নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় - সৌরজগৎ ও ভূমণ্ডল | NCTB BOOK

সূর্য এবং এর গ্রহ, উপগ্রহ, গ্রহাণুপুঞ্জ, ধূমকেতু, উল্কা প্রভৃতি নিয়ে যে পরিবার তাকে বলা হয় সৌরজগৎ। সৌরজগতের প্রাণকেন্দ্র হলো সূর্য। সৌরজগতে ৮টি গ্রহ, শতাধিক উপগ্রহ, হাজার হাজার গ্রহাণুপুঞ্জ ও লক্ষ লক্ষ ধূমকেতু রয়েছে।

সূর্য
সৌরজগতের সকল গ্রহ ও উপগ্রহের নিয়ন্ত্রক হলো সূর্য। সূর্য একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। পৃথিবীর সঙ্গে সূর্যের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। সূর্য পৃথিবী অপেক্ষা ১৩ লক্ষ গুণ বড়। পৃথিবী থেকে এটি প্রায় ১৫ কোটি কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এর ব্যাস প্রায় ১৩ লক্ষ ৮৪ হাজার কিলোমিটার । সূর্যের উপরিভাগের উষ্ণতা ৫৭,০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিরাট দূরত্বের জন্য সূর্যের অতি সামান্য তাপ পৃথিবীতে এসে পৌঁছায়। এ সামান্য তাপ ও আলো দ্বারাই পৃথিবীর জীবজগতের সকল প্রয়োজন মেটে। অন্যান্য গ্রহ, উপগ্রহগুলোর তাপ ও আলোর উৎসও সূর্য। সূর্যের কোনো কঠিন বা তরল পদার্থ নেই। শতকরা ৫৫ ভাগ হাইড্রোজেন, ৪৪ ভাগ হিলিয়াম এবং ১ ভাগ অন্যান্য গ্যাসে সূর্য গঠিত। সূর্যের মধ্যে মাঝে মাঝে যে কালো দাগ দেখা যায় তাকে সৌরকলঙ্ক (Sun Spot) বলে। সূর্যের অন্যান্য অংশের চেয়ে সৌরকলঙ্কের উত্তাপ কিছুটা কম থাকে। আণবিক শক্তি সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় সূর্যে অনবরত হাইড্রোজেন থেকে হিলিয়াম এবং হিলিয়াম থেকে শক্তি তৈরি হচ্ছে। সূর্য প্রায় ২৫ দিনে নিজ অক্ষের (Axis) ওপর একবার আবর্তন করে। সূর্যের আলো ও তাপ ছাড়া পৃথিবীতে উদ্ভিদ, প্রাণী কিছুই জন্মাতো না এবং প্রাণের স্পন্দন সম্ভব হতো না ।

গ্রহ : মহাকর্ষ বলের প্রভাবে কতোগুলো জ্যোতিষ্ক সূর্যের চারদিকে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট কক্ষপথে পরিক্রমণ করছে; এদের গ্রহ বলা হয়। গ্রহের নিজস্ব আলো ও তাপ নেই। সৌরজগতে গ্রহের সংখ্যা ৮টি। সূর্য থেকে গ্রহগুলোর দূরত্ব অনুযায়ী ক্রমান্বয়ে অবস্থান করছে – বুধ (Mercury), শুরু (Venus), পৃথিবী (Earth), মঙ্গল (Mars), বৃহস্পতি (Jupiter), শনি (Saturn), ইউরেনাস (Uranus) ও নেপচুন (Neptune)। গ্রহগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় বৃহস্পতি এবং সবচেয়ে ছোট বুধ।              

