অষ্টম শ্রেণি (দাখিল) - বিজ্ঞান - পরমাণুর গঠন | NCTB BOOK

মৌলিক পদার্থের ধর্ম মূলত তাদের পরমাণুর ইলেকট্রন বিন্যাসের উপর নির্ভর করে। এ ইলেকট্রন বিন্যাসের ভিন্নতার কারণে সাধারণত মৌলগুলো কখনো নিষ্ক্রিয়, কখনো সক্রিয় বা আধান যুক্ত হয়।

১টি পরমাণুর সর্বশেষ কক্ষপথে যে কয়টি ইলেকট্রন থাকতে পারে, ঠিক সেই কয়টি যদি থাকে তাহলে কক্ষপথটি পূর্ণ থাকে। এরকম পরমাণুগুলো বেশ নিষ্ক্রিয় হয়। যেমন হিলিয়াম পরমাণুতে ২টি ইলেকট্রন থাকে। প্রথম কক্ষপথে যেহেতু সর্বোচ্চ ২টি ইলেকট্রন থাকতে পারে, সেহেতু হিলিয়াম পরমাণু বেশ স্থিতিশীল বা নিষ্ক্রিয়। প্রতিটি পরমাণুই এরকম স্থিতিশীল অবস্থায় থাকতে চায় ৷

১টি পরমাণুর শেষ কক্ষপথে বা শক্তিস্তরে যদি প্রয়োজনের চেয়ে বেশি বা কম ইলেকট্রন থাকে তাহলে কী হবে? ঐ পরমাণু অন্য পরমাণু থেকে ইলেকট্রন গ্রহণ করে বা অন্য পরমাণুকে ইলেকট্রন দিয়ে বা অন্য পরমাণুর সাথে ভাগাভাগি করে স্থিতিশীল বা পূর্ণ অবস্থায় আসতে চায়। যেমন সোডিয়াম পরমাণুর প্রথম শক্তিস্তরে ২টি, দ্বিতীয় শক্তিস্তরে ৮টি এবং তৃতীয় শক্তিস্তরে ১টি ইলেকট্রন থাকে। এটি কি স্থিতিশীল অবস্থা? নিশ্চয়ই না। তৃতীয় শক্তিস্তরে মাত্র ১টি ইলেকট্রন থাকায় এটি স্থিতিশীল নয়। কীভাবে এটি স্থিতিশীলতা অর্জন করতে পারে? সোডিয়াম পরমাণু যদি ১টি ইলেকট্রন অন্য কোনো পরমাণুকে দিয়ে দিতে পারে তাহলে সোডিয়াম পরমাণুতে প্রথম শক্তিস্তরে ২টি এবং দ্বিতীয় শক্তিস্তরে ৮টি ইলেকট্রন থাকে। এটি একটি স্থিতিশীল অবস্থা। তবে ১টি ইলেকট্রন বর্জন করে বা হারিয়ে নিজে কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে যায়। তোমরা জানো পরমাণু আধান নিরপেক্ষ। কিন্তু সোডিয়াম পরমাণু ১টি ইলেকট্রন হারিয়ে কি আধান নিরপেক্ষ থাকে? না থাকে না।

১টি ইলেকট্রন হারানোর পর সোডিয়াম পরমাণু আর আধান নিরপেক্ষ নেই, আধানযুক্ত হয়েছে। এরকম আধানযুক্ত পরমাণুকে বলে আয়ন। যে আয়নে ধনাত্মক আধান আছে তাকে ক্যাটায়ন বলে। তাহলে সোডিয়াম পরমাণু ১টি ইলেকট্রন হারানোর পর ক্যাটায়নে পরিণত হয়েছে।
এবার আরেকটি উদাহরণ দেখা যাক। ফ্লোরিন পরমাণুর ইলেকট্রন বিন্যাস ২,৭। এটি কি স্থিতিশীল অবস্থা? নিশ্চয়ই না। কারণ দ্বিতীয় শক্তিস্তরে ৮টি ইলেকট্রন নেই। তাহলে স্থিতিশীল অবস্থায় যেতে চাইলে ফ্লোরিন পরমাণুকে কী করতে হবে? এটি কি সোডিয়াম পরমাণুর মতো ইলেকট্রন অন্যকে দিয়ে দেবে? না, ৭টি ইলেকট্রন দেওয়া বেশ কঠিন। বরং ফ্লোরিন পরমাণু যদি ১টি ইলেকট্রন কারো কাছ থেকে নিতে পারে তাহলে এটি স্থিতিশীল হতে পারে কারণ তখন এটির দ্বিতীয় শক্তিস্তরে ৮টি ইলেকট্রন থাকবে। দেখা যাক, ১টি ইলেকট্রন যদি কারো কাছ থেকে পায় (ধরা যাক সোডিয়াম পরমাণু থেকে) তাহলে এটি আধান নিরপেক্ষ থাকে না, আধানযুক্ত হয়ে যায় ৷

ফ্লোরিন পরমাণু ১টি ইলেকট্রন গ্রহণ করার পর ঋণাত্মক আধান যুক্ত হয়েছে। অর্থাৎ ঋণাত্মক আয়নে পরিণত হয়েছে। এরকম ঋণাত্মক আধানযুক্ত পরমাণুকে অ্যানায়ন বলে।

ইলেকট্রন গ্রহণ বা বর্জনের মাধ্যমে পরমাণু আয়নে পরিণত হয়। ২টি পরমাণুর মধ্যে যেটি ইলেকট্রন বর্জন করে সেটি ক্যাটায়নে বা ধনাত্মক আয়নে এবং যেটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে সেটি ঋণাত্মক আয়নে বা অ্যানায়নে পরিণত হয়। ফলে তাদের মধ্যে একটি আকর্ষণ বল কাজ করে এবং তারা একে অন্যের সাথে বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এভাবে ২টি ভিন্ন মৌলের পরমাণু থেকে যৌগ তৈরি হয়। এ সম্পর্কে তোমরা পরবর্তীকালে আরও জানবে।

এ অধ্যায় পাঠ শেষে যা শিখলাম-

- পরমাণু অবিভাজ্য নয়। পরমাণু ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রনের সমন্বয়ে গঠিত।

- পরমাণুর কেন্দ্রে রয়েছে নিউক্লিয়াস। নিউক্লিয়াসে ধনাত্মক আধান বিশিষ্ট প্রোটন ও আধান নিরপেক্ষ নিউট্রন রয়েছে। পরমাণুর ভরের প্রায় পুরোটাই নিউক্লিয়াসে থাকে।

- প্রথম কক্ষপথে সর্বোচ্চ ২টি, দ্বিতীয় কক্ষপথে সর্বোচ্চ ৮টি এবং তৃতীয় কক্ষপথে সর্বোচ্চ ১৮টি ইলেকট্রন থাকতে পারে। কক্ষপথগুলোকে শক্তিস্তর বলা হয়।

- সর্বশেষ কক্ষপথে যে কয়টি ইলেকট্রন থাকতে পারে, ঠিক সেই কয়টি ইলেকট্রন যদি ঐ শক্তিস্তরে থাকে তাহলে সেই কক্ষপথ পূর্ণ থাকে। এরকম পরমাণুগুলো বেশ নিষ্ক্রিয় হয়।

- ইলেকট্রন গ্রহণ বা বর্জনের মাধ্যমে পরমাণু স্থিতিশীলতা অর্জন করে এবং আয়নে পরিণত হয়।

Content added || updated By