অষ্টম শ্রেণি (দাখিল) - গার্হস্থ্য বিজ্ঞান - গৃহ ব্যবস্থাপনা ও গৃহ সম্পদ | NCTB BOOK

পাঠ ১- রোগীর কক্ষের সাজসরঞ্জাম ও পরিচ্ছন্নতা

স্বাভাবিক জীবনযাপনের মধ্যে কখনো কখনো আমরা নানারকম রোগে আক্রান্ত হই। বেশিরভাগ রোগে আমরা
চিকিৎসার পাশাপাশি গৃহে যথাযথ শুশ্রুষার মাধ্যমে আরোগ্য লাভ করি। সাধারণ সর্দি, কাশি, জ্বর থেকে শুরু
করে বিভিন্নরকম সংক্রামক রোগ যেমন- হাম, বসন্ত ইত্যাদি রোগেও আমরা আক্রান্ত হই। পরিবারের যে কোনো
সদস্য রোগাক্রান্ত হলে, তার বিশেষভাবে যত্ন নেওয়া দরকার। অসুস্থ ব্যক্তির শারীরিক দুর্বলতার কারণে
যথাযথ যত্নের দরকার হয়। তাকে আরাম ও বিশ্রাম দেওয়ার জন্য কোলাহলমুক্ত, সাস্থ্যকর পরিবেশে রাখা
দরকার। আর সে কারণেই রোগীর জন্য আলোবাতাস পূর্ণ, যাস্থ্যসম্মত একটা কক্ষের প্রয়োজন হয়। রোগীকে
নির্দিষ্ট কক্ষে রেখে তার উপযুক্ত শুষা করতে পারলে, যে কোনো রোগ থেকেই সে সহজে এবং তাড়াতাড়ি
নিরাময় পেতে পারে।

রোগীর কক্ষের সাজসরঞ্জাম

রোগীর কক্ষটি খোলামেলা ও ছিমছাম হলে যাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করা যায়। প্রয়োজনের অতিরিক্ত
আসবাব ও সাজসরঞ্জাম রোগীর কক্ষে রাখা উচিত না। শুধুমাত্র রোগীর উপযুক্ত পরিচর্যার জন্য একান্ত
প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নির্দিষ্ট স্থানে গুছিয়ে রাখতে হয়, যাতে সহজেই হাতের কাছে পাওয়া যায়। রোগীর
কক্ষের প্রয়োজনীয় সাজসরঞ্জাম হলো-

-ক্লিনিক্যাল থার্মোমিটার

-ঔষধ মাপার কাপ ও চামচ

-ফিডিং কাপ, গ্লাস, প্লেট, জগ

-বেডপ্যান, ইউরিন্যাল

-গরম ও ঠাণ্ডা পানির ব্যাগ

-সেকেন্ডের কাঁটাযুক্ত ঘড়ি, কলিং বেল, টর্চলাইট

-রুম হিটার ও ওয়াটার হিটার

-প্রাথমিক চিকিৎসার বাক্স

-বালতি, মগ ইত্যাদি।

রোগীর কক্ষের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা

রোগীর কক্ষের ব্যবস্থাপনার মধ্যে প্রথমে কক্ষের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। কক্ষের
আসবাবপত্র, রোগীর পোশাক-পরিচ্ছদ, বিছানা, বালিশ, চাদর সবকিছুই পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত রাখা দরকার ।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে থাকলে সহজে রোগ নিরাময় হয়। অন্যদিকে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ রোগীর জন্য
মোটেও নিরাপদ নয়।