বুধ (Mercury) : বুধ সৌরজগতের ক্ষুদ্রতম এবং সূর্যের নিকটতম গ্রহ। এর ব্যাস ৪,৮৫০ কিলোমিটার এবং ওজন পৃথিবীর ৫০ ভাগের ৩ ভাগের সমান। সূর্যের চারদিকে পরিক্রমণ করতে এর ৮৮ দিন সময় লাগে। সূর্য থেকে বুধের গড় দূরত্ব ৫.৮ কোটি কিলোমিটার। বুধের কোনো উপগ্রহ নেই। সূর্যের নিকটতম গ্রহ বলে এর তাপমাত্রা অত্যধিক। বুধের ভূত্বকে সমতল ভূমিসহ অসংখ্য গর্ত ও পাহাড় লক্ষ করা গেছে। বুধের আয়তন ৭৪,৮০০.০০০ বর্গ কিলোমিটার ।       

শুক্র (Venus) : সূর্য থেকে দূরত্বের দিক দিয়ে শুক্রের অবস্থান দ্বিতীয়। এটি পৃথিবীর নিকটতম গ্রহ। সূর্য থেকে শুক্রের দূরত্ব ১০.৮ কোটি কিলোমিটার এবং পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব মাত্র ৪.২ কোটি কিলোমিটার। একে সন্ধ্যায় পশ্চিম আকাশে আমরা সন্ধ্যাতারা রূপে এবং ভোরে পূর্ব আকাশে শুকতারা রূপে দেখতে পাই। সূর্যকে একবার পরিক্রমণ করতে এর সময় লাগে ২২৫ দিন। শুক্রের কোনো উপগ্রহ নেই। পৃথিবীর মতো শুক্রের একটি বায়ুমণ্ডল রয়েছে কিন্তু এতে অক্সিজেন নেই। কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসের পরিমাণ প্রায় শতকরা ৯৬ ভাগ। শুক্র নিজ অক্ষে খুবই ধীর গতিতে আবর্তন করে। ফলে শুক্রের আকাশে বছরে দুইবার সূর্য উদিত হয় এবং অস্ত যায়। গ্রহটিতে কার্বন ডাই-অক্সাইডের ঘন মেঘের কারণে এসিড বৃষ্টি হয়ে থাকে। শুক্রের পৃষ্ঠে পৃথিবীর তুলনায়  ৯০ গুণ বেশি বাতাসের চাপ রয়েছে। এর আয়তন ৪৬০,২৩০,০০০ বর্গ কি. মি. এবং ব্যাস ১২১০৪ কি. মি. ।

কাজ- একক: সৌরজগতের জোতিষ্কগুলোর বৈশিষ্ট্যসমূহ ছকের মাধ্যমে তুলনা কর।

পৃথিবী (Earth) : পৃথিবী সূর্যের তৃতীয় নিকটতম গ্রহ। এর আয়তন ৫১০,১০০,৪২২ বর্গ কিলোমিটার। পূর্ব- পশ্চিমে এর ব্যাস ১২,৭৫২ কিলোমিটার এবং উত্তর-দক্ষিণে ১২,৭০৯ কিলোমিটার। সূর্য থেকে পৃথিবীর গড় দূরত্ব ১৫ কোটি কিলোমিটার। পৃথিবী ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেণ্ডে সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করে। এ গ্রহে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন রয়েছে। পৃথিবীপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা ১৩.৯০° সেলসিয়াস। ভূত্বকে প্রয়োজনীয় পানি রয়েছে। গ্রহগুলোর মধ্যে একমাত্র পৃথিবীই জীবজন্তু ও উদ্ভিদের জীবন ধারণের জন্য আদর্শ গ্রহ। চন্দ্র পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ। পৃথিবী থেকে চন্দ্রের গড় দূরত্ব ৩,৮১,৫০০ কিলোমিটার। এটি ২৯ দিন ১২ ঘণ্টায় পৃথিবীকে একবার পরিক্রমণ করে। চাঁদের পৃষ্ঠদেশে গর্ত, পাহাড় ও পর্বত লক্ষ করা গেছে।

