পঞ্চম শ্রেণি (ইবতেদায়ী) - বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় - NCTB BOOK

মোঘল আমলে পর্তুগিজ, ডাচ, ইংরেজ, ফরাসি বিভিন্ন ইউরোপীয় বণিকগোষ্ঠী ব্যবসায় করতে ভারতীয় উপমহাদেশে আসে। ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতায় নেব পর্যন্ত ইংরেজরা টিকে থাকে। ভারত এবং ব্রিটেনের মধ্যে বাণিজ্য পরিচালনার জন্য ১৬০০ সালে ভারা ব্রিটিশ ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে।

বাংলার সম্পদের জন্য এই অঞ্চলের প্রতি ইংরেজদের আগ্রহ ছিল। বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব ছিলেন সিরাজ-উদ-দৌলা। তিনি ১৭৫৬ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে বাংলার নবাব হন। তরুণ নবাবের সাথে তাঁর পরিবারের কিছু সদস্যের, বিশেষ করে খালা ঘষেটি বেগমের সম্পর্ক খুব খারাপ ছিল। এছাড়া রায়দুর্লভ এবং জগৎশেঠের মতো বণিকদের বিরোধিতা ও ষড়যন্ত্রের শিকার হন তিনি।

এই বণিকেরা অবশেষে ১৭৫৭ সালের ২৩শে জুন পলাশির যুদ্ধে নবাবের বিরুদ্ধে ইংরেজদের পক্ষে যোগ দেন। সৈন্যবাহিনীর প্রধান মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে নবাব পরাজিত হন। পরে নবাবকে হত্যা করা হয়। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে বাংলায় ১৭৫৭ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত প্রায় দুইশত বছরের ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।

 

ক. এসো বলি

শিক্ষকের সহায়তায় আলোচনা কর : 

১. ইংরেজরা কেন ভারতে এসেছিল? 

২. বাংলার প্রতি ইংরেজদের কেন আগ্রহ ছিল?

৩. ১৭৫৭-১৯৪৭ সাল পর্যন্ত কারা বাংলা শাসন করে? 

৪. নবাবের বিরুদ্ধে কারা ষড়যন্ত্র করে? 

৫. নবাব কেন যুদ্ধে পরাজিত হয়েছিলেন? 

৬. পলাশির যুদ্ধের পরে কী হয়েছিল?

 

খ. এসো লিখি

নবাব তিনটি পক্ষ থেকে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলেন। পাশের চিত্রে পক্ষগুলোর নাম উল্লেখ করা হলো। কোন পক্ষে কারা এবং কেন নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল তা লেখ।

গ. আরও কিছু  করি

মোঘলরা বাংলাকে বলত 'যেকোনো জাতির স্বর্গ’। মোঘল আমলের বাংলার শাসকদের সম্পর্কে আরও তথ্য খুঁজে বের কর।

 

ঘ. যাচাই করি

সঠিক উত্তরের পাশে টিক (টিক) চিহ্ন দাও।

পলাশির যুদ্ধ কৰে সংঘটিত হয়েছিল?

ক. ১৮৫৭         খ. ১৯৪৭        গ. ১৯১৪        ঘ. ১৭৫৭

 

Content added By

১৭৫৭ থেকে ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত একশ বছর এদেশে ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন চলে। ইতিহাসে যা কোম্পানির শাসন নামে পরিচিত। কোম্পানির প্রথম শাসনকর্তা ছিলেন রবার্ট ক্লাইভ। প্রায় একশ বছর পরে ১৮৫৭ সালে কোম্পানির নীতি ও শোষণের বিরুদ্ধে সিপাহিদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয় এবং বিদ্রোহ করে। ইংরেজরা এই বিদ্রোহ দমন করলেও শাসন ব্যবস্থা আগের মতো চালাতে পারেনি। কোম্পানির শাসন রদ করে ১৮৫৮ সালে বাংলাসহ সমগ্র ভারতের শাসনভার ব্রিটিশ রানি সরাসরি নিজ হাতে তুলে নেয় যা চলে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত।

ব্রিটিশ শাসনের কিছু খারাপ দিক :

• 'ভাগ কর শাসন কর' নীতির ফলে এদেশের মানুষের মধ্যে জাতি, ধর্ম, বর্ণ এবং অঞ্চলভেদে বিভেদ সৃষ্টি হয় ।

