একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ১ম পত্র | NCTB BOOK

অংশীদারি ব্যবসায়ের বিলোপ সাধন বা পরিসমাপ্তি বলতে সকল অংশীদারগণের মধ্যে অংশীদারি সম্পর্কের অবসানকে বুঝায় এবং তার পরিণতিস্বরূপ ব্যবসায়ের বিলোপ ঘটে থাকে। অংশীদারি সম্পর্ক বিলুপ্তি হলেই ব্যবসায় বন্ধ হয়ে যাবে এমন নাও হতে পারে। কারণ অপর অংশীদারগণ ব্যবসায় বজায় রেখে ব্যবসায় চালাতে পারে। সেক্ষেত্রে একে ব্যবসায়ের পুনঃগঠন বলে ।

অংশীদারি ব্যবসায়ের বিলোপসাধনের সাথে যে বিষয়গুলো জড়িত—

ক. অংশীদারদের চুক্তিজনিত সম্পর্কের অবসান ঘটে; 

খ. প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মকান্ডের বিলুপ্তি;
গ. প্রতিষ্ঠানের সমুদয় সম্পদ ও দায়-দেনার মূল্যায়ন এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে পরিশোধ করা ।

পরিশেষে বলা যায় যে, ব্যবসায়ের বিলোপসাধনে প্রতিষ্ঠান ও অংশীদারিত্বের- উভয়েরই বিলোপসাধন হয়। কিন্তু অংশীদারির বিলোপ ঘটলে ব্যবসায়ের পরিসমাপ্তি ঘটতে পারে।
অংশীদারি ব্যবসায়ের বিলোপসাধন পদ্ধতি (Methods of Dissolution of Partnership Business)

অংশীদারি ব্যবসায়ের বিলোপ সাধন বলতে অংশীদারদের মধ্যে ব্যবসায়ের সকল সম্পর্কের সম্পূর্ণ অবসানকে বুঝায়। নিচে বর্ণিত যেকোনো পদ্ধতিতে অংশীদারি ব্যবসায়ের বিলোপ ঘটে—

চিত্র: অংশীদারি ব্যবসায়ের বিলোপ সাধন পদ্ধতি ।

১। সকলে একমত হয়ে বিলোপ সাধন (Dissolution by mutual agreement): অংশীদারগণ একমত হয়ে কারবার বিলোপসাধনের সিদ্ধান্ত নিলে যেকোনো সময় বা সকলের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির শর্তানুসারে নির্দিষ্ট সময় শেষে কারবারের বিলুপ্তি ঘটানো যায় (ধারা ৪০)।

২। বিজ্ঞপ্তি দ্বারা বিলোপসাধন (Dissolution by notice): ঐচ্ছিক অংশীদারি কারবারের ক্ষেত্রে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অংশীদারি কারবারের বিলোপসাধন ঘটে থাকে। অর্থাৎ যেকোনো একজন অংশীদারি স্বেচ্ছায় বিজ্ঞপ্তি প্রদানের দ্বারা এ জাতীয় কারবার বিলোপ করতে পারে। কারবার বিলোপ সাধনের যে তারিখ উক্ত বিজ্ঞপ্তিতে লেখা থাকে সেই তারিখ থেকে কারবারের বিলোপ সাধন কার্যকর হয়ে থাকে। যদি তারিখের উল্লেখ না থাকে তবে যে তারিখে অংশীদারগণ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে অবহিত হন সে তারিখ থেকেই কারবারের বিলুপ্তি ঘটেছে ধরে নেয়া হয় । [ধারা ৪৩ (১) ও (২)]