মঙ্গল (Mars) : সূর্য থেকে দূরত্বের দিক দিয়ে পৃথিবীর পরেই মঙ্গলের স্থান। সূর্য থেকে এর গড় দূরত্ব ২২.৮ কোটি কিলোমিটার এবং পৃথিবী থেকে ৭.৮ কোটি কিলোমিটার। মঙ্গল গ্রহের ব্যাস ৬,৭৭৯ কিলোমিটার এবং ওজন পৃথিবীর প্রায় দশ ভাগের এক ভাগ। এর আয়তন ১৪৪,৭৯৮,৫০০ বর্গ কি. মি.। সূর্যকে পরিক্রমণ করতে মঙ্গল গ্রহের লাগে ৬৮৭ দিন এবং নিজ অক্ষে একবার আবর্তন করতে সময় লাগে ২৪ ঘণ্টা ৩৭ মিনিট। মঙ্গলের দুটি উপগ্রহ আছে- ডিমোস ও ফেবোস। এখানে জীবন ধারণ অসম্ভব। বায়ুমণ্ডলে শতকরা ৩ ভাগ নাইট্রোজেন ও শতকরা ২ ভাগ আরগন গ্যাস আছে। পানির পরিমাণ খুবই কম। পৃথিবীর তুলনায় মঙ্গল অনেক ঠাণ্ডা, গড় উত্তাপ হিমাঙ্কের অনেক নিচে। মঙ্গল গ্রহের উপরিভাগে গিরিখাত ও আগ্নেয়গিরি রয়েছে। এ গ্রহের পাথরগুলোতে মরিচা পড়েছে । ফলে গ্রহটি লালচে বর্ণ ধারণ করেছে।

বৃহস্পতি (Jupiter) : সৌরজগতের সর্ববৃহৎ গ্রহ বৃহস্পতি। সূর্য থেকে দূরত্বের ভিত্তিতে বৃহস্পতি গ্রহের অবস্থান পঞ্চম। এর আয়তন পৃথিবীর প্রায় ১,৩০০ গুণ তথা ৬১,৪১৯,০০০,০০০ বর্গ কি. মি.। এর ব্যাস ১,৩৯,৮২২ কিলোমিটার । এটি সূর্য থেকে প্রায় ৭৭.৮ কোটি কিলোমিটার দূরে। বৃহস্পতি ১২ বছরে একবার সূর্যকে এবং ৯ ঘণ্টা ৫৩ মিনিটে নিজ অক্ষে আবর্তন করে। গ্রহটিতে পৃথিবীর একদিনে দুইবার সূর্য ওঠে ও দুইবার অস্ত যায়। এ গ্রহে গভীর বায়ুমণ্ডল আছে। গ্রহটির বায়ুমন্ডলের উপরিভাগের তাপমাত্রা খুবই কম তবে অভ্যন্তরের তাপমাত্রা অধিক। এর ৬৭টি উপগ্রহ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে লো, ইউরোপা, গ্যানিমেড ও ক্যাপলিস্টো প্ৰধান।

গ্রহাণুপুঞ্জ (Asteroids) : মঙ্গল ও বৃহস্পতির মাঝের পরিসরে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গ্রহাণু একত্রে পুঞ্জীভূত হয়ে পরিক্রমণ করছে। এই পরিসরের মধ্যে আর কোনো গ্রহ নেই। ১.৬ কিলোমিটার থেকে ৮০৫ কিলোমিটার ব্যাস সম্পন্ন গ্রহাণুগুলোকে একত্রিতভাবে গ্রহাণুপুঞ্জ বলে ।

শনি (Saturn) : শনি সৌরজগতের দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রহ। এর আয়তন ৪২,৭০০,০০০,০০০ বর্গ কি. মি. এবং ব্যাস ১১৬,৪৬৪ কি. মি.। সূর্য থেকে শনির দূরত্ব ১৪৩ কোটি কিলোমিটার। শনি ২৯ বছর ৫ মাসে সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করে এবং ১০ ঘন্টা ৪০ মিনিটে নিজ অক্ষে একবার আবর্তন করে। পৃথিবীর চেয়ে শনির ব্যাস প্রায় ৯ গুণ বড়। খালি চোখে এটি দেখা যায়। শনির বায়ুমণ্ডলে হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের মিশ্রণ, মিথেন ও অ্যামোনিয়া গ্যাস রয়েছে। তিনটি উজ্জ্বল বলয় শনিকে বেষ্টন করে আছে। শনির ৬২টি উপগ্রহের মধ্যে ক্যাপিটাস, টেথিস, হুয়া, টাইটান প্রধান।

