অষ্টম শ্রেণি (দাখিল) - তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি - তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির গুরুত্ব | NCTB BOOK

রাষ্ট্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অ হলো সরকার। যেকোনো দেশের সরকার জনগণের জন্য নিরাপদ, সৃজনশীল কর্মসংস্থান এবং সর্বোপরি মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করার জন্য নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকে। সরকারের সাধারণ কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে আইন ও নীতি প্রণয়ন এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর ও সংস্থার মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন এবং সর্বোপরি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিজ দেশকে সঠিকভাবে উপস্থাপন। এই সকল কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের জন্য সরকার দেশের মধ্যে কর ও শুল্ক আদার, বিদেশ থেকে অনুদান ও ঋণের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে এবং বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে পরিকল্পনাসমূহ বাস্তবায়ন করে। প্রয়োজনে বেসরকারি সংস্থা বা ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হয়। সরকারি সকল কাজেই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োগ রয়েছে। এখানে কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করা হলো।

(ক) সরকারি তথ্যাদি প্রকাশ : ইন্টারনেটের বিকাশের আগে সরকারি বিভিন্ন তথ্য যেমন নিয়োগ বি দরপত্র প্রকাশ, বিভিন্ন প্রকার আদেশ ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নোটিশ বোর্ড এবং কখনো কখনো বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হতো। ফলে সর্বসাধারণের পক্ষে সরকারের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা কিংবা নিয়মকানুন জানা সম্পন্ন হতো না। বর্তমানে ওয়েবসাইট বা পোর্টালের মাধ্যমে এই সকল তথ্য সরাসরি জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়। উল্লেখ্য বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় ওয়েব পোর্টাল ঠিকানা হলো www.bangladesh.gov.bd।

(খ) আইন ও নীতিমালা প্রণরণ ও সংশোধন : বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের নীতিমালা, আইন ইত্যাদি প্রণয়ন এবং সংশোধন এর ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বর্তমানে সংশ্লিষ্ট দপ্তর জনগণের মতামত গ্রহণ করতে পারে। এছাড়া কল সেন্টারের মাধ্যমে জনগণের যে অংশ ই-মেইলে অভ্যস্থ নয়, তাদের মতামতও নেওয়া যায়।

(গ) বিশেষ বিশেষ দিবস বা ঘটনা সম্পর্কে প্রচার : সরকার মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জনগণের এক বিরাট অংশকে সরাসরি কোনো বার্তা পৌঁছাতে পারে। বাংলাদেশে প্রায় ১২ কোটি লোকের কাছে মোবাইল ফোন রয়েছে। সরকারি কোনো পুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা মোবাইল ফোনের ক্ষুদে বার্তার Short Message Service (SMS) বা ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে সরাসরি ঐ সকল ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়।

(খ) পোরগোড়ার সরকারি সেবা : সরকারি কর্মকাণ্ডে আইসিটির সবচেয়ে উদ্ভবনী ও কুশলী প্রয়োগ হলো জনগণের কাছে নাগরিক সেবা পৌঁছে দেওয়া। মোবাইল ফোন, রেডিও, টেলিভিশন এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে নাগরিক সেবাসমূহ সরাসরি নাগরিকের দোরগোড়ার এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তার হাতের মুঠোয় পৌঁছে দেওয়া যায়। উন্নত দেশগুলোতে এর মাধ্যমে জনগণ ঘরে বসেই পাসপোর্ট প্রাি আয়কর প্রদান, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, সরকারি কোষাগারে অর্থপ্রদান প্রভৃতি কাজ নিমিষেই সম্পন্ন করতে পারে। আমাদের দেশেও বর্তমানে অনেক নাগরিক সেবা খুব সহজে পাওয়া যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-

> ই-পর্চা : জমি-জমার বিভিন্ন রেকর্ড সংগ্রহের জন্য পূর্বে অনেক হয়রানি হতো, বর্তমানে দেশের ৬৪টি জেলায় ই-সেবা কেন্দ্র থেকে তা সহজে সংগ্রহ করা যায়। এজন্য অনলাইনে আবেদন করে আবেদনকারী জমি-জমা সংক্রান্ত বিভিন্ন দলিল এর সত্যায়িত অনুলিপি সংগ্রহ করতে পারে। এর ফলে জনগণ খুব সহজে সেবা পাচ্ছেন। অন্যদিকে সেবা প্রদানের সময় তথ্যাদি ডিজিটালকৃত হয়ে যাচ্ছে ফলে ভবিষ্যতে তথ্য প্রাপ্তির পথ সহজ হচ্ছে।

