On This Page
ষষ্ঠ শ্রেণি (দাখিল) - বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ - NCTB BOOK

এই অধ্যায় শেষে শিক্ষার্থীরা নিচের বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পারবেন—

  • আলর রং 
  • প্রতিফলন প্রতিসরণ ও শোষণ
  •  কীভাবে দেখি এবং রং এর ধরন 

 

সাধারণভাবে আমরা বলতে পারি, আমরা চোখে যেটা দেখি সেটা হচ্ছে আলো। তবে সেটা পুরোপুরি বৈজ্ঞানিক একটা কথা হলো না কারণ চোখে আমরা মানুষ, গাছপালা, আকাশ, মেঘ অনেক কিছু দেখি- সেগুলো কি আলো? না, সেগুলো আলো না কিন্তু সেগুলোতে আলো পড়ে বলে সেখান থেকে আলো যখন আমাদের চোখে এসে পড়ে তখন আমরা সেগুলোকে দেখি। যদি অন্ধকার হয়ে যায় কিংবা যখন আমরা চোখ বন্ধ করে কোনো আলোকে চোখে আসতে না দিই, তাহলে আমরা কিছুই দেখিনা।

তোমরা কি কখনো চিন্তা করে দেখেছ একটা জবা ফুলকে কেন আমরা লাল দেখি আর জবা ফুলের পাতাকে কেন সবুজ দেখি? সেটি যদি বুঝতে চাও তাহলে আলো সম্পর্কে আমাদের আরও একটু জানতে হবে।

কাজেই তোমরা বুঝতে পারছ কোনো কিছুর রং কালো হওয়ার অর্থ সেখানে সব রং শোষিত হয়ে যায়। ঠিক সেরকম কোনো কিছুর রং সাদা হওয়ার অর্থ, সেখানে কোনো রং শোষিত হয় না। একটা কালো কাপড় আরেকটা সাদা কাপড় রোদে শুকাতে দিলে তুমি দেখবে কালো কাপড়টা অনেক তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায় কারণ কালো রং হওয়ার কারণে সেটি আলোর সব রং শোষণ করে রাখে বলে সেটা বেশি পরম হয়ে বেশি তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যেতে পারে।

একটু আগে তোমাদের বলা হয়েছে সাদা আলোর রংগুলো যদি ভাগ করা হয় তাহলে সেখান থেকে রংগুলো যথাক্রমে বেগুনি নীল আসমানি সবুজ হলুদ কমলা লাল এই ভাবে ভাগ হয়:

এবারে একটা বিচিত্র প্রশ্ন করা যাক, বেগুনির আগে কি কোনো রং আছে? আবার লালের পর কি কোনো রং আছে? সত্যি কথা বলতে কি বেগুনির আগের রংটির নাম অতিবেগুনি এবং লালের পরের রংটি হচ্ছে অবলাল। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমরা সেই রংগুলো দেখতে পাই না। পোকামাকড় অতিবেগুনি রং খানিকটা দেখতে পায়, তাই দেখা যায়, পোকামাকড় ধরার জন্য অনেক সময় অতিবেগুনি ধরনের আলো ব্যবহার করা হয়। অবলাল রংটি টেলিভিশনের রিমোট কন্ট্রোলেও ব্যবহৃত হয়। তোমার চোখে সেই রং দেখতে না পেলেও স্মার্টফোনের ক্যামেরা সেই রং দেখতে পারে, তাই তোমরা ইচ্ছা করলে একটা স্মার্টফোনের ক্যামেরার সামনে রিমোট কন্ট্রোল চেপে ধরে সেই আলোকে দেখতে পারো।

আলো কিন্তু একদিকে অতিবেগুনি রশ্মি অন্যদিকে অবলাল হয়েও শেষ হয়ে যায় না সেটি আরও বহুদূর বিস্তৃত হয়; তোমরা উপরের ক্লাসে সেগুলো জানতে পারবে।

 

প্রতিফলন, প্রতিসরণ ও শোষণ

তুমি যদি জানালা দিয়ে ঘরের ভেতর আসা সূর্যের আলোতে একটা গ্লাসে পানি কানায় কানায় ভর্তি করে। রেখে দাও, তাহলে তোমরা দেখতে পারে পানির পৃষ্ঠদেশ থেকে সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়ে ঘরের ছাদে এসে পড়েছে। ভালো করে লক্ষ করলে দেখবে সূর্যের আলো প্রতিসরিত হয়ে পানির ভেতর দিয়ে গ্লাসের ভেতরে ঢুকে গেছে। শুধু তাই না তুমি যদি গ্লাসের পানিটা দীর্ঘ সময় রোদে রেখে দাও, তাহলে দেখবে পানিটা একটুখানি গরম হয়েছে, যার অর্থ সূর্যের আলো খানিকটা শোষিত হয়েছে।