রোগীর ঘর প্রতিদিন ফিনাইল বা ডেটল পানি দিয়ে ভালো করে মুছতে হবে। রোগীর ব্যবহৃত প্লেট, গ্লাস,
বেডপ্যান ইত্যাদি সরঞ্জাম প্রতিদিন সাবান, গরমপানি দিয়ে ধুয়ে নির্দিষ্ট স্থানে গুছিয়ে রাখতে হবে।
কক্ষের দরজা ও জানালায় সাদা বা হালকা রঙের পর্দা ব্যবহার করলে ভালো হয়। পর্দা ব্যবহারে ধুলাবালি ও
কড়া রোদ কক্ষে প্রবেশ করতে পারে না। রোগীর ব্যবহৃত পোশাক-পরিচ্ছদগুলো প্রতিদিন সাবান ও গরম পানিতে
ধুয়ে রোদে শুকাতে হয়। এছাড়া বিছানার চাদর, বালিশের কভার, মশারি, তোয়ালে বা গামছা, রুমাল ইত্যাদি
প্রতিদিন ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে। দরজা ও জানালার গ্রিল ডেটল পানি দিয়ে মুছতে হবে। রোগীর ব্যবহারের
লেপ, তোষক, কম্বল, কাঁথা ইত্যাদি জীবাণুমুক্ত করার জন্য মাঝে মাঝে কড়া রোদে দিতে হবে। রোগীর
মলমূত্রাদি যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।

রোগীর রক্ষ সংলগ্ন বাথরুম,
টয়লেট প্রতিদিন ফিনাইল, ডিম,
ব্রিচিং পাউডার দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার
ও জীবাণুমুক্ত রাখতে হয়। কক্ষের
মেঝে কাঁচা হলে, সেখানে পানি
পড়লে সাথে সাথে লেপে দিতে
হবে। এ ছাড়াও কয়েকদিন পর পর
পুরা মেঝে লেপে শুকিয়ে নিতে
হবে। ছাদ ও দেয়াল টিন বা বেড়ার
তৈরি হলে, ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে
পরিষ্কার রাখতে হবে।

রোগীর কক্ষে যেন মশা-মাছির উপদ্রব না হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। রোগীর কক্ষের পরিবেশ
ভালো হলে, তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠা রোগীর জন্য সহায়ক হয়। সেজন্যই রোগীর কক্ষটা যেমন আরামদায়ক
হতে হবে, তেমনি বিভিন্নরকম দূষণ থেকে মুক্ত রাখতে হবে।

 

পাঠ ২- রোগীর পরিচর্যা

যে কোনো রোগীর জন্য তার পরিচর্যার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উপযুক্ত পরিচর্যার দ্বারা রোগ থেকে সহজেই
মুক্তি পাওয়া যায়। আবার পরিচর্যার অভাবে রোগীর অবস্থার অবনতি ঘটতে পারে। সেজন্য পরিবারের কেউ
অসুস্থ হলে তার পরিচর্যার ব্যাপারে সচেতন ও যত্নবান হতে হবে। রোগে আক্রান্ত হলে মানুষের শরীর ও মন
দুর্বল হয়ে যায়। অনেক সময় সে নিজের কাজটাও নিজে করতে পারে না। তাই এসময় পরিবারের অন্য
সদস্যদের রোগীর পরিচর্যার দায়িত্ব নিতে হয়। রোগীর প্রতি অত্যন্ত আন্তরিক হয়ে সহানুভূতির সাথে তার
পরিচর্যা করতে হয়।

রোগীর পরিচর্যার মধ্যে যে বিষয়গুলো পড়ে তা হলো-

-শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয়

-নাড়ির গতি নির্ণয়

-শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি নির্ণয়

শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয়- সুস্থ-স্বাভাবিক অবস্থায় আমাদের দেহের তাপমাত্রা থাকে ৯৮.৪ ডিগ্রি
ফারেনহাইট। কিন্তু জ্বর বা যে কোনো রোগে আক্রান্ত হলে দিনের বিভিন্ন সময়ে এ তাপমাত্রার পরিবর্তন হয়ে
যায়। তাপমাত্রার এই পরিবর্তনের হার বা মাত্রাটা যদি রেকর্ড করে রাখা যায়, তাহলে চিকিৎসকের পক্ষে রোগ
নির্ণয় করে উপযুক্ত ব্যবস্থাপত্র দেওয়া সহজ হয়।

