অষ্টম শ্রেণি (দাখিল) - তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি - স্প্রেডশিটের ব্যবহার | NCTB BOOK

মানবজাতির আদিকাল থেকেই মানুষকে বিভিন্ন বিষয়ের হিসাব রাখতে হতো। কখনো পাথরে কখনো গাছের বাকলে বিভিন্ন প্রকার চিহ্ন দিয়ে মানুষ হিসাব রাখার চেষ্টা করত। এ চেষ্টা থেকেই মানুষ আবিষ্কার করে অ্যাবাকাস। এখন থেকে ৫০ বছর আগে মানুষের কাছে কাগজ-কলমই ছিল হিসাব করা ও সংরক্ষণের প্রধান উপায়। প্রযুক্তিগত বিকাশে ক্যালকুলেটরের আবিষ্কার মানুষকে হিসাবের ক্ষেত্রে কিছুটা স্বস্তি দেয়। তবুও জটিল ও দীর্ঘ হিসাবের সমস্যা থেকেই যায়। এ সকল সমস্যা নিরসন হয় কম্পিউটার আবিষ্কারের পর। স্প্রেডশিটের ধারণা (Concept of Spreadsheet)

স্প্রেডশিটের আভিধানিক অর্থ হলো ছড়ানো বড় মাপের কাগজ। ব্যবসার প্রতিষ্ঠানের আর্থিক হিসাব সংরক্ষণের জন্য এ ধরনের কাগজ ব্যবহার করা হয়। এ কাগজে ছক করে (ব্রো ও কলাম) একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের পূর্ণাঙ্গ আর্থিক চিত্র তুলে ধরা যায়। বর্তমানে কাগজের স্প্রেডশিটের স্থান দখল করেছে সফটওয়্যার নির্ভর প্রেডশিট প্রোগ্রাম। এর ফলে নানা কাজে প্রেডশিটের ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। 

সত্তর দশকের শেষের দিকে অ্যাপল কোম্পানি সর্বপ্রথম ভিসিক্যাল (VisiCalc) প্রেডশিট সফটওয়্যার উদ্ভাবন করে। পরবর্তীকালে মাইক্রোসফট এক্সেল (Microsoft Excel), ওপেন অফিস ক্যাল্‌ক ( Open office Calc) কেন্দ্রেড (Kspread) নামের প্রেডশিট সফটওয়্যার উল্লবিত হয়। বর্তমানে বহুল ব্যবহৃত ও জনপ্রিয় প্রেডশিট সফটওয়্যার হলো মাইক্রোসফট কোম্পানির এক্সেল (Excel)।

 

বিভিন্ন শ্রেডশিট সফটওয়্যারের আইকন :

স্প্রেডশিট প্রোগ্রাম কী?

স্প্রেডশিট হলো এক ধরনের অ্যাপ্লিকেশন কম্পিউটার প্রোগ্রাম। এটিকে কখনো কখনো ওয়ার্কবুক বলা হয়। একটি রেজিস্টার খাতায় যেমন অনেকগুলো পৃষ্ঠা থাকে, তেমনি একটি ওয়ার্কবুকে অনেকগুলো ওয়ার্কশিট থাকে। একেকটা ওয়ার্কশিটে বহুসংখ্যক সারি (Row) ও কলাম (Column) থাকে। এটি দেখতে নিচের চিত্রের মতো-

 AB CDEFG
1        
2        
3        

A,B,C...দিয়ে কলাম এবং 1,2,3... দিয়ে রো নির্দেশ করা হয়। ছোট ছোট ঘরগুলিকে বলে সেল (Cell)।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং স্প্রেডশিট

বর্তমান যুগ হলো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগ। এ যুগে তথ্য প্রক্রিয়াকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। বিভিন্ন প্রকার ব্যবসায়িক কাজে এবং যেকোনো গবেষণায় প্রাপ্ত উপাত্তকে বোধগম্যভাবে উপস্থাপনের জন্য উপাত্তগুলোকে বিশ্লেষণ করতে হয়। স্প্রেডশিট প্রোগ্রামের সাহায্যে এ ধরনের বিশ্লেষণের প্রাথমিক কাজগুলো সহজে সম্পাদন করা যায় ।
স্প্রেডশিট প্রোগ্রামে একটা ওয়ার্কশিটে সবধরনের উপাত্ত প্রবেশ করানো যায়। ফলে যেকোনো ধরনের, যেকোনো সংখ্যক উপাত্ত অল্প সময়ে সম্পাদনা করা, হিসাব করা, বিশ্লেষণ করা এবং প্রতিবেদন তৈরি করার কাজ স্প্রেডশিট প্রোগ্রামের মাধ্যমে করা যায়।

স্প্রেডশিট সফটওয়্যার ব্যবহারের উদ্দেশ্য
ঘটনা ১ঃ নতুন কুঁড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাময়িক পরীক্ষার ফলাফল প্রস্তুত করার জন্য একটি বড় রেজিস্টার খাতা ব্যবহার করা হতো। শিক্ষকগণ বিভিন্ন বিষয়ে প্রাপ্ত নম্বর সে রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করতেন। এরপর সবগুলো বিষয়ের বিষয়ভিত্তিক গ্রেড পয়েন্ট বের করে জিপিএ নির্ণয় করা হতো। কিন্তু এ প্রক্রিয়ায় তাদের অনেক ভুল হতো এবং পরে তা আবার সংশোধন করতে হতো। ফলাফলের পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে তাদের কয়েক দিন সময় লেগে যেত।
ঘটনা ২ঃ এসআর এন্টারপ্রাইজ একটি রড-সিমেন্টের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। প্রতিদিন তাদের অনেক লেন-দেন হয় । এর কিছু নগদ এবং কিছু বাকিতে লেনদেন। ক্যাশ বইয়ে এ হিসাব রাখতে ক্যাশিয়ারকে অনেক হিমশিম খেতে হয়।
ঘটনা ৩ঃ মিঃ সুমন সবসময় আয়ের সাথে সঙ্গতি রেখে সংসার চালানোর চেষ্টা করেন। এজন্য তিনি একটা ডায়েরিতে আয়-ব্যয়ের হিসাব রাখার চেষ্টা করেন। মাঝে মধ্যে তিনি হিসাবে গরমিল করে ফেলেন।

উপযুক্ত ঘটনাগুলোতে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানগুলো যে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে তা স্প্রেডশিট সফটওয়্যার ব্যবহার করে সহজে সমাধান করা যায়। স্প্রেডশিট সফটওয়্যার ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ উপাত্ত নিয়ে কাজ করা যায়। প্রেডশিট সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে হিসাবের কাজ দ্রুত ও নির্ভুলভাবে করা যায়। এ সফটওয়্যারে সূত্র ব্যবহারের সুযোগ থাকায় হিসাবের কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন হয়। একই সূত্র বারবার প্রয়োগ করা যায় বলে প্রক্রিয়াকরণের সময় কম লাগে। উপাত্তের চিত্ররূপ দেওয়াও এ সফটওয়্যারে খুব সহজ। স্প্রেডশিট সফটওয়্যারের মাধ্যমে ডাক যোগাযোগের ঠিকানা ও ই-মেইল ঠিকানার ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ সহজে করা যায়।

Content added By