> ই-বুক : সকল পাঠ্যপুস্তক অনলাইনে সহজে প্রাপ্তির জন্য সরকারিভাবে একটি ই-বুক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে (www.ebook.gov.bd)। এতে বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক ও সহায়ক পুস্তক রয়েছে।

> ই-পুর্জি : চিনিকলের পুর্জি (ইক্ষু সরবরাহের অনুমতিপত্র) স্বয়ংক্রিয়করণ করা হয়েছে এবং বর্তমানে মোবাইল ফোনে কৃষকরা তাদের পুর্জি পাচ্ছে। ফলে এ সংক্রান্ত হয়রানির অবসান হওয়ার পাশাপাশি কৃষকও তাদের ইক্ষু সরবরাহ উন্নত করতে পেরেছেন।

> পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ : বর্তমানে দেশের সকল পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল অনলাইনে এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রকাশ করা হচ্ছে।

> ই-স্বাস্থ্যসেবা : জনগণের কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য দেশের অনেক স্থানে টেলিমিডিসিন সেবা কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। এ ছাড়া সরকারি হাসপাতালসমূহের ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে মোবাইল ফোনে বা এসএমএসে অভিযোগ পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর ফলে স্বাস্থ্যখাতে ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে।

> অনলাইনে আয়কর রিটার্ন প্রস্তুতকরণ : ঘরে বসেই এখন আয়করদাতারা তাদের আয়করের হিসাব করতে পারেন এবং রিটার্ন তৈরি ও দাখিল করতে পারেন।

> টাকা স্থানান্তর : পোস্টাল ক্যাশ কার্ড, মোবাইল ব্যাংকিং, ইলেক্ট্রনিক মানি ট্রান্সফার সিস্টেম ইত্যাদির মাধ্যমে বর্তমানে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে অর্থ প্রেরণ সহজ ও দ্রুত হয়েছে। এছাড়া ইন্টারনেট ও অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সহজে টাকা স্থানান্তরিত করা যায়।

> পরিসেবার বিল পরিশোধ : নাগরিক সুবিধার একটি বড় অংশ হলো বিদ্যুৎ, পানি কিংবা গ্যাস সরবরাহ। এ সকল পরিসেবার বিল পরিশোধ করতে পূর্বে গ্রাহকের অনেক ভোগান্তি হতো। বর্তমানে অনলাইনে বা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এ সকল বিল পরিশোধ করা যায়।

অনলাইন রেজিস্ট্রেশন : সরকারি কর্মকাণ্ডে আইসিটি প্রয়োগের মাধ্যমে সরকারি সেবার মান উন্নয়নের উদাহরণ হিসাবে বাংলাদেশ রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানির স্বয়ংক্রিয়করণের একটি উদাহরণ দেওয়া হলো।

ব্যবসার উদ্দেশ্যে যখন কোনো কোম্পানি বা ফার্ম গঠন করা হয়, তখন সেটিকে সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানে নিবন্ধিত হতে হয়। বাংলাদেশে নিবন্ধনের এরকম একটি প্রতিষ্ঠান হলো রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিস এন্ড ফার্মস। ভোর না হতে সেখানে লাইন, তিল ধারণের জায়গা নেই, গ্রাহকের ভিড়, বিভিন্ন ধরনের দালালদের অত্যাচার ইত্যাদি ছিল এই প্রতিষ্ঠানের একসময়কার চিত্র। আইসিটির প্রয়োগের ফলে বর্তমান সেখানকার চিত্র সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানি এন্ড ফার্মসের ওয়েবসাইট (www.roc.gov.bd) থেকেই এখন অনেক কাজ সম্পন্ন করা যার। কয়েকটি কাজের অতীত ও বর্তমান অবস্থা ছক আকারে দেখানো হলো :

কাজঅতীতবর্তমান
নামের ছাড়পত্রকমপক্ষে ৭ দিন৩০ মিনিট
নিবক্ষনকমপক্ষে ৩০ দিন৪ দিন
ফি প্রদানতোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়েব্যাংকের মাধ্যে
নিবানের জন্য অফিসে বাতারাতকমপক্ষে স্থরবারএকবারও নয়।

দলগত কাজ : সরকারের আরো অনেক কর্মকাণ্ডে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্ররোগ দেখা বার। তোমার এলাকার এরকম কার্যাবলির একটি তালিকা তোমার বন্ধুদের নিয়ে তৈরি করো।

Content added By