শরীরের তাপমাত্রা মাপার জন্য একটি ক্লিনিক্যাল বা ফারেনহাইট থার্মোমিটার দরকার হয়। থার্মোমিটার একটি
লম্বা ও সরু গোলাকার কাচের নল। থার্মোমিটারের গায়ে ৯৪ ডিগ্রি থেকে ১০৮ ডিগ্রি পর্যন্ত দাগ কাটা থাকে।
থার্মোমিটারের মাঝখানে সরু ছিদ্র থাকে। আর নলের একপাশে ছোট একটা বাল্ব পারদপূর্ণ থাকে। তাপমাত্রা
মাপার জন্য থার্মোমিটারটি বগলের নিচে বা মুখের ভিতরে জিহ্বার নিচে রাখা হয়। দেহের তাপমাত্রার
সংস্পর্শে আসলে পারদ আয়তনে বেড়ে যায় এবং ক্রমশ উপরের দিকে অগ্রসর হয়। যেখানে উঠে পারদ স্থির
হয়ে যায়, সেটাই শরীরের তাপমাত্রা নির্দেশ করে। তাপমাত্রা দেখা হয়ে গেলে তার রেকর্ড রেখে, পারদপূর্ণ
স্থানের বিপরীত দিকে ঝাঁকুনি দিয়ে পারদ যথাস্থানে নামিয়ে আনতে হয়। তাপমাত্রা নির্ণয়ের সময় লক্ষনীয়
বিষয়-

-থার্মোমিটারের পারদ ৯৪ ডিগ্রিতে আনা।

-সাধারণত বগলে বা মুখে থার্মোমিটার স্থাপন করা।

-নির্দিষ্ট স্থানে থার্মোমিটার ২ মিনিট রেখে তাপমাত্রা জানা।

- শুশ্রুষাকারীর মাধ্যমে রোগীর দেহের তাপ নেওয়া।

-তাপ নেওয়ার পর দেহের তাপমাত্রা নৈনিক চার্টে লিখে রাখা।

তাপমাত্রা রেকর্ড রাখার নিয়ম- পাশের ছক
অনুযায়ী কাগজ তৈরি করে নির্দিষ্ট সময়ে
তাপমাত্রা নির্ণয় করে তা লিখে রাখতে
হয়। চিকিৎসকের নির্দেশ অনুযায়ী দিনে
কয়েকবার এ তাপমাত্রা মাপা হয়। এর
সাথে একই সময়ে নাড়ির গতি ও
নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের মাত্রা জেনে লিখে রাখা
হয়।

নাড়ির গতি

আমাদের হৃৎপিণ্ডের স্পন্দনের তালে তালে রক্তবাহী ধমনিগুলো নিয়মিতভাবে স্ফীত হয়। ধর্মনির এই স্ফীতির
হারকে নাড়ির গতি বলা হয়। সাধারণত হাতের কব্জিতে আঙুল রেখে, স্পষ্টভাবে না ড়র গতি অনুভব করা
যায়। নাড়ির গতি নির্ণয়ের সময় একটি সেকেন্ডের কাঁটাযুক্ত ঘড়ি থাকা আবশ্যক। নাড়ির গতি দেখার সময়
রোগীর হাত সহজ ও স্বাভাবিকভাবে রাখতে হয়। কব্জির যেখানে অবিরাম স্পন্দন হয়, সেই ধমনির উপর
হাতের তিনটি আঙুলের প্রান্তভাগ দিয়ে হালকাভাবে চাপ দিলে ধর্মনির স্পন্দন অনুভব করা যায়।
স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতিমিনিটে নাড়ির স্পন্দন হয়ে থাকে-

সদ্যজাত শিশুর ১৩০-১৪০ বার

১ বছর বয়স্ক শিশুর ১১০-১২০ বার
২ বছর বয়স্ক শিশুর ১০০-১১০ বার

৮-১৪ বছরের কিশোর-কিশোরীর ৮০-৯০ বার

প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলার ৬৫-৮০ বার

প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের ৬০-৭২ বার

জ্বার হলে নাড়ির গতি বেড়ে যায়। এছাড়া ব্যায়াম, রক্তক্ষরণ, স্নায়বিক আঘাত কিংবা হূৎপিণ্ডের অসাভাবিকতায়
নাড়ির গতি বেড়ে যায়। প্রতিমিনিটে যতবার ধমনি স্পন্দিত হয়, সেই সংখ্যাই নাড়ির গতির হার নির্দেশ করে।
নাড়ির গতির হার খুব মনোযোগ দিয়ে গণনা করে, তার তালিকা করে রাখতে হয়। চিকিৎসকের নির্দেশ
অনুযায়ী দিনে কয়েকবার নাড়ির গতির হার রেকর্ড করা হয়।

শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি – শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি নির্ণয় করতে হলেও সেকেন্ডের কাঁটাযুক্ত ঘড়ি দরকার। শ্বাসক্রিয়ার
গতি জানতে হলে রোগীকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বুক বা পেটের উঠানামার জায়গায় একটি হাত রেখে
রোগীকে স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে বলতে হবে। বুক বা পেট প্রতি এক মিনিটে কতবার উঠানামা করছে তা
গণনা করে শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি নির্ণয় করা হয়। চিকিৎসকের নির্দেশমতো সঠিক সময়ে শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি
নির্ণয় করে, তার রেকর্ড রাখা হয়।

তাপমাত্রা, নাড়ির গতি এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের গতির রেকর্ড বা তালিকা থেকে চিকিৎসক সঠিকভাবে রোগীর
রোগের অবস্থা জানতে পারেন। ফলে উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে তাড়াতাড়ি রোগের উপশম হতে পারে।

পাঠ ৩ রোগীর শারীরিক ও মানসিক যত্ন

রোগীর সুস্থতার জন্য পরিচর্যার পাশাপাশি তার শারীরিক ও মানসিক যত্নের বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে
বিবেচনা করতে হয়। কারণ একজন সুস্থ ব্যক্তি তার প্রয়োজনীয় কাজগুলো, যেমন- গোসল করা, পোশাক
পরা, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি নিজেই করতে পারে। কিন্তু অসুস্থ হলে এই কাজগুলোর জন্য শুশ্রুষাকারীর
সাহায্যের দরকার হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক পদ্ধতিতে রোগীর যত্ন নেওয়া দরকার। দ্রুত আরোগ্য লাভের
জন্য রোগীর শারীরিক ও মানসিক যত্ন নেওয়ার প্রতি পরিবারের সকল সদস্যের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন।

শারীরিক যত্ন

রোগীকে আরাম দেওয়ার জন্য তার শারীরিক যত্নের দরকার। অসুস্থতার সময় শারীরিকভাবে দুর্বা থাকার
কারণে রোগীর যত্নের ব্যাপারে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। শারীরিক যত্নের বিভিন্ন দিক নিচে আলোচনা
করা হলো-

পথ্য নির্বাচন ও পরিবেশন

অসুস্থ অবস্থায় রোগীর বিশেষ চাহিদা অনুসারে তাকে যে খাদ্য দেওয়া হয়, তা পথ্য হিসাবে বিবেচিত। রোগের
প্রকৃতি ও তীব্রতা, রোগীর বয়স ও রুচি, পরিপাক শক্তি ইত্যাদি বিবেচনা করে রোগীর জন্য প্রয়োজনীয়
পুষ্টিসমৃদ্ধ সুষম পথ্যের ব্যবস্থা করতে হবে। সব রোগে একরকম পথ্য দেওয়া যায় না। রোগবিশেষে কোনো
কোনো বিশেষ পুষ্টিউপাদান নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজন দেখা দেয়। যেমন- বেশি জ্বরে ভুগলে ক্যালরিবহুল
সহজপাচ্য খাবার বেশি দিতে হবে।

শিশুর কোয়াশিয়রকর রোগে প্রোটিন বেশি খাওয়াতে হয়। আবার কিডনি রোগে প্রোটিনের পরিমাণ কমাতে হয়।
সেরকমই ডায়াবেটিস রোগে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন। উচ্চ রক্তচাপে লবণ ও
হৃদরোগে চর্বিবহুল খাদ্য গ্রহণ ক্ষতিকর। ডায়রিয়া বা তীব্র জ্বরে ডাবের পানি, স্যালাইন, শরবত ইত্যাদি রোগ
নিরাময়ে সহায়তা করে।

