেদ (Types of Social Business): সামাজিক ব্যবসায় দুপ্রকার। যথা—
১. টাইপ-I: সামাজিক ব্যবসায়
২. টাইপ-II: সামাজিক ব্যবসায় ।

১. টাইপ-I: এ ধরনের সামাজিক ব্যবসায় কোনো নির্দিষ্ট সামাজিক, নৈতিক অথবা পরিবেশগত লক্ষ্য অর্জনের জন্য কোনো পণ্য সরবরাহের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। যেমন-গ্রামীণ ডানোন (Grameen Danone), গ্রামীণ শক্তি (Grameen Sokti)।

২. টাইপ-II: এ ধরনের সামাজিক ব্যবসায় মুনাফানির্ভর ব্যবসায় যেটির মালিক হবেন গরিব বা সমাজের নিম্নবিত্তরা যারা সরাসরি লভ্যাংশ ভোগ করতে পারে বা পরোক্ষভাবে সুবিধা গ্রহণ করতে পারে। যেমন: গ্রামীণ ব্যাংক সামাজিক ব্যবসায় অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসায়িক সামাজিক দায়িত্ব থেকে ভিন্ন । 

সামাজিক ব্যবসায়ের নীতিমালা (Principles of Social Business)

ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং হ্যানস রেইটজ ( Hans Reitz), সামাজিক ব্যবসায়ের ৭টি নীতিমালার কথা উল্লেখ করেছেন । সেগুলো হলো—

  • সামাজিক ব্যবসায়ের উদ্দেশ্য হবে দারিদ্রতা দূর করা, অথবা সমাজের এক বা একাধিক সমস্যা সমাধান করা । 
  • আর্থিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন
  • বিনিয়োগকারীরা শুধুমাত্র তাদের প্রাথমিক বিনিয়োগের অর্থ তুলে নিতে পারবে। বিনিয়োগের অতিরিক্ত লভ্যাংশ ভোগ করতে পারবে না ।
  • যখন কোম্পানির বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত দেয়া হবে তখন কোম্পানির যত মুনাফা হবে তা কোম্পানির উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে ব্যবহার করা হবে।
  • পরিবেশগত সচেতনতা । 
  • কর্মীরা ভালো পরিবেশে কাজের পাশাপাশি ন্যায্য মজুরি পায় ।
  • কাজ আনন্দের সাথে করা ।

 

Content added By