অষ্টম শ্রেণি (দাখিল) - তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি - তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির গুরুত্ব | NCTB BOOK

১৯৭১ সালের ১৫ই আগস্ট দিবাগত রাত ২টা ১৫ মিনিটে প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দে পুরো চট্টগ্রাম বন্দর কেঁপে উঠেছিল। সেই রাতে মুক্তিযোদ্ধা নৌ কমান্ডোদের একটি দল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সতর্ক পাহারা ফাঁকি দিয়ে বন্দরের অসংখ্য জাহাজে মাইন লাগিয়ে ডুবিয়ে দিয়েছিলেন। জাহাজগুলো ডুবে বন্দরে ঢোকার রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তাই তখন দেশি বিদেশি কোনো জাহাজই আর আসতে পারছিল না। মুক্তিযুদ্ধের এটি ছিল অনেক বীরত্বপূর্ণ একটি অভিযান।

কিন্তু ভোমরা কি জানো, নৌ কমান্ডোর এই দুঃসাহসিক দলটিকে সে অভিযানের দিনক্ষণটি কেমন করে জানানো হয়েছিল? তাদের সাথে যেহেতু যোগাযোগের কোনো উপায়ই ছিল না, তাই মুক্তিযোদ্ধাদের অনুরোধে আকাশবাণী রেডিও থেকে ১৩ ই আগস্ট বেজে উঠে বিখ্যাত গায়ক পক্ষঞ্চল মল্লিকের গাওয়া একটি গান “আমি তোমার যত শুনিয়েছিলাম গান”! সেই গানটি ছিল একটি সংকেত, সেটি শুনে নৌ কমান্ডোরা বুঝতে পেরেছিল তাদের এখন আঘাত হানার সময় এসেছে।

এতদিন পরে তোমাদের কাছে এ ঘটনাটি নিশ্চয়ই অবিশ্বাস্য মনে হয়। এখন আমরা কত সহজেই না একজন আরেকজনের সাথে যোগাযোগ করতে পারি। আর আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা শুধু যোগাযোগ করার জন্য কতই না কষ্ট করেছিলেন।

যোগাযোগ করার পদ্ধতিকে মোটামুটি দুই ভাগে ভাগ করা যায়- একমুখী ও দ্বিমুখী। যখন একজন ব্যক্তি বা একটি প্রতিষ্ঠান অনেকের সাথে যোগাযোগ করে সে পদ্ধতিটি হলো “একমুখী”, ইংরেজিতে যাকে বলে *ব্রডকাস্ট”। রেডিও টেলিভিশন তার সবচেয়ে সহজ উদাহরণ- যেখানে রেডিও বা টিভি স্টেশন থেকে সবার জন্য অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়। যাদের জন্য অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়, তারা কিন্তু পাল্টা যোগাযোগ করতে পারে না। কোনো কোনো লাইভ অনুষ্ঠানে দর্শক বা শ্রোতাদের অবশ্য ফোন করে যোগাযোগের সুযোগ দেওয়া হয়- যেখানে লক্ষ লক্ষ শ্রোতাদের মধ্যে দু-একজন যোগাযোগ করতে পারে, কাজেই এটি আসলে একমুখী ব্রডকাস্টই থেকে যায়। তথ্যপ্রযুক্তির যুগান্তকারী উন্নয়নের জন্য আজকাল রেডিও বা টেলিভিশনের অনুষ্ঠানেও একটা বিশাল পরিবর্তন হয়েছে। টেলিভিশনের দু-একটি চ্যানেলের পরিবর্তে এখন শত শত চ্যানেল দেখা সম্ব। বাংলাদেশে বসেই একজন সারা পৃথিবীর অনেক টেলিভিশন চ্যানেল দেখতে পারে। শুধু যে আমরা অসংখ্য চ্যানেল দেখতে পারি তা নয়- সারা পৃথিবীর যে কোন প্রাপ্তে ঘটে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো কিছুক্ষণের মধ্যে চ্যানেলগুলো দেখাতে পারে।

ব্রডকাস্ট পদ্ধতির যোগাযোগের আরও উদাহরণ হচ্ছে খবরের কাগজ এবং ম্যাগাজিন। তোমরা কি জানো যতই দিন যাচ্ছে ততই অনলাইন পত্রিকা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা লেখার জন্যে শুধু যে কম্পিউটার লাগে তা নয়, স্মার্ট মোবাইল ফোনেও দেখা সম্ভব।

যোগাযোগের একমুখী ব্রডকাস্ট পদ্ধতির সম্পূরক রূপটি হচ্ছে দ্বিমুখী যোগাযোগ। যার সবচেয়ে ভালো উদাহরণ হচ্ছে টেলিফোন। ঘোষরা সবাই জানো যে, টেলিফোনে দুজন একই সাথে পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। মাত্র একযুগ আগেও বাংলাদেশে শুধু সচ্ছল ও ক্ষমতাবান মানুষদের কাছে টেলিফোন ছিল। এখন এদেশে যেকোনো মানুষ মোবাইল ফোনে একে অন্যের সাথে যোগাযোগ করতে পারে এবং এটি সম্প হয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নয়নের জন্য।

বাংলাদেশের বিশাল জনগোষ্ঠী দেশের বাইরে থেকে কাজ করে আমাদের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে। এখন তাদের আত্মীয়ফজন ইচ্ছে করলেই তাদের সাথে যোগাযোগ করে কথা শুনতে পারে কিংবা দেখতে পারে। আর এখন এ কাজটি করা সম্ভব হচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে।

একসময় মানুষের নামটিই ছিল পরিচয়। এখন নামের পাশাপাশি আরেকটি পরিচয় খুব গুরত্বপূর্ণ হয়ে গিয়েছে, সেটি হচ্ছে তার ই-মেইল এড্রেস। কয়েকটি অক্ষর ও বিশেষ চিহ্ন দিয়ে একটি ই-মেইল এড্রেস তৈরি হয় এবং এটি দিয়ে পৃথিবীর যেকোনো জায়গা থেকে যেকোনো মানুষ যোগাযোগ করতে পারে। তোমরা নিশ্চয়ই এতদিনে জেনে গেছ পৃথিবীর মানুষের ভেতর এখন যোগাযোগের বেশির ভাগই হয়ে থাকে ই-মেইলে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অন্যতম একটি বিষয় হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। আজ সামাজিক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে একজন একই সময়ে অনেকের সাথে যোগাযোগ করতে পারে, সংগঠিত হতে পারে- এমনকি সংঘটিত হয়ে দেশের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করতে পারে।

কাজেই তোমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ তথ্যপ্রযুক্তি সারা পৃথিবীর সকল মানুষের ভেতর যোগাযোগটা বাড়িয়ে দিয়ে একটি নতুন পৃথিবীর জন্ম দিতে শুরু করেছে- যেখানে ভারচুয়াল (Virtual) জগতে সবাই সবার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।

দলগত কাজ : সত্যিকারের খবরের কাগজ এবং অনলাইন খবরের কাগজের পক্ষে দুটি দল তৈরি করে একটি বিতর্কের আয়োজন কর। 

নতুন শিখলাম : একমুখী ব্রডকাস্ট, দ্বিমুখী যোগাযোগ, ই-মেইল এড্রেস, সামাজিক নেটওয়ার্ক, ভারচুয়াল জগৎ।

Content added By

Promotion