রোগীর বয়স অনুযায়ী পথ্য নির্বাচন করতে হয়। শিশু ও বয়স্ক রোগীদের খাবার কম মসলা দিয়ে খুব নরম
করে দিতে হবে, যাতে সহজে হজম করতে পারে। পথ্য নির্বাচনে রোগীর রুচির দিকেও বিশেষ নজর দিতে
হয়। চিকিৎসকের সম্মতি নিয়ে রোগীর পছন্দ অনুযায়ী পথ্য দিলে তার তৃপ্তি বজায় থাকবে। মাঝে মাঝে
খাবারের ধরনে পরিবর্তন আনলেও রোগীর খাবারের প্রতি আগ্রহ বাড়ে। সেজন্য খাদ্যে বৈচিত্র্য এনে খাবারের
একঘেয়েমি দূর করা যায়, এতে রোগীর রুচিও বাড়ে। রোগীর পথ্য পরিবেশনেও যত্নবান হতে হবে। তাকে
সবসময় সহজপাচ্য, টাটকা খাবার দিতে হবে। পথ্য যেন অধিক গরম বা ঠাণ্ডা না হয়, সেদিকে লক্ষ।

রাখতে হবে। তার চাহিদা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে পথ্য পরিবেশন করতে হবে। একবারে বেশি খাবার না
দিয়ে ভারী খাবারটা দিনের বিভিন্ন সময়ে ভাগ করে খাওয়াতে হবে। যেভাবে খেলে রোগী আরাম পাবে,
সেভাবে বসিয়ে বা শুইয়ে তাকে খাওয়াতে হবে। রোগী নিজ হাতে খেতে না পারলে শুশ্রুষাকারী তাকে সাহায্য
করবে। বেশি দুর্বল রোগীকে অনেক সময় ফিডিং কাপ ও চামচের সাহায্যে খাইয়ে দিতে হয়। খাওয়ার পর
ভালোভাবে মুখ ধুয়ে বা রুমাল দিয়ে মুছে দিতে হবে।

ঔষধ সেবন

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে ঔষধ খাওয়াতে হবে। ঔষধের পরিমাণ যেন ঠিক থাকে, সে
বিষয়ে সচেতন হতে হবে।

রোগীর পোশাক-পরিচ্ছদ

রোগীকে নরম, হালকা রঙের সুতির পোশাক পরানো উচিত। পোশাক যেন ঢিলেঢালা ও আরামদায়ক হয়, সে
বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। রোগীর পোশাক প্রতিদিন বদলে দিতে হবে এবং গরমপানি, সাবান দিয়ে ধুয়ে
রোদে শুকাতে হবে ।

নিয়মিত দেহের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা :

অসুস্থ ব্যক্তিকে প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠার পর এবং খাওয়ার পর দাঁত, মুখ পরিষ্কার করে দিতে হবে।
রোগীকে প্রতিদিন গোসল করানো সম্ভব না হলে, গা স্পঞ্জ করে বা মুছে দিতে হবে। শোওয়া অবস্থায় মাথা
ধোয়াতে হলে বালিশে রবার ক্লথ এমনভাবে বিছিয়ে নিতে হবে যেন একপ্রান্ত পিঠের তলা পর্যন্ত আসে, অপর
প্রাস্ত খাটের পাশে রাখা বালতিতে পড়বে। মগ বা বদনার সাহায্যে ধীরে ধীরে মাথায় পানি ঢালতে হয়।
এরপর শুকনা গামছা বা তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছে দিতে হয়। নিয়মিত রোগীর নখ কেটে পরিষ্কার রাখতে
হবে। দিনে দুই-তিন বার চুল আঁচড়াতে হবে। মলমূত্র ত্যাগ করার জন্য প্রয়োজনে বেডগ্যান ব্যবহার করতে
হবে। রোগীর ব্যবহারের পানি হালকা গরম হলে আরাম বোধ হবে।