মুদ্রাটা এবং তোমার চোখে এক সরলরেখায় আছে। এবারে তুমি তোমার মাথাটা ধীরে ধীরে পিছিয়ে নিতে থাক যেন মুদ্রাটা আর দেখা না যায়। এবারে কাপটাতে পানি ঢালতে থাকো, দেখলে মনে হবে। মুদ্রাটা উপরে উঠে এসেছে এবং তুমি আবার সেটাকে দেখতে পাচ্ছ। আসলে মুদ্রাটা মুদ্রার জায়গাতেই আছে, আলোটাই বাঁকা হয়ে চোখে আসছে বলে আমরা সেটাকে দেখতে পাচ্ছি।

প্রতিসরণ ব্যবহার করেও আমরা অনেক কাজ করে থাকি। বাতাস থেকে কাচের ভেতর যাওয়ার সময় আলোর বেঁকে যাওয়ার ধর্ম ব্যবহার করে লেন্স তৈরি করা হয়। সেই লেন্স দিয়ে চোখের চশমা থেকে শুরু করে ক্যামেরা, দুরবিন, অণুবীক্ষণ যন্ত্র এরকম নানা ধরনের ব্যবহারিক যন্ত্রপাতি তৈরি করা হয়।

 

কীভাবে দেখি এবং বংয়ের ধরন

তোমরা তোমাদের বই থেকে শুরু করে টেলিভিশন, স্মার্টফোন, ল্যাপটপ এরকম অনেক জায়গায় নানা ধরনের রং দেখে অভ্যস্ত। তোমাদের মনে হতে পারে এই রংগুলো তৈরি করার জন্য বুঝি সবগুলো রং ব্যবহার করতে হয়। আসলে সেটা সত্যি নয়, আমাদের চোখ মাত্র তিনটি রং দিয়ে সব রং দেখতে পারে। বিষয়টি পরীক্ষা করার জন্য একটা স্মার্ট ফোনের স্ক্রিনে খুব সাবধানে ভিজে আঙুল ঝাঁকুনি দিয়ে খুবই সূক্ষ্ম একটা পানির বিন্দু রাখো তখন সেই পানির ফোঁটাটি কনভেক্স লেন্স হিসেবে কাজ করবে। তুমি দেখবে লাল, সবুজ এবং নীল, মাত্র এই তিনটি রং দিয়ে স্মার্টফোনের স্ক্রিনে সব রং তৈরি করা হয়।

রঙিন আলো যখন চোখে এসে পড়ে তখন আমাদের চোখের রেটিনাতে এই লাল, নীল এবং সবুজ রংয়ের সংবেদী কোষগুলো নির্দিষ্ট রংয়ের অনুভূতি তৈরি করে এবং ভিন্ন ভিন্ন রংয়ের সংমিশ্রণে আমরা ভিন্ন ভিন্ন রংগুলো দেখতে পাই। কোন কোন রংয়ের সংমিশ্রণে কোন কোন রং তৈরি হয়, সেটা বাম দিকের ছবিতে দেখানো হয়েছে। দেখতেই পাচ্ছ সমান পরিমাণ লাল, নীল এবং সবুজ রং দিয়ে সাদা রং তৈরি হয়।

এখানে তোমাদের অন্য একটা বিষয় মনে করিয়ে দেওয়া যায়, তুমি যদি একটা কাগজে রংতুলি দিয়ে লাল নীল সবুজ রং মিশাও তুমি কিন্তু বাম দিকের ছবিতে দেখানো রংগুলো পারে না, ভিন্ন কিছু রং পারে, সেই রংগুলোও ডান দিকের ছবিতে দেখানো হয়েছে। তোমরা যারা ছবি আঁকো তারা নিজেরাই নিশ্চয়ই লক্ষ করেছ হলুদ লাল এবং নীল রং দিয়ে অন্য সব রং তৈরি করে ফেলা যায়।।।

স্মার্ট ফোন, টেলিভিশন কিংবা কম্পিউটারের স্ক্রিন থেকে আমাদের চোখের মধ্যে একই সঙ্গে লাল, नौन এবং সবুজ আলোর সংমিশ্রণ এসে পড়ে এবং চোখ তার জন্য নির্দিষ্ট রংবোর অনুভূতি তৈরি করে।। কাগজে রং মেশানোর সময় একটি রংয়ের কণার ওপর অন্য একটি রংয়ের কণা চলে আসার কারণে উপরের কণাটি নিচের কণার রং শোষণ করে, এবং যে রংটি শোষিত হয় না, শুধু সেটি বের হয়ে আসে। তখন তোমার চোখে লাল, নীল আর সবুজ রংয়ের মিশ্রণ এসে পড়ে না, শোষিত না হওয়া প্রকৃত রংটিই এসে পড়ে এবং তুমি সেই রংটিই দেখো।

 

অনুশীলনী 

১। রংধনু কেন বৃত্তাকার হয়?

২। ভর দুপুরে কেন কখনো রংধনু দেখা যায় না?

 

Content added By

Promotion