ইউরেনাস (Uranus) : ইউরেনাস সৌরজগতের তৃতীয় বৃহত্তম গ্রহ। সূর্য থেকে এর দূরত্ব ২৮৭ কোটি কিলোমিটার। ৮৪ বছরে এটি সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করে। এর গড় ব্যাস প্রায় ৪৯,০০০ কিলোমিটার। এর আয়তন পৃথিবীর প্রায় ৬৪ গুণ তবে ওজন পৃথিবীর মাত্র ১৫ গুণ। গ্রহটির আবহমণ্ডলে মিথেন গ্যাসের পরিমাণ অধিক। এর ২৭টি উপগ্রহ রয়েছে। ইউরেনাসেরও শনির মতো বলয় রয়েছে। মিরিন্ডা, এরিয়েল, ওবেরন, আম্ব্রিয়েল, টাইটানিয়া প্রভৃতি ইউরেনাসের উপগ্রহ।                                                                                                             নেপচুন (Neptune) : নেপচুনের গড় ব্যাস ৪৯, ২৪৪ কিলোমিটার এবং সূর্য থেকে দূরত্ব ৪৫০ কোটি কিলোমিটার। এর আয়তন ১৭,৬১৮,৩০০,০০০ বর্গ কি. মি.। সূর্য থেকে অধিক দূরত্বের কারণে গ্রহটি শীতল। গ্রহটি অনেকটা নীলাভ বর্ণের। নেপচুন ১৬৫ বছরে সূর্যকে একবার পরিক্রমণ করে। এর উপগ্রহ ১৪টি। উল্লেখযোগ্য উপগ্রহ হচ্ছে ট্রাইটন ও নেরাইড।

পৃথিবী গ্রহে জীব বসবাসের কারণ                                                                            পৃথিবীর চারদিক নানা প্রকার গ্যাসীয় উপাদান দ্বারা বেষ্টিত। অদৃশ্য এই গ্যাসীয় আবরণ পৃথিবীকে বেষ্টন করে আছে। একে বায়ুমণ্ডল বলে। পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির আকর্ষণে বায়ুমণ্ডল ভূপৃষ্ঠের সঙ্গে লেপ্টে আছে। আর পৃথিবীর সঙ্গে আবর্তিত হচ্ছে। বায়ুর চাপের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠে এর ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি এবং উপরের দিকে ঘনত্ব খুবই কম। বায়ুমণ্ডলে নাইট্রোজেন ও অক্সিজেনের প্রাধান্য রয়েছে। সকল প্রাণীর জন্য অক্সিজেন অত্যাবশ্যক। কার্বন ডাই-অক্সাইড ছাড়া অন্যান্য উপাদান বায়ুতে মোটামুটি অপরিবর্তনীয় পরিমাণে থাকে। তবে ধুলা, ধোঁয়া, জলীয় বাষ্প ইত্যাদি উপাদান বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন পরিমাণে থাকে। পৃথিবীর সমস্ত জীবের বেঁচে থাকার জন্য বায়ুমণ্ডলের গুরুত্ব অপরিসীম। বায়ুমণ্ডল সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে প্রাণিকুলকে রক্ষা করে। সূর্যের গ্যাসীয় উপাদান, যেমন— কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO2) ও অক্সিজেন (O2) যথাক্রমে উদ্ভিদ ও প্রাণীকে বাঁচিয়ে রাখে। ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুমণ্ডলের সর্বনিম্ন স্তর হলো ট্রপোমণ্ডল । এ স্তরটির গড় গভীরতা প্রায় ১৩ কি.মি.। এটি মানুষের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় স্তর। কেননা, আর্দ্রতা, কুয়াশা, মেঘ, বৃষ্টি, বায়ুপ্রবাহ প্রভৃতি এই স্তরে লক্ষ করা যায়। উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে এ স্তরে বাতাসের গতিবেগ বেড়ে যায়। আবহাওয়া জলবায়ুজনিত যাবতীয় প্রক্রিয়ার বেশির ভাগই বায়ুমণ্ডলের এস্তরে ঘটে থাকে। ট্রপোমণ্ডলের ঊর্ধ্বসীমাকে ট্রপোপস বলে। ট্রপোপসের গভীরতা সরু, এখানে বায়ু স্থির। ঝড় বৃষ্টির প্রাদুর্ভাব না থাকায় বিমান এ স্তর দিয়ে নির্বিঘ্নে চলাচল করে। বায়ুমণ্ডলে ওজোন (Ozone) গ্যাসের একটি স্তর আছে, যা ওজোন স্তর নামে পরিচিত। এর গভীরতা প্রায় ১২-১৬ কি.মি.। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করায় এর তাপমাত্রা ধীরে ধীরে প্রায় ৪০° (চল্লিশ ডিগ্রি) সেলসিয়াস পর্যন্ত হয়। এ স্তরটি পৃথিবীকে প্রাণিজগতের বাস উপযোগী করেছে।