৩। বিশেষ কোনো ঘটনার জন্য বিলোপ সাধন (Dissolution on the happening of some contingencies): ১৯৩২ সালের অংশীদারি আইনের ৪২ ধারা অনুসারে নিলিখিত বিশেষ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অংশীদারি কারবারের বিলুপ্তি ঘটে থাকে—
i. অংশীদারগণ একমত হয়ে (By consensus of partners ): সকল অংশীদার স্বেচ্ছায় একমত হয়ে অংশীদারি কারবার গুটিয়ে ফেলতে পারে। 

ii. নির্দিষ্ট সময় সমাপনান্তে (After the end of fixed time) : কোনো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অংশীদারি কারবারের চুক্তি হয়ে থাকলে উক্ত সময় উত্তীর্ণ হবার সাথে সাথে কারবার প্রতিষ্ঠানটির বিলোপ সাধন ঘটে ।
iii. অংশীদার উন্মাদ বা পাগল হলে (If a partner becomes lunatic) : কোনো অংশীদারের মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটলে কারবারটি ভেঙ্গে যেতে পারে ।
iv. অংশীদারের মৃত্যুর কারণে (On the death of partner): যেকোনো অংশীদারের মৃত্যুর কারণে এ জাতীয় কারবার ভেঙ্গে যেতে পারে ।
v. উদ্দেশ্য অর্জনের পর (After the achievement of the objective): কোনো নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে কারবার স্থাপিত হলে ঐ উদ্দেশ্য হাসিলের পর কারবারটি বিলুপ্তির প্রশ্ন উঠে।
vi. কোনো অংশীদার অবসর গ্রহণ করলে (On the retirement of a partner): কারবারের যেকোনো অংশীদার যদি অবসর গ্রহণের নিমিত্তে আবেদন পেশ করে তবে আংশীদারি কারবারের বিলোপ সাধিত হয় ।
vii. আদালত কর্তৃক দেউলিয়া ঘোষিত হলে (If a partner is declared insolvent by the court): যদি কোনো অংশীদার বিশেষ কোনো কারণে আদালত মারফত দেউলিয়া ঘোষিত হয় তাহলে উক্ত কারবারের বিলুপ্তি ঘটে।

৪। বাধ্যতামূলক বিলোপ সাধন (Compulsory dissolution ) : নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে অংশীদারি কারবারের বাধ্যতামূলক অবসায়ন হয়ে থাকে— 

i. দেউলিয়াত্ব (Insolvency): সকল অংশীদার বা একজন ব্যতীত সকল অংশীদার আদালত কর্তৃক দেউলিয়া ঘোষিত হলে অংশীদারি কারবারের অবসান হবে।
ii. আইনের পরিপন্থী হলে (Illegality): অংশীদারি কারবার পরিচালনায় যদি কোনো অবৈধ ঘটনা ঘটে যায় এবং তাতে প্রতিষ্ঠানের কার্যকলাপ আইন বিরোধী বলে আখ্যায়িত হয় তাহলে কারবারের বিলোপ সাধন ঘটবে। (৪১ ধারা)।

৫। আদালতের নির্দেশ অনুসারে বিলোপ সাধন (Dissolution by the court )

১৯৩২ সালের অংশীদারি আইনের ৪৪ ধারা মোতাবেক কোনো অংশীদার এক বা তদুর্ধ অংশীদারের বিরুদ্ধে কোনো মোকাদ্দমা দায়ের করলে আদালত নিরে যেকোনো অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কারবার বিলোপ সাধনের নির্দেশ দিতে পারে—
i. কোনো অংশীদার উন্মাদ বা পাগল হলে;
ii.কোনো অংশীদার ইচ্ছাকৃতভাবে অংশীদারি কারবারের চুক্তি ক্রমাগত ভঙ্গ করলে;
iii. কোনো অংশীদার দেউলিয়া বলে প্রমাণিত হলে; 

iv. কোনো অংশীদার তার অপরাধের জন্য দন্ড বা সাজাপ্রাপ্ত হয়ে থাকলে;
v. কোনো অংশীদার তৃতীয় পক্ষের নিকট বে-আইনীভাবে তার আংশিক বা সম্পূর্ণ স্বত্ব হস্তান্তর করে থাকলে;
vi. আদালত যদি এ মর্মে নিশ্চিত হয়ে থাকে যে, ক্রমাগতভাবে কারবারের শুধুই লোকসান হচ্ছে;
vii. এছাড়া যেকোনো কারণে আদালত যদি মনে করে যে, কারবার প্রতিষ্ঠানটির বিলোপ সাধনই হচ্ছে যথার্থ হবে; তবে অংশীদারি কারবারের বিলোপ সাধন ঘটবে। (ধারা-৪২ )

Content added By