রোগীর মানসিক যত্ন

শারীরিক যত্নের মতো রোগীর মানসিক যত্ন তাকে দ্রুত আরোগ্য লাভে সহায়তা করে। রোগীর মন ভালো
রাখার জন্য সেবা-যত্নের ব্যাপারে বিশেষভাবে সচেতন থাকতে হবে। তার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।
তার প্রতি কখনো বিরক্তি প্রকাশ করা যাবে না। ধৈর্য ও সহানুভূতির সাথে রোগীর সব কষ্ট জেনে, তার
সেবা-শুশ্রুষা করতে হবে। তাকে একা রাখা ঠিক নয়। তার সাথে কথা বলার জন্য পাশে কেউ থাকবে। তার
মন ভালো রাখার জন্য, তার শখ অনুযায়ী বিনোদনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। খোলা জানালা দিয়ে প্রাকৃতিক
দৃশ্য দেখার সুযোগ করে দিলে তার মন প্রফুল্ল থাকবে। তার ঘর নিয়মিত সাজিয়ে রাখলে মনে প্রশান্তি
আসবে। গুরুতর অসুস্থতায়ও তাকে সাহস জোগাতে হবে, যাতে তার মনোবল অটুট থাকে। রোগীর মানসিক
যত্নের ব্যাপারে পরিবারের সবাইকে মনোযোগী হতে হবে।

অনুশীলনী

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১. স্বাভাবিক অবস্থায় কিশোর-কিশোরীর প্রতি মিনিটে নাড়ির স্পন্দন হয়ে থাকে?

ক. ৬০-৭৫ বার

খ. ৬৫-৮০ বার

গ. ৮০-৯০ বার

ঘ. ৯০-১০০ বার

২. অসুস্থ ব্যক্তির শুশ্রূষায় পরিবেশ হতে হবে—

i. কোলাহলপূর্ণ

ii. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন

iii. আলো-বাতাসপূর্ণ

নিচের কোনটি সঠিক?

ক. i ও ii

গ. ii ও iii

খ. i ও iii

ঘ.i, iiiii

নিচের অনুচ্ছেদটি পড় এবং ৩ ও ৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর পাও

তনু স্কুল থেকে ফেরার পথে বৈশাখী ঝড়-বৃষ্টিতে ভিজে বাড়ি আসে। বাড়ি এসে ঠাণ্ডা পানি পান করে।
কিছুক্ষণ পর তনু কাশতে শুরু করে এবং তার সর্দি ও জ্বর দেখা দেয়। মা তনুর ছোট ভাই ধ্রুবকে তনুর
ব্যবহৃত রুমাল ধরতে নিষেধ করেন।

৩. ধ্রুবকে তনুর ব্যবহৃত রুমাল ধরতে মানা করার কারণ রোগটি

i.
সংক্রামক

ii. বংশগত

iii. বায়ুবাহিত

গৃহে রোগীর শুশ্রুষা

নিচের কোনটি সঠিক?

iii

ক. i७॥

গ. ii ও iii

ঘ. i, ii ও iii

৪. উক্ত রোগীর জন্য করণীয়-

ক. নিত্য ব্যবহার্য জিনিস সপ্তাহে একবার ধোয়া

খ. ব্যবহৃত পোশাক অল্প রোদে শুকানো

গ. দরজা-জানালায় পর্দার ব্যবহার না করা

ঘ. ব্যবহৃত সরঞ্জাম জীবাণুমুক্ত রাখা

সৃজনশীল প্রশ্ন

১. দুই-তিন সপ্তাহ ধরে মুন্না জ্বরে ভুগছে। জ্বর কখনো থাকে আবার থাকে না। মা ছেলের মাথা ধুয়ে দেন
ও গা স্পঞ্জ করেন। এতেও জ্বর না কমায় মা চিন্তিত হয়ে ছেলেকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। ডাক্তার
সব শুনে মুনার দেহের তাপমাত্রার পরিবর্তনের হার রেকর্ড করতে বলেন এবং পণ্যের ব্যাপারে সচেতন
হতে বলেন। মুন্না তেমন কিছুই খায় না। মা ছেলেকে বিভিন্ন ধরনের ক্যালরি বহুল, সহজপাচ্য ও টাটকা
খাবার তৈরি করে বারবার খেতে দেন।

ক. সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় আমাদের দেহের তাপমাত্রা কত ?

খ. জ্বর মাপার জন্য কী ধরনের থার্মোমিটার প্রয়োজন? বুঝিয়ে লেখ।

গ. ডাক্তার কেন মুন্নার দেহের তাপমাত্রা পরিবর্তনের হার রেকর্ড করতে বলেন- ব্যাখ্যা কর।

ঘ. মায়ের দেয়া পথ্য পরিবেশন মুনার সুস্থতার জন্য যথার্থ কিনা— তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও ।

Content added By