 পৃথিবী সূর্য থেকে আলো ও তাপ পায়। সূর্যের আলো ছাড়া পৃথিবী চির অন্ধকারে থাকত। পৃথিবীতে প্রাণের স্পন্দন থাকত না এবং জীবজগৎ উদ্ভিদ ও প্রাণী কিছুই বাঁচত না। পৃথিবীতে মানুষের কর্মকাণ্ড বায়ুমণ্ডলের গঠন ও উপাদানে পরিবর্তন করতে সাহায্য করে। ব্যাপকভাবে গাছপালা কেটে ফেলা, কলকারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া এবং জ্বালানি তেল, কয়লা ও প্রাকৃতিক গ্যাস পোড়ানো থেকে নির্গত ধোঁয়া ও বিষাক্ত গ্যাস বায়ুমণ্ডলকে দূষিত করে। প্রাণীর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্যই বায়ুমণ্ডলকে বিশুদ্ধ রাখা দরকার।                                                         জীবজন্তুর বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন প্রচুর আলো, বাতাস ও পানি। পৃথিবী পৃষ্ঠে গড় তাপমাত্রা ১৩.৯০° সেলসিয়াস। ভূত্বকে রয়েছে প্রয়োজনীয় পানি। সূর্য থেকে যে তাপ ও আলো পৃথিবীতে পৌঁছে তাও জীবজন্তুর জন্য সহনীয়। জীবজন্তুর ও উদ্ভিদের জীবন ধারণের জন্য এগুলোও উপযোগী ও প্রয়োজনীয়। এজন্য পৃথিবীতে জীবজন্তু বসবাস করতে পারে।

কাজ:একক পৃথিবী ব্যতীত অন্যান্য গ্রহে জীব বসবাসের অনুপযোগী হওয়ার কারণের তালিকা প্রস্তুত কর।

ভূ-অভ্যন্তরের গঠন
পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠন ও বিভিন্ন স্তর বিন্যাস সম্বন্ধে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করা খুবই কঠিন। কিন্তু ভূমিকম্প তরঙ্গের গতিবেগের তারতম্য দ্বারা ভূ-অভ্যন্তরে শিলার ঘনত্বের তারতম্য ও বিভিন্ন স্তরের বিষয় জানা যায়। ভূ-অভ্যন্তরে ভূ-কম্পীয় তরঙ্গের গতি ও প্রকৃতির তারতম্য লক্ষ্য করে ভূ-তত্ত্ববিদগণ ভূ-অভ্যন্তরকে তিনটি স্তরে বিভক্ত করেছেন। এ স্তরগুলো হলো- (১) কেন্দ্রমণ্ডল (২) গুরুমণ্ডল এবং (৩) অশ্মমণ্ডল।