• অনেক কারিগর বেকার ও অনেক কৃষক গরিব হয়ে যায় এবং বাংলায় দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। এই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ বাংলা ১১৭৬ সালে (ইংরেজি ১৭৭০) হয়েছিল যা ছিয়াত্তরের মাঝার' নামে পরিচিত।

• অল্পসংখ্যক জমিদার অনেক জমির মালিক হন এবং বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ পরিব হয়ে যায়।

ব্রিটিশ শাসনের কিছু ভালো দিক :

• নতুন নতুন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার ফলে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি হয়। • সড়কপথ ও রেলপথ উন্নয়ন এবং টেলিগ্রাফ প্রচলনের ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থার বিশেষ উন্নতি হয়।

• শিক্ষা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে উনিশ শতকে বাংলায় নবজাগরণ ঘটে। এসময় সামাজিক সংস্কারসহ শিক্ষা, সাহিত্য ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের ব্যাপক প্রসার ঘটে।

১৮১৬ সালে কলকাতার প্রতিষ্ঠিত 'হিন্দু কলেজ'

 

ক. এসো বলি

বাংলার ইতিহাসে এই ব্যক্তিদের ভূমিকা শিক্ষকের সহায়তার আলোচনা কর :

• মীর জাফর 

• মীর কাশিম 

• রবার্ট ক্লাইভ 

• রাজা রামমোহন রায়

 

খ. এসো লিখি

ব্রিটিশদের 'ভাগ কর শাসন কর' নীতির ফলে কী হয়েছিল?

 

গ. আরও কিছু করি

এই চারজন বাংলার নবজাগরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। তাঁদের প্রত্যেকের অবদান সম্পর্কে তথ্য খুঁজে বের কর।

 

ঘ. যাচাই করি

উপযুক্ত শব্দ দিয়ে শুন্যস্থান পুরণ কর :

ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলাকে…………………..….সাল থেকে……………………..সাল পর্যন্ত …………………...বছর শাসন করে।

Content added || updated By

আঠারো শতকের শেষভাগ থেকে উনিশ শতক জুড়ে ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে অনেকবার বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। এমনই একটি আন্দোলনে বিদ্রোহী নেতা তিতুমির ইংরেজ বাহিনীকে প্রতিহত করার জন্য বারাসাতের কাছে নারকেলবাড়িয়া গ্রামে একটি বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করেন। ১৮৩১ সালে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে এক যুদ্ধে তিতুমির পরাজিত ও নিহত হন।

তিতুমিরের বাঁশের কেল্লা

১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহের পুরুত্ব অপরিসীম। পশ্চিম বাংলার : ব্যারাকপুরে মঙ্গল পাণ্ডের নেতৃত্বে এ বিদ্রোহ শুরু হয়ে সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়ে।

মঙ্গল পাণ্ডে

 

সিপাহি বিদ্রোহের কিছু কারণ :

* সেনাবাহিনীতে সিপাহি পদে ভারতীয়দের সংখ্যাধিক্য ছিল। সেখানে পঞ্চাশ হাজার ব্রিটিশ এবং তিন লক্ষ ভারতীয় সিপাহি ছিল।

* ভারতের বিভিন্ন এলাকার সৈন্যদের মধ্যে সামাজিক বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়।

* ১৮৫৬ সালের পর ভারতের বাইরেও সৈন্যদের কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

* কামান ও বন্দুকের কার্তুজ পিচ্ছিল করার জন্য পর এবং শুকরের চর্বি ব্যবহারের গুজব নিয়ে ধর্মীয় অশান্তি তৈরি করা হয়।

* সৈন্যদের আন্দোলনকে সমর্থন জানানোর জন্য সাধারণ মানুষ প্রস্তুত ছিলেন। এই আন্দোলন দ্রুতই সৈন্যদের থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। ব্রিটিশ সরকার কঠোর হাতে এ বিদ্রোহ দমন করে। এ বিদ্রোহে প্রায় এক লক্ষ ভারতীয় মারা যায়।

পরবর্তীতে ভারতের শাসনভার ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছ থেকে মহারানি ভিক্টোরিয়ার হাতে চলে যায়। তিনি স্বাধীনভাবে ভারত শাসন করতে থাকেন।

 

ক. এসো বলি

শিক্ষকের সহায়তায় ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহের কারণগুলো আলোচনা কর। প্রতিটি কারণ কেন গুরুত্বপূর্ণ ছিল?

 

খ. এসো শিখি

সিপাহি বিদ্রোহের কারণগুলো গুরুত্ব অনুসারে সাচ্ছিরে লেখ :

১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের কারণ
১.
২.
৩.
৪.
৫.

 

গ. আরও কিছু করি

ঢাকার বাহাদুর শাহ্ পার্কে ১৮৫৭ সালে বিদ্রোহী বাঙালি সিপাহিদের ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। এখানে একটি স্মৃতিসৌধ আছে। এই পার্ক সম্পর্কে আরও তথ্য সংগ্রহ কর।

বাহাদুর শাহ্ কে ছিলেন? উনিশ শতকে এই পার্কের নাম 'ভিক্টোরিয়া পার্ক' রাখা হয় কেন?

১৯৫৭ সালে নির্মিত সিপাহি বিদ্রেোহের স্মৃতিসৌধ, বাহাদুর শাহ্ পার্ক, ঢাকা

ঘ. যাচাই করি

অল্প কথার উত্তর দাও :

১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের ফলাফল কী ছিল?

Content added || updated By

বিশ শতক পর্যন্ত ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলতে থাকে। শিক্ষা প্রসার এবং নবজাগরণের ফলে দেশপ্রেমের চেতনা বিস্তার লাভ করে। ১৮৮৫ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস' নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠিত হয়। ব্রিটিশরা অরতীয় জাতীয় চেতনার প্রসারে ভীত হয়ে পড়ে এবং ১৯০৫ সালে বাংলা প্রদেশকে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নেয়, একে বঙ্গভঙ্গ বলে। আসামকে অন্তর্ভুক্ত করে পূর্ববাংলা অঞ্চল গঠিত হয়। কিন্তু এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হলে ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয় অর্থাৎ দুই বাংলাকে একত্রিত করে দেওয়া হয়।

রাজনৈতিক আন্দোলনের পরবর্তী ধাপ ছিল ১৯০৬ সালে ভারতীয় মুসলিম লীগ নামে রাজনৈতিক দল গঠন। ভারতের বড় আন্দোলনগুলোর মধ্যে ছিল স্বরাজ আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন এবং সশস্ত্র যুব বিদ্রোহ। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে ক্ষুদিরাম বসু, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এবং মাস্টারদা সূর্যসেনের আত্মত্যাগ ও সাহসিকতা চিরস্মরণীর। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ভারতের অনেক সাহসী তরুপ ব্রিটিশদের পক্ষে অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু তাই বলে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেমে থাকেনি, স্বাধীনতার জন্য ভারতীয়দের আন্দোলন চলতে থাকে।

রাজনৈতিক আন্দোলনের তৃতীয় ধাপে নেতৃত্ব দিয়েছেন নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু এবং শের-ই-বাংলা এ. কে. ফজলুল হক। এসময়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও শরচ্চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ লেখকের কবিতা, গান ও লেখার মধ্য দিয়ে বাঙালির স্বাধিকার চেতনা আরও বেগবান হয়। নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া এসময় নারীশিক্ষা প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। অবশেষে ১৯৪৭ সালে ইংরেজরা ভারত ভাগ করতে বাধ্য হয় এবং পাকিস্তান ও ভারত নামে দুইটি আলাদা রাষ্ট্রের জন্ম হয়।

 

ক. এসো বলি

কবি সাহিত্যিকগণ কীভাবে রাজনৈতিক আন্দোলনে ভূমিকা রাখতে পারেন, শিক্ষকের সহায়তায় আলোচনা কর।

 

খ. এসো লিখি

পাশের পৃষ্ঠা থেকে বিশ শতকে বাংলায় যেসব প্রতিরোধ আন্দোলন হয়েছে, সেগুলোর একটি ঘটনাপঞ্জি তৈরি কর।

 

গ. আরও কিছু করি

বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম এবং বেগম রোকেয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তাঁদের সম্পর্কে আরও তথ্য খুঁজে বের কর ।

 

ঘ. যাচাই করি

সঠিক উত্তরের পাশে টিক চিহ্ন দাও।

নিচের কোনটি বাংলার নবজাগরণের সাথে সম্পর্কিত?

ক. নতুন ভবন        . খ. শিল্প সাহিত্য        গ. জন্মহার         ঘ. সিপাহি বিদ্ৰোহ

Content added By