(১) কেন্দ্রমণ্ডল : গোলাকার পৃথিবীর ব্যাসার্ধ প্রায় ৬৩৭১ কি.মি.। পৃথিবীর যে কেন্দ্রের চারদিকে প্রায় ৩৪৮৬ কি.মি. ব্যাসার্ধের গোলক রয়েছে সে গোলকটির নাম কেন্দ্রমণ্ডল। বৈজ্ঞানিকদের মতে, কেন্দ্রমণ্ডল লৌহ, নিকেল, পারদ, সীসা প্রভৃতি কঠিন ও ভারী পদার্থ দ্বারা গঠিত। এ স্তরে নিকেল (Nickel) ও লৌহের (Perus) পরিমাণ বেশি থাকায় এ স্তরটি সংক্ষেপে নাইফ (Nife) নামে পরিচিত। এটি পানি অপেক্ষা ১০/১২ গুণ এবং পৃথিবীর অন্যান্য অংশ অপেক্ষা দ্বিগুণের অধিক ঘন। কিন্তু প্রচণ্ড তাপ ও চাপে এটি সম্ভবত কঠিন অবস্থায় নেই। ভূকম্পন তরঙ্গ থেকে বুঝা যায় যে, কেন্দ্রমণ্ডল দুটি অংশে বিভক্ত: বাইরের অংশ এবং ভিতরের অংশ। বাইরের অংশ তরল এবং ভিতরের অংশ কঠিন অবস্থায় আছে বলে অনুমান করা হয়। কেন্দ্রমণ্ডলের বাইরের অংশের বিস্তৃতি প্রায় ২২৭০ কি.মি.। কেন্দ্রমণ্ডলের ভিতরের অংশটি পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে প্রায় ১,২১৬ কি.মি. ব্যাসার্ধের মধ্যে কঠিন অবস্থায় রয়েছে।

(২) গুরুমণ্ডল : কেন্দ্রমণ্ডলের উপর থেকে চতুর্দিকে প্রায় ২৮৮৫ কি. মি. পর্যন্ত মণ্ডলটিকে গুরুমণ্ডল বলে। সিলিকন, ম্যাগনেশিয়াম প্রভৃতি ভারী ধাতুগুলোর সংমিশ্রণে এ মণ্ডলটি গঠিত। এর উপরাংশে ১৪৪৮ কি.মি. স্তরে ব্যাসস্ট জাতীয় উপাদান দ্বারা গঠিত বলে একে ব্যাসল্ট অঞ্চলও বলে। সিলিকন (Silicon) ও ম্যাগনেসিয়াম (Magnesium) দ্বারা মণ্ডলটি গঠিত বলে একে সিমা (Sima) বলে।

(৩) অশ্মমণ্ডল : গুরুমণ্ডলের উপরের অংশকে অশ্বমণ্ডল বা শিলামণ্ডল বলা হয়। এটা নানা প্রকার শিলা ও খনিজ উপাদান দ্বারা গঠিত। এর গভীরতা মহাদেশীয় অঞ্চলের নিচে সবচেয়ে বেশি এবং মহাসাগরের নিচে সবচেয়ে কম। এর সঠিক গভীরতা সম্পর্কে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে। এর গভীরতা স্থান বিশেষ ৩০ থেকে ৬৪ কি.মি. পর্যন্ত ধরা হয়। যেসব উপাদানে এ স্তর গঠিত তাদের মধ্যে অক্সিজেন, সিলিকন, অ্যালুমিনিয়াম, পৌহ, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, পটাসিয়াম প্রভৃতির নাম উল্লেখযোগ্য। উল্লেখ্য যে, এ স্তরে সিলিকন (Silicon) ও অ্যালুমিনিয়াম (Aluminum) এর পরিমাণ বেশি, তাই এটাকে সিয়াল (Sial) স্তর বলে। অশ্বমণ্ডলের উপরিভাগকে ভূত্বক বলে ও নিম্নভাগকে ভূত্বকের নিম্নাংশ বলে। ভূত্বকই পৃথিবীর কঠিন বহিরাবরণ। এর গভীরতা ৩ কি.মি. (সমুদ্রের তলদেশ) থেকে ৪০ কি.মি. (পর্বতের তলদেশ) তবে গড় গভীরতা ১৭ কি.মি.।